হাদিসে বিপদ আপদ ও বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া ও আমল
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
[উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত রেওয়ায়েতের আরবী ইবারত ও অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]
ইন্না লিল্লাহি…ও বিশেষ দোয়া -এর মাধ্যমে আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় কামনা
# উম্মে সালমাহ রা. রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : مَا مِنْ مُسْلِمٍ تُصِيبُهُ مُصِيبَةٌ فَيَقُولُ مَا أَمَرَهُ اللَّهُ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا . إِلاَّ أَخْلَفَ اللَّهُ لَهُ خَيْرًا مِنْهَا . قَالَتْ فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ قُلْتُ أَىُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ مِنْ أَبِي سَلَمَةَ أَوَّلُ بَيْتٍ هَاجَرَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . ثُمَّ إِنِّي قُلْتُهَا فَأَخْلَفَ اللَّهُ لِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَتْ أَرْسَلَ إِلَىَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَاطِبَ بْنَ أَبِي بَلْتَعَةَ يَخْطُبُنِي لَهُ فَقُلْتُ إِنَّ لِي بِنْتًا وَأَنَا غَيُورٌ . فَقَالَ ” أَمَّا ابْنَتُهَا فَنَدْعُو اللَّهَ أَنْ يُغْنِيَهَا عَنْهَا وَأَدْعُو اللَّهَ أَنْ يَذْهَبَ بِالْغَيْرَةِ . رواه مسلم في صحيحه , كتاب الجنائز , باب ما يقال عند المصيبة : ٢/٦٣٢ رقم ٩١٨ ; – ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি: যে মুসলমানই কোনো মুসিবতের সম্মুখীন হয়, তারপর আল্লাহ তাকে (এসব ক্ষেত্রে) যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন (তা পালনার্থে) বলে-: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ, (তারপর আরো বলে:) اللَّهُمَّ أْجُرْنِى فِى مُصِيبَتِى وَأَخْلِفْ لِى خَيْرًا مِنْهَا , (তখন) আল্লাহ তার জন্য ওর চাইতে উত্তম/মঙ্গলজনক (কিছু দিয়ে অবস্থা) পরিবর্তন করে দেন। উম্মে সালমাহ রা. বলেন: (আমার স্বামী) আবু সালমাহ যখন মাড়া যান, তখন আমি (মনে মনে) বললাম: আবু সালমা -যিনি (মক্কার) প্রথম ঘর (-এর সদস্য হিসেবে) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে (মদিনায়) হিজরত করেছিলেন- তার চাইতে আর কোন মুসলমান (আমার জন্য) অধিক উত্তম/মঙ্গলজনক হতে পারে! (যা হোক) অত:পর আমি ওই (দোয়া)টি পড়লাম। পরে আল্লাহ আমার জন্য (আবু সালমা’র) পরিবর্তে (তার চাইতে উত্তম স্বামী হিসেবে) দিলেন (খোদ্) রাসুলুল্লাহ ﷺকে। তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ হাত্বিব বিন আবি বালতাআহ-কে আমার কাছে পাঠালেন, যিনি (আমার কাছে এসে) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য আমার কাছে (বিয়ের) পয়গাম রাখলেন। তখন আমি বললাম: ‘(এটা তো মহা সুসংবাদ। তবে) আমার (আগের স্বামীর পক্ষ থেকে আমার গর্ভজাত একটি) মেয়ে আছে এবং (আমার একটি স্বভাবগত অপছন্দনীয় বিষয় এই যে) আমি (একটু বেশি) গায়রতমন্দ/অাত্বমর্যাদাবোধী (নারী, যার কারণে আমার ভয় হয়, আমি আবার রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে কোনো অনাকাঙ্খিত আচরণ করে বসে আমার ইমান আমল নষ্ট করে ফেলি কিনা)’। এতে রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘তোমার ওই কন্যার জন্য আমরা আল্লাহ’র কাছে দোয়া করছি, যাতে সে তার ওই অবস্থা থেকে পূর্ণ-পরিত্রান পায়। আল্লাহ’র কাছে আমি (এও) দোয়া করছি, যাতে তিনি (তোমার ওই মাত্রাতিরিক্ত) গায়রতমন্দ (স্বভাবটি) দূর করে দেন”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৮১৯; সুনানে আবু দাউদ- ৩/৪৮৮ হাদিস ৩১১৯]
ফায়দা: এটি আমার বহু পরীক্ষিত একটি আমল। ছোট বড় যে কোনো বিপদ আপদ ও বালা মুসিবতের সময় আমি এই দোয়াটি পড়েছি এবং অভাবনীয় ফায়দা পেয়েছি, বারবার উপকৃত হয়েছি এবং আল্লাহ আমাকে ওই মুসিবতের পরিবর্তে যা দিয়েছেন তাতে শুধু বলতে হয় -আল-হামদু-লিল্লাহ। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হল রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাণীর উপরে সন্দেহমুক্ত পর্যাপ্ত বিশ্বাস এবং সবর (ধৈর্য), এরপর ইনশাআল্লাহ আপনি নিজ চোখেই দেখতে পাবেন আল্লাহ’র রহমত।
দোয়াটি আরবীতে: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ , اللَّهُمَّ أْجُرْنِى فِى مُصِيبَتِى وَأَخْلِفْ لِى خَيْرًا مِنْهَا
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিঊন। আল্লহুম্মা’-যুরনী ফি মুসিবাতি, ওয়া আখলিফলী খাইরাম মিন হা’।
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: ‘নিশ্চই আমরা আল্লাহ’র (বান্দা) এবং নিশ্চই আমরা (এক দিন না একদিন) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ, আমাকে আমার (এই) মুসিবতে পুরষ্কৃত করো এবং এর পরিবর্তে আমার জন্য এর থেকেও উত্তম/মঙ্গলজনক (কিছু) দান করো’।
‘আয়াতুল কুরসী’ -এর মাধ্যমে আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় কামনা
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে , তিনি বলেন:– وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ ، فَأَتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ ، وَقُلْتُ : وَاللَّهِ لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : إِنِّي مُحْتَاجٌ ، وَعَلَيَّ عِيَالٌ وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ ، قَالَ : فَخَلَّيْتُ عَنْهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ البَارِحَةَ ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً ، وَعِيَالًا ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ ، وَسَيَعُودُ ، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَعُودُ ، لِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهُ سَيَعُودُ ، فَرَصَدْتُهُ ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، فَقُلْتُ : لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : دَعْنِي فَإِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ ، لاَ أَعُودُ ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ ، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً ، وَعِيَالًا ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ ، فَرَصَدْتُهُ الثَّالِثَةَ ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، فَقُلْتُ : لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ، وَهَذَا آخِرُ ثَلاَثِ مَرَّاتٍ ، أَنَّكَ تَزْعُمُ لاَ تَعُودُ ، ثُمَّ تَعُودُ قَالَ : دَعْنِي أُعَلِّمْكَ كَلِمَاتٍ يَنْفَعُكَ اللَّهُ بِهَا ، قُلْتُ : مَا هُوَ ؟ قَالَ : إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ ، فَاقْرَأْ آيَةَ الكُرْسِيِّ : { اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ } ، حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ ، فَإِنَّكَ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ ، وَلاَ يَقْرَبَنَّكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ البَارِحَةَ ، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، زَعَمَ أَنَّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَاتٍ يَنْفَعُنِي اللَّهُ بِهَا ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : مَا هِيَ ، قُلْتُ : قَالَ لِي : إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الكُرْسِيِّ مِنْ أَوَّلِهَا حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ : { اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ } ، وَقَالَ لِي : لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ ، وَلاَ يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ – وَكَانُوا أَحْرَصَ شَيْءٍ عَلَى الخَيْرِ – فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ ، تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلاَثِ لَيَالٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ، قَالَ : لاَ ، قَالَ : ذَاكَ شَيْطَانٌ . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب الوكالة , باب إذا وكل رجلا فترك الوكيل شيئا فأجازه الموكل فهو جائز وإن أقرضه إلى أجل مسمى جاز : رقم ٣١٠١ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে (এক) রমযানে (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রক্ষিত) যাকাত (-এর মাল সম্পদ) হিফাজতের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে (এক রাতে) এক আগন্তক আমার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে (কোষাগারে রক্ষিত) খাদ্যদ্রব্য থেকে (কিছু খাবার) নিতে উদ্দত হল। তখন আমি তাকে ধরে ফেলে বললাম: ‘আল্লাহ’র কসম, আমি তোমাকে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে উপস্থিত করবো’। সে বললো: ‘(আমাকে ছেড়ে দাও।) আমি মূলত: একজন অভাবী লোক, আমার উপরে পরিবার (-এর বোঝা) রয়েছে, সাথে রয়েছে আমার ভীষন প্রয়োজনও’। তিনি বলেন: ‘আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’। পরে সকাল হলে নবী ﷺ বললেন: ‘হে আবু হুরায়রাহ, তুমি তোমার (সেই) গতকালকের কয়েদীর কী করলে’? তিনি বলেন, আমি বললাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে (তখন তার) ভীষন প্রয়োজন ও পরিবারের (বোঝা থাকার) অনুযোগ করেছিল। তাই আমি তার উপরে দয়া করেছি এবং তার পথ ছেড়ে দিয়েছি’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘সে মূলত: তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে এবং সে অচিরেই আবারো ফিরে আসবে’। ফলে -সে পূণরায় ফিরে আসবে মর্মে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলার কারণে আমি তার পূণরায় আসাটা দেখে নিতে চাইলাম। ফলে আমি তারই অপেক্ষায় রাইলাম। (দেখলাম) সে (একসময় কোষাগারের কাছে) এসে হাত বাড়িয়ে (কোষাগারে রক্ষিত) খাদ্যদ্রব্য থেকে (আবারো কিছু খাবার) নিতে উদ্দত হল। তখন আমি তাকে ধরে ফেলে বললাম: ‘আল্লাহ’র কসম, আমি তোমাকে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে উপস্থিত করবো’। সে বললো: ‘আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মূলত: একজন অভাবী লোক, আমার উপরে পরিবার (-এর বোঝা) রয়েছে। আমি পূণরায় আর আসবো না’। ফলে আমি তার উপরে দয়া করি এবং তার পথ ছেড়ে দেই। পরে সকাল হলে রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন: ‘হে আবু হুরায়রাহ, তুমি তোমার (সেই) কয়েদীর কী করলে’? আমি বললাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে (আবারো তার) ভীষন প্রয়োজন ও পরিবারের (বোঝা থাকার) অনুযোগ করেছিল। তাই আমি তার উপরে দয়া করেছি এবং তার পথ ছেড়ে দিয়েছি’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘সে মূলত: তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে এবং সে অচিরেই আবারো ফিরে আসবে’। ফলে আমি তৃতীয়বারের জন্য তার অপেক্ষায় রাইলাম। (দেখলাম ঠিকই) সে (একসময় কোষাগারের কাছে) এসে হাত বাড়িয়ে (কোষাগারে রক্ষিত) খাদ্যদ্রব্য থেকে (আবারো কিছু খাবার) নিতে উদ্দত হল। তখন আমি তাকে ধরে ফেলে বললাম: ‘আল্লাহ’র কসম, আমি তোমাকে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে উপস্থিত করবো। (আজ ছাড়ছি না তোমাকে।) এটা (তোমার) তৃতীয় বারের (মিথ্যা অযুহাতের) শেষ (সুযোগ ছিল)। তুমি কথা দিয়েছিলে যে, তুমি পূণরায় আর আসবে না। (অথচ) তুমি পরে আবারো ফিরে এসেছো’। সে বললো: ‘আমাকে (এবারের মতো) ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কিছু কালেমা শিক্ষা দিবো, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন’। আমি বললাম: ‘কী সেটা’? সে বললো: ‘তুমি যখন তোমার বিছানায় (শু’তে) যবে, তখন আয়াতুল কুরসী اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ শেষ পর্যন্ত পাঠ করে নিবে। তাহলে সকাল হওয়া পর্যন্ত তোমার উপরে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে (একজন) হিফাজতকারী (ফেরেশতা) নিযুক্ত থাকবে এবং শয়তান তোমার নিকটবর্তী হতে পারবে না’। ফলে আমি তার পথ ছেড়ে দিলাম। পরে সকাল হলে নবী ﷺ বললেন: ‘হে আবু হুরায়রাহ, তুমি তোমার (সেই) গতকালকের কয়েদীর কী করলে’? আমি বললাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে দাবী করেছিল যে, সে আমাকে এমনসব কালেমা শিক্ষা দিবে, যা দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। ফলে আমি তার পথ ছেড়ে দিয়েছি’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘সেটা কী?’। আমি বললাম, সে আমাকে বলেছিল: ‘তুমি যখন তোমার বিছানায় (শু’তে) যবে, তখন আয়াতুল কুরসী اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করে নিবে’। সে আমাকে (এও) বলেছিল: ‘(তাহলে) সকাল হওয়া পর্যন্ত তোমার উপরে (একজন) হিফাজতকারী (ফেরেশতা) নিযুক্ত থাকবে এবং শয়তান তোমার নিকটবর্তী হতে পারবে না’। (হাদীসের রাবী সাহাবীগণের সম্পর্কে বলেন:) ‘তাঁরা খায়র/কল্যান লাভের (চাইতে অন্য কিছুর) উপরে (অধিক) লোভী ছিলাম না’। (যাহোক) তখন নবী ﷺ বললেন: ‘সে (একটা) মিথ্যুক হওয়া সত্ত্বেও তোমাকে মূলত: সে সত্যই বলেছে। হে আবু হুরায়রাহ, তুমি কি জানো, গত তিন দিন তুমি কার সাথে কথা বলেছো’? তিনি বললেন: ‘না’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘ওটা ছিল শয়তান”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩১০১; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস ২৪২৪; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী- ৯/৩৫১ হাদিস ১০৭২৯]
ফায়দা: এই আমলটি শয়তান থেকে সারা রাত হিফাজতে থাকার একটি অব্যার্থ আমল। তবে মনে রাখতে হবে, যে ঘরে ছবি/মুর্তি বা কুকুর থাকে সে ঘরে ফেরেশতা আসে না। সুতরাং, ছবি/মুর্তি বা কুকুর ওয়ালা ঘরে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করে শুলেও কি করে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসার আশা করা যেতে পারে ?
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে , রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:–لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ . رواه مسلم في صحيحه : رقم ٧٨٠ – “তোমরা তোমাদের ঘর গুলোকে কবরস্থান বানিয়োনা। নিশ্চই শয়তান এমন ঘর থেকে পালিয়ে যায়, যে ঘরে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৭৮০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৪৪৩, ৯০৪২; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৭৮৩]
ফায়দা: এর কারণ সম্ভবত: এই যে, সুরা বাকারাহ’র মধ্যে আয়াতুল কুরসী রয়েছে। [শারহু রিয়াযিস সালিহিন, ইবনু উসাইমীন- ৪/৬৮৪]
أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ -এর মাধ্যমে আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় কামনা
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:– جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ مَا لَقِيتُ مِنْ عَقْرَبٍ لَدَغَتْنِي الْبَارِحَةَ، قَالَ: أَمَا لَوْ قُلْتَ، حِينَ أَمْسَيْتَ: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، لَمْ تَضُرَّكَ . أخرجه مسلم في صحيحه : ٢٧٠٩ – “(একবার) এক ব্যাক্তি নবী ﷺ-এর কাছে এসে বললো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! গত রাতে আমার কাছে কোনো (একটা) বিচ্ছু আসে, যা আমাকে (ভিশন ভাবে) দংশন করে। (তখন) তিঁনি বললেন: ‘তুমি যদি সন্ধায় (কমপক্ষে একবার হলেও) বলতে- أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ – (আঊযু বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতি মিন শাররি মা খালাকা), তাহলে তোমার কোনো ক্ষতি হত না ”। [সহিহ মুসলীম- ৪/২০৮১ হাদিস ২৭০৯; সহিহ ইবনে হিব্বান– ২/৩২৬ হাদিস ১০১৬; সুনানে তিরমিযী- ৫/৭৮০ হাদিস ৩৬৭৫; সুনানে আবু দাউদ- ৪/১৩ হাদিস ৩৮৯৯; সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ী- ৬/১৫১-১৫৩ হাদিস ১০৪২১-১০৪২৯; সুনানে ইবন মাজাহ- ২/১১৬২ হাদিস ৩৫১৮; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস ১৯৮৩৪; মুসনাদে আহমদ- ২/৩৭৫; আল-মুআত্তা, ইমাম মালেক- ২/৯৫১; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১২/৪৪ হাদিস ৬৬৮৮]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন– مَنْ قَالَ اذا أمْسي ثَلَاثَ مَرَّاتٍ : أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ، لَمْ تضُرَّهُ حُمَةٌ تِلْكَ اللَّيْلَةَ . رواه احمد في مسنده , باقي مسند المكثرين , مسند أبي هريرة رضي الله عنه : ٢/٢٩٠ و قال احمد شاكر في تحقيقه: ٨/١١ رقم ٧٨٨٥ : اسناده صحيح ، و الترمذي في الجامع , أبواب الصلاة , باب ما جاء في مقدار القعود في الركعتين الأوليين : رقم ٣٦٠٤ و صححه الألباني في صحيح الترمذي – “যে ব্যাক্তি সন্ধা কালে তিন বার বলে– أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ – (আঊযু বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতি মিন শাররি মা খালাকা), তাকে ওই রাতে কোনো হুমাতুন (কোনো বিষধর প্রাণীর দংশন/বিষ) ক্ষতি সাধন করতে পারবে না”। [মুসনাদে আহমদ- ২/২৯০; সহিহ ইবন হিব্বান- ৩/২৯৯ হাদিস ১০২২; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৬০৪]
# খাওলাহ বিনতে হাকিম রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ نَزَلَ مَنْزِلاً فقَالَ أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ لَمْ يَضُرّهُ شيءٌ حَتّى يَرْحَلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ . رواه مسلم في صحيحه : ٤/٢٠٨٠ رقم ٢٧٠٨ – “যে ব্যাক্তি কোনো মঞ্জিল/স্থানে গিয়ে পৌছে (এই কথাগুলো) বলে- أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ – (আঊযু বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতি মিন শাররি মা খালাকা), কোনো কিছুই তার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না -যাবৎ না সে ওই মঞ্জিল/স্থান থেকে (অন্য কোথাও) চলে যায়”। [সহিহ মুসলীম- ৪/২০৮১ হাদিস ২৭০৮; মুসনাদে আহমদ- ৬/৩৩৭ হাদিস ২৭১৬৬]
ফায়দা: আপনি কোথাও গেলে সেখানে পৌছানোর পর এই দোয়াটি অন্তত: ১ বার পড়বেন, তাহলে সেই এলাকাটির ভিতরে যতক্ষন থাকবেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ’র কোনো মাখলুক আপনার কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আবার যখন আপনার বাড়িতে ফিরে আসবেন, তখনও এই দোয়াটি অন্তত: ১ বার পড়ে নিবেন, তাহলে আপনার এলাকার ভিতরে যতক্ষন থাকবেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ’র কোনো মাখলুক আপনার কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। কত ছোট্ট আমল, কিন্তু কত বড় ফায়দা ! কেউ ছাড়বেন না এই আমলটিকে। আমলটি যে কেউ করতে পারেন। তবে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে পড়বেন যে, কেয়ামত হয়ে গেলেও আল্লাহ’র রাসুলের কথা মিথ্যা হবে না।
দোয়াটি আরবীতে: أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): ‘আঊযু বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতি মিন শাররি মাা খালাকা’।
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: ‘আল্লাহ’র পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে আমি আশ্রয় চাচ্ছি ওই জিনিসের ক্ষতি/অনিষ্টতা থেকে যা তিঁনি সৃষ্টি করেছেন’।
‘দোয়া ইউনূস’ বা অন্য দোয়া-এর মাধ্যমে আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় কামনা
# সা’দ বিন আবি ওয়াককাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- دعوة ذي النون إذ هو في بطن الحوت { لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين } فإنه لم يدع بها مسلم ربه في شيء قط إلا استجاب له . رواه أحمد في مسنده : ٢/٢١٧ رقم ٤٦٢ : و قال أحمد شاكر : : إسناده صحيح ; رواه ايضا الترمذي في سننه : رقم ٣٥٠٥ ; و قال المنذري في الترغيب والترهيب : ٢/٣٩٥ و ٣/٥٩ : إسناده صحيح أو حسن أو ما قاربهما ; و حسنه ابن حجر في الفتوحات الربانية : ٤/١١ و في تخريج مشكاة المصابيح في المقدمة : ٢/٤٣١ ; و صححه الألباني في صحيح ; و أبو يعلى في مسنده: رقم ٧٧٢ ; و النسائي في اليوم والليلة : ٦٥٥ ,٦٥٦ ، و الطبراني في الدعاء : ١٢٤ ، و الحاكم : ١/٥٠٥ , ٢/٣٨٢ , ٥/٥٠١، و البيهقي في الشعب : ٦٢٠ – “(নবী) যুন্নুন (তথা হযরত ইউনূস আ.)-এর দোয়া, যা তিনি (তিমি) মাছের পেটে (থাকাবস্থায় বলেছিলেন, তথা) لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ – (লাা ইলাাহা ইল্লাা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন), এমন কোনো মুসলীম ব্যাক্তি নেই যে এর মাধ্যমে তাঁর রবের কাছে কোনো ব্যাপারে দোয়া করেছে, আর তিঁনি তার ডাকে সারা দেন নি”। [মুসনাদে আহমদ– ২/২১৭ হাদিস ১৪৬২; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৫০৫; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ২/১১০ হাদিস ৭৭২; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৫০৫, ২/৩৮২, ৫/৫০১; আদ-দুআ, ইমাম তাবরাণী- ১২৪; শুয়াবুল ইমান, বাইহাকী- ১/৪৩২ হাদিস ৬২০; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ৪৫/৩৮ হাদিস ৯৮৪২]
ফায়দা: যে কোনো বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত ও সমস্যায় এই দোয়াটি খুবই কার্যকর ও পরীক্ষিত। সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখে বেশি বেশি এই দোয়া কায় মনো বাক্যে পাঠ করতে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে, ইনশাআল্লাহ। দরকার সবর ও একনিষ্ঠ ভাবে আমলটি করতে থাকা।
দোয়াটি আরবীতে: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): ‘লাা ইলাাহা ইল্লাা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন’।
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: ‘(হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। তুমি (সকল দোষ-ত্রুটি থেকে) পবিত্র। নিশ্চই আমি জুলুমকারীদের মধ্যে একজন’।
# উসমান বিন আফফান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا مِنْ عَبْدٍ يَقُولُ فِي صَبَاحِ كُلِّ يَوْمٍ وَمَسَاءِ كُلِّ لَيْلَةٍ بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ فَيَضُرُّهُ شَيْءٌ . أخرجه الترمذي في سننه ,كتاب الدعوات , باب ما جاء في الدعاء إذا أصبح وإذا أمسى : رقم ٣٣٨٨ و قال : هذا حديث حسن صحيح غريب، و البخاري في الأدب المفرد: رقم ٦٦٠ ، و النسائي في عمل اليوم والليلة: رقم ٣٤٦ و في الكبرى: رقم ١٠١٦، و أبو داود في سننه : رقم ٥٠٨٨، و ابن ماجه في سننه , كتاب الدعاء : رقم ٣٨٦٩ ، و الحاكم في مستدركه : ١/٥١٤، و أحمد في مسنده : ١/٦٦، و الطحاوي في شرح مشكل الآثار: رقم ٣٠٧٦ ، و غيرهم من طريق عبد الرحمن بن أبي الزناد عن أبيه عن أبان بن عثمان مرفوعا، و قال ابن القيم في زاد المعاد : ٢/٣٣٨ : حديث صحيح، قال ابن حجر العسقلاني في نتائج الأفكار : ٢/٣٤٧ : هذا حديث حسن صحيح، و صححه الألباني في صحيح أبي داود و في صحيح الجامع – “(আল্লাহ’র) যে (কোনো) বান্দা (হোক না কেনো, সে যদি) প্রতি দিন সকালে এবং প্রতি রাতে সন্ধা’র সময় তিন বার করে (এই দোয়াটি) বলে- بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ – (বিসমিল্লাহিল্লাজি, লাা ইয়া দুররু, মায়াসমিহি শাইয়ূন ফিল আরদ, ওয়া লাা ফিস-সামা, ওয়া হুওয়াস সামিউল আলিম), তাহলে (সকালে পড়লে ওই দিন সন্ধা পর্যন্ত এবং সন্ধায় পড়লে ওই রাতটি সকাল হওয়া পর্যন্ত সময়েরর মধ্যে) কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৩৮৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫০৮৮; মুসনাদে আহমদ- ১/৬৬; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৫১৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস ৩৮৬৯; আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী- ৬৬০; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ৩০৭৬; সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ী- ১০১৬]
ফায়দা: দোয়াটি আরবীতে: بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি, লাা ইয়া দুররু, মায়াসমিহি শাইয়ূন ফিল আরদ, ওয়া লাা ফিস-সামা, ওয়া হুওয়াস সামিউল আলিম’।
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: “সেই আল্লাহ’র নামে, যাঁর নামের সাথে -না জমিনে আর না আসমানে কোনো কিছু ক্ষতিসাধন করতে পারে। আর তিনি হলের সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ”।
সুরা ফালাক এবং সুরা নাস -এর মাধ্যমে আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় কামনা
# উক্ববা বিন আমের রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন:– أَلَمْ تَرَ آيَاتٍ أُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ ، قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ . رواه مسلم، كتاب المساجد ومواضع الصلاة، باب فضل قراءة المعوذتين، برقم ٨١٤ – “(গত) রাতে (আমার উপরে এমন কিছু) আয়াত নাজিল হতে লক্ষ করা গেছে, যেগুলোর অনুরূপ (আয়াতে কারিমা এর আগে কখনো নাজিল হতে) দেখা যায় নি। (সেগুলো হল)- قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (তথা সুরা ফালাক) এবং قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (তথা সুরা নাস)”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৮১৪; মুসনাদে আহমদ- ৪/১৪৪; সুনানে নাসায়ী- ২/১৫৮; ৮/২৫৪ ]
# আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:– كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَعَوَّذُ مِنَ الجَانِّ وَعَيْنِ الإِنْسَانِ حَتَّى نَزَلَتِ المُعَوِّذَتَانِ فَلَمَّا نَزَلَتَا أَخَذَ بِهِمَا وَتَرَكَ مَا سِوَاهُمَا . رواه الترمذي في سننه: رقم ٢٠٥٨ ، رواه ايضا النسائي في سننه: رقم ٥٤٩٤ ، و ابن ماجة في سننه: رقم ٣٥١١ ; و صححه الألباني في صحيح الترمذي و في في ” صحيح الجامع : ٤٩٠٢ – “ (শয়তান ও বদ) জ্বীন এবং মানুষের (বদ)নজর থেকে রাসুলুল্লাহ ﷺ (আল্লাহ’র) আশ্রয় চাইতেন। অবশেষে দুই ‘মুআউইযাত’ (তথা সুরা ফালাক ও সুরা নাস) নাজিল হয়। যখন ওই দুটি (সুরা) নাজিল হল, তখন তিনি সেগুলিকে (আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় চাওয়ার আরো অধিক মজবুত মাধ্যম হিসেবে) গ্রহন করলেন এবং ওই দুটি ছাড়া বাকি যা কিছু ছিল তা পরিত্যাগ করলেন”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২০৫৮; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৫৪৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৫১১]
ফায়দা: এই হাদিসে যে ইংগীত করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইতিপূর্বে সৃষ্টিকুলের বিভিন্ন ক্ষতি ও অনিষ্টতা থেকে বিভিন্ন দোয়া/আমলের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, কিন্তু সুরা ফালাক এবং সুরা নাস নাজিল হওয়ার পর তিনি ইতিপূর্বেকার আমলগুলো সব পরিত্যাগ করে শুধু সুরা ফালাক এবং সুরা নাস-কেই আঁকড়িয়ে ধরেন, তার অর্থ এই নয় যে, ইতিপূর্বেকার আমলগুলো মনসুখ (রহিত/বাতিল) হয়ে গেছে। বরং এর সঠিক অর্থ হল, আগের দোয়া ও আমলগুলোও স্ব-স্থানে জায়েয ও আমলযোগ্য -যা বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক বিশেষ ভাবে শুধু সুরা ফালাক এবং সুরা নাস-কেই আঁকড়িয়ে ধরার কারণ হল, এই দুই সুরা যে ব্যাপক ভাবগম্ভীর কালাম ও অর্থ-মর্ম সহ নাজিল হয়েছে, তাতে মূলত: আল্লাহ’র সকল সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্টতা ও ক্ষতি থেকেই আল্লাহ তাআলা’র আশ্রয় চাওয়ার আমল শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এই দুই সুরার অসিলায় যখন গোটা সৃষ্টিকুলের যাবতীয় অনিষ্টতা ও ক্ষতি থেকে আল্লাহ’র আশ্রয় মিলছে, তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য আর কী প্রয়োজনটা বাকি থাকলো আগের মতো করে পৃথক পৃথক ভাকে অমুক অমুক সৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাওয়ার।
# উকবাহ বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন:– بَيْنَا أَنَا أَسِيرُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الْجُحْفَةِ، وَالْأَبْوَاءِ، إِذْ غَشِيَتْنَا رِيحٌ ، وَظُلْمَةٌ شَدِيدَةٌ ، فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَعَوَّذُ بِأَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَأَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ، وَيَقُولُ: يَا عُقْبَةُ ، تَعَوَّذْ بِهِمَا فَمَا تَعَوَّذَ مُتَعَوِّذٌ بِمِثْلِهِمَا . رواه أبو داود في سننه , كتاب الوتر : ١٤٦٣ , و صححه الألباني في صحيح أبي داود ; رواه ايضا الطحاوي في شرح مشكل الآثار : ١٢٧ ، والطبراني : ١٧/٣٤٥ رقم ٩٥٠ – “আমি (একদিন) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে ‘জুহফাহ’ ও ‘আবওয়া’র মাঝ দিয়ে হাটছিলাম। এমন সময় (প্রবল) বাতাস ও ঘনকালো অন্ধকার আমাদেরকে ছেঁয়ে নিলো। রাসুলুল্লাহ ﷺ তখন أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (তথা সুরা ফালাক) এবং أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (তথা সুরা নাস)-এর মাধ্যমে (আল্লাহ তাআলার কাছে) আশ্রয় চাইলেন এবং (আমাকে) বললেন: ‘হে উকবাহ! তুমি এই দুই (সুরা)-এর সাহায্যে (আল্লাহ’র কাছে) আশ্রয় চাও। কারণ, কোনো আশ্রয়প্রার্থি এই দুই-এর অনরূপ (অধিক ফলপ্রশু কোনো কিছু)র দ্বারা (আল্লাহ’র কাছে) আশ্রয় চাইতে পারেনি”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৪৬৩; শারহু মাআনিল আছার, ত্বাহাবী- ১২৭; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১৭/৩৪৫ হাদিস ৯৫০; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদিস ৪০৫০]
# আব্দুল্লাহ বিন খুবাইব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন:– خَرَجْنَا فِي لَيْلَةِ مَطَرٍ، وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ، نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلـم لِيُصَلِّيَ لَنَا، فَأَدْرَكْنَاهُ، فَقَالَ: «أَصَلَّيْتُمْ؟» فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، فَقَالَ: «قُلْ»، فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: «قُلْ»، فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: «قُلْ»، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «قُلْ: ﴿ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد ﴾، وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ، حِينَ تُمْسِي وَحِينَ تُصْبِحُ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ . رواه أبو داود في سننه , كتاب الأدب , برقم ٥٠٨٢ ، و حسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود – “আমরা (একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ না পেয়ে) বৃষ্টি-পড়া রাত ও ঘনকালো অন্ধকারের মধ্যে রাসুলুল্লাহ ﷺকে খুঁজতে বেড় হলাম, যাতে তিনি আমাদেরকে (নিয়ে) নামায পড়াতে পারেন। পরে আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমরা কি নামায পড়েছো’? আমি তখন কিছুই বললাম না। তখন তিনি বললেন ‘বলো’। তখনও আমি কিছু বললাম না। তিনি আবারও বললেন ‘বলো’। তখনও আমি কিছু বললাম না। তিনি আবারও বললেন ‘বলো’। তখন আমি বললাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কী বলবো’? তিনি বললেন: সন্ধা ও সকালে তিন বার করে ‘বলো قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد (তথা সুরা ইখলাস) এবং মুআউইযাতাইন (তথা সুরা ফালাক ও সুরা নাস)। (এই সুরা তিনটি) সকল কিছুর পক্ষ থেকে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫০৮২]
# আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন:– أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلـم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ، ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا، فَقَرَأَ فِيهِمَا ﴿ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد ﴾ و﴿ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَق ﴾ و﴿ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاس ﴾، ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ، يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ، وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ، يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ . رواه البخاري في الصحيح برقم ٥٠١٧ – “নবী ﷺ প্রতি রাতে যখন বিছানায় শয্যা গ্রহন করতেন, তখন তাঁর দু (হাতের) তালুকে (চেহারার সামনে একত্রে) লাগিয়ে নিতেন, তারপর قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد (তথা সুরা ইখলাস), قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَق (তথা সুরা ফালাক্ব) এবং قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاس (তথা সুরা নাস) পাঠ করে (ওই) দুই (তালু)’তে ফুঁ দিয়ে। অত:পর (হাতের ওই তালু) দুটিকে তিনি যতখানি পারেন তাঁর শরীরে মাসেহ করে নিতেন। (এক্ষেত্রে দেখেছি,) তিনি (তাঁর হাতের তালু) দু’টিকে তাঁর মাথা ও মুখ থেকে শুরু করতেন এবং তাঁর শরীরের সামনের (বাকি অংগ গুলোর) দিকে নিয়ে যেতেন। তিনি এভাবে তিনবার করতেন”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৫০৮২]
উকবা বিন আমের রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– أَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، أَنْ أَقْرَأَ بِالْمُعَوِّذَاتِ ، فِي دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ . رواه أبو داود في السنن : رقم ١٥٢٣، والترمذي في السنن : رقم ٢٩٠٣، و النسائي في السنن : ٣/٦٨، وأحمد : ٤/٢٠١ رقم ١٧٨٢٦، و صحَّحه الألباني في صحيح سنن النسائي و في صحيح أبي داود – “রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পর আল-মুআওউইযাত (সুরা ফালাক এবং সুরা নাস) পাঠ করি ”?। [সুনানে আবু দাউদ- ১/ ৪৭৭ হাদিস ১৫২৩; সুনানে নাসায়ী- ৩/৬৮ হাাদিস ১৩৩৬; সুনানে তিরমিযী- ৫/১৭১ হাদিস ২৯০৩; মুসনাদে আহমদ- ৪/১৫৫ হাদিস ১৭৪৫৩; সহিহ ইবনে হিব্বান- ৫/৩৪৪ হাদিস ২০০৪; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ- ১/৩৭২ হাদিস ৭৫৫; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম তাবরাণী- ১৭/২৯৪ হাদিস ৮১১]
আরো কিছু দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় কামনা করা
ইমাম মালেক রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ রহ. বর্ণনা করেছেন- أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَى عِفْرِيتًا مِنَ الْجِنِّ يَطْلُبُهُ بِشُعْلَةٍ مِنْ نَارٍ ، كُلَّمَا الْتَفَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَآهُ ، فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ : أَفَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ تَقُولُهُنَّ ، إِذَا قُلْتَهُنَّ طَفِئَتْ شُعْلَتُهُ ، وَخَرَّ لِفِيهِ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : بَلَى ، فَقَالَ جِبْرِيلُ فَقُلْ : أَعُوذُ بِوَجْهِ اللَّهِ الْكَرِيمِ ، وَبِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ اللَّاتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ ، مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ ، وَشَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا ، وَشَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ ، وَشَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا ، وَمِنْ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ، وَمِنْ طَوَارِقِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ، إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ . اخرجه الإمام مالك في “الموطأ , كتابُ الشَّعَرِ, بَابُ مَا يُؤْمَرُ بِهِ مِنَ التَّعَوُّذِ : ٥/٤٥٣ رقم ١٧٤٢، و النسائي في السنن الكبرى , باب: ذِكْرُ مَا يَكُبُّ الْعِفْرِيتَ وَيُطْفِئُ شُعْلَتَهُ : ٦ / ٢٣٧ رقم ١٠٧٩٣، – “(মি’রাজের রাতে) রাসুলুল্লাহ ﷺ ভ্রমনের সময় (এক পর্যায়ে) একটি ইফরীত (দৈত্যাকার শক্তিশালী খবিস) জ্বিন দেখতে পেলেন, যার হাতে ছিল আগুনের শিখা। (বোরাকে চলমান অবস্থায়) রাসুলুল্লাহ ﷺ যখনই এদিক ওদিক চেয়ে তাকাতেন, তখনই ওকে দেখতে পেতেন (যে, সে সামনে এসে হাজির)। তখন (বোরাকের চালক ফেরেশতা) জিবরীল (আ.) তাঁকে বললেন: ‘আমি কি আপনাকে (এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের নিমিত্তে) পাঠ করার জন্য (কিছু) কালিমাত শিখিয়ে দিবো না? আপনি যখন ওগুলো বলবেন, তখন তার অগ্নী শিখা নিভে যাবে এবং সে যার মধ্যে আছে সেটাকে নিচে ফেলে দিবে’? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘অবশ্যই (বলুন)’। তখন জিবরীল (আ.) বললেন: ‘আপনি বলুন- أَعُوذُ بِوَجْهِ اللَّهِ الْكَرِيمِ ، وَبِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ اللَّاتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ ، مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ ، وَشَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا ، وَشَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ ، وَشَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا ، وَمِنْ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ، وَمِنْ طَوَارِقِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ، إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ – (আঊযু বি-ওয়াজহিল্লাহিল কারিম, ওয়া বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতিল লাতি লাা ইয়ূজাউ-ইযুহুন্না বাররুন, ওয়া লাা ফাাজিরুন, মিন শাররি মাা ইয়ানযিলু মিনাস সামা’, ওয়া শাররি মাা ইয়া’রুজু ফিহাা, ওয়া শাররি মা যারাআ ফিল আরদ্ব, ওয়া শাররি মা ইয়াখরুজু মিনহাা, ওয়া মিন ফিতানিল লাইলি ওয়ান নাহার, ওয়া মিন ত্বাওয়ারিকিল লাইলি ওয়ান নাহার, ইল্লা ত্বরিকান ইয়াত্বরুকু বি-খাইরিন, ইয়া রহমান)”। [আল-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক- ৫/৪৫৩ হাদিস ১৭৪২; সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ী- ৬/২৩৭ হাদিস ১০৭৯৩]
আবুল আলীয়াহ রহ. (সাহাবী) খালেদ বিন ওয়ালিদ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন– أَنَّهُ شَكَى إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : إِنِّي أَجِدُ فَزَعًا بِاللَّيْلِ فَقَالَ : أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ عَلَّمَنِيهِنَّ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَزَعَمَ أَنَّ عِفْرِيتًا مِنَ الْجِنِّ يَكِيدُنِي قَالَ : أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ ، وَلَا فَاجِرٌ مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا ، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا ، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَفِتَنِ النَّهَارِ ، وَمِنْ شَرِّ طَوَارِقِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَانُ . رواه الطبراني في المعجم الكبير , باب الخاء , باب من اسمه خالد , خالد بن الوليد , أبو العالية عن خالد بن الوليد: رقم ٣٨٣٨ ، قال الهيثمي في مجمع الزوائد: ١٠/١٢٧ : رواه الطبراني وفيه المسيب بن واضح وقد وثقه غير واحد وضعفه جماعة وكذلك الحسن ابن علي المعمري، وبقية رجاله رجال الصحيح، و صححه الألباني في “الصحيحة : رقم ٢٧٣٨ – “তিনি (একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে (এসে) অভিযোগ করে বললেন: ‘আমি রাতে ভয় পাই’। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন: ‘আমি কি তোমাকে ওইসকল কালিমাত শিক্ষা দিবো না, যেগুলো জিবরীল (আ.) -এক ইফরীত (দৈত্যাকার শক্তিশালী খবীস) জ্বীন আমার ক্ষতি সাধনের ষঢ়যন্ত্র করে বসলে -তিঁনি (এসে ওর ষঢ়যন্ত্র থেকে বাঁচার জন্য) আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন’? তিঁনি বললেন (কালেমা গুলো হল এই): أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ ، وَلَا فَاجِرٌ مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا ، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا ، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَفِتَنِ النَّهَارِ ، وَمِنْ شَرِّ طَوَارِقِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَانُ – (আঊযু বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতিল লাতি লাা ইয়ূজাউ-ইযুহুন্না বাররুন, ওয়া লাা ফাজিরুন, মিন শাররি মাা ইয়ানযিলু মিনাস সামা’, ওয়া মাা ইয়া’রুজু ফিহাা, ওয়া মিন শারমি মা জারাআ ফিল আরদ্ব, ওয়া মা ইয়াখরুজু মিনহাা, ওয়া মিন শাররি ফিতানিল লাইলি ওয়া ফিতানিন নাহার, ওয়া মিন শাররি ত্বাওয়ারিকিল লাইলি ওয়ান নাহার, ইল্লা ত্বরিকান ইয়াত্বরুকু বি-খাইরিন, ইয়া রহমান)”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম তাবরাণী- ৪/১১৪ হাদিস ৩৮৩৮; আদ-দুয়া, ইমাম তাবরাণী- ১/১৩০৭ হাদিস ১০৮৩; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবন আবি শাইবাহ- ৮/৬০, ১০/৩৬৩; আস-সুন্নাহ, ইবন আবি আসিম, হাদিস ৩৭২; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১০/১২৬]
যা’ফর ইবন সুলাইমান রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আবুত তাইয়্যাহ রহ. বর্ণনা করেছেন- قُلْتُ: لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ خَنْبَشٍ التَّمِيمِيِّ، وَكَانَ كَبِيرًا، أَدْرَكْتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: قُلْتُ: كَيْفَ صَنَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ كَادَتْهُ الشَّيَاطِينُ، فَقَالَ: إِنَّ الشَّيَاطِينَ تَحَدَّرَتْ تِلْكَ اللَّيْلَةَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْأَوْدِيَةِ، وَالشِّعَابِ، وَفِيهِمْ شَيْطَانٌ بِيَدِهِ شُعْلَةُ نَارٍ، يُرِيدُ أَنْ يُحْرِقَ بِهَا وَجْهَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَهَبَطَ إِلَيْهِ جِبْرِيلُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ قُلْ، قَالَ: «مَا أَقُولُ؟» قَالَ: ” قُلْ: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وَذَرَأَ وَبَرَأَ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ، يَا رَحْمَنُ ، قَالَ: فَطَفِئَتْ نَارُهُمْ، وَهَزَمَهُمُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى . اخرجه الإمام أحمد في مسنده , مسند المكيين , حديث عبد الرحمن بن خنبش رضي الله تعالى عنه : ٣/٣١٩ و قال الألباني في في سلسلة الأحاديث الصحيحة : ٢/٤٩٦ رقم ٨٤٠ : إسناده صحيح رجاله إلى ابن خنبش على شرط مسلم و قال في ٦/١٢٥١ رقم ٢٩٩٥ : و هذا إسناد حسن …..متصل، و قال شيخ حمزة احمد الزين في تحقيقه : ١٢/١٨٧ رقم ١٥٣٩٩ : اسناده صحيح ، و رواه ابن أبي شيبة المصنف : ١٥/٣١٥ رقم ٣٠٢٣٨ ، و ابن السني في عمل اليوم والليلة : رقم ٦٣١، – “আমি (একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর এক সাহাবী) আব্দুর রহমান বিন খামবাশ আত-তামিমী রা.কে -তখন তিনি ছিলেন (একজন) বয়বৃ্দ্ধ (লোক)- জিজ্ঞেস করলাম: ‘আপনি কি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাক্ষাত লাভ করেছিলেন’? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ’। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ‘(আমি আপনার কাছে জানতে ইচ্ছুক) যে রাতে রাসুলুল্লাহ ﷺকে শয়তানরা ক্ষতি সাধনের ষঢ়যন্ত্র করেছিল, (সে রাতে) তিঁনি (ওদের মুকাবেলায়) কি (আমল) করেছিলেন’? তখন তিনি বললেন: ‘শয়তানরা সেই রাতে বিভিন্ন উপত্তকা ও ঘাটি থেকে চারিদিক দিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর উপরে ধেয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে একটা শয়তান ছিল যার হাতে ছিল অগ্নী শিখা। সে ও(ই অগ্নী শিখা)টি দিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মুখমন্ডলকে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। তখন (ফেরেশতা) জিবরীল (আ.) তাঁর কাছে ছুটি িএসে বলেন: ‘হে মুহাম্মাদ! বলুন’। তিঁনি বললেন: ‘আমি কী বলবো’? জিবরীল (আ.) বললেন: ‘বলুন- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وَذَرَأَ وَبَرَأَ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ، يَا رَحْمَنُ – ‘(আঊযু বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতি মিন শাররি মাা খালাক্বা, ওয়া যারাআ ওয়া বারাআ, ওয়া মিন শাররি মাা ইয়ানযিলু মিনাস সামা’, ওয়া মিন শাররি মাা ইয়া’রুজু ফিহাা, ওয়া মিন শাররি ফিতানিল লাইলি ওয়ান নাহার, ওয়া মিন শাররি কুল্লি ত্বরিক্বিন ইল্লা ত্বরিকান ইয়াত্বরুকু বি-খাইরিন, ইয়া রহমান)’। আব্দুর রহমান রা. বলেন: ‘ফলে তাদের অগুনগুলো নিভে গেলো এবং আল্লাহ তাবারক ওয়া তাআলা (এই দোয়ার বরকতে) তাদেরকে পরাভুত করে দিলেন”। [মুসনাদে আহমদ– ৩/৩১৯; মা’রিফাতুস সাহাবাহ, ইমাম আবু নুয়াইম- ১/১৮৩৭ হাদিস ৪৬৩৭; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ইমাম মুনযিরী– ১/২৩১ হাদিস ২৩৪২]
ফায়দা: আরেক রেওয়াতে দোয়াটি এসেছে এভাবে- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَذَرَأَ ، وَبَرَأَ ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا ، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا ، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ . اخرجه الإمام ابن أبي شيبة المصنف : ١٥/٣١٥ رقم ٣٠٢٣٨، و الإمام أحمد في مسنده , مسند المكيين , حديث عبد الرحمن بن خنبش رضي الله تعالى عنه : ٣/٣١٩، – “(আঊযু বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতিল লাতি লাা ইয়ূজাউ-ইযুহুন্না বাররুন, ওয়া লাা ফাাজিরুন, মিন শাররি মাা খালাক্বা, ওয়া যারাআ ওয়া বারাআ, ওয়া মিন শাররি মাা ইয়ানযিলু মিনাস সামা’, ওয়া মিন শাররি মাা ইয়া’রুজু ফিহাা, ওয়া মিন শাররি মা যারাআ ফিল আরদ্ব, ওয়া মিন শাররি মা ইয়াখরুজু মিনহাা, ওয়া মিন শাররি ফিতানিল লাইলি ওয়ান নাহার, ওয়া মিন শাররি কুল্লি ত্বরিক্বিন ইল্লা ত্বরিকান ইয়াত্বরুকু বি-খাইরিন, ইয়া রহমান)”। [মুসনাদে আহমদ– ৩/৩১৯; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবন আবি শাইবাহ- ১৫/৩১৫ হাদিস ৩০২৩৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১২/২৩৭; তারিখে ত্বাবারী- ২১/৫৯২; আমালুল ইয়াওম, ইবনুস সুন্নী- ৬৩১; আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার- ২৪/১১২; দালায়েলুন নাবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ৭/৯৫; মা’রিফাতুস সাহাবাহ, ইমাম আবু নুয়াইম- ১/১৮৩৬ হাদিস ৪৬৩৬; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১০/১২৭]
আব্দু্ল্লাহ বিন আমর বিন আস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন– كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا كَلِمَاتٍ نَقُولُهُنَّ عِنْدَ النَّوْمِ مِنَ الْفَزَعِ : بِسْمِ اللَّهِ ، أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ ، مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ ، وَشَرِّ عِبَادِهِ ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ ، وَأَنْ يَحْضُرُونِ . رواه أحمد في المسند , مسند المكثرين من الصحابة , مسند عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله تعالى عنهما: ١٠/١٧٠ رقم ٦٦٩٦ ، قال أحمد شاكر: إسناده صحيح – “ রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে (কিছু) কালেমাত শিক্ষা দিতেন, (যাতে) আমরা ঘুমানোর সময় ভয় পেলে সেগুলো বলি। (কালেমাগুলো হল এই)– بِسْمِ اللَّهِ ، أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ ، مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ ، وَشَرِّ عِبَادِهِ ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ ، وَأَنْ يَحْضُرُونِ – (বিসমিল্লাহ, আঊযু বি-কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাদ্বাবিহি, ওয়া ঈক্বাাবিহি, ওয়া শাররি ঈবাাদিহি, ওয়া মিন হামাযাাতিশ শায়াতুইন, ওয়া আই-ইয়াহ্বদুরুন)”। [মুসনাদে আহমদ– ১/১৭১, ৪/৫৭, ৬/৬; আল-আসমাউ ওয়াস সিফাত, ইমাম বাইহাকী– ১/৪৭৬ হাদিস ৪০৭; সুনানে তিরমিযী- ৫/৫৪১ হাদিস ৩৫২৮; সুনানে আবু দাউদ- ৪/১২ হাদিস ৩৮৯৩; আল-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক- ২/৯৫০; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৭/৪১৮; ১০/৩৬২; আল-মুসতাদরাক, ইমাম হাকীম- ১/৫৪৮; আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার- ২৪/১০৯; মা’রিফাতুস সাহাবা, ইমাম আবু নুআইম- ২/২৩১; মাতালেবুল আলীয়্যাহ, ইবন হাজার– ১৩/৮৮৪ হাদিস ৩৩৬৪]
কা’কা বিন হাকিম রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কা’ব আহবার রহ. বলেন– لَوْلَا كَلِمَاتٌ أَقُولُهُنَّ لَجَعَلَتْنِي يَهُودُ حِمَارًا ، فَقِيلَ لَهُ : وَمَا هُنَّ ؟ فَقَالَ : أَعُوذُ بِوَجْهِ اللَّهِ الْعَظِيمِ ، الَّذِي لَيْسَ شَيْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ ، وَبِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ ، وَبِأَسْمَاءِ اللَّهِ الْحُسْنَى كُلِّهَا مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَبَرَأَ وَذَرَأَ . أخرجه الإمام مالك في الموطأ , كتابُ الشَّعَرِ بَابُ مَا يُؤْمَرُ بِهِ مِنَ التَّعَوُّذِ : ٢/٩٥١ : إسناد صحيح، و رواه البيهقي في “الأسماء والصفات: رقم ٦٧٦ – “আমি যদি (প্রতিদিন কিছু) কালিমাত না বলতাম, তাহলে (ইহূদী ধর্ম থেকে আমার ইসলাম কবুল করার অপরাধে) ইহূদীরা (জাদু করে) আমাকে নির্ঘাৎ গাধা বানিয়ে দিতো’। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল: ‘কি সেগুলো’? তখন তিঁনি বললেন: ‘ أَعُوذُ بِوَجْهِ اللَّهِ الْعَظِيمِ ، الَّذِي لَيْسَ شَيْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ ، وَبِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ ، وَبِأَسْمَاءِ اللَّهِ الْحُسْنَى كُلِّهَا مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَبَرَأَ وَذَرَأَ – (আঊযু বি ওয়াজহিল্লাহিল আজীম, আল্লাযি লাইসা শাইউন আ’জমা মিনহু, ওয়া বি-কালিমাাতিল্লাহিত তাাম্মাাতিল্লাতি, লাা ইয়ূজাউ-ইযুহুন্না বাররুন, ওয়া লাা ফাাজিরুন, বি-আসমায়িল্লাহিল হুসনা কুল্লিহা, মা আলিমতু মিনহা, ওয়া মাা লাম আ’লাম, মিন শাররি মা খালাকা, ওয়া যারাআ ওয়া বারাআ)”। [আল-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক- ২/৯৫১; আল-আসমা ওয়াস সিফাত, ইমাম বাইহাকী- ২/১১২ হাদিস ৬৭৬; আল-ইসতিযকার, ইবনু আব্দিল বার- ৮/৪৪৫]