বদরপূর্ব গাজওয়া ও সারিয়া সমূহ – মহানবী ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের জিহাদ – ১
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন]
গাজওয়া (غَزْوَةٌ) ও সারিয়া (سَرِيَّةٌ) কী? এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও যদ্ধাভিজানের তালিকা
গাজওয়া (غَزْوَةٌ): যে সকল জিহাদী অভিযানে রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজে সশরীরে অংশগ্রহন করেছেন এবং গোটা মুজাহিদ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন, সে সকল জিহাদকে সিরাতের পরিভাষায় ‘গাজওয়া’ হিসেবে অবিহিত করা হয়ে থাকে -চাই সেই অভিয়ানে শেষপর্যন্ত যুদ্ধ সংঘটিত হোক চাই না হোক। নবুওতী জীবনে রাসুলুল্লাহ ﷺ সশরীরে মোট ২৭ টি গাজওয়ায় অংশ নিয়েছিলেন।
সারিয়া (سَرِيَّةٌ) বা বা’স (بعث): আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ কোনো কোনো অভিযানে নিজে সশরীরে অংশগ্রহন করেননি, বরং তিঁনি ছোট ছোট মুজাহিদ বাহিনীকে -দুশমনদের কোনো দলের বিপক্ষে- জিহাদী অভিযানের অংশ হিসেবে প্রেরণ করতেন কিংবা ইসলামের দুশমনদের পিছু ধাওয়া করা বা তাদের গতিবিধির উপরে নজরদারী করার জন্য পাঠাতেন, এ ধরনের ছোট ছোট অভিযানকে সিরাতের পরিভাষায় ‘সারিয়া’ বা ‘বা’স’ হিসেবে অবিহিত করা হয় –চাই শেষপর্যন্ত সেই অভিয়ানের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হোক চাই না হোক।। সারিয়ায় প্রেরিত সৈন্যবাহিনীর লোকবল সাধারণত সংখ্যায় অল্প হত, কারণ সারিয়া প্রেরণের উদ্দেশ্য হত মূলত: দুশমনদের ছোট ছোট দলের উপরে বিক্ষিপ্ত ভাবে আক্রমন চালানো, যেটা কখনো কখনো হত দুশমনদের সাথে ছোটখাটো যুদ্ধ বা সংঘর্ষ আকারে, কখনো কখনো দুশমনদের অর্থনৈতিক শক্তির অবক্ষয় ঘটানোর জন্য তাদের কাফেলার উপরে আক্রমন চালিয়ে তা ইসলামী খিলাফতের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার উদ্দেশ্যে, কখনো দুশমনদের কোনো দলের পিছু ধাওয়া দিয়ে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে। [ফি জিলালিস সিরাহ, আবু ফারিস- পৃষ্ঠা ১২]
গাজওয়া (غَزْوَةٌ) ও সারিয়া (سَرِيَّةٌ)-এর মোট সংখ্যা কত -তা নির্ণয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনার কারণ
রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর অংশগ্রহনকৃত গাজওয়া’র সংখ্যা এবং তাঁর প্রেরিত বিভিন্ন ‘সারিয়া’র সংখ্যা নির্ণয়ে আলেমগণের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর অংশগ্রহনকৃত গাজওয়া’র সংখ্যা ১৯ টি’র কথা বলেছেন যায়েদ ইবনে আরকাম রা.; ২১ টি’র কথা বলেছেন যাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এবং সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব; আর ২৭ টি’র কথা বলেছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাক, ইমাম ওয়াকিদী, ইমাম ইবনে সা’দ, ইমাম ইবনুল যাওজী প্রমুখ।
রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর প্রেরণকৃত সারিয়া’র সংখ্যা ৩৫ টি’র কথা বলেছেন ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ.; ৩৮ টি’র কথা বলেছেন ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাক; আর ৪০ টি’র কথা বলেছেন ইমাম ইবনে সা’দ রহ., ৪৮ টি’র কথা বলেছেন ইমাম ওয়াকিদী রহ., এবং ৫৬ টি’র কথা বলেছেন ইমাম ইবনুল যাওজী রহ.।
গাজওয়া এবং সারিয়া’র সংখ্যা নির্ণয়ে ঐতিহাসিক আলেমগণের মাঝে এসব মতভিন্নতার অনেক কারণ চিহ্নিত করেছেন। যেমন: (১) কোনো কোনো গাজওয়া বা সারিয়া সম্পর্কে বর্ণনাকারীর কাছে ইলম না পৌছানো, (২) কোনো গাজওয়া এবং সারিয়া পরষ্পর নিকটতম সময়ে সংঘটিত হওয়ায় কেউ কেউ দুই বা ততধিক অভিযানকে একই অভিযান মর্মে গণ্য করে হিসেব করেছেন, আবার কেউ কেউ সেগুলোকে আলাদা আলাদা করে হিসেবে ধরেছেন, (৩) কেউ কেউ মাত্র দুজন/তিন জনের সমহ্নয়ে প্রেরিত জামাআতকেও সারিয়া হিসেবে গণ্য করেছেন, কেউ কেউ সেগুলোকে সারিয়া হিসেবে গণ্য করেননি বরং বিচ্ছিন্ন অভিযান হিসেবে গণ্য করেছেন, ইত্যাদি। এধরনের বিভিন্ন কারণে ঐতিহাসিকদের মাঝে গাজওয়া এবং সারিয়া’র সংখ্যা গণনায় কম বেশি হয়েছে। [শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২২০]
বদরপূর্ব উল্লেখযোগ্য কিছু গাজওয়া (غَزْوَةٌ) ও সারিয়া (سَرِيَّةٌ)-এর বিবরণ
বলাবাহুল্য, গাজওয়া হোক বা সারিয়া -এখানে সবগুলো জিহাদী অভিযানের কথা বিস্তারিত উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আমরা এখানে নমুনা স্বরূপ ইল্লেখযোগ্য গাজওয়া এবং সারিয়া’র ব্যাপারে কিছু কথা আরোজ করবো, যাতে জিহাদ বিষয়ক আমাদের আলোচনা ও আনুসঙ্গিক মাসলা মাসায়েল বোঝা পাঠকবৃন্দের জন্য সহজ হয়।
সারিয়ায়ে সাইফুল বাহর (سرية سيف البحر)
রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর মদিনায় হিজরতের প্রায় তিন মাস পর, তথা ১ম হিজরীর রামাযান মাস (মোতাবেক মার্চ ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এ তিঁনি তাঁর চাচা হামযা বিন আব্দিল মুত্তালিব রা.-এর নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন মুহাজির সাহাবীগণের সমন্নয়ে গঠিত একটি মুজাহিদ বাহিনীকে আরবের ঈস (العِيْص)’ নামক সমূদ্র উপকুলে অবস্থিত ‘সাইফুল বাহর’-এর দিকে (যা মদিনা থেকে দক্ষিন-পশ্চিমে প্রায় ২৫০ কি:মি: দূরে অবস্থিত, সেখানে) প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল, মক্কার বিশিষ্ট নেতা আবু জাহল ইবনে হিশাম-এর নেতৃত্বাধীন প্রায় ৩০০ জন মুশরিকের একটি কাফেলাকে হামলা করা, যা সুদূর শাম থেকে ওই এলাকা দিয়েই মক্কার দিকে যাওয়ার কথা ছিল। যখন ‘সাইফুল বাহর’ এলাকায় উভয় পক্ষ মুখোমুখি হল, তখন জুহাইনা গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি মাজদী ইবনে আমর জুহানী -যে উভয় পক্ষের সাথেই চুক্তিবদ্ধ ছিল- সে সামনে এগিয়ে আসে। যার ফলে সেদিন কোনো যুদ্ধ বা সংঘর্ষ ছাড়াই উভয় দল নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে ফিরে আসে; মুশরিকরা মক্কায় এবং মুজাহিদগণ মদিনায়। [কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/৯; সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৫৯৫; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৪৩; যাদুল মাআদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম- ৩/১৪৬; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২২৯; সিরাতে হালাবিয়্যাহ- ৩/২১৪; আর-রাহীকুল মাখতুম- ১/১৫৩]
সারিয়ায়ে রাবিগ (سرية رابغ)
রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর মদিনায় হিজরতের প্রায় আট মাস পর, তথা ১ম হিজরীর শাওয়াল মাস (মোতাবেক এপ্রিল ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এ উবায়দাহ বিন হারিছ রা.-এর নেতৃত্বে প্রায় ৬০/৮০ জন মুহাজির সাহাবীগণের সমন্নয়ে গঠিত একটি অশ্বারোহি মুজাহিদ বাহিনীকে আরবের ‘রাবিগ’ এলাকায় প্রেরণ করেন। এ অভিযানের সাদা পতাকা দেয়া হয় মিসতাহ বিন আছাছাহ রা.-এর হাতে। মুজাহিদগণ সেখানে পৌছলে তাঁরা মুখামুখী হন মক্কার মুশরেকদের ঘোর-সওয়ার ও পদাতিক মিলে প্রায় ২০০ জন সৈন্যের সাথে, যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আবু সুফিয়ান বিন হারব (অথবা ইকরামাহ বিন আবু জাহল কিংবা মিকরায বিন হাফস)। সেদিনও উভয় পক্ষের মাঝে কোনো যুদ্ধ বা সংঘর্ষ হয়নি। মুসলমানদের পক্ষ থেকে শুধু সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. একটি তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে, সা’দ রা.-ই হলেন প্রথম মুসলমান, যিনি জিহাদের অভিযানে ইসলামে দুশমনকে উদ্দেশ্য করে প্রথম তীর নিক্ষেপ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। সেদিন মিকদাদ বিন আমর রা. এবং উৎবা বিন গাযওয়ান রা. নামের দু’জন মুসলমানও মুশরেকদের কাফেলার সাথে এসেছিলেন, যাঁরা মুশরেকদের কড়া নজরদারী ও নিয়ন্ত্রনের কারণে এর আগে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে পারেননি। তাঁদের দুজনেরই উদ্দেশ্য ছিল, সুযোগ বুঝে মদিনা থেকে আগত মুসলমানদের দলে শামিল হয়ে যাওয়া। উভয় পক্ষ যখন মুখোমুখী হয়, তখন তাঁরা দুজনেই সুযোগ বুঝে মুসলমানদের দলে এসে শামিল হয়ে যান। [সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৫৯১; কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/১০; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ২/৪; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৪৩; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ১/২৫৯; যাদুল মাআদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম- ৩/১৪৭; সিরাতে হালাবিয়্যাহ- ৩/১৩৫; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২২৬; আর-রাহীকুল মাখতুম- ১/১৫৩]
সারিয়ায়ে খাররার (سرية الخرّار)
রাসুলুল্লাহ ﷺ ১ম হিজরীর যুল-ক্বা’দাহ মাস (মোতাবেক মে ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এ সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.-এর নেতৃত্বে প্রায় ২০ জন মুহাজির সাহাবীগণের সমন্নয়ে গঠিত একটি পদাতিক মুজাহিদ বাহিনীকে প্রেরণ করেন। এ অভিযানের সাদা পতাকা দেয়া হয় মিক্বদাদ বিন আমর রা.-এর হাতে। মুজাহিদ বাহিনীটি পায়ে হেটে হেটে সফর করছিলেন, তাঁরা দিনে কোথাও বিশ্রাম করতেন এবং রাতে সফর করে করে এগুতেন, এভাবে কয়েকদিন অতিক্রান্ত হবার পর পঞ্চমদিন সকালে আরবের ‘খাররার’ এলাকায় গিয়ে পৌঁছলে তাঁরা জানতে পারেন যে, মক্কার মুশরিকদের কাফেলাটি ততক্ষনে ওই স্থান অতিক্রম করে মাক্কাভিমুখে নাগালের বাইরে চলে গেছ। ফলে তাঁরা মদিনায় ফিরে আসেন। [কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/১১; সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৬০০; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ২/৪; তারিখুল উমাম, ইমাম তাবারী- ২/৪০৪; জাওয়ামিউস সিরাহ, ইমাম ইবনে হাযাম- ১/৭৮; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৫১; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ১/২৬২; যাদুল মাআদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম- ৩/১৪৭; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২২৮; সিরাতে হালাবিয়্যাহ- ৩/২১৬; আর-রাহীকুল মাখতুম- ১/১৫৩]
গাজওয়ায়ে আবওয়া/ওয়াদ্দান (غزوة الأبواء أو ودّان)
মক্কার কুরায়েশদের একটি বাণিজ্য কাফেলা মক্কা থেকে শাম-এর দিকে রওনা হয়েছে মর্মে সংবাদ জানতে পেরে রাসুলুল্লাহ ﷺ ২য় হিজরীর সফর মাস (মোতাবেক আগষ্ট ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এর প্রারম্ভে তিঁনি নিজ নেতৃত্বে প্রায় ৬০ জন মুহাজির সাহাবা’র সমন্নয়ে গঠিত একটি মুজাহিদ বাহিনীকে সঙ্গে করে ওই কাফেলাটির উপরে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। রওনা হবার আগে তিঁনি সা’দ বিন উবাদাহ রা.-কে মদিনার ভারপ্রাপ্ত গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত করে যান। এ অভিযানে যুদ্ধের সাদা পতাকা দেয়া হয় হামযা বিন আব্দিল মুত্তালিব রা.-এর হাতে। রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে মদিনা থেকে দক্ষিন-পশ্চিম দিকে এগুতে এগুতে (প্রায় ২৫০ কি:মি: দূরে অবস্থিত) ‘আবওয়া’ এলাকায় গিয়ে পৌছেন, তখন জানতে পারেন যে, কুরায়েশ’দের ওই কাফেলাটি ততক্ষনে ওই স্থান অতিক্রম করে মাক্কাভিমুখে নাগালের বাইরে চলে গেছ। আরবের ‘ওয়াদ্দান’ এলাকটি ‘আবওয়া’ থেকে মাত্র ছয়/আট মাইলের মতো দূরে বিধায়, এই অভিযানকে গাজওয়ায়ে ওয়াদ্দানও বলা হয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ পনের দিন পর কোনো রকম রক্তপাত ছাড়াই এ যুদ্ধাভিযান থেকে মদিনায় ফিরে আসেন। তবে আসার পথে তিঁনি সেখানে ‘বনু দ্বামরাহ’ (بنو ضمرة) গোত্রের সর্দার মাখশী বিন আমর-এর সাথে একটি সন্ধি-চুক্তি করে এসেছিলেন। বস্তুত: এটাই ছিল রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সশরীরে অংশগ্রহন করা তাঁর জীবনের প্রথম জিহাদী অভিযান। [আনসাবুল আশরাফ, ইমাম বালাযুরী- ১/২৮৭; সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৫৯১; কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/১২; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ২/৫; আস-সিরাতুন নাববিয়্যাহ, ইমাম ইবনে হিব্বান- ১/১৫৩; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৩৭; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ১/২৫৯; আল-কামেল, ইবনুল আছীর- ২/১০; তারিখুল ইসলাম, ইমাম যাহবী- ১/২২; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ৩/২৪২; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৭/২১৭; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২২৯; আর-রাহীকুল মাখতুম- ১/১৫৩; তোহফায়ে নু’মানী- ২৩ পৃষ্ঠা]
ওই সন্ধি-চুক্তিটিতে লিখা ছিল– بسم الله الرحمن الرحيم، هذا كتاب من محمد رسول الله، لبني ضمرة: بأنهم آمنون على أموالهم وأنفسهم، وأنّ لهم النصر على من رامهم، إلا أن يحاربوا في دين الله ما بل بحر صوفة. وإن النبي إذا دعاهم لنصره أجابوه. عليهم بذلك ذمّة الله وذمّة رسوله. ولهم النّصر على من برّ منهم وأتّقى. اورده السهيلي في الروض الأنف في تفسير السيرة النبوية لابن هشام: ٣/٤٢ ، و محمد حميد الله الحيدر آبادي الهندي في مجموعة الوثائق السياسية للعهد النبوي والخلافة الراشدة ، فهرس الكتاب، القسم الثاني العهد النبوي بعد الهجرة، معاهدة مع بني ضمرة : ص ٢٦٦ رقم ١٥٩– “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (দয়াময় করুনাময় আল্লাহ’র নামে শুরু করছি)। এই (সদ্ধি-চুক্তি)পত্রটি আল্লাহ’র রাসুল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে বনু দ্বামরাহ (গোত্রের) জন্য (লিখিত হচ্ছে)। তারা যদি আল্লাহ’র দ্বীন (ইসলাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে না নামে, তাহলে তাদের জান ও মাল সমূহ (মুসলমানদের হাত থেকে) নিরাপদ থাকবে, আর তাদের বিরুদ্ধে যারা নামবে (তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য মুসলমানরা এই বনু দ্বামরাহ গোত্রকে সথাসাধ্য) সাহায্য করবে। (এ সন্ধিচুক্তি ততদিন পর্যন্ত) বহাল থাকবে, যাবৎ না সমূদ্র শুকিয়ে যায়। আর নবী (মুহাম্মাদ) যদি তাদেরকে তাঁর (দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানদের) সাহায্যার্থে (কখনো) আহবান জানায়, তাহলে তারা যদি তাঁর আহবানে সারা দেয়, তাহলে এপ্রেক্ষিতে তাদের উপরে থাকবে আল্লাহ’র জিম্মাদারী ও তাঁর রাসুলের জিম্মাদারী। আর যারা তাদের মধ্যে সৎকর্মশীল ও দায়িত্বে-যত্নবান থাকবে তাদেরকে সাহায্য করা হবে”। [আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৫২; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ঈবাদ, ইমাম সালিহী- ৪/১৫; সিরাতুল হাবাবিয়্যাহ, ইমাম হালাবী- ২/১৭৪; মাজমুআতুল ওয়াছায়িকিস সিয়াসিয়াতি লি-আহাদিন নাবুউয়ী ওয়া খিলাফাতির রাশিদাহ, ড. হামিদুল্লাহ- ১৬০ পৃষ্ঠা/পত্র নম্বর ১৫৯ ; কিতাবুস সুন্নাহ, সাইয়্যেদ সাবেক- ২/৭০৫]
গাজওয়ায়ে বুওয়াত্ব (غزوة بواط)
মক্কার কুরায়েশদের একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলা শাম থেকে মক্কার দিকে রওনা হয়েছে মর্মে সংবাদ জানতে পেরে রাসুলুল্লাহ ﷺ ২য় হিজরীর ‘রাবিউল আউয়াল’ (বা ‘রাবিউস ছানি’) মাস (মোতাবেক সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এ তিঁনি নিজ নেতৃত্বে প্রায় ২০০ জন মুহাজির সাহাবা’র সমন্নয়ে গঠিত একটি মুজাহিদ বাহিনীকে সঙ্গে করে ওই কাফেলাটির উপরে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। রওনা হবার আগে তিঁনি মুহাজির সাহাবী সাইব বিন উসমান বিন মাযউন রা. (কিংবা সা’দ ইবনে মুয়ায রা.)-কে মদিনার ভারপ্রাপ্ত গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত করে যান। এ অভিযানে যুদ্ধের সাদা পতাকা দেয়া হয় সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.-এর হাতে। কুরায়েশদের ওই কাফেলায় লোকসংখ্যা ছিল প্রায় একশজনের মতো, যাদের মধ্যে উমাইয়্যাহ বিন খালফও ছিল, আর তাদের সাথে ছিল প্রায় আড়াই হাজার উট। রাসুলুল্লাহ ﷺ মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে (মদিনা থেকে পশ্চিম দিকে) এগুতে এগুতে যখন (প্রায় ৭৫ কি:মি: দূরে অবস্থিত) ‘বুওয়াত্ব’ এলাকায় গিয়ে পৌছেন, তখন জানতে পারেন যে, কুরায়েশ’দের ওই কাফেলাটি ততক্ষনে ওই স্থান অতিক্রম করে মাক্কাভিমুখে নাগালের বাইরে চলে গেছ। ফলে তিঁনি মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে মদিনায় ফিরে আসেন। [আনসাবুল আশরাফ, ইমাম বালাযুরী- ১/২৮৭; কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/১২; সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৫৯৮; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ২/৫; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৪৯; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ১/২৬২; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ৩/২৪৬; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২৩১; আর-রাহীকুল মাখতুম- ১/১৫৩; তোহফায়ে নু’মানী (মাগাযীয়ে বুখারী)- ২৫ পৃষ্ঠা]
গাজওয়ায়ে যুল-উশাইরাহ (غَزْوَةُ ذى العُشيرة)
মক্কার কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তাদের একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলা মক্কা থেকে শাম-এর দিকে রওনা হয়েছে মর্মে সংবাদ জানতে পেরে রাসুলুল্লাহ ﷺ ২য় হিজরীর ‘জমাদিউল আউআল’ (বা ‘জমাদিউছ ছানি’) মাস (মোতাবেক নভেম্বর/ডিসেম্বর ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এ তিঁনি নিজ নেতৃত্বে প্রায় ১৫০/২০০ জন মুহাজির সাহাবা’র সমন্নয়ে গঠিত একটি মুজাহিদ বাহিনীকে সঙ্গে করে ওই কাফেলাটির উপরে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। এসময় তিঁনি প্রায় ৩০টি উট সঙ্গে নেন, যাতে মুজাহিদগণ পালাক্রমে তাতে আরোহন করে করে সফর করতে পারেন। রওনা হবার আগে তিঁনি আবু সালামাহ ইবনু আব্দিল আসাদ আল-মাখযুমী রা.-কে মদিনার ভারপ্রাপ্ত গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত করে যান। এ অভিযানে যুদ্ধের সাদা পতাকা দেয়া হয় হামযা বিন আব্দিল মুত্তালিব রা.-এর হাতে। রাসুলুল্লাহ ﷺ মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে (মদিনা থেকে পশ্চিম দিকে) এগুতে এগুতে যখন (প্রায় ৪০ কি:মি: দূরে অবস্থিত) ইয়াম্বু’র পার্শ্ববর্তী ‘যুল উশাইরা’ এলাকায় গিয়ে পৌছেন, তখন জানতে পারেন যে, কুরায়েশদের ওই কাফেলাটি কয়েকদিন আগেই ওই স্থান অতিক্রম করে শাম অভিমুখে নাগালের বাইরে চলে গেছ। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ তখনই মদিনায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা না দিয়ে ‘জমাদিউল আউয়াল’-এর বাকি দিনগুলো এবং ‘জমাদিউস ছানি’র কিছু দিন ‘যুল উশাইরা’ এলাকাতেই অবস্থান করেন (সম্ভবত: তিঁনি কাফেলাটির ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন)। এ সময় রাসুলুল্লাহ ﷺ সেখানে ‘বনু মুদলিজ’ (بنو مدلج) গোত্রের সাথেও সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করেন, এরপর মনিদায় ফিরে আসেন। (উল্লেখ্য: কুরাইশদের এই কাফেলাটি যখন আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে শাম থেকে ফিরে আসতে থাকে, তখন এদেরকে কেন্দ্র করেই এঘটনার প্রায় তিন মাস পর (২য় হিজরীর ‘রামাযান’ মাসে) ইসলামের সুমহান ‘বদর জিহাদ’ সংঘটিত হয়, যার আলোচনা আমরা সামনের কোনো পৃষ্ঠায় বিস্তারিত উল্লেখ করবো)। [সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৫৯৮; কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/১২; আনসাবুল আশরাফ, ইমাম বালাযুরী- ১/২৮৭; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ২/৬; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৪৯; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ১/২৬৩; যাদুল মাআদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম- ৩/১৬৬; তারিখুল ইসলাম, ইমাম যাহাবী- ২/৪৭; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ৩/২৪৬; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৭/২১৮; সিরাতুল হাবাবিয়্যাহ, ইমাম হালাবী- ২/১৭৫; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২৩১; আর-রাহীকুল মাখতুম- ১/১৫৩; তোহফায়ে নু’মানী (মাগাযীয়ে বুখারী)- ২৭ পৃষ্ঠা]
গাজওয়ায়ে সাফওয়ান/বদরে উলা (غَزْوَةُ سَفْوان أو غَزْوَةُ بَدْرٍ الْأُولَى)
‘গাজওয়ায়ে যুল-উশাইরা’ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনায় অবস্থান করছিলেন, এরই প্রায় ১০ দিন যেতে না যেতেই কুরাইশদের এক নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি কুরয ইবনে যাবির আল-ফিহরী এক রাতে মদিনার চারণ ভূমিতে আক্রমন চালিয়ে কিছু উট ও ছাগল লন্ঠন করে নিয়ে চলে যায়। রাসুলুল্লাহ ﷺ এ খবর জানতে পেরে, ২য় হিজরীর জমাদিউল আউআল’ বা ‘জমাদিউছ ছানি’ মাস (মোতাবেক নভেম্বর/ডিসেম্বর ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এ তিঁনি নিজ নেতৃত্বে প্রায় ৭০ জন মুহাজির সাহাবা’র সমন্নয়ে গঠিত একটি মুজাহিদ বাহিনীকে সঙ্গে করে ওই লন্ঠনকারী দলটিকে ধরার জন্য এগুতে থাকেন। রওনা হবার আগে তিঁনি যায়েদ বিন হারিসাহ রা.-কে মদিনার ভারপ্রাপ্ত গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত করে যান। মুজাহিদ বাহিনীর পতাকা দেয়া হয়েছিল আলী বিন আবি তালিব রা.-এর হাতে। তাঁরা মদিনা থেকে দক্ষিন পশ্চিম দিকে এগুতে এগুতে যখন (প্রায় ১৫০ কি:মি: দূরে অবিস্থত) ‘সাফওয়ান’ এলাকা পর্যন্ত গিয়ে পৌছেন, তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ জানতে পারেন যে, কুরয ইবনে যাবির আল-ফাহরী ততক্ষনে মক্কাভিমুখে নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে তিঁনি মদিনায় ফিরে আসেন। সাফওয়ান এলাকাটি বদরের পাশ্ববর্তী এলাকা হওয়ায় একে ‘গাজওয়ায়ে বদরে উলা’ (প্রথম বদর যুদ্ধাভিযান)ও বলা হয়ে থাকে। [সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৬০১; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ২/৬; জাওয়ামিউস সিরাহ, ইমাম ইবনে হাযাম– ১/৭৮; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৫১; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ১/২৬৩; তারিখুল ইসলাম, ইমাম যাহাবী- ২/৪৮; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ৩/২৪৭; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২৩৬; সিরাতুল মুস্তাফা, ইদ্রিস কান্দালাভী- ২/৪৯; তোহফায়ে নু’মানী (মাগাযীয়ে বুখারী)- ২৯ পৃষ্ঠা]
উল্লেখ্য, কুরয ইবনে যাবির আল-ফাহরী রা. পরবর্তীতে ইসলাম কবুল করেন। ত্বাবরাণীর রেওয়ায়েতে আছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন উরাইনীদের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য ২০ জন অশ্বারোহী মুজাহিদকে প্রেরণ করেছিলেন তখন এই কুরয ইবনে যাবির আল-ফাহরী রা.-কেই বাহিনী-প্রধান বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। পরে মক্কা বিজয়ের দিন তিঁনি মুশরেকদের হাতে শহিদ হয়ে যান। [উসদুল গাবাহ, ইবনুল আছীর- ৪/৪৪৩ নম্বর ৪৪৪৯; আল-ইসাবাহ, ইবনে হাজার- ৩/২৯০]
সারিয়ায়ে নাখলাহ (سرية نخلة)
রাসুলুল্লাহ ﷺ ২য় হিজরীর রজব মাস (মোতাবেক জানুয়ারী ৬২৪ খৃষ্টাব্দ)-এ আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ আল-আসাদী রা.-এর নেতৃত্বে প্রায় ৮/১২ জন মুহাজির সাহাবীগণের সমন্নয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র বাহিনীকে মক্কা থেকে দক্ষিনে ‘মক্কা ও তায়েফ’-এর মধ্যবর্তীে একটি স্থানে অবস্থিত ‘নাখলাহ’ উপত্যকার দিকে প্রেরণ করেন, যাতে তাঁরা সেখান থেকে মক্কার মুশরেকদের গতিবিধি সম্পর্কে খবরাখবর যোগার করতে পারেন।
তবে, এই বাহিনীটিকে পাঠানোর আগে রাসুলুল্লাহ ﷺ বাহিনীর আমীর আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ আল-আসাদী রা.-এর কাছে একটি পত্র হস্তান্তর করে এই মর্মে নির্দেশ দেন যে, এ সফরের দুই দিন অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত (অথবা বলেন, ‘بطن مَلَل -বাতনে মালাল’-এ না পৌছা পর্যন্ত) যেন পত্রটি খোলা না হয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশ মোতাবেক আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রা. সফর দু’দিন পার হওয়ার পর (অথবা ‘বাতনে মালাল’-এ পৌছানোর পর) পত্রটি খুলে দেখেন যে, তাতে লিখা আছে- إِذَا نَظَرْتَ فِي كِتَابِي فَامْضِ حَتَّى تَنْزِلَ نَخْلَةَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالطَّائِفِ فَتَرْصُدَ بِهَا قُرَيْشًا وَتَعْلَمَ لَنَا مِنْ أَخْبَارِهِمْ – “(হে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ!) তুমি যখন আমার (এ) পত্রটির মধ্যে দৃষ্টি বুলাবে, তখন (তোমার দায়িত্ব হবে এই যে, তুমি তোমার সাথিদেরকে নিয়ে) সামনে অগ্রসর হতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত না মক্কা ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী (এলাকা) নাখলা’য় গিয়ে অবতরন করো। তুমি সেখানে কুরায়শদের জন্য অপেক্ষা করবে এবং তাদের খবরাখবর আমাদেরকে জানাতে থাকবে”। আরেক রেওয়ায়েত মতে সেখানে আরো নির্দেশ ছিল: لا تكرهن أحدا من أصحابك على المسير معك – “তুমি তোমার সাথিদের মধ্যে কাউকেও তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার সঙ্গে যাওয়ার জন্য বাধ্য করবে না”। আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রা. পত্রটি পড়ে বললেন: سَمْعًا وطاعَةً لِلَّهِ ولِرَسُولِهِ – “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথা শুনলাম এবং (তা বিনা-দ্বিধায়) মেনে নিলাম”। এরপর তিনি তার সাথিগণের কাছে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর পত্রটির কথা প্রকাশ করে বললেন: قد نهاني أن أستكبره أَحَدًا مِنْكُمْ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يُرِيدُ الشَّهَادَةَ وَيَرْغَبُ فِيهَا فَلْيَنْطَلِقْ، وَمَنْ كَرِهَ ذَلِكَ فَلْيَرْجِعْ فَأَمَّا أَنَا فَمَاضٍ لِأَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – “তোমাদের মধ্যে কাউকেও (আমার সঙ্গি করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে) বাধ্য করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি শাহাদাত লাভে ইচ্ছুক, যে এর জন্য উৎগ্রীব, সে আমার সাথে আসুক। আর যে ব্যাক্তি এ(ই শাহাদাত)কে অপছন্দ করে, সে ফিরে যেতে পারে। আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশ মোতাবেক সামনে অগ্রসর হবো”। একথা শুনে সেখানে উপস্থিত সকল সাহাবায়ে কেরাম রা. এক সঙ্গে সামনে অগ্রসর হতে থাকলেন।
ঘটনাক্রমে রাস্তাপথে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. এবং উৎবাহ বিন গাযওয়ান রা.-এর উট হারিয়ে গেলে তাঁরা উটের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন, ফলে দলছাড়া হলে অনেক পিছনে পড়ে যান। সাহাবাদের জামাআতটি হিজাজ ভূমি হয়ে এগুতে থাকে এবং এভাবে একসময় ‘নাখলা’য় গিয়ে পৌছে। সেদিনটি ছিল রজব মাসের শেষ তারিখ এবং ঘটনাক্রমে ওই দিনই কুরায়েশদের একটি বাণিজ্য কাফেলা শাম থেকে ওই রাস্তাপথ ধরেই মক্কার দিকে যাচ্ছিল। মুজাহিদ বাহিনী ওদেরকে দেখতে পেয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকেন যে, তাদের উপরে আক্রমন করবেন কিনা? সেসময় আক্রমন করাটা এজন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, আরবদের মাঝে সেই নবী ইব্রাহিম ও ইসমাঈল আ.-এর জামানা থেকেই আরবী ১২টি মাসের মধ্যে বিশেষ চারটি মাস (তথা মুহাররাম, রজব, যুল-ক্বা’দাহ, যুল-হিজ্জাহ)-কে বিশেষ সম্মানীত মাস হিসেবে মনে করা হত এবং এ মাসগুলোতে যে কোনো প্রকারের যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত হারাম (নিষিদ্ধ) গণ্য করা হত। আর এ বিষয়টি আরবের সকল ধর্মের লোকদেরই জানা ছিল। সুতরাং, মুসলীম বাহিনীর সদস্যগণ ভাবনায় পড়ে গেলেন যে, আজ তো সম্মানীত রজব মাসের শেষ তারিখ, তাই আজ যুদ্ধ ও রক্তপাত করা হারাম হওয়ায় ওদের উপরে আক্রমন করে ওদরেকে হত্যা করাও জায়েয হবে না। কিন্তু তারা এও ভাবলেন যে, ‘এই জালেমরা -যারা জুলুম অত্যাচার ও অবিচার করে মুহাজিরগণকে তাদের জন্মভূমি মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে- তাদের উপরে হামলা করার এটাই মোক্ষম সুযোগ, এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে তারা মক্কার হেরেমে প্রবেশ করবে, তখন তারা চলে যাবে হাতের নাগালের বাইরে’। এভাবে বেশ কিছুক্ষন তাঁরা ওই কাফেলার উপরে আক্রমন করবেন, কি করবেন না -এ নিয়ে দোদুল্যমান ছিলেন। পরে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে সাহস সঞ্চার করে ওই দিনই কাফেলাটির উপরে আক্রমন করে বসেন। সাহাবী ওয়াকিদ বিন আব্দুল্লাহ রা. মুশরেকদের কাফেলাটির প্রধান আমর বিন হাযরামী’কে উদ্দেশ্য করে একটি তীর নিক্ষেপ করেন, যার ফলে সে মাড়া যায়। সে মৃত্যুবরন করা মাত্রই কাফেলার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায় এবং তারা জান নিয়ে পালাতে আরম্ভ করে। ফলে মুসলমানগণ কাফেলাটির সকল ধ্বনসম্পদ গণিমত হিসেবে করায়ত্ত করে নেন এবং ওদের মধ্যে উসমান বিন আব্দুল্লাহ এবং হাকাম বিন কায়সান নামক দু ব্যাক্তি বন্দী হয়।
তাঁরা যখন গনিমতের মাল ও যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে উপস্থিত হলেন, তখন সব জানতে পেরে রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: مَا أَمَرْتُكُمْ بِقِتَالٍ فِي الشَّهْرِ الْحَرَامِ – “আমি তো তোমাদেরকে হারাম মাসে ক্বিতাল (যুদ্ধ) করার নির্দেশ দেই নি”। ফলে আল্লাহ তাআলা’র অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত- রাসুলুল্লাহ ﷺ কাফেলাটির ওইসব মালসামান ও যুদ্ধবন্দীদেরকে গনিমত হিসেবে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ আল-আসাদী রা. ও তাঁর মুজাহিদ সাথিগণ লজ্জিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মদিনার অনেক মুসলমানও তাদের একাজের উপরে অসন্তষ্টি প্রকাশ করেন। এদিকে মুশরিকরাও মুসলমানদের সমালোচনা করতে থাকে যে, ‘মুহাম্মাদ ও তার সাথিরা নিজেদেরকে আল্লাহ’র অনুগত বলে দাবী করে, অথচ তারাই আল্লাহ’র দেয়া হারাম মাসের মর্যাদা নষ্ট করেছে, তারা হারাম মাসে যুদ্ধ ও রক্তপাত ঘটানো এবং লোকদেরকে বন্দী বানিয়ে নেয়াকে বৈধ করে নিয়েছে’। নির্লজ্জ এসব মুশরেক এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই প্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল হয়। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
“(হে নবী! মুসলমানদের মধ্যে যারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে) তারা তোমাকে হারাম মাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (যে), তাতে ক্বিতাল (সশস্ত্র জিহাদ করা জায়েয কি-না)? তুমি বলে দাও, (আল্লাহ’র দ্বীনের মূলনীতি হল) এ(সময়ে)র মধ্যে ক্বিতাল (সশস্ত্র জিহাদ করা) মস্তবড় (অপরাধ ও পাপ)। কিন্তু (সাথে একথাও জানা জরুরী যে), আল্লাহ’র (দ্বীন ইসলামের) পথে বাঁধা সৃষ্টি করা, তাঁর সাথে কুফরী করা, (তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে) মসজিদে হারাম (-এ প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়া) এবং এর অধিবাসীদেরকে (তাদের বাসস্থান ও জন্মভূমি থেকে) বের করে দেয়া -(এসব কাজ) আল্লাহ’র কাছে আরো বড় (মাপের অপরাধ ও পাপ)। আর (শুনে রাখো যে, আল্লাহ’র দৃষ্টিতে) খুনের (অপরাধ ও পাপের) চাইতে (আল্লাহ’র দ্বীনের ব্যাপারে) ফিতনাহ (সৃষ্টির অপরাধ ও পাপ) আরো বড় (মাত্রার অন্যায়)। আর(ও জেনে রোখো যে, এই যে মুশরেক সম্প্রদায়, এদের মনবাসনা হল) তারা তাদের সাধ্য মতো (নানান কায়দায়) তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতেই থাকবে, যতক্ষন পর্যন্ত না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন (ইসলাম) থেকে ফিরিয়ে রাখে। আর (হে মুসলমানগণ! খুব ভালো করে শুনে রাখো) তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যাক্তি তার দ্বীন (ইসলাম) হতে ফিরে (মুরতাদ হয়ে) যাবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরন করবে, ওরাই (হল তারা, যারা) তাদের আমলগুলোকে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে(র জীবনে) নষ্ট করে দিলো। আর ওরাই হবে দোযখের অধিবাসী, তারা তার ভিতরে চিরস্থায়ী ভাবে থেকে যাবে”। [সূরা বাকারাহ ২১৭]
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ ﷺ উক্ত ধ্বনসম্পদ ও বন্দীদেরকে গনিমত হিসেবে গ্রহন করে নেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাই ছিল জিহাদ-লব্ধ প্রথম গনিমত। তবে ইমাম বাইহাকীর রেওয়ায়েতে আছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ তখন কাফের নেতা আমর বিন হাযরাম ‘র রক্তপন আদায় করেন এবং হারাম মাসকে হারাম হিসেবেই গণ্য করেন। এরপর আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ আল-আসাদী রা. ও তাঁর মুজাহিদ সাথিগণ রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে আরোজ করেন- يَا رَسُولَ اللَّهِ أنطمع أن تكون لنا غزاة نُعْطَى فِيهَا أَجْرَ الْمُجَاهِدِينَ – “ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আমরা আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য তাঁর পথে বেরিয়েছিলাম)। আমাদের খুব মন চায়, আমাদের জন্য (এ অভিযানটি) গাজওয়া (জিহাদ) হিসেবে (আল্লাহ’র কাছে লিপিবদ্ধ) হোক! এক্ষেত্রে আমাদেরকে কি মুজাহিদগণের (মতো) সওয়াব দেয়া হবে না”? তাঁদের এ আকাঙ্খার পরিপ্রেক্ষিতে নাজিল হয়-
“নিশ্চই যারা ইমান এনেছে, আর যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহ’র পথে জিহাদ করেছে, ওরাই (সেই সকল বান্দা যারা) আল্লাহ’র রহমতের প্রত্যাশা করতে পারে। আর আল্লাহ (তাআলা তাঁর অনুগত বান্দাদের উপরে) ক্ষমাশীল ও দয়ালু”। [সূরা বাকারাহ ২১৮]
মক্কার কুরায়েশরা পরে মুসলমানদের কাছে বন্দী’দয় উসমান বিন আব্দুল্লাহ এবং হাকাম বিন কায়সান’কে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারোর দ্বারা তাদের দুজনের মুক্তিপণ প্রেরণ করে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন- لَا نُفْدِيكُمُوهُمَا حَتَّى يَقْدَمَ صَاحِبَانَا يَعْنِي سَعْدَ بْنَ أبى وقاص وعتبة بن غزوان- فانا نخشا كم عَلَيْهِمَا فَإِنْ تَقْتُلُوهُمَا نَقْتُلْ صَاحِبَيْكُمْ – “নাহ, আমি তোমাদের কাছ থেকে (বন্দী) দুজনের মুক্তিপণ গ্রহন করবো না, যতক্ষন না আমাদের সাথিদ্বয় -তথা সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস এবং উৎবাহ বিন গাযওয়ান- (আমাদের মাঝে) ফিরে আসে। কারণ, তাদের দুজনের ব্যাপারে আমি তোমাদের (মুশরেকদের) ভয়ে আছি (যে, আমি এদিকে আগেই তোমাদের লোক দুটিকে ছেড়ে দেই, আর ওদিকে তোমরা আমার সাথিদ্বয়কে হত্যা করে ফেলো কিনা)। তোমরা যদি ওদের দুজনকে হত্যা করো, তাহলে আমিও তোমাদের (এই বন্দী) দুই সাথিকে হত্যা করে ফেরবো”? পরে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. এবং উৎবাহ বিন গাযওয়ান রা. ফিরে এলে রাসুলুল্লাহ ﷺ মুক্তিপণ নিয়ে দুজনকে মুক্ত করে দেন। উসমান বিন আব্দুল্লাহ ছাড়া পেয়েই মক্কায় চলে যায় (এবং মক্কাতেই একসময় কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরন করে)। আর হাকাম বিন কায়সান রা. ইসলাম কবুল করে মদিনায় রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে থেকে যান, (পরে ‘বীর-ই-মাউনা’র জিহাদে শাহীদ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন)। [ বিস্তারিত: সিরাতে ইবনে ইসহাক- ২/১৭৮; সিরাতে ইবনে হিশাম- ২/৬০১; আনসাবুল আশরাফ, ইমাম বালাযুরী- ১/৩৭১; কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/১৩; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ২/৭; মুসনাদে আহমদ- ১/১৭৮ হাদিস ১৫৪২; সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ী- ৯/২৩ হাদিস ৮৭৫১; সহীহ বুখারী– ১/৩৬; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী– ২/১৬৩ হাদিস ১৬৭০; তাফসিরুল কুরআন, ইমাম ইবনু আবি হাতিম- ২/৩৮৪ হাদিস ২০২২; আল-জামিউল বায়ান, ইমাম তাবারী- ২/৪৭৬; আস-সিরাতুন নাববিয়্যাহ, ইমাম ইবনে হিব্বান- ১/১৫৪; আদ-দুরার ফি ইখতিছারিল মাগাজী ওয়াস সিয়ার, ইমাম ইবনু আব্দিল বার- ১/৯৯; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ৫/৫২; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ১/২৬৪; যাদুল মাআদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম- ৩/১৫০; তারিখুল ইসলাম, ইমাম যাহাবী- ২/৪৮; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ৩/২৪৮; আদ-দুররুল মানসুর, ইমাম সুয়ূতী– ২/৫৩৫; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২৩৭]
ক্বিবলাহ পরিবর্তন, সিয়াম ও যাকাতুল ফিতর-এর শরয়ী হুকুম নাজিল হওয়া
নবুওত লাভের পর থেকে এতদিন পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ ﷺ (ফিলিস্তিনে অবস্থিত) প্রথম ক্বিবলাহ ‘বাইতুল মাক্বদিস’-এর দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন। পরে ২য় হিজরীর শা’বান মাস (মোতাবেক ফেব্রুয়ারী ৬২৪ খৃষ্টাব্দ)-এ প্রথম ক্বিবলাহ ‘বাইতুল মাক্বদিস’কে পরিত্যাগ করে (মক্কার) ‘মাসজিদে হারাম’কে ক্বিবলাহ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ নাজিল হয়। এসম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
“(হে নবী!) বস্তুত: (ক্বিবলাহ পরিবর্তের মনবাসনা নিয়ে) আসমানের দিকে তোমার বারংবার মুখ ফিরানোর বিষয়টিকে আমরা লক্ষ্য করেছি। সুতরাং, তোমাকে (সেই) ক্বিবলার দিকে আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ করেছিলে। তাই (এখন থেকে) তুমি তোমার মুখকে মাসজিদে হারামের দিকে ফিরাও। আর (হে মুসলমানগণ!) তোমরা যেখানেই থাকবে, (সেখান থেকেই) তোমরা তোমাদের মুখকে ও(ই মাসজিদে হারামে)র দিকে ফিরাবে। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল (তাদের পরবর্তী অনুসারীদের মধ্যে যারা আজ মদিনায় রয়েছে), তারা অবশ্যই জানে যে, এ(ই ক্বিবলা পরিবর্তনের হুকুম)টা তাদের রব (প্রতিপালক প্রভু আল্লাহ)-এর পক্ষ থেকে (নাজিলকৃত একটি) আল-হক্ব (সত্য বিধান)। আর তারা যা করছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ মোটেও গাফেল (অন্যমনষ্ক) নন”। [সূরা বাকারাহ ১৪৪]