কোন্ মুসলমান কী ধরনের কথা/আচরণ প্রকাশ করলে সুরা মায়েদা’র ৪৪ নং আয়াত, তথা- وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ – “((আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না, ওরাই হল কাফের))”-এই আয়াত মোতাবেক কাফের/মুরতাদ হিসেবে গণ্য হবে, তা জানার আগে একথা বোঝা জরুরী যে, একজন মুসলমান কর্তৃক ‘আল্লাহ তাআলা’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা না করার ঘটনা’ তিন ভাবে ঘটতে পারে। যথা-
(ক) কোনো মুসলমানের (মুজতাহিদ ও মুহাক্কিক আলেমের) ইজতিহাদী ভূলের কারণে,
(খ) কোনো মুসলমানের কুফরীয়ে ছুগরা (ছোট কুফর) সংঘটিত করার কারণে,
(গ) কোনো মুসলমানের কুফরীয়ে কুবরা (বড় কুফর) সংঘটিত করার কারণে।
সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুফাসসিরীন, আইম্মায়ে মুস্তাহিদীন এবং মুহাক্কেক ফুকাহায়ে কেরাম থেকে উপরোক্ত আয়াত- وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ – ‘((আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার করে না, তারাই হল কাফের))’ -সহ এই জাতীয় বিভিন্ন আয়াতে কারিমার যে সকল ব্যাখ্যা ও ফিকহী বিধান বর্ণিত হয়েছে, তার খোলাসা হল, এখানে ইমান নষ্টকারী-কুফর’র -যা একজন মুসলমানকে ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করে কাফের/মুরতাদ বানিয়ে দেয় -তার সম্পর্ক মূলত: উপরোক্ত শেষোক্ত এই ৩ নম্বর কারণটির সাথে, অর্থাৎ ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি)’-এর সাথে; ইজতিহাদী ভুল কিংবা ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর)’-এর সাথে নয়। নিম্নে আমরা এই তিনটি প্রকার নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু ধারনা দিচ্ছি, যাতে পাঠকের জন্য বিষয়টি বোঝা সহজ হয়।
(ক) ইজতিহাদী ভূলের কারণে:
ইজতিহাদ বলা হয় কুরআন ও সুন্নাহ’য় মাহের (বৎপত্তি অর্জনকারী ও সুদক্ষ) আলেম কর্তৃত কোনো বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিভিন্ন শরয়ী বিধিবিধান উদ্ভাবন করাকে। [এব্যাপারে দলিল সহ আরো বিস্তারিত বোঝার জন্য ক্লিক করুন এখানে]।
যে মুসলমান কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শরীয়ত বিষয়ক ইলমে মাহের (বৎপত্তি অর্জনকারী ও সুদক্ষ) নয়, তার জন্য (মুফতী’র রূপ ধারন করে) শরয়ী কোনো মাসআলা’র ব্যাপারে মতামত বা ফয়সালা দান করা যেমন নাজায়েয ও গুনাহ’র কাজ, তেমনি তার জন্য রাষ্ট্রীয় কাযী (বিচারক) পদে সমাসীন হয়ে শরয়ী রায় দেয়াও নাজায়েয ও গুনাহ’র কাজ। কিন্তু, যে মুসলমান কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শরীয়ত বিষয়ক ইলমে মাহারাত (বৎপত্তি ও সুদক্ষতা) অর্জনকারী আলেম থেকেও তো ফতোয়া দান কিংবা শরয়ী বিচারের রায় দানের ক্ষেত্রে ভুল হয়ে যেতে পারে। যেমন, কুরআন-সুন্নাহ’য় কোনো ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো ফয়সালা দেয়া না থাকলে সেক্ষেত্রে উক্ত মুহাক্কেক মাহের আলেম তাঁর পূর্ণ যোগ্যতা খাটিয়ে সেই মাসআলা’র ব্যাপারে কোনো শরয়ী বিধান ইজতিহাদী করে বের করতে গিয়ে ভুলও করতে পারেন। মুহাক্কেক মাহের আলেম কর্তৃক এজাতীয় কোনো শরয়ী মত/রায়/ফয়সালা দানের ক্ষেত্রে ভুল করে ফেলাকে খোদ আল্লাহ তাআলা যে উপরোক্ত সূরা মায়েদা’র ৪৪ নং আয়াতের মধ্যে-তো গণ্য করেনই নি, তার প্রমাণ হল তাঁর প্রেরিত রাসুল মুহাম্মাদ ﷺ -এর এই হাদিস। আমর ইবনুল আস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন– إِذَا حَكَمَ الحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ . رواه البخاري في صحيحه , كتاب الاعتصام بالكتاب والسنة , باب أجر الحاكم إذا اجتهد فأصاب أو أخطأ : ٩/١٠٨ رقم ٧٣٥٢، و أخرجه مسلم في صحيحه , كتاب الأقضية , باب بيان أجر الحاكم إذا اجتهد فأصاب أو أخطأ : ٣/١٣٤٢ رقم ١٧١٦ – “যখন কোনো হাকিম (শাসক/বিচারক) ইসতিহাদ করে ফয়সালা দেন ও ফয়সালাটি সঠিক হয়, তখন তিনি (আমলনামায়) দুটি পুরষ্কার পান। আর তিনি যখন ইসতিহাদ করে ফয়সালা দেন কিন্তু ফয়সালাটা ভুল হয়ে যায়, তখন তিনি একটি পুরষ্কার পান”। [সহিহ বুখারী– ৯/১০৮ হাদিস ৭৩৫২; সহিহ মুসলীম– ৩/১৩৪২ হাদিস ১৭১৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৫৭৪; মুসনাদে আহমাদ-৪/১৯৮] এক্ষেত্রে সহিহ ফয়সালা দানকারী মুজতাহিদের দুটি সওয়াবের মধ্যে- একটি সওয়াব সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য পূর্ণোদ্যমে চেষ্টা চালানোর কারণে এবং আরেকটি সওয়াব হল- সত্যে উপনীত হতে পারার কারণে। অপরদিকে মুজতাহিদের পক্ষ থেকে ভুল ফয়সালা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও একটি সওয়াব -সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য পূর্ণোদ্যমে চেষ্টা চালানোর কারণে, আর তার ভুলটি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। [শারহুল মুসলীম, ইমাম নববী- ১২/১৪] সুতরাং, ইজতিহাদী ভূলকে কুফর-এর মধ্যে শামিল করতে পারে কেবল মুর্খরাই বা জেদী মুনাফেকরা কিংবা খারেজী মনমানুষিকতার লোকরা।
(২) কুফরীয়ে ছুগরা (ছোট কুফরী)-র কারণে:
‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর) হল এমন কুফর, যার কারণে কোনো মুসলমান একজন (পাপী) মুসলীম হিসেবেই গণ্য হয়, কিন্তু সে ইসলামী মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে কাফের/মুরতাদ হয়ে যায় না। বস্তুত: এক্ষেত্রে ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর)কে ‘ছোট’ বলা হয়েছে মূলত: ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর)-এর বড় হওয়ার দিকটির সাথে তুলনা করে, অন্যথায় আল্লাহ’র সাথে ‘ছোট কুফর’ও কেয়ামতের দিন সর্বনাশের কারণ হতে পারে (অনেকের জন্য হবেও)। নিম্নে ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর)কে উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।
(ক) শাসকের ‘কুফরীয়ে সুগরা’ (ছোট কুফর): যদি খলিফা (সুলতান/ ইমাম/আমিরুল মু’মিনীন/শাসক) দেশের মধ্যে মুসলমানদের জন্য আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার-ফয়সালা করাকে ‘জরুরিয়তে দ্বীন’ (দ্বীনের অপরিহার্য অংশ)-এর অন্তর্ভূক্ত বলে আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করে ও এই উদ্দেশ্যে দেশে শরয়ী বিচার ব্যবস্থা জারি রাখে এবং বিচার করার জন্য কুরআন সুন্নাহ’র প্রমাণিত কোনো একটি ইজমায়ী বিধানকেও পরিবর্তন/কাটছাট/হেয়-প্রতিপন্ন না করে, কিন্তু ইমানী দূর্বলতার কারণে পার্থিব কোনো স্বার্থে শরয়ী আইনের সুযোগ ও ফাঁক-ফোকড়কে কৌশলে কাজে লাগিয়ে মুসলমানদের সাথে বিভিন্ন ভাবে বিচার কার্যে অন্যায়-অবিচার ও জুলুম করে থাকে, তাহলে তার এরকম অন্যায়-অবিচার ও জুলুম মুলক বিচারকে বলা হবে ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর)। এমন কুফরের কারণে সেই শাসক একজন (পাপী) মুসলীম হিসেবেই গণ্য হবে, কিন্তু সে ইসলামী মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে কাফের/মুরতাদ হয়ে যাবে না।
উদাহরণ স্বরূপ: মনে করুন, কোনো মুসলীম শাসক ইসলামী শরীয়াহ আইন ও বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসী এবং সে তা দেশে ঠিকই জারি রেখেছেন এবং কুরআন সুন্নাহ’র প্রমাণিত কোনো একটি ইজমায়ী বিধানকেও পরিবর্তন/কাটছাট/হেয়-প্রতিপন্ন করে না, কিন্তু সে তার ইমানী দূর্বলতার কারণে পার্থিব কোনো স্বার্থে ইসলামী শরীয়াহ আইনের বিভিন্ন সুক্ষ সুযোগ ও ফাঁক-ফোকড়কে কৌশলে কাজে লাগিয়ে নিরপরাধ রফিককে ফাঁসানোর জন্য গোপনে তার বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র ও বিভিন্ন আনুসঙ্গিক প্রমাণাদি রেখে দিয়ে রফিককে কয়েকজন সাক্ষ্যির সামনে শাসক ও দেশের বিদ্রোহী হিসেবে প্রমাণ করলো এবং রফিকের উপরে দেশে চালু থাকা ইসলামী শরীয়াহ আইনের আলোকেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করলো, আর দলিল হিসেবে কুরআনের আয়াত দিলো, সাথে এও বললো যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ، يُرِيدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ، أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ، فَاقْتُلُوهُ .صحيح مسلم, كتاب الإمارة, باب حكم من فرق أمر المسلمين وهو مجتمع: رقم ١٨٥٢; مسند أبي عوانة, كتاب الإمارة : ٤/٤١٢ رقم ٨١٤٠ – “তোমাদের (মুসলমানদের) শাসন (ব্যবস্থা) সার্বিকভাবে কোনো একজন ব্যাক্তির উপর (ন্যাস্ত) থাকাবস্থায় (অন্য) যে ব্যাক্তি তোমাদের কাছে এসে তোমাদের শাসনের লাঠিকে ভেঙ্গে দিতে চায়, অথবা তোমাদের জামাআতের মাঝে ফাটল ধরাতে চায়, তোমরা তাকে (তথা দ্বিতীয় দাবীদারকে) হত্যা করে ফেলো”। [সহিহ মুসলীম- ৩/১৪৭৯ হাদিস ১৮৫২; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ- ৪/৪১২ হাদিস ৮১৪০; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৮/১৬৯ হাদিস ১৬১৮১] অথবা, দলিল দিলো যে, আরফাযাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- إِنَّهُ سَتَكُونُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ ، فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيعٌ ، فَاضْرِبُوهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ . أخرجه مسلم في صحيحه , كتاب الإمارة , باب حكم من فرق أمر المسلمين وهو مجتمع : ٣/١٤٧٩ رقم ١٨٥٢ – “নিশ্চই (আমার পরে) অচিরেই অনেক ফিতনা ফাসাদ হবে। তখন এই উম্মাহ (শরীয়ত সম্মত কোনো ইমাম/খলিফার অধীনে) একতাবদ্ধ (জামাআত হিসেবে) থাকাবস্থায় যে ব্যাক্তি উম্মাহ’র শাসন-ব্যবস্থায় ফাটল/বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইবে, তোমরা তরবারী দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে -সে যে-ই হোক না কেনো”। [সহিহ মুসলীম- ৩/১৪৭৯ হাদিস ১৮৫২; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১০/৪৩৭ হাদিস ৪৫৭৭; মুসনাদে আহমদ- ৪/২৬১; সুনানে আবু দাউদ- ৭/১৩৯ হাদিস ৪৭৬২; সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ী- ৩/৪২৯ হাদিস ৩৪৭১; মুসতাদরাকে হাকিম- ২/১৫৬]
উপরোক্ত উদাহরণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করুন, (১) উক্ত শাসক দেশে আল্লাহ’র আদেশকৃত ইসলামী শরিয়াহ আইন দিয়ে শাসন ও বিচার ব্যবস্থা জারি রেখেছে এবং (২) সে শরীয়াহ আইন দিয়ে শাসন ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে কোনো রকম পরিবর্তন/কাটছাট ঘটায়নি বা হেয়-প্রতিপন্ন করেনি। কিন্তু এখানে উক্ত শাসকের অপরাধ হল, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ – “((নিশ্চই আল্লাহ (তাআলা তোমাদেরকে) আদল-ইনসাফের নির্দেশ দেন))”-এর মধ্যে আল্লাহ তাআলা যে আদল–ইনসাফ (ন্যায়বিচার) করতে বলেছেন, সেই শাসক আল্লাহ’র এই আদেশকে লঙ্ঘন করে সামান্য দুনিয়ার স্বার্থে রফিককে অন্যায্য ভাবে ফাঁসিয়ে তাকে অন্যায্য ভাবে মৃত্যুদন্ড দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ পাপের প্রতিফল আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন সেই শাসককে দিবেন। কিন্তু শাসক কর্তৃক আল্লাহ’র বিধাকে এভাবে লঙ্ঘন করাটাও যদিও-বা একটি কুফর বটে, কিন্তু এই কুফর’টি ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর) হিসেবে গণ্য এবং এতদসত্ত্বেও সে একজন (জালেম ও পাপী) মুসলমান হিসেবেই গণ্য করা হবে; সে ইসলামী মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে কাফের/মুরতাদ হয়ে যাবে না।
[যারা চোখ-কান খোলা রাখেন তারা জানেন যে এযুগেও র্যাব-পুলিশ’রা দেশের আইনকে লঙ্ঘন না করে বরং দেশের আইনের অধিনেই নিজেদেরকে রেখে ও প্রমাণাদি মিটিয়ে ফেলে এজাতীয় এমন সব ধুরন্ধর কৌশলের আশ্রয়ে নিরপরাধ নাগরিককে হত্যা করে বা বিকলাঙ্গ করে দেয় যে, যা আদালতের পক্ষে প্রমাণ করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না যে, ওই র্যাব-পুলিশ’রা খুনি/অপরাধি আর নিহত ব্যাক্তি নিরপরাধ। কিংবা তাদের মতো র্যাব-পুলিশ’দের অপরাধ প্রমাণিত হলেও শুধু একারণে তাদেরকে একেবারে রাষ্ট্রোদ্রোহি গণ্য করা হয় না, বরং দেশের নাগরিক গণ্য করেই তাদের অপরাধ মাফিক দন্ড দেয়া হয়। এটাতো গোটা পৃথিবীতেই স্বিকৃত। একই ভাবে, খলিফা/শাসকের উপরোক্ত উদাহরণে বর্ণিত কোনো অপরাধের কারণে সে একেবারে ইসলামী মিল্লাত থেকেই বের হয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে যায়না, বরং একজন অপরাধী পাপী মুসলমান হিসেবে গণ্য হয়। বিষয়টি একদম পরিষ্কার।
(খ) বিচারকের ‘কুফরীয়ে সুগরা’ (ছোট কুফর): যদি কাযী (বিচারক) রাষ্ট্রে মুসলমানদের জন্য আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার-ফয়সালা করাকে ‘জরুরিয়তে দ্বীন’ (দ্বীনের অপরিহার্য অংশ)-এর অন্তর্ভূক্ত বলে আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করে এবং জন্য কুরআন সুন্নাহ’র প্রমাণিত কোনো একটি ইজমায়ী বিধানকেও পরিবর্তন/কাটছাট/হেয়-প্রতিপন্ন না করে, কিন্তু ইমানী দূর্বলতার কারণে পার্থিব কোনো স্বার্থে শরয়ী আইনের সুযোগ ও ফাঁক-ফোকড়কে কৌশলে কাজে লাগিয়ে মুসলমানদের সাথে বিভিন্ন ভাবে বিচার কার্যে অন্যায়-অবিচার ও জুলুম করে থাকে, তাহলে তার এরকম অন্যায়-অবিচার ও জুলুম মুলক বিচারকে বলা হবে ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর)। এমন কুফরের কারণে সেই কাযী (বিচারক) একজন (পাপী) মুসলীম হিসেবেই গণ্য হবে, কিন্তু সে ইসলামী মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে কাফের/মুরতাদ হয়ে যাবে না।
উদাহরণ স্বরূপ: মনে করুন, দেশের মুসলীম কাযী (বিচারক) আন্তরিক ভাবে ইসলামী শরীয়াহ আইন ও বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসী এবং সে তা দেশে জারি রাখার বিপক্ষে রয়েছেন মর্মে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত এবং সে কুরআন সুন্নাহ’র প্রমাণিত কোনো একটি ইজমায়ী বিধানকেও পরিবর্তন/কাটছাট/হেয়-প্রতিপন্ন করে না, কিন্তু সে তার ইমানী দূর্বলতার কারণে পার্থিব কোনো স্বার্থে ইসলামী শরীয়াহ আইনের বিভিন্ন সুক্ষ সুযোগ ও ফাঁক-ফোকড়কে কৌশলে কাজে লাগিয়ে, —যেমন: সে যদি আসল অপরাধীর কাছ থেকে ঘুষ/উৎকোচ নিয়ে অপরাধীকে দন্ড থেকে মুক্তি দেয়, অথবা অপরাধীকে বাঁচানোর গরজে কোনো নিরপরাধীকে দন্ড দেয়, কিংবা ক্ষমতাসীনদের কথা মানতে গিয়ে নিরপরাধীকে দন্ড দেয় ইত্যাদি—তাহলে সেই কাযী (বিচারক) আল্লাহ’র বাণী- إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ – “((নিশ্চই আল্লাহ (তাআলা তোমাদেরকে) আদল-ইনসাফের নির্দেশ দেন))”-এই আদেশকে লঙ্ঘন করে কোনো নিরপরাধের সাথে আদল–ইনসাফ (ন্যায়বিচার) না করার কারণে এ পাপের প্রতিফল আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন ওই কাযী (বিচারক) দিবেন। কিন্তু কাযী (বিচারক) কর্তৃক আল্লাহ’র বিধাকে এভাবে লঙ্ঘন করাটাও যদিও-বা একটি কুফর বটে, কিন্তু এই কুফর’টি ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর) হিসেবে গণ্য এবং এতদসত্ত্বেও সে একজন (জালেম ও পাপী) মুসলমান হিসেবেই গণ্য করা হবে; সে ইসলামী মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে কাফের/মুরতাদ হয়ে যাবে না।
উপরোক্ত উদাহরণের ন্যায় বিচার-ফয়সালা দান করার ক্ষেত্রে এজাতীয় ‘কুফরীয়ে ছুগরা’ (ছোট কুফর) সম্পাদনকারী খলিফা (শাসক)/কাযী (বিচারক)-কে করেই সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে- وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ – “((আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না, ওরাই হল কাফের))” –এর ব্যাখ্যায় নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: إنه ليس بالكفر الذي يذهبون إليه ، إنه ليس كفرا ينقل عن الملة ، كفر دون كفر . أخرجه الحاكم في المستدرك على الصحيحين : ٢/٣١٣ ، و قال صحيح الإسناد و وافقه الذهبي ، المروزي في تعظيم قدر الصلاة: ٢/٥٢١ ; و البيهقي في السنن الكبرى: ٨/٢٠ ; و ابن عبد البر في التمهيد: ٤/٢٣٧ ; ابن أبي حاتم في التفسيره: ٤/١١٤٣ ; و كما ال الترمذي في السننه: ٥/٢١ – ‘এটা এমন কুফর নয় যা তাদেরকে (দ্বীন থেকে বেড় করে) নিয়ে যায়। এটা এমন কুফর নয় যা (কোনো মুসলমানকে মুসলীম) মিল্লাত থেকে বেড় করে দেয়। এটা (ইমান নষ্টকারী বড়) কুফর (নয়, বরং তা) থেকে (তুলনামুলক) ছোট কুফর (যা সম্পাদনের দ্বারা সে পাপী ও অপরাধী হয় বটে, কিন্তু ইসলামী মিল্লাত থেকে বের হয়ে মুরতাদ হয়ে যায় না)’। [মুসতাদরাকে হাকিম- ২/৩১৩; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৮/২০; আত-তামহিদ, ইবনু আব্দিল বার- ৪/২৩৭; তাফসিরে ইবনু আবি হাতেম- ১/১১৪৩ হাদিস ৬৪৩৪; তা’জিমু কাদরিস সালাত, ইমাম মুরুজী- ২/৫২১]
কোন্ কোন ক্ষেত্রে ‘কুফরীয়ে-আকবর (বড় কুফর)’ হবে -তার নমুনা:-
(ক) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি তার এই মত’কে কথা/আচরণ/কাজ দ্বারা পরিষ্কার করে প্রকাশ করে দেয় যে, সে কুরআন-সুন্নাহ’র আইন দিয়ে বিচারে বিশ্বাসী নয়, বরং বিচার না করায় বিশ্বাসী, তাহলে তাহলে-তো এটা কোনো সন্দেহ ছাড়াই ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দিয়ে বিচার না করা’র ব্যাপারে তার পরিষ্কার ইনকার/অস্বীকৃতির জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে যাওয়া মুরতাদ/কাফের হিসেবে গণ্য।
(খ) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি কুরআন সুন্নাহ’য় প্রমাণিত কোনো একটি ইজমায়ী বিধানের স্থলেও অন্য কোনো বিধান (চাই আগেকার আসমানী কিতাবের কোনো মানসুখ হওয়া বিধান হোক বা অন্য কারো বানানো বিধান) দিয়ে মুসলমানদের বিচার করাকে হালাল/বৈধ বলে বিশ্বাস করে এবং তা তার কথা বা আচরণ দ্বারা পরিষ্কার করে প্রকাশ করে, তাহলে এটা তার ওই বিধানের ক্ষেত্রে ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দিয়ে বিচার না করা’র ব্যাপারে তার পরিষ্কার ইনকার/অস্বীকৃতির প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে গিয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে গেছে মর্মে গণ্য।
উদাহরণ: যেমন, যে কোনো মুসলীম বালেগ পুরুষ/নারী যদি বিবাহিত হয়েও কারো সাথে ব্যাভিচার করে এবং চারজন সাক্ষ্যির চাক্ষুস দর্শনের মাধ্যমে শরয়ী ভাবে বিচারকের কাছে তার ব্যাভিচার প্রমাণিত হয়, তাহলে তার শরয়ী শাস্তি হল ‘রজম’ (পাথর মেড়ে ছঙ্গেছাড় করা), যা বহু সহিহ হাদিস ও উম্মাহ’র মুতাওয়াতির আমল দ্বারা প্রমাণিত এবং এব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সা.-এর জামানা থেকে গোটা মুসলীম উম্মাহ’র মধ্যে ইজমা চলে আসছে।
এখন মুসলীম শাসক/বিচারক যদি উপরোক্ত ক্ষেত্রে প্রমাণিত রজমের শাস্তির স্থলে জেনেবুঝে নিজের বা অন্য কারো রচিত বিধান কার্যকর করাকে বৈধ মনে করে কার্যকর করে, তাহলে তার এই আচরণ আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করতে প্রকাশ্য অস্বীকৃতির জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। তার অস্বীকৃতর প্রমাণ আরো প্রকট আকারে প্রকাশ পাবে যদি মুমিনরা ওই শাসক/বিচারককে শরয়ী আইন দিয়ে বিচার করতে বাধ্য করতে চায়, আর সেই শাসক/বিচারক তা উল্টো না মানার উপর জোর ধরে বসে বা অস্বীকার করে বা বাঁধার সৃষ্টি করে। এসকল আচরণ তার তার প্রকাশ্য কুফরীয়ে আকবরের প্রমাণ।
(গ) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি জেনেবুঝে আগেকার আসমানী কিতাবের কোনো মানসুখ হওয়া বিধানকে কিংবা যে কারো বানানো বিধানকে (নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপর নাজিল হওয়া) আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান বলে চালায় বা তা দিয়ে বিচার করাকে বৈধ মনে করে, তাহলে সেটা তার ওই বিধানের ক্ষেত্রে ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দিয়ে বিচার না করা’র ব্যাপারে তার পরিষ্কার ইনকার/অস্বীকৃতির প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে গিয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে গেছে মর্মে গণ্য।
(ঘ) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি কুরআন সুন্নাহ’য় প্রমাণিত কোনো একটি ইজমায়ী বিধানের ক্ষেত্রেও এই মত পোষন করে যে, আল্লাহ বা তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ ﷺ ওই বিধানের ক্ষেত্রে সামান্যতম কোনো অবিচার/বেইনসাফী/অন্যায্যতা’র পরিচয় দিয়েছেন এবং এজন্য সে ওই বিধানের পরিবর্তে অন্য কারো কোনো বিধানকে অধিক ন্যয়ানুগ/ইনসাফপূর্ণ/ন্যায্য বলে বিশ্বাস করে তা দিয়ে বিচার করাকে হালাল/বৈধ মনে করে অথবা সেকথা তার জবান বা আচরণ দ্বারা পরিষ্কার প্রকাশ পায়, তাহলে সেটা তার ওই বিধানের ক্ষেত্রে ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দিয়ে বিচার না করা’র ব্যাপারে পরিষ্কার ইনকার/অস্বীকৃতির প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে গিয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে গেছে মর্মে গণ্য।
উদাহরণ স্বরূপ: যারা বিশ্বাস করে যে, শরীয় বিবাহ ও তালাক আইন, নারী-পুরুষের উত্তরাধিকার আইন, ফরয পর্দা আইন, রাষ্ট্রপ্রধান পদে নারী-পুরুষের ক্ষমতায়ন আইন ইত্যাদি ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’য় ইজমায়ী ভাবে প্রমাণিত বিভিন্ন বিধান সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ অবিচার/বেইনসাফী/অন্যায্যতা/বৈষম্যতা’র পরিচয় দিয়েছেন এবং এজন্য উল্লেখীত ওই বিধানগুলোকে বাতিল করে তদস্থলে অমুক অমুক অধিক ন্যয়ানুগ/ইনসাফপূর্ণ/ন্যায্য বিধান রচনা করা উচিত, তাদের এহেন পরিষ্কার মত বা আচরণের বহিঃপ্রকাশ তাদেরকে ইসলামী মিল্লাতের সীমা থেকে বেড় করে মুরতাদ/কাফের বানিয়ে দিবে।
(ঙ) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি জেনেবুঝে আল্লাহ’র কোনো নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করাতে প্রকাশ্যে বাঁধার সৃষ্টি করে, তাহলে সেটা তার ওই বিধানের ক্ষেত্রে ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দিয়ে বিচার না করা’র ব্যাপারে তার পরিষ্কার ইনকার/অস্বীকৃতির প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে গিয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে গেছে মর্মে গণ্য।
(চ) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি জেনেবুঝে আল্লাহ’র কোনো নাজিলকৃত বিধানকে নিয়ে অবমাননাকর/তুচ্ছ-তাচ্ছিল্লতামূলক কথা বলে বা আচরণ প্রদর্শন করে, তাহলে সেটা তার ওই বিধানের সাথে পরিষ্কার কুফরী (ইনকার/অস্বীকৃতি)র প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে গিয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে গেছে মর্মে গণ্য।
(ছ) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি জেনেবুঝে আল্লাহ’র কোনো নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করার বিরোধীতায় নামে, তাহলে সেটা তার ওই বিধানের ক্ষেত্রে ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দিয়ে বিচার না করা’র ব্যাপারে তার পরিষ্কার ইনকার/অস্বীকৃতির প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে গিয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে গেছে মর্মে গণ্য।
(জ) কোনো মুসলমান (চাই শাসক হোক বা বিচারক হোক কিংবা সাধারণ মুসলমানই হোক, সে) যদি জেনেবুঝে আল্লাহ’র কোনো নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করাকে নিষিদ্ধ করে দেয়, তাহলে সেটা তার ওই বিধানের ক্ষেত্রে ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দিয়ে বিচার না করা’র ব্যাপারে তার পরিষ্কার ইনকার/অস্বীকৃতির প্রমাণ। বিধায়, এটা তার ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি), যার কারণে সে মুসলীম মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে গিয়ে মুরতাদ/কাফের হয়ে গেছে মর্মে গণ্য।
এজাতীয় ‘কুফরীয়ে কুবরা’ (বড় কুফর/অস্বীকৃতি) সম্পাদনকারী খলিফা/কাযী’র দিকে ইঙ্গিত করেই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ – ‘আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার করে না, তারাই হল কাফের’ -এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: من جحد ما أنزل الله فقد كفر ، ومن أقر به ولم يحكم فهو ظالم فاسق . أخرجه ابن جرير الطبري: ١٠/٣٥٥ رقم ١٢٠٦٣, إسناده جيد, ابن أبي طلحة لم يسمع من ابن عباس ، لكنه جيد في الشواهد – ‘আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, যে ব্যাক্তি (সেই বিধান দিয়ে বিচার করতে) ইনকার/অস্বীকার করেছে সে (ইসলামী মিল্লাহ থেকে বেড়িয়ে যাওয়া) কাফের হয়ে গেছে। আর যে তা (আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান ও জরুরীয়দে দ্বীন রূপে) স্বীকার করে নিয়েছে বটে, কিন্তু (পার্থিব স্বার্থে কৌশলের আশ্রয়ে আল্লাহ’র বিধান দিয়ে) বিচার ফয়সালা করলোনা সে জালেম (অন্যায়কারী-অবিচারক, সে) ফাসেক (পাপীষ্ট/বদকার মুসলীম)’। [তাফসীরে তাবারী- ১০/৩৩৫ আছার ১২০৬৩]
ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (মৃ: ৩১০ হি:) রহ. উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা পর্যায়ে বলেছেন: وأولى هذه الأقوال عندي بالصواب قول من قال : نزلت هذه الآيات في كفار أهل الكتاب ، لأن ماقبلها وما بعدها من الآيات ففيهم نزلت ، وهم المعنيون بها ، وهذه الآيات سياق الخبر عنهم ، فكونها خبرا عنهم أولى . فإن قال قائل : فإن الله تعالى ذكره قد عم بالخبر بذلك عن جميع من لم يحكم بما أنزل الله ، فكيف جعلته خاصا ؟ قيل إن الله تعالى عم بالخبر بذلك عن قوم كانوا بحكم الله الذي حكم به في كتابه جاحدين ، فأخبر عنهم أنهم بتركهم الحكم ـ على سبيل ماتركوه ـ كافرون . وكذلك القول في كل من لم يحكم بما أنزل الله جاحدا به هو بالله كافر ، كما قال ابن عباس ، لأنه بجحوده حكم الله بعد علمه أنه أنزله في كتابه – ‘এ ব্যাপারে মুফাসসিরেনে কেরাম থেকে যতগুলো ব্যাখ্যা এসেছে তার মধ্যে আমার কাছে সব থেকে যথার্থ ব্যাখ্যা হল, এই আয়াতটি ‘আহলে কিতাব’দের কাফেরদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। কারণ আয়াতগুলোর আগা-গোড়ায় তাদের কথাই বলা হয়েছে। তাই, তা নাজিলও হয়েছে তাদের ব্যাপারে। আর তারাও সে কথা বুঝতো। এসব আয়াতের ভিত্তিই-তো গঠন করা হয়েছে তাদের খবরাখবর নিয়ে। এজন্য, আয়াতগুলোতে তাদের অবস্থা ব্যাক্ত করা হয়েছে বলাটাই অগ্রগণ্য। কিন্তু কেউ যদি বলে যে, আল্লাহ তাআলা তাদের এসব কথা উল্লেখ করেছেন মূলতঃ এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে তাদের সকলের কথা বোঝানোর জন্য যারা আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না, তাহলে সেটাকে আপনি কিভাবে আহলে (কিতাবদের জন্য নাজিল হয়েছে মর্মে) সীমাবদ্ধ করে নিচ্ছেন? (এর উত্তরে) তাদেরকে বলা হবে যে, আল্লাহ তাআলা এখানে ওই জাতির কর্মকান্ডের খরব দিচ্ছেন যারা -আল্লাহ তাঁর কিতাব (তাওরাত)-এ যেসকল বিধান নাজিল করেছিলেন- তারা (সে সকল বিধানের মধ্যে অনেক) বিধান (প্রয়োগ)-এর ব্যাপারে অস্বীকৃতি/বৈরীতা প্রদর্শন করেছিল। এখানে তাদের ব্যাপারে খবর দেয়া হচ্ছে যে তারা (আল্লাহ’র ওই সকল) বিধানকে পরিত্যাগ করেছিল -যে পথে (তাদের সময়কার) কাফেররা পরিত্যাগ করেছিল। একথাটি তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই প্রযোগ্য, যে আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার ফয়সালা কর তে অস্বীকার/ইনকার করে তারা সকলেই আল্লাহ সাথে কুফরী করেছে, যেমনটা ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। কারণ সে আল্লাহ’র বিধান (দিয়ে বিচার করতে) অস্বীকার/ইনকার করেছে একথা জানার পরও যে, আল্লাহ তাঁর কিতাবে ওই বিধান নাজিল করেছেন।...[তাফসীরে তাবারী- ১০/৩৫৮]
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন: نُسَخُ هذه التوراة مبدلة لا يجوز العمل بما فيها، ومن عمل اليوم بشرائعها المبدلة والمنسوخة فهو كافر – ‘এই পরিবর্তীত তাওরাত মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে। এতে যা আছে তার উপর আমল করা (কোনো মুসলমানের জন্য) জায়েয নয়। যে ব্যাক্তি আজ এই পরিবর্তীত ও মানসুখ হওয়া বিধিবিধানের উপর আমল করবে সে কাফের’। [মাজমুউল ফাতওয়া, ইবনে তাইমিয়্যাহ- ৩৫/২০০] ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন-وقد جاء القرآن وصح الإجماع بأن دين الإسلام نسخ كل دين كان قبله، وأن من التزم ما جاءت به التوراة والإنجيل، ولم يتبع القرآن فإنه كافر، وقد أبطل الله كل شريعة كانت في التوراة والإنجيل وسائر الملل، وافترض على الجن والإنس شرائع الإسلام، فلا حرام إلا ما حرمه الإسلام، ولا فرض إلا ما أوجبه الإسلام. اهـ – ‘কুরআনুল কারিম এবং সহিহ ইজমা দ্বারা একথা সাবেত হয়েছে যে, দ্বীন ইসলাম তাঁর পূর্ববর্তী সকল দ্বীনকে মানসুখ (রহিত) করে দিয়েছে। এখন কেউ যদি তাওরাত ও ইঞ্জিলে (যে সকল বিধিবিধান) যা এসেছে তা মানাকে অপরিহার্য-অত্যাবশ্যক করে নেয়, আর এদিকে কুরআনকে না মেনে চলে তাহলে নিশ্চই সে কাফের। আল্লাহ তাআলা তাওরাত ও ইঞ্জিলের গোটা শরীয়তকে বাতিল করে দিয়েছেন; ওগুলো পরিত্যাজ্য। তিনি সকল জ্বিন ও ইনসানের জন্য দ্বীন ইসলামকে মানা ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং ইসলাম যা হারাম করেছে তা ছাড়া আর কোনো হারাম নেই এবং ইসলাম যা মানা ওয়াজেব (আবশ্যক) করে দিয়েছে তাছাড়া আর কিছু মানা আবশ্যক নয়’। [আহকামু আহলিয যিম্মাহ, ইবনুল কাইয়্যেম পৃ: ৫৩৩]
কুরআনকে পরিত্যাগ করে তদস্থলে মানসুখ হওয়া আগের জামানার কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিল (যা বর্তমানে তার আগের অবস্থাতেও সংরক্ষিত নেই, বরং তাতে সময়ে সময়ে ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা হয়েছে) -এসব দিয়ে বিচার করা জায়েয ও বৈধ বলে বিশ্বাস করলে যদি কাফের হয়ে যায়, তাহলে ওই ব্যাক্তি সম্পর্কে আপনার কি মত, যে এই আকীদা পোষন করে যে, পার্লামেন্টে বা বিচারালয়ে কুরআনী আইনের কোনো স্থান থাকতে পারে না? এমন বিশ্বাসকারী-তো নিঃসন্দেহে আরো বড় কাফের।
ইমাম ইবনে কাসির রহ. উপরোক্ত সূরা মায়েদার ৫০ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন- ينكر تعالى على من خرج عن حكم الله المُحْكَم المشتمل على كل خير، الناهي عن كل شر وعدل إلى ما سواه من الآراء والأهواء والاصطلاحات، التي وضعها الرجال بلا مستند من شريعة الله، كما كان أهل الجاهلية يحكمون به من الضلالات والجهالات، مما يضعونها بآرائهم وأهوائهم، وكما يحكم به التتار من السياسات الملكية المأخوذة عن ملكهم جنكزخان، الذي وضع لهم اليَساق وهو عبارة عن كتاب مجموع من أحكام قد اقتبسها عن شرائع شتى، من اليهودية والنصرانية والملة الإسلامية، وفيها كثير من الأحكام أخذها من مجرد نظره وهواه، فصارت في بنيه شرعًا متبعًا، يقدمونها على الحكم بكتاب الله وسنة رسوله صلى الله عليه وسلم.ومن فعل ذلك منهم فهو كافر يجب قتاله، حتى يرجع إلى حكم الله ورسوله صلى الله عليه وسلم فلا يحكم سواه في قليل ولا كثير – ‘আল্লাহ তাআলা এখানে সেইসকল লোকদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, যারা আল্লাহ’র সুস্পষ্ট হুকুম ও বিধিবিধান থেকে বের হয়ে গেছে, অথচ ওগুলোর সবটাই কল্যানে ব্যবহারের জন্য এবং সকল অকল্যান থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য (নাজিল করা হয়েছিল)। বস্তুতঃ আল্লাহর আইন ও বিধিবিধান হল ন্যায় ও সুবিচারমন্ডিত যা মানুষের এমনসব খেয়ালখুশি ও মনগড়া আচার ও নিয়মনীতি থেকে মুক্ত যা তারা তৈরী করে নেয় আল্লাহর শরীয়তকে কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই। এরকমই ছিল জাহেলী যুগের লোকজন; তারা যে সব আইন রচনা করতো সেগুলো ছিল একেকটা পথভ্রষ্ঠতা ও মুর্খতা, কারণ তারা আইন রচনা করতো তাদের নিজেস্ব খাহেশাতপূণ মত ও চিন্তা দিয়ে। এরকম (মনগড়া) আইন-কানুনই চলতো তাতার গোষ্ঠিদের রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক পর্যায়েও, আর এসব আইনের হোতা ছিল তাদের রাষ্ট্রপ্রধান চেংগিস খান। সে তাদের জন্য রচনা করেছিল اليَساق (আল-ইয়াসাক) নামক সংবিধান; এটা ছিল বিভিন্ন বিধিবিধান সম্বলিত একটি বই, যা ইহুদী ধর্ম, খৃষ্টান ধর্ম, ইসলাম ধর্ম সহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির আইন কানুন থেকে নিবার্চন করে রচনা করা হয়েছিল, যার অনেক বিধানই ছিল তার মতবাদ ও প্রবৃত্তির সংমিশ্রণে গঠিত। এটা তার অনুসারীদের মাঝে একটি গ্রহনযোগ্য সংবিধানরূপে পরিগণিত হয়েছিল এবং তারা একে আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসুলুল্লাহ সা.-এর বিধিবিধানের চাইতেও প্রাধান্যযোগ্য ও অগ্রগণ্য বলে মনে করতো। যে এধরনের কাজ করবে সে কাফের। যতক্ষন পযন্ত তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধানের দিকে ফিরে না আসবে, ততক্ষন পযন্ত তাদের সাথে কিতাল (স্বসস্ত্র জিহাদ) চালিয়ে যাওয়া ওয়াজিব। অল্প হোক চাই বেশি – (কোনো অবস্থাতেই তাদের এজাতীও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন দিয়ে) বিচার করা জায়েয নয়’। [তাফসীরে ইবনে কাসির- ৩/১৩১]
ইমাম ইবনে কাসির রহ. আরো বলেছেন-من ترك الشرع المحكّم المنـّزل على محمد خاتم الأنبياء عليه الصلاة والسلام وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر ، فكيف بمن تحاكم إلى الياسق وقدمها عليه ، ومن فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين ‘(মানুষের মাঝে) বিচার ফয়সালা করার জন্য সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সা.-এর উপর যে শরীয়ত নাজিল হয়েছে, যে ব্যাক্তি তা পরিত্যাগ করে এবং (তদস্থলে) অন্যান্য মানসুখ (রহিত) হওয়া শরয়ী বিধিবিধান দিয়ে বিচার-ফয়সালা করে, সে কাফের হয়ে যায়। তাহলে তার কি অবস্থা, যে ব্যাক্তি (তাতারদের রাষ্ট্রপ্রধান চেংগিস খানের বানানো) আল-ইয়াসাক (الياسق নামক সংবিধান-এর বিধিবিধান) দিয়ে বিচার-ফয়সালা করতে যায় এবং তার ভিত্তিতে বিচার-ফয়সালাও করে? যে ব্যাক্তি এমন কাজ করে সে মুসলীম উম্মাহ’র সর্ববাদিসম্মত ক্রমে কাফের হয়ে গেছে’। [আল বিদায়্যাহ ওয়ান নিহায়্যাহ, ইবনে কাসির- ১৩/১১৩]
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন: ولا ريب أن من لم يعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله على رسوله فهو كافر; ومن استحل أن يحكم بين الناس بما يراه هو عدلا من غير اتباع لما أنزل الله فهو كافر؛ فإنه ما من أمة إلا وهي تأمر بالحكم بالعدل؛ وقد يكون العدل في دينها، ما رآه أكابرهم، بل كثير من المنتسبين إلى الإسلام، يحكمون بعاداتهم التي لم ينْزلها الله، كسوالف البوادي، وكأوامر المطاعين في عشائرهم، ويرون أن هذا هو الذي ينبغي الحكم به، دون الكتاب والسنة، وهذا هو الكفر – ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তাঁর রাসুলের উপর যা নাজিল করেছেন যে ব্যাক্তি তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করার আক্বীদা পোষন করে না, সে কাফের। এমনি ভাবে যে ব্যাক্তি (আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান বাদ দিয়ে তদস্থলে) নিজের মত দিয়ে বিচার ফয়সালা করাকে হালাল মনে করে, সে নিজকে ন্যায়বিচারক মনে করলেও -আল্লাহ যা নাজিল করেছেন- তা না মানার কারণে সে কাফের। কারণ (মুসলীম) উম্মাহ’র এমন কেউ নেই যে (বিচারক হিসেবে আল্লাহ’র বিধান দিয়ে) ন্যায়বিচার করতে আদিষ্ট নয়। আর ন্যায়বিচার তো রয়েছে দ্বীন (মানা)র মধ্যে; তার মুরুব্বিদের মত মতো চলার মধ্যে নয়। বরং ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত (মুসলমান বলে দাবীদার) বহু লোক (যারা শাসন/বিচার কার্যের সাথে যুক্ত তারা) তাদের (এমন এমন) অভ্যস্ত (রীতিনীতি ও মত পথের আলোকে) বিচার ফয়সালা করে, যার একটাও আল্লাহ’র নাজিলকৃত (অনুমোদিত বিধান) নয়। তারা মনে করে যে এসব দিয়েই বিচার ফয়সালা করা উচিৎ; কুরআন সুন্নাহ দিয়ে নয়। এটা কুফরী’। [মিনহাযুস সুন্নাহ, ইবনে তাইমিয়্যাহ- ৫/১৩০]
ইমাম ইবনে হাযাম রহ. লিখেছেন-فإن كان يعتقد أن لأحد بعد موت النبي صلى الله عليه وسلم أن يحرم شيئا كان حلالا إلى حين موته عليه السلام، أو يحل شيئا كان حراما إلى حين موته عليه السلام، أو يوجب حدا لم يكن واجبا إلى حين موته عليه السلام، أو يشرع شريعة لم تكن في حياته عليه السلام، فهو كافر مشرك حلال الدم والمال حكمه حكم المرتد ولا فرق -‘কেউ যদি এই আকীদা পোষন করে যে, নবী মুহাম্মাদ সা.-এর মৃত্যু পর্যন্ত যে জিনিস হালাল ছিল, তাঁর মৃত্যুর পর তা এখন হারাম হতে পারে, কিংবা তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত যে জিনিস হারাম ছিল, তা এখন হালাল হতে পারে, অথবা (যদি বিশ্বাস করে যে, শরীয়তে) এমন কোনো ‘হদ্’-কে (ওয়াজিব হিসেবে নতুন করে) এঁটে দেয়া যেতে পারে যা তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ওয়াজিব ছিল না (তথা শরীয়ত জরুরী ও অত্যাবশ্যক সাব্যস্থ করেনি), অথবা (যদি বিশ্বাস করে যে,) এমন কোনো শরীয়ত (বিধিবিধান) চালু কার যেতে পারে যা তাঁর জীবিত থাকা কালিন বিদ্যমান ছিল না, তাহলে সে ব্যাক্তি (ইসলামী শরীয়তকে অস্বীকারকারী ও প্রত্যাখ্যান কারী) কাফের, (এবং অন্য কাউকে বিধানদাতা-শরীয়তদাতা হিসেবে বিশ্বাসী একজন অংশিবাদী) মুশরেক। (সে মুরতাদ হওয়ার কারণে) তাকে (শরয়ী আদালতের মাধ্যমে) কতল করা হালাল এবং একজন মুরতাদের ধনসম্পদের ব্যাপারে যে বিধান সেই একই বিধান তার ধনসম্পদের ব্যাপারেও; তাতে কোনো তফাত নেই। [আল ইহকাম, ইবনে হাযাম- ১/৭৩]
ইবনে হাযাম রহ. আরো লিখেছেন–وأما من ظن أن أحدا بعد موت رسول الله صلى الله عليه وسلم ينسخ حديث النبي صلى الله عليه وسلم ويحدث شريعة لم تكن في حياته صلى الله عليه وسلم فقد كفر وأشرك وحل دمه وماله ولحق بعبدة الأوثان، لتكذيبه قول الله تعالى: {اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا}، وقال تعالى: {ومن يبتغ غير الإسلام دينا فلن يقبل منه وهو في الآخرة من الخاسرين}، فمن ادعى أن شيئا مما كان في عصره صلى الله عليه وسلم على حكم ما ثم بدل بعد موته فقد ابتغى غير الإسلام دينا لأن تلك العبادات والأحكام والمحرمات والمباحات والواجبات التي كانت على عهده صلى الله عليه وسلم، هي الإسلام الذي رضيه الله تعالى لنا وليس الإسلام شيئا غيرها، فمن ترك شيئا منها فقد ترك الإسلام، ومن أحدث شيئا غيرها فقد أحدث غير الإسلام، ولا مرية في شيء أخبرنا الله تعالى به أنه قد أكمله، وكل حديث أو آية كانا بعد نزول هذه الآية فإنما هي تفسير لما نزل قبلها وبيان لجملتها وتأكيد لأمر متقدم، وبالله تعالى التوفيق –কেউ যদি এই মনে করে যে, রাসুলুল্লাহ সা.-এর মৃত্যুর পর তাঁর হাদিস (বানী ও নির্দেশ) মানসুখ (তথা রহিত) হয়ে গেছে (এখন আর তাঁর কথা মানার প্রয়োজন নেই) এবং সে যদি এমন কোনো শরীয়ত (বিধিবিধান) উদ্ভাবন করে যা রাসুলুল্লাহ সা.-এর জীবিত থাকাকালীন সময়ে (আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কর্তৃক অনুমদিত ছিল না), তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। সে (বিধান দানের প্রশ্নে আল্লাহ’র সাথে নিজেকে বিধানদাতা হিসেবে) শিরক করলো (অংশীদার বানালো)। তাকে (শরয়ী আদালতের মাধ্যমে) কতল করা হালাল এবং তার ধনসম্পদ (মুরতাদের শরয়ী বিধান মাফিক বাজেয়াপ্ত করা) হালাল। সে মূলতঃ আল্লাহ তাআলার এই আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্থ করেছে الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا – আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনিত করলাম। (সুরা মায়েদাহ ৩) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ –‘আর যে ব্যাক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীনের তলবে লেগে যাবে, সেটা তার থেকে কখনই গ্রহন করা হবে না। আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের একজন হবে। (সুরা আল ইমরান ৮৫) সুতরাং কেউ যদি এই দাবী করে যে, রাসুলুল্লাহ সা.-এর জীবনকালে যে বিষয়ে কোনো বিধান ছিল, সে বিধান তাঁর মৃত্যুর পর পরিবর্তন হয়ে গেছে, সে মুলতঃ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো (আকীদা ও বিশ্বাস)-কে দ্বীন হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে। কারণ, রাসুলুল্লাহ সা.-এর জীবনকালে যা কিছু ইবাদত রূপে, আহকাম রূপে, হারাম রূপে, মুবাহ (বৈধ ও অনুমোদিত) রূপে বা ওয়াজিব (তথা দ্বীনের অত্যাবশ্যক অংগ) রূপে ছিল, সেটাই ছিল ওই ইসলাম যেটাকে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য মনোনীত করেছেন; এটা ছাড়া আর কোনো কিছুই (দ্বীন) ইসলাম নয়। সুতরাং যে ব্যাক্তি এর কোনো একটিকেও বাদ দিয়ে দিলো সে আসলে ইসলাম (-এর ওই অংশ)কেই বাদ দিয়ে দিলো এবং যে ব্যাক্তি ইসলামের মধ্যে অনৈসলামীক কিছু উদ্ভাবন করলো সে মূলতঃ ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু উদ্ভাবন করলো। [আল ইহকাম, ইবনে হাযাম- ২/১৪৪]
আর আমরা আগেও বলে এসেছি যে, শরীয়তে মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। সুতরাং, খলিফা/কাযীর উপর অপরিহার্য হল, শরয়ী আদালতের অধিনে মুরতাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। আর যদি মুরতাদদের গোষ্ঠিটি বড় হয় এবং তারা তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের বিরুদ্ধে নামে, তাহলে তাদের ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে খলিফা প্রয়োজনে তাদের সাথে কিতাল (স্বসস্ত্র জিহাদ) করে তাদের মূলৎপাটন করবেন। খলিফা’র এই শরয়ী দায়িত্ব পালন হবে উপরোক্ত সূরা হাজ্জের ৪১ নং আয়াতের الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ ……. وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ – (তারা হল আমার সেই সকল মুমিন বান্দা) যারা (এমন গুণের অধিকারী যে,) যদি তাদেরকে জমিনে শাসন-কর্তৃত্ব (খিলাফত) দেয়া হয়, তাহলে…….. তারা মুনকার (নাজায়েয ও হারাম বিষয়) থেকে নিষেধ করে.’ -এর দায়িত্ব পালনের অন্তর্ভূক্ত।
আর যদি খোদ খলিফা/আমীর/ইমাম/সুলতান/শাসক’ই (উপরোক্ত ক থেকে জ পর্যন্ত কোনো একটি কারণে) ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করতে অস্বীকার করে মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে মুসলমানদের উপর ফরয হল (শরীয়ত সম্মত শক্তি সামর্থ থাকলে) তারা (শরয়ী পন্থায় অন্য কোনো মুসলমানকে আমীর নিযুক্ত করে তার অধিনে) ওই মুরতাদ শাসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কিতাল (স্বসস্ত্র জিহাদ) করে হলেও তাকে উৎখাত করবে।
উবাদাহ বিন সামেত রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- دَعَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ ، فَقَالَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا: «أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةً عَلَيْنَا، وَأَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ، إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا، عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ . رواه البخاري, كتاب الفتن, باب قول النبي صلى الله عليه وسلم: سترون بعدي أمورا تنكرونها: رقم ٧٠٥٥; و مسلم: رقم ١٨٤٠; البزار في البحر الزخار: ٧/١٤٤ – ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে (বায়াত হওয়ার জন্য) ডাক দিলেন, আমরা তখন তাঁর কাছে বায়াত হলাম’। তিনি (তথা উবাদাহ রা.) বলেন: তিনি সে সময় আমাদের থেকে যে ওয়াদা নিয়েছিলেন, তাতে আমারা বায়াত করছিলাম একথার উপর যে, (আমরা) আমাদের পছন্দসই অবস্থায়, আমাদের অপছন্তনীয় অবস্থায়, আমাদের দুঃখ-কষ্টের সময়ে, আমাদের সুখ-সাচ্ছন্দের সময়ে এবং (কাউকে) আমাদের উপরে অগ্রাধিকার দিলেও (আমরা) শুনবো ও মানবো। (এরও বায়াত করছিলাম) যে, আমরা শাসনব্যবস্থা নিয়ে (শরীয়ত শুদ্ধ) শাসকের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে/বিরোধীতায় লিপ্ত হবো না, (বললেন:) -যাবৎ না তোমরা (শাসকের মধ্যে) সুস্পষ্ট কুফর দেখতে পাও, যে ব্যাপারে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে বুরহান (সুস্পষ্ট দলিল) রয়েছে’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭০৫৫; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৮৪০; মুসনাদে বাযযার- ৭/১৪৪]
এক্ষেত্রে (উপরোক্ত ক থেকে জ পর্যন্ত কোনো একটি কারণে) ‘আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করতে কোনো মুসলীম শাসকের প্রকাশ্য ইনকার/অস্বীকৃতিই তার সুস্পষ্ট কুফর। আর তা সুস্পষ্ট কুফর বলেই-তো সে ইসলামী মিল্লাত থেকে বেড় হয়ে মুরতাদ হয়ে যাওয়া একজন শাসক। আর ক্ষমতাধর মুরতাদ বলেই-তো তাকে উৎখাত করতে মুমিনদেরকে সম্মিলিত ভাবে প্রয়োজনে জিহাদে নামতে হয়। কারণ মুসলমানদের খলিফা/শাসক হওয়ার নূন্যতম যোগ্যতাগুণ হল মুসলমান হওয়া। [আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-২/১১৬; শারহু সহীহ মুসলীম, ইমাম নববী- ৬/৩১৫; বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ইবনে রুশদ-২/১৪; তুহফাতুল মুহতাজ ফি শারহিল মিনহাজ, রমলী-৩৮/১৮১; আল-মুগনী, ইবনে কুদামা-৯/৩৭৭; [শরহুল কাবীর-২০/১৯৩; আল-ইকনা, মাকদিসী-২/২০৫; আল-কাফী-২/৫২২; কাশফুল ক্বিনা-৫/২৬-৫৭; মুগনীল মুহতাজ-৩/২০৯; আল-ওয়াসিত-৫/৭৪; আল মুবদা’, ইবনুল মুফলেহ-৭/৩৪; আল লুবাব-২/১২; আদ্দুররুল মুখতার-১/৫৯০; তাকমিলাতু হাশিয়া রাদ্দুল মুহতার-১/৬১; আল ইনসাফ, মাওয়ার্দী-৮/৭৮; মানহুল জালিল শারহু মুখতাসারিল খালিল-১৭/২৮৫; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ১৩/১২৩; ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন, ইমাম গাযালী- ২/৩১৫; [ইবনে আবেদীন-৩/২৮১] মুমিনদের’র এই শরয়ী দায়িত্ব পালন হবে উপরোক্ত সূরা হাজ্জের ৪১ নং আয়াতের الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ ……. وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ – (তারা হল আমার সেই সকল মুমিন বান্দা) যারা (এমন গুণের অধিকারী যে,) যদি তাদেরকে জমিনে শাসন-কর্তৃত্ব (খিলাফত) দেয়া হয়, তাহলে…….. তারা মুনকার (নাজায়েয ও হারাম বিষয়) থেকে নিষেধ করে.’ -এর দায়িত্ব পালনের অন্তর্ভূক্ত।
কিন্তু এর বিপরীতে-
(ক) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে যেহেতু রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ধর্মীয় বিধানকে ১০০% মুক্ত করায় বিশ্বাস (ইমান) রাখা অত্যাবশ্যক (ফরয) শর্ত, তাই ‘মুসলমানদের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শরয়ী বিচার ব্যবস্থা কায়েম’ -এর ক্ষেত্রেও ইসলামী শরীয়তের এই বিধানকে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ১০০% মুক্ত করায় বিশ্বাস (ইমান) রাখা তাদের মতে অত্যাবশ্যক (ফরয)।
(খ) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে যেহেতু রাষ্ট্রযন্ত্রে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানকে টেনে আনা ১০০% নিষিদ্ধ (হারাম), তাই ‘মুসলমানদের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শরয়ী বিচার ব্যবস্থা কায়েম’ -এর ক্ষেত্রেও ইসলামী শরীয়তের এই বিধানকে রাষ্ট্রযন্ত্রে টেনে আনাও তাদের মতে ১০০% নিষিদ্ধ (হারাম)।
(গ) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ যেহেতু বিশ্বাস করে-যে ব্যাক্তিধর্মীয় বিধিবিধানকে রাষ্ট্রব্যাবস্থায় টেনে আনায় বিশ্বাসী সে আদপে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদেই বিশ্বাসী নয় বরং অস্বীকারকারী (কাফের), তাই ‘মুসলমানদের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শরয়ী বিচার ব্যবস্থা কায়েম’ -এর ক্ষেত্রেও ইসলামী শরীয়তের এই বিধানকে রাষ্ট্রযন্ত্রে টেনে আনায় বিশ্বাসী, তাদের মতে সেও আদপে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসীই নয় বরং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে অস্বীকারকারী (কাফের)।
(ঘ) উপরোক্ত এই ৩টি পয়েন্টের এব্যাপারে খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষতা বাদীদেরর ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছে।
এর পরিষ্কার অর্থ হল, যতদিন একটি রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে, ততদিন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ‘মুসলমানদের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শরয়ী বিচার ব্যবস্থা কায়েম’ -এর উপরোক্ত কুরআন সুন্নাহ’র বিধানটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত থাকতে বাধ্য। এটাই একথার দলিল যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করার বিশ্বাসটি দ্বীন ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিরোধী একটি কুফরী মতবাদ। যারা গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র থেকেই ইসলামের গোটা বিচার ব্যবস্থাকে ছেটে ফেলে দেয়ায় বিশ্বাসী, যারা রাষ্ট্রে ইসলামী বিচারব্যবস্থার আগমনের পথে জেনেবুঝে বাঁধার সৃষ্টি করে, বিরোধীতা করে এবং আইন করে নিষিদ্ধ করে দেয়, যারা ইসলামী বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খি মুমিনদেরকে বিভিন্ন অযুহাতে জেলে ঢোকায় শাস্তির ইষ্ট্রিমরোলার চালায় হত্যা করে শুধু এই কারণে যে, ওই মুমিন’রা ধর্মনিরপেক্ষতাকে অস্বীকার করে তদস্থলে ইসলামী বিচারব্যবস্থা চায়, যদি এরা মুরতাদ না হয় তবে আর কারা মুরতাদ।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ: [পৃষ্ঠা ১] , [পৃষ্ঠা ২] , [পৃষ্ঠা ৩] , [পৃষ্ঠা ৪] , [পৃষ্ঠা ৫] , [পৃষ্ঠা ৬] , [পৃষ্ঠা ৭] , [পৃষ্ঠা ৮] , [পৃষ্ঠা ৯] , …
(অথবা) নিম্নে বিষয় ভিত্তিক পেজ-এর পাশে ক্লিক করুন
# ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ একটি ইসলাম বিরোধী মতবাদ এবং কুফরী ফিতনা -কেনো ? [পৃষ্ঠা ১]
১ম বৈশিষ্ট: ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা -এ বিশ্বাস করা প্রকাশ্য কুরআন-সুন্নাহ‘র বিরোধীতা, আল্লাদ্রহীতা, পথভ্রষ্ঠতা, মুনাফেকী ও কুফরী –কেনো?[পৃষ্ঠা ১]
#রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ আইন রচনা -এ বিশ্বাস করা প্রকাশ্য ইসলাম বিরোধীতা, আল্লাদ্রোহিতা, পথভ্রষ্ঠতা, শিরক ও কুফর – কেনো ? [পৃষ্ঠা ২]
# রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ নির্বাহী ব্যবস্থা’ -এ বিশ্বাস করা প্রকাশ্য ইসলাম বিরোধীতা, আল্লাদ্রোহিতা, পথভ্রষ্ঠতা ও কুফর -কেনো ? [পৃষ্ঠা ৩] , [পৃষ্ঠা ৪] , [পৃষ্ঠা ৫] , [পৃষ্ঠা ৬] , [পৃষ্ঠা ৭]
# রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা’ -এ বিশ্বাস করা কেনো প্রকাশ্য ইসলাম বিরোধীতা, আল্লাদ্রোহিতা, পথভ্রষ্ঠতা, শিরক ও কুফর ? [পৃষ্ঠা ৮] , [পৃষ্ঠা ৯]