হিজরতের পর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র , সমাজ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি

মহানবী ﷺ-এর হিজরতের পর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম, এবং তখনকার সমাজ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

 


>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন


 
পূর্ব আলোচনার পর…

রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হিজরতের পূর্বে মদিনার পরিবেশ পরিস্থিতি

রাসুলুল্লাহ ﷺ মক্কা থেকে হিজরত করে আগমনের পূর্বে ‘মদিনা’ শহরটি ‘ইয়াসরিব (يَثْرِب)’ নামে পরিচিত ছিল।
 
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, নবী হূদ আ.-এর কওম ‘আদ’ জাতি (যাদেরকে ‘আমালিকা’ জাতিও বলা হত, তারা) আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ২ হাজার বছর আগে ‘জাজিরাতুল আরব’-এর অংশ ইয়েমেনের ‘হাজরামাউত’ অঞ্চলে বসবাস করতো; তারা পাথড় খোঁদাই শিল্পে অতুলনীয় দক্ষ ছিল এবং কাল ক্রমে মূর্তিপূঁজায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাদেরই উত্তরসূরীদের মধ্যে যারা মিশরে কয়েক’শ বছর শাসন চালিয়েছিল, তাদেরকে যখন মিশর থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন তারা খ্রীষ্টপূর্ব ১০১৬ অব্দে (মোতাবেক হিজরী সন শুরু হওয়ার আনুমানিক ১৬৩৮ বছর পূর্বে) ইয়াসরিব-এ এসে জনবসতি গড়ে তোলে এবং সেখানে খেঁজুর বাগান ও কৃষি কাজের প্রসার ঘটায়। খুব সম্ভবত: এর পরই ইরাকের মেসোপটেমিয়া প্রদেশের বেবিলনের সম্রাটের হাতে বন্দি হওয়া ওইসকল ইহূদীরা সেখান থেকে পালিয়ে আরবের হিজাজে আসে, যাদেরকে বেবিলনের সম্রাট ফিলিস্তিনের উপরে হামলা করার সময় বন্দি করে বেবিলনে নিয়ে গিয়েছি, তারা এখানে খাইবার, ওয়াদিউল কুরা এবং ফিদাক এলাকায় আশ্রয় নেয় এবং স্থায়ীভাবে সববাস করা শুরু করে দেয়। একসময় এই ইহূদীরা ইয়াসরিব-এ বসবাসকারী ‘আমালিকা’দের উপরে প্রাধান্য লাভ করে বসে এবং তাদের কতককে ইহূদী ধর্মে দিক্ষিত করে ফেলে আর কতককে এইসব অঞ্চল থেকে বের করে দেয়। এরপর ‘সায়লে আরিম’ (বাঁধ ভাঙ্গা বন্যা)’র কারণে ‘মা আরিব’ বাঁধ ও তথাকার অধিবাসীরা যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তখন দক্ষিন আরব অঞ্চল থেকে (নবী ইসমাঈল আ.-এর বংশধর ও মূর্তিপূঁজক) আওসখাযরাজ গোত্রের লোকেরা এসে এই ইয়াসরিব-এ নতুনভাবে বসতি গড়ে তোলে। 
 
রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন মক্কা থেকে হিজরত করে ‘ইয়াসরিব’ (মদিনা)-এ আসেন, তখন মৌলিকভাবে এই ইহূদী সম্প্রদায় (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইযা এবং বনু নাযীর গোত্র) এবং আরব মুর্তিপূঁজক সম্প্রদায় (আওসখাযরাজ গোত্র) ইয়াসরিবের বসবাস করে আসছিল। রাসুলুল্লাহ ﷺ ইয়াসরিব (মদিনা)-এ হিজরত করে আসার কিছু পূর্ব পর্যন্ত সেখানে ইহূদীরাই শক্তিশালী ছিল। জ্ঞানগরিমা, ধ্বনসম্পদ, ব্যবসা-বানিজ্য, সমরশক্তি -সব দিক দিয়েই ইহুদীরা ছিল মুর্তিপূঁজক আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদের চাইতে অনেক এগিয়ে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার এই ছিল যে, ইয়াসরিব (মদিনা) থেকে সিরিয়া পর্যন্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই ইহূদীরা তাদের বসতী গড়ে তুলেছিল। ফলে সিরিয়া কেন্দ্রিক ব্যাবসা-বানিজ্যের বলতে গেলে পুুরোটাই ছিল এসব ইহূদীদের দখলে। এসব প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে আওস ও খাযরাজ গোত্র তাদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে রাখতে বাধ্য হয়েছিল। গোটা আরব’রাই এসব ইহূদীদের প্রভাবে এতটাই প্রভাবাহ্নিত হয়ে ছিল যে, আরবদের কারোর ঘরে মোটেও কোনো সন্তান না জন্মালে তারা এই মানত করতো যে, সন্তান হলে তারা তাকে ইহূদী ধর্মে দিক্ষিত করবে। 
 
এরপর ইয়াসরিব (মদিনা)-এর ইহূদীদের মধ্যে ফাতয়ূন নামের এক আরামপ্রিয় ও লম্পট কিসিমের সর্দারের আবির্ভাব হলে এক আরব মুশরেক সুযোগ বুঝে একদিন তাকে হত্যা করে সোজা সিরিয়ায় চলে যায় এবং (আরবদের সমগোত্রীয় হিসেবে) সেখানকার  গাসসানীদেরকে ইয়াসরিবে নিয়ে এসে এসব ইহূদীদের অনেককে হত্যার ব্যবস্থা করে, যার কারণে তখনকার মতো সেখানে ইহূদীদের শক্তি ও ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে ইয়াসরিব (মদিনা)-এর আরব মুর্তিপূজক আওস ও খাযরাজ গোত্র সেখানকার ইহূদীদের উপরে প্রবল হয়ে ওঠে।  কিন্তু তাদের এই শক্তিমত্তা বেশিদিন টিকতে পারেনি। কারণ, সেসময় কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে খোদ্ এই মুর্তিপূজক আওস ও খাযরাজ গোত্র দুটি পরষ্পরের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। প্রতিবেশি ইহূদীরা এসব মুশরকেদের উপরে প্রবল হওয়ার মানসে বিভিন্ন কু-কৌশলের আড়ালে আওস ও খাযরাজ গোত্রের মাঝে পারিষ্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ’কে আরো বাড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনায় থাকে। অবশেষে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হিজরতের ৪/৫ বছর পূর্বে ইয়াসরিব (মদিনা)-এর দক্ষিন-পশ্চিম দিকে ‘বুআছ’ নামক স্থানে (যা ইহূদী গোত্র বনু নাযীর ও বনু কুরাইযা’র বসতি থেকে পূর্বদিকে অবিস্থিত ছিল, সেখানে) আওস ও খাযরাজ গোত্রের পরষ্পরের মাঝে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা ‘বুআছ যুদ্ধ’ নামে খ্যাতো। এ যুদ্ধে আওস ও খাযরাজ উভয় গোত্রেরই বহু মুশরেক সর্দার ও সাধারণ মানুষ মাড়া যায়, যার কারণে উভয় গোত্রই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দূর্বল ও নি:স্ব হয়ে পড়ে। এ যুদ্ধের কারণে বিনা-প্ররিশ্রমে ইহূদীরা ইয়াসরিবে প্রবল হয়ে ওঠে। ইহূদীরা সূদী-ঋন ও যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে উভয় গোত্রকে সাহায্য সহযোগীতা করতে থাকে, যাতে যুদ্ধটির স্থায়ীত্ব আরো বৃদ্ধি পায় এবং তাদের অর্থনৈতিক ঋনের বোঝা দিনকে দিন আরো বাড়তে থাকে।  
 
শেষপর্যন্ত আওস ও খাযরাজ গোত্র তাদের পরিণতি আঁচ করতে পেরে তারা পরষ্পরের মাঝে সন্ধি করতে বাধ্য হয় এবং এই সিদ্ধান্তে আসে যে, তাদের উভয় গোত্রের মধ্য থেকে কোনো একজনকে ‘সর্বোচ্চ সর্দা’ হিসেবে নির্বাচন করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে উভয় গোত্রের মাঝে এধরনের আর কোনো দ্বন্দ্ব কলহ সংঘাত বা যুদ্ধ সংঘটিত হতে না পারে এবং তারা উভয় গোত্র একত্রে মিলে যাতে একটি একক শক্তিতে রুপান্তরিত হতে পারে। এরপর তারা পরষ্পর আলোচনা সাপেক্ষে তাদের আওস গোত্রের আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল’কে আওস ও খাযরাজ গোত্রের ‘সর্বোচ্চ সর্দা’ হিসেবে মনোনিত করে, শুধু ‘আনুষ্ঠানিক নির্বাচন’ বাকি ছিল। এমন এক পরিবেশ পরিস্থিতিতে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ মুস্তফা ﷺ মক্কা থেকে হিজরত করে ইয়াসরিব (মদিনা)-এ পা রাখেন, আর এতে করে আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল-এর আওস ও খাযরাজ গোত্রের ‘সর্বোচ্চ সর্দা’ হওয়ার স্বপ্ন সারাজীবনের জন্য ভেস্তে যায়। কারণ এর আগের আলোচনায় আপনারা দেখেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইয়াসরিব (মদিনা)-এ আগমনের প্রায় দু বছর আগ থেকেই এই মূর্তিপূঁজক আওস ও খাযরাজ গোত্রের বহু নারী পুরুষ ইতিপূর্বে মুসলমান হয়েছিলেন এবং বিগত দুটি হজ্জের মৌসুমে তারা মক্কায় গিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাতে ‘আক্বাবাহ’ও ১ম ও ২য় বায়াত’ও সম্পন্ন করে এসেছিলেন এবং তাদেরই আন্তরিক দাওয়াত ও তাবলীগের কারণে ইয়াসরিব (মদিনা)-এ এযাবৎ এই আওস ও খাযরাজ গোত্রেরই আরো অসংখ্য নারী পুরুষ ইসলাম কবুল করে ধন্য হন।
 

মক্কা থেকে হিজরত করে ইয়াসরিব (মদিনা)-এর ‘কুবা (قباء‎‎)’ এলাকায় রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আগমন ও ‘কুবা মসজিদ’ নির্মান

আমরা এর আগে আলোচনা করে এসেছি যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ হযরত আবু বকর রা.কে নিয়ে মক্কা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হন (অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে) নবুওতের ১৪ ম বছরের ‘সফর’ মাসের ২৭ তারিখ বৃহ:ষ্পতিবার দিবাগত শুক্রবার রাতে (মোতাবেক ১০-ই সেপ্টেম্বর ৬২২ ইং তারিখে)। এরপর তাঁদের দুজনকে ধরার জন্য মক্কার মুশরেকদের লেলিয়ে দেয়া লোকরা যখন তাঁদের পিছু নেয়, তখন তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাঁরা দুজনে হিজরতের রাস্তাপথে (মক্কা থেকে প্রায় ৬ মাইল দূরে অবস্থিত) ‘সাওর’ পাহাড়ের গুহায় তিন দিন তিন রাত –অর্থাৎ, সফর মাসের ২৭ তারিখ (শুক্রবার), ২৮ তারিখ (শনিবার), এবং ২৯ তারিখ (রবিবার)–পর্যন্ত আত্বগোপন করে থাকেন। এরপর  রবিউল আউয়াল মাসের ১ লা তারিখ সোমবার (মোতাবেক ১৪-ই সেপ্টেম্বর ৬২২ ইং) রাতের বেলা ইয়াসরিব (মদিনা)র উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এরপর প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে মদিনার উদ্দেশ্যে চলতে থাকেন। 
 
রাসুলুল্লাহ ﷺ মক্কা থেকে হিজরত করে ইয়াসরিব’ (মদিনা)-এ বসবাসের জন্য আসছেন -এ খবর তাঁর ‘ইয়াসরিব’ (মদিনা)-এ পা রাখার বেশ কিছুদিন আগ থেকেই ‘ইয়াসরিব’ (মদিনা)-এর মুসলীম অমুসলীম সকলের মাঝে জানাজানি হয়ে যায়। এখবর শুনতেই মদিনার মুসলমানদের মাঝে যেন আনন্দের ফোয়ারা উথলে ওঠলো, সকলে অধীর আগ্রহে ছিলেন -কখন রাসুলুল্লাহ ﷺ তাদের মাঝে আসবেন। তবে, ঠিক কবে রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘ইয়াসরিব’ (মদিনা)-এ পা রাখবেন -একথা জানা না থাকায় সেখানকার মুসলমানদের অনেকে প্রতিদিন ফরজরের নামায আদায় করার পর সকালে মদিনার পাহাড়ী এলাকার বাইরে (মদিনা নগরী থেকে প্রায় ৫ কি:মি: দূরে অবস্থিত) ‘কুবা’র ‘হাররাহ’ নামক এলাকায় গিয়ে তাঁর অপেক্ষায় দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন, পরে বাড়িতে ফিরে আসতেন। মুসলমানদের এভাবে অপেক্ষায় থাকার এ বিষয়টি এক ইহূদী লক্ষ্য করছিল এবং জানতো কাঁর অপেক্ষায় তারা প্রতিদিন এমনটা করছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ মক্কার ‘সাওর’ পাহাড়ের গুহা থেকে ১ সপ্তাহ চলার পর ৮ম দিনে অর্থাৎ, রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ সোমবার (মোতাবেক ২০-ই সেপ্টেম্বর ৬২২ ইং তারিখ)- যখন অপেক্ষমান মুসলমানগণ সেখান থেকে দুপুরের সময় তাদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেল, সেদিন দুপুরের পর রাসুলুল্লাহ ﷺ ইয়াসরিব (মদিনা)-এর কুবা’র দিকে মরুভূমির পথ ধরে এগিয়ে আসেন। এ দৃশ্যটি ওই ইহুদী একটি উঁচু টিলা থেকে দেখতে পায় এবং বুঝতে পারে যে, ইঁনি-ই সেই ব্যাক্তি যাঁর অপেক্ষায় মুসলমানরা অধীর হয়ে আছে। তখনই সে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে- يَا مَعَاشِرَ العَرَبِ ، هَذَا جَدُّكُمُ الَّذِي تَنْتَظِرُونَ – “হে -(মদিনার) আরব (মুসলমান)গণ ! তোমরা (এতদিন) তোমাদের যে মুরুব্বীর (আগমনের) অপেক্ষায় ছিলে -এই-যে তিনি (এসে গেছেন)”। [সহিহ বুখারী- ৫/৫৮ হাদিস ৩৯০৫]

মসজিদে কুবা, মদিনা মুনাওয়ারা

একথাটি শুধু শুনতে দেরী ছিল, অমনি খবরটি দ্রুত গতিতে গোটা মদিনায় বিশেষ করে মদিনার মূল নগরীর দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, আর মুহাজিরগণ ও আনসার মুসলমানদের অনেকেই বুক ভরা আনন্দ নিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য ‘কুবা’য় আসতে থাকেন, আর বেশির ভাগ মুসলমানই মদীনা নগরীতে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। বস্তুত: মদিনার মুসলমানদের কেউ ধারনা করতে পারেননি যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনায় প্রবেশ করে সরাসরি নগরীতে না এসে প্রথমে মদিনার উচ্চভূমি ‘কুবা’য় অবস্থান করবেন। এজন্য, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আগমনে সময় খোদ্ ‘কুবা’র মুসলমানরাও তখন সকলে উপস্থিত থাকতে পারেননি, কাছের যারা খবরটি ততক্ষনাৎ শুনতে পেয়েছিলেন তারা তাঁকে দেখার জন্য ছুটে আসেন। যারা সেসময় উপস্থিত হতে পেরেছিলেন, তারা এসে দেখেন রাসুলুল্লাহ ﷺ একটি গাছের ছাঁয়ায় বসে আছেন। তারা এর আগে কখনো রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে দেখেননি বিধায় প্রথমাবস্থায় তাঁকে ও আবু বকর রা.-এর মাঝে -কেঁ “রাসুলুল্লাহ ﷺ” -তা বাহ্যত: তখন বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কিংবা (বাহ্যত অনুমান করে নিতে পারলেও) শিষ্ঠাচারের খাতিরে তারা ইতস্থত করছিলেন যে, আগ বেড়ে কাকে “রাসুলুল্লাহ” বলে সম্মোধন করতে গিয়ে আবার কাকে ভুলে সম্মোধন করে বসেন! হযরত আবু বকর রা. তাদের এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নিজেই এগিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মাথার উপরে চাদর ধরেন -ছাঁয়া দানের জন্য, তখন সকলে বুঝতে পারেন যে, “কে রাসুলুল্লাহ ﷺ”। মদিনার ‘কুবা’-তেও আনসার মুসলামগণের বেশ কয়েকটি বসতী ছিল; তাদের মধ্যে বনু আমর বিন আউফ ছিল প্রসিদ্ধ, যার প্রধান ছিলেন কুলসুম ইবন হাদম; রাসুলুল্লাহ ﷺ তার বাড়িতেই ওঠেন, আর আবু বকর রা. ওঠেন (বনু হারিছ ইবন খাযরাজ গোত্রের) খুবায়েব বিন উসাফ-এর বাড়িতে।
 
ছাবিত রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আনাস বিন মালেক রা. বর্ণনা করেন-‏إِنِّي لَأَسْعَى فِي الْغِلْمَانِ يَقُولُونَ جَاءَ ‏ ‏مُحَمَّدٌ ‏ ‏فَأَسْعَى فَلَا أَرَى شَيْئًا ثُمَّ يَقُولُونَ جَاءَ ‏ ‏مُحَمَّدٌ ‏ ‏فَأَسْعَى فَلَا أَرَى شَيْئًا قَالَ حَتَّى جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏وَصَاحِبُهُ ‏ ‏أَبُو بَكْرٍ ‏ ‏فَكُنَّا فِي بَعْضِ حِرَارِ ‏الْمَدِينَةِ  ‏. رواه الإمام أحمد في مسنده , اقي مسند المكثرين , مسند أنس بن مالك رضي الله عنه : ٣/٢٢٢ رقم ١٢٩٠٥ : إسناده صحيح على شرط مسلم ، و قال الذهبي في سير أعلام النبلاء , السيرة النبوية , أمر الهجرة والعهد المدني , سياق خروج النبي صلى الله عليه وسلم إلى المدينة مهاجرا : ٢٦/٢٧٥ : صحيح، – “(রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মদিনায় সুভাগমনের কথা যখন নগরীতে ছড়িয়ে পড়লো, তখন সকলেরই ধারনা ছিল তিঁনি মদিনায় প্রবেশ করেছেন এবং মূল নগরীর দিকে এগিয়ে আসছেন। এজন্য অপেক্ষায় বালক-বালিকারা মদিনা নগরীর অদূরেই কোথাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনন্দঘন শোরগোল মাতাচ্ছিল, আর রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আগমনের কথাটি উচ্চস্বরে বলছিল। আমি ভেবেছিলাম যে, তারা রাসুলুল্লাহ ﷺকে আসতে দেখতে পেয়েছে এজন্য শোরগোল করছে। ফলে) আমিও (সেই) বালকদের (ভীড়ের) মাঝে দৌড়ে গেলাম -(নবীজী ﷺ-কে এক নজর দেখার জন্য); তারা বলছিল: ‘(আমাদের নবী) মুহাম্মাদ (ﷺ) এসে গেছেন’! এজন্যই আমি (সেখানে) দৌড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি (সেখানে) কোনো কিছুই দেখলাম না। তারা আবারো বললো: ‘‘(আমাদের নবী) মুহাম্মাদ () এসে গেছেন’! আমি আবারো দৌড়ে গেলাম (নবীজী ﷺ-কে দেখার জন্য)। কিন্তু আমি (সেখানে) কোনো কিছুই দেখলাম না’। (আসলে তারা এমনটা করছিল আনন্দে)। আনাস রা বলেন: ‘অবশেষে (সকলের অপেক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে) রাসুলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাথি আবু বকর রা. (মদিনায়) এলেন (বটে, কিন্তু পরে জানতে পেলাম) তখন তাঁরা দুজনে মদিনা( নগরী)র (অদূরে মদিনারই এলাকাভুক্ত উচ্চ উপকূলে অবস্থিত ‘কুবা’ নামাক) এক উত্তপ্ত এলাকায় (বনু আমর ইবনে আউফ গোত্রের প্রধান কুলসুম ইবন হাদম-এর বাড়িতে) অবস্থান করছেন”। [মুসনাদে আহমদ- ৩/২২২ হাদিস ১২৯০৫; মুসনাদে আব্দ বিন হুমায়েদ- ২/২৬৬  হাদিস ১২৬৭; তারিখুছ ছগীর, ইমাম বুখারী- ১/৩৪; দালাইলুন নুবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ২/৫০৭]
 
রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘কুবা’-তে কয়েকদিন অবস্থান করেন, (হাদিস ও সিরাতের কিতাবাদিতে ৪ থেকে ২৪ দিন অবস্থানের কথা পাওয়া যায়, তবে অগ্রাধিকারযোগ্য মত হল তিঁনি কুবা’য় ৪ দিন অবস্থান করেছিলেন)। আর হযরত আলী বিন আবি তালিব রা. মক্কা থেকে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হিজরতের ৩ দিন পরে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং এই কুবা-তে এসেই রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে মিলিত হন। আরো বেশ কিছু মুহাজির সাহাবী রা. যেমন আবু উবাদাহ, মিকদাদ, খাব্বাব, সাফওয়ান, আয়ায, আব্দুল্লাহ ইবনে মাখরামাহ প্রমুখ এসে কুলসুম ইবন হাদম-এর বাড়িতে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে অবস্থান করেন। অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এসময় সা’দ বিন খায়সামাহ রা.-এর ওখানে অবস্থান করেছিলেন। সা’দ বিন খায়সামাহ রা. অবিবাহিত ছিলেন, আবার বেশ কিছু অবিবাহিত মুহাজির সাহাবায়ে কেরাম রা. সেখানে অবস্থান করেছিলেন বিধায়, সা’দ বিন খায়সামাহ’র গৃহকে ‘বায়তুল উযাব (অবিবাহিতদের আস্তানা)’ নামেও স্মরণ করা হত। হতে পারে, রাসুলুল্লাহ ﷺ মূলত: কুলসুম ইবন হাদম-এর বাড়িতেেই উঠেছিলেন, কিন্তু সাক্ষাৎপ্রার্থি মুসলমানদের আনাগোনা ও ভিড় বেড়ে যাওয়ায় তিঁনি বৈঠকখানা হিসেবে পরে সা’দ বিন খায়সামাহ রা.-এর গৃহকে নির্বাচন করেন।
 
রাসুলুল্লাহ ﷺ কুবা’তে অবস্থান কালে অন্যতম যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন সেটি হল, তিঁনি সেখানে মুসলমানদের জন্য একটি মসজিদ-এর ভিত্তি স্থাপন করেন, যা ‘কুবা মসজিদমসজিদে কুবা (مسجد قباء‎‎)’ নামে পরিচিত। মদিনার বুকে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাতে ভিত্তি স্থাপিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনকারী এটিই ছিল সর্বপ্রথম মসজিদ। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ﷺ একটি পাথড় এনে মসজিদের কিবলাহ বরাবর স্থাপন করেছিলেন। তখনো পর্যন্ত মক্কা’র ক্বা’বার দিকটি মুসলমানদের কিবলাহ হওয়ার কোনো হুকুম নাজিল না হওয়ায় রাসুলুল্লাহ ﷺ এই পাথড়টিকে মুসলমানদের প্রথম কিবলাহ (ফিলিস্তিনের) ‘বায়তুল মাকদিস’-এর দিকে স্থাপন করেছিলেন। এরপর প্রথমে আবু বকর রা. এবং তারপর ওমর ফারূক রা. মসজিদের পাথড় স্থাপন করার সৌভাগ্য লাভ করেন। এরপর অন্যান্য সাহাবাগণ একে একে পাথড় ও প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী এনে মসজিদ তৈরী করতে থাকেন। পাথড় আনার কাজে খোদ রাসুলুল্লাহ ﷺও শরিক ছিলেন এবং আনার সময় পাথড় যাতে পড়ে না যায় -এজন্য পাথড়কে তাঁর মুবারক পেটের সাথে লাগিয়ে আনছিলেন তিঁনি। রাসুলুল্লাহ ﷺ এই মসজিদে নামাযও আদায় করেন। এই মসজিদের দিকে ইংগীত করেই আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
 
 لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَىٰ مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ ۚ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ 
 “যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই তাক্বওয়াহ (আল্লাহ ভীতি)র উপরে স্থাপিত হয়েছে, সেটিই অধিক উপযুক্ত যে, তুমি তাতে (নামাযের জন্য) দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোকজন আছে, যারা পাক-পবিত্র থাকাকে ভালোবাসে। আর আল্লাহ ভালোবাসেন পাক-পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে”[সূরা তাওবাহ ১০৮]
 
ফায়দা: সাহল বিন হুনাইফ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ، ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاءَ، فَصَلَّى فِيهِ صَلَاةً كَانَ لَهُ كَأَجْرِ عُمْرَةٍ . رواه ابن ماجه في سننه , كتاب إقامة الصلاة و السنة فيها , باب ما جاء في الصلاة في مسجد قباء : ٢/٤١٦ رقم ١٤١٢، صححه الألباني في صحيح ابن ماجه، و قال الأرنؤوط في تحقيقه علي سنن ابن ماجه : و هذا إسناد حسن – “যে (মুসলমান) তার গৃহে (থাকতেই গোসল/ওজু করে) পবিত্রতা হাসিল করে নিলো, তারপর কুবা’র মসজিদে এসে কোনো নামায আদায় করলো, তার জন্য রয়েছে ওমরা’র অনুরূপ সওয়াব”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ২/৪১৬ হাদিস ১৪১২]
 
আব্দুল্লাহ বিন দীনার রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন- انَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي مَسْجِدَ قُبَاءٍ كُلَّ سَبْتٍ مَاشِيًا وَرَاكِبًا . رواه ابن البخاري في صحيحه , كتاب فضل الصلاة في مسجد مكة و المدينة , باب من أتى مسجد قباء كل سبت : ٢/٦١ رقم ١١٩٣ – “নবীজী ﷺ প্রতি শনিবার পায়ে হেটে কিংবা বাহনে চড়ে কুবা’র মসজিদে আসতেন”। [সহিহ বুখারী– ২/৬১ হাদিস ১১৯৩] নাফে রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন-  كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي مَسْجِدَ قُبَاءٍ رَاكِبًا وَمَاشِيًا، فَيُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ . رواه ابن مسلم في صحيحه , كتاب الحج , باب فضل مسجد قباء : ٤/١٢٧ رقم ١٣٩٩ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ বাহনে চড়ে কিংবা পায়ে হেটে কুবা’র মসজিদে আসতেন, তারপর সেখানে দু রাকাআত (নামায) পড়তেন”। [সহিহ মুসলীম– ৪/১২৭ হাদিস ১৩৯৯]
 
সখর বিন জুওয়াইরিয়াহ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা বিনতে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস বর্ণনা করেন-  سمعت أبي يقول: ” لَأَنْ أُصَلِّيَ في مَسجِدِ قُباءٍ رَكعتينِ أحَبُّ إليَّ مِن أنْ آتِيَ بيتَ المقدِسِ مَرَّتينِ، لو يَعلَمونَ ما في قُباءٍ لضَرَبوا إليه أكبادَ الإبلِ . أخرجه ابن شبة في تاريخ المدينة : ١/٤٢، قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري شرح صحيح البخاري , كتاب فضل الصلاة في مسجد مكة والمدينة , باب من أتى مسجد قباء كل سبت : ٣/٥٦ : إسناده صحيح – “আমি আমার পিতা (সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.)কে বলতে শুনেছি: ‘কুবা’র মসজিদে আমি দু রাকাত (নামায) পড়বো -এটা আমার কাছে ‘বাইতুল মাকদীস’-এ দুবার আসার চাইতে অধিক প্রিয়। তারা যদি জানতো কুবা’তে কী আছে, তাহলে তারা অবশ্যই তাদের উট হাঁকিয়ে ও(ই কুবা’র মসজিদে)র দিকে ছুটে আসতো”। [তারিখুল মাদিনাতিল মুনাওয়ারাহ, ইমাম ইবনু শাব্বাহ আল-বাসরী- ১/৪২; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৩/৫৬]
 

‘কুবা (قباء‎‎)’ এলাকা থেকে বের হয়ে ইয়াসরিব (মদিনা)-এর মূল নগরী (মদিনা মুনাওয়ারা)-তে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর প্রবেশ এবং সেখানে মুসলমানদের ‘আমীরে আজম (রাষ্ট্রনায়ক)’ হিসেবে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু

[উল্লেখ্য, মদিনা উপকুলীয় ‘কুবা’ অঞ্চল থেকে মদিনা’র মূল নগরী (মদিনা মুনাওয়ারা)’র দূরত্ব ছিল আধুনিক হিসেব মতে মাত্র ৫.২ কি:মি:]। ‘কুবা’ ছাড়ার আগে রাসুলুল্লাহ ﷺ লোক পাঠিয়ে –মদিনা’র মূল নগরী (মদিনা মুনাওয়ারা)’য় বসবাসকারী ‘বনু নাজ্জার গোত্র’-এর আনসার মুসলমানদের গণ্যমান্য মুরুব্বী/সর্দারগণকে এ মর্মে সংবাদ দান করেন যে, তাঁর মদিনা মুনাওয়ারা’য় যাবার সময় হয়েছে, ফলে তারা যাতে তাঁকে নিতে ‘কুবা’য় আসে। এ খবর পৌছতেই মদীনা নগরীর ‘বনু নাজ্জার গোত্র’-এর আনসার মুসলমানদের গণ্যমান্য মুরুব্বী/সর্দারগণ সহ প্রায় পাঁচ’শ জন আনসার দ্রুত অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে ‘কুবা’র দিকে ছুটে যান রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে মদিনা মুনাওয়ারয় নিয়ে আসার জন্য।

আবুল তাইয়্যাহ ইয়াজিদ বিন হুমায়েদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আনাস বিন মালেক রা. বর্ণনা করেন- لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ، نَزَلَ فِي عُلْوِ الْمَدِينَةِ، فِي حَيٍّ يُقَالُ لَهُمْ بَنُو عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ،… ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى مَلَإِ بَنِي النَّجَّارِ، قَالَ: فَجَاءُوا مُتَقَلِّدِي سُيُوفِهِمْ … . رواه البخاري في صحيحه , كتاب مناقب الأنصار , باب مقدم النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه المدينة : ٥/٦٧ رقم ٣٩٣٢ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ (যখন) মদিনায় পা রাখেন, তখন তিঁনি (প্রথমে) মদিনার উচ্চভূমির লোকালয়ে -যেটাকে তারা ‘বনু আমর বিন আউফ (গোত্র)’ বলে থাকে -সেখানে ওঠেন।…. (তারপর কিছুদিন কুবা’য় থাকেন, মসজিদ নির্মান করেন) তারপর (যখন মদিনা মুনাওয়ারায় আগমনের সময় হয়, তখন লোক মারফত মদিনা মুনাওয়ারা’য় বসবাসকারী) ‘বনু নাজ্জার’-এর (মুসলমান) সর্দারগণের কাছে (এ ব্যপারে) খবর পাঠান। ফলে তারা তাদের (নিজ নিজ) তরবারী গুলিকে খাপে ভরে (তাঁকে মদিনা মুনাওয়ারা’য় পাহারা দিয়ে নিয়ে আসার জন্য সোজা কুবা’য়) চলে আসেন।….. ”। [সহিহ বুখারী- ৫/৬৭ হাদিস ৩৯৩২, সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫২৪] আর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর বর্ণনায় আছে- فَثَارَ المُسْلِمُونَ إِلَى السِّلاَحِ ، فَتَلَقَّوْا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِظَهْرِ الحَرَّةِ – “ফলে (মদিনার আনসার) মুসলমানগণ দ্রুত অস্ত্র তুলে নিলেন, তারপর (‘কাবু’র) ‘হাররাহ’র উপকন্ঠে গিয়ে তারা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে সাক্ষাত করেন”[সহিহ বুখারী- ৫/৫৮ হাদিস ৩৯০৫]  আর আনাস বিন মালেক রা.-এর বর্ণনায় আছে যে-  ‏ ‏ثُمَّ بَعَثَنَا رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ ‏ ‏الْمَدِينَةِ ‏ ‏لِيُؤْذِنَ بِهِمَا ‏ ‏الْأَنْصَارَ ‏ ‏فَاسْتَقْبَلَهُمَا ‏ ‏زُهَاءَ ‏ ‏خَمْسِ مِائَةٍ مِنْ ‏ ‏الْأَنْصَارِ ‏ ‏حَتَّى انْتَهَوْا إِلَيْهِمَا    – “….(রাসুলুল্লাহ ﷺ কুবা’য় কয়েকদিন থাকলেন)। তারপর তাঁরা দুজনে মদিনার এক ব্যাক্তিকে (আমাদের মদিনা নগরীতে) পাঠালেন -(এখানে বসবাসরত) আনসার (মুসলমান)দেরকে তাঁদের দুজনের (আগমনের) খবর দেয়ার জন্য। ফলে প্রায় পাঁচ’শ জনের মতো আনসার (অস্ত্র সাথে নিয়ে) তাঁদের দুজনের কাছে ছুটে গিয়ে তাদেরকে (মদিনায়) স্বাগত জানান।”। [মুসনাদে আহমদ- ৩/২২২ হাদিস ১২৯০৫; মুসনাদে আব্দ বিন হুমায়েদ- ২/২৬৬  হাদিস ১২৬৭দালাইলুন নুবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ২/৫০৭]

কুবা’ থেকে মদিনা মুনাওয়ারার উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে (নগরী থেকে আগত) আনসারগণ রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে উদ্দেশ্য করে বলেন-  ‏ ‏انْطَلِقَا آمِنَيْنِ مُطَاعَيْنِ – “আপনারা (আমাদের) নিরাপত্তায় এবং (আমাদের) বরণীয় রূপে (মদিনা নগরীর দিকে) এগিয়ে চলুন’”। [মুসনাদে আহমদ- ৩/২২২ হাদিস ১২৯০৫] (অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে) রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘কুবা’-তে রবিউল আউয়াল মাসের ৮, ৯, ১০, ১১  মোতাবেক সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহঃষ্পতিবার -এই ৪ দিন অবস্থান করেন। এরপর ১২-ই রবিউল আউয়াল শুক্রবার (মোতাবেক ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ ইং তারিখে) ‘জুমআর দিন’ দুপুরের পূর্বে মদিনা’র মূল নগরী’র উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বাহ্যত: বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর উটের গতি তেমন দ্রুত ছিল না, বরং মন্থরই ছিল, কারণ মদিনার বিভিন্ন স্থান হতে (মুহাজিরগণের সাথে সাথে) আনসারগণও দলে দলে আসছিলেন রাসুলুল্লাহ ﷺকে এক নজর দেখা ও অভ্যর্থনা জানানোর জন্য, এবং এসে তারা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর রাস্তাপথের দু’ধারে দাঁড়াতে আরম্ভ করছিলেন। মদিনা নগরী’র দিকে এ যাত্রাকালে পথিমধ্যে ‘বনু সালিম বিন আউফ (খাযরাজ) গোত্র’ পড়ে এবং তখন জুমআহ’র নামাযের সময় হওয়ায় রাসুলুল্লাহ ﷺ “রানুন” (رانون) নামক স্থানে মুসলমানদেরকে নিয়ে জুমআহ’র খুৎবা দেন এবং নামায পড়ান; আর এটাই ছিল মদিনার বুকে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর প্রথম জুমআহ’র নামায ও খুৎবা দান।

ফায়দা: সেই খুৎবাটি বেশ বড় হওয়ায় এখানে তার আরবী ইবারত ও বঙ্গানুবাদ উল্লেখ করতে পারছি না, তবে কোথাও যদি সংগ্রহ করে পড়তে পারেন (যেমন: বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক ইমাম ইবনে কাসিরের ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবের ২য় খন্ডের ৩৮০ পৃষ্ঠায় দেখতে পারেন), তাহলে দেখবেন, মক্কার মুশরেকদের দ্বারা দীর্ঘ ১৩টি বছর তিঁনি ও মুসলমানরা অবর্ণনীয় জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, অথচ খুৎবাটির একটি স্থানেও তিঁনি মক্কার মুশরেকদেরকে অভিশাপ দান কিংবা তাদের দেয়া জুলুম নির্যাতনের অভিযোগ সম্বলীত সামন্য কোনো একটি কথাও ঘুণাক্ষরে তিঁনি উল্লেখ করেননি। খুৎবাটির আগা গোড়া ছিল –তাওহিদ, রিসালাত, আখেরাত ও তাক্বওয়া-পরহেজগারীর বিষয়ে ভরপুর। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর এই ‘আখলাক্ব মোবারক’ থেকে মুলমানদের অনেক কিছু শেখার আছে। 
 
জুমআর নামায শেষ হওয়ার পর ‘বনু সালিম বিন আউফ (খাযরাজ) গোত্র’-এর কিছু লোক সহ ইতবান বিন মালেক রা. এবং আব্বাস বিন উবাদাহ বিন নাদ্বলাহ রা. এসে বললেন- يَا رَسُولَ اللَّهِ أَقِمْ عِنْدَنَا فِي الْعَدَدِ وَالْعِدَّةِ وَالْمَنَعَةِ – “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের কাছেই থেকে যান, যেখানে (আপনি পাবেন) লোকবল, অস্ত্রবল ও নিরাপত্তা-বেষ্টনী”। রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর উটের দিকে ইশারা করে তাদেরকে বললেন- خَلُّوا سَبِيلَهَا، فَإِنَّهَا مَأْمُورَةٌ – “তোমরা ওর পথ ছেড়ে দাও। কারণ সে (আল্লাহ’র পক্ষ থেকে) আদিষ্ট, (সে যেখানে যাওয়ার জন্য আদিষ্ট সেখানেই আমাকে সে নিয়ে যাবে)”। ফলে তারা তাঁর পথ ছেড়ে দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর পিছনে আবু বকর রা.-কে উটের উপরে আরোহন করিয়ে মদিনা নগরীর দিকে এগুতে থাকলেন। পথিমধ্যে একে একে ‘বনু  বায়াদ্বাহ গোত্র’, ‘বনু সায়েদাহ গোত্র’, ‘বনু হারিস গোত্র’, ‘বনু আদী বিন নাজ্জার গোত্র’ এবং তারও পরে ‘বনু মাযীন বিন নাজ্জার গোত্র’-এর লোকদের সাথে সাক্ষাত ঘটলে তারাও নবীজী ﷺকে তাদের লোকবল অস্ত্রবল ও নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছে থাকার জন্য আবেদন করেন, কিন্তু নবীজী ﷺ তাদেরকেও বলেন- خَلُّوا سَبِيلَهَا، فَإِنَّهَا مَأْمُورَةٌ – “তোমরা ওর পথ ছেড়ে দাও। কারণ সে (আল্লাহ’র পক্ষ থেকে) আদিষ্ট, (সে যেখানে যাওয়ার জন্য আদিষ্ট সেখানেই আমাকে সে নিয়ে যাবে)”। ফলে তারাও তাঁর পথ ছেড়ে দেন, এবং উটটি নবীজী ﷺ-কে নিয়ে মদিনা মুনাওয়ারার দিকে এগুতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে এগুতে এগুতে যখন অবশেষে রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনা মুনাওয়ারায় প্রবেশ করেন, তখন রাত হয়ে গেছে (সন্ধা/তারও কিছুটা পরের ক্ষন)। তখন আনসার নারী পুরুষরা তাদের ঘরবাড়ির ছাদগুলোতে দাঁড়িয়ে এবং যুবক কিশোর ও ছোট ছোট বাচ্চারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলছিলেন- اللهُ أَكْبَرُ، جَاءَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، جَاءَ مُحَمَّدٌ …. يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللهِ، يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللهِ – “আল্লাহু আকবার! রাসুলুল্লাহ ﷺ (আমাদের মাঝে) এসে গেছেন! মুহাম্মাদ (ﷺ) এসে গেছেন! ….. হে (আমাদের নবী) মুহাম্মাদ! হে -আল্লাহ’র রাসুল! হে (আমাদের নবী) মুহাম্মাদ! হে -আল্লাহ’র রাসুল’! (এভাবে তারা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে অভিনন্দন জানাতে থাকে)[মুসনাদে আহমদ– ১/৩ হাদিস ৩; সহিহ মুসলীম- ৮/২৩হাদিস ২০০৯]
 
আর আনাস বিন মালেক রা.-এর বর্ণনায় আছে যে-  فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏وَصَاحِبُهُ بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ فَخَرَجَ أَهْلُ ‏ ‏الْمَدِينَةِ ‏ ‏حَتَّى إِنَّ ‏ ‏الْعَوَاتِقَ ‏ ‏لَفَوْقَ الْبُيُوتِ يَتَرَاءَيْنَهُ يَقُلْنَ أَيُّهُمْ هُوَ أَيُّهُمْ هُوَ قَالَ ‏ ‏فَمَا رَأَيْنَا مَنْظَرًا مُشْبِهًا بِهِ يَوْمَئِذٍ  – “…. পরে (অধীর অপেক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে) রাসুলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাথি (আবু বকর রা.) তাদের মাঝে আগমন করেন, ফলে মদিনাবাসী লোকজন (রাসুলুল্লাহ ﷺকে এক নজর দেখার জন্য তাদের ঘরবাড়ি থেকে) বেরিয়ে আসে। এমনকি (আমি দেখছিলাম) বয়ষ্ক মহিলারাও তাদের ঘরবাড়ির ছাদ থেকে -(রাস্তায় লোকজনের ভীড়ের মাঝে) তাঁকে (খুঁজে নেয়ার জন্য উৎগ্রীব) দৃষ্টি দিয়ে বলাবলি করছিলেন: ‘(বুঝতে পারছি না) তাদের মধ্যে উঁনি কোন্ জন? তাদের মধ্যে উঁনি কোন্ জন’? আনাস রা. বলেন: ‘সেদিন আমরা (মদিনাবাসী মুসলমানদের আনন্দের) যে দৃশ্য দেখেছি, তেমনটা (এর আগে) আর কখনো দেখিনি”। [মুসনাদে আহমদ- ৩/২২২ হাদিস ১২৯০৫; মুসনাদে আব্দ বিন হুমায়েদ- ২/২৬৬  হাদিস ১২৬৭]
 
ছাবিত রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আনাস বিন মালেক রা. বর্ণনা করেন-  ‏لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏الْمَدِينَةَ لعب الحبش بحرابهم فرحا بقدومه ‏. أخرجه عبد الرزاق في مصنفه , كتاب الجامع , باب اللعب: ١٠/٤٦٦ رقم ١٩٧٢٣ و إسناده صحيح، و أبو داود في سننه , كتاب الأدب , باب في النهي عن الغناء :٤/٢٨١ رقم ٤٩٢٣، و صححه الألباني في صحيح أبي داود – “রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন (‘কুবা’ থেকে) মদিনা’য় প্রবেশ করলেন,  তখন তাঁর আগমনে আনন্দিত হয়ে হাবশীরা বল্লম দিয়ে খেলা করছিল”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক– ১০/৪৬৬ হাদিস ১৯৭২৩; মসনাদে আহমদ– ৩/১৬১ হাদিস ১২২৩৮; সুনানে আবু দাউদ– ৪/২৮১ হাদিস ৪৯২৩] 
 
‘কুবা’ থেকে নিয়ে ‘মদিনা মুনাওয়ারা’য় প্রবেশ করা এবং আবু আইযূব আল-আনসারী রা.-এর বাড়িতে মেহমান হিসেবে ওঠা পর্যন্ত গোটা রাস্তাপথে আনসারগণ রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর ডানে বামে সামনে পিছনে – চারপাশে তরবারী সহ পাহারা দিয়ে স্বসম্মানের নিয়ে এসেছিলেন। আবুল তাইয়্যাহ ইয়াজিদ বিন হুমায়েদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আনাস বিন মালেক রা. বর্ণনা করেন- ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى مَلَإِ بَنِي النَّجَّارِ، قَالَ: فَجَاءُوا مُتَقَلِّدِي سُيُوفِهِمْ، قَالَ: وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رَاحِلَتِهِ وَأَبُو بَكْرٍ رِدْفُهُ، وَمَلَأُ بَنِي النَّجَّارِ حَوْلَهُ، حَتَّى أَلْقَى بِفِنَاءِ أَبِي أَيُّوبَ . رواه البخاري في صحيحه , كتاب مناقب الأنصار , باب مقدم النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه المدينة : ٥/٦٧ رقم ٣٩٣٢  – “…. তারপর (যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কুবা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় আগমনের সময় হয়, তখন লোক মারফত মদিনা মুনাওয়ারা’য় বসবাসকারী) ‘বনু নাজ্জার’-এর (গণ্যমান্য মুসলমান) মুরুব্বী/সর্দারগণের কাছে (এ ব্যপারে) খবর পাঠান। ফলে তারা তাদের (নিজ নিজ) তরবারী গুলিকে খাপে ভরে (তাঁকে মদিনা মুনাওয়ারা’য় পাহারা দিয়ে নিয়ে আসার জন্য সোজা কুবা’য়) চলে আসেন। আর (রাসুলুল্লাহ ﷺ ও আবু বকর রা. যখন মদিনা মুনাওয়ারা’য় প্রবেশ করছিলেন তখনকার দৃশ্য আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে), আমি যেন দেখছি, রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর বাহনের উপরে (বসে আছেন) আর আবু বকর (রা.) তাঁর পিছনে (বসা), আর বনু নাজ্জারের (গণ্যমান্য) মুরুব্বী/সর্দারগণ রয়েছেন তাঁর চারপাশে (এভাবেই তাঁরা আমাদের মদিনা নগরীতে প্রবেশ করে সামনের দিকে চলতে থাকেন) -যতক্ষন পর্যন্ত না তিঁনি আবু আইয়ূব (আল-আনসারী রা.)-এর বাড়ির-প্রাঙ্গনে (গিয়ে) অবতরন করেন”। [সহিহ বুখারী- ৫/৬৭ হাদিস ৩৯৩২, সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫২৪]
 
ফায়দা: ‘কুবা’ থেকে ‘মদিনা মুনাওয়ারা’য় প্রবেশ পর্যন্ত গোটা রাস্তাপথে প্রায় পাঁচ’শ জন আনসার সাহাবা রা. কর্তৃক রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে চারপাশ দিয়ে পাহারা দিয়ে ও নিরাপত্তার সাথে নিয়ে আসার কারণ ছিল সম্ভবত: “মক্কায় আক্বাবাহ’র ২য় বাইয়াত’-এর সময় তাঁরা যে ওয়াদা করেছিলেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনায় এলে তারা তাদের জীবন ও ধ্বনসম্পদ দিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হিফাজত করবেন” – মনে হয় সেই ওয়াদারই একঝলক বহি:প্রকাশ। এই কারণটিই আমার কাছে অধিক শক্তিশঅল বলে মনে হয়। অন্যথায়, কোনো গণ্যমান্য কাউকে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে আরবরা যেমন তাদের কালচার হিসেবে তরবারী কোষমুক্ত করে বিশেষ কায়দায় ওই গণ্যমান্য ব্যাক্তিকে স্বাগত জানায় বা বরন করে নেয়, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর ক্ষেত্রেও যদি নিছক সেই আরবীয় কালচারের বহি:প্রকাশের জন্যই তাঁর চারপাশে আনসারদের এরকম অবস্থান হত, তাহলে পাঁচ’শ জনের কী দরকার ছিল? কয়েকটি গোত্রের হাতে গোণা কয়েকজন সর্দার ও কালচারাল প্রদর্শনীর জন্য সাথে কিছু লোক নিয়ে গিয়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে সম্মান দেখিয়ে ধীরে ধীরে মদিনা মুনাওয়ারায় নিয়ে আনে বরন করলেও তো চলতো। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর লোক-মারফত নগরীতে আগমনের সংবাদ পেতেই পাঁচ’শ জন আনসার সাহাবা রা.-এর দ্রুত তরবারী নিয়ে কুবায় গমন এবং ‘মদিনা মুনাওয়ারা’র উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে  -একথা বলা এবং সারাটা পথ তাঁকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখে পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে ‘মদিনা মুনাওয়ারা’য় নিজেদের মাঝে নিয়ে আসা কি এদিকেই ইংগীত করে না যে, এটা আক্বাবাহ’র ২য় বাইয়াত’-এর সময়ে আনসারগণের কৃত ওয়াদা পালনেরই একঝলক অংশ ছিল? 
 
তখন ‘মদিনা মুনাওয়ারা’র ভিতরের অধিবাসী যেসকল মুসলমান আনসারগণ ছিলেন তারা প্রত্যেকেই রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে নিজেদের মেহমান বানানোর সৌভাগ্য লাভ করার মনবাসনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে হালকা কথা কাটাকাটি করতে থাকেন, এমন সময় রাসুলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে বলেন- إني أنزل الليلة عَلَى بَنِي النَّجَّارِ أَخْوَالِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أُكْرِمُهُمْ بِذَلِكَ – “আমি (আজ) রাতে (আমার দাদা) আব্দুল মুত্তালিবের মামার বংশ ‘বনু নাজ্জার (গোত্র)’-এর (কারোর) গৃহে উঠবো; (এবং) ওভাবেই তাদেরকে আমি সম্মান প্রদর্শন করবো”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ– ৮/৪৫৬; মুসনাদে বাযযার– ১/১১৮ হাদিস ৫০] অবশেষে উটটি ‘বনু মালিক বিন নাজ্জার’ গোত্রের সহল ও সুহাইল নামক দুই এতীম বালকের একটি জমিতে (যেখানে পরে মসজিদে নববী নির্মিত হয়, সেখানে) গিয়ে বসে পড়ে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ তখনও উটটি থেকে নামলেন না, বরং উটের লাগাম টানাটানি না করে ওর ঘারের উপরেই রেখে দিলেন, যাতে সে যেখানে থামার সেখানেই গিয়ে আল্লাহ’র হুকুমে থামে। পরে উটটি উঠে আবু আইয়ূব আল-আনসারী রা.-এর গৃহের সামনে গিয়ে গলা বিছিয়ে বসে পড়ে। ফলে রাসুলুল্লাহ ﷺ আবু আইয়ূব আল-আনসারী রা. -এর গৃহেই মেহমান হিসেবে উঠেন। আবু আইয়ূব আল-আনসারী রা. -রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সম্মানার্থে তাদের ঘরের উপরের তলাকে থাকার স্থান হিসেবে নির্ধারন করার আবেদন করলে রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে জানান যে, তাঁর কাছে লোকজনের আসা যাওয়ার ভীড় লেগে থাকবে বিধায় লোকদের সুবিধার্থে তাঁর জন্য নিচের তলাতে থাকাই শ্রেয় হবে। ফলে রাসুলুল্লাহ ﷺ নিচের তলাতেই বাস করতে থাকেন, আর আবু আইয়ূব আল-আনসারী রা. তার পরিবার সহ উপরের তলায় থাকার ও রাসুলুল্লাহ ﷺ মেহমানদারী করার মহা সৌভাগ্য অর্জন করে ধন্য হন।
 

ইয়াসরিব (মদিনা)-এর মূল নগরী (মদিনা মুনাওয়ারা)-তে মসজিদে নববী’ নির্মান 

রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘মদিনা নগরী’তে প্রবেশের পর তাঁর উটটি প্রথমে ‘বনু মালিক বিন নাজ্জার’ গোত্রের সহল ও সুহাইল নামক দুই এতীম বালকের যে জায়গায় গিয়ে বসে পড়েছিল, রাসুলুল্লাহ ﷺ সেই স্থানটিকে মদিনার নগরীর ‘জামে মসজিদ’ নির্মানের জন্য প্রাথমিক ভাবে পছন্দ করেন, ফলে তিঁনি -সহল ও সুহাইল নামক ওই দুজন এতীম বালক ও তত্ত্বাবধায়ক চাচা’কে ডেকে আনার ব্যবস্থা করেন। এর সাথে সাথে ‘বনু নাজ্জার গোত্র’-এর মুরুব্বী/সর্দারগণকেও ডেকে পাঠান এবং সেখানে মসজিদ নির্মানের জন্য জমিটিকে ক্রয় করে নিতে চান মর্মে তাদের সামনে প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু তারা জমিটিকে বিনামূল্যে ‘ওয়াকফ’ করে দিতে চাইলে রাসুলুল্লাহ ﷺ তা বিনামূল্যে নিতে অস্বীকার করেন। পরে জায়গাটি তাদের থেকে ‘দশ দিনার’ দিয়ে ক্রয় করে নেন, যার মূল্য আদায় করেন হযরত আবু বকর রা. অথবা আবু আইয়ূব আল-আনসারী রা.। [উমদাতুল কারী, ইমাম আইনী- ৪/১৭৫] এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশে জমিনটির মধ্যে মুশরেকদের যেসকল কবর ছিল সেগুলোকে বের করে ফেলে ভগ্নাবশেষ বা অসমতল স্থান গুলোকে সমতল করে ফেলা হয় এবং খেঁজুর গাছ ও ঝোপঝাড় কেটে স্থানটি পরিষ্কার করা হয়। তারপর রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর মুজাহির ও আনসার সাহাবীগণকে নিয়ে মসজিদ নির্মান করেন। মসজিদের নির্মান কাজ শুরু হয় ১ম হিজরীর শাওয়াল মাসে।
 
আবুল তাইয়্যাহ ইয়াজিদ বিন হুমায়েদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আনাস বিন মালেক রা. বর্ণনা করেন-  وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رَاحِلَتِهِ وَأَبُو بَكْرٍ رِدْفُهُ، وَمَلَأُ بَنِي النَّجَّارِ حَوْلَهُ، حَتَّى أَلْقَى بِفِنَاءِ أَبِي أَيُّوبَ، قَالَ: فَكَانَ يُصَلِّي حَيْثُ أَدْرَكَتْهُ الصَّلَاةُ، وَيُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ، قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ أَمَرَ بِبِنَاءِ الْمَسْجِدِ، فَأَرْسَلَ إِلَى مَلَإِ بَنِي النَّجَّارِ فَجَاءُوا، فَقَالَ: يَا بَنِي النَّجَّارِ، ثَامِنُونِي حَائِطَكُمْ هَذَا فَقَالُوا: لَا وَاللهِ، لَا نَطْلُبُ ثَمَنَهُ إِلَّا إِلَى اللهِ. قَالَ: فَكَانَ فِيهِ مَا أَقُولُ لَكُمْ، كَانَتْ فِيهِ قُبُورُ الْمُشْرِكِينَ، وَكَانَتْ فِيهِ خِرَبٌ، وَكَانَ فِيهِ نَخْلٌ، فَأَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ، وَبِالْخِرَبِ فَسُوِّيَتْ، وَبِالنَّخْلِ فَقُطِعَ، قَالَ: فَصَفُّوا النَّخْلَ قِبْلَةَ الْمَسْجِدِ، قَالَ: وَجَعَلُوا عِضَادَتَيْهِ حِجَارَةً، قَالَ: قَالَ: جَعَلُوا يَنْقُلُونَ ذَاكَ الصَّخْرَ وَهُمْ يَرْتَجِزُونَ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهُمْ، يَقُولُونَ: اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَا خَيْرَ إِلَّا خَيْرُ الْآخِرَهْ، … فَانْصُرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ.» . رواه البخاري في صحيحه , كتاب مناقب الأنصار , باب مقدم النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه المدينة : ٥/٦٧ رقم ٣٩٣٢ – “আর (রাসুলুল্লাহ ﷺ ও আবু বকর রা. যখন মদিনা মুনাওয়ারা’য় প্রবেশ করছিলেন তখনকার দৃশ্য আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে), আমি যেন দেখছি, রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর বাহনের উপরে (বসে আছেন) আর আবু বকর (রা.) তাঁর পিছনে (বসা), আর বনু নাজ্জারের (গণ্যমান্য) মুরুব্বী/সর্দারগণ রয়েছেন তাঁর চারপাশে (নিরাপত্তা দানের দায়িত্বে নিয়োজিত। এভাবেই তাঁরা আমাদের মদিনা নগরীতে প্রবেশ করেন এবং সামনের দিকে চলতে থাকেন) -যতক্ষন পর্যন্ত না তিঁনি আবু আইয়ূব (আল-আনসারী রা.)-এর বাড়ির-প্রাঙ্গনে (গিয়ে) অবতরন করেন। আনাস রা. বলেন: ‘(এরপর মসজিদে নববী নির্মান হওয়ার আগ পর্যন্ত) তিঁনি যেখানে নামাযের সময় হয়েছে সেখানেই নামায আদায় করতে; (এমনকি আমি দেখেছি) তিঁনি ছাগল-ভেড়ার খোঁয়াড় গুলোতেও নামায আদায় করেছেন। আনাস রা. বলেন: ‘এরপর তিঁনি (একদিন তাঁর সাহাবীগণকে মুসলমানদের নামায আদায়ের জন্য একটি জামে’) মসজিদ নির্মানের নির্দেশ দেন। (পরে মসজিদে নববী যেখানে নির্মিত হয়েছে –রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন সেই স্থানটিকে মসজিদ নির্মানের জন্য পছন্দ করেন) তখন (লোক মারফত) ‘বনু নাজ্জার’-এর (মুসলমান) সর্দারগণের কাছে (এ ব্যপারে মতামত দেয়ার জন্য) খবর পাঠান। পরে তারা এলে তিঁনি (তাদের কাছে প্রস্তাব রেখে) বলেন: ‘হে বনী নাজ্জার! তোমরা তোমাদের এই (খেজুর গাছের) প্রাচির-ঘেরা জমিনটির মূল্য (কত -তা) আমাকে জানাও, (আমি এটাকে মসজিদ নির্মানের জন্য ক্রয় করতে চাই)। তারা বলেন: ‘না, (তা হয় না -ইয়া রাসুলাল্লাহ)! আল্লাহ’র কসম, আমরা (বনু নাজ্জারের কেউই আপনার কাছে এর জন্য কোনো) মূল্য চাবো না, (আমরা এটাকে আল্লাহ’র জন্য বিনামূল্যে ওয়াকফ করে দিতে চাই, আর আমরা এর বিনিময়) কেবল আল্লাহ’র কাছে (কামনা করি)’। আনাস রা. বলেন: ‘আমি তোমাদেরকে বলছি -ও(ই জমিনটি)র মধ্যে কী ছিল। সেখানে ছিল মুশরেকদের কবর, সেখানে ছিল (করব বা দেয়াল কিংবা মাটির ঊঁচু নিচু) অমসৃণ/অসমতল অংশ, সেখানে ছিল খেজুর(-এর গাছ বা ঝোপঝাড়)। ফলে রাসুলুল্লাহ ﷺ -মুশরেকদের কবরগুলোকে উঠিয়ে ফেলার, (ঊঁচু নিচু) অমসৃণ/অসমতল স্থানগুলোকে সমতল করার এবং খেজুর(-এর গাছ বা ঝোপঝাড়)-কে কেটে ফেলার- নির্দেশ দেন। আনাস রা. বলেন: ‘ ফলে তারা (তখন কর্তিত) খেজুরগাছ (গুলোর ফালি গুলোকে) মসজিদের ক্বিবলার দিকে (দেয়াল হিসেবে) সারি করে (এক লাইনে গেড়ে) দেন, আর এর দু দিকে স্থাপন করেন পাথড় (দিয়ে গড়া দেয়াল)। রাবী বলে, আনাস রা. বলেছেন: ‘(যেসকল মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ সেদিন মসজিদ নির্মান কার্যে অংশ নিয়েছিলেন) তারা (সেদিন) কবিতা আবৃতি করতে করতে পাথর উবিয়ে নিয়ে আসছিলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺও তাদের সাথে (পাথর বহন করে আন)ছিলেন। তারা বলছিলেন: ‘হে আল্লাহ! প্রকৃত কল্যান তো শুধু আখেরাতের কল্য্যানই!……তাই আপনি (আমাদের) আনসার ও মুহাজিরদেরকে সাহায্য করুন”। [সহিহ বুখারী- ৫/৬৭ হাদিস ৩৯৩২, সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫২৪]
 
সাঈদ বিন জুমহান রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, সাফিনাহ রা. বর্ণনা করেন- لما بنى رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم المسجد جاء أبو بكر رضي الله عنه بحجر فوضعه ، ثم جاء عمر بحجر فوضعه ، ثم جاء عثمان بحجر فوضعه ، فقال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم : ” هؤلاء ولاة الأمر من بعدي هذا . أخرجه الحاكم في المستدرك على الصحيحين , كتاب الهجرة , إخباره صلى الله عليه وآله وسلم بولاة الأمر من بعده: ٣/٥٤٩ رقم ٤٣٤١ و قال: حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه، و وافقه الذهبي و قال صحيح – “রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন মসজিদ(-ই- নববী) নির্মান করছিলেন, তখন (প্রথমে) আবু বকর রা. পাথর নিয়ে এসে তা ( জায়গা মতো) স্থাপন করলেন। এরপর ওমর রা. পাথর নিয়ে এসে তা ( জায়গা মতো) স্থাপন করলেন। এরপর উসমান রা. পাথর নিয়ে এসে তা ( জায়গা মতো) স্থাপন করলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘আমার (ইন্তেকালের) পরে এঁরা (তিনজন এই ক্রম মেনে) এভাবেই (মুসলমানদের উপরে) শাসন ক্ষমতা লাভ করবে”। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৩/৫৪৯ হাদিস ৪৩৪১] 
 
নাফে’ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. বর্ণনা করেন- ‏أَنَّ الْمَسْجِدَ كَانَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏مَبْنِيًّا بِاللَّبِنِ وَسَقْفُهُ ‏ ‏الْجَرِيدُ ‏ ‏وَعُمُدُهُ خَشَبُ النَّخْلِ . رواه البخاري في صحيحه , كتاب الصلاة , باب بنيان المسجد : ١/٩٧ رقم ٤٤٦ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জামানায় মসজিদ(-ই- নববী)টি নির্মিত হয়েছিল কাঁচা-ইট দিয়ে; ওর ছাঁদটি ছিল খেঁজুর-গাছের ডালের, আর ওর পিলার ছিল খেঁজুর-গাছের গুড়ির”। [সহিহ বুখারী- ১/৯৭ হাদিস ৩৪৪৬; সহিহ ইবনে হিব্বান– ৪/৪৭৮ হাদিস ১৬০১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৫১]
 
‘মসজিদে নববী’র নির্মান কাজ শেষ হওয়ার আগেই আবু উমামা আসআদ ইবনে যুরারা আল-আনসারী রা. (যিনি আক্বাবাহ’র প্রতিটি বাইআতে শরীক ছিলেন এবং মদিনার আনসার মুসলমানগণের উপরে রাসুলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক নিযুক্ত ১২ জন নকীবের একজন ছিলেন, আর তিনি ছিলেন ‘বনু নাজ্জার’ গোত্রের নকীব) তিনি  ইন্তেকাল করেন। বলা হয় যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মদিনায় হিজরতের পর মুসলমান পুরুষদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ-ই তার জানাযা পড়ান এবং তাকেই প্রথম ‘জান্নাতুল বাকী’তে দাফন করা হয়। [ত্বাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সা’দ- ৩/৬১১; তারিখে তাবারী- ২/৩৯৭; আল-ইসাবা, ইবনে হাজার- ১/২০৯; তারিখুল মাদিনাহ, ইবন শাবহ- ১/৯৬] আবু উমামা আসআদ ইবনে যুরারা আল-আনসারী রা.-এর  ইন্তেকাল হলে রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-  بِئْسَ الْمَيِّتُ أَبُو أُمَامَةَ، لِيَهُودَ وَمُنَافِقِي الْعَرَبِ، يَقُولُونَ لَوْ كَانَ نَبِيًّا لَمْ يَمُتْ صَاحِبُهُ، وَلَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي وَلَا لِصَاحِبِي مِنَ اللَّهِ شَيْئًا  – “আরবের ইহূদী ও মুনাফেকদের জন্য আবু উমামার মৃত্যুটা ছিল মন্দ। তারা বলছে: তিনি যদি নবী হতেনই তাহলে তার সাথী মাড়া যেতো না’। (তোমরা জেনে রেখো) আমি না আমার নিজের জীবনের ব্যাপারে, আর না আমার সাথীর ব্যাপারে কোনো ক্ষমতা রাখি ”। [তারিখুল উমাম, ইমাম তাবারী- ২/১১৭]
 
সময়ই রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বিবাহধীনে তখন দুজন স্ত্রী ছিলেন –সাওদাহ বিনতে জামাআ রা. এবং আয়েশা বিনতে আবু বকর রা.। ‘মসজিদে নববী’ নির্মিত হবার পর মসজিদের পূর্বদিকে মসজিদ সংলগ্ন দুটি হুজরা তৈরী করা হয় সাওদাহ রা. এবং আয়েশা রা.-এর থাকার জন্য। এসকল হুজরা নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ ﷺ আবু আইয়ূব আল-আনসারী রা.-এর বাড়িতে মেহমান ছিলেন কমপক্ষে প্রায় এক মাস (কেউ কেউ বলেছেন সাত মাসের কথা)। হুজরাগুলো তৈরী হলে রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর এই স্ত্রী দ্বয় সাওদাহ রা. এবং আয়েশা রা.-এর কাছেই পালাক্রমে থাকতে থাকেন। 

মদিনার মূল নগরীতে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর প্রবেশ ও তথায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু

রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘কুবা’ থেকে ১২-ই রবিউল আউয়াল শুক্রবার (মোতাবেক ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ ইং তারিখে) উটে আরোহন করেন এবং  মদিনা’র মূল নগরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। (উল্লেখ্য, ‘কুবা’ থেকে মদিনা’র মূল নগরীর দূরত্ব ছিল ৫.২ কি:মি:)। 
 
জুরারাহ বিন আউফা’র সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বর্ণনা করেন- لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – الْمَدِينَةَ انْجَفَلَ النَّاسُ قِبَلَهُ، وَقِيلَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ، قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ، ثَلَاثًا، فَجِئْتُ فِي النَّاسِ لِأَنْظُرَ، فَلَمَّا تَبَيَّنْتُ وَجْهَهُ، عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ، فَكَانَ أَوَّلُ شَيْءٍ سَمِعْتُهُ تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ: “يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَفْشُوا السَّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصِلُوا الْأَرْحَامَ، وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ، تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ . رواه ابن ماجه في سننه , كتاب الأطعمة , باب إطعام الطعام : ٤/٣٩٧ رقم ٣٢٥١، قال الأرنؤوط في تحقيقه علي سنن ابن ماجه : إسناده صحيح، و صححه الألباني في صحيح ابن ماجه – “রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন (হিজরত করে প্রথম) মদিনা(র ‘কুবা’)য় আসেন, তখন (মুসলমান) লোকেরা (তাঁকে দেখার জন্য) তাঁর দিকে ছুটে যায় এবং (আনন্দে) বলতে থাকে: ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ এসে গেছেন! রাসুলুল্লাহ ﷺ এসে গেছেন’! (এভাবে তারা) তিনবার (একথা বলে)। তখন (তাঁদের নবী ﷺকে এক নজর) দেখার জন্য আমিও লোকদের (ভীড়ের) মধ্যে (ঢুকে) যাই। (লোকদের ভীড় ঠেলে) যখন তাঁর চেহারাটি (প্রথম) আমার সামনে প্রকাশ পায়, তখনই আমি বুঝে ফেলি যে, ওনার চেহারা কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না। সেসময় আমি সর্বপ্রথম তাঁকে যেকথাটি বলতে শুনেছিলাম সেটা ছিল: ‘হে লোক সকল! তোমরা পরষ্পরকে সালাম দাও, (হতদরিদ্র ক্ষুধার্ত) লোকদেরকে খানা খাওয়াও, রেহেমী (আত্বীয়তার/রক্তের সম্পর্ক) অটুট রাখো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন (তাহাজ্জদের) নামায আদায় করো, (আর) শান্তিতে বেহেশতে প্রবেশ করো”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ৪/৩৯৭ হাদিস ৩২৫১, ২/৩৬০ হাদিস ১৩৩৪; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শাইবাহ- ৮/৫৩৬; মুসনাদে আহমদ- ৫/৪৫১ হাদিস ২৩২৭২; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৫৩]
 
হুমায়েদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন-  أنَّ عَبْدَ اللَّهِ بنَ سَلَامٍ، بَلَغَهُ مَقْدَمُ النبيِّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ المَدِينَةَ فأتَاهُ يَسْأَلُهُ عن أشْيَاءَ، فَقَالَ: إنِّي سَائِلُكَ عن ثَلَاثٍ لا يَعْلَمُهُنَّ إلَّا نَبِيٌّ، ما أوَّلُ أشْرَاطِ السَّاعَةِ؟ وما أوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أهْلُ الجَنَّةِ؟ وما بَالُ الوَلَدِ يَنْزِعُ إلى أبِيهِ أوْ إلى أُمِّهِ؟ قَالَ: أخْبَرَنِي به جِبْرِيلُ آنِفًا قَالَ ابنُ سَلَامٍ: ذَاكَ عَدُوُّ اليَهُودِ مِنَ المَلَائِكَةِ، قَالَ: أمَّا أوَّلُ أشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُهُمْ مِنَ المَشْرِقِ إلى المَغْرِبِ، وأَمَّا أوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أهْلُ الجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ الحُوتِ، وأَمَّا الوَلَدُ فَإِذَا سَبَقَ مَاءُ الرَّجُلِ مَاءَ المَرْأَةِ نَزَعَ الوَلَدَ، وإذَا سَبَقَ مَاءُ المَرْأَةِ مَاءَ الرَّجُلِ نَزَعَتِ الوَلَدَ قَالَ: أشْهَدُ أنْ لا إلَهَ إلَّا اللَّهُ، وأنَّكَ رَسولُ اللَّهِ، قَالَ يا رَسولَ اللَّهِ: إنَّ اليَهُودَ قَوْمٌ بُهُتٌ فَاسْأَلْهُمْ عَنِّي، قَبْلَ أنْ يَعْلَمُوا بإسْلَامِي، فَجَاءَتِ اليَهُودُ فَقَالَ النبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: أيُّ رَجُلٍ عبدُ اللَّهِ بنُ سَلَامٍ فِيكُمْ؟ قالوا: خَيْرُنَا وابنُ خَيْرِنَا، وأَفْضَلُنَا وابنُ أفْضَلِنَا، فَقَالَ النبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: أرَأَيْتُمْ إنْ أسْلَمَ عبدُ اللَّهِ بنُ سَلَامٍ قالوا: أعَاذَهُ اللَّهُ مِن ذلكَ، فأعَادَ عليهم، فَقالوا: مِثْلَ ذلكَ، فَخَرَجَ إليهِم عبدُ اللَّهِ فَقَالَ: أشْهَدُ أنْ لا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وأنَّ مُحَمَّدًا رَسولُ اللَّهِ، قالوا: شَرُّنَا وابنُ شَرِّنَا، وتَنَقَّصُوهُ، قَالَ: هذا كُنْتُ أخَافُ يا رَسولَ اللَّهِ . رواه ابن البخاري في صحيحه , كتاب مناقب الأنصار , باب حدثني حامد بن عمر : ٥/٦٩ رقم ٣٩٣٨ – “যখন নবীজী ﷺ-এর মদিনায় আগমনের কথা আব্দুল্লাহ ইবন সালাম জানতে পারেন, তখন তিনি তাঁর কাছে আসেন কিছু প্রশ্ন করার জন্য। তখন আব্দুল্লাহ ইবন সালাম বলেন: ‘আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করবো, যা কোনো নবী ছাড়া অন্য কেউ জানবে না। (১) ‘কিয়ামতের প্রথম আলামত কী’? (২) সেটা কোন খাদ্য যা বেহেশত’বাসীগণ সর্বপ্রথম খাবেন’? (৩) কোন জিনিসের কারণে সন্তান তার পিতার অথবা তার মা’য়ের মতো (আকার আকৃতির) হয়’? (তখন) নবীজী ﷺ বলেন: ‘এইমাত্র (সম্মানীত ফেরেশতা) জিবরীল (আ.) আমাকে এসম্পর্কে অবগত করলেন, (যা আমি এখন তোমার সামনে বলতে যাচ্ছি)’। (সম্মানীত ফেরেশতা হযরত জিবরীল আ.-এর কথা শুনতেই আব্দুল্লাহ) ইবন সালাম বলেন: ‘(ইহূদীরা মনে করে) ফেরেশতাগণের মধ্যে ওই (জিবরীল ফেরেশতা) হলেন ইহূদীদের দুশমন’। নবীজী ﷺ বললেন: ‘কেয়ামতের আলামতসমূহের মধ্যে প্রথম (গুরুত্বপূর্ণ আলামত)টি হল, (একটি ভয়ঙ্কর) আগুন লোকদেরকে (পৃথিবীর) পূর্বদিক থেকে (তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে) পশ্চীমে একত্রিত করবে। আর বেহেশত’বাসীগণ সর্বপ্রথম যে খাবার খাবেন সেটা হল মাছের কলিজার বাড়তি অংশ। আর সন্তান সম্পর্কে কথা হল, যখন পুরুষের বীর্য নারীর বীর্যের আগে বের হয় তখন সন্তানটি পিতার মতো হয়, আর যখন নারীর বীর্য পুরুষের বীর্যের আগে বের হয় তখন সন্তানটি মা’য়ের মতো হয়। (নবীজী ﷺ-এর একথা শুনে) আব্দুল্লাহ ইবন সালাম বলেন: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং (আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি) যে, নিশ্চই আপনি আল্লাহ’র রাসুল’। (এরপর) বললেন; ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইহূদীরা (অন্যের উপরে) মিথ্যা-অপবাদ দানে অভ্যস্ত একটি জাতি। আমার ইসলাম গ্রহনের কথা তাদের কাছে জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি (আগে) আমার ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন (যে, আমি তাদের মাঝে কেমন ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত। কারণ তারা আমাকেও অপবাদ দিতে ছাড়বে না)। পরে ইহূদীরা এলে নবীজী ﷺ (তাদেরকে) জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন সালাম কেমন ব্যাক্তি’? তারা বললো: ‘(তিনি) আমাদের (মধ্যকার) উৎকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং আমাদের (মধ্যকার) উৎকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান(ও বটে)। (তিনি) আমাদের (মধ্যকার) সর্বোচ্চ মর্যাদাবান ব্যাক্তি এবং আমাদের (মধ্যকার) সর্বোচ্চ মর্যাদাবান ব্যাক্তির সন্তান’। তখন নবীজী ﷺ বললেন; ‘আব্দুল্লাহ বিন সালাম যদি ইসলাম কবুল করে তাহলে (সেক্ষেত্রে) তোমাদের কী মত’? তারা বললো: ‘আল্লাহ তাকে এ(মন কাজ করা) থেকে হিফাজত করুন’। নবীজী ﷺ তাদের কাছে (আবারো) একই কথা রাখলে তারা ওই একই রকম জবাব দেয়। তখন আব্দুল্লাহ (বিন সালাম রা.) তাদের সামনে বেরিয়ে এসে বলে ওঠেন:  أشْهَدُ أنْ لا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وأنَّ مُحَمَّدًا رَسولُ اللَّهِ – ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং (আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি) যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহ’র রাসুল’। (তার মুখ থেকে একথা শুনতেই) তারা বললো: ‘(সে) আমাদের (মধ্যকার) নিকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং আমাদের (মধ্যকার) নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান’ এবং (এভাবে) তারা (আরো অনেক কিছু বলে সবার সামনে) তাকে ছোট করছিল। (এরপর তারা চলে গেলে) আব্দুল্লাহ বিন সালাম রা. বললেন: ‘আমি এরই আশংকা করছিলাম -ইয়া রাসুলাল্লাহ”। [সহিহ বুখারী৫/৬৯ হাদিস ৩৯৩৮; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী– ২৫/২০৬]
 
https://www.islamweb.net/ar/library/index.php?page=bookcontents&idfrom=231&idto=231&bk_no=59&ID=258
 
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুস সালাম https://www.islamweb.net/ar/library/index.php?page=bookcontents&flag=1&ID=21147&bk_no=84&bookhad=
 
 
চলার পর রাসুলুল্লাহ ﷺ  রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ সোমবার (মোতাবেক ২০-ই সেপ্টেম্বর ৬২২ ইং তারিখ) দুপুরের পর ইয়াসরিব (মদিনা)-এর এলাকাভুক্ত ‘কুবা’য় উপনীত হন।
 
সুতরাং, তখনও পর্যন্ত মক্কার মুসলশানদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে আল্লাহ তাআলা’র পক্ষ থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ জিহাদের কোনো অনুমতি আসেনি। তখনকার জন্য মক্কার মুসলমানদের জন্য মস্তবড় জিহাদ ছিল মক্কার কাফের মুশরিকদের কাছে ইসলামের দাওয়াত ও আল্লাহ’র বানী পৌছে দেয়া এবং এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে বিপদ আসে তার উপরে সবর (ধৈর্যধারণ) করা এবং কাফেরদের অন্যায় জুলুম অত্যাচারগুলোকে আল্লাহ’র ওয়াস্তে ক্ষমা করতে থাকা। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
 
https://www.hadithbd.com/books/link/?id=3550

মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনার পথে রাসুলুল্লাহ ﷺ হিজরতের পর মদিনা যখন ‘দারুল ইসলাম’ (ইসলামী আবাসাস্থল) হল

মুসনাদে আহমদ নারীদের বায়াত https://islamweb.net/ar/library/index.php?page=bookcontents&flag=1&bk_no=6&ID=26048
 
https://quran-tafsir.net/katheer/sura60-aya12.html
 
আবু ইসহাক্ব রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আমর বিন মাইমুন রহ. বর্ণনা করেন- سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ أَنَّهُ قَالَ: كَانَ صَدِيقًا لِأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ، وَكَانَ أُمَيَّةُ إِذَا مَرَّ بِالْمَدِينَةِ نَزَلَ عَلَى سَعْدٍ، وَكَانَ سَعْدٌ إِذَا مَرَّ بِمَكَّةَ نَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ، فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ انْطَلَقَ سَعْدٌ مُعْتَمِرًا، فَنَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ بِمَكَّةَ، فَقَالَ لِأُمَيَّةَ: انْظُرْ لِي سَاعَةَ خَلْوَةٍ لَعَلِّي أَنْ أَطُوفَ بِالْبَيْتِ، فَخَرَجَ بِهِ قَرِيبًا مِنْ نِصْفِ النَّهَارِ، فَلَقِيَهُمَا أَبُو جَهْلٍ، فَقَالَ: يَا أَبَا صَفْوَانَ، مَنْ هَذَا مَعَكَ؟ فَقَالَ هَذَا سَعْدٌ، فَقَالَ لَهُ أَبُو جَهْلٍ: أَلَا أَرَاكَ تَطُوفُ بِمَكَّةَ آمِنًا، وَقَدْ أَوَيْتُمُ الصُّبَاةَ، وَزَعَمْتُمْ أَنَّكُمْ تَنْصُرُونَهُمْ وَتُعِينُونَهُمْ، أَمَا وَاللَّهِ لَوْلَا أَنَّكَ مَعَ أَبِي صَفْوَانَ مَا رَجَعْتَ إِلَى أَهْلِكَ سَالِمًا، فَقَالَ لَهُ سَعْدٌ وَرَفَعَ صَوْتَهُ عَلَيْهِ : أَمَا وَاللَّهِ لَئِنْ مَنَعْتَنِي هَذَا لَأَمْنَعَنَّكَ مَا هُوَ أَشَدُّ عَلَيْكَ مِنْهُ، طَرِيقَكَ عَلَى المَدِينَةِ، فَقَالَ لَهُ أُمَيَّةُ: لَا تَرْفَعْ صَوْتَكَ يَا سَعْدُ عَلَى أَبِي الحَكَمِ، سَيِّدِ أَهْلِ الوَادِي، فَقَالَ سَعْدٌ: دَعْنَا عَنْكَ يَا أُمَيَّةُ، فَوَاللَّهِ لَقَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهُمْ قَاتِلُوكَ»، قَالَ: بِمَكَّةَ؟ قَالَ: لاَ أَدْرِي، فَفَزِعَ لِذَلِكَ أُمَيَّةُ فَزَعًا شَدِيدًا، فَلَمَّا رَجَعَ أُمَيَّةُ إِلَى أَهْلِهِ، قَالَ: يَا أُمَّ صَفْوَانَ، أَلَمْ تَرَيْ مَا قَالَ لِي سَعْدٌ؟ قَالَتْ: وَمَا قَالَ لَكَ؟ قَالَ: زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا أَخْبَرَهُمْ أَنَّهُمْ قَاتِلِيَّ، فَقُلْتُ لَهُ: بِمَكَّةَ، قَالَ: لَا أَدْرِي، فَقَالَ أُمَيَّةُ: وَاللَّهِ لَا أَخْرُجُ مِنْ مَكَّةَ، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ بَدْرٍ اسْتَنْفَرَ أَبُو جَهْلٍ النَّاسَ، قَالَ: أَدْرِكُوا عِيرَكُمْ؟ فَكَرِهَ أُمَيَّةُ أَنْ يَخْرُجَ، فَأَتَاهُ أَبُو جَهْلٍ فَقَالَ: يَا أَبَا صَفْوَانَ، إِنَّكَ مَتَى مَا يَرَاكَ النَّاسُ قَدْ تَخَلَّفْتَ، وَأَنْتَ سَيِّدُ أَهْلِ الوَادِي، تَخَلَّفُوا مَعَكَ، فَلَمْ يَزَلْ بِهِ أَبُو جَهْلٍ حَتَّى قَالَ: أَمَّا إِذْ غَلَبْتَنِي، فَوَاللَّهِ لَأَشْتَرِيَنَّ أَجْوَدَ بَعِيرٍ بِمَكَّةَ، ثُمَّ قَالَ أُمَيَّةُ: يَا أُمَّ صَفْوَانَ جَهِّزِينِي، فَقَالَتْ لَهُ: يَا أَبَا صَفْوَانَ، وَقَدْ نَسِيتَ مَا قَالَ لَكَ أَخُوكَ اليَثْرِبِيُّ؟ قَالَ: لَا مَا أُرِيدُ أَنْ أَجُوزَ مَعَهُمْ إِلَّا قَرِيبًا، فَلَمَّا خَرَجَ أُمَيَّةُ أَخَذَ لَا يَنْزِلُ مَنْزِلًا إِلَّا عَقَلَ بَعِيرَهُ، فَلَمْ يَزَلْ بِذَلِكَ حَتَّى قَتَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بِبَدْرٍ . رواه البخاري في صحيحه , كتاب المغازي , ذكر النبي صلى الله عليه وسلم من يقتل ببدر : ٥/٧١ رقم ٣٩٥٠ – “আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. (মদিনার আনসার সাহাবী) সা’দ বিন মুয়ায রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, সা’দ রা. ছিলেন (মক্কার নামকরা নেতা) উমাইয়্যাহ বিন খালফ-এর বন্ধুবর। উমাইয়্যাহ যখন মদিনায় যেত তখন সে সা’দ রা.-এর বাড়িতে উঠতো, আবার সা’দ রা. যখন মক্কায় যেতেন তখন তিনি উঠতেন উমাইয়্যাহ’র বাড়িতে। রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন (মক্কা থেকে হিজরত করে) মদিনায় এলেন, তখন (১ম হিজরীর শুরুর দিকেই) সা’দ রা. (একবার মক্কায়) গেলেন ওমরা করার উদ্দেশ্যে। মক্কায় গিয়ে তিঁনি উঠলেন উমাইয়্যাহ’র বাড়িতে। তিঁনি উমাইয়্যাহ’কে বললেন: ‘আমার জন্য একটি নিরিবিলি সময় দেখো, যাতে আমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারি’। ফলে উমাইয়্যাহ তাঁকে নিয়ে দ্বি-প্রহরের দিকে বের হল। তখন (ঘটনাক্রমে রাস্তাপথে) আবু জাহলের সাথে সাক্ষাত হলে সে (উমাইয়্যাহকে উদ্দেশ্য করে) বললো: ‘হে আবু সাফওয়ান! তোমার সাথে এ কে’? উমাইয়্যাহ বললো: ‘(সে আমার বন্ধু) সা’দ (বিন মুয়ায, সে মদিনা থেকে এসেছে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে)’। আবু জাহল তখন সা’দ রা.-কে উদ্দেশ্য করে বললো: ‘(বাহ! বাহ! কি চমৎকার কথা!) তোমরা (মদিনাবাসীর কিছু লোক আমাদের মক্কার) ধর্মত্যাগীদেরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছো, তোমাদের দাবী মতে তোমরা তাদেরকে (ঘরবাড়ি অর্থকড়ি ও নিরাপত্তা দিয়ে) সাহায্য সহযোগিতাও করছো, আর (এদিকে সেই তাদেরই একজন হলে তুমি, আর সেই) তোমাকে আমি দেখছি তুমি (আমাদেরই চোখের সামনে) মক্কায় নিরাপদে তাওয়াফ করছো! আল্লাহর কসম, তুমি যদি (আজ) আবু সাফওয়ানের সাথে না থাকতে, তাহলে তুমি (আমাদের হাত থেকে বেঁচে) তোমার পরিবারের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতে না’। তখন সা’দ রা. তার (মুখের) উপরে উঁচু স্বরে বলে উঠলেন: ‘আল্লাহ’র কসম, তুমি যদি (এখন) আমাকে এতে বাঁধার সৃষ্টি করো, তাহলে আমিও তোমার জন্য (এমন বিষয়ে) অবশ্যই বাঁধার সৃষ্টি করবো, যা তোমার কাছে এর চাইতেও আরো বেশি কঠিন ঠেঁকবে। (মানে) তোমার মদিনার রাস্তাপথ (বন্ধ করে দিবো, যে পথ দিয়ে তুমি তোমার বানিজ্যিক মালপত্র আনা-নেওয়া করো)’। এতে উমাইয়্যাহ -সা’দকে উদ্দেশ্য করে বললো: ‘হে সা’দ! তুমি (আমাদের এই মক্কা) উপত্তকার অধিবাসীদের (একজন অন্যতম মান্যবর) নেতা আবুল হাকাম (আবু জাহল)-এর সামনে (এভাবে) উঁচু স্বরে কথা বলো না’। তখন সা’দ রা. বললেন: ‘উমাইয়্যাহ, তুমি থামো! আল্লাহ’র কসম, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে (তোমার ব্যাপারে) বলতে শুনেছি: “(তুমি যাদেরকে আজ এত সম্মান দিচ্ছো, নিকট ভবিষ্যতে) ওরা(ই) তোমার হত্যাকারী (প্রমাণিত হবে)”। (একথা শুনে) উমাইয়্যাহ বললো: ‘মক্কায় (আমি মড়বো)’? সা’দ রা. বললেন: ‘আমি জানি না (কোথায়)’। এতে উমাইয়্যাহ অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। (পরে) উমাইয়্যা যখন তার পরিবারের কাছে ফিরে এলো, তখন (তার ফ্যাকাশে মুখ দেখে -কি হয়েছে জিজ্ঞেস করায়) উমাইয়্যা (তার স্ত্রীকে) বললো: ‘হে উম্মে সাফওয়ান! তুমি কি দেখছো না, সা’দ আমাকে কি বলেছে’? উম্মে সাফওয়ান জিজ্ঞেস করলো: ‘সা’দ আপনাকে কি বলেছে’? উমাইয়্যা বললো: “সে দাবী করছে যে, মুহাম্মাদ তাদেরকে বলেছেন যে, (আমি মক্কার যেসব নেতাদেরকে আজ এত সম্মান দিচ্ছি, নিকট ভবিষ্যতে) তারা আমার হত্যাকারী (প্রমাণিত হবে)। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম: ‘মক্কায়’? সে বললো: ‘আমি জানি না (কোথায়)”। তখন উমাইয়্যাহ বললো: ‘আল্লাহ’র কসম, আমি (আর কখনো) মক্কার বাইরে যাবো না’। (পরে) যখন (গাজওয়ায়ে) বদরের দিন সমাগত হল, তখন আবু জাহল (মক্কার সকল সক্ষম) লোকজনকে বেরিয়ে পড়ার জন্য আহবান জানিয়ে বললো: ‘তোমরা (সকলে বেরিয়ে পড়ো এবং আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে আগতব্য) তোমাদের কাফেলাকে রক্ষা করো’। তখন উমাইয়্যাহ (মক্কা ছেড়ে ওদের সাথে) বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবু জাহল তার কাছে এসে বললো: ‘হে আবু সাফওয়ান! (মক্কার) লোকেরা যখন তোমাকে দেখবে যে, তুমি (এই মক্কা) উপত্তকার অধিবাসীদের (একজন অন্যতম গণ্যমান্য) নেতা হয়েও (আমাদের এই অভিযানে বের না হয়ে) পিছনে রয়ে গেছো, তখন তারাও তোমার সাথে পিছনে থেকে যাবে, (বের হতে চাইবে না)’। আবু জাহল তাকে এভাবে পিড়াপিড়ি করতেই থাকলো, ফলে শেষপর্যন্ত উমাইয়্যাহ বললো: ‘তুমি যখন আমাকে (বের হতে) বাধ্যই করে ফেললে, তাহলে -আল্লাহ’র কসম- আমি (এই অভিযানের জন্য) মক্কার সবথেকে উত্তম উটটি কিনবো’। তারপর উমাইয়্যাহ (তার স্ত্রীকে) বললো: ‘হে উম্মে সাফওয়ান! আমার সফরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করো’। তখন উম্মে সাফওয়ান তাকে বললো: ‘হে আবু সাফওয়ান, তুমি কি ভুলে গেছো, তোমার ইয়াসরিবী (মদিনাবাসী) বন্ধু তোমাকে কি বলেছিলো’? উমাইয়্যাহ বললো: ‘না (ভুলিনি), আমার ইচ্ছে শুধু তাদের সাথে নিকটেই (কিছুদূর পর্যন্ত) যাওয়া, (তারপর কোনো অযুহাতে বাড়িতে ফিরে আসবো)’। (কিন্তু পরে) উমাইয়্যাহ যখন (কুরায়েশদের সাথে) বের হল, তখন (রাস্তাপথে) এমন কোনো মঞ্জিল ছিল না যেখানে সে (অযুহাত দাঁড় করানোর জন্য) তার উটকে বেঁধে রাখেনি। (গোটা পথই) সে এমনটা করতে থাকে। অবশেষে আল্লাহ তাআলা তাকে বদরে (মুসলমানদের হাতে) হত্যা করেন”। [সহিহ বুখারী– ৫/৭১ হাদিস ৩৯৫০; মুসনাদে আহমদ- ১/৪০০ হাদিস ৩৭৮৪; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী– ৬/১৪ হাদিস ৫৩৫০; দালায়িলুন নাবুওয়্যাহ, ইমাম ইসফাহানী- ২/৫৫৯]
 
আব্দুর রহমান বিন ক্বাব বিন মালেক রহ. এক সাহাবীর সূত্রে বর্ণনো করেছেন যে- أَنَّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ كَتَبُوا إِلَى ابْنِ أُبَيٍّ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ مَعَهُ الْأَوْثَانَ مِنَ الْأَوْسِ وَالْخَزْرَجِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ بِالْمَدِينَةِ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ: إِنَّكُمْ آوَيْتُمْ صَاحِبَنَا، وَإِنَّا نُقْسِمُ بِاللَّهِ لَتُقَاتِلُنَّهُ، أَوْ لَتُخْرِجُنَّهُ أَوْ لَنَسِيرَنَّ إِلَيْكُمْ بِأَجْمَعِنَا حَتَّى نَقْتُلَ مُقَاتِلَتَكُمْ، وَنَسْتَبِيحَ نِسَاءَكُمْ، فَلَمَّا بَلَغَ ذَلِكَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَيٍّ وَمَنْ كَانَ مَعَهُ مِنْ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ، اجْتَمَعُوا لِقِتَالِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا بَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِيَهُمْ، فَقَالَ: «لَقَدْ بَلَغَ وَعِيدُ قُرَيْشٍ مِنْكُمُ الْمَبَالِغَ، مَا كَانَتْ تَكِيدُكُمْ بِأَكْثَرَ مِمَّا تُرِيدُونَ أَنْ تَكِيدُوا بِهِ أَنْفُسَكُمْ، تُرِيدُونَ أَنْ تُقَاتِلُوا أَبْنَاءَكُمْ، وَإِخْوَانَكُمْ» فَلَمَّا سَمِعُوا ذَلِكَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَفَرَّقُوا، فَبَلَغَ ذَلِكَ كُفَّارَ قُرَيْشٍ، فَكَتَبَتْ كُفَّارُ قُرَيْشٍ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ إِلَى الْيَهُودِ: إِنَّكُمْ أَهْلُ الْحَلْقَةِ وَالْحُصُونِ، وَإِنَّكُمْ لَتُقَاتِلُنَّ صَاحِبَنَا، أَوْ لَنَفْعَلَنَّ كَذَا وَكَذَا، وَلَا يَحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَدَمِ نِسَائِكُمْ شَيْءٌ، وَهِيَ الْخَلَاخِيلُ، فَلَمَّا بَلَغَ كِتَابُهُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَجْمَعَتْ بَنُو النَّضِيرِ بِالْغَدْرِ، فَأَرْسَلُوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اخْرُجْ إِلَيْنَا فِي ثَلَاثِينَ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِكَ، وَلْيَخْرُجْ مِنَّا ثَلَاثُونَ حَبْرًا، حَتَّى نَلْتَقِيَ بِمَكَانِ الْمَنْصَفِ فَيَسْمَعُوا مِنْكَ، فَإِنْ صَدَّقُوكَ وَآمَنُوا بِكَ آمَنَّا بِكَ، فَقَصَّ خَبَرَهُمْ، فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ، غَدَا عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْكَتَائِبِ فَحَصَرَهُمْ، فَقَالَ لَهُمْ: «إِنَّكُمْ وَاللَّهِ لَا تَأْمَنُونَ عِنْدِي إِلَّا بِعَهْدٍ تُعَاهِدُونِي عَلَيْهِ» ، فَأَبَوْا أَنْ يُعْطُوهُ عَهْدًا، فَقَاتَلَهُمْ يَوْمَهُمْ ذَلِكَ، ثُمَّ غَدَا الْغَدُ عَلَى بَنِي قُرَيْظَةَ بِالْكَتَائِبِ، وَتَرَكَ بَنِي النَّضِيرِ وَدَعَاهُمْ إِلَى أَنْ يُعَاهِدُوهُ، فَعَاهَدُوهُ، فَانْصَرَفَ عَنْهُمْ، وَغَدَا عَلَى بَنِي النَّضِيرِ بِالْكَتَائِبِ، فَقَاتَلَهُمْ حَتَّى نَزَلُوا عَلَى الْجَلَاءِ، فَجَلَتْ بَنُو النَّضِيرِ، وَاحْتَمَلُوا مَا أَقَلَّتِ الْإِبِلُ مِنْ أَمْتِعَتِهِمْ، وَأَبْوَابِ بُيُوتِهِمْ، وَخَشَبِهَا، فَكَانَ نَخْلُ بَنِي النَّضِيرِ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَاصَّةً، أَعْطَاهُ اللَّهُ إِيَّاهَا وَخَصَّهُ بِهَا، فَقَالَ: {وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ، وَلَا رِكَابٍ} [الحشر: 6] يَقُولُ: بِغَيْرِ قِتَالٍ، فَأَعْطَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْثَرَهَا لِلْمُهَاجِرِينَ، وَقَسَمَهَا بَيْنَهُمْ وَقَسَمَ مِنْهَا لِرَجُلَيْنِ مِنَ الْأَنْصَارِ، وَكَانَا ذَوِي حَاجَةٍ لَمْ يَقْسِمْ لِأَحَدٍ مِنَ الْأَنْصَارِ غَيْرِهِمَا، وَبَقِيَ مِنْهَا صَدَقَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّتِي فِي أَيْدِي بَنِي فَاطِمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا . رواه أبو داود في سننه , كتاب الخراج والإمارة والفيء باب في خبر النضير : ٣/١٥٦ رقم ٣٠٠٤، و قد صحح إسناده الحافظ ابن حجر في فتح الباري: ٧/٣٣١، و الأرنؤوط في تحقيقه علي سنن أبي داود: ٤/٦١٩، و الألباني في صحيح أبي داود – “(রাসুলুল্লাহ ﷺ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর একবার মক্কার) কুরায়েশ কাফেররা (মদিনার) আউস ও খাযরাজ (গোত্র দ্বয়)-এর মধ্যে (আব্দুল্লাহ) ইবনু উবাই (ইবনে সালুল) এবং তার সাথে যারা মূর্তিপূজা করতো -তাদের কাছে চিঠি লিখলো; রাসুলুল্লাহ ﷺ সে সময় (মক্কা থেকে) মদিনায় (হিজরত করে বসবাস কর)ছিলেন; এটা বদরের (যুদ্ধের) পূর্বেকার কথা। (কুরায়েশরা লিখলো যে): ‘তোমরা আমাদের (মক্কার) লোকদের (তোমাদের ওখানে) আশ্রয় দিয়েছো। আমরা আল্লাহ’র কসম খেয়ে বলছি, হয় তোমরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, নাহয় তাকে তোমরা (মদিনা থেকে) বের করে দিবে, অন্যথায় আমরা (আরববের মিত্ররা) সকলে মিলে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবো, এমনকি তোমাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা হরবো এবং তোমাদের নারীদেরকে (দাসী বানানোর জন্য) বন্দী করবো’। আব্দুল্লাহ বিন উবাই (ইবনে সালুল) এবং তার সাথে যারা মূর্তিপূজা করতো -তাদের কাছে যখন ও(ই চিঠি)টা পৌছলো, তখন তারা সকলে নবী ﷺ-এর সাথে যুদ্ধ করার জন্য একত্রিত হল। নবী ﷺ-এর কাছে যখন এখবর পৌছলো, তখন তিঁনি তাদের সাথে সাক্ষাত করে বললেন: ‘(শুনতে পেলাম) তোমাদের মধ্যে কারোর কাছে কুরায়েশদের চরম-ধমকী-পত্র এসে পৌছেছে! (দেখো), তারা এ(সব উসকানী মূলক কথা)র দ্বারা -যতটা না তোমাদেরকে ফাঁদে ফেললে দিচ্ছে, তার চাইলে তোমরাই তোমাদের নিজকে অধিক ফাঁদে ফেলছতে চাইছো। তোমরা তো তোমাদেরই সন্তানাদি তোমাদেরই ভাই-ব্রাদার’দের সাথে যুদ্ধ করতে চাইছো’! তারা যখন নবী ﷺ-এর পক্ষ থেকে এসব কথা শুনলো, তখন তারা (একজোট অবস্থা থেকে) বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকলো। পরে একথা কুরায়েশ কাফেরদের কাছে পৌছলো, (কিন্তু এর জবাবে তখন আর তারা কিছু বললো না বা লিখলো না)। বদরের ঘটনা ঘটার পর কুরায়েশ কাফেরদের (এবারে মদিনার) ইহূদীদের কাছে (এই মর্মে) চিঠি লিখে পাঠালো যে: ‘তোমরা (ইহূদীরা) হলে অস্ত্রশস্ত্রওয়ালা এবং (একই সাথে) দুর্গে বসবাসকারী (একটি সম্প্রদায়)। তোমরা অবশ্যই আমাদের (মক্কা থেকে পালিয়ে গিয়ে তোমাদের ওখানে আশ্রয়গ্রহনকারী) লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, অন্যথায় আমরা (কিন্তু তোমাদের বিরুদ্ধে) এই এই পদক্ষেপ নিবো। তখন তোমাদের নারীদেরকে আমাদের দাসী বানানোর সোমনে কিছুই প্রতিবন্ধক হবে না’। তাদের চিঠির খবর যখন নবী ﷺ-এর কাছে পৌছলো, তখন তারা বনু নাযীর-কে (নবী ﷺ-এর সাথে কৃত চুক্তি ভেঙ্গে তাঁর) সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য একত্রিত করলো।  তাদের কৃত চুক্তি ভাঙ্গার জন্য           ”। [সুনানে আবু দাউদ- ৩/১৫৬ হাদিস ৩০০৪; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ৫/৩৫৮ হাদিস ৯৭৩৩; দালায়িলুন নাবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ৩/২০১ হাদিস ১০৪৪]
 
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=60372
 
আব্দুল্লাহ বিন আমের বিন রাবিয়্যাহ’র সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা বিনতে সা’দ রা. বর্ণনা করেন- سَهِرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقْدَمَهُ الْمَدِينَةَ، لَيْلَةً، (و في الرواية – قالت : فقلت : ما شأنك يا رسول الله؟) فَقَالَ: «لَيْتَ رَجُلًا صَالِحًا مِنْ أَصْحَابِي يَحْرُسُنِي اللَّيْلَةَ» قَالَتْ: فَبَيْنَا نَحْنُ كَذَلِكَ سَمِعْنَا خَشْخَشَةَ سِلَاحٍ، فَقَالَ: «مَنْ هَذَا؟» قَالَ: سَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا جَاءَ بِكَ؟» قَالَ: وَقَعَ فِي نَفْسِي خَوْفٌ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجِئْتُ أَحْرُسُهُ، فَدَعَا لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ نَامَ (و في الرواية –  قَالَتْ عَائِشَةُ : فَنَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى سَمِعْتُ غَطِيطَهُ) . رواه مسلم في صحيحه , كتاب فضائل الصحابة رضي الله تعالى عنهم , باب في فضل سعد بن أبي وقاص رضي الله عنه : ٤/١٨٧٥ رقم ٢٤١٠ (٣٩ و ٤٠)  – “রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনার (জীবনের) প্রথম দিকে (কোনো এক) রাতে (নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঘুমোতে পারছিলেন না, ফলে) জেগে রইলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে, আয়েশা রা. বলেন: আমি জিজ্ঞেস করলাম: কি হয়েছে ইয়া রাসুলাল্লাহ)? তখন তিঁনি বললেন: ‘আমার সাহাবীগণের মধ্যে কোনো সালেহ (নেককার/সুঠাম সবল) কেউ যদি (আজ) রাতটি আমাকে পাহারা দিতো’! আয়েশা রা. বলেন: ‘আমাদের মাঝে এরকম কথাবার্তা চলছিল, এমন সময় আমরা অস্ত্রের খশক-খশক আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন: ‘কে ওখানে’? সা’দ রা. বললো: ‘(ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি) সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস’। রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন: ‘তুমি (এত রাতে) কেনো এসেছো’? সা’দ রা. বললেন: ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর (নিরাপত্তার) ব্যাপারে আমার মনের মধ্যে আশংকা দেখা দিয়েছে, তাই আমি আপনাকে পাহারা দিতে এসেছি’। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ তার জন্য দোয়া করলেন, তারপর ঘুমিয়ে গেলেন। (আরেক বর্ণনায় আছে) ‘আয়েশা রা. বলেন: ‘ফলে (অল্পক্ষনের মধ্যেই) রাসুলুল্লাহ ﷺ ঘুমিয়ে গেলেন, এমনকি আমরা তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম”। [সহিহ মুসলীম- ৪/১৮৭৫ হাদিস ২৪১০; জামে’ তিরমিযী- ৫/৬৫০ হাদিস ৩৭৫৬; মুসনাদে আহমদ– ৬/১৪১ হাদিস ২৪৫৬৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শাইবাহ- ৭/৫০৮]
 
হুযাইফাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ (একবার) এরশাদ করলেন- اكْتُبُوا لِي مَنْ تَلَفَّظَ بِالإِسْلاَمِ مِنَ النَّاسِ، فَكَتَبْنَا لَهُ أَلْفًا وَخَمْسَ مِائَةِ رَجُلٍ، فَقُلْنَا: نَخَافُ وَنَحْنُ أَلْفٌ وَخَمْسُ مِائَةٍ، فَلَقَدْ رَأَيْتُنَا ابْتُلِينَا، حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ لَيُصَلِّي وَحْدَهُ وَهُوَ خَائِفٌ . رواه البخاري في صحيحه , كتاب الجهاد و السير , باب كتابة الإمام الناس : ٤/٧٢ رقم ٣٠٦٠  – “লোকদের মধ্যে কতজন ইসলাম গ্রহন করেছে তাদের সুমারী আমার কাছে লিখে পেশ করো। পরে (আমরা সাধ্য মতো লোক গণনা করে) তাঁর কাছে (মোট) এক হাজার পাঁচ’শ জন পুরুষের হিসেব লিখে পেশ করলাম। তখন আমরা বলাবলি করছিলাম: ‘আমরা এক হাজার পাঁচ’শ জন (মুসলমান) থাকার পরও (দুশমনদের ভয়ে) আমরা ভীত! বস্তুত: আমরা আমাদেরকে এমন অবস্থায় দেখেছি যে, কোনো ব্যাক্তি ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় একাকি নামায আদায় করছে”। [সহিহ বুখারী- ৪/৭২ হাদিস ৩০৬০; সহিহ মুসলীম- ৩/১১১৪ হাদিস ২৮৯৫]
 
আক্বীক্ব রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান রা. বর্ণনা করলেন-  كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَحْصُوا لِي كَمْ يَلْفِظُ الْإِسْلَامَ»، قَالَ: فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَتَخَافُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ مَا بَيْنَ السِّتِّمِائَةٍ إِلَى السَّبْعِمِائةٍ؟ قَالَ: «إِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ لَعَلَّكُمْ أَنْ تُبْتَلَوْا»، قَالَ: «فَابْتُلِيَنَا حَتَّى جَعَلَ الرَّجُلُ مِنَّا لَا يُصَلِّي إِلَّا سِرًّا» . رواه مسلم في صحيحه , كتاب الإيمان , باب الاستسرار بالإيمان للخائف : ١/١٣١ رقم ١٤٩ – “আমরা (একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে ছিলাম। (লোকদের মধ্যে) কতজন ইসলাম গ্রহন করেছে তাদের সুমারী আমার কাছে পেশ করো’। হুযাইফাহ রা. বলেন: ‘তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা (সংখ্যায়) ছয়’শ থেকে সাত’শ জনের মতো হওয়ার পরও আপনি আমাদের (নিরাপত্তা) নিয়ে শংকা প্রকাশ করছেন’?! রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘অবশ্যই (আমি যা বুঝতে ও জানতে পারি, তার অনেক কিছুই) তোমরা জানো না (উপলব্ধিও করতে পারো না); সম্ভবত (নিকট ভবিষ্যতে) তোমরা (ফিতনায়) লিপ্ত হবে’। হুযাইফাহ রা. বলেন: ‘(হ্যাঁ) আমরা (ফিতনায়) পতিত হয়ে গিয়েছিলাম, এমনকি আমাদের (একেকজন) ব্যাক্তিকে গোপনে একাকি নামায আদায় করতে হয়েছে”। [সহিহ মুসলীম- ১/১৩১ হাদিস ১৪৯; মুসনাদে আহমদ- ৫/৩৮৪ হাদিস ২২৭৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/২৬১ হাদিস ৪০২৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শাইবাহ- ৮/৬২০]
 
সুতরাং, তখনও পর্যন্ত মক্কার মুসলশানদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে আল্লাহ তাআলা’র পক্ষ থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ জিহাদের কোনো অনুমতি আসেনি। তখনকার জন্য মক্কার মুসলমানদের জন্য মস্তবড় জিহাদ ছিল মক্কার কাফের মুশরিকদের কাছে ইসলামের দাওয়াত ও আল্লাহ’র বানী পৌছে দেয়া এবং এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে বিপদ আসে তার উপরে সবর (ধৈর্যধারণ) করা এবং কাফেরদের অন্যায় জুলুম অত্যাচারগুলোকে আল্লাহ’র ওয়াস্তে ক্ষমা করতে থাকা। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
 
فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُم بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا
“সুতরাং, (হে নবী মুহাম্মাদ!) তুমি কাফেরদের অনুগত্য করো না এবং তাদের সাথে এ(ই কুরআনে)র দ্বারা জিহাদ করো -বিশাল (এক) জিহাদ”[সূরা ফুরকান ৫২]
 
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=3923
 
বনা নাজির https://quran-tafsir.net/seoty/sura59-aya4.html
আব্দুর রহমান বিন আউফ বাজার ব্যভসার শুরু https://shamela.ws/book/1681/5916#p1
 
[[[এই পেজের বর্ণিত তথ্য ও তাহ্বক্বীক আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে দেখুন: আস-সিয়ার ওয়াল মাগাজী, ইমাম ইবনে ইসহাক- ; সিরাতে ইবনে হিশাম- ; আনসাবুল আশরাফ, ইমাম বালাযুরী- ; আত-ত্ববাক্বাত, ইবনে সা’দ- ; তারিখুল রুসুল ওয়াল মুলুক, ইমাম তাবারী- ; আস-সিরাতুন নাববিয়্যাহ, ইমাম ইবনে হিব্বান- ; দালাইলুন নুবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী- ২/৫০১-৫০৯; আদ-দুরার ফি ইখতিছারিল মাগাজী ওয়াস সিয়ার, ইমাম ইবনু আব্দিল বার- ; আর-রাউজুল উনুফ, ইমাম সুহাইলী- ; উয়ূনুল আছার, ইবনু সাইয়্যেদুন নাস- ; তারিখুল ইসলাম, ইমাম যাহাবী- ; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ; উসদুল গাবাহ- ; আল ইসাবাহ- ; খাসায়েসুল কুবরা, ইমাম সুয়ূতী- ; শারহু মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ, যুরকানী- ; রাসুলে রহমত, মওলানা আবুল কালাম আযাদ-  পৃষ্ঠা (ইঃফাঃ); সিরাতুল মুস্তফা, মওলানা ইদ্রিস কান্দালভী- ; খাতামুন নাবিয়্যীন, মুহাম্মাদ আবু জাহরাহ- ; সহিহ সিরাতিন নাবাউইয়্যাহ, ইব্রাহিম আলী- ; ই’লাউস সুনান, জফর আহমদ উসমানী- ৮/১১,১২]]]
 

>>> মূল সূচিপত্র (index) থেকে এ পেজের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আলোচনা পড়তে [এখানে ক্লিক করুন