অসুস্থ রোগী ও দূর্বল ব্যাক্তির উপরে জিহাদ ফরয নয় – কুরআন, হাদিস ও ফিকহি মাসলা মাসায়েল
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন]
পূর্ব আলোচনার পর…
৬. দৈহিক ও মানসিক সমস্যা থেকে সুস্থ্য/নিরাপদ থাকা (দূর্বল ও অসুস্থ্য রোগী না হওয়া)
যে মুসলমান যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল (সমর জিহাদ) করতে শারীরীক ও মানসিক ভাবে অসমর্থ, তার উপরে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হয়ে ক্বিতাল (সমর জিহাদ)-এ শরিক হওয়া ‘ফরয়’ নয়। কারণ, এমতাবস্থায় সে মা’যুর (অপারগ/অসমর্থ) ব্যাক্তি হিসেবে গণ্য। আর আর আল্লাহ তাআলা মা’যুর (অপারগ/অসমর্থ) ব্যাক্তির উপরে তার সাধ্যের অতিরিক্ত রোজা চাঁপাননি। যেমন, তিঁনি এরশাদ করেন- لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْساً إِلَّا وُسْعَها – “আল্লাহ (তাআলা) কারোর উপরে -সে (যতটুকু) ধারন করতে পারে- (তার চাইতে অতিরিক্ত) বোঝা চাপান না”। [সূরা বাকারাহ ২৮৬] এছাড়াও আমাদের আলোচ্য মাসআলা’র ব্যাপারে দলিলাদি নিম্নরূপ।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
لَّيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَىٰ وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“দূর্বল ব্যাক্তিবর্গ, রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গ এবং যারা (জিহাদে প্রয়োজনীয়) যাকিছু খরচ করবে তা (যোগার করে নিতে) পায়না, তাদের উপরে (জিহাদে শরিক না হওয়াতে) কোনো দোষ বর্তাবে না -(শর্ত হল) যদি তারা কল্যান কামনা করে আল্লাহ’র জন্য ও তাঁর রাসুলের জন্য। (এরকম) এহসানকারী (সৎকর্মশীল)দের উপরে (কারোর পক্ষ থেকেই অভিযোগ করার) কোনো অবকাশ নেই। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু”। [সূরা তাওবা ৯১]
ইমাম বগভী (মৃ: ৫১৬) রহ. বর্ণনা করেছেন যে- قال الضحاك : نزلت في عبد الله ابن أم مكتوم وكان ضرير البصر – “যাহহাক্ব বলেন: (অন্ধ সাহাবী) আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম-এর ব্যাপারে (এই আয়াতটি) নাজিল হয়। ”। [মাআলিমুত তানজিল, ইমাম বগভী- ৪/৮৪] ইমাম আবু জা’ফর ইবনু জারীর ত্বাবারী (মৃ: ৩১০ হি:) রহ. নিজ সনদে হযরত ক্বাতাদাহ রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,- বলেন- قال قتادة : نزلت في عائذ بن عمرو – “(এই আয়াতটি, অন্ধ সাহাবী) আয়েয বিন আমর-এর ব্যাপারে নাজিল হয়েছিল”। [জামেউল বয়ান ফি তাউলিল কুরআন, ইমাম তাবারী– ১৪/৪১৯]
ইমাম ইবনু আবি হাতেম রাযী (মৃ: ৩২৭ হি:) রহ. নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, যায়েদ বিন ছাবেত রা. এরশাদ করেন- كُنْتُ أكْتُبُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ فَكُنْتُ أكْتُبُ بَراءَةَ، فَإنِّي لَواضِعٌ القَلَمَ عَلى أُذُنِي إذْ أُمِرْنا بِالقِتالِ، فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ يَنْظُرُ ما يَنْزِلُ عَلَيْهِ، إذْ جاءَ أعْمى، فَقالَ: كَيْفَ بِي يا رَسُولَ اللَّهِ، وأنا أعْمى؟ فَنَزَلَتْ ﴿لَيْسَ عَلى الضُّعَفاءِ ولا عَلى المَرْضى ولا عَلى الَّذِينَ لا يَجِدُونَ ما يُنْفِقُونَ حَرَجٌ إذا نَصَحُوا لِلَّهِ ورَسُولِهِ﴾ قالَ: نَزَلَتْ في عائِذِ بْنِ عَمْرٍو وفي غَيْرِهِ . رواه ابن أبي حاتم الرازي في تفسير القرآن العظيم : رقم ١٠٢٠٥ – “আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য (ওহী) লিখার কাজ করতাম। আমি (একদিন সুরা) বারাআত (সুরা তাওবাহ) লিখছিলাম। আমি (ওহী লিখার) কলমটি আমার কানে গুঁজে রেখে (বসে আ)ছি, এমন সময় (আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে) আমাদেরকে ক্বিতাল (সশস্ত্র জিহাদ)-এর নির্দেশ দিলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ ﷺকে অপেক্ষায় থাকতে হল যে, তাঁর উপরে (আরো) কী নাজিল হয়। এমন সময়, এক অন্ধ এসে বললো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! (জিহাদ তো ফরয হল, এখন) আমার কী হবে, আমি-তো অন্ধ’! তখনই নাজিল হয়- لَّيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَىٰ وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ – ((দূর্বল ব্যাক্তিবর্গ, রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গ এবং যারা (জিহাদে) খরচ করার (মতো সম্বল) পায়না, তাদের উপরে (জিহাদে শরিক না হওয়াতে) কোনো দোষ বর্তাবে না -যদি তারা কল্যান কামনা করে আল্লাহ’র জন্য ও তাঁর রাসুলের জন্য…..”। তিঁনি বলেন: আয়েয বিন আমর প্রমুখের ব্যাপারে (এই আয়াতটি) নাজিল হয়”। তিনি বলেন: (অন্ধ সাহাবী) আয়েয বিন আমর ও তিঁনি ছাড়াও অপরাপরের ব্যাপারে (এই আয়াতটি) নাজিল হয়”। [তাফসিরু কুরআনিল আজিম, ইমাম ইবনু আবি হাতেম- ১/১৮৬১ হাদিস ১০২০৫; তাফসিরে ইবনে কাসির- ৭/২৬৫; আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ইমাম সুয়ূতী- ১/১২৮]
উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে- لَّيْسَ …… حَرَجٌ – (কোনো দোষ বর্তাবে না)। ইমাম আবু জা’ফর ইবনু জারীর ত্বাবারী (মৃ: ৩১০ হি:) রহ. বলেন- حرج وهو الإثم يقول: ليس عليهم إثم – “(এখানে) حَرَجٌ (দোষ) অর্থ হল الإثم (গোনাহ), বলা হচ্ছে যে, তাদের উপরে কোনো গোনাহ বর্তাবে না”। [জামেউল বয়ান ফি তাউলিল কুরআন, ইমাম তাবারী– ১৪/৪১৯] ইমাম ইবনু আবি জামানীন আল-মাক্কী (মৃ: ৩৯৯ হি:) রহ. বলেন- إثم فِي التَّخَلُّفِ عَن الْغَزْو – “গাজওয়া (জিহাদ)-এ গমন থেকে পিছে রয়ে যাওয়াতে (কোনো) গোনাহ (বর্তাবে না)”। [তাফসীরু কুরআনিল আজীজ, ইবনু আবি জামনীন- ২/২২৬] ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহদম আন-নাসাফী (মৃ: ৭১০ হি:) রহ. বলেন- إثم وضيق في التأخر – “(জিহাদে গমন থেকে) পিছে রয়ে যাওয়াতে (কোনো) গোনাহ ও দোষ (বর্তাবে না)”। [মাদারিকুত তানজীল ওয়া হাক্বায়িকিত তানজীল, ইমাম নাসাফী– ২/১০৪]
উপরোক্ত আয়াতে- عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) বলতে কারা উদ্দেশ্য, তার ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন- الزَّمْنَى وَ الْمَشَايِخَ وَ الْعَجَزَةَ – “বিকলাঙ্গ ব্যাক্তি, বয়বৃদ্ধ ব্যাক্তি এবং (দৈহিক ভাবে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শক্তিহীন/অসামর্থ) দূর্বল ব্যাক্তিরা”। [মাআলিমুত তানজিল, ইমাম বগভী- ৪/৮৪; আল-বাসিত্ব, ইমাম ওয়াহিদী- ১০/৫৯৪] শায়েখ কাসেমী রহ. বলেছেন- وهم العاجزون مع الصحة، عن العدو، وتحمل المشاق، كالشيخ والصبي والمرأة والنحيف -“ওরা হল, যারা দুশমনের বিরুদ্ধে লড়তে এবং যুদ্ধের ধকল সওয়ার প্রশ্নে দৈহিক ভাবে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় দূর্বল, যেমন বয়বৃদ্ধ ব্যাক্তি, শিশু-কিশোর, নারী, (পিনপিনা শুটকা) পাতলা ব্যাক্তি (প্রমুখ)”। [মাহাসিনুত তাউয়ীল, কাসেমী- ৫/৪৭৬] ইবনে আশুর (মৃ: ১৩৯৩ হি:) রহ. বলেন- وهو الَّذِي بِهِ الضَّعْفُ وهو وهْنُ القُوَّةِ البَدَنِيَّةِ مِن غَيْرِ مَرَضٍ – “সে এমন ব্যাক্তি, যার -রোগব্যাধির কারণে নয় বরং দৈহিক শক্তিসামর্থ না থাকার কারণে সে দূর্বল”। [আত-তাহরিরুত তানউয়ীর, ইবনু আশুর- ১০/২৯৪] এখানে রোগব্যাধির কারণে শারীরীক ভাবে দূর্বল হওয়া ব্যাক্তি অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার ব্যাখ্যাটিই অধিক সহিহ। কেননা, আল্লাহ তাআলা রোগব্যাধি’র প্রসঙ্গটি তো আয়াতের মধ্যে পরে আলাদা ভাবে উল্লেখ করেছেনই, এজন্য ইমাম ফখুরুদ্দিন রাযী (মৃ: ৬০৬ হি:) রহ. এই ব্যাখ্যাটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। [মাফাতিহুল গাইব, ইমাম রাযী- ১৬/১৬০]
খোলাসা কথা হল, এখানে عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) বলতে মূলত: (রোগব্যাধির কারণে নয়), বরং সৃষ্টিগত/জন্মগত ভাবে দৈহিক কোনো দূর্বলতা থাক কিংবা উল্লেখযোগ্য বয়সের কারণে সৃষ্ট দৈহিক দূর্বলতা থাক -যে মুসলমানের পক্ষে এরকম কোনো দৈহিক দূর্বলতার কারণে জিহাদে বের হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়ার মতো দৈহিক শক্তি-সামর্থ নেই, সে-ই এর অন্তর্ভূক্ত। যেমন:- (১) বার্ধক্যের কারণে দৈহিক ভাবে দূর্বল বয়বৃদ্ধ ব্যাক্তি, (২) জন্মগত ভাবে বিকলাঙ্গ/পঙ্গু/খোঁড়া-ল্যাংড়া ব্যাক্তি, (৩) জন্মগত ভাবে যে পাগল বা যার মস্তিষ্ক মানসিক ভাবে বিকৃত ও দূর্বল, (৪) জন্মগত ভাবে অন্ধ বা দৃষ্টিশক্তিতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় দূর্বলতা রয়েছে, (৫) দৈহিক গঠনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শুটকা (পাতলা) দূর্বল ব্যাক্তি, (৫) শিশু-কিশোর, (৬) নারী…. প্রমুখ। [আন-নাকতু ওয়াল উয়ূন, ইমাম মাওয়ার্দী– ২/৩৯১; যাদুল মাসীর, ইমাম যাওজী-৩/৪৮৫; তাফসিরুল কুরআন, ইমাম সামআনী- ২/১৬১; মাফাতিহুল গাইব, ইমাম রাযী– ১৬/১৬০; আল-বাহরুল মুহিত, ইমাম আবু হাইয়্যান- ৫/৩৭৭]

আর উপরোক্ত আয়াতে- عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে) এর ব্যাখ্যায়- ইমাম মাওয়ার্দী (মৃ: ৪৫০ হি:) রহ. বলেন- يريد به مرضى البدن إذا عجز به تصرفه الصحيح – “এর দ্বারা (এখানে) এমন রোগব্যাধি উদ্দেশ্য, যার দ্বারা কোনো শরীর আক্রান্ত হলে সেই শরীর ঠিক ভাবে কাজ করে না”। [আল-হাউইউল কাবির, মাওয়ার্দী- ১৪/২৪৯] বস্তুত: عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে এমন প্রত্যেক প্রকারের রোগ-ব্যাধিই অন্তর্ভূক্ত রয়েছে, যে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে একজন মুসলমানের পক্ষে জিহাদের ময়দানে গিয়ে দুশমনের সাথে যুদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত দৈহিক ও মানসিক শক্তি থাকে না, কিংবা ময়দানে গেলে তার সেই রোগ অপরাপর মুজাহিদগণের জীবনের জন্য হুমকী স্বরূপ হতে পারে। [আল-হাউইউল কাবির, মাওয়ার্দী- ১৪/১১৪; রুহুল মাআনী, আলুসী- ১০/১৫৮; মাফাতিহুল গাইব, ইমাম রাযী- ১৬/১৬০; ফাতহুল কাদীর, শাওকানী- ২/৩৯২]
আবু সুফিয়ান-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যাবের বিন আব্দুল্লাহ আল-আনসারী রা. এরশাদ করেন- كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي غَزَاةٍ فَقَالَ : إِنَّ بِالْمَدِينَةِ لَرِجَالاً مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلاَّ كَانُوا مَعَكُمْ حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ . رواه مسلم في صحيحه , كتاب الإمارة , باب ذم من مات ولم يغز ولم يحدث نفسه بالغزو : رقم ١٩١١، و الإمام أحمد في مسنده , مسانيد المكثرين , مسند جابر بن عبد الله رضي الله تعالى عنهما: ٣/٣٠٠، و ابن ماجه في سننه : رقم ٢٧٦٥ – “আমরা (একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সঙ্গে (এক) গাজওয়া’তে ছিলাম। তখন তিঁনি বললেন: ‘নিশ্চয় (আমরা জিহাদে বের হওয়ার পর) মদিনায় (এমন সব ইমানদার) ব্যাক্তিরা রয়ে গেছে, তোমরা (এখন) যে অলিগলি ধরেই পথ চলছো এবং যে উপত্যকাই অতিক্রম করছো, (সওয়াবের দিক থেকে) তারা তোমাদের সাথেই (শরীক) থাকছে। (কারণ শুধুমাত্র তাদের প্রকট) রোগব্যাধি(ই) তাদেরকে (আমাদের সাথে জিহাদে অংশ নেওয়া থেকে) আটকে রেখেছে, (অন্যথায় তারা অবশ্য অবশ্যই আমাদের সাথে এই জিহাদে শরীক থাকতো)”। [সহিহ মুসলীম- ৩/১৫১৮ হাদিস ১৯১১; মুসনাদে আহমদ- ৩/৩০০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৭৬৫]
আমাদের এই আধুনিক যুগে- ‘জিহাদে গমনের পথে অন্তরায় হওয়ার মতো রোগব্যাধি’র উদাহরণ হতে পারে অগণিত, যার সবগুলোর নাম ও বিবরণ পেশ করা অবশ্যই এখানে সম্ভব নয়। এজন্য নমুনা স্বরূপ কিছু রোগ ব্যাধির উদাহরণ দিচ্ছি, যাতে পাঠক মাসলাটি’কে সহজে বুঝতে পারেন। যেমন:-
(১) হার্টের স্ট্রোক করা রোগী, যাদেরকে বিজ্ঞ চিকিৎসক সর্বদা বিশ্রামে থাকার ব্যাপারে বিশেষ জোর দেন এবং ভারী/পরিশ্রমের কাজ করতে জোরালো ভাবে নিষেধ করেন।
(২) ব্রেইনের স্ট্রোক করা রোগী, যাদেরকে বিজ্ঞ চিকিৎসক সর্বদা বিশ্রামে থাকার ব্যাপারে বিশেষ জোর দেন এবং দুশ্চিন্তা করা ও পরিশ্রমের কাজ করতে জোরালো ভাবে নিষেধ করেন।
(৩) হাত/পা ইত্যাদি অংগ বা শরীরের উল্লেখযোগ্য অংশ প্যারালইজড (অবশ) হওয়া রোগী।
(৪) শরীরের গুরুতর অংগ-প্রত্যঙ্গ (যেমন: হার্ট, কিডনী, লিভার ইত্যাদি) অপারেশন হওয়া রোগী, যাদেরকে বিজ্ঞ চিকিৎসক সর্বদা বিশ্রামে থাকার ব্যাপারে বিশেষ জোর দেন এবং ভারী/পরিশ্রমের কাজ করতে জোরালো ভাবে নিষেধ করেন।
(৫) কোনো দূর্ঘটনায় দেহের কোনো হাড্ডি ভেঙে যাওয়া বা দেহের কোথাও গুরুতর জখম হওয়া রোগী, যা অপারেশন হওয়াও পর রোগী এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ্য হয়নি কিংবা মোটামুমি সুস্থ্য হলেও বিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীকে বিশ্রামে থাকার ব্যাপারে বিশেষ জোর দিচ্ছেন এবং ভারী/পরিশ্রমের কাজ করতে জোরালো ভাবে নিষেধ করছেন।
(৬) পূর্ণরূপে পাগল হওয়া অথবা এমন মাত্রার মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়া রোগী, যাকে বিজ্ঞ চিকিৎসক’রা ‘মেন্টাল ডিজিজ’-এ আক্রান্ত মর্মে চিহ্নিত করেন।
(৭) চোখের দৃষ্টিশক্তি এমন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় চলে যাওয়া রোগী, যার কারণে সে অন্ধ বা অন্ধপ্রায় হয়ে গেছে।
(৮) ঝুকিপূর্ণ মাত্রার প্রেসার থাকা রোগী, যে -বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে না চললে, বিশ্রামে না থাকলে তার শরীর আরো অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে বা জীবন ঝুঁকির মুখে পরতে পারে,
(৯) ঝুকিপূর্ণ মাত্রার ডায়াবেটিস থাকা রোগী, যে -বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ঔষধপত্তর সেবন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও অন্যান্য পরামর্শক্রমে না চললে তার শরীর আরো অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে বা জীবন ঝুঁকির মুখে পরতে পারে,
(১০) এমন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, যেটাকে বিজ্ঞ চিকিৎসক’রা ‘মহামারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন, যাতে কেউ আক্রান্ত হলে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। যেমন, কোভিড-১৯ করোনা। ………. ইত্যাদি
মাসআলা: উপরোল্লখীত এধরণের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য শরীরীক অসুস্থ্যতা ও রোগব্যাধি গুলোর মধ্যে -যেটির কারণে সংশ্লিষ্ট রোগী জিহাদে বের হতে অপারগ হয়ে ছিল, সে যখন তার সেই সংশ্লিষ্ট অসুস্থ্যতা বা রোগব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করে ‘জিহাদের পরিশ্রম ও ধকল’ সওয়ার মতো সুস্থ্যসবল হয়ে উঠবে, তখন থেকে সে একজন সাধারণ সুস্থ্যসবল ব্যাক্তি হিসেবেই গণ্য হবে এবং তার উপরে নিয়মানুগ ভাবে জিহাদ ফরয হবে। [আল-হাউইউল কাবীর, ইমাম মাওয়ার্দী- ১৪/২৪২-২৪৬]
কিন্তু, একথা মাথায় রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলাকে ফাঁকি দেয়ার কোনো উপায় নেই, কারণ তিঁনি সবকিছু দেখেন ও জানেন। কাজেই, যে সকল দৈহিক রোগব্যাধি বা অসুস্থ্যতাকে মেডিকেলী বা সামাজিক পরিভাষায় ‘রোগব্যাধি’ (Desease) বা ‘অসুস্থ্যতা’ (Sickness) বলে অবিহিত করা হয় বটে, তবে সেগুলোর মাত্রা এতটা উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেঁকেনি যে, সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির জন্য সেটা জিহাদে বের হওয়ার পথে অন্তরায় হওয়ার পর্যায়ে গণ্য হতে পারে, তাহলে সেরকম ‘রোগব্যাধি’ (Desease) বা ‘অসুস্থ্যতা’ (Sickness)’র ছুঁতোয় জিহাদে বের না হওয়াটা সংশ্লিষ্ট মুসলমানের জন্য জায়েয হতে পারে না। ইমাম ইবনে কুদামাহ আল-মাকদেসী (মৃ: ৬৮২ হি:) রহ. বলেন- المرض المانع هو الشديد ، فأما اليسير منه الذي لا يمنع إمكان الجهاد ، كوجع الضرس والصداع الخفيف ، فلا يمنع الوجوب ; لأنه لا يتعذر معه الجهاد – “(উপরোক্ত আয়াতে, যে রকমের) রোগব্যাধি (জিহাদে বের হওয়ার পথে) অন্তরায় (হয়ে দাঁড়ায় মর্মে ইংগীত করা হয়েছে), সেটা হল চরম মাত্রার (রোগব্যাধি)। তবে, যদি তা থেকে (এমন) কম মাত্রার (রোগব্যাধি) হয়, যা (ওই ব্যাক্তিকে) জিহাদে (বের হওয়া)র পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে না, যেমন: মাড়ির দাঁতে ব্যাঁথা হওয়া, সামান্য মাথা ব্যাথা হওয়া (ইত্যাদি), তাহলে (এমন সহনীয় পর্যায়ের অসুখ বা রোগব্যাধি তার উপরে অর্পিত জিহাদের) অপরিহার্যতা’র পথে অন্তরায় হতে পারে না, কেননা তখন জিহাদে (বের হওয়া)র (ক্ষেত্রে) তার কাছে আর ওযর পেশ করার (মতো) কিছু থাকে না”। [আল-মুগনী, ইবন কুদামাহ- ৮/৩৪৭]
এক্ষেত্রেও একই কথা যে, ‘জিহাদে গমনের পথে অন্তরায় না হওয়ার মতো সাধারণ অসুস্থ্যতা বা রোগব্যাধি’র উদাহরণ হতে পারে অগণিত, যার সবগুলোর নাম ও বিবরণ পেশ করা এখানে অবশ্যই সম্ভব নয়। বিধায়, নমুনা স্বরূপ কিছু সাধারণ অসুস্থ্যতা বা রোগব্যাধি’র উদাহরণ দিচ্ছি, যা থেকে পাঠক মাসলাটি’কে সহজে বুঝতে পারেন যে, রোগের ছুঁতো কেমন হতে পারে। যেমন:-
(১) সাধারণ জ্বর সর্দি কাশি, কিংবা সাময়ীক ভাবে ওঠা অতিমাত্রার জ্বর -যেমন ১০৫/১০৬ ডিগ্রী জ্বর- যা কয়েকদিন পরেই কমে রোগী সুস্থ্য হয়ে যায়,
(২) সাধারণ দাত ব্যাথা কিংবা সাময়ীক ভাবে ওঠা অতিমাত্রার দাঁত ব্যাথা,
(৩) সাধারণ মাথা ব্যাথা কিংবা সাময়ীক ভাবে ওঠা অতিমাত্রার মাথা ব্যাথা,
(৪) শরীরে বাঁতের ব্যাথা থাকা রোগী, যার দেহের বিভিন্ন স্থানে মাঝে মধ্যে সহনীয় মাত্রায় ব্যাথা ওঠে কিংবা কখনো কখনো সাময়ীক ভাবে বেশি মাত্রায় ব্যাথা উঠে।
(৫) হালকা মাত্রার প্রেসার থাকা (যা মাঝে মধ্যে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া, বেশি পরিশ্রম না করা, বাঁছাইকৃত খানাদানা খাওয়া ইত্যাদির দ্বারা নিয়ন্ত্রনে থাকে),
(৬) হালকা মাত্রার ডায়াবেটিস থাকা (যা মাঝে মধ্যে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া, বাঁছাইকৃত খানাদানা খাওয়া ইত্যাদি সহ ডাক্তারের পরামর্শ মতো চললে তা বেশ নিয়ন্ত্রনে থাকে),
মাসআলা: এযুগে যে কোনো দেশের ‘জাতীয় মিলিটারি সেক্টর’-এ সৈন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘মিলিটারি কোড’ অনুযায়ী যে সকল অতিমাত্রার চেকআপ করা হয়– (যেমন: চেকআপ করা হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিটি তাদের পূর্বনির্ধারিত দৈহিক-উচ্চতা’র কিনা, দু পা একদম সোজা করে লেফ-রাইট করতে পারে কিনা, লজ্জাস্থান ঠিকঠাক আছে কিনা, চোখের পাওয়ার তাদের পূর্বনির্ধারিত মাত্রায় আছে কিনা…. ইত্যাদি)– এবং এসব পরীক্ষা নিরীক্ষার পর উক্ত নির্ধারিত কোডে একটু ঘাতটি হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে সৈন্য হওয়ার সুযোগ থেকে বাদ দেয়া হয়, এসব তথাকথিত ‘কোড’ বা ‘মাত্রা’র সাথে ইসলামী শরীয়তের ‘মুজাহিদ’ হওয়ার বৈশিষ্টের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। বরং, সুরা তাওবাহ’র উপরোক্ত আয়াতে عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) কিংবা عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে গণ্য নয় -এমন প্রত্যেক সুস্থ্যসবল মুসলমান ব্যাক্তিই ‘মুজাহিদ’ হওয়ার যোগ্য। এজন্য যে সকল মুসলীম ব্যাক্তি এযুগে কোনো দেশের মিলিটারীতে নিয়োগ পাওয়া ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখীত ‘মিলিটারি কোড’ গুলোতে উত্তির্ণ হতে না পারার কারণে সৈনিক হওয়া থেকে বাদ পড়েছে, তাদের এই ভুল ধারনা করার কোনো কারণ নেই যে, ‘তারা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতেও ‘মুজাহিদ’ হবার যোগ্যতাগুণ হারিয়েছে’ কিংবা ‘সহিহ জিহাদের সময় তারা -আধুনিক মিলিটারী কোড অনুযায়ী বাদ পড়ার ছুঁতো দেখিয়ে- জিহাদে অংশগ্রহন থেকে নিজকে বিরত রাখার কোনো সুযোগ পাবে’।
বিশেষ প্রনিধানযোগ্য মাসআলা
আমাদের আলোচ্য বিষয়ে আরেকটি বিশেষ প্রনিধানযোগ্য মাসআলা হল, আগেকার জামানা গুলোতে যুদ্ধ হত মূলত: ঢাল, তরবারী, তীর ধনুক, বল্লম, গুরমুজ, লৌহ বর্ম, ঘোড়া, উট, হাতি ইত্যাদি ব্যবহার করে -বিশেষ কোনো ময়দানে। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপরে কুরআন নাজিলের জামানাটাও ছিলো ঢাল তরবারী’র জামানা, এজন্য কুরআন সুন্নাহ’র স্পষ্ট বিধানে খোঁড়া, ল্যাংড়া, বৃদ্ধ, নারী, শিশু প্রমুখের মতো অনেককে عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) কিংবা عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে, যারা বাহ্যত: সরাসরি যুদ্ধ ময়দানে গিয়ে ঢাল তরবারী ইত্যাদি দিয়ে যুদ্ধ করার দৈহিক ও মানসিক সামর্থ রাখে না। একই ভাবে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের পরবর্তী জামানাগুলোতে বিদ্যমান আমাদের সালাফে সালেহীন, মুফাসসেরীন, মুহাদ্দেসীন ও ফুকাহায়ে কেরাম সকলেই ওই ঢাল তরবারীর যুগের মানুষ ছিলেন বিধায় তাঁরাও স্বভাবতই তাঁদের কিতাবগুলোতে ক্বিতাল/জিহাদের বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কিত আলোচনা’র মূল প্রতিপাদ্য চিত্রকে এমন একজন মুসলীমের কথা মাথায় রেখে পেশ করেছেন, যে মুসলমান ব্যাক্তিটি যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হয়ে তার ঢাল তরবারী ইত্যাদি দিয়ে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এজন্য তাঁরাও কুরআনের ব্যাখ্যা হাদিস ও সুন্নাহ’র অনুসরনে খোঁড়া, ল্যাংড়া, বৃদ্ধ, নারী, শিশু প্রমুখকে عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) কিংবা عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে গণ্য করেছেন, আর বলাই বাহুল্য তা কুরআন সুন্নাহ’র যথার্থ ব্যাখ্যা মোতাবেকই হয়েছে। আর আমিও তাঁদের ব্যাখ্যারই অনুসরন করে দেখিয়েছি যে, আমাদের এ যুগে যেসকল মুসলমান সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে জিহাদ করবে, তাদের মধ্যে কোন্ কোন্ ধরনের ব্যাক্তি কুরআনের عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) কিংবা عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে গণ্য হতে পারে।
কিন্তু আমি চিন্তাশীল মহলের কাছে একটি বিশেষ দিক তুলে ধরতে চাই, আর সেটা হল, আজ আমরা ২০২১ ইং সালে এসে যে অভাবনীয় এক অত্যাধুনিক যুগের মধ্যে বাস করছি, সেখানে সরাসরি ময়দানে গিয়ে দুশমনের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ করার ক্ষেত্র না যতটুকু রয়েছে, তার চাইতে অকল্পনীয় প্রশস্ত ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে ময়দানের বাহিরে অনেক নিরাপদে অবস্থান করে দুশমনের সাথে যুদ্ধ করার। ময়দানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে দুশমনের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে উপরের মাসআলা তো ঠিকই আছে, কিন্তু যে সকল ক্ষেত্রে “ময়দানের বাহিরে অনেক নিরাপদে অবস্থান করে দুশমনের সাথে যুদ্ধ করা”র বিষয়টি সামনে আসে, সেক্ষেত্রে খোঁড়া, ল্যাংড়া, বৃদ্ধ, নারী প্রমুখকে যে সর্বদাই عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) কিংবা عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে গণ্য করতে হবে – সেটা আমার মতে সকল ক্ষেত্রে ঠিক নাও হতে পারে। বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি।
এ যুগে বহু শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্র তৈরী হয়েছে, (যেমন: চালকবিহীন যুদ্ধ ড্রোন, চালকবিহীন যুদ্ধ হেলিকপ্টার, চালকবিহীন ট্যাংক, চালকবিহীন যুদ্ধ রোবট, বিভিন্ন অত্যাধুনিক মিসাইল/ক্ষেপনাস্ত্র, এ্যাটোমিক মিসাইল ইত্যাদি) যেগুলো দিয়ে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে এসবের চালক/নিয়ন্ত্রনকারীকে সরাসরি যুদ্ধ ময়দানে উপস্থিত হয়ে এসব ব্যাবহার করতে হয় না, বরং যুদ্ধের টার্গেট থেকে কয়েক শত বা কয়েক হাজার মাইল দূর থেকেও এসব যুদ্ধাস্ত্রকে কম্পিউটার টেকনোলজির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন ও ব্যবহার করে দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায়। এমনকি এসব নিয়ন্ত্রনকারী অফিস/ঘর অনেক সময় বিশেষ নিরাপদ স্থানে (যেমন: জমিনের নিচে/পাহাড়ের নিচে) পর্যন্ত তৈরী করা হয়, যা দুশমনদের টার্গেট থেকে যথাসম্ভব নিরাপদ দূরুত্বে অবস্থান করে। এসব অফিস/ঘরে বসে বসে কম্পিউটারাইজড মেশিনের মাধ্যমে এসব যুদ্ধাস্ত্র নিয়ন্ত্রন ও ব্যবহার করা যায়, যার জন্য কোনো রকম উল্লেখযোগ্য দৈহিক পরিশ্রম/ধকল সওয়ার প্রোয়োজন হয় না আদৌ, শুধু প্রয়োজন হয় এসব চালানোর মতো পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা’র। আমি বলতে চাই, যে সকল মুসলমান ব্যাক্তি খোঁড়া, ল্যাংড়া, বৃদ্ধ, নারী ইত্যাদি হওয়ায় যুদ্ধর ময়দানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে সশস্ত্র জিহাদ করতে শক্তি সামর্থ রাখেন না বলে তারা কুরআনের عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) কিংবা عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে গণ্য হন, তাদের মধ্যেই কোনো খোঁড়া, ল্যাংড়া, বৃদ্ধ বা নারী যদি এসকল অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র চালানোর মতো জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী হন এবং কোনো রকম দৈহিক পরিশ্রম/ধকল ছাড়াই নিরাপদ ঘরে/অফিসে বসে বসে ভিডিও গেমের মতো সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারাইজড মেশিন চালিয়ে যুদ্ধ করার শক্তি সামর্থ রাখেন, তাহলে অন্তত এক্ষেত্রে সে আর عَلَى الضُّعَفَاءِ (দূর্বল ব্যাক্তিবর্গে উপরে) কিংবা عَلَى الْمَرْضَىٰ (রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিবর্গে উপরে)-এর মধ্যে গণ্য হতে পারে না।
>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন]