তিন তালাক : ইসলামী শরীয়াহ বনাম আইয়ূব খানের পাশকৃত আইন -২য় পৃষ্ঠা

তিন তালাক : ইসলামী শরীয়াহ বনাম আইয়ূব খানের পাশকৃত আইন – ২য় পৃষ্ঠা

এই আলোচনার পূর্বের অংশ পড়তে <<<  এখানে  ক্লিক করুন <<<

(পূর্ব আলোচনার বাকি অংশ)

সুন্নাহ তালাক

এসকল জনাবরা -‘তালাকে সুন্নাহ’ নামে যে পদ্ধতিটি প্রচলিত রয়েছে, সেটা মূলতঃ ‘তালাকে বিদআত’ই’ -এমর্মে যে দাবী উত্থাপন করেছেন, আমরা এবারে তাদের সে দাবীর উপরই সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করবো। তারা এপন্থাটিকে এজন্য ‘তালাকে বিদআত’ বলে অবিহিত করছেন, যেহেতু তাদের দৃষ্টিতে এটা ‘একটি অনর্থক কাজ’, যার প্রতি উৎসাহ দান না হওয়া উচিৎ। এর জবাবে আমরা সেরফ্ দুটি হাদিস পেশ করবো-

(১) রাসুলুল্লাহ হযরত ইবনে ওমর রা.-কে(১৭) বলেছেন- السنة أن تستقبل الطهر فتطلق لكل قرء‘সুন্নাহ (আদর্শিক পন্থা) হল, তুমি তুহরের অপেক্ষায় থাকবে, অতঃপর প্রত্যেক তুহরে তুহরে ‘তালাক’ দান করবে[দ্বারাকুতনী, ত্বাবরানী : নসবুর রায়া, যাইলায়ী- ৩/২২০; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৭/৩৩২, হাদিস ১৪৯৪৭; তালখিসুল হাবির, ইবনে হাজার- ৩/৪৬৪ হাদিস ১৮৯৮]

উপরোক্ত হাদিসে খোদ রাসুলুল্লাহ এই (পন্থায় প্রদত্ত) তালাককে ‘তালাকে সুন্নাহ বলে অবিহিত করেছেন এবং তা গ্রহনযোগ্য বলেছেন।

(২) হযরত ইবনে ওমর রা. বলেন-

طلاق السنة ان تطلقها تطليقة و هى طاهر فى غير جماع فاذا حاضت و طهرت طلقها اخرى فاذا حاضت و طهرت طلقها اخرى
‘সুন্নাহ-তালাক হল, স্বামী তার স্ত্রীকে এমন তুহরে তালাক দিবে, যেক্ষেত্রে সে তার সাথে সহবাস করেনি। এর পর সে যখন পুনরায় হায়েয হতে পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তাকে আরেকটি তালাক দিবে। এমনিভাবে আবার যখন সে হায়েয হতে পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তাকে আরও একটি তালাক দিবে’। [সুনানে নাসায়ী– ৫/২৪৯, হাদিস ৫৫৫৭]

হযরত(১৮) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

من أراد أن يطلق للسنة كما أمر الله عز وجل فلينظرها حتى تحيض ثم تطهر ثم ليطلقها طاهرا في غير جماع ويشهد رجلين ثم لينظرها حتى تحيض ثم تطهر فإن شاء راجع وإن شاء طلق – أخرجه البيهقي فى السنن الكبرى : ٧/٣٣٢ رقم ١٤٩٤٦ ; عبد الرزاق فى المصنف: ٦/٣٠٣ رقم ١٠٩٢٩;

যে ব্যাক্তি কামনা করে যে, সে সুন্নাহ অনুযায়ী তালাক দিবে যেমনটা আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাহলে সে যেন তার স্ত্রীর হায়েয আসার পর তার পবিত্র হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, এরপর তার এমন তুহুরে তাকে তালাক দেয়, যেক্ষেত্রে সে তার সাথে সহবাস করেনি। [সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৭/৩৩২, হাদিস ১৪৯৪৬; আল-মুসান্নাফ, আব্দুর রাজ্জাক- ৬/৩০৩, হাদিস ১০৯২৯]

এবারে থাকলো একথা যে, ‘এই পন্থার প্রতি উৎসাহ দান না হওয়া উচিৎ’। বলি, এ পন্থার প্রতি হিম্মত জোগানোর কথা কে বলেছে? আলোচনার শুরুর দিকে আপনারা পড়ে এসেছেন যে, তালাকের ক্ষেত্রে এই পন্থাটিকে যে ‘তালাকে সুন্নাহ’ বলা হয়ে থাকে, সেটা নিছক এজন্য যে, এ পন্থাটি কোনোা নাজায়েয বা বিদআত কিছু নয়, যদিও-বা এর প্রতি কোনো খানেই হিম্মত জোগান দেয়া হয় নি, আর না একথা বলা হয়েছে যে, একাজ করলে কোনো রকম সওয়াব পাওয়া যাবে।

বস্তুতঃ ইসলামী শরিয়াহ চায়, যেন একটির বেশি ‘তালাক’ দেয়াই না হয়, যাতে রাগ প্রশমিত হয়ে যায়, পরিস্থিতি সংশোধন ও মিলমিশের দিকে গড়াতে থাকে এবং আবারও (স্বামী-স্ত্রীর) সেই পূর্ব-সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করা যায়। কিন্তু কেউ যদি এই বেউকুফি করতেই চাই, সেক্ষেত্রে তাকে এ থেকে বাঁধা প্রদান করা হয় নি। (বরং বিয়ে ও তালাকের মতো একটি আমানতকে আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য তাঁর দেখানো পথে করা হয়েছে কিনা – তার বিচার কেয়ামত দিবসের জন্য মওকুফ রাখা হয়েছে। যাহোক, তালাক দিতে চাইলে) সে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন তুহরে তিন তালাক দিয়ে দিবে। হ্যাঁ একই সাথে তিন ‘তালাক’ দিতে অবশ্যই নিষেধ করা হয়েছে, যাতে করে ‘তালাক’ জিনিসটি কারও নিছক সাময়িক ঘৃনাবোধগত আবেগের পরিণতিফল হতে না পারে। বরং যেমনিভাবে বিবাহকে বিশেষ নিয়মের আলোকে সম্পাদিত হয়েছিল, তেমনি ভাবে যেন তালাকটাও চিন্তাভাবনা করেই দেয়া হয়।

বিদআত তালাক

পারিবারিক আইনের উকিলগণ তালাকের এ দফাটির সমর্থনে আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ র. এবং ‘আহলে জাহেরগণের বক্তব্যকে পেশ করে থাকেন। কিন্তু আপনারা পড়ে এসেছেন যে, ওনাদের বক্তব্য দ্বারা অর্ডিনেন্সের সমর্থন হয় না। হ্যাঁ কেবল একটি সুরতের সমর্থন হয়; আর সেই সুরতটি হল, ‘কেউ যদি এক সাথেই তিন তালাক দিয়ে বসে, তখন সেটাকে বলা হয় ‘তালাকে বিদআত’। এ ক্ষেত্রে গোটা উম্মাহ’র বিপরীতে আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এবং কতিপয় ‘আহলে জাহের’ এ কথার প্রবক্তা যে, একে এক তালাকই মনে করা হবে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ’র এই একক মত দ্বারা অর্ডিনেন্সের নিছক একাংশের সমর্থন মেলে(১৯)। এজন্য আমরা এ মাসআলাটির ক্ষেত্রেও তাদের দলিল প্রমাণগুলোকে খতিয়ে দেখবো।

ইবনে আব্বাস রা.-এর রেওয়ায়েত

আলোচ্য ব্যাপারে সর্বপ্রথম হযরত (আব্দুল্লাহ) ইবনে আব্বাস রা.-এর একটি বর্ণনাকে (দলিল হিসেবে) পেশ করা হয়ে থাকে, যেখানে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সা. হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর জামানায় এবং হযরত ওমর রা.-এর (খিলাফতের) প্রথম দু’বৎসর (এক মজলিসে প্রদত্ত) তিন তালাককে এক তালাক হিসেবে গণ্য করা হত। হযরত ওমর রা. বললেন: লোকজন এই ব্যাপারে তড়িঘড়ি শুরু করে দিয়েছে। সুতরাং, আমরা (এক মজলিসে প্রদত্ত) তিন তালাককে (তিন তালাক হিসেবেই) কার্যকর করে দিবো না কোনো। এরপর তিনি (এক মজলিসে প্রদত্ত) তিন তালাককে (তিন তালাক হিসেবেই) কার্যকর করে দেন।

হাদিসটি(২০) এই, ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন:

كَانَ الطَّلَاقُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وَسَنَتَيْنِ مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ طَلَاقُ الثَّلَاثِ وَاحِدَةً فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِنَّ النَّاسَ قَدْ اسْتَعْجَلُوا فِي أَمْرٍ قَدْ كَانَتْ لَهُمْ فِيهِ أَنَاةٌ فَلَوْ أَمْضَيْنَاهُ عَلَيْهِمْ فَأَمْضَاهُ عَلَيْهِمْ

‘রাসুলুল্লাহ হযরত আবু বকর রা. এবং হযরত ওমর রা.-এর খিলাফতের প্রথম দু’বৎসর (এক মজলিসে প্রদত্ত) তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হত। পরে হযরত ওমর বিন খাত্তাব রা. বললেন: লোকজন -যে জিনিসের মধ্যে তাদের জন্য সহজতা নিহিত ছিল, তারা তাতে তড়িঘড়ি শুরু করে দিয়েছে। সুতরাং, আমরা যদি সেটিকে তাদের উপর কার্যকর করে দেই, তো তা দেয়া যায়। (অর্থাৎ, এখন যদি একই মজলিসে প্রদত্ত তিন তালাককে তিন তালাক হিসেবে গণ্য করা যায়, তাহলে তাও করা যায়)। ফলতঃ তিনি তাদের উপর তা কার্যকর করে দিলেন’[সহীহ মুসলীম, হাদিস ১৪৭২; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২২০০ ; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩৪০৬]

এক্ষেত্রে মাসআলাটির হাক্বিকত পূর্বেও পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে যে, কেউ যদি (তালাক দানের সময়) তিন বার ‘তালাক’ শব্দটি ব্যবহার করে, কিন্তু নিয়ত ‘এক-তালাক’ই থাকে এবং সে নিছক কথাটিতে জোর দানের নিয়তে তালাক শব্দটি বার বার উচ্চারণ করতে থাকে, তাহলে (উক্ত ব্যাক্তির) দ্বীনদারিত্বের (উপর আস্থা রাখা গেলে, তার এক-তালাক দানের উদ্দেশ্য ছিল মর্মে তার স্বীকারোক্তিকে সত্য ধরে নিয়ে তার) ভিত্তিতে (ওই তিনবার বা ততধিক উচ্চারিত তালাক কথাগুলোকে) এক তালাকই মনে করা হয়ে থাকে।

রাসুলুল্লাহ , এবং হযরত আবু বকর রা.-এর জামানায়, এমনকি হযরত ওমর রা.-এর (খিলাফতের) প্রথম দিকে মানুষের দ্বীনদারিত্ব ব্যাপক ছিল, যার উপর আস্থা রাখা যেতো। কিন্তু হযরত ওমর রা. যখন দেখলেন যে, দ্বীনদারিত্বের মানদন্ডে দিন-কে-দিন ঘাটতি হতে চলেছে এবং ভবিষ্যতে এর কিছুই থাকবে না, লোকজন মিথ্যা কথা বলে বলে হারামে লিপ্ত হয়ে পরবে, তখন তিনি সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর সাথে পরামর্শ করে (রাজ্যে) এক সাধারণ হুকুম কার্যকর করে দিলেন যে, ‘এখন থেকে (একই বাক্যে প্রদত্ত) তিন-তালাক তিন তালাকই গণ্য হবে। যে ব্যাক্তি আল্লাহ’র দেয়া সহজতার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে তালাক কথাটিকে তিনবার উচ্চারণ করবে, সেটা বর্সাবস্থায় তিন তালাকই গণ্য হবে।’

বলা বাহুল্য, যদি এই ফয়সালাটি কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক না হত, তাহলে হযরত ওমর রা. এটা কেনো করতেন? অথবা তিনি যদি তা করতেনও, তাহলে রাসুলুল্লাহ সা.-এর কথার উপর জীবন-উৎসর্গকারী সাহাবায়ে কেরাম রা. কিকরে তা মেনে নিতেন? বোঝা গেল যে, তাঁর ওই ফয়সালাটি একদম কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেকই ছিল। আর এক-তালাক দেয়ার নিয়তে প্রদত্ত ‘তিন-তালাক’কের ক্ষেত্রে সেটাকে এক-তালাক গণ্য করাটাও একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত ছিল। সে সময়টি যখন শেষ হয়ে গেল, তখন এটাও আর অবশিষ্ট রইলো না। ইমাম চতুষ্টয় এবং জমহুর ওলামায়ে কেরামও একারণেই একে গ্রহন করে নিয়েছেন। ইমাম নববী রহ. একথাটি শরহে মুসলীম-এ পরিষ্কার করে লিখেছেন-

‘হযরত ওমর রা. তাঁর যুগের অবস্থার দিকে দৃষ্টি দিয়ে সরকারী ভাবে এ কাজটি করেছিলেন। আজ যদি (কোথাও সমাজের মানুষের) সেই অবস্থা বিদ্যমান না থাকে, তাহলে (হযরত ওমরের) ওই হুকুমকে অবশিষ্ট রাখাটা হবে একদম বারাবারি’। [শারহু মুসলীম, নববী]

আপনারা দেখলেন যে, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর জামানার ওই অবস্থা -যার কারণে তালাকদাতার কেবল দ্বীনদারিত্বের উপর ভরসা করাকে পরিত্যাগ করা হয়েছে -তা এই ছিল যে, তিনি দিন-কে-দিন (সমাজের মুসলমানদের) দ্বীনদারিত্বে ঘাটতি হতে চলেছে দেখতে পেয়েছিলেন, তাহলে (এযুগের) এসব পন্ডিতরা -যারা মনে করছে যে, আজ (সমাজে মানুষের) আর ওই অবস্থা অবশিষ্ট নেই -তাদের কি তাহলে মতলব এই যে, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর জামানার চাইতেও আজকালকার লোকদের দ্বীনদারিত্ব ও পরহেজগারীতা অধিক গ্রহনযোগ্য?….কি চমৎকার !!!!!

রুকানাহ রা.-এর হাদিস

যে সকল জনাব একই সাথে প্রদত্ত তিন-তালাককে এক-তালাকই গণ্য করে থাকেন, তারা হযরত রুকানাহ বিন আব্দে ইয়াযীদ রা.-এর একটি হাদিসের উপর সবচাইতে বেশি আনন্দবোধ করেন, (কারণ তারা মনে করেন যে, ওই হাদিসটি তাদের স্বপক্ষের একটি মজবুত দলিল)। তাই এর আসল অবস্থাও এখানে বুঝে নিন।

(এই ব্যাপারে হযরত রুকানাহ রা.-এর সূত্রে যতগুলো হাদিস বর্ণিত আছে, সেই) রেওয়ায়েতগুলোর বক্তব্যে ভিন্নতা রয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে যে, হযরত রুকানাহ রা. তাঁর স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিলেন, কিন্তু রাসুলুল্লাহ তার স্ত্রীকে পুণরায় তার কাছে ফিরিয়ে দেন। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় আছে যে, তিনি (তাঁর স্ত্রীকে) ‘আল-বাত্তাহ’ শব্দযোগে তালাক দিয়েছিলেন। ইমাম আবু দাউদ রহ. ‘আল-বাত্তাহ’ ওয়ালা বর্ণনাটিকে এজন্য সহিহ বলে উল্লেখ করেছেন যে, ওই হাদিসটি খোদ হযরত রুকানাহ রা.-এর সন্তানদের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর বলাই বাহুল্য, তাঁর ঘরের লোকরা জন্য ঘটনাটি সম্পর্কে যে পরিমান জ্ঞান লাভ করা সম্ভব, সেটা অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়।

কিন্তু এতটুকু ব্যাপারে কারো দ্বিমত হতে পারে না যে, রাসুলুল্লাহ হযরত রুকানাহ’র স্ত্রীকে তার কাছে দ্বিতীয়বারের মতো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তখন, যখন তার থেকে একথার কসম নিয়েছিলেন যে, এক তালাক দেয়াই তার উদ্দেশ্য ছিল। (বারবার তালাক কথাটি বলা ছিল নিছক তাগিদ বুঝানোর জন্য)। যেমন: মিশকাত শরীফে তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমীর সূত্রে এই রেওয়ায়েতটির যে আলফাজ উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা এই-

عن ركانة بن عبد يزيد أنه طلق امرأته سهيمة البتة ، فأخبر بذلك النبي – صلى الله عليه وسلم – وقال : والله ما أردت إلا واحدة ، فقال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : والله ما أردت إلا واحدة ، فقال ركانة : والله ما أردت إلا واحدة ، فردها إليه رسول الله – صلى الله عليه وسلم – হযরত রুকানাহ বিন আব্দে ইয়াজীদ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তাঁর স্ত্রী সুহায়মাহ’কে ‘তালাকে আল-বাত্তাহ’ (তিন তালাক) দিলেন। পরে সে খরবটি নবী কে জানালেন এবং বললেন: আল্লাহ’র কসম, শুধুমাত্র এক তালাক দান করাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সা. বললেন: আল্লাহ’র কসম, তুমি শুধুমাত্র এক তালাক দানেরই নিয়ত করেছিলে? হযরত রুকানাহ রা. বললেন: আল্লাহ’র কসম, শুধুমাত্র এক তালাক দান করাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সা. তার স্ত্রীকে তার কাছে ফিরিয়ে দিলেন [(২১)সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২২০৬; জামে তিরমিযী, হাদিস ১১৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ২০৫১; সুনানে দারেমী, হাদিস ২৪১৯; মিশকাত, হাদিস ৩২৮৩; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৪২৭৪; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৭/৫৫৯, হাদিস ১৪৯৯৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা, হাদিস ১৫৩৭; কিতাবুল উম্ম, ইমাম শাফেয়ী- ৫/১৪৭; শারহুস সুন্নাহ, বাগাভী- ৯/২০৯; সুনানে দারাকুতনী- ৪/৩৩; আল-মুসান্নাফ, ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ১৮৪৩৭]

এই রেওয়ায়েত থেকে এবিষয়টি  পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ সা. তিন-তালাক’কে এক-তালাক হিসেবে গণ্য করেছেন তখন, যখন হযরত রুকানাহ’র কাছ থেকে দু’বার কসম নিয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন যে, হযরত রুকানাহ রা. শুধুমাত্র এক-তালাকই দিতে চেয়েছিলেন।

একবার ভাল করে চিন্তা করে দেখুন, যদি একই সাথে প্রদত্ত তিন-তালাক স্বাভাবিকভাবে এক-তালাকই গণ্য হয়ে থাকতো, তাহলে রাসুলুল্লাহ সা.-এর দুইবার কসম নেয়ার কি প্রয়োজন ছিল? আর একথা-তো আপনাদের জানাই আছে যে, কোনো কারণ ছাড়া কসম করা বা কাউকে করানো -কোনোটাই শরীয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় কাজ নয়। একথাটি ওলামায়ে উম্মাতের এই দাবীর স্বপক্ষে একটি বড়মাপের সুস্পষ্ট দলিল যে, রাসুলুল্লাহ সা.-এর জামানায় (একই সাথে প্রদত্ত) তিন-তালাককে স্বাভাবিকভাবে এক-তালাক গণ্য করা হত না, বরং নিয়তের উপর নির্ভর করা হত। যতদিন পর্যন্ত নিয়তের উপর ভরসা করা গেছে, ততদিন পর্যন্ত সেই অনুপাতে আমল হয়েছে। আর যখন হযরত ওমর রা.-এর জামানায় তাঁর দূরদৃষ্টি এবিষয়টি আঁচ করলো যে, এখন আর নিয়তের উপর ভরসা করার মতো জামানা আর নেই, তখন তিনি নিয়তকে গণ্য করার পথও বন্ধ করে দিলেন। আর একারণেই সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কোনো একজনও তাঁর এই ফয়সালার উপর সমালোচনা করেননি।

এমনকি খোদ ইবনে আব্বাস রা. -যার ফতোয়াকে এক্ষত্রে বড়ই জোর-সোড়ে পেশ করা হয়ে থাকে যে-  اذا قال انت طالق ثلاثا بفم واحد فهى واحدة – -“কেউ যদি (একই সাথে) বলে যে ‘তোমাকে তিন-তালাক’, তাহলে সেটা এক তালাকই গণ্য হবে” –খোদ তাঁর এই ঘটনাটি ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছেন এভাবে-

عن مجاهد قال: كنت عند ابن عباس فجاءه رجل فقال: إنه طلق امرأته ثلاثا، قال: فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه، ثم قال: ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول: يا ابن عباس، يا ابن عباس، وإن الله قال: {وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا} وإنك لم تتق الله فلا أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك، 

হযরত মুজাহিদ রহ. বর্ণনা করেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে ছিলাম। তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে  বললো যে, সে তার স্ত্রীকে তিন-তালাক দিয়ে ফেলেছে। মুজাহিদ রহ. বলেন, তিনি (তার একথা শুনে) চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমি ধারনা করছিলাম যে, তিনি তার স্ত্রীকে তার কাছে ফিরিয়ে দিবেন। অতঃপর তিনি বললেন: তোমাদের কেউ কেউ (কিছু কিছু ব্যাপারে) হঠকারীতা করে অগ্রসর হয়, তারপর (তার মাথায়) নির্বুদ্ধিতা চেঁপে বসে (এবং আল্লাহ’কে ভয় না করে তড়িঘড়ি করে কিছু করে ফেলে), এরপর (এসে) বলে- হে ইবনে আব্বাস, হে ইবনে আব্বাস! আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন- وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا – ‘আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ’কে ভয় করবে, তিনি তার জন্য পথ বের করে দিবেন’। আর তুমি আল্লাহকে ভয় করো নি, তাই আমিও তোমার জন্য কোনো পথ পাচ্ছিনা। তুমি তোমার রবের নাফরমানী করেছো এবং তোমার স্ত্রী তোমার (বিবাহ-বন্ধন) থেকে ছিন্ন হয়ে গেছে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২১৯৭ ]

এথেকে পরিষ্কার বোঝা গেল যে, হযরত ওমর রা.-এর ফয়সালাটি কুরআন-সুন্নাহ’র ঠিক মনশা মোতাবেকই ছিল। এজন্য হযরত ইবনে আব্বাস রা. পরে এরই উপরই ফাতওয়া দেয়া শরু করেছিলেন। হযরত মুজাহীদ রহ. -যিনি এই ঘটনা বর্ণনা করছেন, তিনি সম্ভবতঃ হযরত ইবনে আব্বাসের আগের ফাতওয়ার কথা জানতেন। এজন্যই তিনি বলছেন যে,  ‘আমি ধারনা করছিলাম যে, তিনি তার স্ত্রীকে তার কাছে ফিরিয়ে দিবেন’। কিন্তু তিনি এমনটা করলেন না’।

তিনের  নিয়তে প্রদত্ত তালাকের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সা.-এর ফয়সালা

আপনারা দেখলেন যে, রাসুলুল্লাহ এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর জামানায় যেহেতু দ্বীনদারিত্ব ও সত্যবাদিতা ব্যাপকভাবে বিরাজমান ছিল, এজন্য কেউ যদি সেই জামানায় একথা বলতেন যে- ‘আমি এক-তালাকই দিয়েছিলাম, কিন্তু তাগিদ দেয়ার নিয়তে কথাটিকে বারংবার উচ্চারণ করে ফেলেছি’ – তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ তার কথাকে গ্রহন করে নিয়ে তা এক-তালাক হিসেবে গণ্য করে নিতেন।….হযরত ওমর রা. (মুসলমানদের) দ্বীনদারিত্বে দিন-কে-দিন ঘাটতি হতে চলেছে লক্ষ্য করলেন এবং লোকজনের কথার উপর নির্ভর করা ছেড়ে দিলেন। এর পর সকল সাহাবায়ে কেরামের আমল এই মোতাবেকই ছিল।

এই বিষয়টি-তো ওই সুরতের ক্ষেত্রে ছিল, যখন ‘তালাক’ কথাটি একই সাথে তিনবার উচ্চারণকারী ব্যাক্তির নিয়ত থাকতো এক-তালাক দান করা এবং সে নিছক (তালাক কথাটির উপর) জোর দেয়ার নিয়তে তা বারংবার উচ্চারণ করে ফেলতো। কিন্তু কেউ যদি একই সাথে তিন-তালাক দিয়ে ফেলতো এবং তার নিয়তও হতো তিন-তালাক দানই, তাহলে খোদ রাসুলুল্লাহ -ও সেটাকে তিন-তালাকই হিসেবেই গণ্য করতেন। এর ক্রমধারায় রাসুলুল্লাহ  এবং সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কিছু ফয়সালার প্রতি লক্ষ্য(২২) করুন: 

(১) হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত(২৩)

أن رجلا طلق امرأته ثلاثا فتزوجت فطلق فسئل النبي صلى الله عليه و سلم أتحل للأول ؟ قال : لا حتى يذوق عسيلتها كما ذاق الأول

‘এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দিলো। এরপর মহিলাটি আরেক জনকে বিয়ে করলো। ওই দ্বিতীয় স্বামীটিও তাকে তালাক দিলে নবী করিম ﷺ -এর কাছে জিজ্ঞেস করা হল: এখন কি সে তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে ? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: না, যাবৎ সে (দ্বিতীয় স্বামীর) সাথে সঙ্গমস্বাদ আস্বাদন করে না নেয়, যেমনি ভাবে প্রথম স্বামী (তার সাথে) সঙ্গম স্বাদ আস্বাদন করেছে’[সহিহ বুখারী- ৫/২০১৪; সুনানে নাসায়ী- ৬/৪৫৯; সুনানে সুগরা, বাইহাকী- ৬/৩২৬; সুনানে কুবরা, বাইহাকী- ৭/৩২৯; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ- ৩/৯৪; মুসনাদে আহমদ- ৬/১৯৩; মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই- ২/৩৭৫]

(২) ইমাম বুখারী রহ. একই অনুচ্ছেদে(২৪) হযরত উওয়াইমির আযলানী রা.-এর ‘লিয়ান’ সংক্রান্ত ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে যে, ‘লিয়ানে’র পর তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে উদ্দেশ্য করে বললেন- كذبت عليها يا رسول الله إن أمسكتها, فطلقها ثلاثا قبل أن يأمره رسول الله صلى الله عليه و سلم – ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমি যদি তাকে এখনও আমার কাছে (স্ত্রী হিসেবে) রাখি, তাহলে-তো আমি তার প্রতিই মিথ্যারোপ করলাম’। ফলত:, রাসুলুল্লাহ ﷺ কোনো নির্দেশ দেয়ার আগেই তিনি তাকে তিন তালাক দিয়ে দিলেন’। [সহিহ বুখারী- ৫/২০৩৩; সহিহ মুসলীম- ৪/২০৬; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৭/৪০০; সুনানে আবু দাউদ- ২/২৪২; সুনানে দ্বারাকুতনী- ৩/২৭৫; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৬/১১২, ১১৭; মুসনাদে আবু আউআনাহ- ৩/২০০; আল-মুসান্নাফ, আব্দুর রাজ্জাক- ৭/১১৫]

(৩) ইমাম বাইহাকী রহ. সুনানুল কুবরা’য় এই রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত(২৫) করেছেন-

كانت عائشة الخثعمية عند الحسن ابن على رضى الله عنه فلما قتل على رضى الله عنه قالت لتهنئك الخلافة قال بقتل على تظهرين الشماتة اذهبي فانت طالق يعنى ثلاثا قال فتلفعت بثيابها وقعدت حتى قضت عدتها فبعث إليها ببقية بقيت لها من صداقها وعشرة الآف صدقة فلما جاءها الرسول قالت (متاع قليل من حبيب مفارق) فلما بلغه قولها بكى ثم قال لولا انى سمعت جدى أو حدثنى أبى انه سمع جدى يقول ايما رجل طلق امرأته ثلاثا عند الاقراء أو ثلاثا مبهمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره ، لراجعتها. سنن الكبرى البيهقى, كتاب الخلع و الطلاق , باب ما جاء فى امضاء الطلاق الثلاث و ان كن مجموعات

হযরত সুওয়ায়েদ বিন গাফালা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আয়েশা খাছামিয়াহ (নামের এক মহিলা) হযরত হাসান বিন আলী রা. এর বিবাহাধিনে ছিলেন। যখন হযরত আলী রা.-কে হত্যা করা হল, তখন তিনি বললেন: ‘আপনার খিলাফত মুবারক হোক’ ! এতে হযরত হাসান রা. বলে উঠলেন: ‘তুমি হযরত আলী রা.-এর হত্যায় আনন্দ প্রকাশ করছো ? যাও, তোমাকে তালাক – অর্থাৎ তিনবার’! বর্ণনাকারী বলেন: ফলে তার স্ত্রী নিজকে পর্দায় নিয়ে নিলেন এবং ইদ্দত পালনে বসে গেলেন। ইদ্দত যখন শেষ হয়ে গেল, তখন হযরত হাসান রা. তার কাছে অবশিষ্ট পূর্ণ দেনমোহর পাঠিয়ে দিলেন, সাথে আরও অতিরিক্ত দশ হাজার দেরহাম দিলেন। যখন দূত (এসব অর্থকড়ি নিয়ে) তার কাছে এলো, তখন তিনি বললেন: বিচ্ছেদী প্রিয়ের পক্ষ থেকে সামগ্রী সামান্যই পেলাম! যখন তার কথাটি হযরত হাসান রা.- এর কাছে পৌছলো, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন এবং বললেন: ‘আমি যদি আমার নানাজান (রাসুলুল্লাহ ﷺ)-এর কাছ থেকে একথা না শুনতাম কিংবা আমার আব্বাজান (হযরত আলী রা.) যদি আমাকে না বলতেন যে, তিনি আমার নানাজানকে বলতে শুনেছেন: ‘যে ব্যক্তিই তার স্ত্রীকে তিন তুহরে তিন তালাক দেয় কিংবা তিনটি ‘মুবহাম’ তালাক দেয়, তখন সেই আর নারী তার জন্য হালাল থাকে না, যাবৎ না সে অপর স্বামীর সাথে নিকাহ করে নেয়’ -তাহলে আমি তাকে অবশ্যই (স্ত্রী হিসেবে) ফিরিয়ে নিতাম[সুনানে কুবরা, বাইহাকী- ৭/৩৩৬;  সুনানে দ্বারাকুতনী- ৪/৩০; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৩/৯১]

(৪) হযরত মাহমুদ বিন লাবিদ রা. থেকে(২৬) বর্ণিত,

أُخْبِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاثَ تَطْلِيقَاتٍ جَمِيعًا ، فَقَامَ غَضْبَان ، ثُمَّ قَالَ : أَيُلْعَبُ بِكِتَابِ اللَّهِ وَأَنَا بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ ؟ حَتَّى قَامَ رَجُلٌ ، وَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَلا أَقْتُلُهُ ؟

রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে সংবাদ দেয় হল যে, এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে এক সাথেই তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে। এতে তিনি ক্রধে দাঁড়িয়ে গেলেন অতঃপর বললেন:আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকতেই আল্লাহ’র কিতাব নিয়ে খেলতামাশা করা হচ্ছে! এমনকি এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কি তাকে হত্যা করবো না’। [সুনানে নাসায়ী- ২/৮২]

(৫) ইমাম ত্বাবরানী রহ. হযরত আব্দল্লাহ ইবনে ওমর রা. কর্তৃক তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় ‘তালাক’ দানের ঘটনা বর্ণনা করেছে(২৭) এবং শেষে এতটুকু অতিরিক্ত উদ্ধৃত করেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. রাসুলুল্লাহ ﷺ- কে জিজ্ঞেস করলেন: يا رسول الله , لو طلقتها ثلاثا كان لى ان اراجعها . قال اذا ابانت منك و كان معصية -‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি তাকে তিন তালাক দিতাম, তাহলে আমার জন্য কি তাকে ফিরিয়ে নেয়া জায়েয হতো? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: তাহলে সে তোমার জন্য ‘বায়েনা’ (সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন) হয়ে যেতো, আর সেটি হত একটি গোনাহ’র কাজ[ত্বাবরানী: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৪/৩৩৬]

(৬) ইমাম নাসায়ী রহ. ‘একই সাথে তিন তালাক’ কার্যকর হওয়ার স্বপক্ষে হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস রা.-এর ঘটনা দ্বারা দলিল দিয়েছেন, যার কথাগুলো নিম্নরূপ-

إنه قد أرسل إليها بثلاث تطليقات قالت: فقال رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “إنما النفقة والسكنى للمرأة إذا كان لزوجها عليها الرجعة – ‘অর্থাৎ ফাতেমা বিনতে কায়েসের স্বামী (হযরত হাফস বিন আমর বিন মুগিরাহ রা.) তাকে ‘তিন তালাক’ দিয়ে পাঠালেন। ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেন: তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: খোরপোস এবং বাসস্থান তো শুধুমাত্র ওই নারী পেতে পারে, যাকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার তার স্বামীর রয়েছ’। (যেহেতু তিন তালাকই কার্যকর হয়ে গেছে, তাই হালালাহ ব্যতীত তোমার স্বামীর জন্য তোমাকে ফিরিয়ে নেয়ার কোনো পথ খোলা নেই)[সুনানে নাসায়ী- ৬/১৪৪, হাদিস ৩৪০৩]

(৭) মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এবং ত্বাবরাণী’তে হযরত উবাদাহ বিন সামেত রা.  থেকে বর্ণিত (২৮)হয়েছে, তিনি বলেন: 

طلق بعض أبائي امرأته ألفا فانطلق بنوه إلى النبي صلى الله عليه وسلم , فقالوا : يا رسول الله إن أبانا طلق أمنا ألفا فهل من مخرج ؟ فقال : ” إن أباكم لم يتق الله فيجعل له من أمره مخرجا بانت منه بثلاثة على غير السنة , وتسعمائة وسبعة وتسعون إثم في عنقه ” .

আমার বাপ দাদাদের মধ্যে কেউ একজন তার স্ত্রীকে এক হাজারটা তালাক দিয়ে বসলো। এতে তার পুত্র রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এসে আরোজ করলো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার আব্বা আমার মা’কে হাজার তালাক দিয়েছেন। এখন তার জন্য পরিত্রাণের কি কোনো পথ আছে? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: তোমার আব্বা-তো আল্লাহ তাআলাকে কোনো ভয়ই করে নি যে, তিঁনি তার জন্য পরিত্রাণের কোনো পথ বের করে দিবেন। (কাজটি যদিও আমার শিখানো সুন্নত পরিপন্থী হয়েছে, কিন্তু) সুন্নাহ-পরিপন্থি অবস্থাতেও (তোমার মা) তার থেকে (ওর) ‘তিন তালাক’ দ্বারাই ‘বায়েনা’ (সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন) হয়ে গেছে। আর (বাদ বাকি) নয়’শ সাতানব্বই ‘তালাক’ তার ঘাড়ে গোনাহ’র বোঝা স্বরূপ রইলো’। [আল-মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক- ৬/৩৯৩]

(৮) ‘মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক’-এ সুফিয়ান সওরীর সূত্রে যায়েদ বিন ওয়াহহাব থেকে এই রেওয়ায়েত বর্ণিত(২৯) হয়েছে যে, হযরত ওমর রা.-এর কাছে এক ব্যাক্তির নিয়ে আসা হল, যে তার স্ত্রীকে ‘হাজার তালাক’ দিয়েছিল। সে বললো: إنما كنت ألعب (আমি তখন শুধু মজা করেছিলাম)। তখন ওমর রা. তাকে কোড়া ড়িয়ে মাড়লেন এবং বললেন: إنما يكفيك من ذلك ثلاث – তোমার (বিবাহ বিচ্ছেদের) জন্য ওর থেকে তিন তালাকই যথেষ্ঠ[মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ৬/৩৯৩, হাদিস ১১৩৪০]

(৯) ইমাম বাইহাকী রহ. এই রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করেছেন

عن انس بن مالك يقول قال عمر بن خطاب رضى الله عنه فى الرجل يطلق امرأته ثلاث قبل ان يدخل بها قال هى ثلاث لا تحل له حتى تنكح زوجا غيره و كان اذا اتى به اوجعه

‘হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বে তাকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে, তার সম্পর্কে হযরত ওমর রা. বলেছেন যে, ‘এটা তিন তালাকই। ওই নারী আর তার জন্য হালাল নয় যাবৎ না সে অপর কোনো স্বামীর সাথে নিকাজ করে নেয়। আর তার কাছে এরকম ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে শাস্তি দিতেন’। [সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৭/৩৩৪]

(১০) মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -এ(৩০) আছে-

عن ابراهيم بن محمد عن شريك بن ابى نمر قال: جاء رجل إلى علي فقال : إني طلقت امرأتي عدد العرفج ، قال : تأخذ من العرفج ثلاثا ، وتدع سائره. قال إبراهيم : وأخبرني أبو الحويرث عن عثمان بن عفان مثل ذلك

‘ইব্রাহিম বিন মুহাম্মাদ থেকে বর্ণিত, শরিক বিন আবি নমর বলেন: এক ব্যাক্তি হযরত আলী রা.-এর কাছে এসে বললো: ‘আমি আমার স্ত্রীকে ‘আরফায’ (গাছের সংখ্যা পরিমান তালাক দিয়ে দিয়েছি। হযরত আলী রা. বললেন: ‘তুমি (তোমার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য) আরফাযের মধ্য থেকে তিন (তালাক) কে নিয়ে বাকিগুলোকে ছেড়ে দাও। ইব্রাহিম বলেন: আবু হাওয়াইরছ -হযরত ওসমান বিন আফফান রা. থেকেও এরকম কথা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ৭/৩৯৪]

(১১) হযরত আতা বিন ইয়াসার রহ. সূত্রে বর্ণিত হয়েছে

جَاءَ رَجُلٌ يَسْأَلُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاَثاً قَبْلَ أَنْ يَمَسَّهَا، قَالَ عَطَاءٌ : فَقُلْتُ إِنَّمَا طَلاَقُ الْبِكْرِ وَاحِدَةٌ. فَقَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ : إِنَّمَا أَنْتَ قَاصٌّ، الْوَاحِدَةُ تُبِينُهَا، وَالثَّلاَثَةُ تُحَرِّمُهَا، حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ . موطأ الإمام مالك, كتاب الطلاق ,باب طَلاَقِ الْبِكْرِ

‘এক লোক এসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা.-এর কাছে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলো, যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই তাকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে। হযরত আতা বলেন:  আমি বললাম, ‘কুমারী নারী তালাক শুধু একটা’। এতে তিনি আমাকে বললেন: ‘তুমি আসলে একটা গল্পকার। (সঠিক কথা হল), এর তালাক তাকে ‘বায়েন’ করে দিবে এবং তিন তালাক তাকে (তার স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ রূপে) হারাম বানিয়ে দিবে -যাবৎ না সে অন্য কোনো স্বামীর সাথে নিকাহ করে নেয়’। [আল-মুআত্তা, ইমাম মালেক, হাদিস ১৬৬৩]

(১২) হযরত আলকামাহ রহ. থেকে বর্ণিত-

جاء رجل إلى بن مسعود فقال إني طلقت امرأتي تسعة وتسعين وإني سألت فقيل لي قد بانت مني فقال بن مسعود لقد أحبوا أن يفرقوا بينك وبينها قال فما تقول رحمك الله – فظن أنه سيرخص له – فقال ثلاث تبينها منك وسائرها عدوان

‘এক ব্যক্তি হযরত (আব্দল্লাহ) ইবনে মাসউদ রা.-এর কাছে এসে বললো: ‘আমি আমার স্ত্রীকে নিরানব্বই’টা তালাক দিয়েছি। আমি লোকজনের কাছেও জিজ্ঞেস করেছি, তারা আমাকে বলেছে যে, সে আমার থেকে ‘বায়েনা’ (সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন) হয়ে গেছে’। এতে হযরত ইবনে মাসউদ রা. বললেন: তোমার এবং তোমার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে যাক -এতেই ওরা খুশি’। সে বললোঃ ‘আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন, তাহলে আপনি কি বলেন’? সে ধারনা করেছিল যে, তিনি তার জন্য কোনো পথ বেড় করে দিবেন। ইবনে মাসউদ রা. বললেন: তিন তালাকই তাকে তোমার থেকে ছিন্ন করে দিয়েছে, আর বাদবাকি তালাকগুলো সীমা লঙ্ঘন’[মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস ১১৩৪৩]

(১৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

من طلق امرأته ثلاث طلقت و عصى ربه

‘যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিল, সে (স্ত্রীকে তিন) তালাকই দিয়ে হল। আর (এতে করে) সে তার রবের নাফরমানী করলো’। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস ১১৩৪৪]

(১৪) হযরত মুআবিয়া বিন আবি আইয়াশ আনসারী রা. বর্ণনা করেন-

أَنَّهُ كَانَ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ وَعَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ فَجَاءَهُمَا مُحَمَّدُ بْنُ إِيَاسِ بْنِ الْبُكَيْرِ فَقَالَ: إِنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ بِهَا، فَمَاذَا تَرَيَانِ؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ إِنَّ هَذَا الْأَمْرَ مَا لَنَا فِيهِ قَوْلٌ، فَاذْهَبْ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ فَإِنِّي تَرَكْتُهُمَا عِنْدَ عَائِشَةَ، فَسَلْهُمَا ثُمَّ ائْتِنَا فَأَخْبِرْنَا، فَذَهَبَ فَسَأَلَهُمَا، فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِأَبِي هُرَيْرَةَ: أَفْتِهِ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ فَقَدْ جَاءَتْكَ مُعْضِلَةٌ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: الْوَاحِدَةُ تُبِينُهَا، وَالثَّلَاثَةُ تُحَرِّمُهَا، حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِثْلَ ذَلِكَ قَالَ مَالِكٌ . موطأ مالك, كِتَابُ الطَّلَاقِ بَابُ طَلَاقِ الْبِكْرِ

‘তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের, রা. ও  হযরত আসেম বিন ওমর বিন খাত্তাব রা.-এর সাথেই উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় মুহাম্মদ বিন আইয়াস বিন বাকির তাঁদের দু’জনের কাছে এসে বললেন:‘এক গ্রাম্য ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই তাকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে। এখন আপনাদের দুজনের মত কি? তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. বললেন: এ সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো কথা পৌছেনি। আপনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং হযরত আবু হুরায়রা’র কাছে যান। আমি তাদের দু’জনকে হযরত আয়েশা’র কাছে ছেড়ে এসেছি। সেখানে তাদের দু’জনের কাছে জিজ্ঞেস করে পরে আমাদের কাছে এসে বিষয়টি জানাবেন। সুতরাং, তিনি গিয়ে তাদের দু’জনের কাছে জিজ্ঞেস করলেন। তখন হযরত ইবনে আব্বাস রা. হযরত আবু হুরায়রা রা.-কে বললেন: ‘হে আবু হুরায়রা! আপনিই জবাব দিন; বস্তুতঃ আপনার কাছে একটি পছন্দসই মাসআলা এসে গেছে। তখন হযরত আবু হুরায়রা রা. বললেন: ‘এক তালাক দ্বারাই সে (তার স্বামী থেকে) ছিন্ন হয়ে গেছে, আর তিন তালাক দ্বারা সে (তার স্বামীর জন্য সম্পূর্ণরূপে) হারাম হয়ে গেছে -যাবৎ না সে অন্য কোনো স্বামীর সাথে নিকাহ করে নেয়’।’। হযরত ইবনে আব্বাসও একই জবাব দিলেন’[মুআত্তা মালেক]

(১৫) হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন:

 سمع النبي صلى الله عليه وسلم رجلا طلق امرأته ألبتة ، فغضب ، وقال : تتخذون آيات الله هزوا ، أو لعبا ؟ من طلق ألبتة ألزمناه ثلاثا ، لا تحل له حتى تنكح زوجا غيره – রাসুলুল্লাহ এক ব্যাক্তিকে তার স্ত্রীকে ‘তালাকে আল-বাত্তাহ’ (তিন তালাক) দিতে শুনলেন। এতে তিনি রাগাহ্নিত হলেন এবং বললেন: তোমরা আল্লাহ’র আয়াতকে মশকরা বানাচ্ছ, অথবা (বললেন) খেলতামাশা বানাচ্ছ? যে ব্যাক্তি ‘তালাকে আল-বাত্তাহ’ দিবে, আমরা সেটাকে তিনই গণ্য করবো। তার জন্য (ওই স্ত্রীলোক) হালাল হবে না -যাবৎ না সে অন্য কোনো স্বামীর সাথে নিকাহ করে’। [সুনানে দারাকুতনী: আল-মুগনী, ইবনে কুদামাহ- ৭/১০৩] 

(১৬) ইমাম দ্বারাকুতনী নিজ সনদে হযরত উবাদাহ বিন সামেত রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

 طلق بعض آبائي امرأته ألفا ، فانطلق بنوه إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا : يا رسول الله ، إن أبانا طلق أمنا ألفا ، فهل له مخرج ؟ فقال : إن أباكم لم يتق الله فيجعل له من أمره مخرجا ، بانت منه بثلاث على غير السنة ، وتسعمائة وسبعة وتسعون إثما في عنقه

‘আমার কোনো এক দাদা তার স্ত্রীকে এক হাজার তালাক দিয়েছিলেন। তখন তার ছেলে রাসুলুল্লাহ -এর কাছে গিয়ে বললেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাদের আব্বা আমাদের মা’কে এক হাজার তালাক দিয়েছেন। এখন (এ থেকে) বেড়োনোর কোনো পথ আছে কি?। তখন তিনি বললেন: তোমাদের পিতা আল্লাহ’কে ভয় করেনি যে, তিঁনি তাঁর নির্দেশে তার জন্য কোনো পথ বেড় করে দিবেন। (এভাবে  তালাক দানের পদ্ধতিটি) সুন্নাহ বহির্ভূতভাবে (সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও ওর মধ্যে থেকে) তিন তালাক দ্বারা তোমার মা তার (বিবাহ-বন্ধন) থেকে ছিন্ন হয়ে গেছে। (বাকি) নয়’শ নিরানব্বইটি (তালাক) তার গলায় পাপ হয়ে থাকবে’। [সুনানে দারাকুতনী-৫/৩৬, হাদিস ৩৯৪৩; আল-মুগনী, ইবনে কুদামাহ- ৭/১০৪] 

(১৭) হযরত ইবনে ওমর রা.-এর হাদিসে রয়েছে যে, তিনি বলেন:

 قلت : يا رسول الله ، أرأيت لو طلقتها ثلاثا ؟ قال : إذا عصيت ربك ، وبانت منك امرأتك 

 আমি জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি (আমার) স্ত্রীকে (একই সাথে) তিন-তালাক দিয়ে দিলে (সেক্ষেত্রে) আপনার রায় কি? রাসুলুল্লাহ বললেন: তাহলে সেটা হবে তোমার রবের নাফরমানী এবং তোমার স্ত্রী তোমার (বিবাহ-বন্ধন) থেকে ছিন্ন হয়ে যাবে। [সুনানে দারাকুতনী: আল-মুগনী, ইবনে কুদামাহ- ৭/১০৩] 

এসব রেওয়ায়েত আমাদের উপরোক্ত দাবীর স্বপক্ষে এতটাই পরিষ্কার দলিল যে, এগুলোর দালিলিক ব্যাখ্যা পেশ করার কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে রাসুলুল্লাহ  এবং বিগত রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস রা. তিন-তালাক’কে তিন হিসেবেই গণ্য করেছেন।

আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, এসকল হাদিস থেকে সামগ্রীকভাবে যে বিষয়টি বেড়িয়ে আসে, তা এছাড়া আর কি যে, তিন-তালাক’তে তিনের নিয়তে দেয়া হয়ে থাকলে  রাসুলুল্লাহ সহ সকল সাহাবায়ে কেরামের সর্বসম্মত ফয়সালা ছিল এই যে, তা তিন-তালাক হিসেবেই অবিহিত হবে। এব্যাপারে না কোনো এক জনেরও দ্বিমত আছে, আর না এমনটা হয়েছে যে, এই ফয়সালা-তো কোনো এক জামানায় বিদ্যমান ছিল বটে, কিন্তু অন্য এক জামানায় এই বিপরীত কোনো ফয়সালা দেয়া হয়েছে। বরং হামেশা প্রত্যেক জামানায় একদম সর্বসম্মতভাবে এর উপর আমল চলে আসছে।

হ্যা, তিন-তালাক দ্বারা কেউ যদি এক তালাক উদ্দেশ্য নেয়, তাহলে যে জামানায় লোকজনের দ্বীনদারিত্বে উপর আস্থা রাখা গেছে, সে জামানায় সামগ্রীক ভাবে সেটাকে এক তালাকই গণ্য করা হয়েছে। আর যে জামানায় এই আস্থা উঠে গেছে, সে জামানায় একে সামগ্রীকভাবে তিন-তালাকই গণ্য করা হয়েছে। এর উদাহরণ ঠিক এমন যেমন কেউ বললো যে ‘আমি “হিবাহ” শব্দটি উচ্চারণ করেছিলাম, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল বাই/বিক্রয়’। তো বোঝাই যাচ্ছে যে, দুনিয়ার কোনো আইনেও তার এই কথার উপর বিশ্বাস করা হবে না। কেননা, এজামানায় লোকজনের দ্বীনদারিত্বের উপর বিশ্বাস করা যায় না।   

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এবং ইবনে কাইয়্যেম রহ.

পারিবারিক আইনের উকীলরা এ দফা’র সমর্থনে আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. আল্লামা ইবনে কাইয়্যেম রহ. এবং ইমাম আহমদ রহ.- এর নাম বারবার নিয়ে থাকেন। হযরত ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এবং হযরত ইবনে কাইয়্যেম রহ. সম্পর্কে কথা হল, নিঃসন্দেহে তাঁরা গোটা আলেম সমাজের বিপরীতে একথার প্রবক্তা যে, একসাথে প্রদত্ত‘তিন তালাক’কে এক তালাকই গণ্য করা হবে। কিন্তু তাঁদের অভিমত দ্বারা কক্ষোনই অর্ডিনেন্সের সমর্থন হয় না কেননা, ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এবং ইবনে কাইয়্যেম রহ. তিনটি ভিন্ন ভিন্ন তুহরে প্রদত্ত তিন তালাককে তিনই গণ্য করে থাকেন। অথচ অর্ডিনেন্স একেও ‘তিন তালাক’ হিসেবে গণ্য করে না। হ্যাঁ, এর দ্বারা অর্ডিনেন্সের শুধুমাত্র একটি মাসআলার’ই সমর্থন মেলে, আর সেটা হল, যদি একই সাথে তিন তালাক দেয়া হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এবং ইবনে কাইয়্যেম রহ. সেটাকে এক তালাক হিসেবেই অবিহিত করেন।

কিন্তু একটু লক্ষ্য করে দেখুন যে, উম্মাহ’র অপরাপর গোটা আলেম সমাজ তাঁদের এ মতটিকে গ্রহন করেন নি। কেননা, তাঁদের এই মতটি স্বত্ত্বাগতভাবে সমালোচনা ও দৃষ্টিদানের কোনো মর্যাদাই রাখে না। আমাদের আইন-রচয়ীতারা আইনের সমর্থনে হযরত ইবনে তাইমিয়্যাহ’র রেফারেন্স দেয়া ছাড়া আজ পর্যন্ত আর কেউই কোনো দলিল উপস্থাপন করেন নি। গোটা ইলমী দুনিয়া জানে যে, তাঁরা এ মাসআলার ক্ষেত্রে গোটা উম্মাহ’র সাথে মতভিন্নতা প্রদর্শন করেছেন। এ কারণে তাঁদের বক্তব্যকে মাসআলার দলিল বানিয়ে পেশ করাটা মারাত্মক ভুল।

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ’র ইলম, বুজুর্গী, দুনিয়াবিমূখতা এবং পরহেজগারী সম্পর্কে কথা হল, তা সম্পূর্ণ চোখে তুলে রাখার মত। কিন্তু তাঁর বিপরীত দিকে যে সকল ওলামা ও ফুকাহাবৃন্দ বিদ্যমান রয়েছেন, তাঁদের উপর শুধু নজর বুলিয়ে যাওয়া কি করে চলে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমামে আজম আবু হানীফা রহ., ইমাম শাফেয়ী রহ., ইমাম মালেক রহ., এবং ইমাম আহমত বিন হাম্বল রহ.-এর ন্যায় হযরতগণ, যাঁদের ইলমী মাকাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ’র চাইতে আরো বহুগুণ উচুঁদরের ও উচ্চমার্গের। তাঁর সাথে আল্লামা ইবনে কাইয়্যেম রহ.-কেও মিলিয়ে নিন। উম্মতের দু’জন আলেম এক দিকে, আর অপর দিকে হলেন অন্যান্য সমস্ত আলেম সমাজ, ফিকাহবীদ এং মুজাতাহীদবৃন্দ।

এটা কি ধরনের বিবেকহীনতা যে, আমরা নিজেরা কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা ইস্তেমবাত (উদ্ভাবন) করার সামর্থ ও যোগ্যতাগুণ না রাখা সত্ত্বেও উম্মাহ’র গোটা আলেম সমাজের ইলম ও বুজুর্গী থেকে চোখ বন্ধ করে রেখে দিচ্ছি, তাঁরা যে সকল দলিল-প্রমাণ পেশ করেছেন সেগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপও করছি না, অন্যদিকে শুধুমাত্র হযরত ইবনে তাইমিয়্যাহ এবং কাইয়্যেমের পিছু নিয়ে তাঁদের ওইসকল বক্তব্যের পুনঃরাবৃত্তি করা শুরু করে দিচ্ছি, যেসকল কথা তাঁরা গোটা উম্মাহ’র বিপরীতে বলেছেন!

এই দুজন হযরত এক্ষেত্রে একা। উম্মাহ’র বাদ বাকি সমস্ত মুজতাহীদ ইমামগণ এনাদের বিপক্ষে। সুতরাং, উম্মাহ’র গোটা আলেম সমাজ যে মতটিকে অবলম্বন করে নিয়েছেন, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

[[(৩১)ইমাম ত্বাবরানী (মৃ: ৩৬০ হি:) রহ. উত্তম সনদে হযরত আলী রা. থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী রা. বলেন- قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنْ نَزَلَ بِنَا أَمْرٌ لَيْسَ فِيهِ بَيَانٌ : أَمْرٌ وَلا نَهْيٌ ، فَمَا تَأْمُرُنَا ؟ قَالَ : ” تُشَاوِرُونَ الْفُقَهَاءَ وَالْعَابِدِينَ ، وَلا تُمْضُوا فِيهِ رَأْيَ خَاصَّةٍ – رواه الطبـراني فــي الأوســط: رقم الحديث ١٦٤٧, قال الهيثمي فـي مــجمـع الزوائد:١٠/١٧٨ رجاله موثقون من أهل الصحيح, الهندي في كنز العمال رقم ٤١٨٨، وقال عنه حسن صحيح, و خليفة بن خياط فـي مسنده, رقم الحديث ٤٦ আমি বললাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমাদের কাছে যদি এমন কোনো ব্যাপার সামনে আসে, যে সম্পর্কে (কুরআন ও সুন্নাহ’র কোথায়ও পরিষ্কার করে কিছু) বলা নেই, আবার (সে সম্পর্কে) কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই, সেক্ষেত্রে আপনি আমাদেরকে কি করার নির্দেশ দেন? রাসুলুল্লাহ এরশাদ করলেন: تُشَاوِرُونَ الْفُقَهَاءَ وَالْعَابِدِينَ ، وَلا تُمْضُوا فِيهِ رَأْيَ خَاصَّةٍ –(তখন) তোমরা ফকিহ ও আবেদ (আলেম)গণের সাথে পরামর্শ করো এবং সে ব্যাপারে কোনো একক (ব্যাক্তির) মতামতকে গ্রহন করো না। [আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরানী, হাদিস ১৬৪৭; মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাইছামী-১০/১৭৮; হাঞ্জুল উম্মাল, মুত্তাকী, হাদিস ৪১৮৮; মুসনাদে খালিফাহ, হাদিস ৪৬]

এই হাদিস থেকে বোঝা গেল, কোনো জামানায় যদি দেখা যায় যে, কোনো মুহাক্কেক আলেম (কুরআন-সুন্নাহ থেকে) ইসতেহাদ করে কোনো বিষয়ে এমন একক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, যার বিপরীতে পূর্বজামানার বা সেই জামানার আহলে হক্ব ফিকাহবীদ ও আবেদ আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে অন্য মত পোষন করছেন, তাহলে সর্বসাধারণ মুসলমানদের উপর ওয়াজিব হল ওই একক মতের অনুসরণ না করে আলেমগণের ইজমা (ঐক্যমত)-কে অনুসরণ করা। এর কারণ হল, আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের আহলে হক্ব ফিকাহবীদ ও আবেদ আলেমগণের জামাআত’কে পথভ্রষ্ঠতার উপর একমত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। ইমাম ইবনু আবি আসেম (মৃ: ২৮৭ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সুন্নাহ’তে হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে একটি সহিহ হাদিস বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন-إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَجَارَ أُمَّتِي أَنْ تَجْتَمِعَ عَلَى ضَلَالَةٍ . وصححه الألباني في ” صحيح الجامع ١٧٨٦নিশ্চই আল্লাহ আমার উম্মতকে পথভ্রষ্ঠতার উপর ইজমাবদ্ধ/ঐক্যবদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন’। [আস-সুন্নাহ, ইমাম ইবনু আবি আসেম-৮৩; সহিহ জামে-১৭৮৬; হাদিসটি সহিহ] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي عَلَى ضَلَالَةٍ – وصححه الألباني في “صحيح الترمذيনিশ্চই আল্লাহ আমার উম্মতকে পথভ্রষ্ঠতার উপর ইজমাবদ্ধ/ঐক্যবদ্ধ করবেন না। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৬৭] এই হাদিসের বহু শাহেদ হাদিস রয়েছে এবং তা বহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং হাদিসের মাফহুম মুহাদ্দেস ওলামায়ে কেরামগণের কাছে মাকবুল ও সহিহ। আরো দেখুন: [মুসতাদরাকে হাকিম- ১/১৯৯, ২০১, হাদিস ৩৯১-৩৯৯, ৮৬৬৪; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরানী-৩/২৯২, ১২/৪৪৭, হাদিস ২১৭১, ৩৪৪০, ১৩৬২৩; সুনানে আবু দাউদ-২/৫০০ , হাদিস ৪২৫৩; মুসনাদে আহমাদ-৫/১৪৫, হাদিস ২১৩৩১, ২৭২২৪; সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩০৩, হাদিস ৩৯৫০; মুসনাদে আব্দ বিন হুমায়েদ- ১/৩৬৭, হাদিস ১২২০; হিলইয়া, আবু নুআইম- ৩/৩৭; আল-মুসান্নাফ, ইবনে আবি শায়বা- ৭/৪৫৭, হাদিস ৩৭১৯২; সুনানে দারেমী, হাদিস ৫৫; আস-সুন্নাহ, ইবনু আবি আসেম, হাদিস ৮০, ৮২, ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৯২; আল-আসমাউ ওয়াস সিফাত, বাইহাকী, হাদিস ৭০১] -(অনুবাদক)]]

ইমাম আহমত বিন হাম্বল রহ.

কিন্তু এ সকল জনাবরা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর নামকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ভাবে ব্যবহার করেছেন। তাদের এই মন্তব্য করা যে- ‘ইমাম আহমদ রহ. প্রথম দিকে জমহুর (অধিকাংশ) ওলামায়ে কেরামের মতের উপরই ছিলেন, তবে পরে তিনি তাঁর মতকে ফিরিয়ে নেন’ -একথা সম্পূর্ণ ভুল এবং তাঁর প্রতি পরিষ্কার অপবাদ আরোপ করার নামান্তর। তারা তাদের এ মন্তব্যটিকে আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ.-এর দিকে মানসুব করেছেন। কিন্তু আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. একথা বলেননি যে, তালাক প্রয়োগীত হয়ে যাওয়ার মাসআলার ব্যাপারে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল নিজের মতকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যহ’র কথাগুলো (৬৪) নিম্নোরূপ:

‘ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. প্রথম দিকে হযরত তাউস রহ.-এর ওই হাদিসের বিপরীতে ফাতেমা বিনতে কায়েস রা.-এর রেওয়ায়েত পেশ করতেন যে, তার স্বামী তাকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছিলেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. -স্ত্রীকে একই সাথে তিন তালাক দেওয়াকে জায়েয মনে করতেন। কিন্তু পরে তিনি তাঁর এ মত থেকে ফিরে এসেছিলেন। তিনি বলতেন যে, আমি কুরআন কারিমের উপর গভীরভাবে চিন্তাবাবনা করে দেখলাম যে, কুরআন যে তালাকের কথা উল্লেখ করেছে, সেটা শুধুমাত্র রযঈ তালাক। বস্তুতঃ তাঁর মত এটাই যে, এক সাথে তিন তালাক দেওয়া জায়েয নয়।’ [ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ]

উপরোক্ত এই ইবারত থেকে পরিষ্কার প্রকাশ পাচ্ছে যে, আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. যে মত ফিরিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করছেন, সেটা হল, ইমাম আহমদ রহ. প্রথম দিকে একসাথে তিন তালাক দেয়াকে জায়েয মনে করতেন। কিন্তু পরে কুরআন কারিমের উপর গভীর চিন্তাভাবনা করার পর তাঁর কাছে একথাই প্রমাণিত হয়েছে যে, এটা নাজায়েয।

রইলো এমাসআলাটি যে, কেউ যদি (একই সাথে) ‘তিন তালাক’ দিয়েই ফেলে, তাহলে কাজটি নাজায়েয হওয়া সত্ত্বেও তা প্রয়োগীত হয়ে যায় কি-না? বস্তুতঃ এ ব্যাপারে ইমাম আহমদ রহ. তাঁর মত ফিরিয়ে নেন নি, আর না ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এই ফিরিয়ে নেয়ার কোনো কথা উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমদের মতামত তাঁর মাযহাবের ওলামায়ে কেরামগণের গ্রন্থাবলীতেই পাওয়া যায় যে, (এক সাথে প্রদত্ত তিন) তালাক প্রয়োগীত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে পূর্বেও তাঁর মাযহাব এটাই ছিল এবং এখনও তা-ই আছে; এতে কোনোই পরিবর্তন সাধিত হয় নি।

যেমন: আল্লামা ইবনে কুদামা হাম্বলী রহ. তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল-মুগনী’তে (যা ফিকহে হাম্বলীর মেরুদন্ড হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে) এ মাসআলার ব্যাপারে ইমাম আহমদের দু’টি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, একই সঙ্গে তিন তালাক দেয়া জায়েয কি-না? কিন্তু তালাক প্রয়োগীত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর অভিমতের কথা এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাতে তিন তালাকই প্রয়োগীত হয়ে যায়।

যেমন: এক স্থানে তিনি লিখেছেন যে- اختلف الرواية عن احمد فى جمع الثلاث فروى عنه انه غيرمحرم (و فيه بعد اسطر) و الرواية الثانية ان جمع الثلاث طلاق بدعة محرم – ‘ইমাম আহমদ রহ. থেকে একসঙ্গে ‘তিন তালাক’ দেয়ার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। তার থেকে এক বর্ণনায় এসেছে যে, এ কাজ হারাম নয়। … .. .. .. (কয়েক লাইন পরে রয়েছে).. .. .., আর অপর বর্ণনায়, রয়েছে, একত্রে তিন তালাক দেয়া বিদআত এবং হারাম’।

অন্য স্থানে লিখেছেন- و ان طلق ثلاثا بكلمة واحدة وقع الثلات و حرمت عليه حتى تنكح زوجا غيره و لا فرق بين قبل الدخول و بعده روى ذلك عن ابن عباس و ابى هريرة و ابن عمر و عبد الله بن عمرو و ابن مسعود و انس و هو قول اكثر اهل العلم من التابعين و الائمة بعدهم‘আর যদি এক বাক্যেই তিন তালাক দেয়া হয়, তাহলে তিন তালাক প্রয়োগীত হয়ে ওই স্ত্রীলোকটি ওই ব্যাক্তির জন্য হারাম হয়ে যাবে -যাবৎ না সে অপর কোনো স্বামীকে বিয়ে করে নেয়। আর এক্ষেত্রে (দ্বিতীয় স্বামীর সাথে) সহবাসের পূর্বে এবং পরে’র মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ কথাটি হযরত ইবনে আব্বাস রা., হযরত আবু হুরায়রা রা., হযরত ইবনে রা., হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা., হযরত ইবনে মাসউদ রা. এবং হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে। তাবেয়ীনে কেরাম এবং পরবর্তী ইমামদের মধ্যে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের এটাই অভিমত[আল মুগনী, ইবনে কুদামা- ৭/১০৪]

এ থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এখানে মাসআলা দু’টি ভিন্ন ভিন্ন। একটি হল, একই সাথে তিন তালাক দেয়া জায়েয কিনা? দ্বিতীয়টি হল, কেউ যদি একাজ করেই ফেলে, তাহলে তাও কার্যকর হয়ে যায় কি-না? এর মধ্যে প্রথম মাসআলাটির ক্ষেত্রে ইমাম আহমদ রহ. পূর্বে এমত পোষন করতেন যে, এমনটা করা জায়েয। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তাঁর এই মত থেকে ফিরে আসেন এবং এ অভিমত পোষন করেন যে, এটা নাজায়েয। আর দ্বিতীয় মাসআলার ক্ষেত্রে সবসময়ই তাঁর অভিমত ছিল, এ মতাবস্থায় তিন ‘তালাক’ই কার্যকর হয়ে যায়।

কোনো কোনো জনাব এক্ষেত্রে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.-এর সাথে একটা আজোব কথাকে সংযুক্ত করে দিয়েছে। আর সেটা হল- ‘ইমাম আহমদ রহ. এর কাছে কোনো কাজ নিষিদ্ধ ও নাজায়েয হওয়াটা নাকি একথারই দলিল যে, সে কাজ তাঁর মতে কার্যকর ও প্রয়োগীত হয় না’। সুতরাং, তাঁর মতে যখন তিন তালাক দেয়া জায়েয নয়, তখন তারঁ মতে সেটা কার্যকর না হওয়া উচিৎ।

কিন্তু জানি না, ইমাম আহমদের কোন উসূলের ভিত্তিতে তাঁর সাথে এতটা অপরিপক্ক ও বাচ্চাশুলভ কথার সম্মন্ধ জুড়ে দেয়া হল? এ কথাটি তো এতটাই পরিত্যাজ্য যে, এর উপর দলিল দাঁড় করানোরও কোনো দরকার নেই। একটু ভেবে দেখুন, ইমাম আহমদের মতে ‘অন্যায় হত্যা’ একটি হারাম কাজ। কিন্তু তাঁর মতে কি সেটা কার্যকরই হয় না? কোনো ব্যক্তি কি ইমাম আহমদের ন্যায় এমন ব্যক্তিত্বেও সাথে এ ধরনের বাচ্চাশুলভ হাস্যকর কথা জুঁড়ে দেয়ার দুঃসাহস করতে পারে?

বলি, কি কারণে এমন এমন সব ভ্রান্ত প্রকৃতির জল্পনা কল্পনাকে ভিত্তি বানিয়ে তাঁর মাযহাব নির্ধারন করে নেয়া হচ্ছে? কোনো তাঁর মাযহাবের কোনো কিতাব উঠিয়ে দেখা হচ্ছে না? আল্লামা ইবনে কুদামা হাম্বলী রহ. ‘ফিকহে হাম্বলী’র একজন উচুদরের আলেম। তিনি তাঁর ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থটিকে এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই লিখেছেন, যেন তাতে ইমাম আহমদের মাযহাবটি পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি নিতান্ত পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট করে ইমাম আহমদের অভিমতকে জমহুর উম্মতের অনুগামী হিসেবেই উল্লেখ করছেন। শুধু তা-ই নয়, ইমাম নব্বী(৩২) সহ অপরাপর সমস্ত ওলামায়ে কেরাম তাঁর এ অভিমতের কথাই উল্লেখ করেছেন। এমনকি আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. -যিনি খোদ এ মাসআলার ক্ষেত্রে আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ’র সাথে এবং জমহুর ওলামায়ে কেরামের বিপরীত দিকে রয়েছেন, তিনিও ইমাম আহমদ রহ.-কে জমহুর ওলামায়ে কেরামের সাথে আছেন বলেই মানেন।

قال الشيخ ابن القيم فى الهدى: و اما المساَلت الثانية و هى وقوع الثلاث بكلمة واحدة فاختلف الناس فيها على اربعة مذاهب احدها انه يقع و هذا قول الائمة الاربعة و جمهور التابعين و كثير من الصحابة

‘শায়েখ ইবনে কাইয়্যেম রহ. ‘আল-হুদা’ গ্রন্থে বলেছেন: ‘…থাকলো দ্বিতীয় মাসআলাহটি । অর্থাৎ এক বাক্যে প্রদত্ত তিন তালাক কার্যকর হওয়ার বিষয়টি। বস্তুতঃ এতে ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে, এ ব্যাপারে চার ধরনের অভিমত পাওয়া যায়। তার একটি হল, তা কার্যকর হয়ে যায়। আর এই মতটি হল চার ইমাম, জমহুর তাবেয়ীন সহ বহু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরামের[আল হুদা, ইবনুল কাইয়্যেম: বাজলুল মাযহুদ- ৩/৭২]

আল্লামা ইবনে কুদামা রহ., আল্লামা নববী রহ. আল্লামা ইবনে কাউয়্যেম রহ. সহ সমস্ত ওলামায়ে কেরাম ইমাম আহমদের এই মতামতের কথাই উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর মতে এতে তিন তালাকই কার্যকর হয়ে যায়।

এ সকল হযরতদের সাথে কেনো হক্কানী আলেমে-দ্বীন বা মুজহীদের কোনো মাসআলা নিয়ে এখতেলাফ-তো হতে পারে বটে, কিন্তু তাঁদের কোনো উদ্ধৃতি ও বক্তব্যকে চ্যেলেঞ্জ করা যেতে পারে না -বিশেষ করে যখন সেটা হয় একেবারে পরিত্যাজ্য ধারনা ও কল্পনার উপর স্থাপিত।

বিয়ে যেমন একটি ইবাদাত, তেমনি একটি লেনদেনও বটে

আলোচনার একেবারে শুরুর দিকে আমরা লিখে এসেছি যে, বিয়েকে নিছক একটি মুআমালাহ বা লেনদেন মনে করে নেয়াটা একটি বুনিয়াদী ভুল। বিয়ে আসলে একটি ইবাদতই; আর এর মধ্যে মুআমালাহ বা লেনদেনের দিকটি গৌণ। এর উপর কোনো কোনো জনাব অভিযোগ উত্থাপন করে লিখেছেন যে-

‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বিয়ে একটি ইবাদাত। কিন্তু উভয় পক্ষের সম্মতি এবং তাদের পক্ষ থেকে নির্ধারণকৃত হুদুদ (সীমা পরিসীমা) ও কায়দা কানুনগুলো-তো এক একটি খাঁটি চুক্তি’ই বৈকি। এটি উভয় পক্ষের মাঝে একটি লেনদেনের; এর চেয়ে বেশি কিছু নয়’।

আমরা এর জবাবে আরোজ করবো, ‘যদি উভয় পক্ষের তরফ থেকে নির্ধারনকৃত সীমা-পরিসীমা ও কায়দা-কানুনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে একটি নিরেট চুক্তিই হয়ে থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে দু’জন সাক্ষ্যি উপস্থিত থাকা অপরিহার্য হয় কেনো ? বলি, অন্য আর কোনো চুক্তি’র বেলায় কি এ বিষয়টি রয়েছে? এমনকি এতে খুৎবা পাঠ করা এবং ওলীমা করাও মাসনুন (সুন্নাহ)। কোনো কিছু কেনার সময়ও কি আপনি খুৎবা পাঠ করেন বা খাবার খাওয়ান? বিয়ে যদি নিছক দু’পক্ষের মাঝে সম্পাদিত একটি ‘চুক্তি’ই হয়ে থাকে, এর বেশি কিছু না হয়, তাহলে ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ করাকে ابغض الحلال – সবচেয়ে ঘৃনীত বৈধ কাজ’ -বলে অবিহিত করা হয়েছে কেনো? অন্য আর কোনো লেনদেরনের কি এই মর্যাদা ও মর্তবাস্তর রয়েছে? অপরাপর চুক্তিগুলোর বিলোপ সাধন তো -যে মুহূর্তেই চুক্তিটি বিলোপ সাধিত হল, ওই মুহুর্ত থেকেই অন্য কারো সাথে চুক্তি করে নেয়া জায়েয। বলি, বিবাহ-বিচ্ছেদের বেলায়ও কি -যে মুহূর্তে তালাক দেয়া হল, ওই মুহূর্তেই ওই স্ত্রীলোকের জন্য অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করে নেয়া- জায়েয? অন্যান্য চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে তো এই হয়ে থাকে যে, উভয় পক্ষ চাই তাদের চুক্তিগুলোকে হাজার বার ভেঙ্গে ফেলুক না কেনো, সর্বাবস্থায়ই নতুন করে চুক্তি সম্পাদন করে নেয়ার এখতিয়ার তাদের থাকে। কিন্তু বিয়ে’র ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ যদি মাত্র তিন বার ‘বিবাহ- বিচ্ছেদ’ ঘটিয়ে ফেলে, তাহলে আপনারা তাদেরকে নতুন করে বিয়ে করার অনুমতি দেন না কেনো?

‘বিয়ে’ এবং ‘সাধারণ লেনদেনগুলো’র মাঝে এতসব পার্থক্য স্বস্থানে রেখে দেয়ার পরও যদি আপনারা একথার উপর জেদ ধরেন যে ‘বিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে সম্পাদিত একটি চুক্তি, এর বেশি কিছু নয়’, তাহলে-

بريں عقل , دانش ببايد گريست

সমস্যার সহিহ সমাধান

যে পর্যন্ত অত্র দফার প্রথম পাঁচটি অংশের সম্পর্ক, এসব ক্ষেত্রে কুরআন কারিমের একদম পরিষ্কার আয়াতসমূহের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কেনো নেয়া হল – তা আমাদের আজ পর্যন্ত বুঝে এলো না । এর পিছনে বিদ্যমান মুসলেহাতের দিকে কি দৃষ্টি দেয়া হয়েছিল ? আর যদি এমনটা করা না হত, তাহলে পারিবারিক জীবনে কোন কোন ফেতনা ফাসাদ জন্ম লাভ করতো?

আমরা এ ব্যাপারে বহু চিন্তাবাবনা করে দেখেছি, কিন্তু এর সামান্য থেকে সামান্যতম কোনো মুসলেহাতও আমাদের বুঝে আসে নি। হ্যাঁ, তবে এ দফার শোষাংশ (অর্থাৎ সাবেক স্বামীর সাথে বিয়ের নবায়ন) সম্পর্কে একটি কথা বুঝে এসেছে, আর সেটা হল যে, আজকাল (দ্বীনী ইলম সম্পর্কে) মূর্খ-জাহেল পুরুষদের মধ্যে এই মহামারী মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, কখনো কখনো স্ত্রীর সাথে সামান্য ঝগড়াঝাটি লাগলেই তারা ‘তালাক’ দিয়ে বসে, এতে করে বহু নারীকে প্রচুর ধকল সইতে হয়’।

নারীদের এই কষ্ট নিঃসন্দেহে বিবেচনাযোগ্য এবং এ ব্যাপারে মনযোগ দেয়ারও প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদের অর্ডিনেন্স এই কষ্ট-ক্লেশের এই সমাধান বেড় করে নিয়েছে যে, ‘তিন তালাকের এসব ঝগড়া গোড়া থেকেই মিটিয়ে ফেলো। যে যতগুলো তিন তালাকই দিতে থাক না কেনো, সেটাকে একের অধিক মেনে নিবে না’! (কারণ, আল্লাহ তাআলা ওহী সূত্রে তাঁর সর্বশেষ রাসুল মুহাম্মাদ সা.-এর উপর যে শরীয়ত নাজিল করেছেন, মেনে না নেয়ার কোনো এখতিয়ার মুমিন নারী ও মুমিনা নারীর নেই। আল্লাহ’র শরীয়ত ঠিক রেখেই আমাদের সমাধান খুঁজতে হবে)।

বস্তুতঃ এই সমস্যার মূল কারণ হল, মানুষজন শরীয়তের বিধিবিধান থেকে এতটাই বেপরওয়া হয়ে গেছে যে, যে সমস্ত মাসআলা-মাসায়লের কথা এক কালের প্রতিটি মুসলিম শিশু পর্যন্ত জানতো, তারা সে ব্যাপারেও জ্ঞান রাখে না। যেমন মনে করুন, আজ কাল সর্বসাধারণের মাঝে এই ধারনা ব্যাপক আকার লাভ করেছে যে, তিনের চেয়ে কম তালাক দিলে তা কার্যকরই হয় না’ !

প্রথমতঃ আল্লাহ’র দেয়া প্রচার-প্রচারনামূলক যাবতীয় মিডিয়াগুলোকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে শিক্ষা দিতে হবে যে, ‘একই সাথে তিন তালাক দেয়াটা কত মারত্মক গোনাহ’ ! তাদেরকে একথা বুঝিয়ে দিতে হবে যে, ‘‘যখন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ কার্যটি এক তালাক দ্বারাই সম্পন্ন করা যায়, তখন এই ‘তিন তালাক’ দেয়ার কি দরকার’’? তাদেরকে এই তা’লিম দিতে হবে যে, এক সাথে ‘‘তিন তালাক’ দিয়ে তোমাদেরকে পস্তাতে হয়; কাজেই ওই সীমা পর্যন্ত অগ্রসর হয়ো না’’।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জনগণ যদি এই ইলম লাভ করতে পারে, তাহলে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই তালাক দেয়া ছেড়ে দিবে।(৩৩) যদি এর উপর আরও অধিক কঠোরতার প্রয়োজন অনুভূত হয়, তাহলে যারা একই সাথে তিন-তালাক দিবে তাদের জন্য কোনো আইনানুগ শাস্তিও নির্ধারন করা যেতে পারে।

উপরোক্ত কথা গুলোর প্রচার-প্রসার ঘটানোর পর যদি একই সাথে তিন তালাক দেয়ার অপরাধে দু-চারজন লোক শাস্তি পেয়ে যায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ অতি অল্প সংখ্যক মানুষেরই ‘তিন তালাক’ দেয়ার সাহস হবে।

বস্তুতঃ শরীয়ত নিজেই- ‘একই সাথে তিন তালাক দেয়ার’ উপর -এই শাস্তি নির্ধারন করে দিয়েছে যে, ‘‘তুমি যখন শরীয়তের বিরুদ্ধাচারন করে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছ, তখন এর এই শাস্তি ভোগ করো যে, এরপর তোমার জন্য আর ওই স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াই জায়েয নয়’’।

কিন্তু এই শাস্তিটি ওই সময় পর্যন্ত যথেষ্ট ছিল, যে পর্যন্ত জনগণ একথা জানতো যে, ‘‘আমরা যদি তিন তালাক দেই, তাহলে এর পর স্ত্রীর সাথে বিয়ে জায়েয হবে না’’। এখন তো এই হয় যে, মানুষজন এই মাসআলা সম্পর্কে জানতে পারে তখন, যখন তিন তালাক দিয়েই ফেলা হয়েছে। এজন্য যে জিনিসটির প্রয়োজন ছিল, তা এই যে, যদি লোকজনের জন্য মাসলাহ-মাসায়েল সম্পর্কিত অতিব উত্তম ও স্ববিশেষ পর্যায়ের জ্ঞান বিতরণ করা যায় এবং এ কাজটি যদি খোদ সরকারই তার বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে সম্পাদন করে, তাহলে তা খুব সহজে দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হতে পারে। আজকাল জায়গায় জায়গায় ‘পরিবার পরিকল্পনা’ (Family Planning) সম্পর্কিত বোর্ড দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে। এর বিজ্ঞাপন বিবৃতিও দেয়া হয় যথেষ্ট পরিমাণে। যদি একইভাবে এসব মাসলা-মাসায়েলেরও প্রচার প্রসার ঘটানো যায়, তাহলে সেটা একটি বিরাট কাজ হবে বৈকি।

এই যে রেডিও (টেলিভিশন) -যা দিন-রাত জনগণকে ফাহেশা জিনিসের প্রতি উৎসাহ দিয়ে থাকে, এর মধ্যে যদি ‘পারিবারিক জীবন’ সম্পর্কে ইসলামের সহিহ তা’লিম পেশ করা যায়, এ সবের সাহায্যে যদি লোকজনকে ‘পারিবারিক মাসলা-মাসায়েল’ সম্পর্কে ইসলামের দিক নির্দেশনা দান করা যায়, তাহলে আমাদের পারিবারিক জীবনে (এসব ঘটনার) প্রতিফলন কম হবে না – এমনটা হওয়া সম্ভব নয়।

তদুপরি, বিশেষ করে এই তালাক সম্পর্কিত মাসআলার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বেশ উপকারী হবে, সেটা হল, একই সাথে তিন-তালাক দেওয়াকে আইনানুগ ভাবে ‘অপরাধ’ গণ্য করতে হবে। যে ব্যাক্তি এই অপরাধ করবে, তার জন্য কোনো যথার্থ শাস্তি নির্ধারণ করে দিতে হবে।

বস্তুতঃ এটাই হল নারীদের আলোচ্য সমস্যার সহিহ সমাধান। এর বিপরীতে আমরা যদি এসমস্ত বিষয়ের দিকে সম্পূর্ণ অমনযোগী হই, আর একথা বলে কেটে পড়ি যে, ‘আমরা এসব তিন তালাক’কে কার্যকর হয় বলেই মানি না’, তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়াবে যে, আমরা একজন মজলুমকে জালেম কর্তৃক মাড়পিট খেতে দেখেও- না জালেমের হাত থেকে লাঠি ছিনিয়ে নিচ্ছি, আর না তার ওই জুলুমের কারণে তাকে সাবধান করে দিচ্ছি। এটা না করে আমরা বরং মজলুমকে এই প্রবোধ দিচ্ছি যে, ‘তুমি মাড় খেতে থাকো, আমরা এটা মানবোই না যে, কেউ তোমাকে পিটিয়েছে’ ! এভাবেই কি মজলুমের উপর থেকে জুলুম দূর করা হয়?

এই আলোচনার পূর্বের অংশ পড়তে <<<  এখানে  ক্লিক করুন <<<

 

 


-: টিকা:- (বক্ষমান ওয়েব পেজের টিকা)

((টিকা-১৭)) মূল কিতাবে আছে السنة ان تستقبل الطهر فتطلق لكل طهر , তবে আমি ‘নসবুর রায়া’য় হাদিসটির শেষ শব্দ طهر -এর পরিবর্তে قرء পেয়েছি এবং সেটাই এই ওয়েব পেজে লিখে দিয়েছি। হতে পারে. শায়েখ উসমানীর লিখতে গিয়ে কিংবা টাইপিষ্টের টাইপ করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে, কিংবা শায়েখের কাছে যে নুসখাটি ছিল তাতেই হয়-তো طهر কথাটি ছিল। তাছাড়া সুনানুল কুবরা বাইহাকী ও ইমাম হাফেজ ইবনে হাজারের তালখিসুর হাবির -এর রেফারেন্স মূল কিতাবে ছিল না, আমি অতিরিক্ত সংযুক্ত হরে দিয়েছি। -(অনুবাদক)

((টিকা-১৮)) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর এই রেওয়ায়েতটি মূল কিতাবে নেই। আমি সংযুক্ত করে দিয়েছি বিষয়টিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য। -(অনুবাদক)

((টিকা-১৯)) একথা মাথায় রাখুন যে, আল্লামাহ ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ.-এর বক্তব্য দ্বারা অডিনেন্সের পুরোপুরি সমর্থন হয় না। কেননা, যদি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন তুহরে তিন তালাক দেয়া হয়, তাহলে আল্লামাহ ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ.-এর মতেও সেটা তিন তালাকই গণ্য হয়ে থাকে। কিন্তু অডিনেন্স সেটাকেও এক তালাকই গণ্য করে থাকে। -(লেখক)

((টিকা-২০)) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর এই মাশহুর রেওয়ায়েতটি মূল কিতাবে নেই। লেখক মুফতী মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী দা:বা:-এর প্রবন্ধ সংকোলন ‘ফিকহী মাকালাত’ ৪র্থ খন্ড ১৯১ পৃষ্ঠায় এ হাদিসটি আরবী ইবারত ও তরজমা সহ রয়েছে। আমি পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে রেওয়ায়েতটি সংযুক্ত করে দিয়েছি। -(অনুবাদক)

((টিকা-২১)) হযরত মিশকাত  মূল কিতাবে শুধুমাত্র তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী ও মেশকাতের রেফারেন্স দেয়া আছে। আমি হাদিসের কিতাবের বাকি রেফারেন্সগুলো সংযুক্ত করে দিয়েছি এবং সাথে রেওয়ায়েত/পৃষ্ঠা নম্বরও দিয়ে দিয়েছি। -(অনুবাদক)

((টিকা-২২)) ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত রেওয়ায়েতগুলো এই মূল কিতাবে নেই, বরং লেখক মুফতী মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী দা:বা:-এর প্রবন্ধ সংকোলন ‘ফিকহী মাকালাত’ ৪র্থ খন্ডের ১৮৪-২০৪ পৃষ্ঠা জুড়ে আরবী ইবারত ও তরজমা সহ বিদ্যমান রয়েছে, (যা মূলতঃ তাঁর মুসলীম শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম-এর অংশ)। আলোচ্য বিষয়টিকে আরো শক্তিশালী করে তোলার জন্য উল্লেখীত রেওয়ায়েতগুলো মূল আরবী ইবারত ও বঙ্গানুবাদ সহ এখানে পেশ করে দিয়েছি এবং প্রয়োজনে হাদিস/পৃষ্ঠা নম্বরও উল্লেখ করে দিয়েছি। বাদ বাকি ১৫ থেকে ১৭ নম্বর পর্যন্ত রেওয়ায়েতগুলো এই মূল কিতাবেই রয়েছে। আমি শুধু কোনো কোনোটির হওয়ালা যুক্ত করে দিয়েছে মাত্র।  -(অনুবাদক) 

((টিকা-২৩)) ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন যে, এটি হযরত রিফায়াহ রা.-এর স্ত্রীর ঘটনা নয়, অন্য আরেকটি ঘটনা। হযরত ইবনে হাজারের বক্তব্য অনুসারে -‘এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দিলো’ -হাদীসের এ কথাটি দিয়েই (আলোচ্য মাসআলার স্বপক্ষে) দলিল দেয়া হয়েছে । কেননা, এ কথাটিই এখানে প্রমাণ করে যে, সে এক সাথেই তিন তালাক দিয়েছিল। [ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৯/ ৩২১] – লেখক [ফিকহী মাকালাত: ৩/১৯২]

((টিকা-২৪))  আল্লামা কাউসারী রহ. বলেন: কোনো একটি রেওয়াতেও একথা নেই যে, রাসুলুল্লাহ সা. তার উপর নাকির করেছেন। এ থেকে একথা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ওই তিন তালাক কার্যকর হয়ে গিয়েছিল। আর (উপস্থিত) লোকজন এ ঘটনা থেকে তিন তালাক কার্য হওয়ার কথাই বুঝেছিলেন। যদি তাদের বুঝটা ভুলই হত, তাহলে তাহলে রাসুলুল্লাহ সা. অবশ্যই তাদেরকে সংশোধন করে দিতেন, তাদেরকে ভুলের মধ্যে থাকতে দিতেন না। গোটা উম্মাহ এই রেওয়ায়েত থেকে একথাই বুঝেছেন। এমনকি আল্লামাহ ইবনে হাযামও এই অর্থই বুঝেছেন। যেমন তিনি বলেছেন- انما طلقها و هو يقدر انها امرأته و لو لا وقوع الثلاث مجموعة لا نكر ذلك عليه – তাকে দেয়া তালাকটি কার্যকর হয়ে গিয়েছিল। এতে যদি পূর্ণ তিন তালাক কার্যকর না হত, তাহলে রাসুলুল্লাহ সা. তার একাজে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন না। [আল-ইশফাক আলা আহকামিত তালাক: ২৯ পৃ:] – লেখক [ফিকহী মাকালাত: ৩/১৯৩]

((টিকা-২৫)) ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. তাঁর কিতাব بيان مشكل الأحاديث الواردة في أن الطلاق الثلاث واحدة -এ এই রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করার পর বলেছেন – اسناده صحيح – এর সনদ সহিহ। [আল-ইশফাক্ব আলা আহকামিত ত্বালাক, কাউসারী- ২৪ পৃ:] আর আল্লামা হাইছামী রহ. ত্বাবরাণীর হাওয়ালা দিয়ে বলেছেন যে- و فيه رجاله ضعف و قد وثقوا – এতে যয়ীফ রাবীরাও রয়েছে,  অবশ্য অনেকে তাঁদেরকে নির্ভরযোগ্যও বলেছেন। [মাজমাউয যাওয়ায়ীদ- ৪/৩৩৯]

((টিকা-২৬)) এই হাদিসটির সনদ সহিহ। [আল-জাওয়াহিরুন-নাক্বী] ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন- এর সনদ উত্তম। [নাইলুল আউতার, শাওকানী] হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেছেন- رجاله ثقات এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। [ফাতুল বারী, ইবনে হাজার- ৯/ ৩১৫] – লেখক [ফিকহী মাকালাত: ৩/১৮৭]

((টিকা-২৭)) আল্লামা হাইছামী রহ. ‘মাজমাউয যাওয়ায়ী ‘-এ এই হাদিসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন- رواه الطبرانى و فيه على بن سعيد الرازى, قال الدار قطنى ليس بذاك و عظمه غيره و بقية رجاله ثقات – ইমাম ত্বাবরাণী এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আর এর এক রাবী হলেন আলী বিন সাঈদ। ইমাম দ্বারাকুতনী রহ. বলেছেন- ‘তিনি উল্লেখযোগ্য কেউ নন’। তবে অন্যরা তাঁর সম্মান করেছেন। হাদিসের বাকি সকল বর্ণনাকারী  নির্ভরযোগ্য। [মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৪/৩৩৬]

আহকার (ত্বাকী উসমানী)-এর আরোজ এই যে, ‘মিজানুল ই’তিদাল’-এ ইমাম যাহবী রহ. আলী বিন সাঈদ-এর অবস্থা বর্ণনা করেছেন এভাবে-

 حافظ رحال جوال قال الدار قطنى ليس بذاك تفرد باشياء قلت: سمع جبارة بن المغلس و عبد الاعلى بن حماد روى عنه الطبرانى و الحسن بن رشيق و الناس قال ابن يونس كان يفهم و يحفظ – অর্থাৎ, আলী বিন সাঈদ ছিলেন হাফিজে-হাদিস এবং (ইলমের উদ্দেশ্যে) বহু সফরকারী একজন ব্যাক্তিত্ব। ইমাম দ্বারাকুতনী যে বলেছেন- ‘তিনি উল্লেখযোগ্য কেউ নন’-এটা তার একক মত। আমি বলি: তিনি যাবারাহ বিন মুগলীস এবং আব্দুল আ’লা বিন হাম্মাদ থেকে হাদিস শুনেছেন। তাঁর থেকে ইমাম ত্বাবরাণী, আল-হাসান বিন রাশিক্ব সহ অনেকেই হাদিস বর্ণনা করেছেন। ইবনে ইউনুস রহ. তাঁর সম্পর্কে বলেন: তিনি হাদিস বুঝতেন এবং তা হিফয করতেন। [মিজানুল ই’তিদাল, ইমাম যাহবী- ৩/১৪১, তরজমা ৫৮৫০] 

এর থেকে বোঝা গেল, ইমাম দ্বারাকুতনী ছাড়া আর কেউই তাঁর ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। আর ইমাম দ্বারাকুতনীও (তাঁর সম্পর্কে) নরম ভাষায় কথা বলেছেন। আর ইমাম যাহবী ইমাম দ্বারাকুতনীর ওই কথার সাথে একমত নন। আর রাসায়েল বিন ইউনুস রহ. তাঁকে সিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন।  ইমাম যাহবী তাঁকে হাফিজে-হাদিস বলেছেন। সুতরাং, এমন ব্যাক্তিত্বের রেওয়ায়েতকে রদ করা যায় না।

এই হাদিসের সমর্থন সহিহ মুসলীমের ওই রেওয়ায়েত থেকেও হয়, যা ৩৫৪ নম্বরে হযরত নাফে রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে- فكان ابن عمر اذا سئل عن الرجل يطلق امرأته و هى حائض يقول و اما انت طلقتها ثلاثا فقد عصيت ربك فيما امرك به من طلاق امرأتك و بانت منك  – যখন ইবনে ওমর রা. কে এমন ব্যাক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যে তার স্ত্রীকে তার হায়েয চলাকালিন সময়ে (তিন) তালাক দিয়ে দিয়েছে, তখন তিনি বললেন: তুমি যদি তাকে তিন তালাক দিয়ে থাকো, তাহলে তুমি তোমার রবের নাফরমানী করলে যে হুকুম তিনি  তালাকের ব্যাপারে তোমাকে দিয়েছিলেন। আর সে তোমার (বিবাহ বন্ধন) থেকে ছিন্ন হয়ে গেছে। [সহিহ মুসলীম- ৩৫৪]  – লেখক [ফিকহী মাকালাত: ৩/১৯৭]

((টিকা-২৮)) আল্লামা হাইছামী রহ. বলেছেন-এই রেওয়ায়েতে একজন রাবী আছেন ‘উবায়দুল্লাহ বিন ওয়ালিদ আল-আসাফী আল-আযলী; তিনি যয়ীফ (দূর্বল রাবী)। [মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৪/৩৩৮; অধ্যায়: যে তিনের অধিক তালাক দান করে]

আমার কথা হল, ইমাম যাহবী রহ. ‘মিজানুল ই’তিদাল’-এ তার সম্পর্কে ইমাম আহমদ রহ.-এর এই কথা উল্লেখ করেছেন- يكتب حديثه للمعرفة -মা’রেফাহ’র জন্য তাঁর বর্ণিত হাদিস লিখা হয়েছে। [মিজানুল ই’তিদাল- ৩/১৭] এজন্যই আমি তাঁর বর্ণনাকে আলাদা করে উদ্ধৃত করিনি, বরং অন্যান্য রেওয়ায়েতগুলোকে শক্তি যোগানোর উদ্দেশ্যে এখানে নিয়ে এসেছি। -লেখক [ফিকহী মাকালাত: ৩/২০০]

((টিকা-২৯)) ইমাম বাইহাকী রহ. عن شعبة عن سلمة بن كهيل -এই সূত্রে এই রেওয়ায়েতটিই উদ্ধৃত করেছেন। আর উভয় সূত্রের রাবীগণ সুনানে আরবাআ’র রাবী। [দেখুন সুনানে বাইহাকী- ৭/৩৩৪] -লেখক [ফিকহী মাকালাত: ৩/২০০]

((টিকা-৩০)) অবশ্য ‘তাকরিবুয তাহযীব’ এ আছে যে- شريك بن ابى نمر صدوق يخطئى -‘শরিক বিন নমর সত্যবাদী, তবে তাঁর ভুলও হয়ে যেত’। 

কিন্তু ‘সুনানে বাইহাকী’তে একটি বর্ণনা দু’সূত্রে বর্ণিত আছে, যা উপরোক্ত বর্ণনাটির সমর্থন যোগায়। বর্ণনাটির কথাগুলো এই – عن على رضى الله عنه فيمن طلق امرأته ثلاثا قبل ان يدخل بها قال لا تحل له حتى تنكح زوجا غيره  – ‘হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, কোনো ব্যাক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই তাকে তিন তালাক দিয়ে দিলে সেক্ষেত্রে হযরত আলী রা. বলেছেন: তার স্ত্রী আর তার জন্য হালাল হবে না -যাবৎ না সে অন্য কোনো স্বামীর সাথে নিকাহ করে নেয়। [সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৭/৩৩৪] -লেখক [ফিকহী মাকালাত: ৩/২০১-২০২]

((টিকা-৩১)) লাল কালারের তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে ত্বাবরাণীর হাদিসটি এবং ইজমা সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো মূল কিতাবে নেই। আমি পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে মুনাসেব মনে করে অতিরিক্ত সংযুক্ত করে দিয়েছি। -(অনুবাদক)

((টিকা-৩২)) আলোচনার শুরুতে তাঁর ইবারতটি উদ্ধৃত করা হয়েছে । -(লেখক)

((টিকা-৩৩)) সম্মানিত পাঠকবর্গের কাছে এ পর্যায়ে একটি অতীব প্রনিধানযোগ্য বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করছি। সুদীর্ঘ যুগ ধরে যে সম্মনিত মহলটিকে অবজ্ঞা অসম্মান করে আসা হয়েছে, যাঁদেরকে বলতে গেলে রাষ্ট্র-কেন্দ্রিক সবরকম প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে স্বজ্ঞানে বঞ্চিত ও নিগৃহীত করে রাখা হয়েছে, সে সম্মানিত মহলটি হলেন ‘মুসলীম আলেম সমাজ’। এতসব বঞ্চনা’র কারণে হাতে গোণা কয়েকজন ওলামায়ে কেরাম ছাড়া তাঁদের বাকি প্রায় সঁকলকেই স্বাভাবিক স্বচ্ছলতার বেশ নিম্নেস্তরে অবস্থান করে জীবন কাটান; বলতে গেলে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে সংসার ও সমাজ জীবনে বেঁচে থাকেন।পাঠক! আপনি ইনসাফের সাথে বলুন-তো, আপনার গোটা জীবনে এই সম্মানিত আলেম সমাজের মধ্যে কতজনকে তাঁর স্ত্রীকে ‘তালাক’ দিয়েছেন বলে আপনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুনেছেন বা দেখেছেন? আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা-তো বলে এর সংখ্যা ‘‘০’’ (শূন্য); শূন্য এজন্য বললাম যেহেতু আমি এব্যাপারে কাউকে দেখিনি বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো ঘটনার কথা শুনিনি। আপনাদের কেউ হয়-তো দেখে বা শুনে থাকতে পারেন। যদি অতি দূরবর্তী সময়ের কথা বাদও দিই, খোদ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যতগুলো ‘তালাক’/‘ডিভোর্স’ হয়েছে, তার কতগুলো এই সম্মানিত মহলকতৃক সংঘটিত হয়েছে বলে আপনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানেন? আমার তো মনে হয় ‘কোটি’র হিসেব ধরেও দু’ এক জন হবে কি-না সন্দেহ।তাহলে এসব ‘তালাক’/‘ডিভোর্স’ হয় কাদের দ্বারা? ইনসাফগার ব্যক্তি মাত্রই একমত হবেন যে, এরা হল ওইসব মহল, যারা ইসলামী জ্ঞানে মুর্খ পর্যায়ের এবং আল্লাহ ভীতি ও আখেরাতের চিন্তাভাবনা থেকে বলতে গেলে একদমই গাফেল ও বিমূখ। এদেরকে আমরা দু’ভাগে বিভক্ত করতে পারি। (ক) সাধারণ অশিক্ষিত সমাজ; যেমনঃ দিনমজুর, কৃষক প্রমূখ (খ) সাধারন শিক্ষিত সমাজ, যারা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্টি থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে আছে যুব সমাজ এবং যুবত্তীর্ণ প্রৌর সমাজ। শুধু যদি দারীদ্রতাই ‘তালাক’ এর মূল কারণ হত যেমনটা বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ শোনা যায়, তাহলে সুদীর্ঘ যুগ ধরে যে আলেম সমাজকে স্বচ্ছলতার মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, তাদের মাঝে এই মহামারীর ছোঁয়া পর্যন্ত দেখা যায় না কেনো? এই মহামারীর প্রায় ১০০% ঘটনানাই উপরোক্ত (ক) এবং (খ) এর অন্তর্ভূক্ত মহল থেকেই সংঘটিত হতে দেখা যায় কেনো? এদের মধ্যে যারা যারা ‘তালাক’ বা ‘ডিভোর্স’-এর এর ঘটনা ঘটায়, তাদের ভিতরগত অবস্থা তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, ইসলামী ভাবধারার সাথে এদের মনমানসিকতা বেশ বৈরী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অথবা তা সামান্য খানিকটা ভাসাভাসা খাপখাওয়ানো শুলভ হলেও মনমানসিকতার অবশিষ্ট অংশটা দ্বীন ও আখেরাত বিমূখ। এদের জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটে স্বল্পমাত্রা বা উচ্চমাত্রার শালীনতা বর্জিত বা অশ্লিল মুভি-সিনামা, নাটক, থিয়েটার, নারী পুরুষের আড্ডা, নেশার আসোর, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির নারীপুরুষঘন সহশিক্ষা, অফিস আদালতের নারী-পুরুষের একত্র কর্মসমাবেশ অথবা কোলাহলমুক্ত প্রেম ও জৈবীক যৌন-বিনোদন (!) ইত্যকার রকমারি পরিবেশে। এগুলো যেহেতু নফসানী কামনা-বাসনার যুৎসই খোরাক, তাই এক সময় ঘরের জনকে ঝামেলা, আর বাহিরের জনকে সবুজ-শ্যামলা মনে হতে থাকে এবং তারা বাহিরের জনকে পাওয়ার জন্য ‘ঘরের-জনকে’ ‘তালাক’/‘ডিভোর্স’ দেয়ার ছুতা খুজে ফিরে। এসব ঘটনা এখন এত ঘটে থাকে যে, তা গুণেও কুলানো যাবে না। এছাড়া যৌতুকের লোভ, বিয়ে’র পূর্বকার প্রেমপ্রিতী, বিয়ে পরবর্তী অন্যের সাথে প্রেম অথবা অবৈধ যৌন সম্পর্ক, অধঃপতিত চরীত্রের কারণে সাংসারীক কোন্দল, সম্পত্তির লোভ, চুরি, হিংসা-বিদ্বেস প্রভৃতি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘তালাক’/‘ডিভোর্স’-এর ঘটনা আজ অগণীত-অসংখ্য। তদুপরি বর্তমানে ‘নারীদের’ হাতেও ‘তালাক’ দানের আইনানুগ অধিকার দেয়ার কারণে (যা মূলতঃ ইসলামী আইনের পরিপন্থী) রাষ্ট্রীয় আইনী বৈধতার জোরেও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়েছে।  কখনো কোনো স্ত্রী রাষ্ট্রীয় আইনী বৈধতা-বলে তার স্বামীকে  ডিভোর্স দিয়ে দিলে তাদের মাঝে পূণরায় মিলমিশ করে দেয়ার চেষ্টার পরিবর্তে হালের নারী-অধিকার-ঘড়ানার কারো কারো পক্ষ থেকে উক্ত নারীকে ওই ডিভোর্সের উপরই অনড় হয়ে থেকে নারী-অধিকার আদায় করার পরামর্শ দেয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রচুর, যার ফলশ্রুতিতে আজ আইনানুগ ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’র ঘটনাও ঘটছে অনেক। বাহ্যতঃ রাষ্ট্রিয় আইন-বলে স্ত্রী কর্তক তালাক দানের একটি অধিকার কারণে নারী-অধিকারী কোনো মহল থেকেই আর এমন আপত্তি উঠতে দেখা যায় না যে, ‘হায়! এখন মেয়েটির কি হবে’? বরং তাকে উল্টো স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাওয়ারই জোরালো পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু এই ডিভোর্স দান কার্যটিই যদি শরয়ী ধারায় ইসলামের নামে কোনো স্বামী কতৃক সংঘটিত হত, তাহলে উপরোক্ত মহলগুলো থেকে- ‘‘অধিকার গেল! নারীর জীবন গেল’’ -এ মর্মে সবদিক থেকে শোঢ়ের দৃশ্যটি হত দেখার মত। শরীয়তের সাথে কী আশ্চর্যজনক বৈরি আচরন প্রদর্শনী! শুনলে অবাক হবেন, নারীরা ডিভোর্স দানের আইনগত অধিকার লাভ করার পর আজ অনেক নারী একে তাদের ‘বিজনেস’ বানিয়ে নিয়েছে। ধ্বনকুবেড়দেরকে মোটা অংকের দেনমোহরে বিয়ে করা আর কিছুদিন যেতে না যেতেই ইচ্ছে করে সংসারে অশান্তি তৈরী করে ধ্বনকুবেড় স্বামী থেকে কৌশলে ডিভোর্স নিয়ে মোটা অংকের দেনমোহরের টাকা কোর্টের মাধ্যমে আদায় করে আনন্দে কেটে পড়া এবং আবারও অন্য কোনো ধ্বনকুবেড়ের’কে শিকার করে মোটা অংকের দেনমোহরে বিয়েতে বসার অনেক ঘটনা ঘটছে আজকের আধুনিক শিক্ষিত (!) সমাজে। এমন কি আড়াই কোটি (!) টাকা চুক্তিকৃত দেন মোহরে বিয়ে সম্পাদন ও কিছু দিন যেতে না যেতেই ডিভোর্সের বাস্তব ঘটনার কথা আমি নিজে ওই বিবাহ-পড়ানেওয়ালার কাছ থেকে শুনেছি। কোনো কোনো সুন্দরী নারী বিদেশী সিটিজেনশিপ পাওয়া ও সেখানে মুক্তবিহঙ্গ জীবন কাটানোর মানসে ধ্বনকুবেড় প্রবাসী লোককে (এমনকি কুৎসিত হলেও) বিয়ে করে এবং উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার পর কিছু দিন যেতে না যেতেই দ্বন্দ্ব বাধিয়ে স্বামীর কাছে ডিভোর্স ও দেনমোহর দুটোই নিয়ে নেয়। এরপর হয় পরের শিকার, না হয় অন্য ধান্দা। ভালই ব্যবসা চলছে ! আধুনিক শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে এবং ধ্বনীক শ্রেণির মধ্যে আজকাল জেনা-ব্যভিচারের ঘটনাও অতিমাত্রায় ঘটে যাচ্ছে। এসবের জের ধরে ‘বিবাহ-বিচ্ছেদ’-এর ঘটনা ঘটার সংখ্যাও অগণীত।

মোটকথাও আজকাল যে বিলুপ পরিমানে ‘তালাক/ডিভোর্সে’র  কথা আপনারা প্রতিনিয়ত শুনে থাকেন, তার প্রায় ১০০% ঘটনাই ঘটে ‘ইসলামী জ্ঞান ও ভাবধারা বর্জিত’ জাহেল-মুর্খ ও আধুনিক শিক্ষিত (!) সমাজের মধ্যে। শুধু ‘বিবাহ-বিচ্ছেদ’ নয়, যত ধরনের অকাজ-কুকাজ, অসততা, খুন, ধর্ষন, দাঙ্গা-হাঙ্মাগামা, গন্ডোগোল, মাড়ামাড়ি, অন্যের সহায় সম্পদে অন্যায় ভোগ-দখল ইত্যাদি ঘটনা ঘটার কথা আজকাল শোনা যায়, তার প্রায় ১০০% ঘটনা এদের দ্বারাই সংঘটিত হয়ে থাকে। এরা নিজেদেরকে শিক্ষিত সমাজ বলে দাবী করে বটে, কিন্তু বাস্তবে এদের দ্বারা যে সমাজ ভরে যাবে, সেকথা বিশ্বনবী সা. ১৪০০ বছর আগে আমাদেরকে ভবিষ্যতবাণী করে জানিয়ে গেছেন। যেমন, এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন-  إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ وَيَثْبُتَ الجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا –‘কেয়ামতের লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে, (দ্বীন ও শরীয়তের) ইলম উঠে যাবে এবং জাহালত-মুর্খতা ব্যাপক আকার লাভ করবে, মদ পান করা হবে এবং জেনা-ব্যাভিচার ব্যাপক হবে। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৬৮০৮; সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৬৭১;  মুসনাদে আহমাদ-৩/১৫১; জামে তিরমিযী, হাদিস ২২০৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৪৫] এমনিভাবে এক রেওয়ায়েতে কেয়ামতের নিকটবর্তী জামানার পঁচা ও দূর্গন্ধময় স্বভাব চরিত্রের মানুষগুলির কাজকারবার সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে কেয়ামতের একটি  বিশেষ আলামতের কথা বলা হয়েছে এভাবে وَكَثُرَ الطَّلاقُ –‘এবং তালাক হবে প্রচুর পরিমানে’। [হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম, হাদিস ৪৫৫৫; আদ-দুররুল মানসূর, সুয়ূতী- ৬/৫২]

উপরোক্ত রেওয়ায়েত দু’টিকে মিলিয়ে নিলে একথা দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে যে, ‘‘দ্বীন ইসলামের তা’লীম বর্জিত ও আখেরাত বিমূখ’’ এসব জাহেল ও মূর্খ সমাজই মূলতঃ ব্যাপক হারে ‘তালাক’ দান করবে, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাবে; আর বাস্তবতাও তা-ই বলে। বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন মুফতী তক্বী উসমানী দাঃবাঃ যেসব ‘জাহেল-মূর্খ পুরুষদের মধ্যে তালাক দানের মহামারীটা’ মারাত্মক আকার ধারন করার কথা বলেছেন, তা একদম সহিহ কথা; বরং বলা যায় এটা উপরোক্ত হাদীস দুটোর-ই প্রতিধ্বনি।

সুতরাং, যে সকল ‘মূর্খসমাজ’ আজ প্রকাশ্যে এ দাবী উত্থাপন করছে যে ‘‘কুরআন সুন্নাহ’র ‘তালাক’ বিধানে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন (নাউযুবিল্লাহ), এ বিধান অবিচারমূলক, প্রত্যেক মিডিয়াকে কাছে লাগিয়ে এই বিধানের বিপক্ষে সচেতনতা (!) সৃষ্টি করা আবশ্যক, উচ্চ শিক্ষা (!) এবং স্বচ্ছলতা-ই (!) ‘তালাক/ডিভোর্স’ বন্ধ করার অন্যতম শক্তিশালি চাবিকাঠি’’ – তাদের উচিৎ মহাজ্ঞানী সর্বোজ্ঞ আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত বিধানকে পরিবর্তন করার মূর্খজনিত চিন্তা বাদ দেয়া, কেননা দুনিয়ার সকল মানুষ মিলেও এ বিধানকে কশ্মিন কালেও পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না। তাদের কর্তব্য হবে তথাকথিত শিক্ষা নামের মূর্খতার প্রচার প্রসার না ঘটিয়ে দ্বীন ইসলামের সহিহ তা’লীম গ্রহন করে নিজেদের অধ্বঃপতিত চরিত্রের পরিবর্তন সাধন করা এবং তাদের বিবাহবিচ্ছেদের পরিমান প্রায় ১০০% থেকে কমানোর চেষ্টা করা। -(অনুবাদক)

 

 

 


মুফতী মুহাম্মাদ তাক্বী উসমানী দা:বা: লিখিত ‘মুসলমি পারিবারিক আইন’ বিষয়ক আলোচনা পড়তে নিম্নে ক্লিক করুন।

# ইসলামী শরীয়ত বনাম আইয়ূব খানের মুসলিম পারিবারিক আইন