কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন সমূহ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী – ৩
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে (এখানে ক্লিক করুন) কিছু হাদিস ও আছার পেশ করেছি। এখানেও কিছু উল্রেখ করা হল। [উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।]
কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন সমূহ – ৩ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে (এখানে ক্লিক করুন) কিছু হাদিস ও আছার পেশ করেছি। এখানেও কিছু উল্রেখ করা হল। [উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।]
# ইমাম ত্বাবরাণী রহ. নিজ সূত্রে হযরত উতায়ী সা’দী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- خَرَجْتُ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ حَتَّى قَدِمَتُ الْكُوفَةَ ، فَإِذَا أَنَا بِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِ الْكُوفَةِ ، فَسَأَلْتُ عَنْهُ ، فَأُرْشِدْتُ إِلَيْهِ ، فَإِذَا هُوَ فِي مَسْجِدِهَا الْأَعْظَمِ فَأَتَيْتُهُ ، فَقُلْتُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنِّي جِئْتُ أَضْرِبُ إِلَيْكَ أَلْتَمِسُ مِنْكَ عِلْمًا ، لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يَنْفَعَنَا بِهِ بَعْدَكَ ، فَقَالَ لِي: مِمَّنِ الرَّجُلُ؟ قُلْتُ: رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ. قَالَ: مِمَّنْ؟ قُلْتُ: مِنْ هَذَا الْحَيِّ مِنْ بَنِي سَعْدٍ. فَقَالَ لِي: يَا سَعْدِيُّ ، لَأُحَدِّثَنَّ فِيكُمْ بِحَدِيثٍ سَمِعَتْهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى قَوْمٍ: كَثِيرَةٌ أَمْوَالُهُمْ ، كَثِيرَةٌ شَوْكَتُهُمْ ، تُصِيبُ مِنْهُمْ مَالًا دَبْرًا أَوْ قَالَ: كَثِيرًا؟ قَالَ:” مَنْ هُمْ؟ “. قَالَ: هَذَا الْحَيُّ مِنْ بَنِي سَعْدٍ ، مِنْ أَهْلِ الرِّمَالِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ:” مَهْ ، فَإِنَّ بَنِي سَعْدٍ عِنْدَ اللَّهِ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ ” . سَلْ يَا سَعْدِيُّ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ ، هَلْ لِلسَّاعَةِ مِنْ عِلْمٍ تُعْرَفُ بِهِ السَّاعَةُ؟ قَالَ: وَكَانَ مُتَّكِئًا فَاسْتَوَى جَالِسًا ، فَقَالَ: يَا سَعْدِيُّ ، سَأَلَتْنِي عَمَّا سَأَلْتُ عَنْهُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، هَلْ لِلسَّاعَةِ مِنْ عِلْمٍ تُعْرَفُ بِهِ السَّاعَةُ؟ فَقَالَ:” نَعَمْ ، يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ لِلسَّاعَةِ أَعْلَامًا ، وَإِنَّ لِلسَّاعَةِ أَشْرَاطًا ، أَلَا وَإِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكُونَ الْوَلَدُ غَيْظًا ، وَأَنْ يَكُونَ الْمَطَرُ قَيْظًا ، وَأَنْ يَفِيضَ الْأَشْرَار فَيْضًا. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يُؤْتَمَنَ الْخَائِنُ ، وَأَنْ يُخَوَّنَ الْأَمِينُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ ، وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا ، وَكُلَّ سُوقٍ فُجَّارُهَا. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تُحَرَّفَ الْمَحَارِيبُ ، وَأَنْ تُخَرَّبَ الْقُلُوبُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكُونَ الْمُؤْمِنُ فِي الْقَبِيلَةِ أَذَلَّ مِنَ النَّقَدِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْتَفِيَ الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا مُلْكُ الصِّبْيَانِ ، وَمُؤَامَرَةُ النِّسَاءِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تُكَثَّفَ الْمَسَاجِدُ ، وَأَنْ تَعْلُوَ الْمَنَابِرُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يُعَمَّرَ خَرَابُ الدُّنْيَا ، وَيُخَرَّبَ عُمْرَانُهَا. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تَظْهَرَ الْمَعَازِفُ وَالْكِبْرُ ، وَشُرْبُ الْخُمُورِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْثُرَ أَوْلَادُ الزِّنَا » . قُلْتُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، وَهُمْ مُسْلِمُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالْقُرْآنُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، وَأَنَّى ذَلِكَ؟ قَالَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يُطَلِّقُ الرَّجُلُ الْمَرْأَةَ ، ثُمَّ يَجْحَدُهَا طَلَاقَهَا ، فَيُقِيمُ عَلَى فَرْجِهَا، فَهُمَا زَانِيَانِ مَا أَقَامَا – أخرجه الطبراني في “المعجم الكبير” ١٠/٢٢٨ ، وفي “المعجم الأوسط” ٤٨٦١ و قال الهيثمي في مجمع الزوائد: رواه الطبراني في الأوسط والكبير وفيه سيف بن مسكين وهو ضعيف: ٧/٦٢٤; و الحديث ضعفه البيهقي كما في “البداية والنهاية” لابن كثير: ١٩/٢٧٤، و العراقي في المغني عن حمل الأسفار في الأسفار، في تخريج ما في الإحياء من الأخبار: ص ٦٥٦ ، والسخاوي في “الأجوبة المرضية: ٢/٥٢٤ – ‘আমি (একবার) ইলমের তলবে বেরিয়ে পড়লাম, এমনকি শেষে কুফায় গিয়ে পৌছলাম। আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর খোঁজে ছিলাম, এমন সময় আমার সামনে কুফাবাসীদের দেখা মিললো। আমি (তাদেরকে) তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম এবং (তিনি এখন কোথায় আছেন তা জানার পর) আমি সোজা তাঁর কাছে চলে গেলাম। তিনি তখন (কুফার) বড় মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম: হে আবু আব্দির রহমান! আমি এত কষ্ট করে আপনার কাছে এসেছি, যাতে আপনার কাছ থেকে ইলম হাসিল করতে পারে। হতে পারে আল্লাহ তাআলা আপনার পর এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করবেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন: আপনি কোথাকার লোক? আমি বললাম: আমি বসরা’র লোক। জিজ্ঞেস করলেন: (আপনি) কোন গ্রোত্রের? আমি বললাম: এই যে বনু সা’দ -এর যারা জীবিত আছে (আমি) তাদের একজন। তিনি আমাকে বললেন: হে সা’দী! আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে এমন হাদিস বর্ণনা করবো যা আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছি। আমি (একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর কথা শুনছিলাম, এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে বললো: আমি কি একটি কওমের কথা আপনাকে জানাবো না! তাদের প্রচুর ধ্বনসম্পদ, শান-শওকতও অনেক। কিন্তু সেগুলো থেকে এক কপর্দকও তাদের মেলে না অথবা বলেছে: এত বিপুল (সম্পদ থেকে এক কপর্দকও তাদের মেলে না)। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: কে তারা? লোকটি বললো: এই যে বনু সা’দ-এর যারা জীবিত আছে; যারা রিমালবাসী। রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করলেন- থামো.. নিশ্চই আল্লাহ’র কাছে বনু সা’দরা (দুনিয়াবী সম্পদের দিক থেকে) বেশ ভাগ্যের অধিকারী। (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন:) প্রশ্ন করো, হে সা’দী! আমি বললাম: হে আবু আব্দির রহমান! কিয়ামত সম্পর্কে কি কিছু জানার আছে যা দ্বারা কিয়ামত (-এর আলামত ও লক্ষন) চেনা যাবে? (এ প্রশ্ন শুনে) তিনি ঠেস্ দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন, তারপর বললেন: হে সা’দী! আপনি আমাকে যে প্রশ্ন করলেন, আমিও সে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমি বললাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺ! কিয়ামত সম্পর্কে কি কিছু জানার আছে যা দ্বারা কিয়ামত (-এর আলামত ও লক্ষন) চেনা যাবে? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যা, হে ইবনে মাসউদ। নিশ্চই কিয়ামতের অনেক আলামত আছে। নিশ্চই কিয়ামতের অনেক লক্ষন আছে। ভাল করে শোন। কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكُونَ الْوَلَدُ غَيْظًا ، وَأَنْ يَكُونَ الْمَطَرُ قَيْظًا ، وَأَنْ يَفِيضَ الْأَشْرَار فَيْضًا – সন্তান হবে গোস্বাওয়ালা-রাগী, বৃষ্টি হবে গরম, নিকৃষ্ট মানুষের ঢল নামবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يُؤْتَمَنَ الْخَائِنُ ، وَأَنْ يُخَوَّنَ الْأَمِينُ খেয়ানতকারীকে আমানতদার ভাবা হবে এবং আমানতদারকে খেয়ানতকারী ভাবা হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ ، وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ -ডিশসমূহ পরষ্পরে যোগাযোগ করবে এবং রেহমী সম্পর্ক কর্তন করা হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا ، وَكُلَّ سُوقٍ فُجَّارُهَا –সকল কবিলাহ (অঞ্চল, জেলা, পাড়া)-র নেতা হবে সেখানকার মুনাফেক ব্যাক্তিরা এবং সকল বাজার/মার্কেটের (নেতা হবে সেখানকার) ফাজের/পাপাবিষ্ঠ ব্যাক্তিরা। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُحَرَّفَ الْمَحَارِيبُ ، وَأَنْ تُخَرَّبَ الْقُلُوبُ – মেহরাবসমূহ ডিজাইন করা হবে এবং (মানুষের) অন্তরগুলো বিরান হয়ে যাবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكُونَ الْمُؤْمِنُ فِي الْقَبِيلَةِ أَذَلَّ مِنَ النَّقَدِ -মুমিন ব্যাক্তি লোকালয়ে ছোট ভেড়ার চাইতেও অধিক হেও/তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্র হয়ে যাবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكْتَفِيَ الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ -এক পুরুষ আরেক পুরুষকে এবং এক নারী আরেক নারীকে (যৌনসম্ভগের জন্য) যথেষ্ট মনে করবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: مُلْكُ الصِّبْيَانِ ، وَمُؤَامَرَةُ النِّسَاءِ – কঁচি-বয়সীদের রাষ্ট্রক্ষমতা এবং নারীদের ষঢ়যন্ত্র (প্রকাশ পাবে)। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُكَثَّفَ الْمَسَاجِدُ ، وَأَنْ تَعْلُوَ الْمَنَابِرُ -মসজিদসমূহ ঘন ঘন (করে তৈরী করা) হবে এবং মিম্বরসমূহ লম্বা করা হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يُعَمَّرَ خَرَابُ الدُّنْيَا ، وَيُخَرَّبَ عُمْرَانُهَا -পৃথিবীর বিরান অঞ্চলগুলিকে নির্মান করা হবে এবং নির্মিত অঞ্চলসমূহ বিরান করে দেয়া হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تَظْهَرَ الْمَعَازِفُ وَالْكِبْرُ ، وَشُرْبُ الْخُمُورِ -বাদ্যযন্ত্র, অহংকার এবং মদ ও মাদক সেবন ব্যাপক হয়ে যাবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكْثُرَ أَوْلَادُ الزِّنَا –ব্যাভিচারজাত সন্তান প্রচুর হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: হে আবু আব্দির রহমান, তারা কি মুসলমান হবে? তিনি বললেন: হ্যা। আমি বললাম: আবু আব্দির রহমান, তাদের সামনে কি কুরআন থাকবে? তিনি বললেন: হ্যা। আমি বললাম: আবু আব্দির রহমান, বলেন কি! তিনি বললেন: এমন জামানা আসবে যে, পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাক দিবে, এরপর স্ত্রীকে প্রদত্ত তালাক’কে (কার্যকর হওয়াকে) অমান্য করবে (এবং তারা আবারো স্বামী স্ত্রী’র মতো বসবাস করাকে বৈধ মনে করবে), পরে (সে ওই কথিত) স্ত্রীর লজ্জাস্থানকে (হালাল মনে করে) ব্যবহার করবে। সুতরাং, তারা উভয়ে যা করবে তাতে দুজনেরই জেনা হবে। [আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ১০/২২৮; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৪৮৬১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/৬২৪; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ১৯/২৭৪]
ফায়দা: এই রেওয়ায়েতের ব্যাপারে শক্ত কালাম রয়েছে, তবে এতে বর্ণিত কেয়ামতের আলামতগুলোর অনেক শাহেদ ও মাফহুমী হাদিস ও আছার রয়েছে।
এই বর্ণনাটির মধ্যে যে বাক্যাংশটি বিশেষভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সেটি হল- ‘হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ ، وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ -ডিশসমূহ পরষ্পরে যোগাযোগ করবে এবং রেহমী (আত্বীয়তার) সম্পর্ক কর্তন করা হবে’। আমি এখানে الْأَطْبَاقُ-এর অনুবাদ করেছি ডিশসমূহ। এখানে মূল শব্দটি হল طبق যার বহুবচন হল اطباق , আর طبق অর্থ হয়- থালা, গামলা/ডিশ (Dish) , তাওয়া/কড়াই, প্লেট, ট্রে, বাঁকানো ঢাল ইত্যাদি। আমি ডিশ অনুবাদটি নিয়েছি। আর تَوَاصَلَ অর্থ হল- যোগাযোগ (communicate) করা, অবিরামভাবে সম্পর্ক (continuously) রাখা, নিবিচ্ছিন্ন (uninterrupted) যোগাযোগ করা, পরষ্পরের মধ্যে আন্ত যোগাযোগ (Intercommunicate) বা আদানপ্রদান করা ইত্যাদি। আমি অর্থ করেছি أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ – ডিশসমূহ পরষ্পরে যোগাযোগ করবে’। আমার মতে, এখানে আধুনিক যুগের ডিশ এ্যান্টেনা, মহাকাশ স্যাটেলাইট ও ওয়ারলেস (বিনা-তারের) ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যার সাহায্যে পৃথিবীর কোনো স্থান থেকে অপর স্থানে নিমিশের মধ্যে মানুষে মানুষে কথোপকথন, স্ক্রিনে লাইভ দেখা যাওয়া ও যোগাযোগ, এমনটি বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। এগুলো কিভাবে পরষ্পরে যোগাযোগ করে, তার খানিকটা ধারনা পেতে >>> এখানে ক্লিক করুন >>>
এর পাশাপাশি বলা হয়েছে وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ -এবং রেহমী (আত্বীয়তার) সম্পর্ক কর্তন করা হবে’। আল্লাহ তাআলা যে ‘রেহমী সম্পর্ক’ বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছেন, তা শুধু মুসলমানদের নিকটাত্বীয়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানব জাতির সকলে বাবা আদম আ. ও মা হাওয়া আ.-এর সন্তান -এর হক্ব আদায় পর্যন্ত বিস্তৃত। সুতরাং, ‘রেহমী সম্পর্ক কর্তন’ বলতে গোটা মানব জাতি কর্তৃক আল্লাহ তাআলার আদেশের উপরে একতাবদ্ধ-বান্দা না হয়ে থেকে বরং নিজেদের মন মতো আক্বীদা-বিশ্বাস ও আদর্শকে জড়িয়ে ধরে খন্ডবিখন্ড হয়ে যাওয়ার সকল হেতু/কারণকে সামগ্রিক ভাবে শামিল করে নেয়। উদাহরণ স্বরূপ: যে কোনো মানুষকে অন্যায় ভাবে খুন করার অর্থ হল খুনি ব্যাক্তিটি বাবা আদম আ.-এর ওই সন্তানের সাথে তার জড়িত ‘রেহমী সম্পর্ক’কে কর্তন করে ফেললো।
গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে দেখা যাবে, বর্তমান অস্থির পৃথিবীতে দেশে দেশে মানুষে মানুষে যত মনস্তাত্বিক ও রাজনৈতিক যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব, বিরোধ, দাঙ্গা, গন্ডোগোল, আর হত্যাযজ্ঞ চলছে -তা পিছনে শক্তিশালী ও খুবই তড়িৎ প্রপাগান্ডামূলক ভূমিকা রাখছে ইন্টারনেট, ডিশ ও স্যাটেলাইট ব্যবস্থা। এসব টেকনোলজি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ভায়োলেন্ট ও অশ্লিল মুভি-সিনেমা, নাটক, অভিনয়, এ্যাড্, শো, নাচ-গান-বাজনা, মিথ্যা-প্রতারণা ও উষ্কানীমূলক খবরাখবর ইত্যাদি পৃথিবীর মানুষের মন-মস্তিষ্ককে খবিস বানিয়ে দিয়েছে, যার পরিণতিতে রেহমী সম্পর্ক আজ টুকরো টুকরো হয়ে চৌচিড় হয়ে গেছে। যারা ডিশ এন্টেনা ও স্যাটেলাইট ব্যবস্থা এবং তার ব্যাপক অত্যাধুনিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা এর সত্যতা স্বীকার করতে বাধ্য যে, এরকম বিজ্ঞানসম্মত এই ভবিষ্যৎবাণীটি সাধারণ কোনো মানুষের বানানো মিথ্যা মন্তব্য হতে পারে না, যা প্রায় ১৫০০ বছর পর আজ বাস্তবতার মুখ দেখছে এবং যা এর আগে কোনো যুগে মুখ দেখেনি। এজন্য আমার কাছে হাদিসের এই কথাটি নিঃসন্দেহে নবুওতী ইলম থেকে সংগৃহীত একটি ইলমী রত্ন, যা আমাদের এই শেষ জামানায় জ্বলজ্যান্তভাবে পূর্ণতা লাভ করেছে।
রেওয়ায়েতটির আরেকটি বাক্যাংশ হল – أَنْ يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا ، وَكُلَّ سُوقٍ فُجَّارُهَا – ‘সকল কবিলাহ (অঞ্চল, জেলা, পাড়া)-র নেতা হবে সেখানকার মুনাফেক ব্যাক্তিরা এবং সকল বাজার/মার্কেটের (নেতা হবে সেখানকার) ফাজের/পাপাবিষ্ঠ ব্যাক্তিরা’ -এরা হল বিভিন্ন শহরাঞ্চল, গ্রাম বা পাড়া-মহল্লার ওই সকল নেতা/পাতিনেতা, মাতব্বার, মুরুব্বি শ্রেণির মুসলীম নামধারী মুনাফেক লোকগুলি, যারা সেকুলারিজম, সোসালিজস, গণতন্ত্র ইত্যাদির মতো সব পথভ্রষ্ঠ মতবাদগুলিকে তাদের মূল আদর্শ হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে, ফলে মুসলমানদের পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রটি আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত ইসলামী শরীয়ত দিয়ে পরিচালিত হোক তা চায় না, সহ্যও করতে পারে না, বরং তাদের সেকুলারিজম বা সোসালিজম কিংবা গণতন্ত্র অটুট রাখার স্বার্থে ইসলামী শরীয়তের পথে বিভিন্ন ভাবে বাঁধার সৃষ্টি করে দেয়। এই শেষ জামানায় এরকম মানুষ দ্বারাই সমাজ ভরা। দেশি-বিদেশী বাজার/মার্কেটগুলো সব ওই সকল ফাসেক/ফাজের ব্যাক্তির দখলে যারা সূদ, ঘুষ, জুয়া, প্রতারণা, ধোকাবাজীতে শিদ্ধহস্ত, যারা এটা চিন্তাও করে না যে তাদের ইনকাম হালাল পথে আসছে না হারাম পথে।
আরো বলা হয়েছে যে- مُلْكُ الصِّبْيَانِ ، وَمُؤَامَرَةُ النِّسَاءِ – ‘কঁচি-বয়সীদের রাষ্ট্রক্ষমতা এবং নারীদের ষঢ়যন্ত্র (প্রকাশ পাবে)’। এখানে ‘কঁচি বয়সীদের রাষ্ট্রক্ষমতা’ বলতে সম্ভবতঃ এই শেষ জামানায় মুরুব্বি শ্রেণিদের মধ্যে তুলনামূলক অভিজ্ঞ ও উপযোগী লোক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ক্ষমতায় না বসিয়ে বরং বিভিন্ন পার্থিব ও রাজনৈতিক স্বার্থে দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের বংশীয় কোনো অল্প বয়সের উত্তরসূরীদেরকে ক্ষমতায় বসানোর প্রচলন লক্ষ্য করা যাবে মর্মে ইশারা করা হয়েছে। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান। আর ‘নারীদের ষঢ়যন্ত্র’ বলতে উম্মাহ’র মধ্যে একটি নারী গোষ্ঠি কর্তৃক ‘নারী অধিকার ও আইন’ নিয়ে আল্লাহ’র দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপরে নারীদের অধিকার ও শরয়ী আইন বিষয়ক যে ইসলামী শরীয়ত ওহীসূত্রে নাজিল করেছেন, তার মধ্যে যে সকল শরয়ী আইন-কানুন ও অধিকারগুলোকে উক্ত নারী গোষ্ঠিটি অন্যায্য, বেইনসাফী, পক্ষপাতিত্বতা ও বৈষম্যতা মনে করবে, সেগুলোকে সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে স্বমূলে বিলুপ্ত করতঃ তদস্থলে তাদের মতে যা ন্যায্য, পক্ষপাতমুক্ত ও সাম্যতাপূর্ণ মনে হবে, তা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে লাগার ষঢ়যন্ত্র উদ্দেশ্য। এই শেষ জামানায় মুসলীম সমাজের নারীরা ইসলামী শরীয়ত নির্দেশিত বিশেষ করে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ও ‘নারী পুরুষের সম-অধিকার’ নামে ইসলামী শরীয়তের বিশেষ করে পর্দা ব্যবস্থা, বিয়ে-তালাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারীতা ও ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়ক শরয়ী আইনগুলোর বিরুদ্ধে যা করতে নেমেছে, হাদিসটিতে সেসকল ষঢ়যন্ত্রের দিকেই ইশারা করা হয়েছে।
আমার মতে, এই হাদিসে বর্ণিত সকল ভবিষ্যৎবাণী আমাদের এ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে, যার কিছু কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজনে এরকম অন্য অরো কিছু রেওয়ায়েতের অধিনে পেশ করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। الله اعلم بالصواب
# আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ مِنَ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ يَفْشُوَ الْفَالِجُ , وَمَوْتُ الْفَجْأَةِ . أخرجه العقيلي في الضعفاء: ٤/١٩٥ ، وأبو بكر الدينوري في المجالسة وجواهر العلم : ٧/٢٨٣ ، وابن عدي في الكامل : ٣/١٠٨ ; اخرجه عبد الرزاق ايضا في المصنف , كتاب الجنائز , باب موت الفجاءة : ٣/٥٩٧ رقم ٦٧٨٠ اسناده ضعيف جدا كما في زوائد مصنف عبد الرزاق على الكتب الستة لد. جلال الدين عزوة : ١/٥٩٧ رقم ٤٧٨٦ ; – ‘নিশ্চই কেয়ামত যখন নিকেটে চলে আসবে, তখন প্রচুর পরিমাণে অবশ (হওয়ার রোগ) ও হঠাৎ-মৃত্যু (হওয়ার মতো ঘটনা) ঘটবে’। [আল-জুআফা, ইমাম উকাইলী- ৪/১৯৫; আল-মাজালিসাহ, ইমাম দিনুরী- ৭/২৮৩; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক– ৩/৫৯৭ হাদিস ৬৭৮০]
ফায়দা: কিন্তু এই রেওয়ায়েতে, ‘কেয়ামতের নিকটবর্তী’ সময়ে বলতে ‘শেষ জমানা’, শরীর অবশ হওয়ার রোগ বলতে প্যারালাইজড রোগ, এবং হঠাৎ-মৃত্যু বলতে হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু উদ্দেশ্য। এই রেওয়ায়েতের সনদে শক্ত কালাম অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু এই ভবিষ্যৎবাণীটি আমাদের এই শেষ জামানায় অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِذَا اتُّخِذَ الفَيْءُ دُوَلًا، وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا، وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا، وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ، وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ، وَعَقَّ أُمَّهُ، وَأَدْنَى صَدِيقَهُ، وَأَقْصَى أَبَاهُ، وَظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي المَسَاجِدِ، وَسَادَ القَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكَانَ زَعِيمُ القَوْمِ أَرْذَلَهُمْ، وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ، وَظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ، وَشُرِبَتِ الخُمُورُ، وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا، فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ، وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ . أخرجه الترمذي: كتاب الفتن: ٤/٤٩٥ رقم ٢٢١١ وقال: هذا حديث غريب; و الخطيب في تاريخه: ٣/١٥٧ ; ابن أبي الدنيا: ٦/٤١ – ‘যখন ফাই’কে (নিজের ব্যাক্তিগত) সম্পদ হিসেবে গ্রহন করা হবে, আমানতকে গণীমত হিসেবে (গ্রহন করে তার খেয়ানত করা হবে) , যাকাতকে জরিমানা (মনে করা হবে), (আল্লাহ’র) দ্বীন ভিন্ন অন্য কিছুর জন্য (যেমন নিছক পার্থিব উন্নতি ও সুখ-শান্তির জন্য) শিক্ষা গ্রহন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর অনুগত্য করবে আর মা’র (অকৃতজ্ঞ ও) অবাধ্য হবে, বন্ধুকে (তুলনামূলক) কাছে টানবে আর পিতা’কে দূরে ঠেলে দিবে, মসজিদগুলোতে (মুমিন-মুসলমানদের উপর মুনাফেক ও ফাসেক-ফাজের লোকগুলির দৌরাত্ব ও) গলার আওয়াজ প্রকাশ পাবে, কবীলাহ (জেলা/উপজেলা/গ্রাম/অঞ্চল)গুলোর মাথা/(মাতব্বর গোছের) মুরুব্বি’ হবে তাদের ফাসেক (পাপিষ্ট, স্বভাব-চরিত্রে পঁচন ধরা বদ) লোকগুলি, জাতি/গোত্রে’র নেতা হবে তাদের ছোটলোকগুলি, কোনো মানুষকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্টতার ভয়ে, (সমাজে বেপর্দা ও অশালীন রঙঢং-এর) গায়ীকা ও বাদ্যযন্ত্র (সমেত আকৃষ্টকারী নাচ-গান উল্লেখযোগ্য মাত্রায়) প্রকাশ পাবে, (প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে) মদ পান করা হবে, এই উম্মাতের শেষ দিককার (এক শ্রেণির) লোকজন তার প্রথম দিককার লোকদেরকে লা’নত দিবে। (যখন এসব ঘটতে দেখবে), তখন তোমরা লু’হাওয়া, ভূমিকম্পন, খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতির বিকৃতি) ও ক্বায্ফ (বর্ষন) -এর প্রতীক্ষায় থেকো। আলামতগুলি একটি আরেকটিকে অনুসরণ করবে যেমনি ভাবে মালার সুতা কেটে গেলে (তার পুঁথিদানাগুলো) একটি আরেকটিকে অনুসরণ করে (ঝড়ে পড়ে)’। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৪৯৫ হাদিস ২২১১]
ফায়দা: আমার মতে, এই হাদিসে শেষ জামানার উম্মাহ’র ইমান-আমলের অধঃপনের বিশেষ কিছু নমুনা দেয়া হয়েছে, যেগুলোতে উম্মাহ ব্যাপকভাবে লিপ্ত হলে বোঝা যাবে যে, কেয়ামত অতীব নিকটে এসে গেছে। সচেতন সকলেই জানে যে, মুসলীম উম্মাহ এই শেষ জামানায় এসে হাদিসটিতে বর্ণিত সবগুলো পাপের সাথেই নিজেদেরকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জড়িয়ে নিয়েছে। মনে রাখা দরকার, আল্লাহ তাআলা যাকে-তাকে যখন-তখন তাঁর আযাবে গ্রেফতার করেন না, বরং তাঁর কাছে নেকি ও পাপের পরিমাপ/দাড়িপাল্লা রয়েছে এবং রয়েছে পাপে গ্রেফতারের নিজেস্ব সুন্নাহ/নীতি। তিঁনি যখন কোনো গোষ্ঠিকে তাদের এক বা একাধিক পাপের কারণে আযাবে গ্রেফতার করেন, তখন বুঝে নিতে হবে যে, ওই গোষ্ঠিটি তাদের ওই পাপের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর ওয়াদা অনুসারে তাদেরকে আযাবে গ্রেফতার করে ফেলেছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يكون في آخر هذه الأمة خسف ومسخ وقذف . قالت: قلت: يا رسول الله، أنهلك وفينا الصالحون؟ قال: ” نعم، إذا ظهر الخبث. أخرجه الترمذي: كتاب الفتن – باب ما جاء في الخسف: ٤/٤٧٩ وقال: هذا حديث غريب، والحديث صححه الألباني. صحيح الجامع: ٢/١٣٥٥ – ‘এই উম্মতের শেষভাগে খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতি-বিকৃতি) এবং ক্বাযফ হবে’। তিনি বলেন: আমি বললাম – ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমাদের মধ্যে নেককার লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমারা (তখন ভূমিধ্বসে) ধ্বংস হয়ে যাবো? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যাঁ, (এমন ঘটবে তখন) যখন (সমাজে) খবিছ (অশ্লীলতা, নোংরামী, বদচরিত্র এবং এসবের উপকরণ) ব্যাপক আকার ধারন করবে’। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৪৭৯] মানুষ যখন উপরোক্ত পাপগুলোর সীমা অতিক্রম করে চলতে থাকবে এবং তওবার ধারধারবে না, তখন দেখা যাবে যে, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্য পরিমানে ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, দানবীয় ঘুর্নিঝড়, লু-হাওয়া ইত্যাদি উম্মাহ’র চরম পাপী গোষ্ঠিদের উপরে আযাব হিসেবে আছড়ে পড়ছে।
হাদিসটিতে বলা হয়েছে- إِذَا اتُّخِذَ الفَيْءُ دُوَلًا – ‘যখন ফাই’কে (নিজের ব্যাক্তিগত) সম্পদ হিসেবে গ্রহন করা হবে’। দুই ধরনের জিনিসকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘ফাই’ বলে অবিহিত করা হয়ে থাকে: (১) স্বশস্ত্র জিহাদের সময় কাফেররা বিনা যুদ্ধে তাদের ধ্বনসম্পদ ফেলে পালিয়ে গলে উক্ত গণীমতকে ‘ফাই’ বলা হয়, (২) ইসলামী রাষ্ট্রের কোথাও এমন ভূ-গর্ভস্ত খনিজ সম্পদকেও ‘ফাই’ বলা হয়, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আমানত স্বরূপ থাকে, যা জনগণের উপরার্থে ব্যবহারযোগ্য। আমার মতে, ‘ফাই’ বলতে এখানে ভূ-গর্ভস্ত খনিজ সম্পদকে বোঝানো হয়েছে, যেমন: খনিজ তেল, গ্যাস সোনা ইত্যাদি। আজ মুসলীম নামধারি অসৎ শাসক ও এলিট শ্রেণিরা তেল-গ্যাসের মতো মূল্যবান সরকারী খনিজ সম্পদ ও তা থেকে অর্জিত অর্থকে কত অন্যায্য কৌশলে নিজেদের স্বার্থ ও বিলাসীতায় অপব্যাবহার করছে -তা কে না জানে!
হাদিসটিতে আরো বলা হয়েছে- ظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي المَسَاجِدِ – ‘মসজিদগুলোতে (মুমিন-মুসলমানদের উপর মুনাফেক ও ফাসেক-ফাজের লোকগুলির দৌরাত্ব ও) গলার আওয়াজ প্রকাশ পাবে’। আজ এমন কোনো মসজীদ মনে হয় বাকি নেই, যার মুতাওয়াল্লি, সভাপতি ও সদস্যপদগুলো দখল করে আছে মহল্লার প্রকাশ্য হারামখোর (যেমন: সূদী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা, আত্বীয়স্বজন/অন্যের জমিজমা ও ধ্বনসম্পদ দখলকারী ইত্যাদি) বা মাস্তান পোষা মুরুব্বি/মাতব্বার/নেতা/পাতিনেতা অথবা চাঁদাবাজ কিংবা ওইসকল আধুনিক শিক্ষিত মুনাফেক মহল যারা এমন মতবাদে বিশ্বাসী যা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামী শরীয়ত বিলুপ্তী চায় ! মুসল্লীদের বেশিরভাগের অবস্থাই একই। মসজিদে কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কিংবা শরয়াহ বিরোধী কোনো দেশীয় আইন বা ইসলাম বিরোধী কোনো মতবাদ (যেমন: ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি) নিয়ে কোনো কথা বলতে ধরলেই মুসুল্লী ও মসজিদ কমিটির এই খবিস অংশটি মসজিদেই উচ্চবাচ্চ শুরু করে দেয়। কোথাও কোথাও ইমাম ও খতিব সাহেবকে হুমকি-ধমকী, মারধর এমনকি বেড় করে দেয়ার বহু ঘটনা অহরহ ঘটছে। হাদিসে এসব মুনাফেক ও ফাসেক-ফাজেরদের গলার আওয়াজ উচু করার দিকেই ইশারা করা হয়েছে।
আর হাদিসে বর্ণিত لَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا – ‘এই উম্মাতের শেষ দিককার (এক শ্রেণির) লোকজন তার প্রথম দিককার লোকদেরকে লা’নত দিবে’– বলতে সম্ভবতঃ ওইসকল শিয়া’দেরকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা রাসুলুল্লাহ সা.-এর বহু সাহাবীগণকে বিশেষ করে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা., হযরত ওমর ফারুক রা.-এর মতো শ্রেষ্ঠ মর্তবার সাহাবীগণকে লা’নত (অভিশাপ) দান করাকে তাদের দ্বীনের অংশ বলে বিশ্বাস করে থাকে এবং লা’নত করে; এমন কি মদিনাতে সুযোগ পেলে রাসুলুল্লাহ সা.-এর দু’পার্শ্বে শায়ীত এই দুই মহান সাহাবীদ্বয়ের উপর লা’নত বর্ষন করে আসে। (নাউযুবিল্লাহী মিন যালিক) الله اعلم بالصواب
# হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ بْنُ حَمْزَةَ ، وَسُلَيْمَانُ بْنُ أَحْمَدَ ، وَاللَّفْظُ لَهُ ، قَالا : ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَوْنٍ ، ثنا سُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ ، عَنْ فَرَجِ بْنِ فَضَالَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ اللَّيْثِيِّ ، عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مِنِ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ اثْنَتَانِ وَسَبْعُونَ خَصْلَةً : إِذَا رَأَيْتُمُ النَّاسَ أَمَاتُوا الصَّلاةَ ، وَأَضَاعُوا الأَمَانَةَ ، وَأَكَلُوا الرِّبَا ، وَاسْتَحَلُّوا الْكَذِبَ ، وَاسْتَخَفُّوا الدِّمَاءَ ، وَاسْتَعْلَوُا الْبِنَاءَ ، وَبَاعُوا الدِّينَ بِالدُّنْيَا ، وَتَقَطَّعَتِ الأَرْحَامُ ، وَيَكُونُ الْحُكْمُ ضَعْفًا ، وَالْكَذِبُ صِدْقًا ، وَالْحَرِيرُ لِبَاسًا ، وَظَهَرَ الْجَوْرُ ، وَكَثُرَ الطَّلاقُ ، وَمَوْتُ الْفُجَاءَةِ ، وَائْتُمِنَ الْخَائِنُ ، وَخُوِّنَ الأَمِينُ ، وَصُدِّقَ الْكَاذِبُ ، وَكُذِّبَ الصَّادِقُ ، وَكَثُرَ الْقَذْفُ ، وَكَانَ الْمَطَرُ قَيْظًا ، وَالْوَلَدُ غَيْظًا ، وَفَاضَ اللِّئَامُ فَيْضًا ، وَغَاضَ الْكِرَامُ غَيْضًا ، وَكَانَ الأُمَرَاءُ فَجَرَةً ، وَالْوُزَرَاءُ كَذِبَةً ، وَالأُمَنَاءُ خَوَنَةً ، وَالْعُرْفَاءُ ظَلَمَةً ، وَالْقُرَّاءُ فَسَقَةً ، وَإِذَا لَبِسُوا مُسُوكَ الضَّأْنِ ، قُلُوبُهُمْ أَنْتَنُ مِنَ الْجِيفَةِ ، وَأَمَرُّ مِنَ الصَّبْرِ ، يُغَشِّيهِمُ اللَّهُ فِتْنَةً يَتَهَاوَكُونَ فِيهَا تَهَاوُكَ الْيَهُودِ الظَّلَمَةِ ، وَتَظْهَرُ الصَّفْرَاءُ ، يَعْنِي الدَّنَانِيرَ ، وَتُطْلَبُ الْبَيْضَاءُ ، يَعْنِي الْدَرَاهِمَ ، وَتَكْثُرُ الْخَطَايَا ، وَتَغُلُّ الأُمَرَاءُ ، وَحُلِّيَتِ الْمَصَاحِفُ ، وَصُوِّرَتِ الْمَسَاجِدُ ، وَطُوِّلَتِ الْمَنَائِرُ ، وَخُرِّبَتِ الْقُلُوبُ ، وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ ، وَعُطِّلَتِ الْحُدُودُ ، وَوَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا ، وَتَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ وَقَدْ صَارُوا مُلُوكًا ، وَشَارَكَتِ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا فِي التِّجَارَةِ ، وَتَشَبَّهَ الرِّجَالُ بِالنِّسَاءِ ، وَالنِّسَاءُ بِالرِّجَالِ ، وَحُلِفَ بِاللَّهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُسْتَحْلَفَ ، وَشَهِدَ الْمَرْءُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُسْتَشْهَدَ ، وَسُلِّمَ لِلْمَعْرِفَةِ ، وَتُفِقِّهَ لِغَيْرِ الدِّينِ ، وَطُلِبَتِ الدُّنْيَا بِعَمَلِ الآخِرَةِ ، وَاتُّخِذَ الْمَغْنَمُ دُوَلا ، وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا ، وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا ، وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ ، وَعَقَّ الرَّجُلُ أَبَاهُ ، وَجَفَا أُمَّهُ ، وَبَرَّ صَدِيقَهُ ، وَأَطَاعَ زَوْجَتَهُ ، وَعَلَتْ أَصْوَاتُ الْفَسَقَةِ فِي الْمَسَاجِدِ ، وَاتُّخِذَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ ، وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ فِي الطُّرُقِ ، وَاتُّخِذَ الظُّلْمُ فَخْرًا ، وَبِيعَ الْحُكْمُ ، وَكَثُرَتِ الشُّرَطُ ، وَاتُّخِذَ الْقُرْآنُ مَزَامِيرَ ، وَجُلُودُ السِّبَاعِ صِفَاقًا ، وَالْمَسَاجِدُ طُرُقًا ، وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا ، فَلْيَتَّقُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ ، وَخَسْفًا ، وَمَسْخًا ، وَآيَاتٍ ” ، غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ ، لَمْ يَرْوِهِ عَنْهُ فِيمَا أَعْلَمُ إِلا فَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ . اخرجه ابو نعيم حلية الأولياء , رقم الحديث ٤٥٥٥; قال الألباني في ” السلسلة الضعيفة و الموضوعة ” ٣/٣١٤ : قلت : و هو ضعيف كما قال الحافظ العراقي ٣/٢٩٧ ، و فيه علة أخرى و هي الانقطاع – `কেয়ামত নিকটবর্তী হয়ে আসার খাসলত (জামানার চারিত্রিক বৈশিষ্ট) রয়েছে বাহাত্তর’টি’। যখন তোমরা দেখবে যে, (১) লোকেরা নামাযকে মেড়ে ফেলছে, (২) আমানতকে বরবাদ করছে, (৩) সূদ খাচ্ছে, (৪) মিথ্যাকে হালাল করে নিচ্ছে, (৫) হত্যাকে তুচ্ছ বিষয় মনে করছে, (৬) উঁচু উঁচু দালান বানাচ্ছে, (৭) দ্বীনকে দুনিয়ার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছে, (৮) আত্বীয়তার সম্পর্ক কর্তন করে ফেলছে, (৯) আইন-কানুন ভেঙ্গে পড়েছে, (১০) সত্যকে মিথ্যা বানানো হচ্ছে, (১১) রেশমী কাপড় (মুসলমান পুরুষদের জন্য হারাম হওয়া সত্ত্বেও স্বাভাবিক) পোষাক হয়ে গেছে, (১২) অন্যায়-অবিচার ব্যাপক আকার ধারন করেছে, (১৩) তালাক/ডিভোর্স প্রচুর পরিমানে হচ্ছে, (১৪) (লোকজনের) আকষ্মিক মৃত্য ঘটছে, (১৫) খেয়ানতকারীকে (সমাজের চোখে) আমানতদার বানানো হচ্ছে, (১৬) আমানতদারকে খেয়ানতকারী বানানো হচ্ছে, (১৭) মিথ্যুককে (সমাজের চোখে) সত্যবাদী বানানো হচ্ছে, (১৮) সত্যবাদীকে মিথ্যুক বানানো হচ্ছে, (১৯) কুত্সা/পরনিন্দা/কদুক্তি করা হচ্ছে প্রচুর পরিমানে, (২০) বৃষ্টি অত্যধিক গরম হয়ে গেছে, (২১) সন্তান গোস্মাওয়ালা-রাগী হয়ে গেছে, (২২) দুশ্চরিত্র/দুর্নীতিপরায়ণ/বদ/পাপাসক্ত/খারাপ লোকের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, (২৩) অভিজাত/সম্ভ্রান্ত/ভদ্র লোকের আকাল পড়েছে, (২৪) প্রশাসক শ্রেণি পাপাসক্ত হয়ে গেছে, (২৫) মন্ত্রিরা মিথ্যা কথায় অভ্যস্থ হয়ে গেছে, (২৬) আমানতদাররাও খেয়ানত করছে, (২৭) আরেফ’রা জুলুম/অন্যায় করছে, (২৮) (কুরআন) পাঠকারীরা ফাসেক/পাপাসক্ত হয়ে গেছে, (২৯) যখন (দেখবে যে, লোকেরা) ভেড়ার চামড়া পরিধান করছে, (৩০) তাদের অন্তরগুলো মৃতপ্রাণির চাইতেও দুর্গন্ধযক্ত হয়ে গেছে, (৩১) শক্ত বস্তুর চাইতেও কঠিন হয়ে গেছে, (৩২) তখন আল্লাহ তাদেরকে এমন ফিতনা’য় নিক্ষেপ করবেন যে, তারা তাতে এমনভাবে উৎভ্রান্ত হয়ে ফিরবে, যেভাবে জালেম ইহূদী উৎভ্রান্ত হয়ে ফিরে। (৩৩) (এমনিভাবে যখন দেখবে যে,) হলদে বস্তু প্রকাশ পাচ্ছে তথা দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) , (৩৪) উজ্জ্বল বস্তুর চাহিদা হচ্ছে তথা দিরহাম (রৌপ্য মৃদ্রা), (৩৫) পাপ ও অপরাধ বিপুল পরিমানে হচ্ছে, (৩৬) প্রশাসকরা রিষ্ঠপুষ্ঠ হয়ে গেছে, (৩৭) কুরআনের কপিগুলোকে পরিপাটি করা হচ্ছে, (৩৮) মসজিদগুলোকে (বিভিন্ন স্টাইলে) আকার দেয়া হচ্ছে, (৩৯) মিম্বরগুলোকে লম্বা বানানো হচ্ছে, (৪০) অন্তরগুলো বিরান হয়ে গেছে, (৪১) মাদকদ্রব্য সেবন করা হচ্ছে, (৪২) (দেশে দেশে আল্লাহ’র নাজিলকৃত শরয়ী) হ্বদ’গুলোকে অকেজো/নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে, (৪৩) মা তার প্রভু’কে প্রসব করছে, (৪৪) দেখবে যে, (একসময় যারা ছিল) খালি’পা বস্ত্রহীন (সেই) লোকগুলি রাষ্ট্র-কর্ণধার হয়ে গেছে, (৪৫) নারী তার স্বামীর ব্যাবসায় শরিক হচ্ছে, (৪৬) পুরুষ নারীর সাদৃশ্যতা অবলম্বন করছে এবং (৪৭) নারী (সাদৃশ্যতা অবলম্বন করছে) পুরুষের, (৪৮) কসম খেতে বলা ব্যাতীতই (মানুষজন নিজ থেকে) কসম খাচ্ছে, (৪৯) সাক্ষ্য দান করতে বলা ব্যাতীতই মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে দিচ্ছে, (৫০) (শুধু) পরিচিতকে সালাম দেয়া হচ্ছে, (৫১) দ্বীন নয় -এমন বিষয়ের জন্য গভীর জ্ঞান অর্জন করা হচ্ছে, (৫২) আখেরাতের আমল দিয়ে দুনিয়া তলব করা হচ্ছে, (৫৩, ৫৪, ৫৫) গণীমত’কে সাধারণ ধ্বন-সম্পদ হিসেবে, আমানতকে গণীমত হিসেবে এবং যাকাতকে জরিমানা হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে, (৫৬) কওমের নিচ/তুচ্ছ/অপদার্থ/নিকৃষ্ট লোকগুলি তাদের (কওমের) লিডার/প্রধান হচ্ছে, (৫৭) মানুষ তার পিতার অবাধ্য হচ্ছে, (৫৮) মায়ের সাথে দুর্ব্যাবহার করছে, (৫৯) বন্ধুর ক্ষতিসাধন করছে, (৬০) স্ত্রীর অনুগত্য করছে, (৬১) ফাসেক লোকগুলি মসজিদে উঁচু আওয়াজে কথা বলছে, (৬২)(লোকজন) গাইকা ও বাদ্যযন্ত্র (-কে তাদের বিনোদন হিসেবে) অবলম্বন করে নিয়েছে, (৬৩) রাস্তাপথে (প্রকাশ্যে) মাদকদ্রব্য সেবন করা হচ্ছে, (৬৪) জুলুম ও অন্যায়-অবিচারকে গর্বের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, (৬৫) বিচার বিক্রি হচ্ছে, (৬৬) সৈন্যসামন্তের সংখ্যা বিপুল হয়ে গেছে, (৬৭) কুরআনকে বাদ্য হিসেবে, (৬৮) জানোয়ারের চামড়াকে মুজা হিসেবে এবং (৬৯) মসজিদগুলো রাস্তাপথ হিসেবে গ্রহন করা হচ্ছে, (৭০) এই উম্মতের শেষের লোকেরা পূর্বের ব্যাক্তিদের উপর লা’নত দিচ্ছে, তখন তোমরা লাল বাতাস (লু-হাওয়া), ভূমিধ্বস, আকৃতির বিকৃতি এবং নিদর্শন (প্রকাশ পাওয়া)-এর ব্যাপারে ভয় করে চলো। [হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৩/৩৫৮, হাদিস ৪৫৫৫]
ফায়দা: এই রেওয়ায়েতে كَانَ الْمَطَرُ قَيْظًا – ‘বৃষ্টি অত্যধিক গরম হয়ে গেছে’ বলতে অনেকের মতে এযুগের ‘এসিড-বৃষ্টি (Acid Rain)’-এর দিকে ইশারা করা হয়েছে। বেশিরভাগই মানুষের পরিবেশ দূষনের কারণে কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট হয়ে থাকে। এসব কৃত্রিম দূষনের কারণে এমন বিক্রিয়া ঘটে যে, পরিবেশ এসিডিক হয়ে যায়, যার কারণে অনেক সময় গাছের পাতা ও ডাল-পালাও পুড়ে যায়। আমার মতে, এই ভবিষ্যৎবাণী আমাদের এই শেষ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
এই রেওয়ায়েতে عُطِّلَتِ الْحُدُودُ – ‘হ্বদ’গুলোকে অকেজো/নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে’ বলতে আল্লাহ’র নাজিলকৃত শরয়ী হুদ সমূহ (যেমন: চোরের হাত কাটা আইন, বিবাহীত জেনাকারীর রজম আইন, ফ্যাসাদকারী/সন্ত্রাসী/ডাকাতের উল্টো দিকের হাত-পা কর্তন আইন ইত্যাদি) রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা থেকে বিলুপ্ত করে তা অকার্যোকর/নিষ্ক্রিয়/অকেজো করে দেয়া উদ্দেশ্য। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَالَّذِي بَعَثَنِي بِالْحَقِّ ، لَا تَنْقَضِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَتَّى يَقَعَ بِهُمُ الْخَسْفُ وَالْمَسْخُ وَالْقَذْفُ ” قَالُوا : وَمَتَى ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي ؟ قَالَ : ” إِذَا رَأَيْتَ النِّسَاءَ قَدْ رَكِبْنَ السُّرُوجَ ، وَكَثُرَتِ الْقَيْنَاتُ ، وَشُهِدَ شَهَادَاتُ الزُّورِ ، وَشَرِبَ الْمُسْلِمُونَ فِي آنِيَةِ أَهْلِ الشِّرْكِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ ، وَاسْتَغْنَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ فَاسْتَدْفِرُوا وَاسْتَعِدُّوا ” وَقَالَ : هَكَذَا بِيَدِهِ وَسَتَرَ وَجْهَهُ . رواه الحاكم في المستدرك , كتاب الفتن والملاحم: ٤/٤٨٣ رقم ٨٣٤٩ و اسناده ضعيف جدا , قال الذهبي في التلخيص: سليمان هو اليمامي ضعفوه، والخبر منكر; رواه الطبراني في المعجم الأوسط و قال الهيثمي وفيه سليمان بن داود اليمامي وهو متروك; و ذكره المتقي في كنز العمال : ١٤/٢٨٠ رقم ٣٨٧٣٠; قال السيوطي في الدر المنثور: ٧/٤٧٨: أخرج البزار والحاكم بسند ضعيف
‘ওই সত্ত্বার কসম, যিনি আমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, দুনিয়া (ততদিন পর্যন্ত) ধ্বংস হবে না -যাবৎ না তাদের মধ্যে খাসফ, মাসখ এবং ক্বাযফ ঘটে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন: এমনটা কখন ঘটবে -হে আল্লাহ’র নবী? তিনি বললেন: ‘যখন (আমার উম্মতের) নারীকে দেখবে যে, সে (বাহনের) জিন/সিটে চেঁপে বসেছে, বহুল পরিমানে বাদ্যযন্ত্র (ব্যবহৃত হচ্ছে), ভুয়া/মিথ্যা সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রগুলোতে (আল্লাহ’র ভয়-ডর ছাড়াই নির্বিকারভাবে) সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছে, (খোদ) নামাযী ব্যাক্তিরা (পর্যন্ত) আহলে-শিরক (অংশীবাদী)দের স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করছে, পুরুষ পুরুষকে এবং নারী নারীকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট মনে করছে, তখন তোমরা পূতিগন্ধময়/নোংরা/অপ্রিতীকর অবস্থার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে থেকো। রাবী বলেন: (একথা বলে) তিনি তাঁর হাত দিয়ে এভাবে মুখকে ঢেকে নিলেন’। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৪৮৪ হাদিস ৭৩৩৯; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৫/১৯৫, হাদিস ৫০৬১; আদ-দুররুল মানসুর, সুয়ূতী- ৭/৪৭৮]
ফায়দা: নারীদের জন্য বাহনে চড়া অবশ্যই জায়েয এবং হাদিসে নারীদের উটের পিঠে আরোহন করে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তবে নারী চড়তেন শরয়ী পর্দার সীমা রক্ষা করে। উটের পিঠে পর্দা ঘেরা ছোট আসন পেতে দেয়া হত, নারীরা তার ভিতরে বসে থাকতেন আর উট এগিয়ে চলতো। নারী’রা বসতেনও ওইরকম মার্জিত ভাবে যে ভাবে বসলে নারীর বসার সাথে মানানসই হয়; পুরুষের মতো বসতেন না। (অনন্যপায় হলে ভিন্ন কথা)।
কিন্তু উপরের হাদিসে যে বলা হয়েছে- إِذَا رَأَيْتَ النِّسَاءَ قَدْ رَكِبْنَ السُّرُوجَ – ‘যখন (আমার উম্মতের) নারীকে দেখবে যে, সে (বাহনের) জিন/সিটে চেঁপে বসেছে, – এর দ্বারা উদ্দেশ্য নারীদের বাহনে আরোহনকে অপছন্দ করা নয়। বরং, উদ্দেশ্য হল সেই জামানা সম্পর্কে সতর্ক করা, যে জামানায় এমনসব নারীদের ঢল নামবে, যারা আল্লাহ’র সৃষ্টিকৃত ও শরয়ী নির্দেশিত পুরুষ ও নারী’র পার্থক্যের ধারনাটিকে উঠিয়ে দিতে চাইবে এবং এরই ক্রমধারায় নারীরা পুরুষদের কর্মক্ষেত্রগুলোতে জায়গা করে নিবে। এদেরই মধ্যে এ
মন নারীরাও হবে, যারা নারীদের শালীন কায়দা বর্জন করে পুরুষদের কায়দায় বাহনের সিটে বসবে। আপনারা কি এ জামানায় স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া বহু যুবতী মেয়ে/নারী’কে দেখেন নি তার কিভাবে বন্ধু/প্রেমিকের পিছনে পুরুষদের মতো করে বসে ভোঁ করে মটরসাইকেল উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে!? ২০/২৫ বছর আগেও নারী এনজিও কর্মিদের মধ্যে হঠাৎ ২/১ জনকে চোখে পড়তো। আর আজ নারীদের বেপর্দায় সাইকেল/মনোটরসাইকেল চালানোর হিরিক পড়েছে, তাও আবার পুরুষদের কায়দায় বসে। অধিকারের নামে নারীদের সাইকেল বহর/রেলিও বেড় হতে দেখা যাচ্ছে। আমার মতে, এই ভবিষ্যতবাণী আমাদের এই শেষ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- والذي نفس محمد بيده ، لا تقوم الساعة حتى يظهر الفحش والتفحش ، وسوء الجوار ، وقطيعة الأرحام ، وحتى يخون الأمين ويؤتمن الخائن . المستدرك على الصحيحين:١/١٣٧ كتاب الابمان رقم ٢٠٣ و كتاب الفتن و الملاحم: ٤/٦٨٥ رقم ٨٥٦٦ , المصنف لعبد الرزاق :١١/٤٠٥ رقم ٠٨٥٢, تاريخ دمشق لابن عساكر: ١٨٦٩١, – ‘ওই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন, কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না -অশ্লীলতা (-র উপকরণ), অশ্লীলতার মহড়া/কসরত, মন্দ প্রতিবেশীত্ব, আত্বীয়তার সম্পর্ক কর্তন -(এসব) ব্যাপক হয়ে যায়। এবং যাবৎ না আমানতদারকে (সমাজের চোখে) খেয়ানতকারী বানানো হয় এবং খেয়ানতকারীকে বানানো হয় আমানতদার। [মুসতাদরাকে হাকিম- ১/১৩৭ হাদিস ২০৩ এবং ৪/৬৮৫ হাদিস ৮৫৬৬; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৪০৫, হাদিস ২০৮৫২; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ১৮৬৯১]
ফায়দা: আমাদের এজামানায় অশ্লীলতা ‘র উপকরণ এবং নারী-পুরুষের অশ্লীলতার মহড়া/কসরত -এ দুটো জিনিস বিগত যে কোনো যুগের চাইতে ভয়ঙ্কর রূপে বিশ্বজুড়ে ছয়লাব হয়ে গেছে। গোপনে, প্রকাশ্যে, বাড়িতে, পার্ক বা ক্লাবে, মাঠে-ঘাটে, স্কুল-কলেজ-ভারসিটিতে যে যেখানে পাচ্ছে মুসলীম-অমুসলীম নির্বশেষে এই পাপে জড়িয়ে পড়ছে। আর এর উপকরণাদি, যেমন: দেশি বিদেশি মুভি, সিনেমো, নাটক, বই, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট, ভিডিও -এমন কোনো কিছু নাই যেখানে এসবের উপকরণ ব্যবাপক হারে দৈনিক প্রকাশিত হচ্ছেনা, আর নারী-পুরুষ তা থেকে নাজায়েয ফায়দা নিচ্ছে না। অশ্লীলতার মহড়া/কসরত -এর উদাহরণ হল: ‘অশ্লীল ড্রেসে সুন্দরী প্রতিযোগীতা (বিউটি কনটেষ্ট), বিভিন্ন দামী গাড়ির পাশে অশ্লীল পোষাকে এ্যাড হিসেবে দাড়িয়ে থাকা উলঙ্গ নারী, নারী মডেলদের অশ্লীল পোষাকে অশ্লীল পোজ দান, মুভি সিনেমায় বেগানা নারী-পুরুষের অশ্লীল কসরত ও নাচ-গান ইত্যাদি ইত্যাদি। অমুসলীমদের থেকে ছড়ানো এসব মহামারীতে এ জামানার মুসলীম উম্মাহ’ও শেষ; আরব-অনারব কোনো দেশ বাকি নেই। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لا تَفْنَى هَذِهِ الأُمَّةُ حَتَّى يَقُومَ الرَّجُلُ إِلَى الْمَرْأَةِ فَيَفْتَرِشَهَا فِي الطَّرِيقِ ، فَيَكُونَ خِيَارُهُمْ يَوْمَئِذٍ مَنْ يَقُولُ لَوْ وَارَيْتَهَا وَرَاءَ هَذَا الْحَائِطِ .أخرجه أبو يعلى في ” مسنده: ٢/٢٩١رقم ٦١٨٤; قال الهيثمي في ” مجمع الزوائد: ٨/٣٣١ – رواه أبو يعلى ورجاله رجال الصحيح – ‘ওই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, এই উম্মত খতম হবে না, যাবৎ না (এমন ঘটনা ঘটে যে, এক) পুরুষ উঠে কোনো নারীর কাছে যায়, তারপর রাস্তার মধ্যেই তার সাথে শুয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে সেদিন উত্তম হবে সে, যে বলবে: তাকে যদি আড়ালে নাও তো এই দেয়ালের আড়ালে নিতে পারো (তারপর যা করার করো)। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা– ২/২৯১, হাদিস ৬১৮৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/৩৩১]
ফায়দা: এখানে বল হয়েছে فَيَفْتَرِشَهَا فِي الطَّرِيقِ – ‘তারপর রাস্তার মধ্যেই তার সাথে শুয়ে পড়ে’। এই শব্দের মূল ক্রিয়া হল اِفتَرشَ যার অর্থ- কিছুকে বিছিয়ে দেয়া, কিছুর উপর শুয়ে পড়া, কাউকে ধরে ভূপাতিত করা। যেমন বলা হয় اِفتَرشَ الأرْضَ (সে জমিনকে বিছানা বানিয়েছে) অর্থাৎ সে জমিনকে বিছানা বানিয়ে তার উপর শুয়ে পড়েছে; বা اِفتَرشَ عَدُوَّهُ (সে তার শত্রুকে ভূপাতিত করেছে), অর্থাৎ- সে তার শত্রুকে ধরাসায়ী করেছে বা মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে; বা اِفتَرشَ المرأةَ – (সে নারীটিকে নিয়ে শুয়েছে), অর্থাৎ- সে নারীটির সাথে মেলামেশা/ যৌন কসরত করেছে (এখানে উদ্দেশ্য একেবারে সহবাস/সঙ্গমও হতে পারে, আবার সহবাস/সঙ্গম না করে শুধু উপরে উপরে যৌন কসরতও হতে পারে)। এই হিসেবে فَيَفْتَرِشَهَا فِي الطَّرِيقِ – ‘তারপর রাস্তার মধ্যেই তার সাথে শুয়ে পড়ে’ -বলতে রাস্তাপথে একেবারে সহবাস/সঙ্গমও হতে পারে, আবার সহবাস/সঙ্গম না করে শুধুমাত্র যৌন কসরতও হতে পারে। রাস্তার পাশে শুধু ছেলে-মেয়ে’দের যৌন কসরত-তো আজ-কাল দিনে দুপুরে পার্কে বা ঝোপ-ঝারের আড়ালে লক্ষ্য করা যায়। এদের জন্য স্ত্রী-সন্তানদেরকে নিয়ে পার্কের নিরিবিলিতে একটু হাটা-হাটি করারও আজ দায় হয়ে গেছে। তবে আমার ধারনা, এখানে ‘পূর্ণ যৌন সঙ্গম’ উদ্দেশ্য, যেমনটা নিচের দুটি হাদিসে আপনারা দেখতে পাবেন।
এই হাদিসটি দেখে অনেকে ধারনা করে থাকেন যে, এখানে পৃথিবীর সবাই বা বেশিরভাগ মানুষ এরকম নির্লজ্জ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে ! কিন্তু এ ধারনাটি ঠিক নয়, হাদিসের উদ্দেশ্যও সেটা নয়। উদ্দেশ্য হল, শেষ জামানায় অশ্লিলতা ও জেনা-ব্যাভিচার এত ব্যাপক আকার ধারন করবে যে, এসব পাপ গোপনে গোপনেও চলবে, আবার কেউ কেউ তা ‘ঘরোয়া প্রকাশ্যেও’ চালাবে। (ঘরোয়া প্রকাশ্য বলতে, যেমনটা কোনো কোনো নাইট-ক্লাব, অশ্লীল ডান্সপার্টি ইত্যাদির ঘরোয়া পরিবেশে গুটি কয়েক মানুষের সামনে এসব গোনাহ’র কাজ করে থাকে)। এসব পাপে অভ্যস্তের পরও যাদের মনের তখনো সৃষ্টিগত লজ্জানুভুতির কিছুটা হলেও অবশিষ্ট থাকবে, তারা হয়-তো সবাই অতটা প্রকাশ্যে এই পাপ করতে চাইবেনা সমাজের ভয়ে। কিন্তু এসকল মহা পাপ উপর্যপুরি করতে করতে কোনো কোনো লোকজনের চরিত্রে এতটাই পঁচন ধরবে যে, তাদের কেউ কেউ এসব প্রকাশ্যে করতেও লজ্জাবোধ করবে না। এরা হয়-তো সমাজের গুটি কয়েক লোক হবে। হাদিসটি থেকে বোঝা যায়, যারা এটা প্রকাশ্যে করবে, তাদের আশপাশে থাকা লোকগুলিও এসবে অশ্লীল পরিবেশে বেড়ে ওঠা সম-মনমানুষিকতারই লেকজন হবে, যার কারণে তারাও এটাকে স্বাভাবিক মনে করে যে যার কাজে থাকবে। আর তাদেরই মধ্যে যে ব্যাক্তির বিবেকে খানিকটা অসস্থ্যিবোধ বিদ্যমান থাকবে, সে বলবে যে, ‘আরে ভাই একটু আড়ালে গেলে……হয় না’!!!! এই লোকটি সেখানকার উপস্থিত লোকদের মধ্যে উত্তম গণ্য হওয়ার উপযোগী; কিন্তু পৃথিবীর সবার চেয়ে উত্তম নয়। الله اعلم بالصواب
# হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تقوم الساعة حتى يتسافدوا في الطريق تسافد الحمير. اخرجه ابن حبان فى صحيحه , رقم ١٨٨٩, و البزار في ” مسنده, رقم ٢٣٨, و أبو يعلى في ” مسنده: ٢/٢٩١, و قال الهيثمي في ” مجمع الزوائد “: ٨/٣٣١, ” رواه أبو يعلى و رجاله رجال الصحيح‘‘ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না (নারী-পুরুষ) রাস্তাপথে পরষ্পর সঙ্গম-যৌনাচার করে, (যেমনি ভাবে) গাধা পরষ্পর সঙ্গম-যৌনাচার করে থাকে’। [সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৮৮৯; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২৩৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইসামী- ৮/৩৩১]
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حدثنا ابن وهب عن عمرو بن الحارث عن سعيد بن أبي هلال عن عياش بن عبد الله بن معبد عنأبي معبد مولى ابن عباس عن أبي هريرة قال: “ لا تقوم الساعة حتى يتسافد الناس في الطرق كما يتسافد الدواب، يستغني الرجال بالرجال، والنساء بالنساء، أتدرون ماالتساحق؟ قالوا: لا، قال: تركب المرأة المرأة ثم تسحقها. اخرجه نعيم بن حماد في الفتن ١٧٩٤ , وهذا حديث صحيح رجاله ثقات، وعياش هو عباس بن عبد الله بن معبد ابن عباس ثقة، ونعيم بن حماد ثقة حجة، وهِم من لينه، وقد أفردته بترجمة مستقلة بينت فيها ثقته وإتقانه- ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মানুষ রাস্তাপথে সঙ্গম করে, যেভাবে জন্তু-জানোয়ার সঙ্গম করে থাকে, (যাবৎ না) পুরুষ পুরুষকে এবং নারী নারীকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট মনে করে। তোমরা কি জানো (নারীদের) সমকামীতা কি? সাহাবাগণ বললেন: না। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: এক নারী আরেক নারীর উপর আরোহন করে, তারপর সমকামীতা করে’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, হাদিস ১৭৯৪]
ফায়দা: হযরত যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حَدَّثَنَا حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ جَرِيرٍ الصُّورِيُّ ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ سَعِيدٍ الصَّيْدَاوِيُّ ، ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ صَالِحٍ ، ثنا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ ثَابِتِ بْنِ ثَوْبَانَ ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ دِينَارٍ ، عَنْ مُحَمَّد بْنِ الْمُنْكَدِرِ ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَ : ….., سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : ….., أَلا وَإِنَّ أَشَدَّ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَى أُمَّتِي مِنْ بَعْدِي عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ , فَلْتَرْتَقِبْ أُمَّتِي الْعَذَابَ , إِذَا تَكَافَأَ النِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ وَالرِّجَالُ بِالرِّجَالِ . اخرجه طبراني فى مسند الشاميين, رقم ١٥١, فوائد تمام الرازي ٨٥٩ – ‘শোন, আমার (ইন্তেকালের) পর সব থেকে মারাত্মক যে জিনিসটি আমার উম্মাতের ব্যাপারে আমাকে শংকিত করে তোলে , সেটা হল লূত জাতির (সমকামীতার মতো মারাত্মক গোনাহর) কাজটি। আমার উম্মতের উপর (লূত জাতির মতো) আযাবের আশংকা রয়েছে, যখন (তাদের) নারী নারীকে এবং পুরুষ পুরুষকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট বলে অবলম্বন করে নিবে। [মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী, হাদিস ১৫১]
অমুসলীমদের মধ্যে-তো অনেক আগেই ‘সমকামীতা’র মতো এই খবিস স্বভাবটি অনেকের চর্চার বস্তু হয়ে আসছিল। খোদ আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-তো সমকামীতাকে একেবারে অফিসিয়ালী বৈধতা দিয়ে দিলেন ! বিভিন্ন দেশের মুসলীম নামধারী বদ স্বভাবের ছেলে মেয়েরাও এই পাপে জড়িয়ে পড়েছে। এখন-তো তাদের অনেকে সমকামীতাকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ বলে মত প্রকাশ করতেও লজ্জাবোধ করছে না। মানবাধিকার-এর লেবেলধারী গোষ্ঠিটিকে আবার তাদের সমর্থন করতে দেখা যাচ্ছে। আমার মতে, সমকামীতা সম্পর্কিত এই ভবিষ্যৎবাণীটি আমাদের এই শেষ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন মানুষের চরিত্রের সর্বোত্তম চিকিৎসক। তিনি এই সমকামীতার মারাত্মক কবীরাহ গোনাহ থেকে উম্মতকে হেফাজতে রাখার জন্য কি চমৎকারই-না প্রেসকিপশন দিয়েছেন। তিনি ﷺ বলেছেন- لا ينظر الرجل إلى عورة الرجل ولا المرأة إلى عورة المرأة ولا يفضي الرجل إلى الرجل في ثوب واحد ولا تفضي المرأة إلى المرأة في الثوب الواحد – কোনো পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীর লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না। কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সাথে একই চাদর/কাপড়ের ভিতরে একত্রে সময় কাটাবে না এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীর সাথে একই চাদর/কাপড়ের ভিতরে একত্রে সময় কাটাবে না। [সহিহ মুসলীম ৩৩৮; জামে তিরমিযী ২৭৯৩] الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَخْرُجُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ رِجَالٌ يَخْتِلُونَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ يَلْبَسُونَ لِلنَّاسِ جُلُودَ الضَّأْنِ مِنَ اللِّينِ، أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ، وَقُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الذِّئَابِ، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: أَبِي يَغْتَرُّونَ، أَمْ عَلَيَّ يَجْتَرِئُونَ؟ فَبِي حَلَفْتُ لَأَبْعَثَنَّ عَلَى أُولَئِكَ مِنْهُمْ فِتْنَةً تَدَعُ الحَلِيمَ مِنْهُمْ حَيْرَانًا. رواه الترمذى:٤/٥٢٢ رقم ٢٤٠٤; في سنده يحيى بن عبيد الله بن عبد الله بن موهب قال الذهبي ضعفوه وقال أحمد في أبيه أحاديثه مناكير;و البغوي فى شرح السنة: ٧/٣٩٠; سعيد بن منصور فى السنة:١/٨٣٠ رقم ٣٦١; و ابن عبد البر فى جامع بيان العلم: ١١٤٠ – ‘আখেরী জামানায় এমন এমন লোকজন বেড় হবে, যারা (দুনিয়ার স্বার্থে) দ্বীন (ইসলামকে) ব্যবহার করে দুনিয়া (-র মানুষজন)কে বোকা বানাবে (প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করবে), তারা মানুষের সামনে ভেড়ার নরম চামড়া পরিধান করবে, তাদের কথাবার্তা হবে চিনির চেয়েও মিঠা, (কিন্তু) তাদের অন্তরগুলো হবে একেকটা (হিংস্র) নেকড়ের অন্তর। আল্লাহ তাআলা বলবেন: তারা কি (আমার ঢিল দানে ) প্রতারিত হয়ে আছে, নাকি আমার বিরুদ্ধে দুঃসাহস দেখাচ্ছে? আমি আমার সপথ নিচ্ছি, আমি তাদের এসব লোকদের উপর অবশ্যই এমন ফিতনা পাঠিয়ে দিবো যে, তাদের মধ্যে ধৈর্যশীল ব্যাক্তিকেও (তা) দিশেহারা করে তুলবে’। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৫২২, হাদিস ২৪০৪; শারহুস সুন্নাহ, বাগাভী- ৭/৩৯০; সুনানে সাঈদ বিন মানসুর- ১/৮৩, হাদিস ৩৬১; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১১৪০]
# ওমর বিন খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- أَلا وَإِنَّهُ سَيَكُونُ مِنْ بَعْدِكُمْ قَوْمٌ يُكَذِّبُونَ بِالرَّجْمِ وَبِالدَّجَّالِ وَبِالشَّفَاعَةِ وَبِعَذَابِ الْقَبْرِ وَبِقَوْمٍ يُخْرَجُونَ مِنْ النَّارِ بَعْدَ مَا امْتَحَشُوا . رواه أحمد: رقم ١٥٧ و قال أحمد شاكر : إسناده صحيح – ‘শুনে রাখো, নিশ্চই তোমাদের পর এমন গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে যারা -(বিবাহিত জেনাকার নর-নারী শাস্তি) ‘রজম’কে, দাজ্জালকে, ‘শাফাআত’কে, ‘কবরের আযাব’কে এবং কঠিন আযাব ভোগের পর একটি গোষ্ঠির দোযখ থেকে বেড় হওয়াকে -মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৭]
ফায়দা: শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহিত মুসলীম পুরুষ বা বিবাহিত মুসলীম নারী কর্তৃক জেনা (ব্যাভিচার) প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে মাটিতে গেড়ে পাথর নিক্ষেপে ছঙ্গেছাড় করাকে পরিভাষায় ‘রজম’ বলা হয়। এই রজমের কথা কুরআনে উল্লেখ নেই, তবে বিভিন্ন সহিহ হাদিস ও আছার প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ রজমের শাস্তিকে শরয়ী ‘হদ্দ’ হিসেবে কার্যকর করেছেন এবং তা সাহাবায়ে কেরাম রা., তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীনের যুগ থেকে নিয়ে উম্মাহ’র মাঝে মুতাওয়াতির ইজমা চলে আসছে। শেষ জামানায় ‘মুনকেরুল হাসিদ (হাদিস অস্বীকারকারী)’ শ্রেণিটি শুধুমাত্র কুরআনকে পেশ করে যুক্তি দেখাবে যে, যেহেতেু কুরআনে রজমের কথা নেই, তাই আমরা তা মানি না ! এই দিকে ইংগীত করেই বলা হয়েছে যে, একটি গোষ্ঠি রজমকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে।
আর ‘কঠিন আযাব ভোগের পর একটি গোষ্ঠির দোযখ থেকে বেড় হওয়াকে -মিথ্যা প্রতিপন্ন করা’ বলতে সম্ভবতঃ মুতা’জিলা গোষ্ঠিটির দিকে ইশারা করা হয়েছে, যারা বিশ্বাস করে যে, কেউ কবিরাহ গুণাহ করলে সে চিরকাল দোযখে থাকবে। الله اعلم بالصواب
# ত্বলহা বিন মুসরিফ রা. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَتَخَوَّفُهُ عَلَى أُمَّتِي فِي آخِرِ الزَّمَانِ ثَلاثًا : إِيمَانًا بِالنُّجُومِ , وَتَكْذِيبًا بِالْقَدَرِ , وَحَيْفَ السُّلْطَانِ . رواه الإمام الداني في السنن الواردة:١/١٣٢ رقم ٢٨٢ و صححه الألباني في الصحيحة: ٣/١١٨ رقم ١١٢٧ – ‘শেষ জামানায় আমার উম্মতের উপর যে বিষয়গুলো অামাকে বেশি ভীত করে তোলে তার মধ্যে আমি বেশি ভয় পাই তিনটি জিনিসকে: (ভাল-মন্দ করার ব্যাপারে) নক্ষত্রের উপর ইমাম (রাখা), তাক্বদীরকে মিথ্যা ভাবা/প্রতিপন্ন করা এবং সুলতান (শাসক)-এর জুলুম-অন্যায়-অবিচার’। [আস-সুন্নাহ, ইমাম দানী- ১/ হাদিস ২৭২]
ফায়দা: এখানে إِيمَانًا بِالنُّجُومِ – ‘নক্ষত্রের উপর ইমাম রাখা’ বলতে সম্ভবতঃ তাবিজ-কবচকারীদের শেখানো ‘অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে অমুক ক্ষতি হয়েছে’, ‘অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে শনি লেগেছে, ইনকাম বন্ধ হয়ে গেছে’ ইত্যাদি বিশ্বাসের দিকে ইশারা করা হয়েছে। এ জামানার বহু লোক এসব বিশ্বাস করে এবং নিজেদের উপর থেকে ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদ সরানোর জন্য বিভিন্ন তাবিজ-কবচের আশ্রয় নেয়। আল্লাহ আাদেরকে এসব থেকে হিফাজত করুন। الله اعلم بالصواب
# আবু আমের আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أخوف ما أخاف على أمتي أن يكثر لهم المال فيتحاسدوا فيقتتلوا ويفتح لهم القرآن فيقرأه البر والفاجر والمنافق فيجادلون به المؤمن ابتغاء الفتنة وابتغاء تأويله وما يعلم تأويله إلا الله والراسخون في العلم يقولون آمنا به . اخرجه الداني في السنن الواردة في الفتن وغوائلها والساعة وأشراطها : رقم ٢٤٩ اسناده ضعيف , في سنده ثابت بن أبي ثابت , هو مجهول كما في ميزان الاعتدال: ١/٣٦٣ ; و ابن ابي عاصم في الآحاد والمثاني , باب : أَبُو عَامِرٍ الْأَشْعَرِيُّ وَاسْمُهُ عُبَيْدُ بْنُ وَهْبٍ رَضِيَ : رقم ٧٩٨ ; و الطبري في تهذيب الآثار, باب : ذِكْرُ مَا حَضَرَنَا ذِكْرُهُ مِنْ ذَلِكَ: رقم ٢٣٢ ; و الشجري في الأمالي : ١/١٠٤ – ‘আমি আমার উম্মতের উপরে (যে সকল ফিতনা আপতিত হওয়ার) বেশি ভয় করি, (তার মধ্যে) আমাকে (এও অধিক) আশংকিত করে তোলে যে, তাদের প্রচুর ধ্বনসম্পদ হয়ে যাবে। ফলে তারা একে অন্যেকে হিংসা করবে (এবং এই হিংসা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা নানাবিধ ষঢ়যন্ত্র করবে), এরপর (এসবের ক্রমধারায়) তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। (সে জামানায়) তাদের জন্য কুরআন (-এর কপি সংগ্রহ করা) সহজলভ্য হয়ে যাবে। এরপর (তাদের মধ্যে) ভাল লোক, ফাজের (পাপী) লোক, মুনাফেক (সবরকম লোকই) তা পাঠ করবে, পরে (তাদের স্বার্থমুখী মতগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখার উদ্দেশ্যে) তা দিয়ে তারা মুমিনদের সাথে ঝগড়া-বাকবিতন্ডা করে ফিতনা সৃষ্টি করতে চাইবে, চাইবে (সহিহ ব্যাখ্যার পরিবর্তে ধূর্তমুখী গলত) ব্যাখ্যা পেশ করতে। অথচ (বাস্তবতা এমন হবে যে, ওই হীন উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ওরা যেসকল আয়াত পেশ করবে, তার কিছু আয়াত এমন হবে যে) তার ব্যাখ্যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না, আর (কিছু আয়াত এমন হবে যে, ওগুলোর ব্যাপারে খোদ্) গভীর ইলমের অধিকারীরা বলে যে- আমারা (ওই আয়াতের উপরে) ইমান আনলাম, (সেখানে সর্বসাধারণ পাপী ও মুনাফেকদের নোংরা অন্তরে ওসব আয়াতের মতলব হৃদয়ঙ্গম হওয়া-তো অনেক দূরের কথা)’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ২৪৯; তাহযীবুল আছার, ইমাম তাবারী, হাদিস ২৩২; আল-আহাদ ওয়াল মাছানী, ইমাম ইবনুল আসিম, হাদিস ৭৯৮; আল-আমালী, ইমাম শাযারী- ১/১০৪]
ফায়দা: আমাদের এই শেষ জামানায় গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্য পবিত্র ‘কুরআন’- এর হার্ডকপি (যেমন: কাগজের বই, সিডি/ডিভিডি) ও ছফটকপি (ওয়েবপেজ, ডক-ফাইল, ই-বুক, পিডিএফ) যতটা সহজলভ্য হয়ে গেছে, ইসলামের গোটা ইতিহাসে এর দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। এমনকি আপনি-তো কম্পিউটারে বসে ইন্টারনেট থেকে বিনা-মূল্যে গোটা কুরআনের ছফটকপি নিমিশের মধ্যেই ডাউলোড করে পড়তে পারেন, আবার ইন্টারনেট অডিও/ভিডিও ও ওয়েবপেজ থেকে পড়ে নিতে পারেন। বর্তমানে কুরআনের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব, বিভিন্ন ভাষায় কৃত অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থ, সকল হাদিসের কিতাব, বিভিন্ন ফিকহ ও সিরাতের কিতাব ইন্টারনেটে আপলোড করা রয়েছে। এজামানায় আলেমে দ্বীন, সাধারণ মুমিন মুসলমান, ফাজের, মুনাফেক, কাফের -সকলের জন্যেই কুরআন ও তার ব্যাখ্যা জানার পথ পূর্ববর্তী যে কোনো জামানার চাইতে অতীব উন্মুক্ত ও সহজলোভ্য হয়ে গেছে।
কিন্তু এজামানায় যেহেতেু ফাসেক-ফাজের ও মুনাফেক শ্রেণি দিয়ে পৃথিবীটা ভরা এবং মুমিন নর-নারীদের সংখ্যা তাদের তুলনায় একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য, তাই এই এটা তাদের জন্য মোক্ষম সময় ইমানদারদের গলাকে টিপে ধরার। কারণ তারা জানে, মুমিনরা ছটফট করে কোঁকানো-কাতরানো ছাড়া কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও প্রভাবপ্রতিপত্তিতে কোনো দিক দিয়ে পেড়ে ওঠার চিন্তা করার মতোও অবস্থায় নেই। এজন্য এজামানায় উম্মাহ’র মধ্যে যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (সেকুলারিজম), সমাজতন্ত্র (সোসালিজম), গণতন্ত্র (ডেমোক্রেসি), ফেমিনিজম (নারীবাদিতা) ইত্যাদিকে তাদের মূল বিশ্বাস ও চেতনা হিসেবে লালন করে থাকে এবং দ্বীন ইসলামের স্থলে ওগুলোকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়, এই ফাসেক-ফাজের ও মুনাফেক শ্রেণিটির মধ্যে যারা কুরআন পাঠ করে তারা মুমিন নর-নারীদেরকে (যারা শুধুমাত্র দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায় এবং অন্য মতবাদগুলোকে ইসলাম বিরোধী হওয়ার কারণে ঘৃনা করে, সেই ইমানদারদেরকে) দমন করার জন্য কুরআনের আয়াত পেশ করেই কাবু করতে চায়। উদাহরণ স্বরূপ: (১) একজন মুসলীম পুরুষের স্বাক্ষ্য = দুইজন মুসলীম নারীর স্বাক্ষ্য হওয়া, (২) সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার প্রশ্নে পুরুষের অর্ধেক ভাগ নারীর পাওয়া, ইত্যাদি বিষয়ে আলেম ও সাধারণ মুমিনগণ চোখ বন্ধ করে আল্লাহ’র কুরআনী আইনের উপরে ইমান (বিশ্বাস) স্থাপন করে থাকে। কিন্তু মুনাফেকরা তাদের মতলব হাসিল করার জন্য প্রেক্ষাপট বহিঃর্ভূত কুরআনের আয়াত পেশ করে এবং এমন সব ব্যাখ্যা করে কুরআনকে টেনে হেঁচড়ে তাদের মতের পক্ষে নিয়ে যেত চায়, যা দেখে মুমিনরা শুধু হতবাকই হয়, কিন্তু তাদের মুনাফেকির সাথে পেড়ে ওঠেনা। الله اعلم بالصواب