বৈশিষ্ট নং ১
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা অর্থ : পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত হবে এমন বিধিবিধান দিয়ে যা ধর্মীয় আইন কানুন থেকে ১০০% মুক্ত থাকবে -এর ব্যাখ্যা
ইতিপূর্বে আমরা ২ নং পৃষ্ঠায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা ও ৬টি বৈশিষ্ট/শর্ত কী’ তার আলোচনায় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ১ নং বৈশিষ্ট’টিকে এভাবে উল্লেখ করেছি—–
বৈশিষ্ট নং ১:- রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে ধর্মকে আলাদা রাখায় বিশ্বাস করা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের সর্ব প্রধান শর্ত ও ভিত্তি। এর খোলাসা অর্থ হল, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনা-বিশ্বাস ও সরকারের সার্বিক রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের মধ্যে কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মীয় আইনকানুনের প্রবেশ ১০০% নিষিদ্ধ থাকবে, যাতে রাষ্ট্রযন্ত্র ও ধর্ম –এ দু’টি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা থাকে; মানে ধর্মীয় আইনের আলোকে যাতে রাষ্ট্র পরিচালিত হতে না পারে। বরং, রাষ্ট্রের প্রতিনিধি কর্ণধার ও হর্তাকর্তারাই ঠিক করবে যে, রাষ্ট্র কোন নীতিমালা ও বিধিবিধানের মোতাবেক চলবে। এটাই হল Secular State (ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র)-এর মূল কথা।
বোঝার সুবিধার্থে বিষয়টিকে আরো একটু খোলাসা করছি। এযুগে মৌলিকভাবে ৩টি বিভাগের সমন্নয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সরকার (Government) গঠন করা হয়। যথা –
(ক) ধর্মনিরপেক্ষ আইন বিভাগ (Secular Legislative Division)
(খ) ধর্মনিরপেক্ষ নির্বাহী বিভাগ (Secular Executive Division)
(গ) ধর্মনিরপেক্ষ বিচার বিভাগ (Secular Judicial Division)
ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ উপরোক্ত এই ৩ টি বিভাগের প্রতিটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পদ ও পদের সার্বিক কার্যক্রমের মধ্যে বিশেষ কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মীয় আইনকানুনের প্রবেশকে ১০০% নিষিদ্ধ রাখাকে তার মূল ভিত্তি বলে বিশ্বাস করে, আর কেবল তবেই একটি ১০০% খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র (Secular State) গঠিত হওয়া সম্ভব। বিষয়টিকে আরেকটু খোলাসা করছি।
(ক) ধর্মনিরপেক্ষ আইন প্রণয়নী বিভাগ(Secular Legislative Division)
এই বিভাগের আওতায় থাকে আইনসভা (Parliament/Legislative Assembly)। এই আইনসভা’র সদস্যরা ‘রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার একক আইনানুগ অধিকারী কর্তা (Legislators)’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে এবং নাগরীকদের জন্য সাংবিধানিক আইন রচনা করে থাকে। এই আইনসভা বাংলাদেশে ‘জাতীয়-সংসদ’ হিসেবে পরিচিত, আর এর সদস্যদেরকে বলা হয় সাংসদ।
ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদটি বিশ্বাস করে, (ক) এই আইনসভার সদস্যরাই হবে দেশের সংবিধানিক আইন রচনার একমাত্র আইনানুগ অধিকারী কর্তা (Legislators), (খ) তারা সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রেখে শুধুমাত্র নিজেদের জ্ঞান, বিবেক-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা খাটিয়ে দেশের নাগরীকদের জন্য আইন রচনা করবে, (গ) আইনসভার সদস্যরা যে আইন তৈরী করবে সেটাই হবে রাষ্ট্রের চুড়ান্ত আইন, যা সকল জনগণের উপর সমভাবে প্রযোজ্য হবে এবং জনগণ শুধুমাত্র উক্ত সংবিধানকেই (ফরযে আইন হিসেবে) মানতে বাধ্য থাকবে, (ঘ) সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক যে কোনো ধর্মীয় আইন মানা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হারাম) থাকবে, মানলে তা হবে আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ (রাষ্ট্রিয় পাপ), এর বিরোধীতা (বাগাওয়াত্) করলে তা হবে কখনো কখনো রাষ্ট্রদ্রোহিতা, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত রয়েছে।
এটাই হল ধর্মনিরপেক্ষ আইন-প্রণয়নী বিভাগ (Secular Legislative Division)-এর মূল চেহারা ও খাসলত ।
(খ) ধর্মনিরপেক্ষ নির্বাহী বিভাগ (Secular Executive Division)
রাষ্ট্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক (Administrative) কার্যক্রম পরিচালনার মূল দায়িত্ব এই নির্বাহী বিভাগের উপর ন্যাস্ত থাকে। রাষ্ট্রপ্রধান (দেশ ভেদে প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি) থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ব্যাক্তি ও তাদের স্ব-স্ব কার্যাবলি এই বিভাগের আওতায় রয়েছে।
ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদটি বিশ্বাস করে, (ক) রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ (Executive Division) -এর নির্বাহী প্রধান/রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন ও মননয়নের ক্ষেত্রে তার নূন্যতম যোগ্যতাগুণ কী কী হবে -তার মাপকাঠি নির্ধারনের ক্ষেত্রে যে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা অত্যাবশ্যক শর্ত (ফরযে আইন)। (খ) রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ (Executive Division) -এর নির্বাহী প্রধান/রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন ও মননয়নের ক্ষেত্রে কী কী পন্থা বৈধ বা অবৈধ বিবেচিত হবে -তার নির্ধারনের ক্ষেত্রে যে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা অত্যাবশ্যক শর্ত (ফরযে আইন)। (গ) রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ (Executive Division) -এর নির্বাহী প্রধান/রাষ্ট্রপ্রধান -এর কার্যাবলী ও দায়দায়িত্ব কী কী হবে -তার পরিধি নির্ধারনের ক্ষেত্রে যে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা অত্যাবশ্যক শর্ত (ফরযে আইন) (ঘ) এই নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন সকল পদ ও পদাধিকার, ক্ষমতায়ন ও কোনো পদের কার্যাবলি নির্ণয় ও প্রয়োগের গন্ডী থেকে যে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা অত্যাবশ্যক শর্ত (ফরযে আইন)। (ঙ) এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ‘আইনসভা’র সদস্যদের দ্বারা রচিত সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক যে কোনো ধর্মীয় আইন মানা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হারাম), মানলে তা হবে আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ (পাপ), এর বিরোধীতা (বাগাওয়াত্) করলে তা হবে কখনো কখনো রাষ্ট্রদ্রোহিতা, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত রয়েছে।
এটাই হল ধর্মনিরপেক্ষ আইন-প্রণয়নী বিভাগ (Secular Executive Division)-এর মূল চেহারা ও খাসলত ।
(গ) ধর্মনিরপেক্ষ বিচার বিভাগ (Secular Judicial Division)
এই বিভাগের দায়িত্ব হল আইনসভায় পাশ হওয়া সংবিধান অনুসারে দেশের নাগরীকদের বিচারকার্য সম্পাদন করা।
ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদটি বিশ্বাস করে, (ক) রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ (Judicial Division)-এর আওতাধীন যে কোনো বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার নূন্যতম যোগ্যতাগুণ কী কী হবে -তার মাপকাঠি নির্ধারনের ক্ষেত্রে যে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানকে ১০০% দূরে রাখা অত্যাবশ্যক শর্ত (ফরযে আইন)। (খ) বিচার বিভাগ (Judicial Division)-এর আওতাধীন যে কোনো বিচারকের বিচারের রায়ের সার্বিক কার্যক্রমের ভিত্তি হবে শুধুমাত্র রাষ্ট্রের ‘আইনসভা’র সদস্যদের দ্বারা রচিত সংবিধান, যা সকল জনগণের উপর সমভাবে প্রযোজ্য হবে এবং জনগণ শুধুমাত্র উক্ত সংবিধানকেই অপরিহার্য (ফরযে আইন) বিধান হিসেবে মানতে বাধ্য থাকবে। (গ) ‘আইনসভা’র সদস্যদের দ্বারা রচিত সংবিধানের ভিত্তিতে দেয়া রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক যে কোনো ধর্মীয় আইন মানা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হারাম) থাকবে, মানলে তা হবে আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ (পাপ), এর বিরোধীতা (বাগাওয়াত্) করলে তা হবে কখনো কখনো রাষ্ট্রদ্রোহিতা, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত রয়েছে।
এটাই হল ধর্মনিরপেক্ষ বিচার বিভাগ (Secular Judicial Division)-এর মূল চেহারা ও খাসলত।
[উপরোক্ত এই তিনটি বিভাগের আওতাধীন আরো অনেক শাখা-প্রশাখা (Branches) রয়েছে, যা এখানে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম। বিস্তারিত জানার প্রয়োজন থাকলে পাঠক আপনি সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারী ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো নির্ভযোগ্য সূত্রে জেনে নিতে পারেন।]
মৌলিকভাবে সাধারণতঃ উপরোক্ত খাসলত ও চেহারা বিশিষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ আইন প্রণয়নী বিভাগ, ধর্মনিরপেক্ষ নির্বাহী বিভাগ এবং ধর্মনিরপেক্ষ বিচার বিভাগ – এই ৩ অংশের মিশ্রণেই গঠিত হয় বর্তমান জামানার একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার (Secular Government)অন্য কথায় একটিধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র (Secular State), আর এই ৩ অংগের যে কোনো পদ, পদাধিকার, পদায়ন বা ক্ষমতায়ন সহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যাবলীর মধ্যে কোনো ধর্মীয় বিধিবিধানের প্রবেশাধিকার ১০০% নিধিদ্ধ (হারাম) করায় বিশ্বাস করা একটি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মৌলিক শর্ত, যা ছাড়া কারো জন্য নিজকে খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বলে দাবী করা খোদ্ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সাথেই মিরজাফোরী করা। এজন্যই আপনি যদি নিজকে খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বলে দাবী করেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সাথে মিরজাফোরী করতে না চান, তাহলে আপনাকে অবশ্য অবশ্যই রাষ্ট্রের সরকারের এই ৩ টি অংগের প্রত্যেকটি থেকে ইসলামী শরীয়তের যে কোনো বিধানের প্রবেশকে ১০০% নিধিদ্ধ (হারাম) করায় বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক (ফরযে আইন)।
আর এটাই হল উপরের সংগাগুলোতে কথিতthe separation of religion and government (ধর্ম ও সরকারের মাঝে বিভাজন)অথবাSeparation of religion and state(ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজন)‘বা the state should be separate from religion(রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা রাখা বাঞ্চনিয়’)কিংবাThe separation of religion and state is the foundation of secularism(ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজন ই হল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মূল ভিত্তি ) –ইত্যাদির মূল কথা।
ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা অর্থ : ‘পুরো ইসলামী রাষ্ট্র (খিলাফত) ব্যবস্থা পরিচালিত হবে আল্লাহ’র নাজিলকৃত ইসলামী শরীয়ত (বিধিবিধান) মোতাবেক -এর অর্থ মতলব ও ব্যাখ্যা
আরবীতে خليفة (খলিফাহ) শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘স্থলাভিষিক্ত, প্রতিনিধি, প্রতিনিধিত্বকারী’। এর অর্থ ও মর্ম বোঝার সুবিধার্থে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। মনে করুন, একবার জনৈক অদ্বিতীয় সুউচ্চ মেধাবী জ্ঞানী ও অতুলনীয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক অঢেল ধ্বনসম্পদ সম্পন্ন ধ্বনকুবেড় ব্যক্তি তার বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে তার নিজ দেশে একটি বিশাল পরিসরের কারখানা প্রতিষ্ঠা করলেন। কিন্তু তিনি নিজে থাকেন বিদেশে; প্রচন্ড ব্যস্ত জীবন সেখানে। তাই ঠিক করলেন, বিদেশে থেকেই দেশে প্রতিষ্ঠিত ওই কারখানা’টিকে তার দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এখন তার দরকার এমন একদল সুযোগ্য ও বিশ্বস্থ অনুগত্যকারী কর্মী বাহিনীকে কারখানা’টিতে নিয়োগ দেয়া, যারা-
(১) তার কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে গভীর ভাবে বুঝবে এবং উক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবরূপ ও পূর্ণতা দেয়াই হবে তাদের লক্ষ্য,
(২) যারা হুবহু তার দেয়া বিজ্ঞচিত পরিকল্পনা মাফিক যাবতীয় কার্যাবলী যথাসাদ্ধ সম্পাদন করবে এবং তার অনুমতি ছাড়া তারা নিজেরা কোনো নতুন পরিকল্পনা তৈরী করবে না এবং সেই অনুপাতে কারখানাও চালাবে না।
(৩) যারা তার কারখানার নীতিমালা ও বিধিনিষেধের সাথে একাত্বতা পোষন করবে ও তা যথাসাদ্ধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে খাঁটি অনুগত্যতার পরিচয় দিবে,
(৪) যারা তার কারখানার ক্ষতিকে নিজেদের ক্ষতি মনে করে কারখানার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
বস্তুতঃ এরকম কর্মীদের দ্বারা গঠিত একটি দলকে বলা যায় তার সুযোগ্য প্রতিনিধিদল এবং তাদের দলপ্রধানকে বলা যায় কারখানা মালিকের সুযোগ্য স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি (খলিফাহ), যে তার কারখানা-মালিকের অনুপস্থিতিতে কাজগুলোকে ঠিক ওইভাবে যথাসাদ্ধ আনজাম দিবেন, যেভাবে মালিক বিদেশে না থেকে দেশে থাকলে নিজে আনজাম দিতেন। তারা সবাই মিলে যেন একেকজন তাদের মালিকের মেধা, মন ও হাত-পা হয়ে কাজ করবে এবং কারখানা-মালিকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে কারখানাকে নিয়ে যাওয়ার যথাসাদ্ধ চেষ্টা করবে। কারখানার মালিক বিদেশে বসে বসে এরকম একটি দলের কথা চিন্তা করে বললেন-‘আমি আমার দেশে আমার কারখানার জন্য একটি প্রতিনিধিদল নিয়োগ দান করতে চাই’।
উপরোক্ত সহজ উদাহরণটি বুঝে থাকলে আপনি একথাও বুঝেছেন যে, আল্লাহ তাআলা যে পবিত্র ও সুমাহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই বিশ্বকারখানা ও কারখানার শ্রমিক (মানব জাতি)কে সৃষ্টি করেছেন তা হল, জমিনের বুকে মানুষ আল্লাহ তাআলা’র সুযোগ্য প্রতিনিধি (খলীফাহ) হিসেবে নিরঙ্কুশভাবে শুধু তাঁর ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকেই কায়েম করবে; ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জী্বন, সামাজীক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন সর্বক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাঁরই বিধি-নিষেধ ও নীতিমালাকে অনুগত্যতার সাথে মান্য করে চলবে। আর এটাই হবে তাঁর সমিপে খাঁটি আবদিয়াত (দাসত্ব/গোলামী) ও খিলাফাত (প্রতিনিধিত্ব)-এর বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তাআলা এদিকে ইংগিত করেই এরশাদ করেছেন-
إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
“নিশ্চই আমি পৃথিবীতে (আমার) খলিফাহ্ (স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি) সৃষ্টি করবো”। [সূরা বাকারাহ ৩০]
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
“হুকুম (চলে ও চলবে) শুধুমাত্র আল্লাহ’র। তিনি হুকুম করেছেন, তোমরা (জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই) তাঁকে ছাড়া অন্য আর কারোরই ইবাদত (উপাসনা ও গোলামী) করবে না (অন্য কারো আজ্ঞাবহ হবে না)। (ভাল করে জেনে রেখো) এটাই হল ‘দ্বীন-ই-কাইয়্যেম’ (প্রতিষ্ঠিত দ্বীন)। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না”।[সূরা ইউসূফ ৪০]
এখন উপরের আলোচনা থেকে যদি خليفة (খলিফাহ) শব্দের অর্থ ও মর্ম বুঝে থাকেন, তাহলে একথাও বোঝা উচিৎ যে, خلافة(খিলাফত/প্রতিনিধিত্ব) হল আল্লাহ’র সৃষ্ট পৃথিবীর বুকে আল্লাহর ইচ্ছা, হুকুম ও বিধিবিধান সমূহ তাঁর যোগ্য খলিফা (বা প্রতিনিধি)দের মাধ্যমে কায়েম হবার নাম। সুতরাং, একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনা’র প্রশ্নে, ইসলামী শরীয়তের মূল ভিত্তি তথা আল্লাহ’র নাজিলকৃত কুরআন এবং তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর সুন্নাহ ও হাদিস– এর মধ্যে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা’কে যেভাবে পরিচালনা করার নির্দেশ এসেছে, যখন মুসলমানরা তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সেই অনুপাতে পরিচালিত করবে, তখন একথা বলা যাবে যে—– “আল্লাহ তাআলা যে পবিত্র ও সুমাহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই বিশ্বকারখানা ও কারখানার শ্রমিক (মানব জাতি)কে সৃষ্টি করেছেন -যাতে এই জমিনের বুকে মানুষ আল্লাহ তাআলা’র সুযোগ্য প্রতিনিধি (খলিফাহ) হিসেবে নিরঙ্কুশভাবে শুধু তাঁর ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকেই কায়েম করে দেখায় এবং সর্বক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাঁরই বিধি-নিষেধ ও নীতিমালাকে অনুগত্যতার সাথে মান্য করে চলে, —-সেই উদ্দেশ্যরই একাংশ বাস্তবায়ীত হয়েছে তাঁরই দেয়া শরীয়ত অনুপাতে ‘ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা’ কায়েম ও পরিচালনা করার মাধ্যমে”। আর তখন ‘রাষ্ট্রব্যবস্থা’ পরিচালনার ক্ষেত্রে এটাই হবে আল্লাহ’র সমিপে খাঁটি আবদিয়াত (দাসত্ব/গোলামী) ও খিলাফাত (প্রতিনিধিত্ব)-এর জ্বলব্যান্ত বহিঃপ্রকাশ। মুসলমানদের এ রকম একতাবদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা’কে রাজনৈতিক পরিভাষায় خلافة(খিলাফত) এবং নেতা/রাষ্ট্রপ্রধানকে خليفة (খলিফা) বলে অবিহিত করা হয়ে থাকে। এজন্য, একটি ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফার প্রধানতম ফরয দায়িত্বই হল, “আল্লাহ’র নাজিলকৃত কুরআন ও তাঁর প্রেরিত সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর সুন্নাহ (আদর্শ পথ) অনুযায়ী গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনা করা”।
আরো খোলাসা করে বললে বলা যায়, একটি আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী খিলাফত কায়েম রয়েছে বলা যাবে তখন, যখন রাষ্ট্রের অংগ ৩ টির মধ্যে ‘ইসলামী খিলাফত’ কায়েম থাকবে। অর্থাৎ-
(১) রাষ্ট্রের আইন বিভাগ যখন চলবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী
(২) রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ যখন চলবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী
(৩) রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ যখন চলবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী
আল্লাহ’র জমিনে আল্লাহ’র ‘খিলাফত ব্যবস্থা’কে ছাটাই করে দিয়ে তদস্থলে যারা ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা’ কায়েম করতে চায় তাদের জন্য একটি উদাহরণ
আল্লাহ’র জমিনে বসবাসকারী ও তাঁর নেমক (রিজিক) খাওয়া ‘মুসলীম নামধারী ধর্মনিরপেক্ষতা’বাদীদের দৃষ্টান্ত হল নিম্নরূপ-
“আমরা আবারো উপরোল্লখীত সেই জনৈক অদ্বিতীয় সুউচ্চ মেধাবী জ্ঞানী ও অতুলনীয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক অঢেল ধ্বনসম্পদ সম্পন্ন ধ্বনকুবেড় ব্যক্তি-কে এই উদাহরণে টানবো, যিনি বিদেশে অবস্থান করে তার বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে নিজ দেশে যে বিশাল পরিসরের একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন –এই লক্ষ্য নিয়ে যে, কারখানাটি একদিন সেই ভাবে হৃষ্টপুষ্ট ও সমৃদ্ধিশীল হয়ে বেড়ে উঠে ডালপালা বিস্তার করবে, যেভাবে বেড়ে উঠলে তার অদ্বিতীয় সুউচ্চ মেধা জ্ঞান ও অতুলনীয় অভিজ্ঞতা‘র মর্যাদা রক্ষা পায়।
কারখানার মালিকের কাছে বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানী তাদের প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ও বিধিবিধান সম্বলীত মেনুয়াল (Manual/প্রতিষ্ঠানের সংবিধান) রচনা করে নেয়, নেয় কোম্পানী উন্নয়নের বহুমুখী পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা। সেখানে তার নিজের কারখানার জন্য তিনি নিজেই মেনুয়াল (কারখানার সংবিধান) রচনা করবেন -এটাই স্বাভাবিক। তিনি অতীব যত্নের সাথে একটি মাস্পারপিস মেনুয়াল (কারখানার সংবিধান) রচনা করে কারখানায় নিয়োগ দেয়া তার বিশ্বস্থ মেনেজার (কারখানা পরিচালনা প্রধান)-এর হাতে পাঠালেন, যেখানে তিনি তার কারখানা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কর্মী ও কাজ সম্বলীত মৌলিক বিধিবিধান ও নীতিমালা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন।
কারখানার উৎপাদন ও প্রশাসন -উভয়বিধ যাবতীয় কাজ কারবার সুষ্ঠ ভাবে চালানোর জন্য যে এক বিরাট সংখ্যক কর্মী বাহিনী নিয়োগ দিয়েছিলেন –বাহ্যত: যোগ্য ও বিশ্বস্থ মনে করে– তিনি বিদেশ থাকাবস্থায় কিছু কাল পর গোপনে জানতে পারলেন যে, ওই নিয়োগকৃত কর্মী বাহিনীর মধ্যে বেশির ভাগ কর্মীই চায়, “(১) কারখানাটি এখন থেকে আর কারখানা-মালিকের একার থাকবে না, বরং কর্মী বাহিনীর সকলের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে যেহেতু কারখানার যাবতীয় কার্যক্রম চলছে ও সমৃদ্ধি ঘটছে, তাই কারখানাটিতে ওই মালিকের পাশাপাশি সকল কর্মীদেরও মালিকানাধীকার বিদ্যমান থাকবে; (২) সুতরাং, কারখানার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন থেকে ঠিক করবে কর্মীরা নিজেরা মিলে; মূল মালিক নয় (কারণ, এটা কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার), (৩) কারখানার নীতিমালা ও বিধিবিধান চলবে কর্মীদের সম্মতিতে রচনাকৃত মেনুয়াল (কারখানার সংবিধান) মোতাবেক; মূল মালিকের দেয়া মেনুয়াল (কারখানার সংবিধান) বাতিল করা হবে, (৪) কারখানার মূল মালিক কর্তৃক নিয়োগকৃত পরিচালকারী-প্রধান (ম্যানেজার)কে বাদ দেয়া হবে (কারণ সে মালিকের বিশ্বস্থ ও পক্ষের লোক) এবং তার স্থলে তাদের পক্ষাবলম্বনকারী কর্মীদের মধ্য থেকেই যোগ্য কাউকে কারখানার নতুন পরিচালকারী-প্রধান (ম্যানেজার) হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, (৫) মূল মালিক যদি আবারো তার কারখানাকে পূর্বাবস্থায় ফিরয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে কর্মীদের মধ্যে যারা উপরোক্ত ৪টি পয়েন্টে বিশ্বাসী তাদের দ্বারা কঠোর ভাবে মালিক ও তার সমমনা কর্মীদের প্রতিরোধ করা হবে –চাই তাতে শহিদ (!) হয়ে যেতে হোক না কেনো।
কারখানার মূল মালিক যখন এসব কথা জানতে পারলেন, তখন রাগ ও গোসসা’য় যেন তার মাথার আগ্নেয়গিরি ফেটে লাভা বের হবার পালা। তিনি দ্রুত তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ওই মালিক-বিরোধী কর্মীদেরকে সাবধান করে দিয়ে বললেন, ‘অচিরেই আমি দেশে আসছি, তখন তোমাদের এ কাজের সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কিন্তু মূল মালিকের ‘সাবধানবাণী’র তোয়াক্কা তো করলই না, উল্টো নিজেদের দাবীর উপরে মরণপণ করে অটল হয়ে রইলো। এর কয়েক দিন পরই কারখানার মালিক-বিরোধী কর্মীরা একত্রে মিলে প্লান-প্রোগ্রাম করে সত্য সত্যই তাদের উপরোক্ত ৫টি দাবীকে কারখানায় বাস্তবায়ন করে ফেললো। আর ঘোষনা করলো, যে সকল কর্মী এখন তাদের পক্ষ নিয়ে এবং মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে লড়ে কারখানা ও কর্মীদের উপরোক্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে বাঁচাতে গিয়ে মাড়া যাবে, তাদেরকে কারখানার (বর্তমান) কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ‘শহিদ’ (!) হওয়ার মর্যাদা দেয়া হবে।
এবারে, মূল মালিক বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এলেন তার নিজের কারখানাকে বিরোধীবাদীদের হাত থেকে পূণরুদ্ধার করে সেটাকে সর্বদিক দিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে। এসেই তিনি সকল কর্মীদেরকে ডাক দিলেন তার পক্ষ নেয়ার জন্য, তিনি তাদেরকে শুনালেন তাদের উপরে তার কী কী ইহসান (অনুগ্রহ) রয়েছে, একসময় তারা কী ছিল আর আজ তারই বদৌলতে তারা জীবনের কত উন্নত শিখরে উঠেছে। তিনি তাদের বুঝালেন, এত কিছুর পরও কি তারা তার সাথে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবে, নেমক হারামী করতে পারবে? তিনি শেষ বারের মতো ডাক দিলেন- “আছো কি কেউ, যে তার প্রতি আমার ইহসানের কথা স্মরণ করবে এবং আজ আমার পক্ষ নিয়ে আমার কারখানা আমার কাছে ঠিক পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পাশে থাকবে। যে এ কাঝে আমার পক্ষ নিয়ে আমার এ সংগ্রামে অংশ নিবে, আমি তাকে এত পুরষ্কৃত করবো যে তার চিন্তার বাইরে”? তখন দেখা গেল, তার আহবানে সারা দিয়েছে- বরখাস্তকৃত সাবেক ম্যানেজার ও সমমনা অল্প কিছু সংখ্যক কর্মীর একটি বাহিনী (কেননা বাদবাকি কর্মীদের বেশির ভাগই তো বিরোধীবাদীদের দলের চলে গেছে)। যেদিন মূল মালিক কারখানা উদ্ধারের জন্য এলেন, সেদিন কর্মীদের বেশির ভাগ অংশ মালিকের বিরুদ্ধে অবস্থান করে কারখানার গেটের সামনে মালিককে প্রতিরোধ করে প্রয়োজনে শহিদ(!) হয়ে যাওয়ার জন্য যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আর অপর পক্ষে, বিরোধীবাদীদেরকে উৎখাত করার জন্য –এমনকি প্রয়োজনে শহিদ(!) হয়ে যাওয়ার জন্য– মূল মালিকের পক্ষ্যে জরো হল মালিকের সমমনা সামান্য কিছু সংখ্যক কর্মী বাহিনী। দু পক্ষ মুখোমুখী হয়ে দাঁড়ালো”।
এখন পাঠকমন্ডলীর কাছে আমার প্রশ্ন, বুকে হাত দিয়ে আপনার মনের কাছে সত্য উত্তর চেয়ে জিজ্ঞেস করুন তো, ‘যদি আপনার নিজের টাকায় প্রতিষ্ঠিত আপনার নিজের মালিকানাভুক্ত কারখানার কর্মচারী’রা এভাবে আপনার বিপক্ষে চলে যেতো এবং আপনার কারখানা তৈরীর পিছনে আপনার স্বপ্ন, অর্থ, মেধা ও শ্রম’কে ভুলন্ঠিত করে দেয়ার স্পর্ধা দেখাতো, তাহলে আপনি সেই বিরোধীতাকারীদেরকে তখন কী চোখে দেখতেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিতেন?
(১) আপনি বলতেন, ‘এরা আমার কারখানা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিষ্কার প্রত্যাক্ষানকারী, প্রকাশ্য অস্বীকারকারী -একটি দল’।
(২) আপনি বলতেন, ‘এরা আমার রচিত কারখানা-মেনুয়ালের (কারখানার সংবিধানের) বাতিলকারী, প্রকাশ্য প্রত্যাক্ষানকারী, প্রকাশ্য অস্বীকারকারী -একটি দল। এরা আমার জ্ঞান গরিমা ও নির্দেশনামার অবমাননাকারী, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যকারী’।
(৩) আপনি বলতেন, ‘এরা আমারই কারখানা উপরে আমার একচ্ছত্র মালিকানা ও কর্তৃত্বের প্রকাশ্য প্রত্যাক্ষানকারী, প্রকাশ্য অস্বীকারকারী ও অবিশ্বাসী-একটি দল’।
(৪) আপনি বলতেন, ‘এরা আমার প্রকাশ্য বিরোধীতাকারী (মুখালিফ), প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষনাকারী (বাগী)’ -একটি দল’।
(৫) আপনি বলতেন, ‘এরা এতদিন আমার খেয়ে পড়ে জীবন চালিয়ে আমার সাথে প্রকাশ্য নেমক-হারামী গাদ্দারী করেছে’।
(৬) আপনি বলতেন, ‘আমি তাদের এ কাজে জড়িত সকলকে আমার কারখানা থেকে বের করে দিবো এবং তাদের স্থানে আমার সমমনা ও বিশ্বস্থ কর্মী বাহিনী নিয়োগ দান করবো।
(৭) আপনি বলতেন, ‘এরা কারখানায় ফাসাদ সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠি’।
(৮) আপনি বলতেন, ‘আমি এদের সাথে জড়িতদের সকলকে জেলের শাস্তিতে নিপতিত করে তবেই ছাড়বো’।
(৯) আপনি বলতেন, ‘এদের মধ্যে যার যারা আমার পক্ষের কর্মীদেরকে হত্যা (শহিদ) করেছে, সেই সন্ত্রাসীদেরকে আমি ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে তবেই ছাড়বো’।
(১০) আপনি বলতেন, ‘এদের মধ্যে যার যারা কারখানায় সন্ত্রাসী তান্ডব চালাতে গিয়ে মড়েছে এবং এই সুবাদে মরণোত্তর ‘শহিদ’ (!) খেতাব পেয়েছে, আমি তাদের ‘শহিদ’ খেতাবকে তো বাতিল করবই, সাথে সাথে তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ খেতাব দেয়ারও ব্যবস্থা করবো। কেননা, বীর তো আমার পক্ষ নিয়ে লড়াইকারী কর্মীরা, আর শহিদ তো তারা যারা আমার কারখানা পূণরুদ্ধার করণার্থে লড়তে গিয়ে জীবন দিয়েছে।
(১১) আপনি বলতেন, ‘এদের মধ্যে যারা আমার বিপক্ষে মড়ে ও ‘শহিদ’ খেতাব পেয়ে আমার কারখানার সীমানার ভিতরে দাফন হয়েছে, তাদের পুরো কবরকে কারখানা থেকে বের করে নিয়ে অন্য কোনো ঝোপঝারে মাটিচাঁপা দেয়ার ব্যবস্থা করবো। আমার মাটিতে আমার দুশমনরা মর্যাদায় ভুষিত হয়ে শুয়ে থাকবে -এটা আমি বরদাস্ত করতে পারবো না’।