রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ নির্বাহী ব্যবস্থা ’য় বিশ্বাস : প্রকাশ্য কুফর, আল্লাহদ্রোহিতা, ইসলাম বিরোধীতা, পথভ্রষ্ঠতা -কেনো ? (১ম পর্ব)
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন]
পূর্বের আলোচনার পরের অংশ নিম্নরূপ>>>
একটি ইসলামী রাষ্ট্রের ‘খলিফা’ হলেন মুসলমানদের মধ্য থেকে নিযুক্ত সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ‘আমীর’ (নেতা), যিনি ‘দ্বারুল ইসলাম (ইসলামী রাষ্ট্র)’-এ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার এবং অধীনস্ত নাগরিকগণের উপরে শরয়ী শাসন ও বিচার কার্য জারি রাখার সর্বোচ্চ ক্ষমতা (Executive Power) রাখেন। নবী দাউদ আ. এই দুই বৈশিষ্টের অধিকারী খলিফা ছিলেন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
“(তারা হল আমার সেই সকল মুমিন বান্দা) যারা (এমন গুণের অধিকারী যে,) যদি তাদেরকে জমিনে শাসন-কর্তৃত্ব (খিলাফত) দেয়া হয়, তাহলে তারা নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং (লোকজনকে আল্লাহ’র নাজিলকৃত শরীয়ত মোতাবেক) মা’রুফ (সৎ বিষয়)-এর নির্দেশ দেয় এবং মুনকার (নাজায়েয ও হারাম বিষয়) থেকে নিষেধ করে”। [সূরা আল-হাজ্জ ৪১]
অর্থাৎ, যে মুসলমানের মধ্যে—– (১) মুসলমানদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ‘আমীর’ (নেতা/শাসক) হওয়া এবং (২) ‘দ্বারুল ইসলাম’-এ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার এবং অধীনস্ত নাগরিকদের উপরে শরয়ী শাসন ও বিচার কার্য জারি রাখার সর্বোচ্চ ক্ষমতা (Executive Power) থাকা —-এই ২টি বৈশিষ্ট/যোগ্যতাগুণ বাস্তবে কার্যকর না থাকবে, সে মুসলমানদের ‘খলিফা’ নয়।
আমি যে এখানে ‘খলিফা’কে মুসলমানদের ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক আমীর (নেতা/শাসক)’ বললাম, একথা বোঝার জন্য আগে এবিষয়টিও জানা জরুরী যে, ইসলাম মুসলমানদেরকে একতাবদ্ধ ভাবে জীবনযাপন করার জোরালো তা’লিম (শিক্ষা) দিয়েছে এবং নির্দেশ দিয়েছে যে, জরুরী করে দিয়েছে, এবং তাদের ছোট জামাআত হোক কি বড় জামাআত -সর্বোপ্রকার জামাআতের একজন আমীর (দলপ্রধান) নির্ধারণ করে নেয়াকে গুরুত্বের সাথে তা’লিম (শিক্ষা) দিয়েছে।
মুসলমানদের যে ‘আমীর’-এর মধ্যে (১) মুসলমানদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ‘আমীর’ (নেতা) হওয়া এবং (২) ‘দ্বারুল ইসলাম’-এ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা ও অধীনস্ত জনগণকে শাসন ও বিচার করার সর্বোচ্চ ক্ষমতা (Executive Power) থাকা — এই দুটি শর্ত পাওয়া না যাবে, তিনি মুসলীম সমাজের ছোট বা বড় জামাআতের সাধারণ আমীর তো হতে পারেন, কিন্তু তাকে ‘দ্বারুল ইসলাম (ইসলামী রাষ্ট্র)’-এর ‘খলিফা (রাষ্ট্রপ্রধান/শাসক)’ বলা যাবে না। কারণ, ইসলামী শরীয়তে বেশ কয়েক স্তরের ‘আমীর’ হতে পারে। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে, মুসলমানদের ছোট থেকে বড় সকল প্রকারের জামাআতের উপরে কাউকে আমীর (দলপ্রধান) বানিয়ে দেয়ার। নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি-
(১) সফরে গুটি কয়েকজনের আমীর (দলপ্রধান/দলনেতা) হওয়া:-
রাসুলুল্লাহ ﷺ মুসলমানদেরকে এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে, যদি তারা নেহায়েত গুটি কয়েকজন মিলেও কোথায় সফর করতে যায় -চাই সেটা কোনো দ্বীনী সফর হোক (যেমন: হজ্জ, উমরা, ইলম শিক্ষা ইত্যাদির উদ্দেশ্যে সফর) কিংবা সেটা কোনো দুনিয়াবী সফর হোক না কেনো (যেমন: কোথাও ঘুরতে যাওয়া, ব্যবসার কাজে যাওয়া ইত্যাদির জন্য), তাহলে তারা যেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে তাদের আমীর (দলপ্রধান) বানিয়ে নেয়। নিম্নে নমুনা স্বরূপ দুটি হাদিস পেশ করছি।
আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- إذا خرج ثلاثة في سفر فليؤمروا أحدهم . رواه أبو داود ٢٦٠٨ و ٢٦٠٩; أبو عوانة في ” صحيحه: ١/١٨; و أبو يعلى الموصلي في ” مسنده : ١/٢٩٥; و اسناده حسن كما جاء في السلسلة الصحيحة: رقم ١٣٢٢ – ‘যখন (তোমাদের মধ্যে কমপক্ষে) তিনজন (ব্যাক্তিও) সফরে বেড় হয়, তখন তারা যেন তাদের (মধ্য থেকে) কাউকে আমীর (দল প্রধান) বানিয়ে নেয়’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৬০৮, ২৬০৯; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১/২৯০; মুসনাদে আবু আউআনাহ- ৪/৫১৪ হাদিস ৭৫৩৯]
ইসলামে এই প্রকারের আমীর (দলপ্রধান)কে সাময়ীক সময়ের জন্য সাধারণ দলপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয় মাত্র এবং সফর শেষ হতেই কিংবা তারও আগে পাষ্পরিক পরামর্শক্রমে প্রয়োজনে এই আমীরত্ব বিলুপ্ত হতে পারে এবং এরপর তাদের মধ্য থেকে আরেকজনকে নতুন ভাবে আমীর (দলপ্রধান) বানাতে শরয়ী দৃষ্টিতে কোনোই বাঁধা থাকে না। এই জাতীয় আমীর (দলপ্রধান)– (১) মুসলমানদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ‘আমীর’ (নেতা)ও যেমন নয়, তেমনি (২) ‘দ্বারুল ইসলাম’-এ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা ও অধীনস্ত জনগণকে শাসন ও বিচার করার সর্বোচ্চ ক্ষমতা (Executive Power)-এর অধিকারীও সে থাকে না।
(২) দ্বীনী কোনো জামাআতের আমীর (দলপ্রধান) হওয়া:
রাসুলুল্লাহ ﷺ দ্বীনের কাজে কোথাও মুসলমানদের কোনো জামাআত’কে পাঠাতে চাইলে, তিঁনি তাদের মধ্য থেকে একজনকে ওই জামাআতের আমীর (দলপ্রধান) বানিয়ে দিতেন। যেমন-
(ক) রাসুলুল্লাহ ﷺ ৯ম হিজরীতে যখন মুসলমানদের বড় একটি জামাআতকে মদিনা থেকে হজ্জ পালনের অনুমতি দিয়ে মক্কায় পাঠান, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.-কে সেই জামাআতের আমীর নিযুক্ত করে দিয়েছিলেন। হুমায়েদ বিন আব্দির রজমান বিন আউফ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রাহ রা. বলেন- بَعَثَنِي أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ في الحَجَّةِ الَّتي أَمَّرَهُ عَلَيْهَا رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ، قَبْلَ حَجَّةِ الوَدَاعِ، في رَهْطٍ، يُؤَذِّنُونَ في النَّاسِ يَومَ النَّحْرِ: لا يَحُجُّ بَعْدَ العَامِ مُشْرِكٌ، وَلَا يَطُوفُ بالبَيْتِ عُرْيَانٌ . رواه مسلم في صحيحه, كتاب الحج , باب لا يحج البيت مشرك ولا يطوف بالبيت عريان وبيان يوم الحج الأكبر : رقم ١٣٤٧ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ (তাঁর) বিদায় হজ্জের পূর্বে(র বছরের) যে হজ্জের মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক (রা.)কে (সেবারের হাজ্জীদের উপরে) আমীর নিযুক্ত করেছিলেন, (সেই হজ্জের) কুরবানীর দিন তিনি আমাকে একদল লোকের কাছে পাঠালেন যারা (নির্দেশক্রমে উপস্থিত) লোকজনের মাঝে এই ঘোষনা দিচ্ছিল যে, ‘(খুব ভালো করে শুনে রাখো), এ বছরের পর আর (কোনো) মুশরেক (ব্যাক্তি) না (বায়তুল্লাহ’র) হজ্জ করতে পারবে, আর না উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহ’র তাওয়াফ করতে পারবে”। [সহিহ মুসলিম, হাদিস– ২/৯৮২ হাদিস ১৩৪৭; সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৬৯, ১৬২২; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৯৪৬; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ২৯৫৭]
(খ) রাসুলুল্লাহ ﷺ মুতাহ যুদ্ধের দিন মুজাহিদগণের একটি জামাআত গঠন করে তাদেরকে জিহাদের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়ার প্রাক্কালে হযরত যায়েদ বিন হারেসাহ রা.-কে উক্ত জামাআতের আমীর (দলপ্রধান/সেনাপতি) বানিয়ে দিয়ে উপস্থিত মুজাহিদগণকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ করেন- فَإِنْ قُتِلَ زَيْدٌ أَوِ اسْتُشْهِدَ فَأَمِيرُكُمْ جَعْفَرٌ، فَإِنْ قُتِلَ أَوِ اسْتُشْهِدَ فَأَمِيرُكُمْ عَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ . أخرجه أحمد في مسنده : ١/٢٠٤، من حديث عبد الله بن جعفر رضي الله عنهما. وصحّحه أحمد شاكر في تحقيقه مسند أحمد: ٣/١٩٢ ، والألباني في «أحكام الجنائز: ٢٠٩، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٦/١٥٧ : قلت : روى أبو داود وغيره بعضه رواه أحمد و الطبراني و رجالهما رجال الصحيح، أخرجه ايضا ألنسائي في السنن الكبرى , كتاب السير , إذا قتل صاحب الراية هل يأخذ الراية غيره بغير أمر الإمام : ٩/٨٦ رقم ٨٨٥٩ – “যদি যায়েদ কতল হয় বা শহিদ হয়ে যায়, তাহলে (জিহাদের ময়দানে) তোমাদের (পরবর্তী) আমীর (দলপ্রধান/সেনাপতি) হবে যা’ফর। সেও যদি কতল হয় বা শহিদ হয়ে যায়, তাহলে তোমাদের আমীর হবে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা”। [মুসনাদে আহমদ- ১/২০৪; সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ী- ৯/৮৬ হাদিস ৮৮৫৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী– ৬/১৫৬]
(গ) এছাড়াও রাসুলুল্লাহ ﷺ দ্বীন ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগ বা তা’লিমের জন্য কোথায়ও কোনো জামাআত পাঠাতে চাইলে তিঁনি তাদের মধ্য থেকে একজনকে সেই জামাআতের আমীর (দলপ্রধান) বানিয়ে দিতেন।
ইসলামী শরীয়ত মতে, এই জাতীয় আমীর (দলপ্রধান)কেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন পর্যন্ত সাময়ীক ভাবে সাধারণ দলপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয় মাত্র এবং উদ্দেশ্য শেষ হতেই এই আমীরত্ব বিলুপ্ত হতে পারে। এই জাতীয় আমীর (দলপ্রধান)– (১) মুসলমানদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ‘আমীর’ (নেতা)ও যেমন নয়, তেমনি (২) ‘দ্বারুল ইসলাম’-এ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা ও অধীনস্ত জনগণকে শাসন ও বিচার করার সর্বোচ্চ ক্ষমতা (Executive Power)-এর অধিকারীও সে থাকে না।
(৩) কোনো অঞ্চল/প্রদেশের আমীর (প্রশাসক/গভর্ণর) হওয়া:
এরা মূলত: মুসলমানদের খলিফা কর্তৃক ইসলামী রাষ্ট্রের আওতাভুক্ত কোনো অঞ্চল/প্রদেশ/শহরের নাগরিকদের উপরে নিযুক্ত প্রশাসক/গভর্ণর পর্যায়ের আমীর; এদেরকে আমেল বলেও অবিহিত করা হয়ে থাকে। খলিফা ভালো মনে করলে এধরনের আমীরকে অপসারণ করে অন্য কাউকে এ দায়িত্বে নিযুক্ত করতে পারেন, আবার ভালো মনে করলে ইসলামী রাষ্ট্রের আওতাভুক্ত অন্য কোনো অঞ্চল/প্রদেশ/শহরের আমীরও তাকে বানিয়ে দিতে পারেন। এমনকি এই ধরনের আমীরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট যোগ্যতাগুণ পর্যাপ্ত থাকলে এবং খলিফা ভালো মনে করলে তাকে একই অঞ্চল/প্রদেশ/শহরে একাধারে আমেল (প্রশাসক/গভর্ণর), কাযী (বিচারক), প্রধান সেনাপতি, প্রধান মুফতী ইত্যাদি হিসেবেও নিয়োগ দিতে পারেন, আবার ভালো মনে করলে অন্য কোনো যোগ্য কাউকে তার সহযোগী হিসেবে এসব পদে নিয়োগ দিতে পারেন। এধরনের অধীনস্ত আমীর’কে মান্য করে চলাও ওয়াজিব। যেমন: রাসুলুল্লাহ ﷺ মুয়ায বিন জাবাল রা.-কে ইয়ামেনের আমেল বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন. যিনি সেখানকার প্রশাসক/গভর্ণর হওয়ার পাশাপাশি কাযী (বিচারক) ও মুফতীও ছিলেন। অথবা যেমন রাসুলুল্লাহ ﷺ আব্দুল্লাহ বিন হুযাফাহ বিন ক্বায়েস বিন আদী রা.’কে একটি জিহাদের আমীর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন।
ইসলামী শরীয়ত মতে, এই জাতীয় আমীর (প্রদেশের প্রশাসক/গভর্ণর)—-(১) মুসলমানদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ‘আমীর’ (নেতা)ও যেমন নয়, তেমনি (২) ‘দ্বারুল ইসলাম’-এ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা ও অধীনস্ত জনগণকে শাসন ও বিচার করার সর্বোচ্চ ক্ষমতা (Executive Power)-এর অধিকারীও সে থাকে না। খলিফা চাইলে এধরনের আমীরকে যে কোনো সময় অপসারণ করতে পারেন এবং তার জন্য খলিফার এই আপসারনের আদেশ মানা ওয়াজিব। কিন্তু এধরনের আমীর যখন ইচ্ছা তখন মুসলমানদের খলিফা/আমীরে-আ’জম’কে অপসারন করার ক্ষমতা রাখেন না। ইসলামী শরীয়ত -খলিফাকে অপসারন করে অন্য কাউকে খলিফা বানানোর বেশ কিছু পূর্বশর্ত দিয়েছে, যেসব শর্ত পাওয়া যাওয়ার ছাড়া কোনো খলিফাকে অপসারন করার অধিকার কারোরই নেই। (এ বিষয়ে সামনে আলোচনা আসছে)।
(৪) ইসলামী রাষ্ট্রের সকল জনগণের উপরে নিযুক্ত আমীর (খলিফা/রাষ্ট্রপ্রধান) হওয়া:
এই পর্যায়ের আমীরকে ‘আমীরে আ’জমও (সর্বোচ্চ আমীর/সর্বোচ্চ দলপ্রধান) বলা হয়ে থাকে; অর্থাৎ মুসলমানদের উপরে নিযুক্ত সবচেয়ে বড় বা উচ্চস্তরের আমীর (নেতা ও শাসক)। এই পর্যায়ের আমীরের মধ্যেই—– (১) মুসলমানদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ‘আমীর’ (নেতা/শাসক) হওয়া এবং (২) ‘দ্বারুল ইসলাম’-এ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার এবং অধীনস্ত নাগরিকদের উপরে শরয়ী শাসন ও বিচার কার্য জারি রাখার সর্বোচ্চ ক্ষমতা (Executive Power) থাকা —-এই ২টি বৈশিষ্ট/যোগ্যতাগুণ একই সাথে বিধ্যমান থাকে বলেই তিনি মুসলমানদের ‘খলিফা’। এখানে আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে উপরোক্ত এই ৪র্থ প্রকারের আমীর মহোদয়কে নিয়েই।
আবু হুরায়রাহ রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمْ الْأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ . رواه بخارى فى صحيحه, كتاب أحاديث الأنبياء, باب ما ذكر عن بني إسرائيل: ٤/١٦٩ رقم ٣٤٥٥; و مسلم فى صحيحه, كتاب الإمارة، باب الأمر بالوفاء ببيعة الخلفاء، الأول فالأول: ٣/١٤٧٢ رقم ١٨٤٢ – “বনী ইসরাঈলের সিয়াসাতী (রাজনৈতিক/পলিটিকাল) দায়িত্ব পালন করতেন তাদের নবীগণ। যখনই কোনো নবী মৃত্যুবরণ করতেন, তাঁর খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) হতেন (তাঁর পরবর্তী আরেকজন) নবী। আর নিশ্চই আমার পর কোনো নবী নেই। শিঘ্রই (আমার পর রাজনৈতিক/পলিটিকাল দায়িত্ব পালনের জন্য) খলিফাগণ হবেন, পরে (ভাল-মন্দ খলিফা’র সংখ্যা) অনেক হবে”। [সহিহ বুখারী- ৪/১৬৯ হাদিস ৩৪৫৫; সহিহ মুসলীম– ৩/১৪৭২ হাদিস ১৮৪২; আস-সুন্নাহ, ইমাম খাল্লাল-১/৭৭ হাদিস ৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৭৯৪৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৮৭১; দালায়েলুন নাবুওত, বাইহাকী- ৬/৩৩৮]
# ইরবাজ বিন সারিয়া রা. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন– اوصيكم بتقوى الله والسمع والطاعة وان كان عبدا حبشيا فإنه من يعش منكم يرى بعدي اختلافا كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين وعضوا عليها بالنواجذ وإياكم ومحدثات الأمور فان كل محدثة بدعة وان كل بدعة ضلالة . أخرجه احمد فى المسند: ٤/١٢٦ رقم ١٧١٨٤ و قال شعيب الأرنؤوط : حديث صحيح ورجاله ثقات; رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ: رقم ٤٦٠٧ و صححه الألباني في مشكاة المصابيح برقم ١٦٥ و السلسلة الصحيحة:٢/٦١٠، وَ اَلتِّرْمِذِيُّ رقم: ٢٦٧٦ وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ; و ابن ماجه في سننه: رقم ٤٤; الطحاوي في مشكل الآثار:٣/٢٢٣ و سند الحديث جيد ; البغوي في شرح السنة: ١/٢٠٥ و إسناده حسن ; الطبراني فى المعجم الكبير: ١٨/٢٤٦ رقم ٦١٧ ; ابن حبان فى الصحيح : رقم٥ قال شعيب الأرناؤوط: إسناده صحيح ; وقال الجورقاني في الأباطيل والمناكير: هذا حديث صحيح ثابت مشهور: ١/٤٧٢ رقم ٢٨٨; وقال الحافظ ابن حجر في موافقة: هذا حديث صحيح رجاله ثقات: ١/١٣٦-١٣٩; قال ابن عبدالبر فى جامع بيان العلم: هذا حديث ثابت صحيح: ٢/١١٦٤ رقم ٢٣٠٥ ; قال المنذري في الترغيب والترهيب: لا ينزل عن درجة الحسن وقد يكون على شرط الصحيحين أو أحدهما: ١/٦٠; قال الذهبي في سير أعلام النبلاء: إسناده صالح: ١٧/٤٨٢; قال ابن القيم في أعلام الموقعين: حسن، إسناده لا بأس به: ٤/١١٩ – ‘তোমাদেরকে আমি উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে ভয় করে চলার এবং (তোমাদের উপর নিযুক্ত আমীরের নির্দেশ) শোনা ও মানার -চাই সে কোনো হাবশী গোলামই হোক (না কেনো)। নিশ্চয় অামার (ইন্তেকালের) পরে তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি জীবিত থাকবে সে অনেক দ্বন্দ্ব-বিরোধ দেখতে পাবে। (তখন) তোমারা আমার সুন্নাহ’কে এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়েরাশেদীনের সুন্নাহ’কে তোমাদের উপর অপরিহার্য করে নিবে এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকে (কোনো মতেই ছাড়বে না)। আর তোমরা (দ্বীন ইসলামের মধ্যে আমদানী হওয়া) নতুন নতুন বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা, নিশ্চই (দ্বীনের মধ্যে সুন্নাহ বহির্ভূত) প্রত্যেক নতুন-বিষয় বিদআহ এবং নিশ্চই প্রত্যেক বিদআহ পথভ্রষ্ঠতা’। [মুসনাদে আহমাদ- ৪/১২৬ হাদিস ১৭১৮৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৬০৭; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৭৬; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫; সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস ৪৪; শারহু মাআনিল আছার, ইমাম তাহাবী- ৩/২২৩; শারহুস সুন্নাহ, ইমাম বাগাভী- ১/২০৫; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরানী- ১৮/২৪৬ হাদিস ৬১৭; মুসতাদরাকে হাকীম- ১/৯৫-৯৭]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-سَيَكُونُ بَعْدِي خُلَفَاءُ يَعْمَلُونَ بِمَا يَعْلَمُونَ، وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ، ثُمَّ يَكُونُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلَفَاءُ يَعْمَلُونَ بِمَا لَا يَعْلَمُونَ، وَيَفْعَلُونَ مالا يؤمرون، فمن أنكر عليهم فقد بريء، ولكن من رضي وتابع . رواه ابن حبان في الصحيح,: رقم ٦٦٦٠ و قال الأرنؤوط: إسناده صحيح على شرط الشيخين; و البيهقي في السنن: ٨/١٥٧ و في الدلائل: ٦/٥٢١; و أبو يعلى في المسند: رقم ٥٩٠٢ – ‘শিঘ্রই আমার (ইন্তেকালের) পর খলিফা’গণ হবে, যারা -(দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে) যা জানে সেই অনুযায়ী তারা আমল করবে এবং তাদেরকে (আল্লাহ কিংবা আমার পক্ষ থেকে) যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী কাজ করবে। অতঃপর তাদের পরে (এমন সব) খলিফারা (মুসলীম শাসকরা) হবে, যারা (এমন এমন) আমল করবে যে ব্যাপারে (ইসলামী শরীয়ত কী বলেছে সে সম্পর্কে তারা কোনো) জ্ঞান রাখে না এবং (এমন এমন সব মন্দ) কাজ করবে যে ব্যাপারে তাদেরকে (আল্লাহ কিংবা আমার পক্ষ থেকে কোনো) নির্দেশ দেয়া হয়নি। সুতরাং, যে ব্যাক্তি (তাদের মন্দ’কে চিনতে পেরে ওসব কাজের) উপর অসন্তুষ্ট হয়েছে/অস্বীকৃতি প্রদর্শন করেছে সে নিরাপত্তা পেয়েছে। কিন্তু যে ব্যাক্তি (তাদের মন্দ’কে চিনতে পেরেও অপছন্দ করেনি, বরং মনে মনে রাজি) খুশি হয়েছে ও (সেই মন্দের) অনুগত্য করেছে (সে অপরাধী সাব্যস্থ হয়ে গেছে)’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/৪৩ হাদিস ৬৬৬০; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৮/১৫৭; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৬/৫২১; মুসনাদে আবু ইয়া’লা, হাদিস ৫৯০২]
# হযরত যাবের বিন সামুরাহ রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন – سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَكُونُ اثْنَا عَشَرَ أَمِيرًا فَقَالَ كَلِمَةً لَمْ أَسْمَعْهَا فَقَالَ أَبِي إِنَّهُ قَالَ كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ . صحيح البخاري: رقم ٧٢٢٣ ; سنن الترمذي:١/٥٠١, كتاب أبواب الفتن، باب ما جاء في الخلفاء، رقم الحديث ٢٢٢٣– ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: (আমার উম্মতের মধ্যে) বার জন আমীর হবে’। এরপর তিনি কিছু বললেন যা আমি শুনতে পেলাম না। তখন আমার আব্বা বললেন, তিনি ﷺ বলেছেন: তাদের সকলে কুরায়শ (বংশ) থেকে হবে’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭২২৩; সুনানে তিরমিযী- ১/৫০১ হাদিস ২২২৩] আবার অরেক হাদিসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يكون من بعدي اثنا عشر خليفة . اخرجه البخاري فى الصحيح, كتاب الأحكام، باب الاستخلاف: ١/٨١ رقم الحديث ٧٢٢٢ ; سنن الترمذي:١/٥٠١, كتاب أبواب الفتن، باب ما جاء في الخلفاء، رقم الحديث ٢٢٢٣ ; تاريخ بغداد : ١٤/٣٥٣ رقم ٧٦٧٣– ‘আমার পর বার জন খলিফা হবে’। [সহিহ বুখারী- ১/৮১ হাদিস ৭২২২; সুনানে তিরমিযী- ১/৫০১ হাদিস ২২২৩; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ১৪/৩৫৩ হাদিস ৭৬৭৩]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ يَعْصِنِي فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الْأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي، وَمَنْ يَعْصِ الْأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِي . صحيح مسلم, كتاب الإمارة , باب وجوب طاعة الأمراء في غير معصية وتحريمها في المعصية: رقم ١٨٣٥; سنن النسائي, كتاب البيعة, الترغيب في طاعة الإمام: رقم ٤١٩٣ و كتاب الاستعاذة, الاستعاذة من فتنة المحيا: رقم٥٥١٠; سنن ابن ماجه, كتاب الجهاد, باب طاعة الإمام: رقم ٢٨٥٩; مسند أحمد: ٢/٢٥٣ رقم ٧٣٨٦ , ٢/٢٧٠ رقم ٧٦٠٠; مسند أبي عوانة, كتاب الأمراء: ٤/٤٠١ رقم ٧٠٩٠-٧٠٩٦; شعب الأيمان للبيهقى: ٩/٤٠٩ رقم ٦٩٦٤ – ‘যে আমার অনুগত্য করলো, সে মূলত: (আমাকে মানা সম্পর্কিত আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালনের মাধ্যমে প্রকারন্তে) আল্লাহ’র অনুগত্য করলো। আর যে আমার অবাধ্য হল, সে মূলত: (আমাকে মানা সম্পর্কিত আল্লাহ তাআলার নির্দেশের অবাধ্য হওয়ার মাধ্যমে প্রকারন্তে) আল্লাহ’র অবাধ্য হল। আর যে আমীর -এর অনুগত্য করলো, সে মূলত: (আমীর’কে মানা সম্পর্কিত আমার নির্দেশ পালনের মাধ্যমে প্রকারন্তে) আমার অনুগত্য করলো। আর যে আমীরের অবাধ্য হল, সে মূলত: (আমীর’কে মানা সম্পর্কিত আমার নির্দেশের অবাধ্য হওয়ার মাধ্যমে প্রকারন্তে) আমার অবাধ্য হল’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৮৩৫; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৪১৯৩, ৫৫১০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৮৫৯; মুসনাদে আহমদ- ২/২৫৩ হাদিস ৭৩৮৬, ২/২৮০ হাদিস ৭৬০০; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ- ৪/৪০১ হাদিস ৭০৯০-৭০৯৬; শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ৯/৪০৯, হাদিস ৬৯৬৪]
# হযরত উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَتَكُونُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ قَالُوا أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لَا مَا صَلَّوْا . رواه مسلم, كتاب الإمارة, باب وجوب الإنكار على الأمراء فيما يخالف الشرع وترك قتالهم ما صلوا ونحو ذلك: رقم ١٨٥٤; سنن الترمذي, أبواب الفتن / باب / حديث رقم ٢٢٦٥ و صححه الالبانى; سنن أبي داود, كتاب السنة / باب في قتل الخوارج / حديث رقم ٤٧٦٠ –‘শিঘ্রই (তোমাদের মুসলমানদের উপর কিছু) আমীর’রা হবে। (তাদের কাজ কারবার এমন হবে যে,) তোমরা তাদের (কিছু বিষয়ের) প্রশংসা করবে এবং (কিছু বিষয়’কে) অপছন্দ করবে। যে ব্যাক্তি (তাদের) মন্দ’কে চিনতে পেরে অপছন্দ করেছে সে নিরাপত্তা পেয়েছে। কিন্তু যে ব্যাক্তি (তাদের মন্দ’কে চিনতে পেরেও অপছন্দ করেনি, বরং মনে মনে রাজি) খুশি হয়েছে ও (সেই মন্দের) অনুগত্য করেছে (সে অপরাধী সাব্যস্থ হয়ে গেছে)। লোকেরা বললো: (এর পরেও কি) আমরা কি তাদের সাথে কিতাল (জিহাদ) করবো না? তিনি বললেন: না, (কিতাল করবে না) -যাবৎ তারা নামায আদায় করে’। [সহিহ মুসলীম– ৬/২৪ হাদিস ১৮৫৪; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২৬৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৭৬০]
# হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ ، فَإِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا ، فَمَاتَ عَلَيْهِ إِلَّا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً . صحيح مسلم, كِتَاب الْإِمَارَةِ, الأَمْرِ بِلُزُومِ الْجَمَاعَةِ عَنْدَ ظُهُورِ الْفِتَنِ: رقم ١٨٥١; صحيح بخارى, كتاب الفتن, باب قول النبي صلى الله عليه وسلم سترون بعدي أمورا تنكرونها: رقم ٧٠٥٣ – ‘যে (মুসলমান) তার আমীরের মধ্যে কিছু (দেখে) অপছন্দ করে, সে যেন অবশ্যই তার উপর সবর করে। এমন কেউ নেই নেই, যে সুলতান (ইমাম/খলিফা/আমীরের অধীনতা) থেকে এক বিঘত পরিমাণও বেড়িয়ে যায়, তারপর সেই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে অথচ সে জাহেলিয়াতের মড়া মড়ে না’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৮৫১; সহিহ বুখারী, হাদিস ৮০৫৩]
আয়আয বিন হাম্মার রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-وَ أَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ … . رواه مسلم : ٢٨٦٥; و عبد الرزاق في المصنف: ١١/١٢١ رقم ٢٠٠٨٨; و البيهقي في السنن الكبرى: ١٠/١٤٩ رقم ٢٠١٦١; و احمد في مسند احمد: ٤/١٦٢ … আর জান্নাতবাসী (হবে -এমন) তিন প্রকারের ব্যাক্তি রয়েছে, (যার মধ্যে একজন হল এমন) সুলতান (যিনি) মুক্বসীত (ইনসাফগার-ন্যায়পরায়ন) মুতাসাদ্দিক্ব (কথা ও কাজে ন্যায়নিষ্ঠ) মুআফফাক (মানুষকে হেদায়েতের পথে পরিচালনাকারী)…..’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৮৬৫; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ১১/১২১ হাদিস ২০০৮৮; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ১০/১৪৯ হাদিস ২০১৬১; মুসনাদে আহমদ- ৪/১৬২]
# আয়েশা রা. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– أَيُّمَا امْرَأَةٍ نُكِحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ وَلِيِّهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَلَهَا الْمَهْرُ بِمَا اسْتَحَلَّ مِنْ فَرْجِهَا فَإِنِ اشْتَجَرُوا فَالسُّلْطَانُ وَلِىُّ مَنْ لاَ وَلِىَّ لَهُ . رواه الترمذي: ١١٠٢ و قَالَ : هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ; و أبو داود: ٢٠٨٣ , وابن ماجه: ١٨٧٩; و الحاكم: ٢٤٢٥١; و وابن حبان: ١٢٤٨ و صححه الألباني في إرواء الغليل: رقم ١٨٤٠ و و في صحيح أبي داود: رقم ١٨٧٩; وقال الحافظُ في الفتح الباري- ٩/١٨٤ : و صحّحه أبو عوانه وابنُ خزيمة ، وابنُ حبان والحاكم -‘যে (মুসলীম) নারীই তার ওলীর অনুমতি ব্যতিরেকে বিয়ে করবে, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। তবে (তার ওই কথিত স্বামী) যদি তার সাথে সহবাস করে ফেলে, তাহলে তার জন্য থাকবে (ওই দেন)মোহর, যার বিনিময়ে সে তার (কথিত স্ত্রীর) লজ্জাস্থানকে হালাল করেছিল। পরে যদি উভয়(পক্ষের) মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে (সেক্ষেত্রে) যার কোনো ওলী (অভিভাবক) নেই, সুলতানই হবে তার ওলী’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ১১০২; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২০৮৩; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ১২৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৮৭৯; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ২৩২৫১]
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لا ظِلَّ إِلا ظِلُّهُ : الإِمَامُ الْعَادِلُ …. أخرجه البخاري في صحيحه : ٢/١٤٣ رقم ٦٦٠ و ١٣٢٣ و ٦٨٠٦ ; و مسلم صحيحه : ٧/١٦٩ برقم ١٧١٢; النسائي في سننه: رقم ٥٣٩٥; الترمذي في سننه: رقم ٢٣٩١ – ‘সাত (প্রকারের ব্যাক্তি রয়েছে), যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এমন এক দিনে তাঁর (রহমতের) ছায়ার ভিতরে ছায়াচ্ছন্ন রাখবেন, যে দিন তাঁর (রহমতের) ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না। (তাদের একজন হল) الإِمَامُ الْعَادِل – ‘ইনসাফগার-ন্যায়পরায়ন ইমাম’…..’। [সহিহ বুখারী- ২/১৪৩ হাদিস ৬৬০, ১৩২৩, ৬৮০৬ মুসলীম-৭/১৬৯ হাদিস ১৭১২; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৫৩৯৫; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৩৯১]
# তারিক বিন শিহাব রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الْغَرْزِ، أَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ. سنن النسائي, كتاب البيعة, فضل من تكلم بالحق عند إمام جائر, حديث رقم ٤٢٠٩, و قال المنذري في الترغيب : إسناده صحيح , وقاله النووي فى رياض الصالحين: رواه النسائي بإسناد صحيح; مسند أحمد: ٤/٣١٤ رقم ١٨٨٤٧ و قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح رجاله ثقات رجال الشيخين – রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর (এক) পা (বাহনের) জিন/পা’দানীর মধ্যে রেখেছেন -এমতাবস্থায় এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলো: (ইয়া রাসুলাল্লাহ!) কোন জিহাদ সর্বত্তম। তিনি বললেন: ‘জালেম সুলতান (খলিফা/আমীর/রাষ্ট্রপ্রধান)-এর কাছে কালেমায়ে-হক্ব (পেশ করা)’। [সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৪২০৯; মুসনাদে আহমদ- ৪/৩১৪ হাদিস ১৮৮৪৭, ১৮৮৫০; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৮/৩৩৮ হাদিস ৮০৮১]
উপরোক্ত এই বৈশিষ্ট ৪টি যদি আপনার মধ্যে ১০০% থাকে, তাহলে আপনি একজন ১০০% খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষবাদী ব্যাক্তি, আর আপনার মধ্যে এসব বৈশিষ্টের মধ্য থেকে যে বৈশিষ্টটির ঘাঁটতি যে মাত্রায় থাকবে, আপনি ততটুকু অসৎ অ-খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষবাদী।
এক কথায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমে ইসলামী খিলাফতের কাল্লা (গলা), হাত-পা, শরীর সব ছেটে ফেলে দিয়ে খিলাফতের মৃতদেহের জানাযা পড়ে মাটিচাপা দিয়ে তারপরই কেবল একটি খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র অস্তিত্ব লাভ করতে পারে!!!
এর পরের কয়েকটি পেজে উপরোক্ত এই ৪টি বৈশিষ্ট’কে সামনে আলাদা আলাদা করে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন]