ধ্বনীর ধ্বনমালে যাকাত ছাড়াও অন্য হক্ব রয়েছে হক্বদারের জন্য – পর্ব ১

স্বচ্ছল, মালদার ও ধ্বনী’র ধ্বনমালে ফরয যাকাত ছাড়াও  অন্য হক্ব রয়েছে হক্বদারের জন্য – পর্ব ১

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

[উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত আয়াত, হাদিস ও ইবারত সমূহ এবং এসবের অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]

 

আমরা যখন বলছি যে, ‘স্বচ্ছল ও ধ্বনী মালদারের ধ্বনসম্পদের মধ্যে যাকাত ছাড়াও হক্বদারদের আরো অনেক প্রকারের হক্ব (অধিকার) রয়েছে’, এর অর্থ আমরা যা বুঝাতে চাচ্ছি সেটা হল-

(১) কোনো মুসলামন যাকাতের নিসাব পরিমান ধ্বনসম্পদের মালিক হলে ও সে তার যাকাত আদায় করে দেয়ার পর তার জন্য এধারনার বশবর্তী হয়ে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই যে, সে যাকাত আদায় করে দিয়েছে বলে তার আর কোনো অর্থনৈকিত দায়দায়িত্ব নেই কিংবা তার ধ্বনসম্পদের উপরে অন্য আর কারোর কোনো হক্ব বাকী নেই। বরং, ইসলামী শরীয়ত তার কাছ থেকে যাকাতের সাথে সাথে আরো বহু প্রকারের হক্ব আদায়ের দাবী জানায়, যা স্থান কাল পাত্র ভেদে আদায় করা তার উপরে অপরিহার্য হয়ে যায়।   

(২) কোনো মুসলামনের কাছে যাকাতের নিসাব পরিমান ধ্বনসম্পদ না থাকলে তার এধারনার বশবর্তী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই যে, তার যাকাত আদায় করতে হচ্ছে বলে তার আর কোনো অর্থনৈকিত দায়দায়িত্ব নেই কিংবা তার ধ্বনসম্পদের উপরে অন্য কারোর কোনো হক্ব নেই। বরং, ইসলামী শরীয়ত তার কাছ থেকে যাকাত দাবী না করলেও তার যতটুকু আছে তার মধ্য থেকেই বহু প্রকারের হক্ব আদায়ের দাবী জানায়, যা স্থান কাল পাত্র ভেদে আদায় করা তার উপরে অপরিহার্য হয়ে যায়।  

কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে যথাসম্ভব বিস্তারিত দালিলিক আলোচনা পেশ করার চেষ্টা করবো। কারণ, মুসলীম সমাজ এই শেষ জামানায় এই ব্যাপারে যে পরিমাণ মুর্খতা অজ্ঞতা ও অবহেলার পরিচয় দিয়েছে এবং এর কারণে ইসলাম ও মুসলীম জাহানের যে ব্যাপক পরিমান ক্ষতি সাধিত হয়েছে – তা এক কথায় অবর্ণনীয়। 

স্বচ্ছল ও ধ্বনীদের ধ্বনমালের মধ্যে গরিব অভাবী বা অন্য হক্বদারদের জন্য যাকাত ছাড়াও আরো বহু হক্ব সংরক্ষিত থাকার দলিল

১ম দলিল

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
 “(ইহুদী খৃষ্টানদের মতো ইমান বিহীনভাবে) তোমরা (নিছক) পূর্ব ও পশ্চিম দিকে (কিবলা মনে করে) তোমাদের মুখকে ফিরাবে -(সেটা মোটেও আমার দৃষ্টিতে) নেক কাজ নয়। বরং নেক কাজ হল (তারটা) যে ব্যাক্তি ইমান আনে আল্লাহ’র প্রতি, আখেরাতের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আল-কিতাবের প্রতি ও নবীগণের প্রতি, এবং (এও যে, সে তার) ধ্বনমালের উপরে ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও (তা থেকে আল্লাহ’কে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের চাহিদা মতো) দান করে (তার) আত্বীয়-স্বজন’কে, ইয়াতীমকে, মিসকীনদেরকে, মুসাফির-পথিককে, (অভাবী) সওয়ালকারী (যাঞ্চাকারী)’দেরকে এবং গোলাম মুক্তকরণের কাজে, এবং (এও যে, সে) নামায কায়েম করে ও (নেসাবের মালিক হলে) যাকাত আদায় করে। আর প্রতিশ্রুতিদাতা’রা কথা রাখে যখন তারা প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সবরকারী’রা কষ্ট-ক্লেশ কালে ও দুর্দিনে। এই লোকগুলিই (হল তারা যারা তাদের ইমানের দাবীর সাথে কাজকে) সত্য করে দেখিয়েছে। আর এরাই হল (তারা যাদেরকে বলা যায়) মুত্তাকী (আল্লাহ-ভীরু)”। [সুরা বাকারাহ ১৭৭]

উপরের এই একই আয়াতে وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ – ((ধ্বনমালের উপরে ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও সে দান করে))বলেঅপরাপর বিভিন্ন প্রকারের দান-সদকা’র খাত দেখিয়ে দেয়ার পর সম্পূর্ণ আলাদা করে ফরয যাকাত-এর কথা বলা হয়েছে- وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ – ((নামায কায়েম করে ও (নেসাবের মালিক হলে) যাকাত আদায় করে)), যা পরিষ্কার প্রমাণ করে যে, এখানে বিষয় দুটো ভিন্ন ভিন্ন। আর এটাই এর প্রকৃষ্ট দলিল যে, স্বচ্ছল ধ্বনী মুসলমানের ধ্বনসম্পদের মধ্যে হক্বদারদের জন্য ফরয যাকাত ছাড়াও অপরাপর আরো বিভিন্ন প্রকারের হক্ব রয়েছে। [আল-জামে লি-আহকামিল কুরআন, ইমাম কুরতুবী- ২/৩২] 

ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,  রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন في المال حق سوى الزكاة  ، وتلا هذه الآية:ليس البر ” إلى آخر الآية، و ضعفه الألباني في ضعيف سنن الترمذي: رقم ١٠٣ ص ٧٤ – “(স্বচ্ছল/ধ্বনী ব্যাক্তির) ধ্বনমালের মধ্যে যাকাত ছাড়াও (অন্য আরো বিভিন্ন প্রকারের) হক্ব রয়েছে (হক্বদারদের জন্য) এবং তিঁনি (একথার সপক্ষে) এই আয়াতটি لَّيْسَ الْبِرَّ -এর শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত করেন”। [জামেউল বয়ান, ইমাম তাবারী- ৩/৩৪২ বর্ণনা নং ২৫৩০;  সুনানে দারেমী– ১/৪৭১ হাদিস ১৬৩৭; সুনানে তিরমিয়ী- ১/১২৮ হাদিস ৬৫৯;  শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ২/২৭; সুনানে দারাকুতনী- ২/১২৫; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৪/৮৪ হাদিস ৭০৩৪] এই রেওয়ায়েতটি মুহাদ্দেসগণের মতে যদিও মুরসাল ও জয়ীফ, কিন্তু উপরোক্ত আয়াতটি এর বিষয়বস্তুকে আরো শক্তিশালী করে তোলে ও সমর্থন যোগায়। [ফিকহুয যাকাত, কারজাভী- ২/৯৬৯]

ইসমাঈল বিন সালেম রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন- قال: سمعت الشعبي و سئل: هل فى المال حق سوى الزكاة قال: نعم، وتلا هذه الآية: وَآتَى الْمالَ عَلى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبى وَالْيَتامى وَالْمَساكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقابِ إلى آخرها . رواه ابو عبيد في الناسخ والمنسوخ في القرآن : رقم ٤٨ ص ٣٦،  – “আমি (এক ব্যাক্তিকে) শা’বীর কাছে একথা জিজ্ঞেস করতে শুনেছি: ‘(স্বচ্ছল/ধ্বনী ব্যাক্তির) ধ্বনমালের মধ্যে যাকাত ছাড়াও (অন্য আরো) কি হক্ব রয়েছে (হক্বদারদের জন্য)’? তিনি বললেন: হ্যাঁ (রয়েছে)। তারপর তিঁনি এই আয়াতটিকে وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত করলেন[আন-নাসিখ ওয়াল মানসুখ, ইমাম আবু উবাইদ, আছার ৪৮; জামেউল বয়ান, ইমাম তাবারী– ৩/৩৪২ বর্ণনা নং ২৫২৫] 

উবাইদাহ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,  কাযাআহ রহ. করেন قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ : إِنَّ لِي مَالًا فَمَا تَأْمُرُنِي إِلَى مَنْ أَدْفَعُ زَكَاتَهُ ؟ قَالَ : ادْفَعْهَا إِلَى وَلِيِّ الْقَوْمِ ، يَعْنِي الْأُمَرَاءَ ، وَلَكِنْ فِي مَالِكَ حَقٌّ سِوَى ذَلِكَ يَا قَزَعَةُ . رواه ابن ابي شيبة في المصنف , كتاب الزكاة : ٤/٣١٠ رقم ١٠٦٢١، إسناده صحيح  – “আমি (আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা.কে জিজ্ঞেস করলাম: ‘আমার (কাছে যাকাত দেয়ার মতো যথেষ্ট মাত্রায়) ধ্বনসম্পদ রয়েছে। ‘আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? আমি সেই (ধ্বনমালের) যাকাত কার কাছে সোপর্দ করে দিবো’? তিনি বললেন: ‘তুমি জনগণের ওলী -তথা আমীরদের- (খলিফা/রাষ্ট্রপ্রধান/তাদের নিযুক্ত প্রশাসকদের) কাছে সোপর্দ করে দিও। তবে (জেনে রেখো) হে কাযাআহ! (স্বচ্ছল/ধ্বনী ব্যাক্তির) ধ্বনমালের মধ্যে যাকাত ছাড়াও (অন্য আরো বিভিন্ন প্রকারের) হক্ব রয়েছে (হক্বদারদের জন্য; সেগুলো আদায়ের ব্যাপারেও সচেষ্ট থেকো)”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৪/৩১০ আছার ১০৬২১; আন-নাসিখ ওয়াল মানসুখ, ইমাম আবু উবাইদ, আছার ৪৭]

ইব্রাহীম নখয়ী রহ. বলেছেন- كانوا يرون في أموالهم حقًّا سوى الزكاة . رواه ابن أبي شيبة في مصنفه : ٢/٤١١ بسند صحيح – “তাদের (তথা স্বচ্ছল/ধ্বনী ব্যাক্তিদের) ধ্বনমালের মধ্যে যাকাত ছাড়াও (অন্য আরো বিভিন্ন প্রকারের) হক্ব রয়েছে (হক্বদারদের জন্য) -মর্মে তাঁরা মনে করতেন[আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২/৪১১] মুযাহীম বিন যুফার রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন-  كُنْتُ جَالِسًا عِنْدَ عَطَاءٍ فَأَتَاهُ أَعْرَابِيٌّ فَسَأَلَهُ ، إِنَّ لِي إِبِلًا فَهَلْ عَلَيَّ فِيهَا حَقٌّ بَعْدَ الصَّدَقَةِ ؟ قَالَ : نَعَمْ . رواه ابن ابي شيبة في المصنف :  – “আমি (একদিন) আত্বা রহ. -এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় এক গ্রাম্য ব্যাক্তি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো: ‘(বর্তমানে) আমার (কাছে যাকাতযোগ্য পরিমান) উট রয়েছে। যাকাত আদায় করার পরও কি আমার উপরে এর মধ্যে (হক্বদারদের পাওনা আরো) কোনো হক্ব থাকবে’? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ”[আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৪/৩১০ আছার ১০৬২২; জামেউল বয়ান, ইমাম তাবারী- ৩/৩৪২ বর্ণনা নং ২৫২৮] হিশাম রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হাসান বসরী রহ. বলেন- فِي الْمَالِ حَقٌّ سِوَى الزَّكَاةِ  – “(স্বচ্ছল/ধ্বনী ব্যাক্তির) ধ্বনমালের মধ্যে যাকাত ছাড়াও (অন্য আরো বিভিন্ন প্রকারের) হক্ব রয়েছে (হক্বদারদের জন্য)”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৪/৩১০ আছার ১০৬২৪] আমের রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন- فِي الْمَالِ حَقٌّ سِوَى الزَّكَاةِ  – “(স্বচ্ছল/ধ্বনী ব্যাক্তির) ধ্বনমালের মধ্যে যাকাত ছাড়াও (অন্য আরো বিভিন্ন প্রকারের) হক্ব রয়েছে (হক্বদারদের জন্য)[আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৪/৩০৯ আছার ১০৬২০

আয়াতে – وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ – “((সে তার) ধ্বনমালের উপরে ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও (তা থেকে আল্লাহ’কে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের চাহিদা মতো) দান করে….))” – অর্থ হল, শরীয়ত যখন যেখানে যে অবস্থায় আল্লাহ’র পথে ব্যায় করার জন্য তার ধ্বনমালের উপরে শরয়ী দাবী জানায়, তখন সে তার ওই ধ্বনসম্পদের উপরে ভালবাসা/টান থাকা সত্বেও নিজের নফসের কথা না শুনে বরং তার জরুরী অংশটুকুর অতিরিক্ত ধ্বনসম্পদ থেকে আল্লাহ’র নির্দেশ মতো খাতে ব্যায় করাকে প্রাধান্য দেয় এবং ব্যায় করে দেয়।

আল-মুত্তালীব রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন–  قِيلَ: يا رَسُولَ اللَّهِ، ما ( آتى المالَ عَلى حُبِّهِ ) ؟ فَكُلُّنا نُحِبُّهُ! قالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: تُؤْتِيهِ حِينَ تُؤْتِيهِ ونَفْسُكَ حِينَ تُحَدِّثُكَ بِطُولِ العُمْرِ والفَقْرِ. أخْرَجَ البَيْهَقِيُّ في شُعَبِ الإيمانِ : ٣/٢٥٦ رقم ٣٤٧١ – “(একবার রাসুলুল্লাহ ﷺকে) জিজ্ঞেস করা হল: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! آتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ – (ধ্বনমালের উপরে ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও সে দান করে) -(এর) কী (অর্থ)? আমাদের সকলেই তো ধ্বনসম্পদ ভালবাসি। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘(এর অর্থ হল) তুমি তা (প্রয়োজনীয় খাতে) দিয়ে দিবে তখন, যখন তোমার (কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধ্বনসম্পদ থাকবে, আর এদিকে তোমার) নফস তোমাকে সুদীর্ঘ জীবন ও দরিদ্রতার কথা বলবে (আশা দেখাবে)”। [শুআবুল ইমান, ইমাম বাইহাকী- ৩/২৫৬ হাদিস ৩৪৭১; আদ-দুররুল মানসুর, ইমা সুয়ূতী- ১/৩১২; ফাতহুল কাদীর, শাওকানী- ১/১৪৩]

মুররাহ বিন সারাহীল রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ -এর ব্যাখ্যায় বলেন- يُؤْتِيهِ وَهُوَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ يَأْمَلُ الْعَيْشَ وَيَخْشَى الْفَقْرَ . و أخرجه الطبري في جامع البيان: ٣/٣٤٠ رقم ٢٥٢١ و ٢٥٢٢ و ٢٥٢٣ و قال احمد شاكر: وهذه الأسانيد الثلاثة : ٢٥٢١- ٢٥٢٣ لخبر موقوف اللفظ على ابن مسعود وهو في الحقيقة مرفوع حكمًا، و أخرجه ايضا الحاكم في المستدرك : ٢/٢٧٢ و قال : هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه و وافقه الذهبي  – “(এর অর্থ হল) সে দান করবে (এমন অবস্থায় যে), (শারীরীক ভাবে) সে সুস্থ-সবল (রয়েছে এবং সাথে সাথে তার মধ্যে প্রয়োজনে অতিরিক্ত সম্পদ থেকে শরীয়তের চাহিদা মতো আল্লাহ’র পথে খরচ করার ক্ষেত্রে মনে) প্রচন্ড কৃপনতা রয়েছে, (সুদীর্ঘ) জীবন (লাভের) মনকামনা রয়েছে এবং (খরচ করতে গেলে) তার (ধ্বনসম্পদ নিঃশ্বেস হয়ে গিয়ে) দরিদ্র হওয়ার ভয় রয়েছে (তার মনে)[জামেউল বয়ান, ইমাম তাবারী- ৩/৩৪০ আছার ২৫২১-২৫২৩; মুসতাদরাকে হাকিম- ২/২৭২; আদ-দুররুল মানসুর, ইমা সুয়ূতী- ১/১৭০] এই তাফসীরটি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা-এর বর্ণনা হলেও তিনি অবশ্যই এর ভাবার্থ রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে শুনেছিলেন। এর সমর্থন নিম্নের হাদিস থেকেও হয়। 

আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেনجَاءَ رَجُلٌ إلى النبيِّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ فَقالَ: يا رَسولَ اللَّهِ، أَيُّ الصَّدَقَةِ أَعْظَمُ أَجْرًا ؟ قالَ: أَنْ تَصَدَّقَ و أَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ تَخْشَى الفَقْرَ، وتَأْمُلُ الغِنَى ، و لَا تُمْهِلُ حتَّى إذَا بَلَغَتِ الحُلْقُومَ، قُلْتَ لِفُلَانٍ كَذَا، و لِفُلَانٍ كَذَا و قدْ كانَ لِفُلَانٍ . رواه البخاري في صحيحه، كتاب الزكاة، باب أي الصدقة أفضل وصدقة الشحيح الصحيح : رقم ١٤١٩، ومسلم في صحيحه، كتاب الزكاة، باب بيان أن أفضل الصدقة صدقة الصحيح الشحيح : رقم ١٠٣٢، و غيرهما ايضا – “(একবার) এক ব্যাক্তি নবী ﷺ-এর কাছে এসে বললো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আল্লাহ’র কাছে বান্দার) কোন্ সদকা (দান)টি অধিক পুরষ্কারযোগ্য’? তিনি বললেন: ‘তুমি সদকাহ করবে (এমন অবস্থায় যে, তখন) তুমি (শারীরীক ভাবে) সুস্থ-সবল (রয়েছো এবং সাথে সাথে তোমার মধ্যে প্রয়োজনে অতিরিক্ত সম্পদ থেকে শরীয়তের চাহিদা মতো আল্লাহ’র পথে খরচ করার ক্ষেত্রে মনে) প্রচন্ড কৃপনতা রয়েছো, (এবং খরচ করতে গেলে) তোমার (ধ্বনসম্পদ নিঃশ্বেস হয়ে গিয়ে) দরিদ্র হওয়ার ভয় রয়েছে এবং (উত্তরোত্তর) ধ্বনী হওয়ার লোভ রয়েছে তোমার। (সাবধান! সদকাহ করতে এত) বিলম্ব করো না (যে) অবশেষে (মৃত্যু তোমার) কন্ঠনালীতে এসে পৌছে যায়, (আর তখন) তুমি বলতে থাকো: ‘অমুকের জন্য এই পরিমান, তমুকের জন্য এই পরিমান। অথচ (ততক্ষনে তো শরীয়ত মোতাবেক) সেটা অমুকের হয়ে গেছে, (তখন আর বলে লাভ কী)”। [সহিহ বুখারী- ১/৪৩৮ হাদিস ১৪১৯; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১০৩২, ১০৯৩; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩৩১২, ৩৩৩৫; মুসনাদে আহমদ- ২/২৩ হাদিস ৭১৫৯; সুনানে ইবনে নাসায়ী, হাদিস ৩৬১১; শারহু মাআনীল আছার, হাদিস ৮২২; মুসনাদে ইসহাক- ১/২১৪ হাদিস ১৭০; আল-মুহাল্লা, ইবনে হাযাম- ৯/৩৫৪]

এই রেওয়ায়েতগুলো থেকেও পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, آتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ – (ধ্বনমালের উপরে ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও সে দান করে) এসব দান-সদকাহ মূলত: ফরয যাকাত থেকে ভিন্ন। তদুপরি এই আয়াতটি মদিনায় অবতীর্ণ হওয়ায় বিষয়টিকে আরো শক্তিশালি করে তোলে।

যা হোক, উপরে সুরা বাকারাহ’র ১৭৭ নং আয়াত থেকে বোঝা গেল-

(১) শরীয়তের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র বছরে একবার ‘ফরয যাকাত’ আদায় করার দ্বারাই এতজন মুমিন মুসলমান তার আর্থিক দায়দায়িত্ব থেকে মুক্তি পায় না, বরং নিসাবের মালিক হলে সে যাকাত তো আদায় করবেই, সাথে সাথে শরীয়তের চাহিদা ও দাবী মোতাবেক সে উল্লেখীত খাতগুলোতে তার সাধ্য মতো খরচ করতে থাকবে।

(২) যে মুসলমানের কাছে যাকাত দানের মতো ধ্বনসম্পদ নেই (মানে নেসাবের মালিক নয়), সে বছরে একবার যাকাতের তারিখে যাকাত দিতে অসমর্থ বলে সে তার আয়ত্বধীন আর্থিক দায়দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে না, বরং সে শরীয়তের চাহিদা ও দাবী মোতাবেক উল্লেখীত খাতগুলোতে তার সাধ্য মতো খরচ করতে থাকবে।

২য় দলিল

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا – إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا
 “আর নিকতাত্বীয়, মিসকীন ও ইবনুস সাবিল (মুসাফির)কে তার হক্ব দিয়ে দাও এবং কোনো অবস্থাতেই (আল্লাহ’র দেয়া আমানতের) তাবজীর (অপব্যয়/নাজায়েয পথে ব্যয় ও ব্যবহার) করবে না। নিশ্চই তাবজীরকারীরা (অপব্যয়কারী’রা/নাজায়েয পথে ব্যয় ও ব্যবহারকারীরা) শয়তানদের ভাই-ব্রাদার। আর (জেনে রেখো) শয়তান তার রবের সাথে কুফরীকারী (বিশ্বাসঘাতক’র পরিচয় দিয়ে)ছিল”। [সুরা বনী ইসরাঈল ১৭৭]

উল্লেখ্য, সুরা বনী ইসরাঈল (সুরা ইসরা) একটি মাক্কী সুরা, আর উপরের এই ১৭৭ নং আয়াতটিও রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মক্কার জীবনে অবতীর্ণ একটি আয়াত। [তাফসীরে ইবনে কাছির- ৩/৩৪] আর যাকাত পূর্ণমাত্রায় ফরয হয় রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর মাদানী জীবনে, তথা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর। তাই, এই আয়াতের মধ্যে وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ – ((আর নিকতাত্বীয়, মিসকীন ও ইবনুস সাবিল (মুসাফির)কে তার হক্ব দিয়ে দাও))– বলতে এখানে অবশ্যই ফরয যাকাত উদ্দেশ্য নয়, বরং অপরাপর সাধারণ দান-সদকা উদ্দেশ্য, যে দানকে এই আয়াতে- حَقّ (হক্ব/অধিকার)– বলা হয়েছে, যা হক্বদারদের কাছে দিয়ে দেয়া ওয়াজিব প্রমাণ করে। যদি বলা হয় যে, “এটা তো মাক্কী আয়াত, আর মদিনায় যাকাত ফরয হওয়ার দ্বারা এসব ওয়াজিব দান-সদকাহ বাতিল বা মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে, এখন শুধু ফরয যাকাত আদায় করলেই আর্থিক দায়দায়ীত্ব খতম”, তাহলে তাদের এই দাবীর জবাবে নিম্নের এই সহিহ হাদিসটিকে পেশ করতে পারি, যেখানে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ﷺ যাকাতের পাশাপাশি আরো আর্থিক হকের বর্ণনা দিয়েছেন এবং তাঁর কথার স্বপক্ষে উপরোক্ত আয়াতটিই তেলাওয়াত করেছেন। 

আনাস বিন মালেক রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- أتى رجل من بني تميم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول اللّه، إني ذو مال كثير و ذو أهل و ولد و حاضرة فأخبرني كيف أنفق وكيف أصنع؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تخرج الزكاة من مالك، فإنها طهرة تطهرك، وتصل أقرباءك، و تعرف حق السائل و الجار و المسكين, فقال: يا رسول اللّه: اقلل لى, قال: {وآت ذا القربى حقه والمسكين وابن السبيل ولا تبذر تبذيرًا}. فقال: حسبي يا رسول الله إذا أديت الزكاة إلى رسولك فقد برئت منها إلى اللّه و رسوله؛ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : نعم, إذا أديتها إلى رسولي فقد برئت منها، فلك أجرها، وإثمها على من بدلها . رواه أحمد في المسند: ١٠/٤٤١ رقم ١٢٣٣٤ و قال حمزة احمد الزين: اسناده صحيح , قال المنذري في الترغيب والترهيب: ٢/٣ رجاله رجال الصحيح , و قال الهيثمي: ٣/٦٣ رجاله رجال الصحيحين , قال الأرناؤوط : رجاله ثقات رجال الشيخين ; و البيهقي في السنن الكبري: ٤/١٦٣ رقم ٧٢٨٣ – ‘(একবার) বনী তামিম গোত্রের এক ব্যাক্তি এসে রাসুলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি একজন ধ্বনকুবেড়, আমার পরিবার ও বালবাচ্চা রয়েছে, আমি রাজধাণীতে থাকি। এখন আমাকে বলুন, আমি কিভাবে (ধ্বনসম্পদ আল্লাহ’র রাস্তায়) ব্যয় করবো এবং কিভাবে কি করবো? তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘তুমি তোমার ধ্বনসম্পদ থেকে (প্রতি বছর হিসেব করে) যাকাত বেড় করবে। বস্তুতঃ এটা (তোমার ধ্বনসম্পদের) একটি পবিত্রতা, যা তোমাকে (তোমার ধ্বনসম্পদের মধ্যে মিশ্রিত হয়ে থাকা যাকাতের হক্বদারদের পাওয়া ময়লা হতে) পবিত্র করে নিবে। আর তুমি তোমার নিকটাত্বীয়দের খেয়াল রাখবে। এবং (যাকাত ছাড়াও) তুমি তোমার (ধ্বনসম্পদ দিয়ে তোমার) সওয়ালকারী, প্রতিবেশি ও মিসকীনের হক্ব’কে চিনে নিবে’। সে বললো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে একটু সংক্ষেপে বলুন’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: (যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন:) وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا – ((আর নিকতাত্বীয়, মিসকীন ও ইবনুস সাবিল (মুসাফির)কে তার হক্ব দিয়ে দাও এবং কোনো অবস্থাতেই (আল্লাহ’র দেয়া আমানতের) তাবজীর (অপব্যয়/নাজায়েয পথে ব্যয় ও ব্যবহার) করবে না))। সে বললো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি বুঝতে পরেছি। আমি যদি আপনার প্রেরিত ব্যাক্তির কাছে (আমার যাকাত) দিয়ে দিই, তাতে করে কি আমি (যাকাত দানের প্রশ্নে) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছ থেকে দায়মুক্ত হয়ে যাবো? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যাঁ, তুমি যখন আমার প্রেরিত ব্যাক্তির কাছে (তোমার যাকাত) দিয়ে দিবে, তখন তুমি (তোমার যাকাতের দায়িত্ব থেকে) দায়মুক্ত হয়ে গেলে। এতে তোমার জন্য রয়েছে সওয়াব। আর গোনাহ বর্তাবে তার উপরে যে তা বদলিয়ে ফেলবে’। [মুসনাদে আহমদ– ৩/১৩৬; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৪/১৬৩ হাদিস ৭২৮৩; মুআত্তা, হাদিস ১৯৯; আল-মুদাউয়ানাতুল কুবরা১/৩০৫; আন-নাসিখ ওয়াল মানসুখ, ইমাম আবু উবাইদ, আছার ৪৬]

ইমাম আবু উবাইদ রহ. (মৃ: ২২৪ হি:) এই হাদিসটি তার কিতাব ‘আন-নাসিখ’-এ উল্লেখ করার পর লিখেছেন- أفلا تسمع قول رسول الله النبي- صلّى الله عليه- للرجل، وما كان من أمره إيّاه بإعطاء هؤلاء بعد ذكر الزكاة، ثم سمّاه حقا، فقال تعرف حق السائل والجار والمسكين – “তোমরা কি শুনতে পাওনি রাসুলুল্লাহ ﷺ লোকটিকে কী বললেন? তিনি (প্রথমে ফরয) যাকাতের কথা উল্লেখ করার পর সংশ্লিষ্টদেরকে (যাকাত বাদেও অপরাপর ধ্বনসম্পদ থেকে অতিরিক্ত ভাবে) দান করার বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর  (তার ধ্বনমালেল মধ্যে হক্বদারদের) হক্ব (ও অধিকার)-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন: تعرف حق السائل والجار والمسكين – ((যাকাত ছাড়াও) তুমি তোমার (ধ্বনসম্পদ দিয়ে তোমার) সওয়ালকারী, প্রতিবেশি ও মিসকীনের হক্ব’কে চিনে নিবে))”। [আন-নাসিখ ওয়াল মানসুখ, ইমাম আবু উবাইদ, আছার ৪৬]

উপরোক্ত আয়াতে কারিমা ও সহিহ হাদিসটি থেকে পরিষ্কার প্রমাণিত হল যে, মদিনায় যাকাত ফরয হওয়ার দ্বারা অপরাপর দান-সদকাহ সব বাতিল বা মানসুখ (রহিত) হয়ে যাওয়ার দাবী ভুল। এ থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, শুধু ফরয যাকাত আদায় করলেই আর্থিক দায়দায়ীত্ব খতম হওয়ার ধারনাটাও ভুল, বরং স্বচ্ছল ধ্বনী ও মালদারদের ধ্বনসম্পদের মধ্যে যাকাতের মাল ছাড়াও অন্য আরো বিভিন্ন প্রকারের হক্ব সংরক্ষিত রয়েছে হক্বদারদের জন্য। কাজেই, ধ্বনীরা যাকাত বা সদকাহ আদায় করে একথা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, তারা এর মাধ্যমে গরীব অভাবীদের প্রতি করুনা করছে। বরং তাদের ভাবা উচিৎ যে, তারা তাদের যাকাত ও সদকাহকে যোগ্য হক্বদারদের কাছে পৌছে দিয়ে আল্লাহ’র কাছে দায়মুক্ত হল। 

৩য় দলিল

ইসলামী শরীয়তে রমযানের ফরয রোযা পালন কালে আমলের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ঘাটতি ও পাপের ক্ষতিপূরণ এবং মিসকীনদের সাময়ীক অভাব পূরণ করে ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও ভাগাভাগি করে নেয়ার সুযোগ দান ইত্যাদির উদ্দেশ্যে মুসলমানদের উপরে ‘ফিতরা (فطرة)’ আদায় করে দেয়া ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে। [আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৬/১১৯; শারহুল মুসলীম, ইমাম নববী- ৭/৫৮; নিহায়াতুল মুহতাজ- ৩/১০; আল-মুগনী, ইবনে কুদামাহ- ৪/৩০১; রাদ্দুল মুহতার, ইবনে আবিদীন- ২/৭৮] ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে উম্মাহ’র ইজমা রয়েছে। [আল-বাহরুয যুখার- ২/১৯৫] ফিতরা’কে হাদিসে ‘যাকাতুল ফিতর’, ‘সদকাতুল ফিতর’ ইত্যাদি নামে অবিহিত করা হয়েছে। [ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৩/৪৬৩] ফিতরা বিধানীক ভাবে ধার্য হয় মূলত: মদিনায় হিজরতের ২য় সনে (যে সনে রমযানের রোযা ফরয হয়)। [আল-মিরক্বাত- ৪/১৫৯; ফিকহুয যাকাত, কারজাভী- ২/৯১৮] ‘ঈদুর ফিতর’-এর নামাযের আগেই ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। [সহিহ বুখারী- ২/১১০]

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ
 “সফলকাম হয়ে গেছে সে(ই মুসলীম), যে পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার রবের নাম নেয়, পরে সালাত আদায় করে”। [সুরা আল-আ’লা ১৪, ১৫]

কিছু রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ ﷺ ফিতরা’কে এই আয়াতের তাফসীরের মধ্যে শামিল করে নিয়েছিলেন। যেমন, আমর বিন আওফ রহ. তার পিতা ও দাদার সূত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে- أنَّهُ كانَ يَأْمُرُ بِزَكاةِ الفِطْرِ يوم الفطر قَبْلَ أنْ يُصَلِّيَ صَلاةَ العِيدِ ويَتْلُو هَذِهِ الآيَةَ – قَدْ أفْلَحَ مَن تَزَكّى و ذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلّى . رواه البزار في مسنده, في مسند عمرو بن عوف رضي الله عنه : ٨/٣١١ رقم ٣٣٨٣، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٣/٨٠ : رواه البزار و فيه كثير بن عبد الله و هو ضعيف، و لكن قد رأيت الإمام الترمذى رحمه الله يصحح أو يحسن له بعض الأحاديث في جامعه، فقد صحح أحاديث من روايته برقم ١٣٥٢ و ٢٦٣٠ و حسَّن برقم ٤٩٠ و ٥٣٦، و لعله حكم عليها بذلك باعتبار طرقها وشواهدها، والله أعلم، و أخرجه البيهقي في السنن الكبرى: ٤/١٥٩، و ابن عدي في الكامل : ٦/٥٩، و ضعف إسناده السيوطيُ في الدر المنثور: ١٥/٣٦٩ .- “তিঁনি (ঈদুল) ফিতরের দিন ঈদের নামায আদায় করার পূর্বে যাকাতুল ফিতর (আদায়)-এর নির্দেশ দিতেন এবং এই আয়াত তেলাওয়াত করতেন- قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ – ((সফলকাম হয়ে গেছে সে(ই মুসলীম), যে পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার রবের নাম নেয়, পরে সালাত আদায় করে))। [মুসনাদে বাযযার- ৮/৩১১ হাদিস ৩৩৮৩; তাফসীরে ইবনু আবি হাতিম- ১/৩৪১৮ হাদিস ১৯২৩৩; আল-কামেল, ইবনু আদী- ৬/৫৯; কাশফুল আসতার, হাইছামী- ১/৪২৯ হাদিস ৯০৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৮০] আরেক রেওয়ায়েতে আছে-  سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَنْ قَوْلِهِ: ﴿قَدْ أفْلَحَ مَن تَزَكّى﴾ قالَ: هي زَكاةُ الفِطْرِ .– “রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিঁনি বললেন- ‘এটা হল যাকাতুল ফিতর”। [সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৪/২৬৮ হাদিস ৭৬৬৮; তাফসীরে ইবনু আবি হাতিম– ১/৩৪১৮ হাদিস ১৯২৩৩; আদ-দুররুল মানসুর, ইমাম সুয়ূতী- ১৫/৩৬৯

উল্লেখ্য, সুরা আল-আ’লা’ একটি মাক্কী সুরা, আর মাক্কী জীবনে -না ঈদের নামায ছিল, আর না ছিল ফিতরা’র বিধান। ফিতরা’র বিধান ধার্য হয় মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর ২য় বছরে, যে বছর রমযানের রোযা ফরয হয়। এ থেকে বোঝা যায়, মদিনায় এসে রাসুলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক ‘ঈদুর ফিতরের নামায এবং ফিতরার স্বপক্ষে এই দুটি মাক্কী আয়াত তেলাওয়াত করার পিছনে মূল উদ্দেশ্য এর শানে নুজুল বর্ণনা করা নয়, বরং উদ্দেশ্য ছিল এই আয়াতের মধ্যে যে ‘ফিতরা’র বিধানও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে তা প্রকাশ করে দেয়া। [ফাতহুল কাদীর, শাওকানী- ৫/৪১৫]

সম্ভবত: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর উদ্দেশ্যও তাই ছিল। যেমন, ইমাম বাইহাকী রহ. নিজ সনদে নাফে রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন-  انه كان يقول نزلت هذه الآية (قد أفلح من تزكى وذكر اسم ربه فصلى) في زكاة رمضان  – “তিঁনি বলতেন: قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ -এই আয়াতটি রমযানের যাকাতে (ফিতর) সম্পর্কে নাজিল হয়েছিল”। [সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৪/২৬৮ হাদিস ৭৬৬৭; সুনানুস সুগরা, ইমাম বাইহাকী, আছার ১২২৩; আদ-দুররুল মানসুর, ইমাম সুয়ূতী- ১৫/৩৭০] এর অর্থ মূলত: পরিভাষাগত শানে নুজুল নয়, বরং এর অর্থ হল, এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার পিছনে এই উদ্দেশ্যও ছিল যে, তা মাদানী জীবনে এসে ‘সদকাতুল ফিতর’-এর বিধানকেও অন্তর্ভূক্ত করে নিবে। ইমাম আবু ইসহাক ছা’লাবী রহ. (মৃ: ৪২৭ হি:) এবং ইমাম বগভী রহ. (মৃ: ৫১৬ হি:) নাফে রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন- كان ابن عمر إذا صلّى الغداة- يعني من يوم العيد- قال: يا نافع أخرجت الصدقة فإن قلت نعم مضى إلى المصلّى وإن قلت لا قال: فالآن فأخرج، فإنما نزلت هذه الآية في هذا قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى – “(আব্দুল্লাহ) ইবনে ওম রা. যখন ঈদের দিন ভোর বেলা (ফযরের) নামায পড়ে ফেলতেন, তখন বলতেন: ‘হে নাফে! তুমি কি (আমার ধ্বনমাল থেকে) সদকা(তুল ফিতর) বের করেছো। তখন যদি আমি বলতাম: ‘জি (আমি বের করে গরীব মিসকীনদেরকে দিয়ে দিয়েছি)’, তাহলে তিনি (প্রস্তুতি নিয়ে ঈদের) নামাযের উদ্দেশ্যে ড়ওনা দিতেন। আর আমি যদি বলতাম: জি না (এখনো বের করিনি)। তাহলে তিনি বলতেন: তুমি এখনিই বের করো। قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ -এই আয়াতটি এই ব্যাপারেই নাজিল হয়েছে”। [আল-কাশফু ওয়াল বায়ান, ইমাম ছা’লাবী- ১০/১৮৫; মাআলিমুত তানজীল, ইমাম বাগাভী- ৮/৪০২] 

আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনكانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَقُولُ: ﴿قَدْ أفْلَحَ مَن تَزَكّى﴾ ﴿وذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلّى﴾ ثُمَّ يُقَسِّمُ الفِطْرَةَ قَبْلَ أنْ يَغْدُوَ إلى المُصَلّى يَوْمَ الفِطْرِ. أخْرَجَ ابْنُ مَرْدُويَهَ كما اورده السيوطيُ في الدر المنثور: ١٥/٣٧٠ و الشوكاني في فتح القدير: ٥/٤١٥ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ (এই আয়াতটি) তেলাওয়াত করতেন- قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ – ((সফলকাম হয়ে গেছে সে(ই মুসলীম), যে পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার রবের নাম নেয়, পরে সালাত আদায় করে)), তারপর (ঈদুল) ফিতরের দিন (ঈদের) নামাযে যাবার আগেই ভোরে (মিসকিনদের মাঝে) ফিতরাহ বন্টন করে দিতেন”। [ইবনু মারদুবিয়া: আদ-দুররুল মানসুর, ইমাম সুয়ূতী- ১৫/৩৭০; ফাতহুল কাদীর, ইমাম শাওকানী- ৫/৪১৫আরেক রেওয়ায়েতে আছে, আবু সাঈদ খুদরী রা قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – ((সফলকাম হয়ে গেছে সে(ই মুসলীম), যে পবিত্রতা অর্জন করে))-এর তাফসীরে বলেছেন- أعطى صدقة الفطر قبل أن يخرج إلى العيد – “ঈদের (নামাযের) উদ্দেশ্যে বের হবার আগে ‘সদকাতুল ফিতর’ আদায় করে”, আর  وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ – ((এবং তার রবের নাম নেয়, পরে সালাত আদায় করে))-এর তাফসীরে বলেছেন- خرج إلى العيد فصلى –  ঈদের (নামাযের) উদ্দেশ্যে বের হয়, তারপর নামায আদায় করে”। [আব্দ বিন হুমায়েদ ও ইনুল মুনযীর: আদ-দুররুল মানসুর, ইমাম সুয়ূতী- ১৫/৩৭০]

খলীফায়ে রাশেদ ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিঁনি قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেছেন- أَدَّى زَكَاةَ الْفِطْرِ ثُمَّ خَرَجَ إلَى الصَّلاةِ أيْ صلاة العيد – “(প্রথমে) যাকাতুল ফিতর আদয় করে, তারপর ঈদের নামাযের জন্য বের হয়”[আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাস- ৩/৬৩৬] আবু আলিয়াহ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এর তাফসীরে বলেছেন- يعطي صدقة الفطر ثم يصلي – “(এই আয়াতের অর্থ হল, মুসলমান প্রথমে) ‘সাদাকাতুল ফিতর’ দান করবে, তারপর (ঈদুল ফিতরের) নামায আদায় করবে”[সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৪/২৬৮ আছার ৭৬৬৯] মুহাম্মাদ বিন সিরীন রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এর তাফসীরে বলেছেন- أدّى صَدَقَةَ الفِطْرِ ثُمَّ خَرَجَ فَصَلّى بَعْدَ ما أدّى – “(প্রথমে) ‘সাদাকাতুল ফিতর’ আদায় করো, আদায় হয়ে গেলে পর (ঈদুল ফিতরের) নামাযের উদ্দেশ্যে বের হও”[আদ-দুররুল মানসুর, ইমা সুয়ূতী- ১৫/৩৭১সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ – –এর তাফসীরে বলেছেন- زكاة الفطر “‘যাকাতুল ফিতর”[তাফসীরুল কুরআন, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ৩/৪১৯ আছার ৩৫৭৯] আত্বা রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিঁনি এর তাফসীরে বলেছেন- أَدَّى زَكَاةَ الْفِطْرِ – “(প্রথমে) যাকাতুল ফিতর আদয় করে, তারপর ঈদের নামাযের জন্য বের হয়”[আদ-দুররুল মানসুর, ইমা সুয়ূতী- ১৫/৩৭১]

মোট কথা, এই আয়াতের তাফসীরে ‘সদকাতুল ফিতর’ অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিষয়টি গ্রহনযোগ্য ও প্রমাণিত। ইমাম হায়েজইবনে হাজার আসকালানী (জ: ৭৭৩ হি: – মৃ: ৮৫২ হি:) রহ লিখেছেন- وقال الله تعالى قد أفلح من تزكى وثبت أنها نزلت في زكاة الفطر – ‘আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ((সফলকাম হয়ে গেছে সে(ই মুসলীম), যে পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার রবের নাম নেয়, পরে সালাত আদায় করে))। আর একথা (বিভিন্ন রেওয়ায়েত দ্বারা) প্রমাণিত যে, আয়াতটি যাকাতুল ফিতর সম্পর্কে নাজিল হয়েছিল”[ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার– ৩/২৯১]

যাহোক, ফিতরা আদায় ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে বহু সহিহ ও নির্ভরযোগ্য হাদিস রয়েছে, যার সবগুলো এখানে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমরা নিচে নমুনা স্বরূপ কিছু উল্লেখ করলাম।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন– فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى العَبْدِ وَ الحُرِّ ، وَ الذَّكَرِ وَ الأُنْثَى ، وَ الصَّغِيرِ وَ الكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ ، وَ أَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ . أخرجه البخاري في الصحيح, كتاب الزكاة , باب فرض صدقة الفطر: ١/٤٦٦ رقم ١٥٠٣ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ গম (পরিমাণ) ‘যাকাতুল ফিতর’ (আদায় করা)কে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন –মুসলমানদের মধ্য থেকে (প্রত্যেক) গোলাম ও স্বাধীন ব্যাক্তির উপরে, (প্রত্যেক) পুরুষ ও নারী(র উপরে) এবং (প্রত্যেক) ছোট ও বড়(র উপরে)। আর তিনি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাযের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে আদায় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন”। [সহিহ বুখারী– ১/৪৬৬ হাদিস ১৫০৩; সহিহ মুসলীম, হাদিস ৯৮৪]

আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেনكنَّا نُخرِجُ زكاةَ الفِطرِ صاعًا من طعامٍ، أو صاعًا من شَعير، أو صاعًا من تَمرٍ، أو صاعًا من أقِطٍ ، أو صاعًا مِن زَبيبٍ . رواه البخاري في الصحيح , كتاب الزكاة , باب صدقة الفطر صاعًا من طعامٍ : ١/٤٦٧ رقم ١٥٠٦ – “আমরা (রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জামানায়) খ্যাদ্যবস্তু থেকে এক সা’, অথবা গম থেকে এক সা’, অথবা খেজুর থেকে এক সা, অথবা থেকে এক সা, কিংবা থেকে এক সা (পরিমান বস্তু) যাকাতুল ফিতর (হিসেবে) বের করতাম (গরীব মিসকীনদেরকে দেয়ার জন্য)”। [সহিহ বুখারী- ১/৪৬৭ হাদিস ১৫০৬]

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেনفرَض رسولُ الله صلَّى الله عليه وسلَّم زكاةَ الفِطرِ؛ طُهرةً للصَّائِمِ مِنَ اللَّغو والرَّفَث، وطُعمةً للمساكينِ؛ مَن أدَّاها قبل الصَّلاةِ فهي زكاة مقبولة، ومَن أدَّاها بعد الصَّلاةِ فهي صدقةٌ مِنَ الصَّدَقاتِ . أخرجه أبو داود في سننه , كتاب الزكاة: باب زكاة الفطر: رقم ١٦٠٩ ، وابن ماجه في سننه , كتاب الزكاة : رقم ١٨٢٧، و الحاكم : ١/٥٦٨، و الدارقطني في سننه : ٢/١٣٨ و قال الدارقطني عن رواته: ليس فيهم مَجروحٌ، و حسَّن إسنادَه النوويُّ في المجموع : ٦/١٢٦، و صحَّحه ابن الملقن في شرح البخاري: ١٠/٦٣٦، و الألباني في صحيح الجامع: ٣٥٧٠ حسنه في صحيح سنن أبي داود – “রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘যাকাতুল ফিতর’ (আদায় করা)কে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন, (যা) রোযা আদায়কারীর জন্য লাগওয়া (অহেতুক/বেহুদা কথা ও কাজ) ও রাফাস (গোনাহ) থেকে পবিত্রতা স্বরূপ এবং মিসকীনদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা স্বরূপ। যে ব্যাক্তি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাযের আগে আদায় করে দেয়, তখন সেটা (তার জন্য হয় একটি গ্রহনযোগ্য) মাকবুল দান। আর যে তা (ঈদুল ফিতরের) নামাযের পরে আদায় করে, তখন সেটা (অপরাপর সাধারণ) সদকা সমূহের মধ্য থেকে একটি সদকাহ (হবে; ফিতরা হিসেবে গণ্য হয় না)”। [সুনানে আবু দাউদ- ২/২৭২ হাদিস ১৬০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ- ১/৫৮৫ হাদিস ১৮২৭; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৫৬৮; ‍সুনানে দারাকুতনী- ২/১৩৮]

ফায়দা: ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (জ: ৬৬১ হি: – মৃ: ৭২৮ হি:) রহ. এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন- قول النبي صلى الله عليه وسلم: طعمةً للمساكين- نصٌّ في أن ذلك حقٌّ للمساكين – “রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী- طعمةً للمساكين – ((মিসকীনদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা)) -একথারই দলিল যে, ‘সদকাতুল ফিতর’ হল মিসকীনদের (নিঃস্ব অভাবীদের) হক্ব[মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়্যাহ- ২৫/৭৫]

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন– أمر رسول الله -صلى الله عليه وسلم- بصدقة الفطر عن الصغير والكبير، والحر والعبد، ممن تمونون . خرجه البيهقي في السنن الكبرى : ٤/١٦١، و الدارقطني في سننه : ٢/١٤١، و حسنه الألباني في إرواء الغليل : ٨٣٥ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ  (বিশেষ কিছু) খাদ্যসামগ্রীর মধ্য থেকে ‘সদকায়ে ফিতর’ (আদায় করা)-এর নির্দেশ দিয়েছেন -(মুসলমানদের প্রত্যেক) ছোট ও বড়র পক্ষ থেকে এবং (প্রত্যেক) গোলাম ও স্বাধীন ব্যাক্তির পক্ষ থেকে”। [সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৪/১৬১; সুনানে দারাকুতনী- ২/১৪১]

আসমা বিনতে আবি বকর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেনكُنا نُؤدي زكاة الفِطر على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم مُدَّين مِن قمْح بالمدِّ الذي تُقتاتون به . رواه أحمد في مسنده , باقي مسند الأنصار , حديث أسماء بنت أبي بكر الصديق رضي الله عنهما : ٦/٣٤٦، و حميد في الأموال : ٢٣٧٧، و الطحاوي في شرح معاني الآثار: ٢/٤٣، و صحَّح إسناده الألباني في تمام المنة : ص ٣٨٧، و قال ابن القيم في زاد المعاد : ٢/١٩ : و فيه عن النبي صلى الله عليه وسلم آثارٌ مُرسَلة و مسنَدة يُقوِّي بعضُها بعضًا – “তোমরা যে মুদ্দ (পরিমাপক পাত্র) দিয়ে পরষ্পরে খাদ্যবস্তু গ্রহন করে থাকো, (সেরকম) দুই মুদ্দ (অর্ধ্ব-সা) গম (দিয়ে) আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর যুগে ‘যাকাতুল ফিতর’ আদায় করতাম”। [মুসনাদে আহমদ– ৬/৩৪৬; আল-আমওয়াল, ইমাম হুমাইদ, হাদিস ২৩৭৭; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ২/৪৩]

সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনكانت الصدقة تعطى على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي بكر وعمر رضي الله عنهما ، نصف صاع من حنطة . رواه الطحاوي في شرح معاني الآثار, كتاب الزكاة , باب مقدار صدقة الفطر: ١/٣٥٠، رجاله كلهم ثقات – “রাসুলুল্লাহ ﷺ, আবু বকর রা. ও ওমর রা.-এর যুগে ‘সাদাকাহ-(ফিতর)’ দেয়া হত অর্ধ্ব-সা গম”। [শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ২/৪৩]

ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব হওয়া এবং এই বিশেষ আর্থিক ইবাদতটি রমযান মাসের রোযা ও ঈদুল ফিতরের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়াই একথার জ্বলজ্যান্ত একটি প্রমাণ করে যে, যাকাত ও ‍ফিতরা ভিন্ন ভিন্ন দুটি ইবাদত এবং মুসলমানদের ধ্বনমালের মধ্যে হক্বদারদের জন্য যাকাত ছাড়াও আরো ওয়াজিব হক্ব রয়েছে। 

৪র্থ দলিল

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ ۚ وَإِن كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتَّىٰ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ۚ فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ ۖ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُم بِمَعْرُوفٍ ۖ وَإِن تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَىٰ – لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ ۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ ۚ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا ۚ سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
 “তোমরা (তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দিলে তাদের ইদ্দত কাল অতিবাহিত করনার্থে) তাদেরকে তোমাদের সামর্থ মাফিক  (সেই জায়গায়) থাকতে দাও, যেখানে তোমরা বসবাস করো। আর তাদেরকে সংকটে ফেলার উদ্দেশ্যে তাদের উপরে কষ্ট চাপিয়ে দিও না। আর তারা যদি গর্ভবতী হয়, তাহলে তাদের ব্যয়ভার বহন করতে থাকো, যাবৎ না তারা সন্তান প্রসব করে। তারপর তারা যদি তোমাদের (হয়ে তোমাদের শিশুদের)কে দুধ পান করায়, তাহলে তাদেরকে (এ বাবদ) তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে দিও। আর তোমরা (এক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের বিষয়টি) তোমাদের নিজেদের মাঝে (আলোচনার মাধ্যমে) সংগতভাবে নির্ধারন করে নাও। আর (দুধ দানের পারিশ্রমিক নির্ধারনের ক্ষেত্রে) তোমরা যদি একে অপরের জন্য সংকট সৃষ্টি করো, তাহলে অন্য (কোনো নারী) তাকে দুধ পান করাবে। প্রত্যেক সামর্থবান ব্যাক্তি যেন তার (নিজ) সামর্থ অনুযায়ী খরচ (বহন) করে। আর যার রিজিককে তার উপরে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়েছে, সে তা থেকে (সাধ্য মতো) থেকে খরচ করবে, যা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। (আর জেনে রেখো), আল্লাহ যে ব্যাক্তিকে যতটা দিয়েছেন, তিঁনি (তার চাইতে বেশি) দায়ীত্ব-বোঝা (তার উপরে) চাপান না। আল্লাহ (তাআলা) সংকটের পর অচিরেই স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি করে দেন”। [সুরা তালাক্ব ৬, ৭]

শরীয়ত মতে, যে মুসলমানের উপরে যাদের ব্যয়ভার বহন করা ওয়াজিব, সে সেই ওয়াজিব হক্ব আদায় করে দিবে তার যাকাতের মাল ভিন্ন অন্য ধ্বনমাল থেকে। যেমন: স্বামী কর্তৃক স্ত্রী ও সন্তান সন্ততির ব্যয়ভার বহন, ছেলে কর্তৃক অভাবী/বৃদ্ধ পিতামাতার ব্যয়ভার বহন করা ইত্যাদি। আর এসকল ক্ষেত্রে তার নিজের যাকাতের মাল দিয়ে স্ত্রী, সন্তান সন্ততি ও পিতামাতার ব্যয়ভার বহন করার অর্থ হল, ‘নিজের যাকাতের মাল নিজের কাজে ব্যবহার করা ছাড়া আর কিছু নয়’। অথচ যাকাতের জন্য খোদ আল্লাহ তাআলা নিজেই ৮টি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, আর নিজের স্ত্রী, সন্তান সন্ততি ও পিতামাতার ‘ওয়াজিব ব্যয়ভার’ উক্ত ওই ৮ খাতের একটির মধ্যে পড়ে না বিধায় যাকাতেরে মাল থেকে তা আদায় করলে যাকাতই আদায় হবে না। [কিতাবুল আছল, ইমাম মুহাম্মাদ- ২/১২৪; ফাতহুল কাদীর, ইবনুল হুমাম- ২/২০৯; আল-বাদায়েউস সানায়ে, কাসানী- ২/১৪৩; আদ-দুররুল মুখতার- ২/৩৪৬; আল-মুহিতুল বুরহানী- ৩/২১২, ২১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া- ১/২৪২; ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ৩/২১০; রাদ্দুল মুহতার- ২/৩৪৪] এ থেকে বোঝা গেল, উপরের আয়াতে স্বামীকে তার যাকাত ভিন্ন অপরাপর ধ্বনমাল থেকে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর হক্ব আদায় করার কথা বলা হচ্ছে। কারণ, কুরআন সুন্নাহ’র নির্দেশ হল, তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ইদ্দত পালন করবে স্বামীর ঘরে এবং যতদিন পর্যন্ত সে স্বামীর ঘরে ইদ্দত পালন করবে, ততদিন পর্যন্ত তার খাওয়া-দাওয়া সহ আনুসঙ্গিক ন্যায়সঙ্গত যাবতীয় খরচা বহন করবে স্বামী – চাই ওই নারী ব্যাক্তিগত ভাবে ধ্বনী হোক চাই গরিব। 

তদুপরি, এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, শিশুকে দুধপান করানো বাবদ পারিশ্রমিকের ব্যয়ভার বহন করবে স্বামী (শিশুর পিতা)। আর এই পারিশ্রমীক মূলত: শিশুকে দুধ দানকারী নারীর হক্ব – চাই সেই নারী ব্যাক্তিগত ভাবে ধ্বনী হোক চাই গরিব। আর কোনো কাজের পারিশ্রমিক বা মজুরী -যাকাতের উক্ত ৮ খাতের একটির মধ্যে পড়ে না বিধায় যাকাতেরে মাল থেকে পারিশ্রমিক/মজুরী আদায় করলে যাকাতই আদায় হবে না। এ থেকেও বোঝা গেল, উপরের আয়াতে স্বামীকে তার যাকাত ভিন্ন অপরাপর ধ্বনমাল থেকে ‘শিশুকে দুধ দানের উক্ত পারিশ্রমিক’ আদায় করার কথা বলা হচ্ছে।

তাছাড়া, আয়াতের শেষে বলা হয়েছে- وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ ۚ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا – “((আর যার রিজিককে তার উপরে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়েছে, সে তা থেকে (সাধ্য মতো) থেকে খরচ করবে, যা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। (আর জেনে রেখো), আল্লাহ যে ব্যাক্তিকে যতটা দিয়েছেন, তিঁনি (তার চাইতে বেশি) দায়ীত্ব-বোঝা (তার উপরে) চাপান না))। এই বিধানের মধ্যে তো গরিব অভাবী মুসলীম স্বামীও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। সুতরাং, এ থেকেও বোঝা যায় যে, এখানে ব্যাক্তির যাকাতের মাল ভিন্ন অপরাপর ধ্বনমাল থেকে সাধ্য মতো এসকল ওয়াজিব হক্ব আদায় করতে বলা হচ্ছে। কারণ, গরিব অভাবী ব্যাক্তি যাকাত থেকে কী দিবে, সে তো উল্টো নিজেই হয়তো যাকাত পাওয়ার হক্বদার।

উপরোক্ত আয়াতটি একথার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ যে, মুসলমানদের ধ্বনমালের মধ্যে হক্বদারদের জন্য যাকাত ছাড়াও আরো ওয়াজিব হক্ব রয়েছে।