মুনাফিক ও মুনাফিকী : আল-কুরআনের আয়াত ও হাদিস সমূহ

মুনাফিক ও মুনাফিকী : কুরআনের আয়াত ও হাদিস সমূহ

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

[উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত আয়াত সমূহ ও অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]

 

 

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-

   الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ ۚ نَسُوا اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ ۗ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ – وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ هِيَ حَسْبُهُمْ ۚ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ 
‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অন্যের (বন্ধু ও সহযোগী)। তারা (মানুষকে) মুনকার (শরীয়ত বিরোধী বিষয়)-এর নির্দেশ দেয় এবং মা’রুফ (শরীয়ত সমর্থিত সৎকাজ) থেকে (লোকজনকে) নিষেধ করে এবং (দ্বীন ইসলাম ও মুমিনদের প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগীতা থেকে) তাদের হাতকে (জেনে বুঝে) গুটিয়ে রাখে। তারা (জেনে বুঝে) আল্লাহকে ভুলে গেছে। তাই, আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গেলেন, (জাহান্নামে তাদের ফরিয়াদকে না শোনা হবে আর না পাত্তা দেয়া হবে)। নিশ্চই মুনাফেকরা হল ফাসেক গোষ্ঠি। মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা করেছেন, তাতে তারা আজীবন থাকবে। এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আর তাদের উপরে আল্লাহ’র অভিশাপ। আর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব’ । [সূরা তাওবাহ ৬৭, ৬৮]
 
  أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا – وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا – فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَاءُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا – أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُل لَّهُمْ فِي أَنفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا – وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا – فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘(হে নবী !) তুমি কি তাদেরকে দেখো নি, যারা দাবী করে বলে যে, তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাজিল করা হয়েছিল – তার উপর তারা ইমান এনেছে। (কিন্তু বাস্তবে) তারা চায়, তারা তাগুতের কাছে (তাদের) বিচার-ফয়সালা করিয়ে নিবে। অথচ (আমার পক্ষ থেকে) তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যেন তাগুতকে অস্বীকার/প্রত্যাক্ষান করে। আর শয়তান-তো চায়, সে তাদেরকে (আল্লাহ’র দ্বীন ও শরীয়ত থেকে) পথভ্রষ্ঠ করে বহু দূরে নিয়ে যাবে। আর তাদেরকে যখন বলা হয়,  তোমরা -আল্লাহ যা নাজিল করেছেন সেদিকে এবং রাসুলের দিকে এসো, তখন তুমি মুনাফিকদেরকে দেখবে যে, তারা তোমার থেকে একদম পাশ কেটে চলে যাচ্ছে। কাজেই (আল্লাহ’র কাছে) পাঠানো তাদের (মন্দ) কৃতকর্মের কারণে যখন তারা বিপদের সম্মখিন হবে -তখন কেমন হবে! এরপরও তারা তোমার কাছে গিয়ে আল্লাহ’র নামে (মিথ্যা) হলফ করে বলে যে, (দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানদের) কল্যান এবং সম্প্রীতি ছাড়া আমাদের অন্য উদ্দেশ্য ছিল না !!! আল্লাহ জানেন ওদের অন্তরে কী আছে। সুতরাং, তাদের (এসব মুনাফেকী পূর্ণ টালবাহানা গুলোকে) উপেক্ষা করে চলো ও (তাদের কল্যানকামী হয়ে) উপদেশ দিতে থাকো এবং এমন কথা বলো যা তাদের অন্তরকে ছুঁয়ে যায়। (বস্তুত:) আমরা এমন কোনো রাসুল পাঠাইনি, যার উদ্দেশ্য আল্লাহ অনুমতিক্রমে (তাঁর) অনুগত্য করা ভিন্ন অন্য কিছু ছিল। এমন যদি হত যে, তারা যখন (মুনাফেকী করে) নিজেদের সাথে অবিচার করেছিল, তখন (যদি) তারা তোমার কাছে আসতো, তারপর আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা চাইতো এবং রাসুলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন, তাহলে তারা আল্লাহকে অবশ্যই তওবা কবুলকারী ও দয়াময় হিসেবে পেত। (হে নবী মুহাম্মাদ!) তোমার রবের শপথ, যতক্ষন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ-বিসম্বাদগুলোর জন্য তোমাকে বিচারক না মানবে, অতঃপর তুমি যে ফয়সালা করে দিয়েছ সে ব্যপারে (যতক্ষন পর্যন্ত) তাদের মনে দ্বিধামুক্ততা অনুভূত না হবে এবং (যতক্ষন পর্যন্ত) তারা (তোমার ফয়সালাকে) ঐকান্তিকভাবে গ্রহন করে না নিবে, ততক্ষন পর্যন্ত তারা (কোনো মতেই তোমার উপর বিশ্বাসী) ইমান-আনায়নকারী (বিবেচিতই হবার) নয়, কক্ষোনো নয়! (বরং সে বিবেচিত হবে সন্দেহপোষনকারী মোনাফেক বেইমান হিসেবে)।’। [সূরা নিসা ৬০-৬৫]
 
 إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيلًا – بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا – الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا – وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِينَ وَالْكَافِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا 
‘নিশ্চই যারা ইমান এনেছে, অত:পর কুফরী করেছে, তারপর (আবারও) ইমান এনেছে, অত:পর (আবারও) কুফরী করেছে, এরপর তারা (তাদের) কুফরীকে বৃদ্ধি করেছে, আল্লাহ কোনো মতেই না তাদেরকে ক্ষমা করতে যাবেন, আর না যাবেন তাদেরকে (সিরাতে মুস্তাকিমের) পথ দেখাতে। মুনাফিকদেরকে এব্যাপারে সুসংবাদ দিয়ে দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে চরম মাত্রার শাস্তি, যারা মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে নেয়। তারা কি ওদের (মতো আল্লাহ’র দুশমন কাফের-বেইমানদের) কাছে ইজ্জত-সম্মান খুঁজে ফিরে। তাহলে (জেনে রেখো,) নিশ্চই যাবতীয় ইজ্জত-সম্মান আল্লাহ’র। আর আমরা আল-কিতাবে তোমাদের উপরে (এই নির্দেশ) নাজিল করেছি যে, তোমরা যখন তাদেরকে আল্লাহ’র আয়াত সমূহের ব্যাপারে কুফরী করতে ও তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে শুনবে, তখন তোমরা (কোনো মতেই) তাদের সাথে বসে থাকবে না -যাবৎ না তারা ওসব বাদ দিয়ে অন্য কথায় প্রবৃত্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের অনুরূপই গণ্য হবে। নিশ্চই আল্লাহ -সকল কাফের ও মুনাফিকদেরকে জাহান্নামের মধ্যে একত্রিত করবেন’ [সূরা নিসা ১৩৭-১৪০]
 
الَّذِينَ يَتَرَبَّصُونَ بِكُمْ فَإِن كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِّنَ اللَّهِ قَالُوا أَلَمْ نَكُن مَّعَكُمْ وَإِن كَانَ لِلْكَافِرِينَ نَصِيبٌ قَالُوا أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُم مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ ۚ فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَلَن يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا – إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَىٰ يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا قَلِيلًا – مُّذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَٰلِكَ لَا إِلَىٰ هَٰؤُلَاءِ وَلَا إِلَىٰ هَٰؤُلَاءِ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا – يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا – إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا – إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا – مَّا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِن شَكَرْتُمْ وَآمَنتُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا 
‘(এরা হল তারা) যারা তোমাদের (মুসলমানদের) ব্যাপারে অপেক্ষায় থাকে (যে, দেখা যাক শেষ ফলাফল কী দাঁড়ায়)। এতে যদি আল্লাহ’র পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বিজয় (লাভ) হয়, (তখন) তারা বলে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না! আর যদি কাফেরদের ভাগ্য (নসিব) হয়, তখন তারা (আবার কাফেলদেরকে) বলে, আমরা (মুসলমানরা) কি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রবল ছিলাম না, তা সত্ত্বেও আমরা তোমাদেরকে মুমিনদের থেকে রক্ষা করেছিলাম,। সুতরাং, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করে দিবেন (যে, কে ছিল মুমিনদের প্রকৃত বন্ধু, আর কে ছিল কাফেরদের বন্ধু)। আর মুমিনদের উপরে (খবরদারি করার) কোনো পথই আল্লাহ কাফেরদের জন্য খোলা রাখেন নি। নিশ্চই মুনাফেকরা (মুনাফেকী করে ধারনা করে যে, তারা) আল্লাহকে (বিভিন্ন ভাবে) ধোকা দেয়, অথচ তিঁনিই তাদেরকে (বিভিন্ন ভাবে ইমানের পরীক্ষায় ফেলে) ধোকা দেন (এমন ভাবে যে, তারা নিজেদেরকে মুসলমানই মনে করে, অথচ তারা মুনাফেক)। আর তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন তারা দাঁড়ায় অলসভাবে; (নামাযে দাঁড়িয়ে মুমিন) লোকজনকে দেখায় (যে, তারাও তাদেরই মতো মুসলমান), কিন্তু তারা আল্লাহকে স্মরণই করে না -তবে (করলেও করে) অল্পই। (এরা মূলত: ইমান ও কুফর) এর মাঝে দোদুল্যমান (সব সুবিধাবাদি) লোকজন, (যারা) – না এদিকে থাকে, না থাকে ওদিকে। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তুমি কখনোও তার জন্য (উত্তরণের কোনো) পথ পাবে না। হে মুমিনগণ! তোমরা (মোনাফেকদের মতো) মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে অভিভাবক/বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে নিবে না। তোমরা কি চাও যে, (এমনটা করে) তোমারা আল্লাহ’র কাছে (নিজেরাই নিজেদের) বিরুদ্ধে (মুনাফেক হওয়ার) সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে বসবে?! নিশ্চই মুনাফিকরা দোযখের সর্বনিম্ন স্তরের ভিতরে থাকবে। আর (হে নবী!) তুমি তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারীকে পাবে না। তবে যারা (মুনাফেকী ও কুফরী থেকে) তওবা করে, (নিজেদের মুনাফেকীর) ইসলাহ (সংশোধন) করে এবং আল্লাহকে আঁকড়িয়ে ধরে ও তাদের দ্বীনকে আল্লাহ’র জন্য খালেস করে নেয়, তখন ওরা (আল্লাহ’র দৃষ্টিতে) মুমিনদের সাথে (আছে মর্মে গণ্য) হবে। আর আল্লাহ মুমিনদেরকে শীঘ্রই বিরাট পুরষ্কার প্রদান করবেন। তোমরা যদি (আল্লাহ’র) শুকর করো (কৃতজ্ঞ হও) এবং (তাঁর প্রতি) ইমান আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে (শুধু শুধু) আযাব দিয়ে কি করবেন? আর আল্লাহ হলেন (বান্দার কাজের) প্রকৃত-মূল্যায়নকারী এবং সর্বজ্ঞ’[সূরা নিসা ১৪১-১৪৭]
 
  يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا – وَاتَّبِعْ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا – وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
‘হে নবী ! আল্লাহকে ভয় করো। আর তুমি কাফেরদেরকে এবং মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। নিশ্চই আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ ও সুবিজ্ঞ, (কাফির ও মুনাফিকরা হল গন্ড মুর্খ)। আর তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়, তুমি তার অনুসরণ করো। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে ওকাকিফহাল রয়েছেন (যে, তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, নাকি কাফের ও মুনাফেকদের অনুসরণ করো)। আর (হে নবী !) তুমি আল্লাহ’র উপরে ভরসা করো। আর (তোমার) ওয়াকিল/কর্ম বিধায়ক  হিসেবে আল্লাহ’ই যথেষ্ট’। [সূরা আহযাব ১, ২]

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-

    إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ – اتَّخَذُوا أَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ – ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا فَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ – وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ ۖ وَإِن يَقُولُوا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ ۖ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ ۖ يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ ۚ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ ۚ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ ۖ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ – وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ لَوَّوْا رُءُوسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّونَ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ – سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَسْتَغْفَرْتَ لَهُمْ أَمْ لَمْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ لَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ – هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُوا عَلَىٰ مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّوا ۗ وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَفْقَهُونَ – يَقُولُونَ لَئِن رَّجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ ۚ وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ – يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ – وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ – وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا ۚ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ  
‘(হে নবী!) মুনাফিকা যখন তোমার কাছে আসে, তখন বলে, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চই আপনি আল্লাহ’র রাসুল’। আর (হে নবী!) আল্লাহ ভাল করেই জানেন যে, তুমি নিঃসন্দেহে তাঁর রাসুল, আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যুক। তারা তাদের (এজাতীয়) শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে (প্রমাণ করতে চায় যে, তারাও তোমাদের মতো মুমিন মুসলমান। কিন্তু), পরে (সুযোগ পেলে) তারা (বিভিন্ন কায়দায়) আল্লাহ’র পথে ব্যাঘাত/বাঁধার সৃষ্টি করে। নিশ্চই তারা যা করে যাচ্ছে তা (খুবই) খারাপ কাজ। এটা এজন্য যে, তারা ইমান আনার পর (আল্লাহ’র সাথে) কুফরী করেছে। ফলে তাদের অন্তরের উপরে সিল/মোহর এঁটে গেছে। সুতরাং তারা (নিজেদের মুনাফেকী) বুঝতে পারে না। আর তুমি যখন তাদের দিকে তাকাও, তখন তাদের (আকর্ষনীয়) শারীরীক কাঠামো (ও ঠাঁট বাট/স্মার্টনেস) তোমাকে তাজ্জব/অবাক করে, আর তারা যদি তোমার সাথে কথা বলে, তাহলে তুমি তাদের (বাগ্মিতা, কথা বলার ষ্টাইল দেখে মুগ্ধ হয়ে তাদের) কথাবার্তা শুনতে থাকবে। তারা হল প্রাচীরে হেলান দেয়া কাঠের টুকড়ো সদৃশ। (দ্বীন ইসলামের) প্রতিটি (ওজনদার ও বড়) আওয়াজকে তারা তাদের (নিজেদের) বিরুদ্ধে ধারনা করে থাকে। এরাই হল (তোমাদের মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে থাকা সাংঘাতিক) শত্রু। কাজেই তাদের ব্যাপারে হুশিয়ার থেকো। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে। আর তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা আসো, আল্লাহ’র রাসুল (মুহাম্মাদ সা.) তোমাদের জন্য (আল্লাহ’র দরবারে) ক্ষমা চাইবেন, (তখন) তারা তাদের মাথাগুলোকে ঘুরিয়ে নেয়। আর তুমি তাদেরকে লক্ষ্য করবে, তারা অহঙ্কারী হয়ে (আল্লাহ’র পথে) ব্যাঘাত/বাঁধার সৃষ্টি করে। তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো কিংবা না করো -তাদের জন্য (দু’ই) সমান; আল্লাহ তাদের কোনো মতেই ক্ষমা করবেন না। নিশ্চই আল্লাহ ফাসেক গোষ্ঠিকে পথ দেখান না। ওরা তারাই যারা বলে যে, যারা আল্লাহ’র রাসুলের সাহচর্যে আছে, তোমরা তাদেরকে উপরে ব্যয় করো না (তাদেরকে কিছু দান করো না) -যাতে শেষমেস তারা (দরিদ্রতা ও অভাবের কারণে রাসুলের সাহচর্য থেকে) সরে যায়। আর (এদের বোঝা উচিৎ যে,) আসমান সমূহ ও জমিনের খাজানা আল্লাহ’র, কিন্তু মুনাফিকরা (সেকথা) বোঝে না। তারা বলে, আমরা যখন মদিনায় ফিরে যাবো, তখন (মদিনার) সম্মানীতরা অবশ্যই নীচ’দেরকে বেড় করে দিবে। (এদের বোঝা উচিৎ,) ইজ্জত-সম্মান হল আল্লাহ’র জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য এবং মুমিনদের জন্য, কিন্তু মুনাফিকরা (সেকথা) জানে না। হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে যেন তোমাদের ধ্বনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি আল্লাহ’র স্মরণ থেকে (মুনাফেকদের অনুরূপ) গাফেল না করে। যারা এমনটা করে, বস্তুত: তারাই ক্ষতিগ্রস্থ। আমরা তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তোমরা তা থেকে -তোমাদের কারো কাছে মৃত্যু আসার পূর্বেই -ব্যয় করো। (অন্যথায়) তখন সে বলবে: হে আমাদের রব! আমাকে  আরো অল্প কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেনো, তাহলে আমি (তোমার পথে) দান-সদকাহ করতাম) এবং সালেহ/নেককারদেরে একজন হয়ে যেতাম। আল্লাহ কোনো নফসকেও (এক মুহূর্ত) অবকাশ দেন না, যখন তার নির্দিষ্ট সময় চলে আসে। তোমরা যা করছো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত’।[সূরা মুনাফিকুন  ১-১১]
 
  يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا – وَاتَّبِعْ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا – وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
‘হে নবী ! আল্লাহকে ভয় করো। আর তুমি কাফেরদেরকে এবং মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। নিশ্চই আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ ও সুবিজ্ঞ, (কাফির ও মুনাফিকরা হল গন্ড মুর্খ)। আর তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়, তুমি তার অনুসরণ করো। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন (যে, তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, নাকি কাফের ও মুনাফেকদের অনুসরণ করো)। আর (হে নবী ! সর্বাকস্থায়) তুমি আল্লাহ’র উপরে ভরসা করো। আর কর্ম বিধায়ক  হিসেবে আল্লাহ’ই যথেষ্ট’।[সূরা আহযাব ১, ২]
 
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ فَإِذَا أُوذِيَ فِي اللَّهِ جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللَّهِ وَلَئِن جَاءَ نَصْرٌ مِّن رَّبِّكَ لَيَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ ۚ أَوَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ – وَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْمُنَافِقِينَ
‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোকজনও আছে যে বলে, আমরা আল্লাহ’র উপরে ইমান এনেছি। পরে যখন আল্লাহ ব্যাপারে (মানুষের কাছ থেকে) কষ্ট-যন্ত্রনা-নির্যাতনের সম্মুখীন হয়, তখন সে লোকজনের (আরোপিত ওসব) ফিতনাকে এমন গণ্য করে নেয় যেন (সে) আল্লাহ আযাব (-এর সম্মুখীন হয়েছে)। আবার তোমার রবের পক্ষ থেকে যদি (তোমাদের জন্য বিজয় ও) সাহায্য এসে যায়, (তখন) তারাই (আবার) বলতে থাকে, আমরা-তো তোমাদের সাথেই ছিলাম। জগতবাসীর অন্তরে কী আছে -সে কথা কি আল্লাহ জানেন না’? আল্লাহ-তো (মানুষকে বিভিন্ন পরিক্ষায় ফেলে) অবশ্যই জানে নিতে থাকবেন, কারা (তাঁর উপরে সাচ্চা) ইমান এনেছে, এবং জেনে নিতে থাকবেন মুনাফেকদলকে’। [সূরা আনকাবুত ১০, ১১]
 
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ ۚ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ – يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ مَا قَالُوا وَلَقَدْ قَالُوا كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُوا بَعْدَ إِسْلَامِهِمْ وَهَمُّوا بِمَا لَمْ يَنَالُوا ۚ وَمَا نَقَمُوا إِلَّا أَنْ أَغْنَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ مِن فَضْلِهِ ۚ فَإِن يَتُوبُوا يَكُ خَيْرًا لَّهُمْ ۖ وَإِن يَتَوَلَّوْا يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ عَذَابًا أَلِيمًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَمَا لَهُمْ فِي الْأَرْضِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
‘হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের সাথে জিহাদ করো এবং তাদের উপরে কঠোর হও। আর তাদের (শেষ) ঠিকানা হল জাহান্নাম; (আর তা) কতই না নিকৃষ্ট স্থান। তারা আল্লাহ’র নামে শপথ করে বলে (যে,) তারা (কুফরী কথা) বলেনি। বস্তুত: তারা কুফরী কথা বলেছে। আর তারা কুফরী করেছে তাদের ইসলাম (গ্রহনের)-এর পর। আর তারা (এমন এক বদ) সংকল্প করেছিল যা তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আর তারা (যে ক্রধের বসবর্তি হয়ে তোমাদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে) বদলা নিচ্ছে, তা এছাড়া আর অন্য কিছু নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তাদেরকে অমুকাপেক্ষি করে দিয়েছেন তাঁর ফজলে। সুতরাং, তারা যদি (এসব থেকে) তওবা করে, (তাহলে) সেটা তাদের জন্যই কল্যানকর হবে। আর তারা যদি ফিরে যায়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সুকঠিন আযাব দিবেন। আর পৃথিবীতে তাদের জন্য না পাবে কোনো অভিভাবক, আর না পাবে কোনো সাহায্যকারী’। [সূরা তাওবাহ ৭৩, ৭৪]

     يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُم بِمَا فِي قُلُوبِهِمْ ۚ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُونَ – وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ ۚ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ – لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ ۚ إِن نَّعْفُ عَن طَائِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ – الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ ۚ نَسُوا اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ ۗ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ – وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ هِيَ حَسْبُهُمْ ۚ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ

 
# আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ. أخرجه البخاري في كتاب الإيمان, باب علامة المنافق : رقم ٣٤ ; و مسلم : رقم ٥٨ ; و أبو داود في كتاب السنة , باب الدليل على زيادة الإيمان ونقصه : رقم ٤٦٨٨ ، و الترمذي في كتاب الإيمان , باب ما جاء في علامة المنافق: رقم ٢٦٣٢  – ‘চারটি বৈশিষ্ট এমন আছে, যার মধ্যে সেগুলো থাকবে, সে একজন খাঁটি মুনাফেক। আর যার মধ্যে ওসব বৈশিষ্টের কোনো একটি থাকবে, তার মধ্যে মুনাফেকির একটি বৈশিষ্ট থাকবে -যাবৎ না সে তা পরিত্যাগ করে। (১) যখন (তার কাছে কোনো কথা বা কোনো জিনিস ইত্যাদি) আমানত (স্বরূপ) রাখা হয়, সে (আল্লাহকে ভয় না করে সহজেই সেটার) খেয়ানত করে বসে, (২) যখন কথা বলে, সে (আল্লাহকে ভয় না করে সহজেই সে ব্যাপারে) মিথ্যা বলে বসে, (৩) যখন ওয়াদা করে, সে (আল্লাহকে ভয় না করে সহজেই তা) ভঙ্গ করে ফেলে এবং যখন সে (কারোর সাথে) ঝগড়া-বিবাদ করে, সে (আল্লাহকে ভয় না করে সহজেই) মুখ-খারাপ করে’।  [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৪; সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫৮; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ২৫৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৬৮৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৩২; সুনানুস সুগরা, নাসায়ী, হাদিস ৫০২০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৬৮২৫; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৯/২৩০] 
 
ইমাম হাকেম তিরমিযী, ইমাম ত্বাবরাণী এবং ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ. নিজ নিজ সনদে হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- سيأتي على أمتي زمان تكثر فيه القراء ، وتقل الفقهاء ويقبض العلم ، ويكثر الهرج ” قالوا : وما الهرج يا رسول الله ؟ قال : ” القتل بينكم ، ثم يأتي بعد ذلك زمان يقرأ القرآن رجال لا يجاوز تراقيهم ، ثم يأتي من بعد ذلك زمان يجادل المنافق الكافر المشرك بالله المؤمن بمثل ما يقول “- اخرجه الحاكم فى المستدرك : ٤/ ٤٥٧ رقم ٨٤١٢ , كتاب الفتن والملاحم و قال: هذا حديث صحيح الإسناد ، ولم يخرجاه و وافقه الذهبى,  المعجم الأوسط للطبراني, رقم الحديث ٣٣٨٥; جامع بيان العلم وفضله لابن عبد البر: , رقم ١٠٤٣  ;  مجمع الزوائد – ١/١٢٩, الجامع الصغيرلالسيوطي: ٢ / ٥٧, هذا الحديث حسن ‘অতি শিঘ্রই আমার উম্মাতের উপর এমন জামানা আসবে, যখন (কুরআনের) পাঠক হবে প্রচুর, কিন্তু (কুরআনের গভীর জ্ঞনের ধারক) ফকিহ হবে অল্প, (আল্লাহ তাআলাে একে একে ফকিহ আলেমবৃন্দকে তাঁর কাছে উঠিয়ে নিবেন এবং এভাবেই) ইলম উঠে যাবে, (ফলে সর্বক্ষেত্রে জাহেল ও মুর্খ মানুষদের ঢল নামবে) এবং (এর ক্রমধারায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি হবে যে,) হারাজ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞেস করা হল: হারাজ কী -ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি ﷺ বললেন: (শেস জামানায়) তোমাদের (মুসলমানদের) মধ্যে (সংঘটিত) খুনাখুনি (-যা হবে একটি বিশেষ ফিতনা)। সেই জামানার পর আমার উম্মতের মধ্যে থেকে এমনসব ব্যাক্তিদের আবির্ভাব হবে, যারা কুরআন-তো পড়বে, কিন্তু (কুরআনের মর্মার্থ জিহবা থেকে) তাদের (গলার) হলকূমও অতিক্রম করবে না, (ক্বলব ও মস্তিষ্কে ঢোকা-তো পরের কথা)। সেই জামানার পর এমন হবে যে, মুনাফেক, কাফের ও মুশরেক ব্যাক্তি মুমিনের সাথে আল্লাহ’র ব্যাপারে বাক-বিতন্ডা করবে -এমন উদাহরণ টেনে, যা সে বলে থাকে[মুসতাদরাকে হাকীম- ৪/৫০৪, হাদিস ৮৪১২; আল-মু’জামুল আউসাত, তাবরাণী, হাদিস ৩২৭৭; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১০৪৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১/১২৯; জামেউস সাগীর, সুয়ূতী- ২/৫৭]
 
# হযরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-  سيهلك من أمتي أهل الكتاب وأهل اللبن ” ، قال عقبة : ما أهل الكتاب يا رسول الله ؟ قال : ” قوم يتعلمون كتاب الله يجادلون به الذين آمنوا ” قال : فقلت : ما أهل اللبن يا رسول الله ؟ ” قال : ” قوم يتبعون الشهوات ويضيعون الصلوات ” . اخرجه الحاكم فى المستدرك: ٦/٣٧٤, و قال: هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه و وافقه الذهبى; و ابن جرير الطبري فى تفسيره: تحت سورة الغفير -٦٩ , و الرويانى فى المسند: ١/١٨٣ رقم ٢٣٩, ٢٤٠ – ‘অতি শিঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে কিতাবধারী ও দুধধারী’রা বরবাদ হয়ে যাবে। হযরত উকবা রা. জিজ্ঞেস করলেন: ‘কিতাবধারী কে -ইয়া রাসুলাল্লাহ’? তিনি ﷺ বললেন: ‘ওই সকল (মুনাফেক) লোক, যারা আল্লাহ’র কিতাব (আল-কুরআন)-কে শিখে নিবে এবং তা দিয়ে মুমিনদের সাথে বাকবিতন্ডা/ঝগড়াবিবাদ করবে’। হযরত উকবা রা. বলেন: ‘আমি  জিজ্ঞেস করলাম: দুধধারী কি -ইয়া রাসুলাল্লাহ’? তিনি ﷺ বললেন: ‘ওইসমস্ত লোক যারা কুপ্রবৃত্তির পিছে পিছে চলবে এবং নামাযকে নষ্ট ও বরবাদ করে ফেলবে’। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৬/৩৭৪; মুসনাদে রুইয়ানী– ১/১৮৩, হাদিস ২৩৯, ২৪০; তাফসীরে তাবারী, ইবনে জারীর- ১৮/২৯৬]

ফায়দা: দুধধারী বলতে সম্ভবতঃ আরবের গ্রাম্য-বুদ্দু লোকরা উদ্দেশ্য, যারা উট/দুম্বা/বকরী/ভেড়ার দুধ দিয়ে প্রধানত জীবন যাপন করে, তাদের হাতে একসময় অঢেল সম্পদ চলে আসবে এবং তারা কু-প্রবৃত্তির পিছনে চলবে ও নামাযকে নষ্ট করে ফেলবে। ইমাম ত্বাবরাণী রহ. হযরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণনা করেছে যে,  রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أتخوف على أمتي اثنتين: يتبعون الأرياف والشهوات، ويتركون الصلاة والقرآن؛ يتعلمه المنافقون يجادلون به أهل العلم. اخرجه طبراني ,كنز العمال: ١١/١١٦ رقم ٣٠٨٤٢ -‘আমি আমার উম্মতের উপর দুটি বিষয় নিয়ে ভয় করি: (১) তারা গ্রামকে শহরে রুপান্তর (করার পিছনে পড়ে যাবে) ও নফসানী-খাহেশাতের অনুগত্য করবে এবং নামায ও কুরআন’কে ছেড়ে দিবে। (তখন মোক্ষম সুযোগ দেখে মুসলমানদের মধ্যে ফিতনা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে) মুনাফেকরা কুরআনের ইলম শিখে নিবে (এবং) তা দিয়ে আহলে-ইলম (হক্কানী আলেম)গণের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে’। [ত্বাবরাণী: কাঞ্জুল উম্মাল– ৫/৬৪৫, হাদিস ৩০৮৪৬]

এখানে গ্রামকে শহরে রুপান্তর দ্বারা সম্ভবতঃ আরব বিশ্বে এক সময়কার গ্রাম্য লোকগুলির হাতে অঢেল সম্পদ হয়ে যাওয়া এবং গ্রামকে শহরে পরিণত করার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যেটাকে অন্য এক হাদিসে শেষ জামানা বোঝারে একটি বিশেষ আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন: মুসনাদে আহমদ’ -এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার অংশ বিশেষ এই-  إذا رأيتَ الأَمَةُ ولدتْ رَبَّتَها أو رَبَّها ورأيتَ أصحابَ الشاءِ تَطاولوا بالبنيانِ ورأيتَ الحُفاةَ الجِياعَ العالةَ كانوا رؤوسَ الناسِ فذلك من مَعَالمِ الساعةِ وأَشْراطِها قال : يا رسولَ اللهِ ومن أصحابُ الشاءِ والحُفاةُ الجِياعُ العالةُ قال : العَرَبُ . رواه الإمام أحمد:١/٣١٩ رقم ٢٩٢٦, قال شعيب الأرنؤوط : حديث حسن – ‘তুমি যখন দেখবে যে, মা তার মনিবা বা মনিবকে প্রসব করেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, (একসময়) মেষপালের রাখাল (ছিল -এমন গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি (অপরাপর) লোকজনের সর্দার/মনিব/নেতা/মাতব্বর হয়ে গেছে, তখন (বুঝবে যে) ওটা কেয়ামতের একটি সংকেত এবং ওর লক্ষনসমূহের একটি। লোকটি বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এই) মেষপালের রাখাল ও পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি কারা? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন: আরব (লোকরা)’। [মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ, ক্বারী ১/১২৮] আজ হাতে পয়সা হওয়ার পর দুবাই, কাতার, কুয়েত প্রভৃতি দেশগুলিতে যে ভয়াবহ বদদ্বীনী ও অশ্লীলতা কোমড় গেড়ে বসেছে, মনে হয় সেই বিষয়গুলোর দিকেই উপরোক্ত হাদিসে ইশারা করা হয়েছে। الله اعلم بالصواب

# উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أَكْثَرُ مُنَافِقِي أُمَّتِي قُرَّاؤُهَا. اخرجه الإمام عبد الله بن المبارك في الزهد، و الإمام أحمد في المسند: و العقيلي في الضعفاء : ١/٢٧٤ ، و حسن إسناده البوصيري في إتحاف الخيرة المهرة، و صححه الألباني في الصحيحة: رقم ٧٥٠ و أحمد شاكر و شعيب الأرنؤوط بمجموع طرقه  – “আমার উম্মতের মধ্যে বেশিরভাগ মুনাফিক (হবে) তাদের কুরআন-পাঠকরাই”। [মুসনাদে আহমদ- ২/১৭৫, ৪/১৫১, আত-তারিখুল কাবীর, ইমাম বুখারী- ১/২৫৭, ১/৮২২; আয-যুহদ, ইমাম ইবনে মুবারক, হাদিস ৪৫১; সিফাতুন নিফাক, ফিরইয়াবী, হাদিস ৩২; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ১/৫৬] 

ফায়দা: এরা সমাজে মুসলীম বলে পরিচিত হবে, কুরআন তিলাওয়াত করবে, কিন্তু বাস্তবে হবে মুনাফেক। এরা হবে রিয়াকার (লোকদেখানো আমলকারী)। এরা কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন যে সব বিষয়ে ইমানদার হিসেবে প্রমাণ দিতে বলে, কুরআন পরিবার সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক জীবনে যা কিছু কায়েম করার জন্য নাজিল হয়েছে, এরা তার সাথে মন থেকে একমত হতে পারবে না। ফলে তারা আল্লাহ তাআলা’র নাজিলকৃত কুরআনের পাঠক হবে বটে, কিন্তু সেই কুরআনের বাস্তবায়ন চাবে না। উপরন্তু তারা -কুরআনের শিক্ষা এবং কুরআনের বাস্তবায়নের জন্য যে সকল পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন -সেগুলোতে সাহায্য সহায়তা করতে চাইবে না, প্রয়োজনে বিভিন্ন ভাবে ছলে কৌশলে বাঁধার সৃষ্টি করবে বা বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। উপরের হাদিসে দেখেছেন যে, তাতে বলা হয়েছে, মুনাফেকরা কুরআন শিখবে মুমিনদের সাথে তর্কবিতর্ক করার জন্য। মুমিনরা-তো সর্বদায়-ই কুরআন শিক্ষা ও তা প্রচার প্রসার এবং তা পূূর্ণরূপে বাস্তবায়নের পক্ষে থাকবে, আর এই মুনাফিকরা সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারবে না বলেই তো তারা মুমিনদেরকে তর্কে হারাতে চাইবে, যাতে মুমিনদের কুরআন প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপগুলো বাঁধার মুখে পড়ে বা ভেসতে যায়।  الله اعلم بالصواب
 
# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন-  يأتي على الناس زمان يجتمعون في المساجد ليس فيهم مؤمن . أخرجه الحاكم في المستدرك: ٤/٤٨٩ و قال هذا حديث صحيح الإسناد على شرط الشيخين ولم يخرجاه . و وافقه الذهبي ; و الطحاوي في “مشكل الآثار”- ٥٩٠ وإسناده صحيح , و ابن أبي شيبة في مصنفه : ٦/١٦٣ , إسناده موقوف وهو صحيح ورجاله كلهم ثقات , ابن عدي في “الكامل: ٢/٢١٤, والفريابي في “صفة المنافق”: ١٠٨, ١٠٩, ١١٠, الخلال في السُّنَّة: ٥/٥٩, رقم ١٦٠٩  – ‘মানুষের উপর এমন জামানা আসবে, যখন (লোকজন) মসজিদে একত্রিত হবে, (কিন্তু) তাদের মধ্যে কোনো মু’মিন ব্যাক্তি থাকবে না, (থাকবে মুনাফেক ও ইমান নষ্ট হওয়া কাফের)। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৮৯; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী- ৫৯০; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৬/১৬৩; আল-কামেল, ইবনুল আদী- ২/২১৪; সিফাতুল মুনাফেক, ফারইয়াবী- ১০৮, ১০৯, ১১০; আস-সুন্নাহ, ইমাম খাল্লাল- ৫/৫৯, আছার ১৬০৯]

ফায়দা: এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, ভবিষ্যৎবাণীর মতো একটি নাযুক গায়েবী বিষয়কে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. অবশ্যই রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে শুনেই তারপর তা বর্ণনা করেছেন।

আমার মতে, এই রেওয়ায়েতের ইশারা আমাদের এই শেষ জামানা। যেমন, শাদ্দাদ বিন মা’কিল আল-আসাদী রহ. থেকে এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে বলতে শুনেছি- إن أول ما تفقدون من دينكم الأمانة وان آخر ما يبقى من دينكم الصلاة وليصلين القوم الذي لا دين لهم . اخرجه عبد الرزاق في المصنف : ٣/٣٦٣ رقم ٥٩٨١ ; رواه الطبراني ايضا في الكبير : ٩/١٤١ ; قال الهيثمي : ورجال الطبراني رجال الصحيح؛ غير شداد بن معقل ، وهو ثقة كما في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة : ٢/٧٨ ;و ابن ابي شيبة في المصنف : ٧/٥٠٥ رقم ٣٧٥٨٥ ; و ابو الاباس المستغفري في فضائل القرأن : رقم ٢٨٦ – ‘নিশ্চই (তোমাদের উপর্যুপরি খেয়ানতের কারণে) তোমাদের দ্বীন (ইসলাম) থেকে প্রথমে যে জিনিসটি হারিয়ে যাবে (সেটা হল) ‘আমানত’। আর নিশ্চই তোমাদের দ্বীন (ইসলাম)-এর মধ্যে থেকে যা সব শেষে অবশিষ্ট থেকে যাবে, (সেটা হল) নামায। একটি গোষ্ঠির লোকরা নামায পড়বে, (দ্বীন ইসলাম) যাদের দ্বীন হবে না, (তাদের দ্বীন হবে অন্য কোনো বিশ্বাস বা মতবাদ)’। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ৩/৩৬৩ হাদিস ৫৯৮১; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৯/১৪১; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৭/৫০৫ হাদিস ৩৭৫৮৫; ফাজায়েলুল কুরআন, ইমাম মুসতাগফিরী, হাদিস ২৮৬]

এখানে- إن أول ما تفقدون من دينكم الأمانة – ‘নিশ্চই (তোমাদের উপর্যুপরি খেয়ানতের কারণে) তোমাদের দ্বীন (ইসলাম) থেকে প্রথমে যে জিনিসটি হারিয়ে যাবে (সেটা হল) ‘আমানত’ – বলতে আমার মতে আমাদের এই শেষ জামানাই উদ্দেশ্য। যেমন, আমরা ‘নবীজীর ভবিষ্যৎবাণী’ সিরিজের ২য় পৃষ্ঠার প্রথমেই এই হাদিস উল্লেখ করে এসেছি যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কেয়ামত কবে হবে? তিনি এরশাদ করেছিলেন- فَإِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ – ‘যখন আল-আমানত’কে নষ্ট-বরবাদ করে ফেলা হবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো’। সে (আবার) জিজ্ঞেস করলো: ‘সেটা কিভাবে নষ্ট-বরবাদ করা হবে’? তিনি বললেন: إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ – ‘যখন (পদ ও পদাধিকার সম্পর্কিত) কোনো বিষয়কে (শরয়ী দৃষ্টিতে) তার গায়রে-আহাল ব্যাক্তির করায়ত্বে সোপর্দ করা হতে থাকবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৫৯] আমরা সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি যে, আমানত সম্পর্কিত বুখারীর এই হাদিসটি মূলত: আমাদের এই শেষ জামানার দিকে ইশারা করেই এরশাদ করা হয়েছে। (সেখানে আলোচনাটি আবার পড়ে দেখুন) 

এই রেওয়ায়েতে হাদিসে আরো ইংগীত করা হয়েছে যে, ওই একই জামানায় উম্মাহ’র মধ্যে এমন গোষ্ঠিও থাকবে, যারা নামায পড়বে অথচ দ্বীন ইসলাম তাদের মূল দ্বীন হবে না। এর অর্থ হল, তারা দ্বীন ইসলামের এমন জরুরী (অবিচ্ছেদ্দ ও অত্যাবশ্যক) অনেক কিছুই তাদের মৌলিক আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে বাদ দিয়ে চলবে, যার কারণে তাদের ইমান নষ্ট হয়ে দ্বীন ইসলাম থেকে বেড় হয়ে মুরতাদ হয়ে যাবে, অথচ তারা দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে জাহেল মুর্খ হওয়ার কারণে এ খবরও থাকবেনা যে তাদের ইমান নেই, এবং তারা বে-ইমান মুনাফেক হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে মুমিন-মুসলীম মনে করবে, এমন কি নামাযও পড়বে। অথচ ইমান ছাড়া দ্বীন নেই এবং দ্বীন ছাড়া নামাযেরও কোনো মূল্য নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে আরেক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে,  তিনি বলেন- يأتي على الناس زمان يجتمعون ويصلون في المساجد وليس فيهم مؤمن . أخرجه ابن أبي شيبة : ٦/١٦٣ , إسناده موقوف وهو صحيح ورجاله كلهم ثقات– ‘মানুষের উপর এমন জামানা আসবে, যখন লোকজন মসজিদে একত্রিত হবে নামায পড়বে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো মু’মিন থাকবে না। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৬/১৬৩]

এ ধরনের বেশি কিছু হাদিস বিভিন্ন আলফাজ সহকারে বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: ইমাম দাইলামী রহ. বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন- سيأتي على الناس زمان يصلي في المسجد منهم ألف رجل أو زيادة لا يكون فيهم مؤمن. رواه الديلمي في الفردوس بمأثور الخطاب: ١/٢٣٣ رقم ٣٤٤٧ -‘অতি শিঘ্রই মানুষের উপর এমন জামানা আসবে, যখন মসজিদের মধ্যে (জামাআতে) নামায হবে, যাদের মধ্যে এক-হাজার বা তার বেশি পুরুষ (লোক জামাআতে শরীক) থাকবে, (কিন্তু) তাদের মধ্যে কোনো মু’মিন ব্যাক্তি থাকবে না’। [আল-ফিরদাউস, দাইলামী- ১/২৩৩, আছার ৩৪৪৭] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে,  তিনি বলেন-  إن من اقتراب الساعة أن يصلي خمسون نفسا لا تقبل لأحدهم صلاة‏ .‏ رواه  ‏أبو الشيخ في كتاب الفتن كذا فى كنز العمال : ٣٨٤٢٧ , بإسناد ضعيف كذا فى التيسير بشرح الجامع الصغير لالمناوي: ١/٧٠٣  – ‘কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে (এমনও হবে যে, মসজিদে গিয়ে জামাআতে) পঞ্চাশজন মানুষ নামায পড়বে, কিন্তু তাদের কারোর নামাযই কবুল হবে না’। [আবুশ শায়েখ: কাঞ্জুল উম্মাল, আছার ৩৮৪৬৭; আত-তাইসির, মুনাবী-  ১/১৭২] ইমাম আবু শুআইব রহ. বর্ণনা করেছেন –  يأتي على الناس زمان يحجون ويصلون ويصومون وما فيهم مؤمن . رواه أبو شعيب الحراني في “فوائده”، وإسناده لا بأس به. كذا فى إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة لحمود بن عبد الله التويجري : ٢/٦٤ ‘মানুষের উপর এমন জামানা আসবে, যখন (মুসলমান হিসেবে পরিচিত লোকজন) হজ্জ করবে, নামায পড়বে, রোযা রাখবে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো মু’মিন ব্যাক্তি থাকবে না’। [আল-ফাওয়ায়িদ, ইমাম আবু শুআইব: ইতহাফুল জামাআহ বিমা যাআ ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম ওয়া আশরাতিস সাআহ- ২/৬৪] আমার মতে, মুসলমান হিসেবে দাবীদার এইসব বে-দ্বীন ও বে-ইমান নামায পড়ুয়ারা হল ৭২ ফিরকার মধ্যে সবচেয়ে বড় ফেরকাটি, যার আলোচনা আমরা উপরে করে এসেছি; তথা সেকুলারিজস (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ) -এ বিশ্বাসী ফেরকাটি -চাই ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) আঙ্গিকেই বিশ্বাস করুক কিংবা সোসালিজম (সমাজতন্ত্র)-এর আঙ্গিকেসেকুলারিজস (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র), সোসালিজম (সমাজতন্ত্র), কমিউনিজম ইত্যাদির কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী হলে কারো ইমান থাকে ?! এ ধরনের লোক দিয়েই-তো এই শেষ জামানার মসজিদগুলো ভরা থাকে। আর মুসলীম উম্মাহ থেকে ‍বেড় হওয়া ফিরকাহ যেমন: রাফেজী শিয়া, আলিয়াতী শিয়া, কাদিয়ানী, কিংবা মানুষকে সিজদাহকারী কাফের নামাযীদের যোগ করা হলে-তো এই গোষ্ঠিটির পরিধি আরো বেড়ে যায়। الله اعلم بالصواب

# আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করেছেন- لا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا . رواه الداني في السنن الواردة في الفتن : رقم ٤٠٦ و قال ابو عبد الله العافعي: حسن : ص ٤٣٧; و ابو نعيم في صفة النفاق ونعت المنافقين : ١/١٣٢ رقم ١٠٦ ; ; البزار في البحر الزخار: رقم ١٤٣٤ و الطبراني في المعجم الكبير: رقم ٩٧٧١ عن عبد الله بن عمر وفي المعجم الأوسط : رقم ٧٧١٥ عن نفيع بن الحارث; ابن أبي الدنيا في المتمنين : رقم ١٤٨  ‘কেয়ামত কায়েম হবেনা, যাবৎ না সকল কবিলাহ’র প্রধানরা হয় তাদের (মধ্যকার) মুনাফেকরা’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০৬; সিফাতুন নিফাক, ইমাম আবু নুআইম- ১/১৩২ হাদিস ১০৬; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৯৭৭১; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৭৭১৫]

ফায়দা: আরবে সেকালে ‘কবিলাহ’ বলতে ছোট বা বড় কোনো গোত্র কিংবা কোনো এলাকার জনবসতিকে উদ্দেশ্য করা হত। এসব কবিলাহ’র নেতা, মাতব্বর, মুরুব্বিরাও থাকতো। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- خَرِبَتِ الْعَرَبُ وَهِيَ عَامِرَةٌ , قَالُوا : وَلِمَ ذَلِكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ ؟ قَالَ : ” إِذَا ظَهَرَ فُجَّارُهَا عَلَى أَبْرَارِهَا , وَسَادَ الْقَبِيلَ الْعَظِيمَ مُنَافِقُوهُ . رواه الداني في السنن الواردة , باب ما جاء من أشراط الساعة رفع الأشرار ووضع الأخيار , رقم ٤٠٢, بسند فيه مجهولان ‘(এমন এক জামানা আসবে যখন) আরবরা (ইমানে আমলে) ধ্বংস-বরবাদ হয়ে যাবে, আর তা হবে শাসক/সরকার (-এর দ্বারা)। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: ‘হে আমিরুল মু’মিনিন! সেটা কেনো হবে’? তিনি বললেন: ‘যখন (আরব জাহানে) তাদের ভাল/নেককার’দের উপরে ফুজ্জার (পাপে অভ্যস্ত লোক)রা (প্রবল আকারে সমাজে) প্রকাশ পাবে, (এবং) বিরাট গোষ্ঠির প্রধান হবে তাদের মুনাফেকদের কেউ’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০২]

আরব বিশ্বে আজ এসব গোত্র প্রথা উঠে গেছে। আজ এই আধুনিক যুগে আরব-অনারব দেশগুলি তাদের নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন এলাকার জনবসতিকে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করে থাকে। যেমন, বাংলাদেশের মানুষ জনবসতির প্রকৃতি ও পরিধির উপর ভিত্তি করে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, সিটি করপোরেশন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করে থাকে। যেমন, ভারতে এজাতীয় এলাকা করণের পাশাপাশি রাজ্য (স্টেট) এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নামেও এলাকাকরণ করা রয়েছে। এজন্য হাদিসের ‘কবিলাহ’ শব্দটি দেখে মস্তিষ্কে শুধুমাত্র আরবের গোত্র বা জনবসতি চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, কারণ হাদিসটিতে আরবের তৎকালীন প্রচলিত পরিভাষা ‘কবিলাহ’ শব্দটি ব্যবহার করে মূল বিষয়বস্তুটিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।আমার মতে, এই ভবিষ্যৎবাণী আমাদের এই শেষ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে এবং আজ ২০১৯ ইং সালের রমযানে আমি যখন এই অংশটি আপডেট করছি, তখন পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলে আপনি এমন কোনো গ্রাম বা শহর এলাকা কিংবা কোনো দেশ পাবেন না, যার দায়িত্বশীল-প্রধান মুসলীম নামধারী কেউ অথচ সে মুনাফেক নয়।  আরব-অনারব যে কোনো একটি দেশের যে কোনো একটি অঞ্চলের প্রধানকে দেখান, যে মুনাফেক নয়। মুনাফেক মানে, যে দাবী করে যে সে মুসলীম, অথচ বাস্তবে সে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলাম ও শরীয়ত কায়েমে বিশ্বাসী নয়, চায়ও না যে তা মুসলমানদের ব্যাক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক-জীবন এবং রাষ্ট্রীয় ও বহিঃরাষ্ট্রীয় জীবনে বায়েম হোক। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- إن من أشراط الساعة أن يوضع الأخيار ويرفع الأشرار ويسود كل قبيلة منافقوها . رواه الداني في السنن الواردة , باب ما جاء من أشراط الساعة رفع الأشرار ووضع الأخيار , رقم ٤٠٣, قال ابو عبد الله العافعي: حسن : ص ١٣٧   ‘কেয়ামতের লক্ষন সমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে, ভাল( মানুষ ও বিষয়)গুলিকে (কৌশলে) নষ্ট/বরবাদ করে ফেলা হবে এবং খারাপ-মন্দ( মানুষ ও বিষয়)গুলিকে উচ্চে তুলে ধরা হবে এবং সকল কবিলাহ’র প্রধান হবে তাদের মুনাফেকরাই ’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০৩]

যেমন জনতা, তেমন তাদের প্রধানরা; সব মুনাফেক ও খবিস কিসিমের মানুষজন দিয়ে পৃথিবীটা ভরা, যার মাঝে সামান্য কিছু মুমিন নর-নারী তাদের মাঝে ভয় নিয়ে চলাচল করে থাকে। এমনটাই হবে ইমাম মাহদী রা. আসার আগে আগে সৃষ্ট পৃথিবীর মানুষজনের অবস্থা। ইমাম মাহদী রা.-এর আগমন অতীব নিকটে চলে এসেছে। الله اعلم بالصواب

# হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি- يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَسْتَخْفِي الْمُؤْمِنُ فِيهِمْ ، كَمَا يَسْتَخْفِي الْمُنَافِقُ فِيكُمُ الْيَوْمَ . اخرجه ابو نعيم فى صفة النفاق ونعت المنافقين, رقم الحديث ١٠٨; الداني في السنن الواردة: رقم ٤٠١; أخرجه أيضًا الطبرانى فى الشاميين: ١/١٤٨ رقم ٢٣٨ ، والديلمى ٥/٤٤١ رقم ٨٦٧٩ . ; و وقره جلال الدين السيوطي في جامع الأحاديث: ٢٣/٤٦٢ رقم ٢٦٤٣٤ ; و المتقي في كنز العمال: ١١/٣١١١١– ‘মানুষের উপর এমন একটি জামানা আসবে, যখন মু’মিন ব্যাক্তি তাদের মাঝে এমনভাবে লুকিয়ে চলতে চাইবে, যেভাবে আজ মুনাফেক ব্যাক্তি তোমাদের মাঝে (নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে) লুকিয়ে চলতে চায়’। [সিফাতুন নিফাক, আবু নুআইম, হাদিস ১০৮; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০১; মুসনাদে শামেঈন, ত্বাবরাণী- ১/১৪৮ হাদিস ২৩৮; মুসনাদে দাইলামী- ৫/৪৪১ হাদিস ৮৬৭৯; জামেউল হাদিস, সুয়ূতী- ২৩/৪৬২ হাদিস ২৬৪৩৪; কানজুল উম্মাল- ১১/৪১১১১]

ফায়দা: এর কারণ হল, সেই জামানায় সমাজে সমাজে কাফের ও মুনাফেকদের রাজত্ব, দাপট, ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যাপক আকার ধারন করবে এবং তারা ইসলাম বিরোধী যে সমাজ ও পরিবেশ তৈরী করবে তাতে মু’মিনদের জন্য ইমানী পরিচয় নিয়ে সমাজে চলাফেরা করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। হাসসান বিন আতিয়াহ’র সূত্রে হাদিসটি এভাবে এসেছে: سَيَظْهَرُ شِرَارُ أُمَّتِي عَلَى خِيَارِهِمْ حَتَّى يَسْتَخْفِيَ فِيهِمُ الْمُؤْمِنُ كَمَا يَسْتَخْفِيَ فِينَا الْمُنَافِقُ . رواه الداني في السنن الواردة: رقم ٤٠١ – শিঘ্রই আমার উম্মতের নিকৃষ্টরা তাদের উৎকৃষ্টদের উপরে প্রাধান্য বিস্তার করে নিবে। এমনকি তাদের মাঝে মু’মিন ব্যাক্তি এমনভাবে লুকিয়ে চলতে চাইবে, যেভাবে (আজ) আমাদের মাঝে মুনাফেক ব্যাক্তি (নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে) লুকিয়ে চলতে চায়’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০১] এখানে আমাদের এই শেষ জামানার মুমিনদের কথা বলা হচ্ছে।

কারণ, প্রথম শ্রেণির মুমিন পরিচয় দিতে হলে-তো শরয়ী চাহিদা ও শক্তি-সামর্থ অনুপাতে তাকে হাত/ক্ষমতা দিয়ে মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)কে পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে, কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণির মুমিন পরিচয় দিতে হলে-তো শরয়ী চাহিদা ও শক্তি-সামর্থ অনুপাতে তাকে কমপক্ষে মুখ দিয়ে সমাজের মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)কে পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সে সময় পৃথিবীতে সমাজে সমাজে কাফের-মুনাফেকদের সংখ্যা ও প্রভাব প্রতিপত্তির তুলনায় মুমিনদের সংখ্যা ও প্রভাব প্রতিপত্তি এতটাই কম থাকবে যে, তখন সমাজের মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)কে পরিবর্তনের জন্য হাত বা মুখ ব্যবহার করাটা মুমিনের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য হুমকী হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে মুমিনদের বেশিরভাগকেই তৃতীয় শ্রেণির মুমিনের মতো সমাজের মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)র প্রতি অন্তরে শুধু ঘৃনাবোধ ও অন্তর্জ্বালা নিয়েই থাকতে হবে, পরিবর্তন করার মতো কোনো পথ তারা দেখবে না। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি- حَدَّثَنَا أَزْهَرُ بْنُ مَرْوَانَ الرَّقَاشِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَشْرَسُ أَبُو شَيْبَانَ ، عَنْ عَطَاءٍ الْخُرَاسَانِيِّ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : ” يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَذُوبُ فِيهِ قَلْبُ الْمُؤْمِنِ ، كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ ” ، قِيلَ : مِمَّ ذَاكَ ؟ ، قَالَ : ” مِمَّا يَرَى مِنَ الْمُنْكَرِ لا يَسْتَطِيعُ أَنْ يُغَيِّرَهُ . أخرجه ابن أبي الدنيا في الأمر بالمعروف و النهي عن المنكر : ١/٢١٩ رقم : ٢٧, ١٠٤ ; وفي العقوبات : رقم ٤٦ ; لهذا الحديث علتان : فيه عطاء الخرساني لم يسمع من ابن عباس , و أشرس أبو شيبان شك في هذا الحديث ولم يجزم برفعه حيث قال أحسبه عن ابن عباس عن رسول الله صلي الله عليه وسلم ; أخرجه ابن وضاح ايضا في البدع : رقم ٢٧٥ – ‘মানুষের উপর এমন এক জামানা আসবে, যে জামানায় মুমিনদের অন্তর এমনভাবে গলে যাবে, যেভাবে লবন পানিতে গলে যায়’। জিজ্ঞেস করা হল: ‘এমনটা কেনো হবে – ইয়া রাসুলাল্লাহ’ ? তিনি বললেন: ‘এজন্য হবে যে, তারা (তখনকার সমাজে) মুনকার (শরীয়ত বিরোধি পাপগুলো) দেখতে পাবে, কিন্তু তা পরিবর্তন করতে সমর্থ হবে না’। [আল-উকুবাত, বনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ৪৬;  আমর বিল মা’রুফ ওয়ান নাহি আনিল মুনকার, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ২৭, ১০৪; আল-বাদউ, ইবনে ওযাইহ, হাদিস ২৭৫; মুসনাদে ফিরদাউস, দাইলামী- ৫/৪৪০ হাদিস ৮৬৭৭] এটা আমাদের এই শেষ জামানার জামানার মুমিনদের অবম্থার দিকে ইশারা করা হচ্ছে। الله اعلم بالصواب