ইসলামে ইলম ও আলেম ওলামা’র মর্যাদা, গুরুত্ব ও ফজিলত : কুরআন ও হাদিস

ইসলামে ইলম ও আলেম ওলামা’র মর্যাদা, গুরুত্ব ও ফজিলত : কুরআন ও হাদিসের আলোকে

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

 

[ইলম ও আলেম ওলামা সম্পর্কে কুরআন মাজিদে যেমন বহু আয়াত রয়েছে, তেমনি হাদিসের কিতাবসমূহে  এব্যাপারে রাসুলুল্লাহ   ও সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে বহু হাদিস ও আছার বর্ণিত হয়েছে, যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ যা প্রতিটি মুসলমানের জানা কাম্য। বলা বাহুল্য, এখানে তার সবকটি উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আমি আল্লাহ’র উপর ভরসা করে কিছু কিছু আয়াত ও হাদিসের বঙ্গানুবাদ পেশ করা শুরু করলাম। উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত আয়াতে কারিমা ও হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত  তাম্বিহ অনুযায়ী জীবনকে গড়ে নিতে পারেন।

 

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ 

“(হে নবী) তুমি বলো, যারা ইলম রাখে এবং যারা ইলম রাখেনা -তারা (উভয়ে) কি সমান হতে পারে”। [সুরা আয-যুমার ৯]

وَ قُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا 

“আর (হে নবী) তুমি বলো, হে প্রভু, আমার ইলম বাড়িয়ে দিন”। [সুরা ত্বহা ১৪৪]

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ   

“আল্লাহ (নিজেই) সাক্ষ্য দেন যে, তিঁনি (আল্লাহ যিনি) ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই, (তিঁনি) ন্যায় সহকারে কায়েম রয়েছেন, এবং (এই একই সাক্ষ্য দেয় তাঁর) ফিরিশতাগণ এবং ইলমধারীগণ”। [সুরা আল-ইমরান ১৮]

 يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ 

“তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দেয়া হয়েছে, আল্লাহ (কেয়ামতের দিন) তাদের মর্যাদা-স্তর উন্নিত করে দিবেন”। [সুরা মুজাদালাহ ১১]

 إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ 

“আল্লাহকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমগণই ভয় করে”। [সুরা ফাতির ২৮]

يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا

“তিনি (আল্লাহ, যিনি) যাকে ইচ্ছা আল-হিকমাহ (গভীর ইলম) দান করেন। আর যাকে আল-হিকমাহ দেয়া হয়, তাকে মূলত: দেয়া হয় অঢেল কল্যান”। [সুরা বাকারাহ ২৬৯]

আবু মুসা আল-আশআরী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- ‏ إِنَّ مِنْ إِجْلاَلِ اللَّهِ إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِي فِيهِ وَالْجَافِي عَنْهُ وَإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ ‏ ‏. رواه أبو داود في سننه , كتاب الأدب , باب في تنزيل الناس منازلهم : ٤/٢٦١ رقم ٤٨٤٣، و البيهقي : ٨/١٦٣ رقم ١٦٤٣٥، و الحديث سكت عنه أبو داود، و صحح إسناده عبد الحق الإشبيلي في الأحكام الصغرى: ٤٩٧ كما أشار إلى ذلك في المقدمة، و قال النووي في الترخيص بالقيام: ٥٦ : إسناده كلهم عدول معروفون إلا أبا كنانة وهو مشهور، ولا نعلم أحداً تكلم فيه، و قال ابن مفلح في الآداب الشرعية : ٢/٣١٥ : إسناده جيد ، و حسنه النووي في رياض الصالحين: رقم ٣٥٨، و حسنه ابن حجر في تخريج مشكاة المصابيح: ٤/٤٢٦ : كما قال ذلك في المقدمة و في تلخيص الحبير: ٢/٦٧٣، و حسنه الشيخ الألباني في صحيح أبي داود، و قال المحقق شعَيب الأرنؤوط : ٧/٢١٢ : إسناده حسن  – “আল্লাহ’কে (কোনো ব্যাক্তি কর্তৃক) সমুচ্চ সম্মান-মর্যাদা দেয়ার (আলামতের) মধ্যে রয়েছে: (আল্লাহ’র বান্দাদের মধ্যে) বয়বৃদ্ধ মুসলীম এবং কুরআনের ধারকবাহক যিনি তার মধ্যে বাড়াবাড়িও করেন না কমও করেন না– তাকে সম্মান করা, এবং ন্যায়পরায়ন শাসককে সম্মান করা”। [সুনানে আবু দাউদ– ৪/২৬১ হাদিস ৪৮৪৩; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৮/১৬৩ হাদিস ১৬৪৩৫]

# মুয়াবিয়া রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ . رواه بخاري في الصحيح , كتاب العلم , باب من يرد الله به خيرا يفقهه في الدين : ١/٦١ رقم ٧١ ; و مسلم في الصحيح , باب النهي عن المسألة : رقم ١٠٣٧; و احمد في مسنده : ٤/٩٢-٩٩; و الدارمي في سننه : ١/٧٣; الطحاوي في شرح مشكل الآثار : ٢/٢٧٨  – “আল্লাহ যার কল্যান করতে চান, তাকে দ্বীনের ব্যাপারে ফকিহ (প্রসস্থ ও গভীর ইলমধারী বিজ্ঞ) বানিয়ে দেন”। [সহিহ বুখারী– ১/১৬ হাদিস ৭১; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১০৩৭; মুসনাদে আহমদ- ৪/৯২-৯৯; সুনানে দারেমী- ১/৭৩; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী- ২/২৭৮]

# আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- مَن سلَك طريقًا يَلتمس فيه علمًا، سهَّل الله به طريقًا إلى الجنَّة . رواه مسلم في الصحيح , كتاب الذكر والدعاء , باب فضل الاجتماع على تلاوة القرآن، وعلى الذكر : رقم ٢٦٩٩   – “যে (মুসলমান) ইলমের অন্বেষনে পথ ধরে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৬৯৯; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৪৬]

# আবু দারদাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- منْ سَلَكَ طَريقًا يَبْتَغِي فِيهِ علْمًا سهَّل اللَّه لَه طَريقًا إِلَى الجنةِ، وَإنَّ الملائِكَةَ لَتَضَعُ أجْنِحَتَهَا لِطالب الْعِلْمِ رِضًا بِما يَصْنَعُ، وَإنَّ الْعالِم لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ منْ في السَّمَواتِ ومنْ فِي الأرْضِ حتَّى الحِيتانُ في الماءِ، وفَضْلُ الْعَالِم عَلَى الْعابِدِ كَفَضْلِ الْقَمر عَلى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ، وإنَّ الْعُلَماءَ وَرَثَةُ الأنْبِياءِ وإنَّ الأنْبِياءَ لَمْ يُورِّثُوا دِينَارًا وَلا دِرْهَمًا وإنَّما ورَّثُوا الْعِلْمَ، فَمنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحظٍّ وَافِرٍ . أخرجه الترمذي في سننه : رقم ٢٦٨٢ و اللفظ له ، و أبو داود في سننه , كتاب العلم : رقم ٣٦٤١ ; و ابن ماجه في سننه : رقم ٢٢٣ ، وأحمد في مسنده : رقم ٢١٧١٥ و غيرهم ; صححه الألباني في صحيح الجامع : رقم ٦٢٩٧ – “যে (মুসলমান দ্বীনী) ইলমের অন্বেষনে পথ ধরে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন। আর (একজন) ইলমের অন্বেষী (ইলম অর্জনের খাতিরে) যা (কিছু কষ্ট-ক্লেশ ও শ্রম বরদাস্ত) করে, তাতে ফিরেশতাকুল খুশি হয়ে তার জন্য অবশ্যই তাদের পালকগুলিকে বিছিয়ে দেয়। নিশ্চই (একজন) আলেম (হল এমন মর্যাদাবান ব্যাক্তি) যার জন্য -আসমান সমূহে যারা আছে এবং জামিনে যারা আছে -এমনকি পানিতে (অবস্থিত) তিমি-মাছ পর্যন্ত তার জন্য (আল্লাহ’র কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। আর (একজন বে-আলেম) আবেদের উপরে (একজন) আলেমের ফজিলত হল (তেমন) যেমন (তোমাদের কাছে) সকল তারকারাজির (আলোর) উপরে চাঁদের (আলোর) ফজিলত। নিশ্চই আলেমবর্গ হল নবীগণের ওয়ারিস (উত্তরাধিকারী)। আর অবশ্যই নবীগণ (কাউকে পার্থিব অর্থকড়ি) দ্বীনার ও দিরহামের ওয়ারিস বানিয়ে যান না। বরং তাঁরা ওয়ারিস বানান কেবলমাত্র ইলমের। কাজেই যে ব্যাক্তি তা আঁকড়িয়ে ধরলো, সে বিরাট ভাগ্যের জিনিস আঁকড়িয়ে ধরলো”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৮২; সুনানে আবু দাউদ– ৪/৫৭ হাদিস ৩৬৪১; সুনানে ইবনে মাজাহ– ১/৮১ হাদিস ২২৩; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২১৭১৫; সুনানে দারেমী, হাদিস ৯৮; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী- ১/৪২৯; শারহুস সুন্নাহ, বাগাভী- ১/২৭৫; আল-জামে শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ৩/২২০ হাদিস ১৫৭৩; আল-মাদখাল, বাইহাকী- ১/২৫০ হাদিস ৩৪৭]

# আনাস বিন মালেক রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى يَرْجِعَ . رواه الترمذي في سننه , كتاب العلم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم : ٥/٢٩ رقم ٢٦٤٧ و قَالَ : هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ;  – “যে (মুসলমান) ইলমের অন্বেষনে (বাড়ি থেকে) বেড় হয়, সে (তখন) আল্লাহ’র পথে (থাকে) -যাবৎ না সে (নিজ বাসস্থানে) ফিরে আসে”। [সুনানে তিরমিযী– ৫/২৯ হাদিস ২৬৪৭; আল-মু’জামুস সাগীর, ত্বাবরাণী- ১/২৩৪ হাদিস ৩৮০; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ৫/১২৩, ১৩/৩৯৫]

# যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- سَلوا اللهَ علمًا نافعًا ، و تعوَّذوا باللهِ من علمٍ لا ينفَعُ . أخرجه ابن ماجه في سننه : رقم ٣٨٤٣ ، و عبد بن حميد في المسند : رقم ١٠٩١ ، و أبو يعلى في المسند : رقم ١٩٢٧; و ابن أبي شيبة في المصنف , كتاب الدعاء : ١٠/٥ رقم ٢٩٦١٠ ; حسنه الألباني في صحيح ابن ماجه و في صحيح الجامع : رقم ٣٦٣٥ – “তোমরা আল্লাহ’র কাছে উপকারী ইলম চাও। আর (যে) ইলম উপকার করে না, তা থেকে তোমরা আল্লাহ’র কাছে পানাহ চাও”। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৮৪৩; মুসনাদে আব্দ বিন হুমায়েদ, হাদিস ১০৯১; মুসনাদে আবু ইয়া’লা, হাদিস ১৯২৭; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১০/৫ হাদিস ২৯৬১০]

# উম্মে সালমাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন-  أن النبي صلى الله عليه وسلم كانَ يقولُ إذا صلَّى الصُّبحَ حينَ يسلِّمُ اللَّهمَّ إنِّي أسألُكَ عِلمًا نافعًا ورزقًا طيِّبًا وعملًا متقبَّلًا . أخرجه ابن ماجه، كتاب الصلاة ، باب ما يقال بعد التسليم، برقم ٩٢٥ ، والنسائي في السنن الكبرى : ٦/٣١ برقم ٩٨٥٠ ، و في عمل اليوم والليلة له، برقم ١٢٠ ،و أحمد في مسنده : برقم ٢٦٥٢١، ٢٦٦٠٢ ، ٢٦٧٠٠، ٢٦٧٣١ ، والحاكم في مستدركه : ١/٤٧٢، و صححه الألباني في صحيح ابن ماجه : ١/١٥٢ برقم ٧٥٣  – “রাসুলুল্লাহ যখন ফজরের নামাযে সালাম ফিরাতেন, তখন (দোয়ায়) বলতেন: اللَّهمَّ إنِّي أسألُكَ عِلمًا نافعًا ورزقًا طيِّبًا وعملًا متقبَّلًا – “হে আল্লাহ! নিশ্চই আমি তোমার কাছে চাই -উপকারী ইলম, পবিত্র রিজিক এবং কবুলযোগ্য আমল”। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৯২৫; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী- ৬/৩১ হাদিস ৯৮৫০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৬৫২১, ২৬৬০২, ২৬৭০০, ২৬৭৩১; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৪৭২; মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুওয়াইহ, হাদিস ১৯০৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১৬/১৩৬ হাদিস ২৯৮৭৫; মুসনাদে আবু ইয়া’লা, হাদিস ৬৯৫০; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৬৮৬; শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ১৬৪৫]

# আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- إِذَا مَاتَ الإنْسَانُ انْقَطَعَ عنْه عَمَلُهُ إِلَّا مِن ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِن صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو له . رواه مسلم في الصحيح , كتاب الوصية ، باب ما يلحق الإنسان من الثواب بعد وفاته : ٣/١٢٥٥ رقم ١٦٣١ ; و ابن حبان في صحيحه : رقم ٣٠١٦ ; و وأبو داود في سننه : ٢٨٨٠ ; و البخاري في الأدب المفرد : رقم ٨٨  – “যখন কোনো মানুষ মাড়া যায়, তখন তার থেকে তার আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তিনটি (আমল) ছাড়া: সদকাহ জারিয়াহ, কিংবা (এমন দ্বীনী) ইলম যা দিয়ে (দুনিয়ার মানুষ) উপকৃত হয়, অথবা (এমন) নেক-সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে”। [সহিহ মুসলীম- ৩/১২৫৫ হাদিস ১৬৩১; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩০১৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৮৮০; আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী, হাদিস ৮৮]

ফায়দা: এই হাদিসের সাধারণ অর্থ হল, সাধারণত: প্রত্যেক ব্যাক্তির মৃত্যুর সাথে সাথেই তার আমলনামা গুটিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু হাদিসের উল্লেখীত তিন ব্যাক্তি এমন সৌভাগ্যবান যে, তাদের মৃত্যুর পর অন্যদের মতো তাদের আমলনামা গুটিয়ে নেয়া হলেও, উল্লেখীত তিনটি পথে তাদের আমলনামায় নতুন নতুন আমল এসে যোগ হতে থাকে।

এখানে ‘সদকাহ জারিয়াহ’ অর্থ আল্লাহ’র পথে এমন কোনো সদকাহ, পৃথিবীতে যার উপকার মানুষ বা পশুপ্রাণি উপর্যপুরি লাভ করতে থাকে। যেমন: পথিকদের জন্য কূপ/কল স্থাপন করে পানির ব্যবস্থা করা, যা দ্বারা পথিক যতদিন উপকৃত হতে থাকবে, সে মৃত্যুর পরও ততদিন এর সওয়াব পেতে থাকবে। এমনি ভাবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির উপকারের জন্য গাছ লাগানো, নহর খনন করা, বাহনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি বহু বিষয় ‘সদকাহ জারিয়াহ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

দ্বীনী ইলম দ্বারা উপকৃত হওয়ার বিভিন্ন সুরত হতে পারে। যেমন: দ্বীন ইসলাম ও শরীয়তকে হিফাজতের উদ্দেশ্যে কুরআন ও সুন্নাহ’র ইলম হিফাজত করার ব্যবস্থা করা, যা দ্বারা পরবর্তীতে মুসলমানরা দ্বীন চিনতে ও শিখতে পারে এবং পরম্পরাগত ভাবে উপকৃত হতে থাকে। যেমন: কুরআনের অনুলিপি তৈরী করা, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাদিস গুলোকে মস্তিষ্কে বা কিতাব আকারে সংরক্ষন করা, কুরআনের তাফসীর শিক্ষা দান ও তা কিতাব আকারে লিখে যাওয়া, হাদিসের ব্যাখ্যা শিক্ষা দান ও তা কিতাব আকারে লিখে যাওয়া, ফিকহী মাসআলা শিক্ষা দান ও তা কিতাব আকারে কিতাব লিখে যাওয়া, এসবের জন্য স্বতন্ত্র দরসগাহ (দ্বীনী পাঠাগার/মাদ্রাসা) চালু করা, ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সময় থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এজাতীয় বিভিন্ন আঙ্গিকে আলেমগণ দ্বীনী ইলমকে নিজেরা শিক্ষা করেছেন এবং তাদের পরবর্তীদের কাছে ইলমকে পৌছানোর ব্যাবস্থা করে গেছেন। এ এক বিরাট সওয়াবের কাজ, যা ভাষায় বলে বোঝানো সম্ভব নয়। 

আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَرَهُ وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ وَمُصْحَفًا وَرَّثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لِابْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِي صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ يَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ . رواه ابن ماجه في المقدمة، باب ثواب معلم الناس الخير : ١/٨٨ رقم ٢٤٢ ، و صححه ابن خزيمة : ٤/١٢١ رقم ٢٤٩٠ ، ولم يذكر المصحف ، قال : المنذري في الترغيب والترهيب : ١/٥٥ و١/١٢١ : رواه ابن ماجه بإسناد حسن ـ، وقال ابن الملقن ي البدر المنير: ٧/١٠٢ : إسناده حسن ; وحسنه الألباني في صحيح ابن ماجه – “কোনো মুমিন তার মৃত্যুর পর তার আমল ও নেককাজের মধ্যে যেগুলো (পরকালে) তার সাথে গিয়ে মিলিত হয়, তার মধ্যে রয়েছে: (ওই) ইলম (যা) সে (অপরকে) শিক্ষা দিয়েছে ও তা প্রচার করেছে, নেককার সন্তান (যাকে) সে (দুনিয়াতে) রেখে এসেছে, (কুরআনের) মুসহাফ/কপি, (যার) সে ওয়ারিস বানিয়েছে, কিংবা (কোনো) মসজিদ (যা) সে বানিয়েছে, অথবা পথিকের জন্য (বিশ্রামের) যে ঘর সে বানিয়েছে, অথবা (পানির এমন) নহর যা (পানের জন্য) সে খনন করে দিয়েছে, সদকাহ (যা) সে তার সুস্থ্যাবস্থা ও জীবদ্দশায় তার ধ্বনসম্পদের মধ্য থেকে (আল্লাহ’র পথে) বেড় করেছে, (এজাতীয় বিষয়গুলো) তার মৃত্যুর পরও তার সাথে গিয়ে মিলিত হবে”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ১/৮৮ হাদিস ২৪২; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ- ৪/১২১ হাদিস ২৪৯০]

জীবিত অবস্থায় সন্তানকে দ্বীন শিখিয়ে নেককার হওয়ার পথ দেখিয়ে গেলে, সে যখন আল্লাহ তাআলার কাছে পিতার জন্য দোয়া ইস্তেগফার করতে থাকবে, তখন মৃত পিতা উপকৃত হতে থাকবেন; হয় তার গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে, অথবা শাস্তি লাঘব করা হবে, কিংবা মর্যাদা-স্তর বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- إن الله عز وجل لَيرفع الدرجة للعبد الصالح في الجنة، فيقول: يا رب، أنَّى لي هذه؟ فيقول: باستغفار ولدك لك . رواه أحمد في مسنده : ٢/٥٠٩ ، و ابن أبي شيبة في مسنفه : ٣/٥٨ رقم ١٢٠٨١ ، وعنه ابن ماجه في كتاب الأدب، باب بر الوالدين : ٢/١٢٠٧ رقم ٣٦٦٠ ، قال العراقي المغني عن حمل الأسفار : ١/٢٧٠ : إسناده حسن ، وقال ابن كثير في تفسيره : ٤/٢٤٣ و البوصيري في مصباح الزجاجة : ٤/٩٧ رقم ٢٧٢١ : إسناده صحيح ، و حسنه الألباني في السلسلة الصحيحة : رقم ١٥٩٨   – “নিশ্চই আল্লাহ আযযা ওয়া যাল্লা অবশ্যই জান্নাতে নেককার বান্দার মর্যাদা-স্তর উন্নিত করবেন। তখন সে (অবাক হয়ে) বলবে: ‘হে প্রভু! এটা আমার জন্য’! তখন তিঁনি বলবেন: ‘(হ্যাঁ, আজ এ মর্যাদা তোমার জন্য কৃত) তোমার সন্তানের ইস্তেগফারের বদৌলতে”। [মুসনাদে আহমদ- ২/৫০৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৩/৫৮ হাদিস ১২০৮১]

# আলী বিন আবি ত্বালেব রা., আবু দারদাহ রা., আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., উসামা বিন যায়েদ রা., আনাস রা., ইবনে ওমর রা. প্রমূখ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهُ، يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ، وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ، وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلِينَ . أخرجه الطحاوي في شرح مشكل الآثار : ١٠/١٧ برقم ٣٨٨٤ من حديث أبي الدرداء ; و أخرجه ايضا البزار في مسنده : ١٦/٢٤٧; ابن وضاح في البدع والنهي عنها : ١/٢٥; و الآجري في الشريعة برقم ١,٢; الطبراني في مسند الشاميين : ١/٣٤٤ من حديث أبي هريرة ; بن بطة في الإبانة الكبرى : ١/١٩٨ ; البيهقي في السنن الكبرى : ١٠/٣٥٣ برقم ٢٠٩١١ مُرسَلاً من حديث إبراهيم بن عبد الرحمن العذريِّ ; الخطيب في شرف أصحاب الحديث برقم ٥٣, ٥٥ , ٥٦ من حديثِ أسامةَ بنِ زيدٍ و ابن مسعود ; و ابن عساكر في “تاريخ دمشق : ٧/٣٨-٣٩, ٤٣/٢٣٦, ٥٤/٢٢٥ ن حديث أنس و أسامةَ بنِ زيدٍ و أبي هريرة ; ابن عدي في الكامل : ١/٢١١, ١/٢٤٨, ٢/٢٧٣, ٣/٤٥٧ من حديث علي بن أبي طالب و أبي هريرة و أبي أمامة ; وذكره الديلمي في “مسند الفردوس” برقم ٩٠١٢ من حديث ابن عمر ; و ابن عبد البر في التمهيد : ١/١٥٤ ; قلت: فالمتنه و معناه حديث صحيح بمجموع طرقه و أسانيده إن شاء الله ، والله أعلم – “(আমার রেখে যাওয়া দ্বীনের) এই ইলমকে তার প্রত্যেক পরবর্তী আদেল (ন্যায়পরায়ন আলেম)গণ ধারন/বহন করবে। তারা একে চরমপন্থীদের তাহরিফ (বিকৃতি), বাতিলপন্থীদের (মিথ্যা-দাবী ও) আস্ফালন এবং জাহেল-মুর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে মুক্ত রাখবেন”[শারহু মুশকিলিল আছার, ইমাম তাহাবী, হাদিস ৩৮৮৪; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ১০/৩৫৩; মুসনাদে বাযযার- ১৬/২৪৭; মুসনাদে শামেয়ীন, ইমাম ত্বাবরাণী- ১/৩৪৪ হাদিস ৫৯৯; আল-ইবানাহ, ইবনুল বাত্তাহ- ১/১৯৮; আশ-শারিয়াহ, ইমাম আযরী, হাদিস ১, ২; শারফু আসহাবিল হাদিস, খতীব, হাদিস ৫৩, ৫৫, ৫৬; তারিখে দামেশক, ইবনু আসাকীর- ৭/৩৮-৩৯, ৪৩/২৩৬, ৫৪/২২৫; আল-কামেল, ইবনু আদী- ১/২১১, ১/২৪৮, ২/২৭৩, ৩/৪৫৭; মুসনাদে ফিরদাউস, দাইলামী, হাদিস ৯০১২; আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার- ১/১৫৪]

# আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا . رواه أبو داود , كتاب الملاحم , برقم ٤٢٩١ ; و الحاكم في المستدرك : ٤/٥٢٢ , و البيهقي في معرفة السنن والآثار : ١/٤٢٢ , و في مناقب الشافعي : ١/١٣٧ , و ابن عدي في الكامل: ١/١٢٣ , و الخطيب في تاريخ بغداد : ٢/٦١ , و الطبراني في المعجم الأوسط : ٦/٣٢٣ رقم ٦٥٢٧ ; و صححه السخاوي في المقاصد الحسنة : ١٤٩ ، والألباني في السلسلة الصحيحة : رقم ٥٩٩ ;  – “নিশ্চই আল্লাহ এই উম্মতের জন্য প্রতি একশ বছরের মাথায় এমন কাউকে পাঠাবেন, যে (আমার রেখে যাওয়া) দ্বীনকে নবায়ন ( ও পুনরুজ্জীবিত) করবে”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯১; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫২২; মা’রিফাতুস সুনান, বাইহাকী- ১/৪২২; মানাকিবুশ শাফেয়ী, বাইহাকী- ১/১৩৭; আল-কামেল, ইবনুল আদী- ১/১২৩; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ২/৬১; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৬/৩২৩ হাদিস ৬৫২৭]

# সা’লাবা বিন হাকাম রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يقول الله عز وجل للعلماء يوم القيامة إذا قعد على كرسيه لفصل عباده : إني لم أجعل علمي وحلمي فيكم إلا وأنا أريد أن أغفر لكم على ما كان فيكم ولا أبالي . رواه الطبراني في الكبير: ٢/٨٤ رقم ١٣٨١ ، و قال الهيثمي في مجمع الزاوئد : ١/١٢٦ : رواه الطبراني في الكبير و رجاله موثقون ; و قال ابن كثير في بداية تفسير سورة طه : اسناده جيد ; و اورده المنذري في الترغيب والترهيب وعزاه للطبراني وقال رواته ثقات : ١/١٠١ ; و كذا قال السيوطي ; و قال البوصيري في اتحاف الخيرة المهرة : رواته ثقات – “আল্লাহ আযযা ওয়া যাল্লা কিয়ামতের দিন যখন তাঁর বান্দাদের ফয়সালা করার জন্য তাঁর কুরসীর উপরে অধিষ্ঠিত হবেন, তখন (এক পর্যায়ে) আলেমগণকে (উদ্দেশ্য করে) বলবেন: ‘নিশ্চই আমি আমার ইলম ও হিলমকে তোমাদের মধ্যে শুধু এজন্য রেখেছিলাম যে, আমি চেয়েছিলাম, তোমাদের মধ্যে (ভুল-ত্রুটি) যাই থাকুক, তার পরও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। আর (এব্যাপারে) আমি কোনো পরওয়া করি না[আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ২/৮৪ হাদিস ১৩৮১; মুজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১/১২৬; তারগীব ওয়াত তারহীব, ইমাম মুনযিরী- ১/১০১]

# ইমাম আ’মাশ রহ. থেকে মুরসাল সূত্রে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- آفة العلم النسيان ، و إضاعته أن تحدث به غير أهله . رواه دارمي في المسند الجامع , كتاب العلم : رقم ٦٥٥ و قال ابو عاصم نبيل بن هاشمالغمري في فتح المنان شرح المسند الجامع: ٣/٤٢٥ : الحديث مرسل برجال ثقات ; و اخرجه ايضا أبو سعيد الأشج في حديثه : ١/٢٢٢; و أبو الحسين الأبنوسي في الفوائد: ٢/٢٤ ; قال الألباني في السلسلة الضعيفة و الموضوعة :٣/٤٦٨: ضعيف  – ‘ইলমের ক্ষতি হল (তা) ভুলে যাওয়া। আর তার ধ্বংস হল -সেটির আহাল নয় এমন কারো কাছে তা বর্ণনা করা’[আল-মুসনাদুল জামে, ইমাম দারেমী, হাদিস ৬৫৫; দাইলামী: ;আল-ফাওয়ায়ীদ, আবনুসী- ২/২৪; জামেউল বায়ান, ইমাম ইবনু আব্দিল বার- ১/৩১; ফায়জুল কাদির, মুনাভী- ১/৬৮ হাদিস ১২]

# আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- أَلاَ إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ مَلْعُونٌ مَا فِيهَا إِلاَّ ذِكْرَ اللَّهِ وَمَا وَالاَهُ وَعَالِمًا أَوْ مُتَعَلِّمًا . رواه الترمذي في سننه , كتاب الزهد عن رسول الله صلى الله عليه وسلم : ٤/٥٦١ رقم ٢٣٢٢ و قال : هذا حديث حسن غريب , اسناده حسن ; و ابن ماجه في سننه : ٢/١٣٧٧ رقم ٤١١٢ ; و ابن أبي عاصم في الزهد : ١٢٦ ; و البيهقي في شعب الإيمان : ٢/٢٦٥ رقم ١٧٠٨ ; و ابن عبد البر في جامع بيان العلم : ١٣٥ ; هذا الحديث أربعة شواهد فالحديث صحيح بمجموع طرقه  – “শোন, নিশ্চই দুনিয়া হল অভিশপ্ত; তার মধ্যে যা আছে তাও অভিশপ্ত। ব্যাতিক্রম শুধু আল্লাহ’র যিকির (স্মরণ) ও উহার সংগতিপূর্ণ অন্যান্য আমল (আল্লাহ’র অনুগত্য), আলেম এবং ইলমের অন্বেষনকারী”। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৫৬১ হাদিস ২৩২২; সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩৭৭ হাদিস ৪১১২; আয-যুহদ, ইবনু আবি আসেম, হাদিস ১২৬; শারহুস সুন্নাহ, ইমাম বগভী- ১৪/২২৯; শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ২/২৬৫ হাদিস ১৭০৮; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১৩৫]

# আনাস বিন মালেক, আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, আলী বিন আবি ত্বালেব ও আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- طَلَبُ العِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَىْ كُلِّ مُسْلِمٍ . رواه ابن ماجه : رقم ٢٢٤ ; و حسَّنه المزي و الزركشي و السيوطي و السخاوي و الذهبي و المناوي و الزرقاني بكثرة طرقه وشواهده ، قال القاري في المرقاة : ١/٤٧٨ : لكن كثرة الطرق تدل على ثبوته ويقوى بعضه ببعض قال المزي تلميذ النووي إن طرقه تبلغ رتبة الحسن ; و صحيحه الألباني في تخريج أحاديث مشكلة الفقر وكيف عالجها الإسلام : ص ٤٨-٦٢ رقم ٨٦ و في صحيح الترغيب والترهيب : ص ٣٤ و في صحيح سنن ابن ماجه : ١/٤٤  – “প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ইলমের তলব (অন্বেষন) ফরয”। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ২২৪; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৩/৭৮; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ১/১৩; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ১২/২২০, ২৪৮, ১৫/১২৮, ১৭১, ১৬/১২৩;  আল-কামেল, ইবনু আদী- ১/১৫৫, ২২০, ২৭৭, ৩৮৫; আল-জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১/৭-৯; আল-ফাওয়ায়িদ, ইবনু নসর- ১/২২৫; হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নুআইম- ৮/৩২৩; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ১/৪০৭, ৪/১৫৬, ২০৭, ৩২৭, ৭/৩৮৬, ৯/১১১, ৩৬৪; আল-মাজালিসুল খামসা, সালাফী- ১/২৩৪;  ইবনু নাজ্জার- ১০/১৭১; আল-ফাওয়ায়িদ, রাযী- ১/৮, ২/৮ ; আল-ফাওয়ায়িদ, ইবনুল বিশরান- ১/৬৪; মুসনাদে শিহাব- ১/৬; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১/১১৯]

# আবু উমামাহ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ . رواه الترمذي في سننه , كِتَاب الْعِلْمِ : رقم ٢٦٨٦ ; و الحديث في إسناده ضعف ، و رواه الدارمي: ١/٨٨ عن مكحول بإسناد حسن مرسل، و: ١/٩٧ عن الحسن البصري بإسناد حسن مرسل أيضاً فيتقوى بهما . ينظر: مختصر منهاج القاصدين ص ٢١ – الهامش . – “(একজন বে-আলেম) আবেদের উপরে (একজন) আলেমের ফজিলত হল যেমন তোমাদের কোনো সাধারণ ব্যাক্তির উপরে আমার ফজিলত”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৮৬; সুনানে দারেমী- ১/৮৮, ১/৯৭]

# আবু বকরাহ থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أغد عالما أو متعلما أو مستمعا أو محبا ولا تكن الخامسة فتهلك . رواه البزار في في البحر الزخار: ٩/٩٤ رقم ٣٦٢٦ و قال : و هذا الحديث لا نعلمه يروى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم من وجه من الوجوه إلا من هذا الوجه عن أبي بكرة وعطاء بن مسلم ليس به بأس و لم يتابع عليه ; و الطبراني في المعجم الصغير : ٢/٦٣ ; قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ١/١٢٢ : رواه الطبراني في الثلاثة والبزار ورجاله موثقون ; و رواه ايضا الطحاوي في شرح مشكل الآثار: رقم ٦١١٦ ; و أبونعيم في حلية الأولياء : ٧/٢٣٦ ; و البيهقي في شعب الإيمان : ٢/٢٦٥ رقم ١٧٠٩ ; و ابن عبدالبر في جامع بيان العلم : ١/١٤٧ – “(পারলে যোগ্য ও বিজ্ঞ) আলেম হও, নতুবা ইলম অর্জনকারী হও, অথবা (ইলম) শ্রবনকারী হও, অথবা (আলেম ও ইলম অন্বেষনকারীর প্রতি) মুহাব্বাতকারী হও। তবে পঞ্চম কেউ হতে যেও না। নতুবা তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে”। [মুসনাদে বাযযার– ৯/৯৪ হাদিস ৩৬২৬; আল-মু’জামুস সাগীর, ত্বাবরাণী- ২/৬৩; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী, হাদিস ৬১১৬; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৭/২৩৬; শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ২/২৬৫ হাদিস ১৭০৯; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১/১৪২]

ফায়দা: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, তিনি বলেন- أغد عالما أو متعلما ولا تغد بين ذلك فإن لم تفعل فأحب العلماء ولا تبغضهم . رواه الطبراني في الكبير: رقم ٨٧٥٢ ; قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ١/١٢٢ : رواه الطبراني في الكبير ورجاله رجال الصحيح الا أن عبد الملك بن عمير لم يدرك ابن مسعود. – “(পারলে যোগ্য ও বিজ্ঞ) আলেম হও, নতুবা ইলম অর্জনকারী হও, কিন্তু এই দুয়ের মাঝে থেকো না। আর যদি সেটা না পারো, তাহলে (কম করে হলেও) আলেমগণকে মহব্বত করিও, তাঁদেরকে ঘৃনা করো না”। [আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৯/৬৩ হাদিস ৮৭৫২; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১/১২২]

আওন বিন আব্দুল্লাহ রহ.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, তিনি বলেন- قلت لعمر بن عبدالعزيز: يُقال: أن استطعت أن تكون عالماً فكن عالماً، وإن لم تكن عالماً فكن متعلماً، و إن لم تكن متعلماً فأحبهم، فإن لم تحبهم فلا تبغضهم . فقال عمر: سبحان الله! لقد جعل الله له مخرجاً. رواه أبو خيثمة في كتاب العلم : ٢ ، و الفسوي في المعرفة التاريخ : ٣/٣٩٨، و ابن عبدالبر في جامع بيان العلم : ١/١٤٢ من طريق حنظلة عن عون بن عبد الله . هذا إسناد صحيح – “আমি (চতুর্থ খলিফায়ে রাশেদ) ওমর বিন আব্দুল আযীযকে (একবার) বললাম: বলা হয়েছে: ‘তোমার পক্ষে যদি আলেম হওয়া সম্ভব হয়, তাহলে আলেম হও, আর যদি তুমি আলেম হতে না পারো, তাহলে ইলম অর্জনকারী হও। আর যদি ইলম অর্জনকারীও না হতে পারো, তাহলে (কমপক্ষে) তাঁদেরকে মহব্বত করো। আর তাঁদেরকে যদি মহব্বত করতে না পারো, তাহলে (অন্তত:) তাঁদেরকে ঘৃনা করো না’। তখন ওমর বললেন: ‘সুবহানাল্লহ ! আল্লাহ তার জন্য বেড়ুবার পথ করে দিয়েছে”। [কিতাবুল ইলম, খাইশামাহ- ২; আল-মা’রিফাতুত তারখি, ফাসবী- ৩/৩৯৮; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১/১৪২]

# ইয়াযীদ বিন উমায়ের রহ. -এর সূত্রে বণিত হয়েছে, তিনি (মুয়ায ইবন যাবাল রা. সম্পর্কে) বলেন كَانَ لاَ يَجْلِسُ مَجْلِسًا لِلذِّكْرِ حِينَ يَجْلِسُ إِلاَّ قَالَ اللَّهُ حَكَمٌ قِسْطٌ هَلَكَ الْمُرْتَابُونَ فَقَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ يَوْمًا إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ فِتَنًا يَكْثُرُ فِيهَا الْمَالُ وَيُفْتَحُ فِيهَا الْقُرْآنُ حَتَّى يَأْخُذَهُ الْمُؤْمِنُ وَالْمُنَافِقُ وَالرَّجُلُ وَالْمَرْأَةُ وَالصَّغِيرُ وَالْكَبِيرُ وَالْعَبْدُ وَالْحُرُّ فَيُوشِكُ قَائِلٌ أَنْ يَقُولَ مَا لِلنَّاسِ لاَ يَتَّبِعُونِي وَقَدْ قَرَأْتُ الْقُرْآنَ مَا هُمْ بِمُتَّبِعِيَّ حَتَّى أَبْتَدِعَ لَهُمْ غَيْرَهُ فَإِيَّاكُمْ وَمَا ابْتُدِعَ فَإِنَّ مَا ابْتُدِعَ ضَلاَلَةٌ وَأُحَذِّرُكُمْ زَيْغَةَ الْحَكِيمِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَقُولُ كَلِمَةَ الضَّلاَلَةِ عَلَى لِسَانِ الْحَكِيمِ وَقَدْ يَقُولُ الْمُنَافِقُ كَلِمَةَ الْحَقِّ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ لِمُعَاذٍ مَا يُدْرِينِي رَحِمَكَ اللَّهُ أَنَّ الْحَكِيمَ قَدْ يَقُولُ كَلِمَةَ الضَّلاَلَةِ وَأَنَّ الْمُنَافِقَ قَدْ يَقُولُ كَلِمَةَ الْحَقِّ قَالَ بَلَى اجْتَنِبْ مِنْ كَلاَمِ الْحَكِيمِ الْمُشْتَهِرَاتِ الَّتِي يُقَالُ لَهَا مَا هَذِهِ وَلاَ يُثْنِيَنَّكَ ذَلِكَ عَنْهُ فَإِنَّهُ لَعَلَّهُ أَنْ يُرَاجِعَ وَتَلَقَّ الْحَقَّ إِذَا سَمِعْتَهُ فَإِنَّ عَلَى الْحَقِّ نُورًا ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ مَعْمَرٌ عَنِ الزُّهْرِيِّ فِي هَذَا وَلاَ يُنْئِيَنَّكَ ذَلِكَ عَنْهُ مَكَانَ يُثْنِيَنَّكَ ‏.‏ وَقَالَ صَالِحُ بْنُ كَيْسَانَ عَنِ الزُّهْرِيِّ فِي هَذَا الْمُشَبَّهَاتِ مَكَانَ الْمُشْتَهِرَاتِ وَقَالَ لاَ يُثْنِيَنَّكَ كَمَا قَالَ عُقَيْلٌ ‏.‏ وَقَالَ ابْنُ إِسْحَاقَ عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ بَلَى مَا تَشَابَهَ عَلَيْكَ مِنْ قَوْلِ الْحَكِيمِ حَتَّى تَقُولَ مَا أَرَادَ بِهَذِهِ الْكَلِمَةِ ‏. رواه أبو داود في سننه , كتاب السنة , بَاب لُزُومِ السُّنَّةِ : ٤/٢٠٢ رقم ٤٦١١ ; قال الشيخ الألباني : صحيح الإسناد موقوف ; و رواه ايضا الطبراني في الكبير: ٢٠/١١٤ رقم ٢٢٧ ; و ابن عساكرفي تاريخ دمشق : ٦٥/٣٣٧ ; و جعفر بن محمد الفريابي في صفة المنافق : ص ٨١ – “আলোচনার জন্য তাঁর এমন কোনো মজলিস ছিল না, যে মজলিসে তিনি একথা না বলতেন যে, ‘আল্লাহ ন্যায় বিচারক, (এ ব্যাপারে) অবিশ্বাসী/সন্দেহকারীদরা ধ্বংস হয়ে গেছে’। একদিন মুয়ায ইবন যাবাল রা. বললেন: ‘নিশ্চই তোমাদের পরে (একটি) ফিতনা হবে। সে সময় প্রচুর ধ্বনসম্পদ হবে, আর তখন কুরআন সহজলভ্য হয়ে যাবে। এমনকি মুমিন, মুনাফেক, পুরুষ, নারী, ছোট, বড়, গোলাম, স্বাধীন ব্যাক্তি (সর্বস্তরের লোকজন) তা পড়বে। পরে অচিরেই কেউ বলে বসবে: ‘(আরে) লোকজনের কী হল ! আমি কুরআন পড়ে নিয়েছি অথচ তারা আমার অনুগত্য-অনুসরণ করছে না ! তারা আমার অনুগত্য-অনুসরণ করবে না, যাবৎ না আমি তাদের জন্য ওর পরিবর্তে অন্য নতুন কিছু চালু করি’। কাজেই (কারো দ্বারা কুরআনের স্থলে অন্য কিছু) নতুন চালু করা হলে তোমারা (সে ব্যাপারে) সতর্ক থেকো। কারণ, (কুরআন সুন্নাহ’র বাহিরে) যা (নতুন) উদ্ভাবিত হয় তা নিশ্চই পথভ্রষ্ঠতা। আর আমি তোমাদেরকে প্রাজ্ঞ আলেমের বক্রতা থেকে সতর্ক করছি। কারণ, শয়তান (কখনো কখনো) প্রাজ্ঞ আলেমের জিহবা দিয়েও পথভ্রষ্ঠতাপূর্ণ কথা বলায়। আবার (অনেক সময়) মুনাফেকও হক্ব কথা বলে’। (রাবী) বলেন: আমি মুয়াযকে জিজ্ঞেস করলাম: ‘আল্লাহ আপনার উপরে রহম করুন। আমি কিভাবে বুঝবো যে, প্রাজ্ঞ আলেম পথভ্রষ্ঠতাপূর্ণ কথা বলেছেন, আর মুনাফেক হক্ব কথা বলেছে’? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ’,  প্রাজ্ঞ আলেমের ওই প্রচারিত কথাবার্তা থেকে বিরত থাকো, যে ব্যাপারে কথা ওঠে যে, এটা কী(রকম কথা হল) ! আর (তিনি যে ভ্রষ্ঠ কথাটি বললেন) সেটা যেন (আবার) তোমাকে তার ব্যাপারে বিদ্বিষ্ট করে না তোলে। কারণ, হতে পারে তিনি পূণরায় (হক্বের দিকে) ফিরে আসবেন, (আর তুমি তাঁর প্রতি তখনও বিদ্বিষ্ট ভাব নিয়েই থেকে যাবে। তোমার কর্তব্য হবে, তাঁর মধ্যে কুরআন সুন্নাহ’ অনুপাতে যে দিকটা রয়েছে তার কারণে তাঁকে আল্লাহ’র জন্য মহব্বত করা ও সাধ্য মতো হক্বের ব্যাপারে তার অনুসরণ করা)। তুমি যখনই হক্ব (কথা) শুনতে পাবে, (কোনো পরওয়া না করে তখনই) তা কবুল করে নিবে। বস্তুত: সত্য/হক্বের উপরে (এক প্রকারের পবিত্র আলো ও) নূর থাকে, (যা ইমানদার চোখ দেখেই চিনে নিতে পারে)”। [সুনানে আবু দাউদ -৪/২০২ হাদিস ৪৬১১; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ২০/১১৪ হাদিস ২২৭; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ৬৫/৩৩৭; সিফাতুন নিফাক, ফিরআবী- ৮১; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ২/২২৪]