ধর্মনিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা : প্রকাশ্য আল্লাহদ্রোহিতা ও কুফর কেন? 

রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা – প্রকাশ্য আল্লাদ্রোহিতা, ও কুফর -কেনো ?


>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন] 


 
পূর্ব আলোচনার পর…
 
 
আমাদের ইতিপূর্বে উল্লেখীত ধর্মনিরপেক্ষতা’র ১ নং বৈশিষ্ট অনুযায়ী যেহেতেু— “রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে ধর্মকে আলাদা রাখায় বিশ্বাস করা ধর্মনিরপেক্ষতা’র সর্ব প্রধান শর্ত ও ভিত্তি, যেটাকে তারা বলে থাকে Separation of religion and state (ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজন)”, তাই একটি দেশকে  Secular State (ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র) বানানোর  ক্রমধারায় রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (Judisial Division) থেকেও ধর্মকে ১০০% ছেটে ফেলে দেয়ায় বিশ্বাস করা ধর্মনিরপেক্ষতা’র প্রধান শর্তের অংশ। 
 
সেখানে আমরা বিষয়টিকে খোলাসা করতে গিয়ে আরো উল্লেখ করে এসেছি যে—ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদটি বিশ্বাস করে(ক) রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ (Judicial Division)-এর আওতাধীন যে কোনো বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার নূন্যতম যোগ্যতাগুণ কী কী হবে -তার মাপকাঠি নির্ধারনের ক্ষেত্রে যে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা অত্যাবশ্যক শর্ত (ফরযে আইন)। (খ) বিচার বিভাগ (Judicial Division)-এর আওতাধীন যে কোনো বিচারকের বিচারের রায়ের সার্বিক কার্যক্রমের ভিত্তি হবে শুধুমাত্র রাষ্ট্রের ‘আইনসভা’র সদস্যদের দ্বারা রচিত সংবিধান, যা সকল জনগণের উপর সমভাবে প্রযোজ্য হবে এবং জনগণ শুধুমাত্র উক্ত সংবিধানকেই অপরিহার্য (ফরযে আইন) বিধান হিসেবে মানতে বাধ্য থাকবে। (গ) ‘আইনসভা’র সদস্যদের দ্বারা রচিত সংবিধানের ভিত্তিতে দেয়া রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক যে কোনো ধর্মীয় আইন মানা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হারাম) থাকবে, মানলে তা হবে আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ (পাপ), এর বিরোধীতা (বাগাওয়াত্) করলে তা হবে কখনো কখনো রাষ্ট্রদ্রোহিতা, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত রয়েছে। এটাই হল ধর্মনিরপেক্ষ বিচার বিভাগ (Secular Judicial Division)-এর মূল চেহারা ও খাসলত
 
 এর অর্থ দাঁড়ায়-
 
(১) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বিচারক হওয়ার নূন্যতম যোগ্যতাগুণ কী কী হবে -সেটার শর্ত শরায়েত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ইসলামী ধর্মের বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা হবে, এবং তদস্থলে রাষ্ট্রের ‘আইন সভা’য় পাশ হওয়া সংবিধানের বিধিবিধানের আলোকে তা নির্ধারণ করা হবে
 
(২) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বিচারক-কে নিয়োগ দান করার নীতিমালা ও শর্ত শরায়েত কী কী হবে -সেটা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ইসলামী ধর্মের বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা হবে, এবং তদস্থলে রাষ্ট্রের ‘আইন সভা’য় পাশ হওয়া সংবিধানের বিধিবিধানের আলোকে তা নির্ধারণ করা হবে।
 
(৩) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বিচারক দেশের যে কোনো নাগরিকের যে কোনো মামলা মোকাদ্দমার বিচার ফয়সালা করার ক্ষেত্রে ইসলামী ধর্মের বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখবে, এবং তদস্থলে রাষ্ট্রের ‘আইন সভা’য় পাশ হওয়া সংবিধানের বিধিবিধানের আলোকে বিচার ফয়সালা করবে।
 
(৪) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বিচারক রাষ্ট্রের ‘আইন সভা’য় পাশ হওয়া সংবিধানের বিধিবিধানের আলোকে যেসব বিচার ফয়সালা দিবে, সেগুলো দেশে সকল নাগরিকের উপরে সমভাবে কার্যকর হবে; অর্থাৎ একজন মুসলীমের উপরেও তা সমভাবে কার্যকর হবে –চাই তার ইসলামী ধর্ম ওই একই ক্ষেত্রে তার জন্য অন্য কোনো শরয়ী বিধান দিক না কেনো। এক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াহ বহির্ভূত আইনী বিচারটি একজন মুসলীম নাগরিকের উপরে জোর করে প্রয়োগ করাকে ওই মুলীমের উপরে কোনো রকম জুলুম/অন্যান/অবিচার হিসেবে গণ্য করা হবে না। উল্টো সেই মসুলীম যদি তার ইসলাম ধর্ম বিধান বহির্ভূত আইনী বিচারকে মানতে অস্বীকার করে এবং বলে যে ‘এটা তার সাথে জুলুম ও অন্যায় অবিচার করা হচ্ছে’, তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আইনের দৃষ্টিতে সেটা হবে কোর্ট-অবমাননা এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ (রাষ্ট্রিয় পাপ), ওই বিচারের বিরোধীতা (বাগাওয়াত্) করলে তা হবে কখনো কখনো রাষ্ট্রদ্রোহিতা, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত রয়েছে।  

যারা ইসলামী শরীয়ত এবং জরুরীয়তে-দ্বীন (দ্বীনের জরুরী বিষয়) সম্পর্কিত শতসিদ্ধ মাসআলা মাসায়েল গুলোর ব্যাপারে মোটা দাগে সামান্য ধারনাও রাখেন, তারাতো বুঝতেই পাচ্ছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের উপরোক্ত শর্তে বিশ্বাসী হওয়ার অর্থ হল- সুনিশ্চিত ভাবে ইসলামী বিচার ব্যবস্থা  সংশ্লিষ্ট আল্লাহ’র নাজিলকৃত ইসলামী শরীয়তের ১০০% অংশ’কেই পুরোপুরি বাতিল করায় বিশ্বাসী হওয়া। যেখানে একজন মুসলমান, কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ইসলামী শরীয়তে যে কোনো একটি বিধানকে অস্বীকার/প্রত্যাক্ষান করলে মুরতাদ (দ্বীন ত্যাগী কাফের) হয়ে যায়, সেখানে ইসলামী বিচার ব্যবস্থার সকল আইনকে বাতিল করায় বিশ্বাসী ব্যাক্তিটি যে কত বড় আল্লাহদ্রোহি মুরতাদ (দ্বীন ত্যাগী কাফের) হতে পারে -তা তো সহজেই অনুমেয়।

এজন্য আমাদের মতে, দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে ‘ইসলামী বিচার ব্যবস্থা’ সংশ্লিষ্ট আল্লাহ’র নাজিলকৃত ইসলামী শরীয়তকে প্রত্যাক্ষান করা, অস্বীকার করা, ছেটে ফেলা বা বাতিল করায় বিশ্বাসী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা প্রকাশ্য আল্লাহদ্রোহি, ইসলাম বিরোধী, পথভ্রষ্ঠ ও কাফের। আমি জানি এতটুকু কথা অনেকের জন্য যথেষ্ট নয়, তারা আরো বিস্তারিত জানতে চায়। এজন্য আমরা সামনের কয়েকটি পেজে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাপেশ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ইসলামী রাষ্ট্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে বিচারকার্যে রায়ের ভিত্তি সংবিধান ভিন্ন ভিন্ন ; বিচার-ফয়সালাও ভিন্ন ভিন্ন ও পরষ্পর সাংঘর্ষিক হতে বাধ্য

আমরা উপরে বলে এসেছি যে, ধর্মর্নিরপেক্ষতাবাদ যেহেতু রাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে ১০০% ধর্মমুক্ত রাখায় বিশ্বাসী, তাই তাদের বিশ্বাস হল, ‘বিচার বিভাগ (Judicial Division)-এর আওতাধীন যে কোনো আদালতের বিচারকের বিচারের সকল রায়-এর ভিত্তি হবে শুধুমাত্র কেবলমাত্র রাষ্ট্রের ‘আইনসভা’র সদস্যদের দ্বারা রচিত সংবিধান, যা দেশের সকল জনগণের উপর সমভাবে প্রযোজ্য হবে এবং জনগণ শুধুমাত্র উক্ত সংবিধানকেই অপরিহার্য (ফরযে আইন) বিধান হিসেবে মানতে বাধ্য থাকবে’।

অপর দিকে, দ্বীন ইসলামে রাষ্ট্রের সকল বিচারের মূল ভিত্তি হবে- ‘আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত ইসলামী শরীয়ত। [এর আগে আমরা ইসলামী শরীয়ত কী -তা নিয়ে বিস্তারিত দালিলিক আলোচনা পেশ করেছি, যার পূণরাবৃত্তি এখানে নিষ্প্রয়োজন। কেউ আলোচনাটি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন]। যেমন, আল্লাহ তাআলা  এরশাদ করেন-

 ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَىٰ شَرِيعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

“অতঃপর (হে নবী মুহাম্মাদ!) আমি তোমাকে (আমার দ্বীনের) নির্দেশিত একটি শরীয়তের উপর স্থাপন করেছি। অতএব তুমি সে(ই শরীয়ত)টির অনুসরণ করে চলো এবং যারা (আমার নাজিলকৃত শরীয়ত সম্পর্কে) জানে না, তুমি (আমার দেয়া শরীয়ত বাদ দিয়ে) তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না”। [সূরা জাসিয়া ১৮]
 
اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ 
“(হে মুমিনগণ!) তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (নবী মুহাম্মাদের উপর) তোমাদের জন্য (দ্বীন ও শরীয়ত স্বরূপ) যা নাজিল করা হয়েছে, তোমরা সেটার অনুসরণ-অনুগত্য করে চলো। আর তাঁকে বাদ দিয়ে (অন্য কোনো) অভিভাবকের অনুগত্য-অনুসরণ করো না”। [সূরা আ’রাফ ৩]
 
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ ۚ
‘আর তোমাদের মাঝে যে বিষয়েই মতবিরোধ দেখা দিক না কেনো তার ফয়সালা (পাওয়ার)র জন্য আল্লাহর (নাজিলকৃত শরীয়তের) প্রতি মুতাওয়াজ্জু হও (সেখানে বিধান খোঁজ করো)”। [সূরা শুরা ১০]
 
এখানে শুধু আমরা কিছু দলিল পেশ করছি, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শরিয়াহ দিয়ে মুসলমানদের যাবতীয় বিচার-ফয়সালা করা ফরয এবং ইসলামী শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক বা বিরোধী যে কোনো মানবরচিত আইন দিয়ে বিচার ফয়সালা করা বিলকুল হারাম। যেমন, আল্লাহ তাআলা  এরশাদ করেন-
 
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যখন কোনো বিষয়ে কোনো ফয়সালা দিয়ে দেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীর জন্য তাদের নিজেদের বিষয়গুলোতে (ভিন্ন ফয়সালা দানের) কোনো এখতিয়ার থাকে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করলো, সে মূলতঃ সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ঠতায় নিমজ্জিত হয়ে গেল’।[সূরা আহযাব ৩৬]
 
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম (মৃ: ৭৫১ হি:) রহ. লিখেছেন: فأخبر سبحانه أنه ليس لمؤمن أن يختار بعد قضائه وقضاء رسوله ، ومن تخير بعد ذلك فقد ضل ضلالا مبينا  – ‘আল্লাহ তাআলা এখানে খবর দিচ্ছেন যে, (যে কোনো ব্যাপারে) তাঁর ফয়সালা এবং তাঁর রাসুলের ফয়সালা’র পর কোনো মু’মিনের জন্য (নিজেস্ব কোনো সিদ্ধান্ত, মত বা পথ গ্রহনের আর কোনো) এখতিয়ার/স্বাধীনতা নেই। এর পরও যে (তার নিজেস্ব কোনো সিদ্ধান্ত, মত বা পথ) অবলম্বন করবে, সে পরিষ্কার পথভ্রষ্ঠতায় নিমজ্জিত হয়ে যাবে’[ই’লামুল মুআক্কিইন, ইবনুল কাইয়্যেম– ১/৫৬]
 
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُنْ لِلْخَائِنِينَ خَصِيمًا
“(হে নবী মুহাম্মাদ!) আমি তোমার প্রতি হক্ব (সত্য) সহকারে আল-কিতাব (কুরআন) নাজিল করেছি যাতে তুমি মানুষের মাঝে (সৃষ্ট বিবাদ বিসম্বাদের) বিচার-ফয়সালা ওইভাবে করতে পারো, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর তুমি (বিশ্বাসঘাতক) খিয়ানতকারীদের পক্ষ নিয়ে (আমার বিপক্ষে) বিতর্ককারী হয়ে বসো না”। [সূর নিসা ১০৫]
 
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ
‘অতএব (হে নবী মুহাম্মাদ!) আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে তাদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করো এবং তোমার কাছে যে আল-হক্ব (মহাসত্য ওহী) এসেছে তা বাদ দিয়ে তাদের মনকামনাগুলির অনুসরণ করবেন না’। [সূরা মায়েদা ৪৮]
 
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ
‘আর (হে নবী!) তুমি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে তাদের মঝে বিচার-ফয়সালা করো এবং তাদের মনকামনাগুলির অনুসরণ করবেন না। আর তাদের ব্যপারে সতর্ক থেকো, তারা যেন তোমার প্রতি আল্লাহর নাজিলকৃত কোনো কোনো বিধানের ব্যপারে তোমাকে ফেতনায় ফেলে দিতে না পারে’। [সূরা মায়েদা ৪৯]
 
 أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آَمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا . وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا
“(হে নবী মুহাম্মাদ!) তুমি কি তাদেরকে দেখোনি যারা দাবী করে যে, ‘আপনার কাছে যা নাজিল করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাজিল করা হয়েছিল -আমরা সে ব্যাপারে ইমান এনেছি’!। (এরা যদি বাস্তবেেই আমার নাজিলকৃত বিধানের উপর ইমান এনে থাকতো, তাহলে তারা ফয়সালা পাওয়ার জন্য সর্বাবস্থায় আমার বিধানের দিকেই ধাবিত হত)। (বাস্তবে) তাদের মনকামনা থাকে যে, তারা (বিচারীক) ফয়সালা করিয়ে নিবে তাগুতের কাছে। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যেন তাকে (তথা তাগুতকে) অস্বীকার/ইনকার করে। আর শয়তান চায় যে, সে তাদেরকে পথভ্রষ্ঠ করে বহুদূর নিয়ে যাবে। আর তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তোমরা সেদিকে আসো এবং (আসো) রাসুলের দিকে (যাতে তিনি আল্লাহ’র বিধান অনুযায়ী তোমাদের মাঝে ফয়সালা করে দিতে পারেন), তখন তুমি মুনাফেকদেরকে দেখবে যে, তারা তোমার কাছে আসতে ইতস্ততঃ করছে ও পাশকেটে সরে পড়ছে”। [সূর নিসা ৬০, ৬১]
 
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا 
“আপনার রবের শপথ, কক্ষোনো নয়! যতক্ষন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ-বিসম্বাদগুলোর জন্য (হে নবী মুহাম্মাদ!) তোমাকে বিচারক না মানবে, অতঃপর তুমি যে ফয়সালা করে দিয়েছ সে ব্যপারে (যতক্ষন পর্যন্ত) তাদের মনে দ্বিধামুক্ততা অনুভূত না হবে এবং (যতক্ষন পর্যন্ত) তারা (তোমার ফয়সালাকে) ঐকান্তিকভাবে গ্রহন করে না নিবে, ততক্ষন পর্যন্ত তারা (মূলতঃ তোমার উপর) ইমানআনায়নকারী (বিবেচিতই হবার) নয়, (বরং বিবেচিত হবে সন্দেহপোষনকারী মোনাফেক বেইমান হিসেবে)”।[সুরা নিসা ৬৫]
 
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“সুতরাং তোমরা যদি কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পরো, তাহলে যদি আল্লাহ ও কেয়ামতের দিবসের প্রতি তোমাদের ইমান থেকে থাকে, তাহলে বিষয়টি আল্লাহ ও (তাঁর) রাসুলের (ফয়সালার) কাছে ছেড়ে দাও। এই (নির্দেশনাটি তোমাদের জন্য) কল্যানকর এবং (এটাই হচ্ছে এবিষয়ক) সর্বোত্তম ব্যাখ্যা”। [সূরা নিসা ৫৯]
 
 وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
“আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না, ওরাই হল কাফের”। [সুরা মায়েদা ৪৪]
 
  وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না, ওরাই হল জালেম (অন্যায়-অবিচারক)”। [সুরা মায়েদা ৪৫]
 
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
“আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন যারা তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না, ওরাই হল ফাসেক”। [সুরা মায়েদা ৪৭]
 
উপরের আয়াতগুলো থেকে দ্যার্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়-
 
(১) আল্লাহ তাআলা’র নাজিলকৃত কুরআন ও রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশিত সুন্নাহ/হাদিস ভিত্তিক ইসলামী শরীয়ত দিয়ে মুসলমানদের যাবতীয় বিচার ফয়সালা করা ফরয। বিধায়, তা অবশ্যই ‘জরুরীয়াতে দ্বীন’ (দ্বীন ইসলামের অপরিহার্য ও জরুরী অংশ)-এর অন্তর্ভূক্ত। আর যে বিধান ‘জরুরীয়াতে দ্বীন’ -এর মধ্যে গণ্য, তা ছেটে ফেলা/বাদ দেয়ার আক্বীদায় বিশ্বাসী ব্যাক্তি সর্বসম্মতিক্রমে কাফের/মুরতাদ। এব্যাপারে ইজমা রয়েছে।
 
(২) আল্লাহ তাআলা’র নাজিলকৃত কুরআন ও রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশিত সুন্নাহ/হাদিস ভিত্তিক ইসলামী শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক/বিরোধী যে কোনো বিধান দিয়ে মুসলমানদের বিচার ফয়সালা করা সম্পূর্ণ হারাম। আর যে ব্যাক্তি কুরআন সুন্নাহ’র পরিষ্কার নির্দেশিত কোনো ইজমায়ী হারাম’কে বৈধতা দেয়ার আক্বীদায় বিশ্বাসী, সেও কাফের/মুরতাদ। এব্যাপারেও ইজমা রয়েছে।

এর বিপরীতে বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতা’র বৈশিষ্ট দেখুন- 

(ক)  আল্লাহ তাআলা’র হুকুম মতো যেখানে ‘ইসলামী শরীয়ত দিয়ে মুসলমানদেরকে বিচার করাফরয, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ‘ইসলামী শরীয়ত দিয়ে মুসলমানদের বিচার ফয়সালা করা’র বিষয়টিকে  ১০০% ছেটে ফেলে দেয়া অত্যাবশ্যক (ফরয)। 

(খ)  আল্লাহ তাআলা’র হুকুম মতো যেখানে ‘ইসলামী শরীয়ত ভিন্ন অন্য কোনো সাংঘর্ষিক সংবিধান দিয়ে মুসলমানদের বিচার ফয়সালা করাহারাম, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে ‘তাদের আইন-সভায় রচিত ধর্মমুক্ত সংবিধান ভিন্ন ইসলামী শরীয়ত দিয়ে মুসলমানদের বিচার ফয়সালা করা ১০০% নিষিদ্ধ (হারাম)। 

ইসলামী শরীয়ত অস্বীকারকারী/প্রত্যাখ্যানকারী এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের কাফের/মুরতাদ হওয়ার ব্যাপারে এর চাইতে পরিষ্কার আর কী দলিল হতে পারে। আর আমরা ইতিপূর্বে এখানেরাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ আইন ও সংবিধান রচনা : পরিষ্কার কুফর, শিরক, আল্লাহদ্রোহিতা, ইসলাম বিরোধীতা ও পথভ্রষ্ঠতা -কেনো?” -এ এ নিয়ে বিস্তারিত দালিলিক আলোচনা পেশ করেছি। যেখানে আল্লাহ’র নাজিলকৃত বিধান সরিয়ে রেখে নিছক যুক্তিনির্ভর বিধান রচনা করাই আল্লাহ’র সাথে প্রকাশ্য কুফর ও শিরক, সেখানে একেতো আল্লাহ’র আইন বহির্ভূত আস্ত একটা সংবিধান রচনা করা, তদুপরি সেই সংবিধান দিয়ে অন্যদের তো বটেই খোদ মুসলমানদের বিচার ফয়সালা করা ও মুসলমানদেরকে সেই রায় মানতে বাধ্য করা যে কত বড় আল্লাহদ্রোহিতা ও কুফর সেকথা তো বলাই বাহুল্য। 

 


>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন]