বদরের যুদ্ধ : গাজওয়ায়ে বদর আল-কুবরা (غزوة بدر الكبرى) : মহানবী ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের প্রথম সশস্ত্র জিহাদ আত্মত্যাগ : কুরআন, হাদিস, ইতিহাস ও ফিকহি মাসায়েল – ১
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন]
বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হবার আগের দৃশ্যপট : শাম থেকে মক্কাভিমুখে আগত আবু সুফিয়ানের কাফেলার উপরে আক্রমনের উদ্দেশ্যে নবীজী ﷺ ও সাহাবাগণের অভিযানে নামা
আমরা এর আগের পেজে বদরপূর্ব অভিযানসমূহের মধ্যে ‘গাজওয়ায়ে যুল উশাইরাহ’র অধিনে যে লিখেছিলাম যে, কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি বিশাল বানিজ্যিক কাফেলা মক্কা থেকে শাম-এর দিকে যাচ্ছিল এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ এ খবর পেয়ে ২য় হিজরীর ‘জমাদিউল আউআল’ (বা ‘জমাদিউছ ছানি’) মাস (মোতাবেক নভেম্বর/ডিসেম্বর ৬২৩ খৃষ্টাব্দ)-এ নিজ নেতৃত্বে ১৫০/২০০ জন মুহাজির সাহাবাকে নিয়ে কাফেলাটির উপরে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু কাফেলাটিকে ধরার আগেই তা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় সেবারের মতো তারা বেঁচে গিয়েছিল, বস্তুত: সেই কাফেলাটিই শামে ব্যাবসা-বাণিজ্য করে মুনাফা সহ যখন মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়, তখন ২য় হিজরীর রামাজান মাসে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে সংবাদ আসে যে, “মক্কার নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারব-এর নেতৃত্বে কুরায়েশদের একটি ‘বাণিজ্য কাফেলা’ শাম থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে, যার প্রহারায় রয়েছে প্রায় ৩০/৪০ জন ব্যাক্তি (যাদের মধ্যে মাখরামাহ বিন নাওফিল এবং আমর ইবনে আস’ও আছে), আর তাদের সাথে রয়েছে প্রচুর বাণিজ্যিক পণ্য ও অর্থসম্পদ (প্রায় পঞ্চাশ হাজার স্বর্ণমূদ্রার সমান সম্পদ)”। রাসুলুল্লাহ ﷺ সংবাদটি যাঁচাই করার জন্য সাহাবী বুসায়সাহ/বাসবাসাহ বিন আমর রা. এবং আদী ইবনে যুগবা রা.-কে প্রেরণ করেন, তাঁরা ফিরে এসে জানায় যে, সংবাদ সত্য। রাসুলুল্লাহ ﷺ এসম্পর্কে তথ্যের সত্যতা পাবার পর উপস্থিত গণ্যমান্য সাহাবীগণের সামনে বিষয়টি পেশ করলেন। যেমন, আসলাম আবু ইমরান রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আবু আইউব আনসারী রা. বর্ণনা করেছেন-قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم ونحن بالمدينة: إني أخبرت عن عير أبي سفيان أنها مقبلة، فهل لكم أن نخرج قِبَلَ هذا العير؟ لعل الله يغنمناها”، فقلنا: نعم . أخرجه الطبراني في المعجم الكبير: ٤/١٧٤ رقم ٤٠٥٦، و قال الهيثمى في مجمع الزوائد : ٦/٧٤ : رواه الطبراني و إسناده حسن، و سليم الهلالي في الاستيعاب في بيان الأسباب : ٢/١٩٤ : و هذا سند حسن رجاله ثقات عدا ابن لهيعة و هو صدوق حسن الحديث قبل اختلاطه و احتراق كتبه و حديثنا هذا من صحيح حديثه فإن زيد بن الحباب رواه عنه عند ابن أبي حاتم و زيد سمع منه قبل احتراق كتبه كما قال أبو الفتح ابن سيد الناس اليعمرى في النفح الشذي : ٢/٨٠٣ – “আমরা তখন মদিনায়; রাসুলুল্লাহ ﷺ (আমাদেরকে) বললেন: ‘আমার কাছে আবু সুফিয়ানের কাফেলাটির ব্যাপারে খবর এসেছে যে, সেটা (শাম থেকে মক্কা অভিমুখে) রওয়ানা দিয়েছে। আমরা এই কাফেলার (উপরে আক্রমনের) উদ্দেশ্যে বের হতে পারি -এব্যাপারে তোমাদের কী মত? হতে পারে, আল্লাহ আমাদেরকে তা গণিমত হিসেবে দিয়ে দিবেন’। আমরা বললাম: ‘জি, আচ্ছা’…”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ৪/১৭৪ হাদিস ৪০৫৬; দালায়েলুন নাবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ৩/৩৭; তাফসিরুল কুরআন, ইমাম ইবনু আবি হাতিম- ৫/১৬৫৯-১৬৬১ হাদিস ৮৮০৫-৮৮১৭; তারিখে দিমাশক, ইবনুল আসাকীর- ৬০/১৬২ মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৬/৭৪]
সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.বর্ণনা করেন- قال الرَّسولُ عليه الصَّلاةُ والسَّلامُ لأصحابِه: هذه عيرُ قُريشٍ، فيها أموالُهم، فاخرُجوا إليها، لعلَّ اللهَ يُنفِلُكُموها . رواه ابن إسحاق في “السيرة : ٢/٢٩٥، و عبد الرزاق في المصنف: ٥/٣٤٨، و الطبري في جامع البيان: ١٣/٣٩٤، و البيهقي في دلائل النبوة: ٣/٣٢ بسند صحيح، و صححه الألباني في فقه السيرة: ص ٢١٨، و في تخريج أحاديث وآثار كتاب في ظلال القرآن: ١/١٤٣ – “(সংবাদের সত্যতা পেয়ে) রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীগণকে বললেন: ‘(শোনো) এটা কুরায়শদের (বাণিজ্যিক) কাফেলা। এর মধ্যে তাদের ধ্বনসম্পদ রয়েছে। বিধায়, তোমরা (আল্লাহ’র উপর ভরসা করে) ও(ই কাফেলা)র উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ো। হয়তো আল্লাহ (তাআলা) তোমাদেরকে তা গণীমত হিসেবে দিয়ে দিবেন”। [সিরাতুন নাবাউইয়্যাহ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক- ২/২৯৫; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ৫/৩৪৮; জামেউল বায়ান, ইমাম তাবারী- ১৩/৩৯৪; আত-ত্ববাক্বাত, ইমাম ইবনে সা’দ- ২/৬; দালায়েলুন নাবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ৩/১০১, ১৩২]
ছাবিত-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আনাস বিন মালেক রা.বর্ণনা করেছেন- إِنَّ لَنَا طَلِبَةً، فَمَنْ كَانَ ظَهْرُهُ حَاضِرًا فَلْيَرْكَبْ مَعَنَا»، فَجَعَلَ رِجَالٌ يَسْتَأْذِنُونَهُ فِي ظُهْرَانِهِمْ فِي عُلْوِ الْمَدِينَةِ، فَقَالَ: «لَا، إِلَّا مَنْ كَانَ ظَهْرُهُ حَاضِرًا» . رواه مسلم في صحيحه, كتاب الإمارة , باب ثبوت الجنة للشهيد : ٣/١٥٠٩ رقم ١٩٠١ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘আমরা (আবু সুফিয়ানের কাফেলার) খোঁজে বের হচ্ছি। সুতরাং, (তোমাদের মধ্যে) যার বাহন (এখানে এখন) উপস্থিত আছে, সে (তার বাহনে) আরোহন করে আমাদের সঙ্গে আসুক’। তখন মদিনার উপরালাকা(য় যাদের বাহনগুলো বাঁধা ছিল, সেখান) থেকে লোকেরা তাদের (নিজ নিজ) বাহনগুলো (নিয়ে আসা)র ব্যাপারে অনুমতি চাইলে তিঁনি বললেন: ‘না, শুধু (তোমাদের মধ্যে) যার বাহন (এখানে এখন) উপস্থিত আছে, (কেবল সে-ই তার বাহন নিয়ে আমাদের সঙ্গে আসবে)”। [সহিহ মুসলীম– ৩/১৫০৯ হাদিস ১৯০১; মুসনাদে আহমদ– ১৯/৩৮৯ হাদিস ১২৩৯৮; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৯/৯৯ হাদিস ১৭৬৩৫]
রাসুলুল্লাহ ﷺ- ২য় হিজরী’র ১২-ই রামাজান (মোতাবেক ৮ মার্চ ৬২৪ খৃষ্টাব্দ ) তারিখে প্রায় ৩৪০ জনের মতো সাহাবীকে সঙ্গে করে নিয়ে -আবু সুফিয়ানের ওই কাফেলাটির উপরে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে- মদিনা থেকে বের হন। শুধুমাত্র কাফেলাটির উপরে আক্রমন করার উদ্দেশ্যেই তিঁনি বের হয়েছিলেন বিধায় বাকি সকল সাহাবায়ে কেরামকে তিঁনি মদিনায় রেখে আসেন। সে সময় মুসলমানদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না বিধায় এতগুলো মুসলমানের জন্য মাত্র ৭০টি উট আনা সম্ভব হয়েছিল, যার প্রতিটির জন্য তিনজন করে পালাক্রমে আরোহন করে গন্তব্যের দিকে পথ পাড়ি দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাহনের সঙ্গী ছিলেন আলী বিন আবি ত্বালেব রা. এবং আবু লুবাবাহ রা., রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাটার পালা এলে তাঁরা দুজনে বললেন- ارْكَبْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، حَتَّى نَمْشِيَ عَنْكَ – “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি (উটের পিঠেই) চড়ে থাকুন, আমরা আপনার বদলে হাটবো”। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: مَا أَنْتُمَا بِأَقْوَى مِنِّي، وَلَا أَنَا بِأَغْنَى عَنِ الْأَجْرِ مِنْكُمَا – “তোমরা দুজন আমার থেকে বেশি শক্তিশালী নও, আর না আমি সওয়াবের ব্যাপারে তোমাদের দুজনের চাইতে অধিক অমুকাপেক্ষি”। [মুসনাদে আহমদ– ১/৪২৪ হাদিস ৪০২৯] এছাড়া শুধুমাত্র যুবায়ের বিন আওয়াম রা. ও মিক্বদাদ রা.-এর নিজেস্ব ১টি করে ঘোড়া ছিল। মদিনা থেকে বের হবার আগে রাসুলুল্লাহ ﷺ মসজিদে নববীতে নামাযের জামাআতের ইমামতীর দায়িত্ব দিয়ে যান আমর বিন উম্মে মাকতুম রা.-কে।
পথিমধ্যে আবু সুফিয়ানের কাফেলা হাতছাড়া হওয়া এবং বদর উপত্তকায় মুসলমান ও মুশরেকদের মুখোমুখি হওয়ার আগের দৃশ্যপট
আবু সুফিয়ানের উপরে গোটা মক্কার কুরায়েশদের ধ্বনসম্পদের বোঁঝা থাকায় সে খুব সাবধানতার সাথে খোঁজখবর নিয়ে নিয়ে মক্কার দিকে এগুতে থাকে, কারণ এর আগেও যেমন মদিনার মুসলমানরা বহুবার কুরায়েশদের কাফেলার উপরে আক্রমনের জন্য এসেছিল, এবারও এমন ঘটনা ঘটার আতঙ্ক তাকে আচ্ছন্ন করে রাখছিল। কাফেলাটিতে -মক্কার মুশরেকদের মধ্যে হুওয়াইতিব ইবনু আব্দিল উযযা ছাড়া এমন কেউ ছিল না, যাদের অর্থকড়ি ও ধ্বনসম্পদ সেই কাফেলায় শামিল না ছিল; এসব দিয়ে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে সিরিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে মুনাফা কামিয়ে কাফেলাটি অনেক পণ্যদ্রব্য ও ধ্বনসম্পদ বহন করে নিয়ে আনছিল, যার মধ্যে প্রায় ১ (এক) হাজারটি উটও ছিল। এজন্য আবু সুফিয়ান মুসলমানদের ব্যাপারে ভালো করে খোঁজখবর নেয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে কিছু গুপ্তচরও পাঠিয়ে দিলো। এদিকে সে এগুতে এগুতে একসময় যখন হিজাজের কাছে এলো, তখন কতক আরোহীর কাছে জিজ্ঞেসাবাদের এক পর্যায়ে তারা তাকে জানায়- أن محمدًا قد استنفر أصحابه لك و لعِيرك – “(হে আবু সুফিয়ান!) মুহাম্মাদ তার সাথিদেরকে তোমার ও তোমার কাফেলার (উপরে আক্রমনের) জন্য নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে”। এখবর শুনতেই আবু সুফিয়ান আরো অধিক পরিমাণে সাবধান হয়ে গেল এবং বদর এলাকায় গিয়ে সেখানে মাজদি নামক এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করলো যে, এখানে অপরিচিত কাউকে সে দেখেছে কিনা। লোকটি বললো যে, সে শুধু দুজনকে দেখেছে। ফলে আবু সুফিয়ান লোকটির সহায়তায় ওই দুই ব্যাক্তির উটের গোবরের মধ্যে মদিনার খেজুরের অংশ দেখতে পেয়ে বলে উঠলো- هَذِهِ وَاَللَّهِ عَلَائِفُ يَثْرِبَ – “আল্লাহ’র কসম, এগুলা ইয়াসরিব (মদিনা)-এর পশুর খাবার”। ফলে তার এই কাফেলার উপরে মুসলমানদের আক্রমনের আশংকা বুঝে উঠতে তার আর দেরী হল না। আবু সুফিয়ান ততক্ষনাৎ যথাসম্ভব ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সমূদ্র উপকুলীয় পথ ধরে দ্রুত ইয়ানবুত-এর দিকে চলে গেল এবং সেদিক দিয়ে মক্কার দিকে এগুতে থাকলো, আর এ দু:সংবাদটি মক্কার নেতাদের কাছে দ্রুত পৌছিয়ে দেয়ার জন্য যমযম ইবনে আমর আল-গিফারীকে মক্কায় পাঠিয়ে দিলো, যাতে মুসলমানদের হাত থেকে কাফেলাটিকে বাঁচানোর জন্য মক্কা থেকে দ্রুত লোকবলের সাহায্য নিয়ে আসতে পারে।
যমযম ইবনে আমর আল-গিফারী মক্কার উপকন্ঠ ‘বাতনে ওয়াদী’তে এসে কুরায়েশদেরকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে তার উটের নাক-রশি কেটে দেয়, হাওদা উল্টিয়ে দেয় এবং নিজের পড়নের জামা ছিড়ে ফেলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে করে বলতে লাগলো- يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ، اللَّطِيمَةَ اللَّطِيمَةَ، أَمْوَالُكُمْ مَعَ أَبِي سُفْيَانَ قَدْ عَرَضَ لَهَا مُحَمَّدٌ فِي أَصْحَابِهِ، لَا أَرَى أَنْ تُدْرِكُوهَا، الْغَوْثَ الْغَوْثَ – “হে কুরায়েশ সম্প্রদায়! মহাবিপদ! মহাবিপদ! আবু সুফিয়ানের কাছে তোমাদের যেসব ধ্বনমাল রয়েছে, মুহাম্মাদ তার সাথিদেরকে ওসবের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমার মনে হয় না, তোমরা (আর) তা (মুসলমানদের হাত থেকে এবারে রক্ষা করতে) পাবে। কাফেলাকে বাঁচাও! কাফেলাকে বাঁচাও”। মক্কায় এ খবর শুধু পৌছতে বাঁকি ছিল, খবর শুনতেই কুরায়েশদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো; তারা স্পষ্ট দেখতে পারছিল যে এই কাফেলাটি মুসলমানদের হাতে চলে গেলে তারা কী পরিমান ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। ফলে যমযম ইবনে আমর আল-গিফারী’র দেয়া এ খবরটি যেন মুসলমানদের সম্পর্কে কুরায়েশদের আগুন-ধরা অন্তরে আরো অতিরিক্ত তেল ঢেলে দিলো, রাগে ক্ষোভে যেন তারা মুসলমানদেরকে আর সহ্যই করতে পারছিল না।
মদিনায় হিজরতকারী মুহাজির মুসলমানদের উপরে কুরায়েশদের এত রাগ ও ক্ষোভের বেশ কিছু কারণ একিভুত হয়ে তাদের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যথা: (১) একে-তো কুরায়েশরা এতদিন মুহাম্মাদ ﷺ ও অনুগত মুসলমানদের উপরে এজন্য এত চরম পর্যায়ের ক্ষেপে বিরক্ত হয়ে ছিল যে, তাঁরা সকলে আরবের পূর্বপুরুষদের শিরকী ধর্ম পরিত্যাগ করে (ওদের মতে) বেদ্বীন-ধর্মত্যাগী (!) হয়ে গিয়েছিল যা মেনে নেয়াটা ছিল তাদের পক্ষে অসম্ভব, (২) দ্বিতীয়ত এসব মুসলমানকে মক্কা থেকে বের করে দেয়ার পর তাঁরা আবার মদিনায় গিয়ে সেখানে নিরাপদে ইসলামের প্রচার প্রসার করা শুরু করে দিয়েছিল, এমনকি এভাবে মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই তারা দেখতে পেল যে, সেখানকার মুসলমানরা একটি একতাবদ্ধ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়ে গেছে, যা রীতিমতো তাদের মক্কাস্থ কুরায়েশী নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকী হিসেবে ফুলেফেঁপে উঠছে, যা বরদাস্ত করা তাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে উঠছিল। (৩) তৃতীয়ত: কুরায়েশদের জীবিকা একমাত্র ব্যবসা-বাণিজ্যেল উপরে নির্ভরশীল হওয়ায় তারা –মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের পর থেকে এপর্যন্ত– যতবারই তাদের কোনো বাণিজ্যিক কাফেলাকে নিয়ে মদিনার আশপাশ দিয়ে মক্কা থেকে শামে বা শাম থেকে মক্কায় আনানেওয়া করেছে, ততবারই তারা মুহাজির মুসলমানদের দ্বারা কাফেলাগুলোর উপরে বারবার আক্রমনের শিকার হয়ে এসেছে, যার কারণে স্বভাবতই কুরায়েশরা মুসলমানদের উপরে খুবই চরম মাত্রায় উত্যক্ত ও বিরক্ত হচ্ছিল। (৪) সর্বশেষ মাত্র দু’মাস আগেও (সারিয়ায়ে নাখলা’য়) মুসলমানদের হাতে তাদের এক কাফেলা প্রধান আমর বিন হাযরামী নিহত হওয়ায় তারা মুসলমানদের উপরে বদলা নেয়ার মানসে প্রচন্ড রকমের ক্ষেপে ছিল। (৫) এখন আবার মুসলমানরা তাদের এমন এক কাফেলার উপরে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে, যার মধ্যে তাদের প্রায় সকল ধ্বনসম্পদ বিনিয়োগ করা রয়েছে, যা মুসলমানদের হাতে যাওয়া মানে তাদের আর্থিক ভাবে নি:স্ব হওয়ার নামান্তর। (৬) সেসময়কার আরবে, যে যতটা উচ্চ বংশ ও গোত্রের অধিকারী হত, তাকে সমাজে ততটাই উচ্চ স্ট্যাটাসের সুশীল ভদ্রলোক বলে গণ্য করা হত। এসুবাদে তখন কুরায়েশদেরকে সব থেকে উচ্চ বংশ ও গোত্রের গণ্য করায় তারা এতদিন পর্যন্ত সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশীল ভদ্রলোকদের সামাজিক সম্মান মর্যাদা ভোগ করে আসছিল। ফলে এধারনাটি তাদের মনমগজে বদ্ধমূল ভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, সমাজের মধ্যে তাররই বাস্তবে এমন সম্মান মর্যাদা পাবার মতো স্ট্যাটাসের অধিকারী আর বাকিরা তাদের নিচে; তারা তাদের প্রত্যাহিক আচার আচরণেও এবিষয়টি দম্ভ ও অংহকার ভরে প্রকাশ করতো। কিন্তু মুসলমানদের বিশেষ করে এবারের আচরণটি কুরায়েশদের সেই সামাজিক স্ট্যাটাসের দম্ভ ও অহংকারের উপরে বড় রকমের আঘাত হেনে দিয়েছিল। কুরায়েশরা দেখছিল যে, এই মাত্র কিছুদিন আগেও তাদের সমাজের দাসদাসী ও হতদরিদ্র নিম্ন পর্যায়ের গুটি কয়েক বেদ্বীন-ধর্মত্যাগী লোক -যাদেরকে তারা ঘরে বাহিরে পথে-ঘাটে মেরেছে পিটিয়েছে শাস্তি দিয়েছে পদদলিত করেছে, সেই তারাই আজ মক্কার কুরায়েশদের মতো এত উচ্চ স্ট্যাটাসের জ্ঞানীগুণী ও সুশীল সমাজের উপরে চোখ রাঙ্গাতে শুরু করেছে, তারা কেয়ার-ই করছে না যে কুরায়েশরা কারা আর তারা কারা! এটা কুরায়েশদের চোখে এমন এক অমর্যাদাকর আচরণ ছিল যা বরদাস্ত করার মতো মনমগজ ও কলিজা কুরায়েশদের একেবারই ছিল না। (৭) কুরায়েশরা নেতারা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল, এই যদি হয় তাদের প্রতি মুসলমানেদের আজকের অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ, তাহলে মদিনায় তাদের সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে নিকট ভবিষ্যতে এই মুসলমানরাই মক্কায় সুদীর্ঘকাল থেকে কুরায়েশদের ভোগ করে আসতে থাকা রাষ্ট্রনীতি ও নেতৃত্ব, অর্থনীতি এবং সমাজনীতিকে পরিবর্তন করার পদক্ষেপ গ্রহন করতে কী আর বাকি রাখবে?!
এসব কারণে কুরায়েশরা এতদিন ধরে মুসলমানদের উপরে রাগ ও ক্ষোভের যে আগুন তাদের মনের মধ্যে লালন করে রাখছিল, সেই আগুন আজ তাদের মন থেকে সরাসরি মাথায় উঠে গেল। তারা মনে করলো, তারা এবারে মুসলমানদেরকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে মনের এই আগুন নিভাবে। এ উদ্দেশ্যে তারা যত দ্রুত সম্ভব হয় পূর্ণ রন-প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলো। তারা বলতে লাগলো- أَيَظُنُّ مُحَمَّدٌ وَأَصْحَابُهُ أَنْ تَكُونَ كَعِيرِ ابْنِ الْحَضْرَمِيِّ، كَلَّا وَاَللَّهِ لِيَعْلَمُنَّ غَيْرَ ذَلِكَ – “মুহাম্মাদ ও তার সাথিরা কি (আমাদের এই কাফেলাটিকে আমর) ইবনে হাযরামী’র কাফেলার মতো মনে করেছে? আল্লাহ’র কসম, কখনো নয়। (তাদেরকে এমন শিক্ষা দিবো যে), তারা (এবার আমাদেরকে) অন্যরকম জানবে”। ফলে কুরায়েশদের মধ্যে শুধুমাত্র ‘বনু আদী’ গোত্র ছাড়া বাকি সকল গোত্র থেকে প্রায় ১৩০০ জনের একটি বিরাট বাহিনী প্রস্তুত হয়ে গেল। এ অভিযানে কুরায়েশ নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের মধ্যে শুধুমাত্র (রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর চাচা) আবু লাহাব ইবনে আব্দিল মুত্তালিব ছাড়া প্রায় সকল নেতা গোঁছের লোক অংশ নিয়েছিল, এমনকি যারা নিজে যেতে পারেনি, তারা তার নিজের বদলে অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিয়েছিল (যেমন: আবু লাহাব পাঠিয়েছিল আস ইবনে হিশামকে), আর যেসকল নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি বাহ্যত: বিনাকারণে অভিযানে অংশ নেয়া থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাচ্ছিল তাদেরকে এমনভাবে ইগো-হার্ট করে লজ্জা ও অপমান করা হল যে, তারা শেষপর্যন্ত মন না চাইলেও লোকদেখানোর জন্য হলেও অভিযানে অংশ না নিয়ে রেহাই পায়নি (যেমনটা ঘটেছিল উমাইয়া বিন খালফের ক্ষেত্রে)।
তারা অভিযানে বের হবার আগে কুরায়েশদের মনে পথিমধ্যে বিশেষ ভাবে ‘বনু বকর’ গোত্রের হামলা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিলো, কারণ ‘বনু বকর’ গোত্রের সাথে কুরায়েশদের দীর্ঘদিনের রক্তবদলা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চলে আসছিল, আর ‘বনু বকর’ গোত্র ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কুরায়েশরা ধারনা করছিল ওরা আবার মুসলমানদের সাহায্য করতে তাদের উপরে হামলা করে বসে কিনা। এজন্য একবার তারা এই অভিযানে বের হবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ইচ্ছে করলো। ইবলিস শয়তান কুরায়েশদের এ অবস্থা দেখে -কিনানা বংশের অন্যতম সরদার সুরাকা ইবনে মালিক বিন জু’শাম আল-মাদলাজী’র রূপধারন করে তাদের কাছে গেল এবং ‘বনু বকর’ থেকে তাদের উপরে কোনো রকম দূর্ঘটনা না ঘটার পুরো দায়িত্ব নিজের স্কন্ধে নিয়ে কুরায়েশদেরকে অভিযানে বের হবার জন্য কনভিন্স করতে সক্ষম হল।
যাহোক, অবশেষে আবুল হাকাম (আবু জাহল) বিন হিশাম-এর নেতৃত্বে প্রায় ১৩০০ জনের একটি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিরাট বাহিনী মক্কা থেকে দম্ভ ও অহংকার সহকারে বেরিয়ে পড়লো। এসময় তাদের সাথে ছিল প্রায় ৬০০ টি লৌহবর্ম, ১০০ টি ঘোড়া এবং অসংখ্য উট (বাহিনীর খাবারের জন্য দৈনিক ৯/১০টি করে উট জবেহ করা হত) ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। অভিযান-পথে ও রনক্ষেত্রে যুদ্ধ-উদ্দিপক কবিতা ও গান-বাজনা পরিবেশন করার জন্য তারা বাদ্যযন্ত্র ও কয়েকজন মহিলাকেও সাথে নিলো। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- وَ لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِم بَطَرًا وَ رِئَاءَ النَّاسِ وَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ وَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ – وَ إِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَ قَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ ۖ – “আর (হে মুসলমানগণ!) তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা দম্ভভরে এবং (সমাজের) লোকদের দেখানোর জন্য তাদের গৃহসমূহ থেকে বের হয়েছিল, আর (বস্তুত: এক্ষেত্রে তারা এই মতলব নিয়ে বের হয়েছিল যে,) তারা আল্লাহ’র (দ্বীনের) পথে বাঁধার সৃষ্টি করবে। আর তারা যাকিছু করে, সে ব্যাপারে (তোমার) আল্লাহ (মহাপরাক্রমশালী হিসেবে) পরিবেষ্টকারী। আর (স্মরন করো) যখন শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের কাছে (ভালো কাজ হিসেবে) চাকচিক্কময় করে দিয়েছিল, আর সে বলেছিল: ‘আজ (তোমাদের দুশমনদের পক্ষের) লোকদের কেউই তোমাদের উপরে বিজয়ী হতে পারবে না, আর নিশ্চই আমি তোমাদের পাশেই রয়েছি…”। [সুরা আনফাল ৪৭, ৪৮]
রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন ‘রাওহ্বাহ’ নামক স্থানে পৌছেন তখন আবু লুবাবাহ ইবনু আব্দিল মুনযীর রা.-কে মদিনার ভারপ্রাপ্ত গভর্ণর নিযুক্ত করে তাকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন, আর আবু লুবাবাহ’র স্থলে মারছাদ বিন আবু মারছাদ রা. আসেন রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাহনসঙ্গি হিসেবে। রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘সাফরা’র নিকটে পৌছে আবু সুফিয়ান ও তার কাফেলার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়ার জন্য লাব্বাব/বাসবাস ইবনে আমর জুহানী রা. (বনু সাঈদা গোত্রের মিত্র) এবং আদী ইবনু আবি যুগবা রা.(বনু নাজ্জার গোত্রের মিত্র)-কে পাঠান। রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘জাফিরান (ذَفِرَان)’ নামাক স্থানে উপনীত হওয়ার পর এ খবর পান যে, কুরায়েশরা কাফেলাকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়েছে। ফলে রাসুলুল্লাহ ﷺ বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে একত্রিত করে বললেন: ما ترون في القوم، فإنهم قد أخبروا بمخرجكم؟ – “(মক্কার) লোকদের ব্যাপারে তোমাদের কী মত? কারণ, (আবু সুফিয়ানের কাফেলার উদ্দেশ্যে) তোমাদের বের হবার সংবাদ তারা পেয়ে গেছে”। তখন সাহাবাগণ বললেন: لا، والله ما لنا طاقة بقتال العدو، ولكن أردنا العير – “(আমাদের এখন ওদের সাথে লড়াই করতে যাওয়া ঠিক হবে) না (ইয়া রাসুলাল্লাহ)! আল্লাহ’র কসম, দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করার মতো শক্তি-সামর্থ আমাদের (বর্তমানে) নেই। আমরা তো (আবু সুফিয়ানের) কাফেলার উদ্দেশ্যে (বেরিয়ে ছিলাম, যার কারণে যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতিও আমরা নিয়ে আসিনি)”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ৪/১৭৪ হাদিস ৪০৫৬; দালায়েলুন নাবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ৩/৩৭] আবু বকর সিদ্দিক রা. এবং ওমর ফারূক রা.-এর দিকে ইশারা করলেও তাঁরা একই রকম উত্তর দেন। তখন মুহাজির সাহাবাদের মধ্যে মিক্বদাদ বিন আসওয়াদ রা. ঘোড়ায় চড়াবস্থায় এগিয়ে এসে ইমানদ্বিপ্ত স্বরে বললেন- يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّا لَا نَقُولُ لَكَ كَمَا قَالَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ لِمُوسَى: {اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ} ، وَ لَكِنْ اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا، إِنَّا مَعَكُمْ مُقَاتِلُونَ . رواه لإمام أحمد في مسنده , مسند الكوفيين , حديث طارق بن شهاب : ٣١/١٢٤ رقم ١٨٨٢٧ و صححه شعيب الأرنؤوط، و في رواية (قَالَ الْمِقْدَاد) : …. وَلَكِنَّا نُقَاتِلُ عَنْ يَمِينِكَ، وَعَنْ شِمَالِكَ، وَبَيْنَ يَدَيْكَ وَخَلْفَكَ (قَالَ عبد الله ابن مسعود )«فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشْرَقَ وَجْهُهُ وَسَرَّهُ» . رواه البخاري في صحيحه , كتاب المغازي , باب قول الله تعالى {إذ تستغيثون ربكم فاستجاب لكم …… فإن الله شديد العقاب : ٥/٧٣ رقم ٣٩٥٢ – “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা অবশ্যই (আজ) আপনাকে এমন কথা বলবো না, যেমনটা বনী ইসরাঈল (তাদের সম্মানীত নবী) মুসাকে (মুখের উপরে) বলেছিল যে- اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ – “(মুসা ! যাও) তুমি আর তোমার রব (আল্লাহ) গিয়ে যুদ্ধ করো। আমরা এখানে বসে থাকবো”। [সুরা মায়েদাহ ২৪] বরং (আমরা বলবো): ‘আপনি ও আপনার রব গিয়ে যুদ্ধ করুন, নিশ্চই আমারাও আপনাদের সঙ্গী হয়ে (দুশমনের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ করবো।….. আমরা যুদ্ধ করবো আপনার ডান দিক থেকে, আপনার বাম দিক থেকে, আপনার সামন থেকে এবং আপনার পিছন থেকে”। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন: “তখন আমি নবী ﷺকে দেখলাম তাঁর চেহারা আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠলো”। [মুসনাদে আহমদ– ৩১/১২৪ হাদিস ১৮৮২৭; সহিহ বুখারী- ৫/৭৩ হাদিস ৩৯৫২; জামেউল বায়ান, ইমাম তাবারী, হাদিস ১১৬৮২]
মুহাজির সাহাবদের মধ্য থেকে মিক্বদাদ রা.-এর এমন আশা-উদ্দিপক বাণী রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে সত্যই আনন্দিত করেছিল, কারণ মিক্বদাদ রা.-এর ইমানদিপ্ত বর্ণনাভঙ্গি তখন এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছিল যে, যেন তিনি উপস্থিত বাকি সকল মুহাজির সাহাবীদের পক্ষ থেকে একাই এগিয়ে এসে একথার দৃঢ় আশ্বাস-বাণী দিলেন যে, “ইয়া রাসুল্লাহ! আমরা মুহাজিররা আগেও আপনার সঙ্গো ছাড়িনি, আজও পিছুপা হবো না, আমরা জিহাদের জন্য প্রস্তুত”। কিন্তু তখন সেখানে উপস্থিত মুহাজির সাহাবীদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ জনের মতো, বাদবাকি প্রায় ২৫০ জনের মতো সকলে ছিলেন মদিনার আনসার সাহাবী। আর রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর মক্কার জীবনে দ্বিতীয় আক্বাবাহ’র বাইয়্যাতের সময় -শুধুমাত্র মদিনাকে রক্ষা করার ওয়াদা সহকারে বাইয়্যাত গ্রহন করেছিলেন। এজন্য আজ যখন মদিনার বাহিরে
আপনার সাথে ” দানের পর উপস্থিত অপরাপর মুহাজির সাহাবীগণ কি করে জিহাদের জন্য প্রস্তুত না হয়ে পারেন। কিন্তু তিঁনি তখনো পর্যন্ত মদিনার আনসার সাহাবীদের পক্ষ থেকে কোনো সারা পাননি।
বিদায়াহ বদরের আগে https://al-maktaba.org/book/23708/957#p1
বিদায়াহ বদরের আগে https://al-maktaba.org/book/23708/956#p1
কুরায়েশ বাহিনী এগুতে এগুতে যখন ‘জুহ্বফাহ (جحفة)’ নামক এলাকায় এলো, তখন সেখানে তারা আবু সুফিয়ানের প্রেরিত এক বার্তাবাহকের মাধ্যমে জানতে পেলো যে, ‘তাদের কাফেলাটি নিরাপদে বিপদসীমা অতিক্রম করে বর্তমানে মক্কা অভিমুখে গমনরত আছে, তাই কুরায়েশ বাহিনী যেন মক্কায় ফিরে যায়’। ফলত: কুরায়েশদের মধ্যে যারা শুধুমাত্র তাদের কাফেলার ধ্বনসম্পদ ও পণ্যদ্রব্য বাঁচানোর জন্য এসেছিল, তাদের অনেকেই মক্কায় ফিরে যাওয়ার মত দেয়। এমনকি কুরায়েশদের ‘বনু যুহরা’ গোত্রের সর্দার আখনাস বিন সুরায়েক একই যুক্ত দেখিয়ে সামনে আর অগ্রসর হতে অসম্মতি জানায় এবং তার গোত্রের প্রায় ৩০০ জন লোককে মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এর ফলে কুরায়েশদের সৈন্যবল ১৩০০ জন থেকে কমে প্রায় ১০০০ জনে নেমে আসে। কিন্তু বাহিনী প্রধান আবু জাহল দুনিয়ার বুক থেকে মুসলমানদেরকে চিরতরে মুছে ফেলার মানসে মোকাবেলা বিহীন মক্কায় ফিরে যেতে একদম অস্বীকার করে বসে। কুরায়েশদের মধ্যে ‘বনু হাশেম’ গোত্রও মক্কায় ফিরে যেতে উদ্দত হলে আবু জাহল তাদেরকে শেষপর্যন্ত বদরের ময়দানে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে সমর্থ হয়।
ঐতিহাসিকদের মতে, বদরের দিন রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর চাচা আবু লাহাব ছাড়া মক্কার কুরায়েশদের প্রায় সকল নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিরা বদরের ময়দানে যুদ্ধের জন্য উপস্থিত হয়েছিল, আর যারা বিভিন্ন কারণে যেতে পারেনি তারা নিজের বদলে অন্য কাউকে পাঠিয়েছিল। যেমন: আবুল হাকাম (আবু জাহল) বিন হিশাম, উতবা বিন রাবিয়াহ, শাইবাহ বিন রাবিয়াহ, আবুল বাখতারি বিন হিশাম, হাকিম বিন হিজাম, নাওফিল ইবনু খুয়াইলিদ, হারিস বিন আমির, তুয়াইমা ইবনে আদী, নাদার ইবনে হারিস, জামআ ইবনে আসওয়াদ ও উমাইয়া ইবনে খালাফ সহ অনেকে।
রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনা থেকে প্রায় ১ মাইল দূরে অবস্থিত ‘বীর-ই-ইনবা’তে পৌছে জামাআতের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করে দেখেন। জামাআতের মধ্যে যারা অপ্রাপ্তবয়ষ্ক বালক এসেছিল তিঁনি তাদেরকে মদিনায় ফেরত পাঠান (যাদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন ওমর, উসামাহ বিন যায়েদ, রাফি’ বিন খাদীজ, বারা বিন আযীব, যায়েদ বিন আরকাম, যায়েদ বিন সাবিত, ইসাইদ বিন জহির প্রমুখ)। নাবালেগদের মধ্যে শুধু উমায়ের বিন আবি ওয়াক্কাস রা. যুদ্ধে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করায় রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে অনুমতি দেন।
সহিহ সিরাত, বদরের আগে https://al-maktaba.org/book/33292/206#p1
আবু সুফিয়ান তার কাফেলা নিয়ে নিরাপদে হাতের নাগালের বাইরে মক্কা অভিমুখে চলে গেছে, আর
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আবু সুফিয়ান তার কাফেলা নিয়ে বদরের নিকটে পৌছলো তখন জিবরীল আ. এই আয়াতে কারিমা নিয়ে নাজিল হন- وَ إِذْ يَعِدُكُمُ اللَّهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَ تَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ – “আর আল্লাহ যখন তোমাদেরকে দুটি দলের মধ্যে একটি দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন, তখন তোমরা আকাঙ্খা করেছিলে যে, অস্ত্রবিহীন দলটি তোমাদের হোক”। [তাফসীরে তাবারী- ১৩/৪০৩ আছার ১৫৭২৪]
২য় হিজরীর শাওয়াল বদর যুদ্ধের সময় জিহাদ ফরয হয় http://bayanelislam.net/Suspicion.aspx?id=01-07-0008
ইস্তিয়াব আনফাল বদরের আগে https://quranpedia.net/ar/book/494/2/193
https://al-maktaba.org/book/32909/738#p1
سيروا على بركة الله وأبشروا, فإن الله قد وعدني إحدى الطائفتين
http://quran.ksu.edu.sa/tafseer/tabary/sura8-aya7.html
قال: “أخبراني عن قريش” قالا: هم وراء هذا الكثيب الذي تراه بالعدوة القصوى، قال: “كم القوم”؟ قالا: كثير، قال: “ما ع
রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন- هذه مكة قد ألقت إليكم أفلاذ كبدها . رواه ابن إسحاق و قال الشيخ الألباني في فقه السيرة : ص ٢٢٢: و هذا إسناد صحيح ولكنه مرسل – “এই মক্কা (আজ) তার কলিজার টুকরাগুলোকে তোমাদের সামনে নিক্ষেপ করে দিয়েছে”।
এ সংবাদ পেতেই রাসুলুল্লাহ ﷺ সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করলেন। প্রথমে আবু বকর সিদ্দিক রা. এবং তারপরে ওমর ফারুক রা. এ যুদ্ধে নিজের জীবন কুরবান করার জন্য প্রস্তুত আছেন মর্মে রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে আশ্বাস দিলেন। মিক্বদাদ বিন আসওয়াদ রা. বললেন:
উরওয়াহ বিন যুবায়ের রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আয়েশা রা. বর্ণনা করেন- خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِبَلَ بَدْرٍ، فَلَمَّا كَانَ بِحَرَّةِ الْوَبَرَةِ أَدْرَكَهُ رَجُلٌ قَدْ كَانَ يُذْكَرُ مِنْهُ جُرْأَةٌ وَنَجْدَةٌ، فَفَرِحَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ رَأَوْهُ، فَلَمَّا أَدْرَكَهُ قَالَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: جِئْتُ لِأَتَّبِعَكَ ، وَأُصِيبَ مَعَكَ، قَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تُؤْمِنُ بِاللهِ وَرَسُولِهِ؟» قَالَ: لَا، قَالَ: «فَارْجِعْ، فَلَنْ أَسْتَعِينَ بِمُشْرِكٍ»، قَالَتْ: ثُمَّ مَضَى حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالشَّجَرَةِ أَدْرَكَهُ الرَّجُلُ، فَقَالَ لَهُ كَمَا قَالَ أَوَّلَ مَرَّةٍ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا قَالَ أَوَّلَ مَرَّةٍ، قَالَ: «فَارْجِعْ، فَلَنْ أَسْتَعِينَ بِمُشْرِكٍ»، قَالَ: ثُمَّ رَجَعَ فَأَدْرَكَهُ بِالْبَيْدَاءِ، فَقَالَ لَهُ كَمَا قَالَ أَوَّلَ مَرَّةٍ: «تُؤْمِنُ بِاللهِ وَرَسُولِهِ؟» قَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَانْطَلِقْ» . رواه مسلم في صحيحه, كتاب الجهاد والسير, باب كراهة الاستعانة في الغزو بكافر : ٣/١٤٤٩ رقم ١٨١٧ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ বদর অভিমুখে বের হলেন। তিঁনি যখন ‘হাররাতুল ওয়াবারাহ’-এ উপস্থিত হলেন তখন এক ব্যাক্তি তাঁর সাথে সাক্ষাত করলো; সে তার শৌর্যবীর্য ও বীরত্ব সাহসিকতার কথা জানা ছিল। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীগণ তাকে দেখতে পেয়ে খুবই আনন্দিত হলেন। সে যখন সাক্ষাত করলো, তখন সে রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বললো: ‘আমি এসেছি, যাতে আমি (মক্কার কুরায়েশদের মুকাবেলায়) আপনার অনুগত্য করতে পারি এবং (যুদ্ধের পর) আপনার সাথে গণিমত (থেকে কিছু অংশ) লাভ করতে পারি’। রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন: ‘তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপরে ইমান এনেছো’? সে বললো: ‘না’। (তখন) রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘তাহলে তুমি ফিরে যাও। আমি (আমাদের জিহাদে) কক্ষোনই কোনো মুশরেকের সাহায্য নিবো না’। আয়েশা রা. বলেন; ‘অত:পর সে চলে গেল। অবশেষে আমরা যখন ‘শাজারাহ’-তে পৌলাম, লোকটি (আবারো) তাঁর সাথে সাক্ষাত করলো এবং তাঁকে সেই কথাই বললো যা সে প্রথমবার বলেছিল। তখনও রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে সেই কথাই বললেন যা তিঁনি প্রথমবার বলেছিলেন। তিঁনি বললেন: ‘তুমি ফিরে যাও। আমি (আমাদের জিহাদে) কক্ষোনই কোনো মুশরেকের সাহায্য নিবো না’। (তখন সে সেখান থেকে চলে গেল), পরে আবার ফিরে এসে বায়দা’-তে তাঁর সাথে সাক্ষাত করলো। তখনও রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে সেই কথাই বললেন যা তিঁনি প্রথমবার বলেছিলেন। তিঁনি বললেন: ‘তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপরে ইমান এনেছো’? (এবারে) সে বললো: ‘জি, হ্যাঁ’। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন: ‘তাহলে (আমাদের সাথে) চলো”। [সহিহ মুসলীম- ৩/১৪৪৯ হাদিস ১৮১৭; আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম মালেক- ২/৪০; আল-আওসাত্ব, ইমাম ইবনুল মুনযীর- ১১/১৭৫ হাদিস ৬৫৬৩; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৯/৩৬; মা’রিফাতুস সুনান, ইমাম বাইহাকী- ১৩/১৩৩ হাদিস ১৭৬৮৩]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
আলবানী সহিহাহ https://al-maktaba.org/book/9442/5837
[মুশরেকদের স্পাইকে ধরা] https://hadithportal.com/index.php?show=hadith&h_id=3433&uid=0&sharh=10000&book=31&bab_id=
বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার তারিখ, সৈন্যসংখ্যা ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক তথ্য
বদর এলাকাটি ছিল মদিনা থেকে প্রায় ১৫৫ কি:মি: দূরে অবস্থিত। প্রসিদ্ধ মতানুসারে এ জিহাদে অংশগ্রহনকারী মুজাহিদ সাহাবাদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন, যাঁদের মধ্যে ৮২ জন ছিলেন মুহাজির সাহাবা রা. এবং ২৩১ জন আনসার সাহাবা রা. (৬১ জন আউস গোত্রের এবং ১৭০ জন খাজরায গোত্রের)। জিহাদের সাদা পতাকা দেয়া হয়েছিল মুসআব ইবনে উমায়ের রা.-এর হাতে।
বদরের জিহাদ অনুষ্ঠিত হয় ২য় হিজরী’র ১৭-ই রামাজান (মোতাবেক ১৩ মার্চ ৬২৪ খৃষ্টাব্দ ) তারিখে। বদর এলাকাটি ছিল মদিনা থেকে প্রায় ১৫৫ কি:মি: দূরে অবস্থিত। প্রসিদ্ধ মতানুসারে এ জিহাদে অংশগ্রহনকারী মুজাহিদ সাহাবাদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন, যাঁদের মধ্যে ৮২ জন ছিলেন মুহাজির সাহাবা রা. এবং ২৩১ জন আনসার সাহাবা রা. (৬১ জন আউস গোত্রের এবং ১৭০ জন খাজরায গোত্রের)। জিহাদের সাদা পতাকা দেয়া হয়েছিল মুসআব ইবনে উমায়ের রা.-এর হাতে।
https://al-maktaba.org/book/33757/6634#p1
ছাবিত-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আনাস বিন মালেক রা.বর্ণনা করেছেন- فَانْطَلَقَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ حَتَّى سَبَقُوا الْمُشْرِكِينَ إِلَى بَدْرٍ، وَجَاءَ الْمُشْرِكُونَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُقَدِّمَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ إِلَى شَيْءٍ حَتَّى أَكُونَ أَنَا دُونَهُ»، فَدَنَا الْمُشْرِكُونَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ»، قَالَ: – يَقُولُ عُمَيْرُ بْنُ الْحُمَامِ الْأَنْصَارِيُّ: – يَا رَسُولَ اللهِ، جَنَّةٌ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: بَخٍ بَخٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا يَحْمِلُكَ عَلَى قَوْلِكَ بَخٍ بَخٍ؟» قَالَ: لَا وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ، إِلَّا رَجَاءَةَ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِهَا، قَالَ: «فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا»، فَأَخْرَجَ تَمَرَاتٍ مِنْ قَرَنِهِ، فَجَعَلَ يَأْكُلُ مِنْهُنَّ، ثُمَّ قَالَ: لَئِنْ أَنَا حَيِيتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِي هَذِهِ إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيلَةٌ، قَالَ: فَرَمَى بِمَا كَانَ مَعَهُ مِنَ التَّمْرِ، ثُمَّ قَاتَلَهُمْ حَتَّى قُتِلَ . رواه مسلم في صحيحه, كتاب الإمارة , باب ثبوت الجنة للشهيد : ٣/١٥٠٩ رقم ١٩٠١ – “….পরে রাসুলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণ (বদরের দিকে) রওয়ানা হলেন। এমনকি তারা মুশরেকদের আগে বদরে গিয়ে পৌছলেন, আর মুশরেকরা এলো (মুসলমানদের পরে) । তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ (মুসলমানদেরকে) বললেন: ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন না করে, যতক্ষন না আমি তার অগ্রবর্তী হই’। পরে (যখন) মুশরেকরা আমাদের নিকটবর্তী হলো, (তখন) রাসুলুল্লাহ ﷺ (আমাদেরকে) বললেন: ‘তোমরা জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আসমান সমূহ এবং জমিন পরিমাণ (পরিব্যাপ্ত)’। তখন উমায়ের বিন হুমাম আল-আনসারী রা. বললেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! জান্নাতের প্রশস্ততা আসমান সমূহ এবং জমিন পরিমাণ (পরিব্যাপ্ত)’? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন:‘হ্যাঁ’। উমায়ের রা. বললেন: ‘বাহ্ বাহ্’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘(হে উমায়ের!) কী তোমাকে এই বাহ্ বাহ্ বলতে উদ্বুদ্ধ করলো’? উমায়ের রা. বললেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ’র কসম, অন্য কিছু নয়, কেবল এই মনবাসনায় (আমার মুখ থেকে এমন কথা বেরিয়ে গেছে) যে, আমি যেন সেখানকার অধিবাসী হই’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘নিশ্চই তুমি সেখানকার অধিবাসীদের একজন’। তখন উমায়ের রা. তার থলে হতে কিছু খেজুর বের করে সেগুলো থেকে খেতে থাকলেন, তারপর বললেন: ‘আমি যদি আমার এইসব খেজুর খাওয়ার সময় পরিমাণ বেঁচে থাকি, তাহলে সেটা হবে একটি দীর্ঘ জীবন’। ফলে তিনি তার কাছে যে খেজুরগুলো ছিল সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিলেন, তারপর যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লেন। (এভাবে যুদ্ধ করতে করতে একসময় মুশরেকদের হাতে শহীদী) মৃত্যুবরণ করলেন”। [সহিহ মুসলীম– ৩/১৫০৯ হাদিস ১৯০১; মুসনাদে আহমদ– ১৯/৩৮৯ হাদিস ১২৩৯৮; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৯/৯৯ হাদিস ১৭৬৩৫]
সহিহ মুসলিম বদর যুদ্ধ ও পরে https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=51563
https://ar.wikishia.net/view/%D8%BA%D8%B2%D9%88%D8%A9_%D8%A8%D8%AF%D8%B1
[বিস্তারিত: সিরাতে ইবনে ইসহাক- ; সিরাতে ইবনে হিশাম- ১/৬০৬; আনসাবুল আশরাফ, ইমাম বালাযুরী- ১/২৮৮-৩০৭; কিতাবুল মাগাজী, ইমাম ওয়াকিদী- ১/১৯-১৫২; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ; আস-সিরাতুন নাববিয়্যাহ, ইমাম ইবনে হিব্বান- ১/১৫৭-২০৯; তারিখুর রুসুল ওয়াল মুলুক, ইমাম তাবারী- ২/৪২১-৪৭৮; জামেউল বায়ান, ইমাম তাবারী-১৩/৩৯১-৪০৭; জাওয়ামিউস সিরাহ, ইমাম ইবনে হাযাম- ১/৮১-১২০ আদ-দুরার ফি ইখতিছারিল মাগাজী ওয়াস সিয়ার, ইমাম ইবনু আব্দিল বার- ১/১০৪; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ; যাদুল মাআদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম- ; তারিখুল ইসলাম, ইমাম যাহাবী- ২/৫০-১২৪; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ৩/২৪৮; আদ-দুররুল মানসুর, ইমাম সুয়ূতী- ; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ২/২৫৫- ; আল-ইস্তিয়াব ফি বায়ানিল আসবাব, সালিম আল-হিলালী- ২/১৯৩-]
মুয়ায বিন রিফাআহ বিন রাফি’ আল-জুরাকী রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁর পিতা রিফাআহ বিন রাফি’ রা. (যিনি একজন বদরী সাহাবী ছিলেন) তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে- جَاءَ جِبْرِيلُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا تَعُدُّونَ أَهْلَ بَدْرٍ فِيكُمْ، قَالَ: مِنْ أَفْضَلِ المُسْلِمِينَ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا، قَالَ: وَكَذَلِكَ مَنْ شَهِدَ بَدْرًا مِنَ المَلاَئِكَةِ ” . رواه البخاري في صحيحه , كتاب المغازي , باب شهود الملائكة بدرا : ٥/٨٠ رقم ٣٩٩٢ – “(একবার সম্মানীত ফিরিশতা হযরত) জিবরীল -নবী ﷺ-এর কাছে এসে বললেন: ‘আপনাদের মাঝে আহলে বদর (বদর জিহাদে অংশগ্রহনকারী মুসলমান)গণকে কেমন (মর্যাদার) গণ্য করে থাকেন’?। নবী ﷺ বললেন: ‘মুসলমানদের মধ্যে সর্বোত্তম (মুসলমান হিসেবে গণ্য করে থাকি)’ অথবা এধরনের কিছু কথা বললেন। (তখন) জিবরীল বললেন: ‘যারা বদর (জিহাদ)-এ অংশ নিয়েছিলেন, তারা (আসমানের) ফিরিশতাগণের কাছেও এমনই (মর্যাদার গণ্য হয়ে থাকেন)”। [সহিহ বুখারী– ৫/৮০ হাদিস ৩৯৯২; মুসনাদে আহমদ- ৪/১৬১ হাদিস ১৭০২৬; সুনানে ইবনে মাজাহ- ১/১৭২ হাদিস ৪৬২; সুনানে দ্বারাকুতনী- ১/৪২; মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/২১৭; মা’রিফাতুস সাহাবাহ, ইমাম ইবনু মানদাহ- ১/৫৮৫]
ه عن كعب بن مالك يكةٍ قال: لم أتخلف عن رسول الله تك في غزوة غزاها إلا فى
غزوة تبوك» غير أني تخلفت عن غزوة بدرء ولم يعاتب أحد تخلف عنهاء إنما خرج
رسول الله كه يريد عير قريش» حتى جمع الله بينهم وبين عدوهم على غير ميعاد.
وقال الحاكم: وحدثنا حماد بن سلمة، عن ثابت، عن أنس – نحوه -، ونزلت على النبي صلى الله عليه وسلم: (ومن الناس من يشري نفسه ابتغاء مرضاة الله)، فلما رآه النبي صلى الله عليه وسلم قال: «أبا يحيى ربح البيع» قال: وتلا عليه الآية
«صحيح على شرط مسلم، ولم يخرجاه» الحاكم (ح/5723)
وهذا إسناد شاذ غريب من هذا الوجه، والمحفوظ عن حماد عن علي بن زيد