দাজ্জাল কে, কখন কী ফিতনা নিয়ে আসবে – হাদিসে মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী – (১)
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
[উল্লেখ্য, নিম্নে দাজ্জাল সম্পর্কিত উল্লেখিত হাদিস ও আছার সমূহ ও তার অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]
দাজ্জাল -এর ফিতনা সবচেয়ে বড় ফিতনা
# ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا بَيْنَ خَلْقِ آدَمَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ خَلْقٌ أَكْبَرُ مِنْ الدَّجَّالِ. رواه مسلم: ٥٢٣٩, و احمد: ١٥٨٣١ – ‘(আদি পিতা নবী) আদমের সৃষ্টি থেকে নিয়ে কেয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত (সময়ের) মাঝে দাজ্জালের চাইতে বড় (ও ভয়ানক ফিতনাবাজ আর) কোনো সৃষ্টি নেই’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫২৩৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৮৩১]
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنِّي أُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا قَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ لَقَدْ أَنْذَرَهُ نُوحٌ قَوْمَهُ وَلَكِنْ سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ – ‘নিশ্চই আমি তোমাদেরকে তার (তথা দাজ্জালের) ব্যাপারে সতর্ক করছি। আর এমন কোনো নবী নেই যিনি তাঁর কওমকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেননি। এমনকি (নবী) নূহও তাঁর কওম’কে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। তবে তার সম্পর্কে আমি এখন তোমাদেরকে এমন কথা বলবো, যা কোনো নবী তাঁর কওম’কে বলেননি। তোমরা জেনে রেখো, (সে নিজকে বিশ্ব জাহানের রব/প্রভু দাবী করবে, অথচ) নিশ্চই সে হবে (এক চোখ) অন্ধ (ব্যাক্তি)। আর নিশ্চই (তোমাদের প্রকৃত রব/প্রভু) আল্লাহ অন্ধ নন’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩০৫৭]
# আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا بُعِثَ نَبِيٌّ إِلا أَنْذَرَ أُمَّتَهُ الأَعْوَرَ الْكَذَّابَ ، أَلا إِنَّهُ أَعْوَرُ ، وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ ، وَإِنَّ بَيْنَ عَيْنَيْهِ مَكْتُوبٌ “كَافِرٌ . رواه البخاري في الفتن باب ذكر الدجال: ٧١٣١ ، وأبو داود في الملاحم: ٣٧٦١، وأحمد: ١١٥٩٣ – ‘এমন কোনো নবী প্রেরিত হন নাই, যিনি তাঁর উম্মতকে (ওই) অন্ধ মিথ্যুক (দাজ্জাল)-এর ব্যাপারে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, (সে নিজকে বিশ্ব জাহানের রব/প্রভু দাবী করবে, অথচ) সে হবে অন্ধ। আর তোমাদের (প্রকৃত) রব (ও প্রভু আল্লাহ তাআলা) অন্ধ নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে (কপালে) লিখা থাকবে ‘কাফের’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১৩১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১১৫৯৩]
ফায়দা: অন্য সূত্রে আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত অারেক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الدَّجَّالُ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ ثُمَّ تَهَجَّاهَا : “ك ف ر” ، يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُسْلِمٍ . رواه مسلم في الفتن باب ذكر الدجال: ٢٩٣٣، والترمذي في الفتن: ٢١٧١، وأحمد: ١٢٧٩٤ – ‘দাজ্জাল হল এক চোখ অন্ধ (ব্যাক্তি)। তার দুই চোখের মাঝখানে (কপালে) লিখা থাকবে ‘কাফের’। অতঃপর তিনি (আলাদা আলাদা করে) বিশেষভাবে বললেন: ك ف ر (কাফ, ফা, রা)। তা প্রত্যেক মুসলীম পড়তে পারবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩৩; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৭১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১২৭৯৪]
# ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنْ الشُّبُهَاتِ أَوْ لِمَا يَبْعَثُ بِهِ مِنْ الشُّبُهَاتِ . رواه أبو داود: ٤٣١٩; و صححه الألباني في صحيح أبي داود – ‘যে ব্যাক্তি দাজ্জালের (আগমনের) কথা শুনবে, (তার জন্য অপরিহার্য হল) সে তার থেকে দূরে (কোথাও) চলে যাবে। আল্লাহ’র কসম, নিশ্চই (কোনো কোনো) ব্যাক্তি নিজকে মু’মিন ধারনা করে তার কাছে আসবে, পরে (ইমান নষ্টকারী) সন্দেহ-সংশয় সমূহের মধ্য থেকে যা নিয়ে (দাজ্জাল) প্রেরিত হয়েছে কিংবা সন্দেহ-সংশয় সমূহের মধ্য থেকে যে উদ্দেশ্যে তা নিয়ে প্রেরিত হয়েছে, সে তার অনুসরণ করে বসবে’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৩১৯]
# হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَأَنَا لَفِتْنَةُ بعْضِكُمْ أَخْوَفُ عِنْدِي مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ ، وَلَنْ يَنْجُوَ أَحَدٌ مِمَّا قَبلَهَا إِلَّا نَجَا مِنْهَا ، وَمَا صُنِعَتْ فِتْنَةٌ مُنْذُ كَانَتْ الدُّنْيَا صَغِيرَةٌ وَلَا كَبيرَةٌ ، إِلَّا لِفِتْنَةِ الدَّجَّالِ . رواه الإمام أحمد: ٥/٣٨٩, وقال الشيخ شعيب الأرناءوط: إسناده صحيح; و البزار في كشف الأستار: رقم ٣٣٩٢; قال الهيثمي: ٧/٣٣٥ رواه الإمام أحمد، والبزار و رجاله رجال الصحيح , و صححه الالباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة: رقم ٣٠٨٢ – ‘তোমাদের (মুসলমানদের মধ্যে) কোনো কোনো গোষ্ঠি ফিতনাগ্রস্থ হওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে অবশ্যই দাজ্জালের ফিতনাই সর্বাধিক আশংকাজনক। অার যারা তার সম্মুখিন হবে তাদের মধ্যে যে তার থেকে (ইমান নিয়ে) বাঁচার সে বাদে তাদের একজনও (তার ফিতনা থেকে) বাঁচতে পারবে না। দুনিয়ার সৃষ্টি থেকে নিয়ে (যত) ছোট ও বড় ফিতনা সংঘটিত হয়েছে, (সেগুলোর একটাও) দাজ্জালের ফিতনার মতো (ভয়ানক) নয়’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস- ৫/৩৮৯; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৩৩৯২; মাজমাউ যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৩৬]
# অায়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَعِيذُ فِي صَلاتِهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ . رواه البخاري في الفتن باب ذكر الدجال: ٧١٢٩ ، وأحمد: ٢٥٧٩٥ – ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ’কে তাঁর নামাযের মধ্যে দাজ্জালের ফিতনা থেকে (আল্লাহ তাআলার) আশ্রয় চাইতে শুনেছি’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১২৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৫৭৯৫]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ- إِذَا تَشَهَّدَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنْ أَرْبَعٍ يَقُولُ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ. رواه مسلم في المساجد باب ما يستعاذ منه في الصلاة: ٥٨٨ ، والترمذي في الدعوات: ٣٥٢٨، والنسائي في السهو: ١٢٩٣ ; وأبو داود في الصلاة: ٣٣، وابن ماجه في إقامة الصلاة: ٨٩٩ ، وأحمد: ٧١٩٦; والدارمي في الصلاة: ١٣١٠ – ‘তোমাদের কেউ যখন (নামাযের মধ্যে) তাশাহুদ পাঠ করবে, তখন সে যেন (আমার প্রতি দরূদ পাঠের পর দোয়ার মধ্যে) অবশ্যই চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ’র আশ্রয় চায়। সে (যেন) বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ – ‘অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫৮৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৫২৮; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ১২৯৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৮৯৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮১৯৬; সুনানে দারেমী, হাদিস ১৩১]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ- ثَلاثٌ إِذَا خَرَجْنَ لا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا : طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَالدَّجَّالُ وَدَابَّةُ الأَرْضِ . رواه مسلم في الإيمان باب بيان الزمن الذي لا يقبل فيه الإيمان: ١٥٨، والترمذي في تفسير القرآن: ٢٩٩٨ – ‘তিনটি জিনিস যখন বেড় হবে, তখন এমন কারোর ইমান (আনায়ন) উপকারী (সাব্যস্থ) হবে না, যে (সে ঘটনা ঘটার) আগে ইমান আনেনি কিংবা (যে সে ঘটনা ঘটার আগেই) তার ইমানের মধ্যে কোনো কল্যান আনতে পারেনি: (১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া, (২) দাজ্জাল এবং (২) দাব্বাতুল আরদ’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৫৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৯৯৮]
দাজ্জাল একজন মানব সন্তান, যার জীবন আছে, যে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে
রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর হাদিস সমূহ থেকে সকল সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন, আয়িম্মায়ে মুহাদ্দেসীন ও পরবর্তী সকল যুগের মুহাক্কিক আলেমে দ্বীন তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র সকলের আক্বিদা হল: দাজ্জাল একজন মানব সন্তান, তার জীবন আছে এবং একসময় সে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর হাতে মাড়া যাবে।
কিন্তু আমাদের এই অত্যাধুনি নেটনোলচির যুগে অনেকেই মনে করে যে, দাজ্জাল কোনো মানুষ/ব্যাক্তি নয়, বরং রাসুলুল্লাহ ﷺ শেষ জামানার আধুনিক টেকনোলজি ও যন্ত্র ব্যবহারকারী চরম মিথ্যুক, প্রতারক ও ধোকাবাজ ইহূদী-খৃষ্টানদের সম্মিলিত সৃষ্ট পশ্চিমা সভ্যতাকে বোঝানোর জন্য রূপকার্থে ‘দাজ্জাল’ (চরম প্রতারক/ধোকাবাজ/ফিতনাবাজ) কথাটি উল্লেখ করেছেন। অনেকে এও মনে করে যে, দাজ্জালের এক চোখ কানা হওয়ার অর্থ হল: পশ্চিমাদের মিথ্যা, প্রতারনা, ধোকাবাজী ও অন্যায়-অবিচার গুলোকে একপেশে ভাবেই জনমানুষের সামনে ‘প্রকৃত সত্য, প্রকৃত কল্যান, প্রকৃত মানব উন্নতি’র চাবিকাঠি নাম দিয়ে তাদেরকে ধোকায় সম্মহিত করাকেই রূপকার্থে এক চোখ কানা/অন্ধ বলা হয়েছে। আবার দাজ্জালের কপালে ‘কাফের’ লেখা থাকা এবং শুধুমাত্র মুমিনরা তা বুঝতে পারার অর্থ অনেকে এভাবে করে থাকে যে: এর অর্থ পশ্চিমাদের প্রচারিত ‘প্রকৃত সত্য, প্রকৃত কল্যান, প্রকৃত মানব উন্নতি’ -এসব কথার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আল্লাদ্রোহীতা ও কুফরী, যা শুধুমাত্র মুমিনরা চিনতে পাবে, আর বাদবাকি মুনাফেকরা পশ্চিমাদের আহবান বুঝতে না পেরে তাদের অনুসরণ করবে। তাদের এই মত ও ব্যাখ্যাটি শুনতে ভাল লাগলেও বাস্তবে এটি একটি ভুল ধারনা। নিম্নের হাদিসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন-
# আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي مُوسَى رَجُلاً آدَمَ طُوَالاً جَعْدًا ، كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ ، وَرَأَيْتُ عِيسَى رَجُلاً مَرْبُوعًا ، مَرْبُوعَ الْخَلْقِ إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ ، سَبِطَ الرَّأْسِ ، وَرَأَيْتُ مَالِكًا خَازِنَ النَّارِ ، وَالدَّجَّالَ . رواه البخاري, كتاب بدء الخلق, باب إذا قال أحدكم: آمين والملائكة في السماء، آمين فوافقت إحداهما الأخرى، غفر له ما تقدم من ذنبه : ٣٢٣٩ ، ومسلم في الإيمان: ١٦٥ ، وأحمد: ٣١٦٩ – ‘আমি ইসরা (মেরাজে)র রাতে (নবী) মুসা’কে দেখেছি তিনি কোকড়ানো চুলওয়ালা একজন লম্বা ব্যাক্তি, তাকে (দেখতে) যেন (অনেকটা) শানওয়াআহ’র লোকদের একজন (বলে মনে হয়)। আমি (সেখানে নবী) ঈসাকে দেখেছি; (তিনি একজন) মধ্য গড়নের (মানুষ, যার গায়ের রং ’টা) লাল ও উজ্জল সাদা মিশ্রিত; মাথার চুলগুলো (খানিকটা লম্বা ও সোজা কাঁধের দিকে) ছেড়ে দেয়া। আমি (সেই রাতে) দোযখের ব্যবস্থাপক মালেক (ফিরেশতা) এবং (মাসিহ) দাজ্জালকে দেখেছি’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩২৩৯; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৬৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৩১৬৯]
ফায়দা: এই হাদিসটিতে মুসা আ. এবং ঈসা আ. দুজনই হলেন মানুষ ও নবী, আর দোযখের ব্যবস্থাপক মালেক হলেন ফেরেশতা। এই তিনজনই পৃথক পৃথক ব্যাক্তি। সুতরাং, কেবলমাত্র ‘দাজ্জাল’-কে ব্যাক্তির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে একথা বলা যে, “দাজ্জাল কোনো ব্যাক্তি নয় বরং ‘আধুনিক পথভ্রষ্ঠ প্রতারক সভ্যতা’র নাম” -এর কোনোই যৌক্তিকতা নেই। الله اعلم بالصواب
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ، سَبِطُ الشَّعْرِ، بَيْنَ رَجُلَيْنِ يَنْطِفُ رَأْسُهُ مَاءً – أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً . قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: هَذَا ابْنُ مَرْيَمَ . ثُمَّ ذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ، فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ، جَسِيمٌ، جَعْدُ الرَّأْسِ، أَعْوَرُ الْعَيْنِ، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ . قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: الدَّجَّالُ، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ . رواه بخاري: رقم٣٤٤١; و مسلم: رقم ١٧١ – ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় আমি আমাকে দেখতে পেলাম আমি ক্বাবা (ঘর) তওয়াফ করছি। তখন বাদামী বর্ণের একজন পুরুষ(কে দেখলাম) -সোজা লম্বা চুল- দুজনের মাঝে (দাঁড়ানো) – তাঁর মাথা থেকে পানি টপকে পড়ছে, অথবা (বলেছেন) তাঁর মাথা থেকে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ইনি কে? তারা বললেন: ইনি হলেন (ঈসা) ইবনে মারইয়াম। এরপর আমি এদিক ওদিক ঘুরছিলাম, তখন স্থুলদেহী লালচে বর্ণের একজন পুরুষ ব্যাক্তি(কে দেখলাম) – মাথার চুল কোঁকড়ানো, এক চোখ অন্ধ – (আর) তার (সেই) চোখটা ছিল (কোটড় থেকে কিছুটা) বেড়িয়ে আসা আঙ্গুর (-এর মতো)। আমি জিজ্ঞেস করলাম: এই ব্যাক্তি কে? তারা বললেন: ‘দাজ্জাল’। (আমার দেখা) মানুষের মধ্যে ইবনু ক্বাত্তানের সাথে তার (চেহারার) অধিক সাদৃশ্যতা রয়েছে’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৪৪১; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৭১]
# উবাদাহ বিন সামেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنِّي قَدْ حَدَّثْتُكُمْ عَنْ الدَّجَّالِ حَتَّى خَشِيتُ أَنْ لا تَعْقِلُوا ، إِنَّ مَسِيحَ الدَّجَّالِ رَجُلٌ قَصِيرٌ أَفْحَجُ جَعْدٌ أَعْوَرُ مَطْمُوسُ الْعَيْنِ لَيْسَ بِنَاتِئَةٍ وَلا حَجْرَاءَ فَإِنْ أُلْبِسَ عَلَيْكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ . رواه أبو داود برقم٣٧٦٣ ، والحديث صحيح كما في صحيح الجامع الصغير: حديث رقم ٢٤٥٥ – ‘বস্তুতঃ আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের (অনেক) বর্ণনা দিয়েছি। (কিন্তু) অবশেষে আমার আশংকা হচ্ছে যে, (বোধ হয়) তোমরা (দাজ্জালকে তখন) চিনতে পারবে না। (শোন) নিশ্চই মাসিহ দাজ্জাল (হবে) একটা খাঁটো পুরুষ লোক, (দুই) পা (হবে হাটু থেকে বাহিরের দিকে কিছুটা) বাঁকানো, (মাথার চুলগুলো হবে) কোঁকড়ানো, (বাম চোখটি হবে) অন্ধ (এবং) চোখটি (যেন কোটর থেকে তুলে ফেলে দেয়া হয়েছে -এরকম) সমান (দেখতে) -স্ফীতও নয়, আবার (কোটরের ভিতরে) ঢুকে যাওয়াও নয়। এতেও যদি তোমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকো, তাহলে (অন্ততঃ এতটুকু) জেনে রাখো যে, তোমাদের রব (আল্লাহ) অন্ধ নন’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৩]
ফায়দা: উপরের দুটো হাদিসেই পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, ‘দাজ্জাল’ একজন رَجُل (পুরুষ লোক), যার মাথার চুল হবে কোঁকড়ানো, সে আকৃতিকে হবে খাঁটো ইত্যাদি। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বপ্নে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. কে দেখেছিলেন, যিনি একজন ব্যাকি/মানুষ এবং নবী, যিনি হলেন ‘প্রকৃত মাসিহ’। এই একই স্বপ্নে ‘ভন্ড মাসিহ’ হিসেবে ‘দাজ্জাল’কে কোকড়া চুল ওয়ালা, এক চোখ অন্ধ, খাটো ও স্থুলদেহী লালচে বর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখার বিষয়টিকে কোনো যুক্তিতেই রূপকার্থে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। الله اعلم بالصواب
# হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الدَّجَّالُ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُسْرَى جُفَالُ الشَّعَرِ مَعَهُ جَنَّةٌ وَنَارٌ فَنَارُهُ جَنَّةٌ وَجَنَّتُهُ نَارٌ . رواه مسلم, كتاب الفتن وأشراط الساعة » باب ذكر الدجال وصفته وما معه: ٨/١٩٥ ; و احمد في المسنده: ٥/٣٨٣; و نعيم بن حماد في الفتن: ١٥٣٢ – ‘দাজ্জাল হল বাম চোখ অন্ধ (ও) মাথাভর্তি চুল ওয়ালা (এক ব্যাক্তি)। তার সাথে (থাকবে) জান্নাত ও দোযখ। বস্তুতঃ তার দোযখটি হল জান্নাত (এর পথ) এবং তার জান্নাতটি হল দোযখ (এর পথ)’। [সহিহ মুসলীম- ৮/১৯৫; মুসনাদে আহমদ- ৫/৩৮৩; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১৫৩২]
# আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- خَرَجْتُ إِلَيْكُمْ وَقَدْ بُيِّنَتْ لِي لَيْلَةُ الْقَدْرِ ومَسِيحُ الضَّلَالَةِ فَكَانَ تَلَاحٍ بَيْنَ رَجُلَيْنِ بِسُدَّةِ الْمَسْجِدِ فَأَتَيْتُهُمَا لِأَحْجِزَ بَيْنَهُمَا فَأُنْسِيتُهُمَا وَسَأَشْدُو لَكُمْ مِنْهُمَا شَدْوًا أَمَّا لَيْلَةُ الْقَدْرِ فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ وِتْرًا وَأَمَّا مَسِيحُ الضَّلَالَةِ فَإِنَّهُ أَعْوَرُ الْعَيْنِ أَجْلَى الْجَبْهَةِ عَرِيضُ النَّحْرِ فِيهِ دَفَأٌ كَأَنَّهُ قَطَنُ بْنُ عَبْدِ الْعُزَّى قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ يَضُرُّنِي شَبَهُهُ قَالَ لَا أَنْتَ امْرُؤٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ امْرُؤٌ كَافِرٌ . أخرجه أحمد في مسنده : ٢/٢٩١ ، وَ قَالَ أحمد شاكر في شرحه : ٨/٢١ رقم ٧٨٩٢ : إسناده صحيح – “(আল্লাহ তাআলা’র পক্ষ থেকে) লাইলাতু ক্বদর এবং পথভ্রষ্ঠ মাসিহ (দাজ্জাল) সম্পর্কে (কিছু তথ্য) আমার কাছে পরিষ্কার প্রতিভাত হয়েছিল, (আর) আমি (সে খবরটাই দেয়ার জন্য) তোমাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে এসেছিলাম। পরে (দেখলাম) মসজিদের দরজায় দুই ব্যাক্তির মাঝে বাকযুদ্ধ চলছে। ফলে আমি তাদের দুজনের কাছে এলাম, যাতে তাদের উভয়ের মাঝে (ঘটিত বিষয়টির) রফা করা যায়। (তাদের দুজনকে সামাল দিতে গিয়ে) পরে আমি (ওই) দুইটি (তথ্যের কিছু অংশ) ভুলে যাই। তবে আমি তোমাদেরকে এখনই (সেই প্রতিভাত হওয়া বিষয়) দুটি থেকে কিছু জানাবো। লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে কথা হল, তোমরা তা (রমযান মাসের) শেষ দশদিনের বেজোরে তালাশ করো। আর পথভ্রষ্ঠ মাসিহ (দাজ্জাল) সম্পর্কে কথা হল, নিশ্চই সে হচ্ছে (এক) চোখ অন্ধ, প্রশস্ত ললাট (এবং) চওড়া গন্ডদেশ/কাঁধ (বিশিষ্ট এক ব্যাক্তি)। তার (দেহের গঠনের) মধ্যে (একটু) বাঁকা (ভাব) রয়েছে। সে (অনেকটা আরবের) কাতান বিন আব্দে উযযা’র মতো (দেখতে)”। [মুসনাদে আহমদ- ২/২৯১]
# হিশাম বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ رَأْسَ الدَّجَّالِ مِنْ وَرَائِهِ حُبُكٌ حُبُكٌ . رواه عبد الرزاق في مصنفه, كتاب الجامع, باب الدجال: رقم ٢٠٨٢٨; و أحمد: ١٥٨٢٦ ; و الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٠٨ ; و صححه الألباني في الصحيحة: ٢٨٠٨ – ‘নিশ্চই দাজ্জালের মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে’। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -১১/৩৯৫ হাদিস ২০৮২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৮২৬; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫০৮]
ফায়দা: উপরের তিনটি হাদিসেও দাজ্জালের ললাট প্রমস্ত হওয়া, গন্ডদেশ/কাঁধ চওড়া হওয়া, বাম চোখ অন্ধ হওয়া, মাথা ভর্তি চুল থাকা এবং তার পিছনের চুলগুলো কোকড়ানো ও হেলেদুলে ওঠার বিষয়টি পরিষ্কার প্রমাণ করে যে, দাজ্জাল একজন ব্যাক্তি। الله اعلم بالصواب
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- أَنَّ عُمَرَ انْطَلَقَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي رَهْطٍ قِبَلَ ابْنِ صَيَّادٍ، حَتَّى وَجَدُوهُ يَلْعَبُ مَعَ الصِّبْيَانِ عِنْدَ أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ، وَقَدْ قَارَبَ ابْنُ صَيَّادٍ الْحُلُمَ فَلَمْ يَشْعُرْ حَتَّى ضَرَبَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ لاِبْنِ صَيَّادٍ ” تَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ ”. فَنَظَرَ إِلَيْهِ ابْنُ صَيَّادٍ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الأُمِّيِّينَ. فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَرَفَضَهُ وَقَالَ آمَنْتُ بِاللَّهِ وَبِرُسُلِهِ. فَقَالَ لَهُ ” مَاذَا تَرَى ”. قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ. فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” خُلِّطَ عَلَيْكَ الأَمْرُ ” ثُمَّ قَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” إِنِّي قَدْ خَبَأْتُ لَكَ خَبِيئًا ”. فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ هُوَ الدُّخُّ. فَقَالَ ” اخْسَأْ، فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ ”. فَقَالَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ دَعْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ أَضْرِبْ عُنُقَهُ. فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” إِنْ يَكُنْهُ فَلَنْ تُسَلَّطَ عَلَيْهِ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْهُ فَلاَ خَيْرَ لَكَ فِي قَتْلِهِ ”. وَقَالَ سَالِمٌ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ يَقُولُ انْطَلَقَ بَعْدَ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ إِلَى النَّخْلِ الَّتِي فِيهَا ابْنُ صَيَّادٍ وَهُوَ يَخْتِلُ أَنْ يَسْمَعَ مِنِ ابْنِ صَيَّادٍ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ ابْنُ صَيَّادٍ فَرَآهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ مُضْطَجِعٌ، يَعْنِي فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا رَمْزَةٌ أَوْ زَمْرَةٌ، فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ فَقَالَتْ لاِبْنِ صَيَّادٍ يَا صَافِ ـ وَهْوَ اسْمُ ابْنِ صَيَّادٍ ـ هَذَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم. فَثَارَ ابْنُ صَيَّادٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ . رواه البخاري في الصحيح, كتاب الجنائز: رقم ١٣٥٥ – ‘(একবার অামার পিতা) ওমর রা কিছু লোক সহ রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর সাথে ইবনে সাইয়্যাদের (বাড়ির) দিকে গেলেন। অবশেষে তাকে বানু-মাগালাহ দূর্গের পাশে ছেলেপুলেদের সাথে খেলারত অবস্থায় পেলেন। তখন সে বালেগ হওয়ার নিকটবর্তী (বয়সে উপনীত) ছিল। সে বুঝে ওঠার আগেই রাসুলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরে ফেললেন। অতঃপর ইবনে সাইয়্যাদকে বললেন: ‘তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আমি আল্লাহ’র রাসুল’? তখন ইবনে সাইয়্যাদ তাঁর দিকে তাকিয়ে বললো: ‘আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি (আরব) উম্মীদের (কাছে প্রেরিত) রাসুল; (আমাদের ইহূদীদের নয়)’। তখন ইবনে সাইয়্যাদ নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলো: ‘আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহ’র রাসুল? এতে তিনি তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন: ‘আমি আমি ইমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং তার (প্রেরিত) রাসুলগণের উপর’। তারপর তাকে বললেন: ‘তুমি কী দেখতে পাও’? ইবনে সাইয়্যাদ বললো: ‘আমার কাছে সত্যবাদী এবং মিথ্যাবাদী আগমন করে’। তখন নবী ﷺ বললেন: ‘বিষয়টিকে তোমার উপর খলৎমলৎ /বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে’। এরপর নবী ﷺ তাকে বললেন: ‘আমি (আমার মনের মধ্যে) তোমার জন্য একটি গোনীয় বিষয় লুকিয়ে রাখলাম। (বলো-তো দেখি কী লুকিয়ে রেখেছি)? তখন ইবনে সাইয়্যাদ বললো: ‘ওটা হল الدُّخُّ (আদ-দুখ্খু’। তখন তিনি বললেন: ‘লাঞ্চিত হও! তুমি কখনোই তোমার সীমা অতিক্রম করতে পারবে না’। তখন ওমর রা. বললেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দেন, ওর গর্দানটা উড়িয়ে দেই’। তখন নবী ﷺ বললেন: যদি সে-ই (আসল দাজ্জাল) হয়, তাহলে তুমি তার উপর প্রভাব ফেলতে পারবে না। আর সে যদি (দাজ্জাল না) হয়, তাহলে তাকে কতল করার মধ্যে তোমার কোনো কল্যান নেই’। (হাদিসটির রাবী সালেম রহ.) বলেন, আমি ইবনে ওমর রা.কে (এও) বলতে শুনেছি: এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ ও উবাই বিন কা’ব রা. ওই খেজুর বাগানের দিকে গেলেন যেখানে ইবনে সাইয়্যাদ ছিল। তিনি (সেখানে) লুকিয়ে পড়লেন, যাতে -ইবনে সাইয়্যাদ তাঁকে দেখে ফেলার আগেই- তার (মুখ) থেকে কিছু (কথা) শুনতে পান। তখন নবী ﷺ দেখলেন যে, সে চাদর মুড়ি দিয়ে খাটে শুয়ে আছে, যার ভিতর থেকে তার বিড়বিড় আওয়াজ (বেড়) হচ্ছে। এমন সময় ইবনে সাইয়্যাদের মা -রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে খেজুর বাগানের ঝোপে লুকিয়ে থাকতে দেখে ফেললো। তখন সে ইবনে সাইয়্যাদ’কে বললো: ‘হে সাফ -এটা ছিল ইবনে সাইয়্যাদের নাম- এই যে মুহাম্মাদ (খেজুর বাগানের ফাঁকে লুকিয়ে আছে’। এতে ইবনে সাইয়্যাদ চটকে উঠলো। তখন নবী ﷺ বললেন: সে (অর্থাৎ তার মা) যদি তাকে (সে যা করছিল সেই অবস্থায়ই) তাকে ছেড়ে যেতো, (তাহলে আজ তার মাসিহ দাজ্জাল হওয়া না-হওয়ার বিষয়টি) পরিষ্কার হয়ে যেতো’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ১৩৫৫]
ফায়দা: ইবনে সাইয়্যাদ জন্মগ্রহন করেছিল আরবের একটি ইহূদী পরিবারে এবং সে ইহূদী হিসেবেই বেড়ে উঠেছিল। আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে তখনো পর্যন্ত দাজ্জাল সম্পর্কে যেসকল তথ্য ও ইশারা ইংগীত ওহীসূত্রে জানিয়েছিলেন বা দেখিয়েছিলেন, তাতে করে রাসুলুল্লাহ ﷺ পুরোপুরি পরিষ্কার হতে পারছিলেন না যে, ইবনে সাইয়্যাদ’ই পরবর্তীতে শেষ জামানায় ‘মাসিহ দাজ্জাল’ হিসেবে আবির্ভূত হবে কিনা, নাকি অন্য কেউ। তবে ইবনে সাইয়্যাদের আচরন সম্পর্কিত সার্বিক সম্ভাব্য তথ্যের ভিত্তিতে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মন সায় দিচ্ছিল যে, ইবনে সাইয়্যাদ মাসিহ দাজ্জাল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি বেশ কয়েকবার ইবনে সাইয়্যাদের কথাবার্তা ও আচরন পরীক্ষা করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। তবে ইবনে সাইয়্যাদ’ই শেষ জামানার ‘মাসিহ দাজ্জাল’ -এ মর্মে রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর সুস্পষ্ট কোনো উক্তি হাদিসের ভান্ডারে মুহাদ্দেসগণ পাননি। মনে হয়, বিশেষ কোনো হিকমতের কারণে বিষয়টিকে মূল সময়ের আগে প্রকাশ হওয়া থেকে গোপন করে রাখা হয়েছে।
তবে সাহাবীগণের অনেকেই মনে করতেন যে, ইবনে সাইয়্যাদ’ই শেষ জামানার ‘মাসিহ দাজ্জাল’। যেমন: মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- رَأَيْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَحْلِفُ بِاللَّهِ: أَنَّ ابْنَ الصَّائِدِ الدَّجَّالُ، قُلْتُ: تَحْلِفُ بِاللَّهِ؟ قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ عُمَرَ يَحْلِفُ عَلَى ذَلِكَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ يُنْكِرْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رواه البخاري, كتاب الاعتصام بالكتاب والسنة, باب من رأى ترك النكير من النبي صلى الله عليه وسلم حجة، لا من غير الرسول: رقم ٧٣٥٥ – ‘অামি যাবির বিন আব্দুল্লাহ রা.-কে আল্লাহ’র কসম খেয়ে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চই ইবনুস সাইয়্যাদ’ই হল দাজ্জাল। তখন আমি (তাঁকে) বললাম: ‘আল্লাহ’র কসম খেলেন’! (যদি আপনার ধারনা ভুল হয়, তখন)! তিনি বললেন: আমি নিজে ওমর রা.-কে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সামনে ওর ব্যাপারে (তথা ইবনুস সাইয়্যাদের দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে) কসম খেতে শুনেছি। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ তার কথাকে রদ/অস্বীকার করেন নি’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭৩৫৫]
নাফে রহ. থেকে আরেক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- لَقِيَ ابْنُ عُمَرَ ابْنَ صَائِدٍ فِي بَعْضِ طُرُقِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهُ قَوْلا أَغْضَبَهُ فَانْتَفَخَ حَتَّى مَلأَ السِّكَّةَ فَدَخَلَ ابْنُ عُمَرَ عَلَى حَفْصَةَ وَقَدْ بَلَغَهَا فَقَالَتْ لَهُ رَحِمَكَ اللَّهُ مَا أَرَدْتَ مِنْ ابْنِ صَائِدٍ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّمَا يَخْرُجُ مِنْ غَضْبَةٍ يَغْضَبُهَا . رواه مسلم في الصحيح, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب ذكر ابن صياد : رقم ٢٩٣٢ – ‘(একবার আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. মদিনার রাস্তা সমূহের কোনো একটিতে ইবনুস সাইয়্যাদের সাক্ষাত পেলেন। তিনি তখন তাকে এমন কিছু বললেন, যা তাকে (এতটা) রাগিয়ে দিলো (যে), এতে সে (রাগে ক্ষোভে অস্বাভাবিক ভাবে দৃশ্যতঃ) স্ফীতকায় হতে লাগলো, এমনকি (স্ফীত হতে হতে অবশেষে তার দেহটি প্রস্থে পুরো) রাস্তা/গলি’কে পূরণ করে ফেললো। তখন ইবনে ওমর রা. (সেখান থেকে চলে গেলেন এবং তাঁর বোন উম্মুল মুমিনিন) হাফসাহ রা.-এর কাছে গিয়ে (ঘটনাটি) জানালেন। তখন হাফসাহ রা. তাঁকে বললেন: (ভাই!) আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আপনি ইবনুস সাইয়্যাদ থেকে (এর বেশি) কী কামনা করেন! (তার এরকম অদ্ভুত আচরণ-তো তার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক)। (আর) আপনিও তো জানেন যে, সে রাগাহ্নিত অবস্থায় রাগ প্রকাশ করতে করতে বেড় হবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩২]
এ থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে, ‘মাসিহ দাজ্জাল’ বলতে রাসুলুল্লাহ ﷺ একজন আদম সন্তানকে বুঝিয়েছেন! পশ্চিমা সভত্যাই যদি মাসিহ দাজ্জাল হত, তাহলে ইবনে সাইয়্যাদই শেষ জামানার মাসিহ দাজ্জাল কিনা -তা জানার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ কি তার পিছু নিতেন ?!। সুতরাং মাসিহ দাজ্জাল বলতে রূপকার্থে ‘আজকের ধোকাবাজ প্রতারক পশ্চিমা সভ্যতা’কে অর্থ করার কোনোই সুযোগ নেই। الله اعلم بالصواب
# ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- سَمِعْتُ نِدَاءَ الْمُنَادِي مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُنَادِي الصَّلاَةَ جَامِعَةً . فَخَرَجْتُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَصَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَكُنْتُ فِي صَفِّ النِّسَاءِ الَّتِي تَلِي ظُهُورَ الْقَوْمِ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَتَهُ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ ” لِيَلْزَمْ كُلُّ إِنْسَانٍ مُصَلاَّهُ ” . ثُمَّ قَالَ ” أَتَدْرُونَ لِمَ جَمَعْتُكُمْ ” . قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ ” إِنِّي وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُكُمْ لِرَغْبَةٍ وَلاَ لِرَهْبَةٍ وَلَكِنْ جَمَعْتُكُمْ لأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلاً نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ وَحَدَّثَنِي حَدِيثًا وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْ مَسِيحِ الدَّجَّالِ حَدَّثَنِي أَنَّهُ رَكِبَ فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ مَعَ ثَلاَثِينَ رَجُلاً مِنْ لَخْمٍ وَجُذَامَ فَلَعِبَ بِهِمُ الْمَوْجُ شَهْرًا فِي الْبَحْرِ ثُمَّ أَرْفَئُوا إِلَى جَزِيرَةٍ فِي الْبَحْرِ حَتَّى مَغْرِبِ الشَّمْسِ فَجَلَسُوا فِي أَقْرُبِ السَّفِينَةِ فَدَخَلُوا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْهُمْ دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يَدْرُونَ مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقَالُوا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ . قَالُوا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتْ أَيُّهَا الْقَوْمُ انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ . قَالَ لَمَّا سَمَّتْ لَنَا رَجُلاً فَرِقْنَا مِنْهَا أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً – قَالَ – فَانْطَلَقْنَا سِرَاعًا حَتَّى دَخَلْنَا الدَّيْرَ فَإِذَا فِيهِ أَعْظَمُ إِنْسَانٍ رَأَيْنَاهُ قَطُّ خَلْقًا وَأَشَدُّهُ وِثَاقًا مَجْمُوعَةٌ يَدَاهُ إِلَى عُنُقِهِ مَا بَيْنَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى كَعْبَيْهِ بِالْحَدِيدِ قُلْنَا وَيْلَكَ مَا أَنْتَ قَالَ قَدْ قَدَرْتُمْ عَلَى خَبَرِي فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ قَالُوا نَحْنُ أُنَاسٌ مِنَ الْعَرَبِ رَكِبْنَا فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ فَصَادَفْنَا الْبَحْرَ حِينَ اغْتَلَمَ فَلَعِبَ بِنَا الْمَوْجُ شَهْرًا ثُمَّ أَرْفَأْنَا إِلَى جَزِيرَتِكَ هَذِهِ فَجَلَسْنَا فِي أَقْرُبِهَا فَدَخَلْنَا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْنَا دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يُدْرَى مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقُلْنَا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ . قُلْنَا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتِ اعْمِدُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ فَأَقْبَلْنَا إِلَيْكَ سِرَاعًا وَفَزِعْنَا مِنْهَا وَلَمْ نَأْمَنْ أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً فَقَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ أَسْأَلُكُمْ عَنْ نَخْلِهَا هَلْ يُثْمِرُ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنَّهُ يُوشِكُ أَنْ لاَ تُثْمِرَ قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ بُحَيْرَةِ الطَّبَرِيَّةِ . قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِيهَا مَاءٌ قَالُوا هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ . قَالَ أَمَا إِنَّ مَاءَهَا يُوشِكُ أَنْ يَذْهَبَ . قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ عَيْنِ زُغَرَ . قَالُوا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِي الْعَيْنِ مَاءٌ وَهَلْ يَزْرَعُ أَهْلُهَا بِمَاءِ الْعَيْنِ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ وَأَهْلُهَا يَزْرَعُونَ مِنْ مَائِهَا . قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَبِيِّ الأُمِّيِّينَ مَا فَعَلَ قَالُوا قَدْ خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَنَزَلَ يَثْرِبَ . قَالَ أَقَاتَلَهُ الْعَرَبُ قُلْنَا نَعَمْ . قَالَ كَيْفَ صَنَعَ بِهِمْ فَأَخْبَرْنَاهُ أَنَّهُ قَدْ ظَهَرَ عَلَى مَنْ يَلِيهِ مِنَ الْعَرَبِ وَأَطَاعُوهُ قَالَ لَهُمْ قَدْ كَانَ ذَلِكَ قُلْنَا نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنَّ ذَاكَ خَيْرٌ لَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ وَإِنِّي مُخْبِرُكُمْ عَنِّي إِنِّي أَنَا الْمَسِيحُ وَإِنِّي أُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِي فِي الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِي الأَرْضِ فَلاَ أَدَعَ قَرْيَةً إِلاَّ هَبَطْتُهَا فِي أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ فَهُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَىَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا اسْتَقْبَلَنِي مَلَكٌ بِيَدِهِ السَّيْفُ صَلْتًا يَصُدُّنِي عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلاَئِكَةً يَحْرُسُونَهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَطَعَنَ بِمِخْصَرَتِهِ فِي الْمِنْبَرِ ” هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ ” . يَعْنِي الْمَدِينَةَ ” أَلاَ هَلْ كُنْتُ حَدَّثْتُكُمْ ذَلِكَ ” . فَقَالَ النَّاسُ نَعَمْ ” فَإِنَّهُ أَعْجَبَنِي حَدِيثُ تَمِيمٍ أَنَّهُ وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْهُ وَعَنِ الْمَدِينَةِ وَمَكَّةَ أَلاَ إِنَّهُ فِي بَحْرِ الشَّامِ أَوْ بَحْرِ الْيَمَنِ لاَ بَلْ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ ما هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ ” . وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمَشْرِقِ . قَالَتْ فَحَفِظْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . رواه مسلم في صحيحه, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب قصة الجساسة: رقم ٢٩٤٢ – ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আহবানকারীকে আহবান করতে শুনলাম। আহবানকারী আহবান করলেন: ‘নামাযের জন্য একত্রিত হও’। তখন আমি মসজিদের উদ্দেশ্যে বেড় হলাম এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে নামায আদায় করলাম। লোকজনের পিছনে নারীদের যে কাতার ছিল আমি ছিলাম সেখানে। রাসুলুল্লাহ ﷺ নামায শেষ করে হাস্যজ্বল অবস্থায় মিম্বরের উপরে বসলেন। তারপর বললেন: সকলে (তার নিজ নিজ) মুসল্লায় বসে থাকো। অতঃপর বললেন: তোমরা কি জানো, আমি তোমাদেরকে কি জন্য একত্রিত করেছি? তারা বললেন: আল্লাহ জানেন ও তাঁর রাসুল জানেন। তিনি বললেন: ‘আল্লাহ’র কসম, আমি তোমাদেরকে কোনো আশা-কামনার জন্যও একত্রিত করিনি, ভয়-ভীতির জন্য (একত্রিত) করিনি। আমি একত্রিত করেছি এজন্য যে, তামীম দ্বারী ছিল একজন খৃষ্টান ব্যাক্তি। সে (আমার কাছে) এসে (আমার হাতে) বায়াত হয়েছে ও ইসলাম কবুল করেছে। সে আমাকে এমন ঘটনা শুনিয়েছে, যা -আমি তোমাদেরকে মাসিহ দাজ্জাল সম্পর্কে যা বলেছিলাম -তার সত্তায়ন করে। সে আমার কাছে বর্ণনা করেছে যে, সে লাখ্ম ও জুযান (গোত্রের) ত্রিশ’জন লোকের সাথে সামুদ্রিক জাহাজে আরোহন করে(যাত্রা করে)ছিল। পরে (উথাল পাতাল) ঢেউ তাদেরকে নিয়ে সমুদ্রের মধ্যে মাস খানেক খেলা করতে থাকে। এরপর তারা সমূদ্রের একটি দ্বীপ/উপত্যকার দিকে ভিড়তে ভিরতে সূর্যাস্ত হয়ে যায়। তখন তারা জাহাজের (সাথে বাঁধা) পার্শ্বনৌকায় করে উপত্যকাটিতে প্রবেশ করে। এরপর একটি জন্তু তাদের সাথে সাক্ষাত করে; সে ছিল লোমে একদম ভরপুর। প্রচুর লোমের কারণে তারা বুঝতেই পারছিল না -কোনটি তার সামন, কোনটি পিছন। তারা তখন জিজ্ঞেস করলো: ‘হতভাগা, তুই কে’? সে বললো: আমি ‘জাস্সাসাহ’। তারা জিজ্ঞেস করলো: ‘জাস্সাসাহ কি’? সে (উত্তর না দিয়ে) বললো: ‘হে লোকসকল! তোমরা (সবাই) আশ্রমে অবস্থিত এই ব্যাক্তির দিকে অগ্রসর হও। সে তোমাদের তথ্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে’। সে (তামীম) বলেছে: আমাদেরকে যখনই বলা হল ‘ব্যাক্তি’, তখনই আমরা -সে শয়তান হতে পারে- মনে করে ভয় পেয়ে গেলাম। সে বলেছে: আমরা (তখন) তড়িঘড়ি করে অগ্রসর হয়ে একেবারে তার আশ্রমে প্রবেশ করতেই তাতে দেখতে পেলাম -একজন বিরাটাকারের মানুষকে; এরকম মাখলূক আগে কখনো দেখিনি। সে ছিল লোহার শিকলে (এমন ভাবে) শক্ত করে বাঁধা (যে,) তার হাত দুটি ছিল তার গর্দানের দিকে, যেটা (আবার) ছিল তার দুই হাটুর মাঝখানে -পায়ের পাতা মুখী হওয়া অবস্থায়। আমরা বললাম: হতভাগা ! তুই কে? সে বললো: তোমরা আমার তথ্য পাবে। (আগে) বলো, কে তোমরা? তারা বললো: আমরা আরবের লোক; (মাস খানেক আগে) সমূদ্র জাহাজে আরোহন করি, (পরে এক সময় এমন এক) সমূদ্রের মুখামুখী হই, যা আমাদেরকে ধাক্কা (-র পর ধাক্কা) দিতে থাকে, এভাবে ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে মাস খানেক খেলতে থাকে, অতঃপর (আজ সন্ধায়) আমাদেরকে তোমার এই উপত্যাকায় এনে ফেলে দিয়েছে। পরে আমরা (জাহাজের সাথে বাঁধা) পার্শ্বনৌকায় করে (তোমার এই) উপত্যকায় প্রবেশ করেছি। তার পর (এমন এক) জন্তু আমাদের সাথে সাক্ষাত করে, যে ছিল লোমে ভরপুর, বোঝাই যাচ্ছিল না -কোনটা তার সামন কোনটা পিছন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: হতভাগা, কে তুই? সে বললো: আমি ‘জাস্সাসাহ’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘জাস্সাসাহ কি’? সে (উত্তর না দিয়ে) বললো: ‘হে লোকসকল! তোমরা (সবাই) আশ্রমে অবস্থিত এই ব্যাক্তির দিকে অগ্রসর হও। সে তোমাদের তথ্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে’। তখন আমরা তার কথায় ভয় পেয়ে এবং তুই শয়তান হতে পারিস আশংকা করে তোর কাছে তড়িঘড়ি করে এলাম। তখন সে বললো: আমাকে বাইসান/বিসান (এলাকার) খেজুর গাছের ব্যাপারে অবগত করো (তা এখন কি অবস্থায় রয়েছে)’। আমরা বললাম: ‘তুই ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাস’? সে বললো: ‘আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি ওর খেজুর গাছ সম্পর্কে যে তা ফল দেয় কিনা’? আমরা বললাম: হ্যাঁ (ফল দেয়)। সে বললো: ‘নিশ্চই অচিরেই তা আর ফল দিবে না’। সে বললো: ‘আমাকে ত্বাবারী হ্রদের ব্যাপারে খবর দাও’। আমরা বললাম: ‘ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে তুই জানতে চাস’? সে বললো: তার মধ্যে কি (এখনও) পানি আছে? তারা বললো: সেখানে প্রচুর পানি আছে’। সে বললো: ‘নিশ্চই অচিরেই তার পানি চলে যাবে’। সে বললো: ‘আমাকে জুগারের ঝরনা’র ব্যাপারে খবর দাও’। আমরা বললাম: ‘ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে তুই জানতে চাস’? সে বললো: ‘ঝরনাটিতে কি পানি আছে এবং এর (আশেপাশের) বাসিন্দারা কি ঝরনাটির পানি দিয়ে চাষবাস করে?’ আমরা তাকে বললাম: হ্যাঁ, তাতে অনেক পানি আছে এবং তার (আশেপাশের) বাসিন্দারা তার পানি দিয়ে চাষবাস করে’। সে বললো: ‘আমাকে উম্মী নবীর ব্যাপারে তথ্য দাও, তিনি কী করেছেন’। তারা বললো: ‘তিনি মক্কা থেকে বেড়িয়ে ইয়াছরিবে (মদিনায়) ঠাঁই নিয়েছে’। সে বললো: ‘আরবরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছে’? আমরা বললাম: ‘হ্যাঁ’। সে বললো: ‘তিনি তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন’? তখন আমরা তাকে জানালাম যে, আরবের যারা তার প্রতিবেশি ছিল তিনি তাদের উপর বিজয় লাভ করেছেন এবং তারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছে। সে বললো: ‘তাদের সে অবস্থা হয়েছে’! আমরা বললাম: ‘হ্যাঁ’। সে বললো: ‘যদি তেমনটাই হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর অনুগত্য করাই তাদের জন্য কল্যানকর হবে। আর আমি তোমাদেরকে আমার তথ্য দিচ্ছি। আমিই হলাম মাসিহ (দাজ্জাল)। আর অচিরেই আমাকে বেড় হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি তখন বেড় হয়ে পৃথিবী ভ্রমন করবো। তখন চল্লিশ রাতের মধ্যে (পৃথিবীর) এমন কোনো পল্লী-এলাকাও (বাদ) থাকবে না, যেখানে আমাকে অবতরন করতে দেয়া না হবে -শুধু মক্কা ও ত্বইয়্যেবাহ ছাড়া; এই দুটোর দুটোই (আমার জন্য প্রবেশাধিকার) নিষিদ্ধ (থাকবে)। যখনই আমি ওই দু’স্থানের কোনো একটিতে একবার প্রবেশ করতে চাবো, তখনই একজন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারী হাতে আমার মোকাবেলায় চলে আসবে ও আমাকে তাতে বাঁধা দিবে। বস্তুতঃ (এ দু’ স্থানের) প্রতিটি অলি-গলির সামনে ফেরেশতারা পাহারা দিতে থাকবে। ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর (হাতের) লাঠি/ছড়ি দিয়ে মিম্বরে মেড়ে বললেন: এটাই ত্বইয়্যেবাহ! এটাই ত্বইয়্যেবাহ! এটাই ত্বইয়্যেবাহ! অর্থাৎ মদিনা। ওহে! আমি কি তোমাদেরকে এসব আগে বলিনি? তখন লোকজন বললো: জি (বলেছেন)। (রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন): ‘তামীমের কথা আমাকে অবাক করে দিয়েছে। আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মক্কা ও মদিনা সম্পর্কে ইতিপূর্বে যা বলেছি, (তামীম) তা সত্ত্বায়ন করে দিয়েছে। শুনে রাখো, সে (দাজ্জাল) শামের সমূদ্রে বা ইয়ামেনের সমূদ্রে রয়েছে। না, বরং পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)। সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে), সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)’। আর (একথা বলার সময়) তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করছিলেন’। ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. বলেন: ‘এসব কথা আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছ থেকে মুখস্ত করে রেখেছি’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪২; আস-সুন্নাহ, ইমাম দানী-১/১১৪৮ হাদিস ৬২৬; সুনানে তিনমিযী, হাদিস ২২৫৩; আল-মু’জামুল কাবীর, তাবরাণী- ২৪/৩৮৬-৪০৫ হাদিস ৯৫৭-৯৮৩]
ফায়দা: এই হাদিসটিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, মাসিহ দাজ্জাল একজন إِنْسَانٍ (মানুষ), যাকে পূর্ব দিকস্থ কোনো এক দ্বীপে/উপত্যকায় লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে, এক সময় সে ছাড়া পাবে। এখানে রূপক অর্থ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সহিহ ইবনে হিব্বানে’র একটি রেওয়ায়েতে এসেছে যে, দাজ্জাল এও জিজ্ঞেস করেছিল: ثم قال ما بيوتكم قالوا من شعر وصوف تغزله نساؤنا قال فضرب بيده على فخذه ثم قال هيهات . رواه ابن حبان في صحيحه: ١٥/١٩٥ رقم ٦٧٨٨ , و قال شعيب الأرنؤوط : حديث صحيح – `তোমাদের ঘরবাড়ি (এখন) কি (দিয়ে তৈরী)? তারা বললো: ‘পশম ও উলের (তৈরী কাপড় দিয়ে ঘেরাও করা, যা) আমাদের নারীরা সেলাই করে থাকে’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/১৯৫ হাদিস ৬৭৮৮] الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالأَعْمَاقِ أَوْ بِدَابِقَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الأَرْضِ يَوْمَئِذٍ فَإِذَا تَصَافُّوا قَالَتِ الرُّومُ خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ . فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ لاَ وَاللَّهِ لاَ نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا . فَيُقَاتِلُونَهُمْ فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لاَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُمْ أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللَّهِ وَيَفْتَتِحُ الثُّلُثُ لاَ يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قُسْطُنْطِينِيَّةَ فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْغَنَائِمَ قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ إِذْ صَاحَ فِيهِمُ الشَّيْطَانُ إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ . فَيَخْرُجُونَ وَذَلِكَ بَاطِلٌ فَإِذَا جَاءُوا الشَّأْمَ خَرَجَ فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لاَنْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ- কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ রোম’রা আ’মাক অথবা দাবিক-এ অবতরণ না করে। সেসময় পৃথিবীবাসীর মধ্য থেকে (মুমিনদের) সর্বোত্তম একটি সৈন্যদল মদিনা হতে (বের হয়ে) তাদের দিকে ধাবিত হবে। তারা পরষ্পরে যখন সারিবদ্ধ হয়ে (মালহামাতুল কুবরা তথা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন) রোম’রা বলবে: আমাদের এবং যারা আমাদের লোকদেরকে আটকিয়ে রেখেছে তাদের মাঝ থেকে তোমরা সরে যাও, আমরা ওদের সাথে যুদ্ধ করবো। তখন মুসলমানরা বলবে: (এটা কখনই হতে পারে) না, আল্লাহ’র শপথ, আমারা তোমাদের এবং আমাদের (মুসলমান) ভাইদের মাঝ থেকে সরে দাঁড়াবো না। এরপর তাঁরা তাদের (তথা রোম বাহিনীর) সাথে যুদ্ধ করবে। তখন (যদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মুসলমানদের মধ্যে) তিন ভাগের এক ভাগ (ভয়ে) পালিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের তওবা আর কখনই কবুল করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ শহীদ হয়ে যাবে; তাঁরা হবে আল্লাহ’র কাছে (সেই জিহাদের) সর্বোত্তম শহীদ। আর (অবশিষ্ট) এক তৃতীয়াংশ (যাঁরা বেঁচে যাবে তাঁরা ওই জিহাদে রোমদের উপর) বিজয় লাভ করবে; (পরে) তাঁরা আর কখনই ফিতনায় পতিত হবে না। এরপর তাঁরা (সামনে অগ্রসর হয়ে) কুস্তুনতুনিয়া (কন্সট্যান্টিনোপোল/ ইস্তাম্বুল, তুরষ্ক) জয় করবে। তারা যখন তাদের তরবারী জয়তুন গাছে ঝুলিয়ে গণীমতের মাল বন্টন করতে থাকবে, এমন সময় শয়তান তাদের মাঝে চিৎকার দিয়ে বলবে: নিশ্চই মাসিহ (দাজ্জাল) তোমাদের পরিবারের পিছনে লেগেছে। তখন তাঁরা (অবস্থার সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য) বেরিয়ে পড়বে, কিন্তু (বাস্তবে) খবরটি ছিল মিথ্যা। তাঁরা যখন শাম-এ গিয়ে পৌছবে, (তখন) দাজ্জাল বের হবে। তাঁরা জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সারিবদ্ধ হতে হতেই (আযান ও) নামাযের আকামত দেয়া হবে। তখন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.) নাজিল হবেন। এরপর (নামায আদায় করা হবে ইমাম মাহদীর ইমামতীতে এবং নামাযের পর দাজ্জালের মুকাবেলায় মুসলীম উম্মাহ’র) তিনি নেতৃত্ব দিবেন। আল্লাহ’র দুশমন (দাজ্জাল) যখন তাঁকে দেখবে, তখন সে এমনভাবে গলে যাবে যেভাবে লবন পানিতে গলে যায়। তিনি যদি তাকে (ওভাবেই) ছেড়ে দিতেন, তাহলে (সে গলতে গলতে) একসময় (পুরাপুরি) ধ্বংস হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ ঈসা আ.-এর হাত দ্বারা তাকে হত্যা করবেন। তাই (শেষ পর্যন্ত ) ঈসা আ.-এর বর্শার মধ্যে তার রক্ত তারা দেখতে পাবে। [সহিহ মুসলীম ২৮৯৭]
ফায়দা: এই হাদিসটিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, মাসিহ দাজ্জাল যখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-কে দেখবে, তখন পানিতে লবন গলার মতো গলতে আরম্ভ করবে। আরো বলা হয়েছে যে, ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. যদি দাজ্জালকে নিজ হাতে না মেড়ে ওভাবেই গলন রতঃ অবস্থায় ছেড়ে দিতেন, তাহলে সে (গলতে গলতে একসময় নিজেই) ধ্বংস হয়ে যেতো। এথেকেও প্রমাণিত হয়, যে দাজ্জাল একটা মানবরূপী প্রাণি, যে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে। কোনো কোনো হাদিস থেকে বোঝা যায়, ঈসা আ. তাকে (ফিলিস্তিনের) বাবে-লুদ -এ কতল করবেন। الله اعلم بالصواب
দাজ্জাল কখন বেড় হবে ?
# যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- َ يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فِي خَفْقَةٍ مِنَ الدِّينِ ، وَإِدْبَارٍ مِنَ الْعِلْمِ ، . رواه احمد في المسند : رقم ١٤٩٩٧ , و قال الشيخ شعيب الأرناؤوط: إسناده صحيح – “দাজ্জাল বেড় হবে দ্বীনের খলৎমলৎ অবস্থায় এবং (কুরআন সুন্নাহ’র) ইলম থেকে (উম্মাহ’র পাইকারী হারে লেজগুটিয়ে) পিছুটান কালে”। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৪৯৯৭]
# হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا يَخْرُجُ الدَّجَّالُ حَتَّى يَذْهَلَ النَّاسُ عَنْ ذِكْرِهِ ، وَحَتَّى تَتْرُكَ الأَئِمَّةُ ذِكْرَهُ عَلَى الْمَنَابِرِ . رواه أحمد: ١٦٢٣١ ، وابن أبي عاصم في الآحاد والمثاني: ٨٣٠ ، والطبراني في مسند الشاميين: ٩٦٧ ، و ابن قانع في معجم الصحابة: ٦٨٦ ، وقال في معجم الزوائد: ٣/٣٤٥ : رواه عبد الله بن أحمد من رواية بقية عن صفوان ابن عمرو وهي صحيحة كما قال ابن معين، وبقية رجاله ثقات، وقال الزين في المسند: ١٣/١١٢ : إسناده صحيح وهو من زوائد عبدالله . – ‘দাজ্জাল বেড় হবে না, যাবৎ না (অধিকাংশ) মানুষজন তার কথা উল্লেখ করা থেকে অন্যমনষ্ক হয়ে যায় এবং যাবৎ না ইমামগণ মিম্বরগুলোতে তার কথা উল্লেখ করা ছেড়ে দেয়’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৬২৩১; মুসনাদে শামেইন, ত্বাবরাণী- ৯৬৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৩৪৫]
# হযরত মুয়ায বিন যাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- عمران بيت المقدس خراب يثرب، وخراب يثرب خروج الملحمة، وخروج الملحمة فتح القسطنطينية، وفتح القسطنطينية خروج الدجال. أخرجه أبو داود في “السنن: ٤٢٩٤ و حسّنه الألباني في صحيح أبي داود: رقم ٤٢٩٤ ; وأحمد في “مسنده: ٥/٢٤٥ رقم ٢٢١٢١; الطحاوي في “شرح مشكل الآثار: ٥١٩, ; ابن أبي شيبة في “المصنف:١٥/١٣٥ رقم ٣٨٤٧٣ ;;الطبراني في “المعجم الكبير: ٢٠/١٠٨;الحاكم في “المستدرك:٨٢٩٧ ; الديلمي في “الفردوس: ٤١٢٧; قال الحافظ ابن كثير في النهاية:١/٥٩ : وهذا إسناد جيد وحديث حسن، وعليه نور الصدق وجلالة النبوة – ‘বায়তুল-মাকদিস’-এর গড়ন (হলে ঘটনার ক্রমধারায়) ইয়াসরিব’-এর খারাবী (হবে)। ইয়াসরিব’-এর খারাবী (হলে ঘটনার ক্রমধারায়) মালহামাহ’র সূত্রপাত (হবে)।মালহামাহ’র সূত্রপাত (হলে এর ক্রমধারায় মুসলমানদের হাতে) কুসতুনতুনিয়া (তথা কনসটেন্টিনোপল, তুরষ্ক)’র বিজয় (সংঘটিত হবে), আর কুসতুনতুনিয়া’র বিজয় (সংঘটিত হলে তার কিছু কাল পর) দাজ্জালের আবির্ভাব (হবে)। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৪; মুসনাদে আহমদ-৫/২৪৫, হাদিস ২২১২১; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী, হাদিস ৫১৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১৫/১৩৫, হাদিস ৩৮৪৭৩; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২০/১০৮; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ৮২৯৭; মুসনাদে ফিদোউস, দাইলামী, হাদিস ৪১২৭]
ফায়দা: আরব’রা তৎকালীন তুর্কি/তুরষ্কের রোমান বাইজেন্টাইন স্রাম্রাজ্যের রাজধানী কনসটেন্টিনোপল’কে বলতো কুসতুনতুনিয়া, যেটা আজ ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত। আমি যখন এটি লিখছি, তখন তুরষ্কের প্রেসিডেন্ড আছেন মুসলীম শাসক রিসেপ তায়েপ এরদোগান। খুব সম্ভব মালহামাহ (মহাযুদ্ধ)-র শুরুর দিকে গোটা তুরষ্ক কিংবা তুরষ্কের ইস্তাম্বুল কাফেরদের দখলে চলে যাবে এবং (নিম্নের আব্দুল্লাহ বিন বুসর ও মুয়ায বিন যাবাল রা. বর্ণিত হাদিস থেকে বোঝা যায়) মালহামার (মহাযুদ্ধ) একটানা ছয় বছর চলার পর মুসলমানরা তা পূণরায় কাফেরদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিবে। অন্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, তখন ইমাম মাহদী রা. নেতৃত্বে এই জিহাদটি পরিচালিত হবে। কুসতুনতুনিয়া জয়ের পর দাজ্জাল বেড় হবে, যার বর্ণনা ঠিক নিম্নের হাদিস দুটিতে রয়েছে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالأَعْمَاقِ أَوْ بِدَابِقَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الأَرْضِ يَوْمَئِذٍ فَإِذَا تَصَافُّوا قَالَتِ الرُّومُ خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ . فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ لاَ وَاللَّهِ لاَ نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا . فَيُقَاتِلُونَهُمْ فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لاَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُمْ أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللَّهِ وَيَفْتَتِحُ الثُّلُثُ لاَ يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قُسْطُنْطِينِيَّةَ فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْغَنَائِمَ قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ إِذْ صَاحَ فِيهِمُ الشَّيْطَانُ إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ . فَيَخْرُجُونَ وَذَلِكَ بَاطِلٌ فَإِذَا جَاءُوا الشَّأْمَ خَرَجَ فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لاَنْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ – ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ রোম’রা আ’মাক অথবা দাবিক-এ অবতরণ না করে। সেসময় পৃথিবীবাসীর মধ্য থেকে (মুমিনদের) সর্বোত্তম একটি সৈন্যদল মদিনা হতে (বের হয়ে) তাদের দিকে ধাবিত হবে। তারা পরষ্পরে যখন সারিবদ্ধ হয়ে (মালহামাতুল কুবরা তথা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন) রোম’রা বলবে: আমাদের এবং যারা আমাদের লোকদেরকে আটকিয়ে রেখেছে তাদের মাঝ থেকে তোমরা সরে যাও, আমরা ওদের সাথে যুদ্ধ করবো। তখন মুসলমানরা বলবে: (এটা কখনই হতে পারে) না, আল্লাহ’র শপথ, আমারা তোমাদের এবং আমাদের (মুসলমান) ভাইদের মাঝ থেকে সরে দাঁড়াবো না। এরপর তাঁরা তাদের (তথা রোম বাহিনীর) সাথে যুদ্ধ করবে। তখন (যদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মুসলমানদের মধ্যে) তিন ভাগের এক ভাগ (ভয়ে) পালিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের তওবা আর কখনই কবুল করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ শহীদ হয়ে যাবে; তাঁরা হবে আল্লাহ’র কাছে (সেই জিহাদের) সর্বোত্তম শহীদ। আর (অবশিষ্ট) এক তৃতীয়াংশ (যাঁরা বেঁচে যাবে তাঁরা ওই জিহাদে রোমদের উপর) বিজয় লাভ করবে; (পরে) তাঁরা আর কখনই ফিতনায় পতিত হবে না। এরপর তাঁরা (সামনে অগ্রসর হয়ে) কুস্তুনতুনিয়া (কন্সট্যান্টিনোপোল/ ইস্তাম্বুল, তুরষ্ক) জয় করবে। তারা যখন তাদের তরবারী জয়তুন গাছে ঝুলিয়ে গণীমতের মাল বন্টন করতে থাকবে, এমন সময় শয়তান তাদের মাঝে চিৎকার দিয়ে বলবে: নিশ্চই মাসিহ (দাজ্জাল) তোমাদের পরিবারের পিছনে লেগেছে। তখন তাঁরা (অবস্থার সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য) বেরিয়ে পড়বে, কিন্তু (বাস্তবে) খবরটি ছিল মিথ্যা। তাঁরা যখন শাম-এ গিয়ে পৌছবে, (তখন) দাজ্জাল বের হবে। তাঁরা জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সারিবদ্ধ হতে হতেই (আযান ও) নামাযের আকামত দেয়া হবে। তখন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.) নাজিল হবেন। এরপর (নামায আদায় করা হবে ইমাম মাহদীর ইমামতীতে এবং নামাযের পর দাজ্জালের মুকাবেলায় মুসলীম উম্মাহ’র) তিনি নেতৃত্ব দিবেন। আল্লাহ’র দুশমন (দাজ্জাল) যখন তাঁকে দেখবে, তখন সে এমনভাবে গলে যাবে যেভাবে লবন পানিতে গলে যায়। তিনি যদি তাকে (ওভাবেই) ছেড়ে দিতেন, তাহলে (সে গলতে গলতে) একসময় (পুরাপুরি) ধ্বংস হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ ঈসা আ.-এর হাত দ্বারা তাকে হত্যা করবেন। তাই (শেষ পর্যন্ত ) ঈসা আ.-এর বর্শার মধ্যে তার রক্ত তারা দেখতে পাবে। [সহিহ মুসলীম ২৮৯৭]
ফায়দা: ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-কে দেখে দাজ্জাল পানিতে লবন গলার মতো গলতে শুরু করবে, তারপর পালাবে এবং তাকে হত্যা করবেন বর্শা দিয়ে, যার মধ্যে দাজ্জালের রক্ত থাকবে – এসব বিষয়ও প্রমাণ করে, দাজ্জাল রূপকার্থের পশ্চিমা সমাজ নয়, বরং সে বাস্তবেই একজন মানুষ, যে মৃত্যু বরন করবে। الله اعلم بالصواب
#হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَمِعْتُمْ بِمَدِينَةٍ جَانِبٌ مِنْهَا فِي الْبَرِّ وَجَانِبٌ مِنْهَا فِي الْبَحْرِ ” . قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ ” لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَغْزُوَهَا سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ بَنِي إِسْحَاقَ فَإِذَا جَاءُوهَا نَزَلُوا فَلَمْ يُقَاتِلُوا بِسِلاَحٍ وَلَمْ يَرْمُوا بِسَهْمٍ قَالُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . فَيَسْقُطُ أَحَدُ جَانِبَيْهَا ” . قَالَ ثَوْرٌ لاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ قَالَ ” الَّذِي فِي الْبَحْرِ ثُمَّ يَقُولُوا الثَّانِيَةَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . فَيَسْقُطُ جَانِبُهَا الآخَرُ ثُمَّ يَقُولُوا الثَّالِثَةَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . فَيُفَرَّجُ لَهُمْ فَيَدْخُلُوهَا فَيَغْنَمُوا فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْمَغَانِمَ إِذْ جَاءَهُمُ الصَّرِيخُ فَقَالَ إِنَّ الدَّجَّالَ قَدْ خَرَجَ . فَيَتْرُكُونَ كُلَّ شَىْءٍ وَيَرْجِعُونَ – ‘তোমরা (হয়তো) এমন শহরের কথা শুনেছো, যার একটি দিক স্থলে অবস্থিত এবং আরেকটি দিক সমূদ্রে অবস্থিত? লোকেরা বললো: হ্যা, ইয়া রাসুলাল্লাহ, (শুনেছি)। রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করলেন- কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ বনু-ইসহাক-এর সত্তর হাজার লোক তা আক্রমন না করে। তাঁরা সেখানে এসে অবতরন করার পর না কোনো অস্ত্রের সাহায্যে যুদ্ধ করবে, আর না কোনো তীর নিক্ষেপ করবে। তাঁরা বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’ , এতেই তার একটা দিক ধ্বসে পড়বে। ছাওর বলেন: আমি শুধু এতটুকু জানি যে, তিনি বলেছেন- الَّذِي فِي الْبَحْرِ (যে দিকটি সমূদ্রে অবস্থিত)। এরপর তাঁরা দ্বিতীয়বার বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’, তাতে অপর দিকটি ধ্বসে পড়বে। এরপর তাঁরা তৃতীয়বার বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’, এতে তাদের জন্য (গেট) খুলে যাবে এবং তারা সেখানে প্রবেশ করে গণীমত লাভ করবে। তারা যখন নিজেদের মধ্যে গণীমত বন্টন করতে থাকবে এমন সময় একটি বিকট আওয়াজ আসবে; বলবে-إِنَّ الدَّجَّالَ قَدْ خَرَجَ (নিশ্চই দাজ্জাল বের হয়ে গেছে)। তখন তাঁরা (গণীমতের) সবকিছু রেখে দিয়ে (ঘটনা নিরিক্ষনের উদ্দেশ্যে) পুণরায় বেরিয়ে পড়বে। [সহীহ মুসলীম ২৯২০]
ফায়দা: এই হাদিসে মালহামাহ (মহাযদ্ধ)’র শেষের দিকে ইমাম মাহদী রা. ও মুসলমানদের দ্বারা তুরষ্কের ইস্তাম্বুল / কুসতুনতুনিয়া বিজয়ের বিষয়টিকেই আরো কিছু বর্ণনা সহকারে পেশ করা হয়েছে, যার এর উপরের হাদিসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।
‘বনু ইসহাক’ বলতে নবী ইব্রাহিম আ.-এর পুত্র নবী ইসহাক আ.-এর বংশধর উদ্দেশ্য। নবী ইসহাক আ.-এর পুত্র ছিলেন নবী ইয়াকুব আ., যাঁকে বাইবেলে বিশেস ভাবে ‘ইসরাঈল’ নামেও ডাকা হয়েছে, আর ‘বনী ইসরাঈল’ বলতে তাঁর ১২ সন্তান (মানে নবী ইউসূফ আ. ও তাঁর ১১ ভাই) এবং তাদের বংশধর’কে ধরা হয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা গেল, হাদিসে বর্ণিত বনু-ইসহাকের সত্তর হাজার মুসলীম মুজাহিদগণ যারা তুরষ্কের ইস্তাম্বুল আক্রমন করবেন, তারা হবেন বনী-ইসরাঈলের মুসলীম বংশধর।
আর আরবী ভাষায় তৎকালে ৭০, ৪০ ইত্যাদি শব্দ’গুলি ‘বহু, অসংখ্য, অগণিত’ ইত্যাদি অর্থ বোঝাতেও ব্যবহৃত হত, ঠিক যেমনটা আমাদের বাংলা ভাষায় অনেক ক্ষেত্রে ‘বহু’ বোঝাতে ‘একশ’ কথাটি উল্লেখ করা হয়ে থাকে, যেমন বলা হয়: ‘আমি তোমাকে একশ’বার নিষেধ করলাম, তাও আমার কথা শুনলে না’। এর উদ্দেশ্য, বহুবার করে বলার পরেও শুনলে না। সুতরাং, হাদিসে বনু-ইসহাকের সত্তর হাজার মুজাহিদ বলতে প্রায় সত্তর হাজারও হতে পারে, বা তার থেকেও অনেক বেশি বা অগণিতও উদ্দেশ্য হতে পারে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- بَيْنَ الْمَلْحَمَةِ وَفَتْحِ الْمَدِينَةِ سِتُّ سِنِينَ، وَيَخْرُجُ الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ فِي السَّابِعَةِ. رواه أبو داود فى سننه, كتاب الملاحم , باب في تواتر الملاحم : رقم ٥٤٩٦ و قَالَ أَبُو دَاوُدَ: هَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ عِيسَى; قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري: (٦/٣٢١) وإسناده أصح من إسناد حديث معاذ; سنن ابن ماجه: ٤٠٩٣; مسند أحمد: ١٧٢٣٨; البحر الزخار بمسند البزار: ٣٥٠٥; السنن الواردة في الفتن للداني:٤٨٩ و٦١٤ و٦٥٩; الفتن لنعيم بن حماد: ١٤٥٤ و ١٤٦٩ – ‘মালহামাহ (-ই-কুবরা তথা মহাযুদ্ধ শুরু হওয়া) এবং (কুস্তুনতুনিয়া) শহরটির বিজয় (হতে সময় লাগবে) ছয় বছর এবং মাসিহ-দাজ্জাল বেড় হবে সপ্তম বছরে’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫৪৯৬; মুসনাদে আহমদ- ১৭২৩৮; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৩৫০৫; আস-সুন্নাহ, দানী- ৪৮৯, ৬১৪, ৬৫৯; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১৪৫৪, ১৪৬৯]
ফায়দা: হযরত মুয়ায বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الْمَلْحَمَةُ الْكُبْرَى ، وَفَتْحُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ ، وَخُرُوجُ الدَّجَّالِ فِي سَبْعَةِ أَشْهُرٍ . رواه أحمد: ٣٦/٣٧١، وأبوداود: ٤٢٩٥، والترمذي: ٢٢٣٨، وابن ماجه: ٤٠٩٢; وضعفه الألباني في ” ضعيف الترمذي ‘মালহামায়ে-কুবরা (মহাযুদ্ধ), কুস্তুনতুনিয়া বিজয় এবং দাজ্জালের বেড় হওয়া -সাত মাসের মধ্যে ঘটবে’। [জামে তিরমিযী, হাদিস ২২৩৮; মুসনাদে আহমদ- ৩৬/৩৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৯২]
এই হাদিসটি উপরের হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এখানে মূলতঃ মালহামায়ে-কুবরা (মহাযুদ্ধ)-এর প্রথম ৫টি বছরের কথা বলা হচ্ছে না, বরং তার ৬ষ্ঠ বছরের শেষ দিককার কিছু সময়, তারপর কুস্তুনতুনিয়া বিজয়, তারপর সপ্তম বছরের শুরু বা মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে দাজ্জালের আবির্ভাব -এসব মোট সাত মাসের মধ্যে ঘটবে বলে ইংগীত করা হয়েছে। الله اعلم بالصواب
দাজ্জাল কোথা কোথা থেকে বেড় হবে, কোথায় যাবে?
হাদিস ও আছার সমূহে ‘দাজ্জাল’ বেড় হওয়ার বিভিন্ন স্থানের কথা উল্লেখ রয়েছে। মুহাক্কিক আলেমগণের মতে, ওগুলোর দ্বারা -হয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে দাজ্জাল’ বেড় হওয়ার দিকে ইশারা করা হয়েছে, অথবা একই এলাকাকে ইংগীত করতে ওই এলাকাটি যে দেশ বা শহর কিংবা গ্রামের সাথে সম্পর্কযুক্ত তার দিকে ইশারা করে উল্লেখ করা হয়েছে।
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ الأَعْوَرَ الدَّجَّالَ مَسِيحَ الضَّلاَلَةِ يَخْرُجُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فِي زَمَانِ اخْتِلاَفٍ مِنَ النَّاسِ وَفُرْقَةٍ ، فَيَبْلُغُ مَا شَاءَ اللَّهُ مِنَ الأَرْضِ فِي أَرْبَعِينَ يَوْمًا ، اللَّهُ أَعْلَمُ مَا مِقْدَارُهَا ، اللَّهُ أَعْلَمُ مَا مِقْدَارُهَا – مَرَّتَيْنِ . رواه ابن حبان في صحيحه:١٥/٢٢٣ رقم ٦٨١٢ و قال شعيب الأرنؤوط : اسناده قوي رجاله ثقات رجال الصحيح غير كليب بن شهاب, والد عاصم, فقد روي له اصحاب السنن و البخاري في رفع يدين, وهو صدوق; و رواه البزار في كشف الأستار, كِتَابُ الْفِتَنِ, بَابُ مَا جَاءَ فِي الدَّجَّالِ: ٥/٢٢١ و قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري: أخرجه البزار بسند جيد … انتهى, قال الهيثمي :٧/٣٤٩ رجاله رجال الصحيح غير علي بن المنذر وهو ثقة; و صححه الألباني في ” صحيح الموارد: رقم ١٥٩٨ – ‘নিশ্চই পথভ্রষ্ঠ কানা মাসিহ দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে বেড় হবে এমন এক জামানায় যখন মানুষজনের মাঝে বিরোধ-দ্বন্দ্ব ও দলাদলি (প্রকট মাত্রায়) থাকবে। এরপর -আল্লাহ যেমনটা চান- সে পৃথিবীতে থাকবে চল্লিশ দিন। ‘(আর) আল্লাহ’ই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমানটা কত! আল্লাহ’ই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমানটা কত! (একথা দুবার বললেন)’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/২২৩ হাদিস ৬৮১২; মুসনাদে বাযযার– ৫/২২১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৪৯]
ফায়দা: সহিহ ইবনে হিব্বানের আরেক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- خرج الدجال من هاهنا. و أشار نحو المشرق . رواه ابن حبان في صحيحه: ١٥/٢٠٢ رقم ٦٧٩٢, تحقيق : شعيب الأرنؤوط – ‘দাজ্জাল বেড় হবে ওখান থেকে এবং (একথা বলার সময়) তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/২০২ হাদিস ৬৭৯২]
# আবু বকর সিদ্দিক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الدَّجَّالُ يَخْرُجُ مِنْ أَرْضٍ بِالْمَشْرِقِ يُقَالُ لَهَا خُرَاسَانُ ، يَتْبَعُهُ أَقْوَامٌ كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ الْمَجَانُّ الْمُطْرَقَةُ . رواه الترمذي, أبواب الفتن, باب ما جاء من أين يخرج الدجال: حديث رقم ٢٢٣٧, و أحمد: ١/٤ رقم ١٢; و ابن ماجه: ٤٠٧٢, و الحاكم: ٤/٥٧٣ و قال : صحيح الإسناد و وافقه الذهبي . حسنه الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة: رقم ١٥٩١ و في صحيح الجامع الصغير: حديث رقم ٣٣٩٨ – ‘দাজ্জাল পূর্বদিকে (অবস্থিত) খুরাসান নামক (একটি) অঞ্চল থেকে বেড় হবে। (তখন এমন) গোষ্ঠিসমূহ অনুসরণ করবে, যাদের মুখগুলো হবে হাতুরী পিটানো ঢালের মতো (দেখতে)’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৬৩; মুসনাদে আহমদ- ১/৪ হাদিস ১২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৭৩]
# আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ . روى الإمام مسلم في صحيحه, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب في بقية من أحاديث الدجال: حديث رقم ٢٩٤٤ – ‘দাজ্জালকে ‘আসবাহান’-এর সত্তর হাজার ইহূদী অনুসরণ করবে, তাদের (মাথা/গায়ের) উপরে থাকবে তায়ালিসাহ (নামক এক ধরনের পোষাক)’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪৪]
# আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَخْرُجُ الدَّجَّالُ مِنْ يَهُودِيَّةِ أَصْبَهَانَ مَعَهُ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ الْيَهُودِ عَلَيْهِمْ التِّيجَانُ . رواه أحمد برقم ١٢٨٦٥ – ‘দাজ্জাল ইহূদীদের-আবাস ‘আসবাহান’ থেকে বেড় হবে। তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইহূদী, তাদের (মাথা/গায়ের) উপরে থাকবে তায়যান’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১২৮৬৫]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَنْزِلَنَّ الدَّجَّالُ خُوزَ وَكَرْمَانَ فِي سَبْعِينَ أَلْفًا ، وُجُوهُهُمْ كَالْمَجَانِّ الْمُطْرَقَةِ . رواه الإمام أحمد: ٢/٣٣٧، و إسناده حسن كما جاء في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ٢/٤٠٦ – ‘দাজ্জাল অবতরণ করবে ‘খুজ’ এবং ‘কিরমান’ (এলাকা)-এর সত্তর হাজার লোকের মাঝে, যাদের মুখগুলো হবে হাতুরী পিটানো ঢালের মতো (দেখতে)’। [মুসনাদে আহমদ- ২/৩৩৭]
# সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- قَالَ أَبُو بَكْرٍ : هَلْ بِالْعِرَاقِ أَرْضٌ يُقَالُ لَهَا خُرَاسَانُ ، قَالُوا : نَعَمْ ، قَالَ : فَإِنَّ الدَّجَّالَ يَخْرُجُ مِنْهَا . رواه ابن أبي شيبة في المصنف, كتاب الفتن, ما ذكر في فتنة الدجال: ١٤/١٣٤ رقم ٣٩٤٨٥ تحقيق: محمد بن ابراهيم ; و ذكر المتقي الهندي في كنز العمال: ١٤/٦٨٥ رقم ٣٩٦٨٣ – ‘আবু বকর (সিদ্দিক) রা. জিজ্ঞেস করলেন: ইরাকে কি খুরাসান নামে কোনো এলাকা আছে? লোকেরা বললো: ‘জি (আছে)’। তিনি বললেন: ‘তাহলে দাজ্জাল সেখান থেকেই বেড় হবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ– ১৪/১৩৪ আছার ৩৯৪৮৫; কাঞ্জুল উম্মাল- ১৪/৬৮৫ আছার ৩৯৬৮৩]
# ইবনুল হাইছাম রহ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- ثم قال لي: ممن أنت؟ قال: قلت: من أهل العراق أو قال: من أهل الكوفة . قال: تعرف كوثا؟ قال: قلت: نعم. قال: منها يخرج الدجال . رواه عبد الرزاق في مصنفه: ١١/٣٩٥ رقم ٢٠٨٢٩ تحقيق: حبيب الرحمان ألأعظمي, رجاله كلهم ثقات كما جاء في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ٢/٤٠٩ – ‘…অতঃপর (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন: ‘তুমি কোথাকার লোক’? তিনি বলেন: ‘আমি বললাম: আমি ইরাকের লোক’, (রাবী বলেন:) অথবা বলেছেন: ‘আমি (ইরাকের) কুফা’র লোক’। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ‘তুমি কি কুছ (নামক স্থানটি) চেনো’? তিনি বলেন: ‘আমি বললাম: জি (চিনি)’। তিনি বললেন: ‘ওখান থেকে দাজ্জাল বেড় হবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক– ১১/৩৯০ আছার ২০৮২৯]
ফায়দা: মুহাক্কিকগণের অনেকের মতে, উপরোক্ত হাদিস ও আছার গুলোতে বর্ণিত জায়গাগুলো চোদ্দ’শ বছর আগের ভূমি সীমানা হিসেবে ইরাকের মধ্যে পড়লেও, ঘটনার ক্রমধারায় সেই যায়গাগুলোর সীমানা বর্তমান যুগের ইরানের ভিতরে পড়েছে। [আশরাতুস সা’আহ, ড. ইউসুফ ওয়াবিল: ৩১১ পৃ:] الله اعلم بالصواب
দাজ্জাল সম্পর্কে আরো কিছু হাদিস ও আছার
# আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَأْتِي الْمَسِيحُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ هِمَّتُهُ الْمَدِينَةُ ، حَتَّى يَنْزِلَ دُبُرَ أُحُدٍ ، ثُمَّ تَصْرِفُ الْمَلائِكَةُ وَجْهَهُ قِبَلَ الشَّامِ وَهُنَالِكَ يَهْلِكُ . رواه مسلم في الحج باب صيانة المدينة : ١٣٨٠ ، وأحمد: ٢٧٥٠٨ ، والترمذي في الفتن :٢١٦٩ – ‘মাসিহ (দাজ্জাল) আসবে পূর্বদিক থেকে; তার লক্ষ্য হবে মদিনা। এমনকি সে (ফেরেশতাগণের কারণে মদিনায় ঢুকতে ব্যার্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত) উহূদ (পাহাড়)-এর পশ্চাদেশে অবতরণ করবে। এরপর ফেরেশতাগণ তার মাথাকে শাম-এর দিকে ঘুরিয়ে দিবেন। (ফলে সে শামে চলে যাবে ও ঘটনার এক পর্যায়ে ঈসা আ.-এর হাতে) সেখানে নিহত হবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৩৮০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৭৫০৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৬৯]
# মিহযান বিন আদরা’ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَوْمُ الْخَلاصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاصِ ، يَوْمُ الْخَلاَصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ، يَوْمُ الْخَلاَصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ، ثَلاثًا ، فَقِيلَ لَهُ : وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ؟ قَالَ : يَجِيءُ الدَّجَّالُ فَيَصْعَدُ أُحُدًا فَيَنْظُرُ الْمَدِينَةَ فَيَقُولُ لأَصْحَابِهِ : أَتَرَوْنَ هَذَا الْقَصْرَ الأَبْيَضَ ؟ هَذَا مَسْجِدُ أَحْمَدَ ، ثُمَّ يَأْتِي الْمَدِينَةَ فَيَجِدُ بِكُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلَكًا مُصْلِتًا ، فَيَأْتِي سَبْخَةَ الْحَرْفِ فَيَضْرِبُ رُوَاقَهُ ، ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ ثَلاثَ رَجَفَاتٍ ، فَلا يَبْقَى مُنَافِقٌ وَلا مُنَافِقَةٌ ، وَلا فَاسِقٌ وَلا فَاسِقَةٌ إِلا خَرَجَ إِلَيْهِ ، فَذَلِكَ يَوْمُ الْخَلاصِ . رواه أحمد :١٨٤٩٦ و الحاكم : ٨٧٨٠ و قال : صحيح على شرط مسلم , و وافقه الذهبي , و صححه الألباني في رسالته : قصة المسيح الدجال ص ٨٩ ، وقال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٢/٢٩ و رجاله رجال الصحيح . ، ورواه الطبراني في :٢٢٥٤ عن جابر – ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন), ইয়ামুল খালাস কি (-তা জানো)? ইয়ামুল খালাস, ইয়ামুল খালাস কি (-তা জানো) ? ইয়ামুল খালাস, ইয়ামুল খালাস কি (-তা জানো) ? (এভাবে) তিনবার বললেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল: (ইয়া রাসুলাল্লাহ!) ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন) কি?’ তিনি বললেন: ‘দাজ্জাল আবির্ভূত হয়ে উহূদ (পাহাড়)-এ আরোহন করবে। তারপরে সে (সেখান থেকে) মদিনার দিকে তাকিয়ে (মসজিদে নববী’র দিকে ইংগীত করবে ও) তার সঙ্গিসাথীদেরকে বলবে: ‘তোমরা কি এই সাদা বিল্ডিংটিকে দেখতে পাচ্ছো? এটা হল আহমাদ -এর মসজিদ’। এরপর সে (সেখান থেকে নেমে) মদিনা(র কাছে) আসবে। (এসে) দেখতে পাবে যে, সেখানকার প্রতিটি গলিতে ফিরেশতা অস্ত্রহাতে পাহারারত। তখন সে (উপায়ন্ত না দেখে মদিনা’র পার্শ্ববর্তী একটি) গাছগাছালীর কিনারায় এসে তার রুওয়াক’কে প্রহার করবে। এরপর মদিনা তিন বার প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তখন এমন কোনো মুনাফেক পুরুষ, মুনাফেক নারী, ফাসেক পুরুষ ও ফাসেক নারী বাদ থাকবে না, যে (মদিনা থেকে) বেড় হয়ে তার কাছে না যাবে। এটাই হল ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৮৪৯৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ৮৭৮০; ত্বাবরাণী, হাদিস ২২৫৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ২/২৯]
# হিশাম বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ رَأْسَ الدَّجَّالِ مِنْ وَرَائِهِ حُبُكٌ حُبُكٌ ، وَإِنَّهُ سَيَقُولُ : أَنَا رَبُّكُمْ ، فَمَنْ قَالَ : أَنْتَ رَبِّي افْتُتِنَ ، وَمَنْ قَالَ : كَذَبْتَ ، رَبِّيَ اللَّهُ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ ، فَلَا يَضُرُّهُ ، أَوْ قَالَ : فَلَا فِتْنَةَ عَلَيْهِ . رواه عبد الرزاق في مصنفه, كتاب الجامع, باب الدجال: رقم ٢٠٨٢٨; و أحمد: ١٥٨٢٦ ; و الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٠٨ ; و صححه الألباني في الصحيحة: ٢٨٠٨ – ‘নিশ্চই দাজ্জালের মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে। (সে যখন নিজকে রব/প্রভু দাবী করবে, তখন) যে (তাকে) বলবে: ‘তুমি আমার রব (প্রভু)’, সে (তার) ফিতনায় পড়বে’। আর যে বলবে: ‘তুই (একটা ফিতনাবাজ ভন্ড/প্রতারক/মিথ্যুক! তুই) মিথ্যা বলেছিস, رَبِّيَ اللَّهُ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ – ‘আমার রব হলেন আল্লাহ, আমি তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করি এবং তাঁরই দিকে আমি ফিরে যাবো’, তখন আর সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, অথবা বলেছেন: তার উপরে (দাজ্জালের) কোনো ফিতনা (কার্যকর) হবে না’। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -১১/৩৯৫ হাদিস ২০৮২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৮২৬; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫০৮]
ফায়দা: আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ مِنْ بعْدِكُمْ الْكَذَّاب الْمُضِلَّ ، وَإِنَّ رَأْسَهُ مِنْ بعْدِهِ حُبكٌ حُبكٌ حُبكٌ ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ، وَإِنَّهُ سَيَقُولُ : أَنَا رَبكُمْ ، فَمَنْ قَالَ : لَسْتَ رَبنَا ، لَكِنَّ رَبنَا اللَّهُ ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْهِ أَنَبنَا ، نَعُوذُ باللَّهِ مِنْ شَرِّكَ ، لَمْ يَكُنْ لَهُ عَلَيْهِ سُلْطَانٌ . رواه احمد في المسنده: ١٦/٥٤٠ رقم ٢٣٠٥٢, و صححه الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة : رقم ٢٨٠٨ – ‘নিশ্চই তোমাদের পরে একটি পথভ্রষ্ঠ মিথ্যুক (আবির্ভূত) হবে। আর তার মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে। একথা তিনবার বললেন। আর নিশ্চই অতি শিঘ্রই সে বলবে: ‘আমি তোমাদের (মানবকুলের) রব/প্রভু’। তখন যে (তাকে) বলবে: ‘তুমি আমাদের রব (প্রভু) নও, ‘তুমি (একটা ফিতনাবাজ ভন্ড/প্রতারক/মিথ্যুক!)’, বরং ‘আমাদের রব হলেন আল্লাহ, আমরা তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করি এবং তাঁরই কাছে আমরা ফিরে যাবো, আমরা আল্লাহ কাছে তোমার থেকে পানাহ চাই’, তখন আর সে তার উপরে কোনো (ফিতনার) প্রভাব খাটাতে পারবে না’। [মুসনাদে আহমদ– ১৬/৫৪ হাদিস ২৩০৫২]
# যাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أَخْبَرَتْنِي أُمُّ شَرِيكٍ أَنَّهَا سَمِعَتْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَيَفِرَّنَّ النَّاسُ مِنْ الدَّجَّالِ فِي الْجِبَالِ قَالَتْ أُمُّ شَرِيكٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ الْعَرَبُ يَوْمَئِذٍ قَالَ هُمْ قَلِيلٌ . رواه مسلم في ال صحيح, كتاب الفتن وأشراط الساعة: رقم ٢٩٤٥; و الترمذي: رقم ٣٩٣٠; و احمد: ٦/٤٦٢ – ‘আমাকে উম্মে শারিক রা. বলেছেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছেন: ‘লোকজন অবশ্যই দাজ্জাল থেকে পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিবে’। উম্মে শারিক জিজ্ঞেস করলেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেদিন আরব’রা কোথায় থাকবে’? তিনি বললেন: তারা (সেদিন) সংখ্যায় কম হবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪৫; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৯৩০; মুসনাদে আহমদ- ৬/৪৬২]
# ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ، حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ . رواه أبو داود في سننه, كتاب الجهاد, باب في دوام الجهاد: حديث رقم ٢٤٨٤ , و صححه الالبانى في سلسلة الأحاديث الصحيحة: ٤/٦٠١ رقم ١٩٠٩ ; و أحمد: حديث رقم ١٩٨٩٥ و قال شعيب الارنؤوط: إسناده صحيح على شرط الشيخين ; و الحاكم في المستدرك: ٣/٤٥٠ و قال: صحيح على شرط مسلم و وافقه الذهبي – ‘আমার উম্মতের মধ্যে একটি গোষ্ঠি (জামাআত/দল) সর্বদা হক্বের উপর (প্রতিষ্ঠিত) থেকে (ইসলাম বিরোধীদের সাথে) ক্বিতাল (সমর জিহাদ) করবে। তারা (সর্বদা অদমনীয় থাকবে এবং) যারা তাঁদের বিরুদ্ধে নামবে, তাঁরা তাদের উপরে প্রবল থাকবে। এমনকি তাঁদের শেষভাগের (মুমিনগণ) মাসিহ্ দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৪৮৪; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৯৮৯৫; মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/৪৫০]
ফায়দা: দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে ইমাম মাহদী রা. ও তাঁর অধিনস্ত মুমিন মুজাহীদগণ। الله اعلم بالصواب
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا زِلْتُ أُحِبُّ بَنِي تَمِيمٍ مُنْذُ ثَلاثٍ سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِيهِمْ : هُمْ أَشَدُّ أُمَّتِي عَلَى الدَّجَّالِ ، وَجَاءَتْ صَدَقَاتُهُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ صَدَقَاتُ قَوْمِنَا ، وَكَانَتْ سَبِيَّةٌ مِنْهُمْ عِنْدَ عَائِشَةَ فَقَالَ أَعْتِقِيهَا فَإِنَّهَا مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ . رواه البخاري في العتق باب من ملك من العرب رقيقًا: رقم ٢٥٤٣ ، ومسلم في فضائل الصحابة: ٢٥٢٥، وأحمد: ٨٨٢٥ – ‘(আরবের) বনী তামিম (গোত্রকে) আমি ভালবেসেছি তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে তিনটি কথা শুনে: (১) আমার উম্মতের মধ্যে তারা দাজ্জালের উপর বেশি কঠিন (বোধ) হবে। (২) তাদের সাদাকাহ’র মাল এলে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন: এটা হল আমাদের কওমের সাদাকাহ (যাকাত)। (৩) আয়েশা রা.-এর কাছে তাদের (গোত্রের) একটি দাসী ছিল, রাসুলুল্লাহ ﷺ (আয়েশা’কে) বলেছিলেন: তাকে মুক্ত করে দাও। নিশ্চই সে (আমার পূর্বপুরুষ) ইসমাঈল (আ.)-এর (বংশের) সন্তান’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২৫৪৩; সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৫২৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৮২৫]
# হযরত আওফ বিন মালেক আশযায়ী রা.-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ أَمَامَ الدَّجَّالِ سِنِينَ خَوَادِعَ يَكْثُرُ فِيهَا الْمَطَرُ ، وَيَقِلُّ فِيهَا النَّبْتُ ، وَيُصَدَّقُ فِيهَا الْكَاذِبُ ، وَيُكَذَّبُ فِيهَا الصَّادِقُ ، وَيُؤْتَمَنُ فِيهَا الْخَائِنُ ، وَيُخَوَّنُ فِيهَا الأَمِينُ ، وَيَنْطِقُ فِيهَا الرُّوَيْبِضَةُ ” , قِيلَ وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ : ” مَنْ لا يُؤْبَهُ لَهُ ” . وَبِهِ عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ ، عَنْ أَنَسٍ ، مِثْلَهُ , غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ : ” قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ ؟ قَالَ : الْفُوَيْسِقُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ . أخرجه الطحاوى في “مشكل الآثار : ١/٤٠٥, والبزار ٢٧٤٠ , و الطبراني في “معجمه الكبير”١٢٥/٦٨/١٨ , وفي مسند الشاميين ٤٨ , و الروياني ٥٨٨ -‘নিশ্চই দাজ্জালে (আগমনের) আগে কিছু প্রতারনাপূর্ণ বছর এমন হবে, যখন তাতে অনেক বৃষ্টিপাত হবে, কিন্তু তাতে শস্য-ফলন হবে কম। তখনকার মিথ্যুককে সত্যবাদি বলে গণ্য করা হবে এবং সত্যবাদিকে গণ্য করা হবে মিথ্যুক রূপে। এমনিভাবে তখনকার খেয়ানতকারীকে আমানতদার হিসেবে গণ্য করা হবে, আর আমানতদারকে গণ্য করা হবে খেয়ানতকারী রূপে। সেসময় রুওয়াইবাজাহ’কে কথা বলতে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি – ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন- مَنْ لا يُؤْبَهُ لَهُ -‘‘এমন ব্যাক্তি যার (বাস্তবে আল্লাহ’র দৃষ্টিতে) মূল্য নেই, (যে তার উপযুক্তই নয়)’। আর হযরত আনাস রা.-এর বর্ণনায় আছে: জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি – ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন: الْفُوَيْسِقُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ – ফাসেক (পাপাবিষ্ঠ ও মনুষ্যত্বে পচনধরা সব) ব্যাক্তিরা, যারা সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয়ে কথা বলবে। [শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী-১/৪০৫; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২৭৪০; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরানী-১৮/৬৮/১২৫; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরানী ৪৮; মুসনাদে রুইয়ানী, হাদিস ৫৮৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা ৩৮১৫]
ফায়দা: এই হাদিসে দাজ্জালের আগমনের পূর্বের কিছু ধোকা ও প্রতারনাপূর্ণ বছরগুলোতে আবির্ভূত ‘রুওয়াইবাজাহ’ কারা -সে ব্যাপারে আমরা ‘শেষ জামানার বুদ্ধিজীবী, মিথ্যুক মিডিয়া ও পলিটিশিয়ান সম্পর্কে মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যত বাণী’ -তে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আলোচনাটি পড়ার জন্য আন্ডারলাইন কৃত কথাগুলোর উপরে ক্লিক করুন। الله اعلم بالصواب
# ওমর বিন খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- أَلا وَإِنَّهُ سَيَكُونُ مِنْ بَعْدِكُمْ قَوْمٌ يُكَذِّبُونَ بِالرَّجْمِ وَبِالدَّجَّالِ وَبِالشَّفَاعَةِ وَبِعَذَابِ الْقَبْرِ وَبِقَوْمٍ يُخْرَجُونَ مِنْ النَّارِ بَعْدَ مَا امْتَحَشُوا . رواه أحمد: رقم ١٥٧ و قال أحمد شاكر : إسناده صحيح – ‘শুনে রাখো, নিশ্চই তোমাদের পর এমন গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে (বিবাহিত জেনাকার নর-নারী শাস্তি) ‘রজম’কে, দাজ্জালকে, ‘শাফাআত’কে, ‘কবরের আযাব’কে এবং কঠিন আযাব ভোগের পর একটি গোষ্ঠির দোযখ থেকে বেড় হওয়াকে’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৭]
# আবু দারদাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْف عُصِمَ مِنْ الدَّجَّالِ . رواه مسلم في صلاة المسافرين باب فضل سورة الكهف : ٨٠٩ ، وأبو داود في الملاحم ٣٧٦٥ ، وأحمد ٢١٢٠٥ – ‘যে ব্যাক্তি সূরা কাহফ-এর প্রথম ১০টি আয়াত মুখস্ত করে নিবে, সে দাজ্জাল (-এর ফিতনা) থেকে নাজাত পাবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৮০৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২১২০৫]
ফায়দা: কোনো কোনো রেওয়ায়েতে শেষ দশ আয়াতের কথাও আছে। এজন্য উত্তম হল, সূরা কাহফ-এর প্রথম ১০ আয়াত এবং শেষের ১০ আয়াত মুখস্ত করে নেয়া।
আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنَّ مَعَهُ جَنَّةً وَنَارًا فَنَارُهُ جَنَّةٌ وَجَنَّتُهُ نَارٌ فَمَنِ ابْتُلِيَ بِنَارِهِ فَلْيَسْتَغِثْ بِاللَّهِ وَلْيَقْرَأْ فَوَاتِحَ الْكَهْفِ فَتَكُونَ عَلَيْهِ بَرْدًا وَسَلاَمًا كَمَا كَانَتِ النَّارُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ . رواه ابن ماجه, كتاب الفتن, باب فتنة الدجال وخروج عيسى ابن مريم وخروج يأجوج ومأجوج: رقم ٤٠٧٧ , اسناده ضعيف – ‘আর নিশ্চই তার ফিতনার মধ্যে এও হবে যে, তার সাথে (মনোরম কৃত্রিম) জান্নাত ও (কৃত্রিম) দোযখ থাকবে। তবে তার দোযখটিই হচ্ছে জান্নাত এবং জান্নাতটি হচ্ছে দোযখ। যে ব্যাক্তি তার দোযখ দ্বারা বিপদগ্রস্থ হবে, সে যেন অবশ্যই আল্লাহ’র পানাহ কামনা করে এবং অবশ্যই (সূরা) কাহফ-এর প্রথম (১০টি আয়াত) তিলাওয়াত করে। এতে তার উপরে (দাজ্জালের কৃত্রিম দোয়খের শাস্তি) ঠান্ডা ও আরামদায়ক হয়ে যাবে, যেমনটা ইব্রাহিম (আ.)-এর উপরে আগুনের অবস্থা হয়েছিল’। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৭৭]