এতীম, অভাবী, গরিব ও ক্ষুধার্থকে খাদ্য সামগ্রী দানের সওয়াব ও ফজিলত – ১
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
[উল্লেখ্য, এই গোটা আলোচনায় উল্লেখিত বিভিন্ন আয়াতে কারিমা, হাদিস ও আছার এবং আরবী ইবারত সমূহের অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]
এতীম, অসহায়, অভাবী, গরিব ও ক্ষুধার্থকে খাদ্য সামগ্রী দানের সওয়াব ও ফজিলত : কুরআন কারিম থেকে
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
وَ يُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا – إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا – إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا
“আর (বেহেশতীদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট এই যে), তারা তাঁর (তথা আল্লাহ তাআলার) ভালবাসার টানে (খুশিমনে) খানা খাওয়ায় মিসকিনকে, এতিমকে এবং কয়েদীকে। (তারা বলে:) আমরা তোমাদেরকে খাওয়াই শুধুমাত্র আল্লাহ’র রাজিখুশির জন্য, আমরা (এর বিনিময়ে) তোমাদের থেকে না কোনো প্রতিদান চাই, আর না কোনো শুকরিয়া। নিশ্চই আমরা আমাদের রবের (পক্ষ) থেকে (কেয়ামতের) দিবসে (তাঁর রাগ ও গোসসা ভরা) কঠোর চাহনিকে ভয় করে থাকি”। [সূরা আদ-দাহর ৮-১০]
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি উল্লেখ করার পিছনেইংগীত রয়েছে যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র গোসসা ও রাগ ভরা কঠোর চাহনি থেকে বাঁচার একটি অন্যতম উপায় হল ‘ক্ষুধার্থকে খানা খাওয়ানো’।
এতীম, অসহায়, অভাবী, গরিব ও ক্ষুধার্থকে খাদ্য সামগ্রী দানের সওয়াব ও উপকার করার ফজিলত : হাদিস ও আছার থেকে
# আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:- أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ . أخرجه البخاري في صحيحه : ١/٧١ رقم ١٢ ، و مسلم في صحيحه : ١/٦٥ رقم ٣٩، و ابو داود في السنن : ٥/٣٧٩ رقم ٥١٩٣ ، و ابن ماجه في سننه : ٢/١٠٨٣ رقم ٣٢٥٣ ، و ابن حبان في صحيحه , تاب الأطعمة , “باب إطعام الطعام : ٣٢٥٢ ، و غيرهم – “(একবার) এক ব্যাক্তি নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলো: ‘(ইয়া রাসুলাল্লাহ!) কোন ইসলাম উত্তম’? তিনি বললেন: ‘তুমি (ক্ষুধার্থকে) খানা খাওয়াবে এবং (মুসলমানদের মধ্যে) যাকে তুমি চেনো কিংবা চেনো না -(উভয়কেই) সালাম দিবে”। [সহিহ বুখারী– ১/৭১ হাদিস ১২; সহিহ মুসলীম- ১/৬৫ হাদিস ৩৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩২৫২; সুনানে আবু দাউদ – ৫/৩৭৯ হাদিস ৫১৯৩; সুনানে নাসায়ী- ৮/১০৭ হাদিস ৫০০০; সুনানে ইবনে মাজা- ২/১০৮৩ হাদিস ৩২৫৩; মুসনাদে আহমদ- ২/১৬৯; আল-ইমান, ইবনে মানদাহ- ১/৪৫৩ হাদিস ৩১৭]
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ ، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً ، فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ القِيَامَةِ ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ القِيَامَةِ . أخرجه البخاري في صحيحه: ٥/٩٧ رقم ٢٤٤٢، و مسلم في صحيحه: ٤/١٩٩٦ رقم ٢٥٨٠، و الترمذي في سننه : ٤/٢٦ رقم ١٤٢٦ – “(এক) মুসলীম (আরেক) মুসলীমের ভাই। সে না তার উপরে (নিজে কোনো প্রকার) জুলুম (ও অন্যায় অবিচার) করতে পারে, আর না পারে (কোনো জালেমের জুলুম ও অন্যায় অবিচারের মুখে) তাকে (অসহায় অবস্থায়) ছেড়ে দিতে। আর যে ব্যাক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজনে (পাশে) থাকে, আল্লাহও তার প্রয়োজনে (পাশে) থাকেন। আর যে ব্যাক্তি কোনো মুসলমানের উপর থেকে কোনো পেরেশানী দূর করে দেয়, আল্লাহও কেয়ামতের দিন তার উপর থেকে পেরেশানী সমূহের মধ্য থেকে কোনো পেরেশানীকে দূর করে দিবেন। আর যে ব্যাক্তি (দুনিয়াতে) কোনো মুসলমানের দোষকে ঢেকে রাখে, আল্লাহ’ও কেয়ামতের দিন তার দোষকে (জনমানুষ থেকে) ঢেকে রাখবেন”। [সহিহ বুখারী– ৫/৯৭ হাদিস ২৪৪২; সহিহ মুসলীম– ৪/১৯৯৬ হাদিস ২৫৮০; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫৩৩; সুনানে তিরমিযী- ৪/২৬ হাদিস ১৪২৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৮৯৩; মুসনাদে আহমদ- ২/২৭৭]
# আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ . أخرجه الترمذي في سننه، کتاب صفة القيامة والرقائق والورع : ٤/٦٥٢ رقم٢٤٨٥، و ابن ماجه فى السنن ، کتاب إقامة الصلاة والسنة فيها، باب في قيام الليل : ١/٤٢٣ رقم ١٣٣٤، و ابن ماجه في السنن، کتاب الأطعمة، باب إطعام الطعام : ٢/١٠٨٣ رقم ٣٢٥١، و أحمد فى المسند : ٥/٤٥١ رقم ٢٣٨٣٥، و الدارمي في السنن : ١/٤٠٥ رقم ١٤٦٠، و صححه الألباني في صحيح ابن ماجه – “হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপক ভাবে সালাম দাও, (ক্ষুধার্থকে) খানা খাওয়াও, আত্বীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো, লোকজন ঘুমিয়ে গেলে তোমরা রাতে (উঠে তাহাজ্জাদের) নামায পড়ো, (আর) শান্তির সাথে বেহেশতে প্রবেশ করো”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ১/৪২৩ হাদিস ১৩৩৪, ২/১০৮৩ হাদিস ৩২৫১; সুনানে তিরমিযী- ৪/৬৫২ হাদিস ২৪৮৫; মুসনাদে আহমদ- ৫/৪৫১ হাদিস ২৩৮৩৫; সুনানে দারেমী- ১/৪০৫ হাদিস ১৪৬০; সহিহ ইবনে হিব্বান- ২/২৬১ হাদিস ৫০৮]
# ছুহায়েব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন– فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: خِيَارُكُمْ مَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ وَرَدَّ السَّلَامَ . أخرجه أحمد في مسنده : ٦/١٦ ، و الطحاوي في شرح معاني الآثار : رقم ٧١٠٥ ، و ابن سعد في في الطبقات الكبرى : ٣/٢٢٧، و غيرهم ، و صححه الألبانى فى السلسلة الصحيحة : رقم ٤٤ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ বলতেন: তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম হল (সেই মুসলমান) যে (ক্ষুধার্থকে) খানা খাওয়ায় এবং (অহঙ্কার মুক্ত খুশি মন নিয়ে তার মুসলমান ভাইয়ের) সালামের জবাব দেয়”। [মুসনাদে আহমদ– ৬/১৬; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৮/৩৮ হাদিস ৭৩১০; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম ত্বাহাবী- ৪/১৬৬ হাদিস ৭১০৫; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১/৩২৬ হাদিস ৪৮৩; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৩১০ হাদিস ৭৭৩৯; শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ৬/৪৭৮ হাদিস ৮৯৭৩; আত-ত্ববাকাতুল কুবরা, ইবনে সা’দ- ৩/২২৭; আল-ইসতিয়াব, ইবনু আব্দিল বার- ১/২২০; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/১৯]
# আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ . أخرجه ابو داود في السنن : ٥/٢٣١ رقم ٤٩٤١ ، و الترمذي في سننه , كتاب البر والصلة عن رسول الله صلى , باب ما جاء في رحمة المسلمين : ٤/٢٨٥ رقم ١٩٢٤ و قال : هذا حديث حسن صحيح، و احمد في مسنده : ٢/١٦٠، و صححه الألباني في في سلسلة الأحاديث الصحيحة : ٢/٥٩٤ – “দয়াময় (আল্লাহ) দয়াশীল ব্যাক্তিদের উপরে দয়া হরে থাকেন। পৃথিবীতে যারা রয়েছে – তোমরা তাদের প্রতি দয়া করো, (তাহলে) যিঁনি আসমানে রয়েছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। ”। [সুনানে আবু দাউদ- ৫/২৩১ হাদিস ৪৯৪১; সুনানে তিরমিযী– ৪/২৮৫ হাদিস ১৯২৪; মুসনাদে আহমদ- ২/১৬০]
# আবু মালেক আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– إِنَّ في الجنةِ غُرَفًا يُرَى ظَاهِرُها من باطِنِها ، و باطِنُها من ظَاهِرِها . فقال أبو مالِكٍ الأَشْعَرِيُّ : لِمَنْ هيَ يا رسولَ اللهِ ؟ قال : لِمَنْ أَطَابَ الكَلامَ ، و أَطْعَمَ الطَّعَامَ ، و باتَ قائِمًا و الناسُ نِيامٌ . رواه ابن حبان في صحيحه : ٢/٢٦٢ رقم ٥٠٩، و أحمد في مسنده : ٥/٣٤٣ رقم ٢٢٩٥٦ ، و قال الألباني في صحيح الترغيب : ٩٤٦: صحيح لغيره – “নিশ্চই জান্নাতের ভিতরে (অতীব সুন্দর সুন্দর) প্রাসাদ রয়েছে; ওর ভিতর (দিক) থেকে ওর বাইরের (দিককার সব জিনিস) দেখা যায় এবং ওর বাহির (দিক) থেকে (দেখা যায়) ওর ভিতর (দিককার সব জিনিসপত্র)’। তখন আবু মালেক আল-আশয়ারী বললেন: ‘এটা কার জন্য, ইয়া রাসুলাল্লাহ’? তিনি বললেন:তার জন্য, যে পবিত্র কথা বলে ও (ক্ষুধার্তকে) খানা খাওয়ায় এবং (এমন ব্যাক্তির জন্য, যখন) লোকজন ঘুমিয়ে যায়, আর সে রাত জেগে নামাযে দন্ডায়মান থাকে”। [সহিহ ইবনে হিব্বান- ২/২৬২ হাদিস ৫০৯; মুসনাদে আহমদ- ৫/৩৪৩ হাদিস ২২৯৫৬]