নামাযে রফে ইয়াদাইন করার দলিল – সহিহ হাদিস ও আছার থেকে

নামাযে রফে ইয়াদাইন করার দলিল – সহিহ হাদিস ও আছার থেকে

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

[উল্লেখ্য, এই গোটা আলোচনায় উল্লেখিত বিভিন্ন হাদিস ও আছার এবং আরবী ইবারত সমূহের অনুবাদ ও আনুসঙ্গিক ব্যাখ্যাকে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]

 

সহিহ ও নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন হাদিস ও আছার থেকে একথা প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম রা. নামাযের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে রফে ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন)’ করেছেন। নিম্নে কিছু রেওয়ায়েত পেশ করা হল।

১. ১ তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়, রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় ‘রাফউল ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করার দলিল
 
#১.১.১ ইমাম বুখারী (জ: ১৯৪ হি:-মৃ:২৫৬ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সহিহ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ فِي الصَّلاَةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يَكُونَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، وَكَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ حِينَ يُكَبِّرُ لِلرُّكُوعِ، وَيَفْعَلُ ذَلِكَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ، وَيَقُولُ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، وَلاَ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِي السُّجُودِ . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب الأذان , باب رفع اليدين إذا كبر وإذا ركع وإذا رفع: رقم ٧٣٦ ، ومسلم في صحيحه , كتاب الصلاة , باب استحباب رفع اليدين حذو المنكبين مع تكبيرة الإحرام و الركوع وفي الرفع من الركوع وأنه لا يفعله إذا رفع من السجود: رقم ٣٩٠ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন মুকাতিল, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে ইউনুস বর্ণনা করেছেন যুহরী থেকে, (তিনি বলেছেন): আমার কাছে সালেম বিন আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে (এই যে, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. বলেছেন): আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে দেখেছি, তিঁনি যখন নামায পড়তে দাঁড়াতেন, (তখন) তিঁনি তাঁর দু হাত’কে তাঁর কাঁধ বরাবর পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি যখন রুকু করার জন্য তাকবীর বলতেন তখন তেমনটাই করতেন। তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও তেমনটাই করতেন এবং বলতেন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’। তবে সিজদা’র ক্ষেত্রে তিনি ওমনটা করতেন না [সহিহ বুখারী- ১/২৪১ হাদিস ৭৩৬; সহিহ মুসলীম, হাদিস ৩৯০; সুনানে দারাকুতনী- ২/৪০ হাদিস ১১১২]
 
#১.১.২ ইমাম বুখারী (জ: ১৯৪ হি:-মৃ:২৫৬ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সহিহ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ الوَاسِطِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ خَالِدٍ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، أَنَّهُ رَأَى مَالِكَ بْنَ الحُوَيْرِثِ إِذَا صَلَّى كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَ يَدَيْهِ، وَ حَدَّثَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَنَعَ هَكَذَا . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب الأذان , باب رفع اليدين إذا كبر وإذا ركع وإذا رفع: رقم ٧٣٧، و مسلم فى الصلاة باب استحباب رفع اليدين حذو المنكبين. . رقم ٣٩١ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইসহাক আল-ওয়াসিতী, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে খালেদ বিন আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন খালীদ থেকে, তিনি আবু কীলাবাহ থেকে, (এই যে, আবু কীলাবাহ বলেছেন): তিনি মালেক বিন হুওয়ারিছ রা.কে দেখেছেন, তিনি যখন নামায পড়তেন তখন (প্রথমে) তাকবীর দিতেন এবং তার দু হাত উঠাতেন। তিনি যখন রুকু করার ইচ্ছে করতেন, তখন তার দু হাত উঠাতেন। তিনি যখন রুকু থেকে তার মাথা উঠাতেন তখন তার দু হাত উঠাতেন। আর তিনি বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এমনটাই করেছেন” [সহিহ বুখারী- ১/২৪১ হাদিস ৭৩৭; সহিহ মুসলীম, হাদিস ৩৯১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৭৪৫; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৮৭৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৮০৯]
 
#১.১.৩ ইমাম বুখারী (জ: ১৯৪ হি:-মৃ:২৫৬ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সহিহ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنَا سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ:  رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ افْتَتَحَ التَّكْبِيرَ فِي الصَّلاَةِ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ حِينَ يُكَبِّرُ حَتَّى يَجْعَلَهُمَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ فَعَلَ مِثْلَهُ، وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، فَعَلَ مِثْلَهُ، وَقَالَ: رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ، وَلاَ يَفْعَلُ ذَلِكَ حِينَ يَسْجُدُ، وَلاَ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب الأذان , باب: إلى أين يرفع يديه؟ : رقم ٧٣٨ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আবুল ইয়ামান, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে শুয়ায়েব বর্ণনা করেছেন যুহরী থেকে, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে সালেম বিন আব্দিল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, (তাঁর পিতা সাহাবী) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন: আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে দেখেছি, তিঁনি নামাযের মধ্যে (প্রথমে) তাকবীর বলে (নামায) শুরু করতেন। (আমি লক্ষ্য করেছি) তিনি তাকবীর বলার সময় তার দু হাতকে তার কাঁধ বরাবর পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি যখন রুকু করার জন্য তাকবীর দিতেন তখন ওই ভাবেই (দু হাত উত্তলন) করতেন। তিনি যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন, তখনও ওই ভাবে (দু হাত উত্তলন) করতেন এবং বলতেন: ‘রব্বানাা লাকাল হামদ’। তবে তিনি সিজদা করার সময় ওভাবে (দু হাত উত্তলন) করতেন না, আর না তিনি (প্রথম) সিজদা থেকে তাঁর মাথা উঠানোর সময় (অমনটা করতেন) [সহিহ বুখারী- ১/২৪১ হাদিস ৭৩৮]
 
উপরের এই সকল সহিহ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণিত হয়, রাসুলুল্লাহ ﷺ নামাযের মধ্যে শুধুমাত্র ৩ (তিন) টি স্থানে ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন-
 
(১) তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন;
(২) রুকুতে যাওয়ার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন;
(৩) রুকু থেকে উঠে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন।
 
১.২ তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়, রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময়, দ্বিতীয় রাকাত শেষে দাঁড়ানোর সময় ‘রাফউল ইয়াদাইন’ করার দলিল
 
#১.২.১ ইমাম বুখারী (জ: ১৯৪ হি:-মৃ:২৫৬ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সহিহ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا عَيَّاشٌ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، قَالَ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ ، وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ ، وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَ يَدَيْهِ ، وَإِذَا قَامَ مِنْ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ ، وَرَفَعَ ذَلِكَ ابْنُ عُمَرَ إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب الأذان , باب رفع اليدين إذا قام من الركعتين: ١/٢٣١ رقم ٧٣٩ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আইয়াশ, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আব্দুল আ’লা, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন  নাফে এই যে: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. যখন নামায শুরু করতেন, তখন তিঁনি তাকবীর বলতেন ও তাঁর দু হাত উঠাতেন। তিঁনি যখন রুকু করতেন, তখন তাঁর দু হাত উঠাতেন, যখন (রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে) ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন, তখন তাঁর দু হাত উঠাতেন। যখন দু’রাকাআত (শেষ হলে) পর (তৃতীয় রাকাতের জন্য) দাঁড়াতেন, তখনও তিঁনি তাঁর দু হাত উঠাতেন। (আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. এই আমলটিকে আল্লাহ’র নবী ﷺ-এর (আমলের) দিকে সম্পৃক্ত করেছেন; (তথা রাসুলুল্লাহ ﷺ এমনটাই করতেন) [সহিহ বুখারী- ১/২৪১ হাদিস ৭৩৯]
 
#১.২.২ ইমাম নাসায়ী (জ: ২১৫হি: – মৃ: ৩০৩ হি:) রহ.তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুযতাবা (সুনানুস সুগরা)’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَاللَّفْظُ لَهُ، قَالَا: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ: سَمِعْتُهُ يُحَدِّثُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا صَنَعَ حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ . رواه النسائي في سننه , كتاب السهو, اب رفع اليدين في القيام إلى الركعتين الأخريين : رقم ١١٨١، و ايضا رواه غيره ، و صححه البيهقي في السنن الصغرى: ١/١٦٠ ، و ابن العربي في عارضة الأحوذي: ١/٣٣٩، و ابن تيمية في مجموع الفتاوى: ٢٢/٤٥٣، و ابن القيم في تهذيب السنن: ٢/٤١٦ ، و صححه الألباني في صحيح سنن النسائي و في صحيح الترمذي – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইয়া’কুব বিন ইব্রাহীম আদ-দাওরাকী এবং মুহাম্মাদ বিন বাশশার -আর বর্ণনাটা তার, তারা দুজনই বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইয়াহইয়া বিন সাঈদ, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আব্দুল হামীদ বিন জা’ফর, তিনি বলেছেন: আমার কাছে মুহাম্মাদ বিন আমর আত্বা বর্ণনা করেছেন আবু হুমায়েদ আস-সায়েদী রা. থেকে, (এই যে), তিনি বলেন: আমি তাঁকে এই হাদিস বলতে শুনেছি যে: রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন দুই সিজদাহ থেকে উঠে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর কাঁধ বরাবর পর্যন্ত দু হাত উঠাতেন, যেমনটা করতেন নামায শুরু করার সময় [সুনানে নাসায়ী-  হাদিস ১১৮১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৭৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৮৬২; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩০৪; সুনানুস সুগরা, ইমাম বাইহাকী- ১/১৬০]
 
ফায়দা: এই হাদিসে إِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ (যখন দুই সিজদাহ থেকে উঠে দাঁড়াতেন) -এর অর্থ অনেকে করেছেন “যখন দুই রাকাত থেকে উঠে দাঁড়াতেন”, যেমনটা উপরে বুখারীর হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন। অর্থাৎ, এই ব্যাখ্যা অনুসারে, এখানে ‘প্রথম সিজদাহ’ বলতে ‘প্রথম রাকাতের সিজদা’র কর্ম’ এবং ‘দ্বিতীয় সিজদাহ’ বলতে ‘দ্বিতীয় রাকাতের সিজদা’র কর্ম’ সম্পন্ন করার মাধ্যমে ওই দুই রাকাআত শেষ করাকেই সংক্ষেপে বলা হয়েছে যে, ‘যখন দুই সিজদাহ থেকে উঠে দাঁড়াতেন’। [আল-মাজমু’, ইমাম নববী- ৩/৪০১; বাদরুল মুনির, কাজবিনী- ২/৪২০]
 
উপরের এই সকল সহিহ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণিত হয়, রাসুলুল্লাহ ﷺ নামাযের মধ্যে ৪ (চার) টি স্থানে ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন-
 
(১) তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন;
(২) রুকুতে যাওয়ার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন;
(৩) রুকু থেকে উঠে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন;
(৪) দ্বিতীয় রাকাত শেষ করে বৈঠক থেকে উঠে দাঁড়োনো কালে তাকবীর বলার পর ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন।
 
১.৩ নামাযের মধ্যে প্রত্যেক ঝোঁকার ও ওঠার স্থানে ‘রাফউল ইয়াদাইন’ করার দলিল
 
এই জামানার বিখ্যাত মুহাদ্দেস শায়েখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আলবানী (জ: ১৩৩৩ হি: – মৃ: ১৪২০ হি:) রহ. লিখেছেন- قلت: قد ثبت الرفع في التكبيرات الأخرى أيضا، أما الرفع عند الهوئي إلى السجود والرفع منه، ففيه أحاديث كثيرة عن عشرة من الصحابة، قد خرجتها في ” التعليقات الجياد “، منها عن مالك بن الحويرث……اورده محمد ناصر الألباني في تمام المنة : ١٧٢ – “আমি বলি, (তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া ও রুকু থেকে ওঠার স্থান ছাড়াও নামাযের) অপরাপর তাকবীরের স্থানগুলিতেও রাফে ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) করারটা (সহিহ ও নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা দৃঢ়ভাবে) প্রমাণিত। যেমন: সিজদায় যাওয়ার সময়, সিজদাহ থেকে ওঠার সময় (ইত্যাদি)। এ সম্পর্কে হাদিস রয়েছে প্রচুর; দশজন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর আমি التعليقات الجياد -এর মধ্যে এসবের তাখরীয (রেওয়ায়েতের সূত্রসমূহ বের করে করে উল্লেখ) করে দিয়েছি, (প্রয়োজনে সেখানে দেখে নেয়া যেতে পারে)”। [তামামুল মিন্নাহ ফীত তা’লিকি আলা ফিকহিস সুন্নাহ, আলবানী- ১৭২ পৃষ্ঠা] 
 
আমরা নিম্নে এ বিষয়ক বিভিন্ন সহিহ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত উল্লেক করছি। পাঠকবৃন্দ খুব মনযোগ সহকারে পাঠ করুন।
 
#১.৩.১ ইমাম নাসায়ী (জ: ২১৫হি: – মৃ: ৩০৩ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুযতাবা (সুনানুস সুগরা)’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ نَصْرِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ، أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَفَعَ يَدَيْهِ فِي صَلاَتِهِ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ وَإِذَا سَجَدَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا فُرُوعَ أُذُنَيْهِ ‏. رواه النسائي في سننه , كتاب التطبيق , باب رفع اليدين للسجود : ١٠٨٤ و ١٠٨٥، و صححه الألباني في صحيح سنن النسائي و ايضا في كتاب أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم : ٢/٧٠٧ و في ارواء الغليل :٢/٦٧ و في تمام المنة : ص ١٧٢ قال : أخرجه النسائي وأحمد وابن حزم بسند صحيح على شرط مسلم، وأخرجه أبو عوانة في ” صحيحه ” كما في ” الفتح ” للحافظ، ثم قال: و هو أصح ما وقفت عليه من الأحاديث في الرفع في السجود  – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে ইবনু আবি আদী বর্ণনা করেছেন শু’বা থেকে, তিনি কাতাদাহ থেকে, তিনি নাসর বিন আসেম থেকে, তিনি মালেক বিন হুয়াইরিছ রা. থেকে (এই যে, মালেক বিন হুয়াইরিছ রা. বলেছেন): ‘তিনি নবী ﷺকে দেখেছেন তিঁনি তাঁর নামাযের মধ্যে তাঁর দুই হাত উত্তলন (রফে ইয়াদাইন) করতেন -যখন তিঁনি রুকু করতেন, যখন তিঁনি রুকু থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন, যখন তিঁনি সিজদাহ করতেন এবং যখন তিঁনি সিজদা থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন। এমনকি তিঁনি তাঁর দু হাতকে তাঁর কানের লতী বরাবর পর্যন্ত উঠাতেন [সুনানে নাসায়ী– ২/২০৫ হাদিস ১০৮৪, ১০৮৫; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ- ২/৯৪; মুসনাদে আহমদ- ৩/৪৩৬, ৪৩৭, ৫/৫৩; আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৪/৯২]
 
ফায়দা: হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন- و هو أصح ما وقفت عليه من الأحاديث في الرفع في السجود – ‘আমার জানা মতে, (নামাযের) সিজদার ক্ষেত্রে রফে ইয়াদাইন বিষয়ক হাদিস সমূহের মধ্যে এই রেয়ায়েতটিই সর্বাধিক সহিহ’। [ফাতুহুল বারী, ইবনে হাজার- ২/১৮৫] শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেছেন- أخرجه النسائي وأحمد وابن حزم بسند صحيح على شرط مسلم – ‘ইমাম নাসায়ী, আহমদ ও ইবনে হাযাম এটি রেওয়ায়েত করেছেন ইমাম মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ সনদে’। [আসলু সিফাতিস সালাত, আলবানী- ১/৭০৭] 
 
#১.৩.২ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (জ: ১৬৪ হি: – মৃ: ২৪১ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসনাদ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا عَفَّانُ ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ ، عَنْ نَصْرِ بْنِ عَاصِمٍ ، عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حِيَالَ فُرُوعِ أُذُنَيْهِ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ . اخرجه أحمد بن حنبل في مسنده , أَوَّلُ مُسْنَدِ الْبَصْرِيِّينَ بَقِيَّةُ حَدِيثِ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ : ٣/٤٣٦ ، و صححه الألباني في ارواء الغليل :٢/٦٧ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আফফান, (তিনি বলেছেন): আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হাম্মাম, (তিনি বলেছেন:) আমাদের কাছে কাতাদাহ বর্ণনা করেছেন নাসর বিন আসেম থেকে, তিনি মালেক বিন হুয়াইরিছ রা. থেকে (এই যে, মালেক বিন হুয়াইরিছ রা. বলেছেন): ‘নবী ﷺ রুকু এবং সিজদার ক্ষেত্রে তাঁর দুই হাতকে তাঁর কানের লতী বরাবর পর্যন্ত উঠাতেন [মুসনাদে আহমদ- ৩/৪৩৬]
 
ফায়দা: শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেছেন- سنده صحيح – ‘এর সনদ সহিহ’। [ইরওয়াউল গালীল, আলবানী- ২/৬৭]
 
#১.৩.৩ ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (জ: ১৫৯ হি: – মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا الثَّقَفِيُّ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ . رواه ابن أبي شيبة في المصنف : ٢/٦٣ رقم ٢٤٤٦، و صححه حسين عبد الحميد في زوائد ابن أبي شيبه على الكتب الستة من أول المصنف إلى آخر كتاب : ١/ ٢١٣ رقم ١٣٢ و الألباني في ارواء الغليل : ٢/٦٨، و رواه أَبو يعْلى في مسنده : ٦/٣٩٩ رقم ٣٧٥٢، قال الهيثمي في مجمع الزوائد ومنبع الفوائد : ٢/١٠١ : رواهُ أَبو يَعْلى وَرِجَاله رِجَالُ صَحِيحٍ، رواه لدارقطني في سننه : ٢/٤٢ رقم ١١١٩ و قال الألباني في كتاب أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم : ٢/٧٠٨ : هذا إسناد صحيح جداً  – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ছাকাফী, তিনি হুমায়েদ থেকে, তিনি আনাস (বিন মালেক রা.) থেকে (এই যে, আনাস বিন মালেক রা. বলেছেন): নবী ﷺ (নামাযের মধ্যে) রুকু এবং সিজদার ক্ষেত্রে তাঁর দু হাত উঠাতেন [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২/৬৩ হাদিস ২৪৪৬; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ৬/৩৯৯ হাদিস ৩৭৯৩; সুনানে দারাকুতনী- ২/৪২ হাদিস ১১১৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ২/১০১ হাদিস ২৫৮; আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৪/৯২]
 
ফায়দা: শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেছেন- هذا إسناد صحيح جداً – ‘এর সনদ খুবই সহিহ’। [আসলু সিফাতিস সালাত, আলবানী- ১/৭০৭] স্বয়ং আনাস রা.-এর নিজেরও আমল ছিল তিনি নামাযের প্রত্যেক রাকাআতের দুই সিজদা’র মাঝে ‘রফে ইয়াদাইন’ করতেন। যেমন: ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ নিজ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَنَسٍ أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ بَيْنَ السَجْدَتَيْنِ . رواه ابن أبي شيبة في المصنف , في رفع اليدين بين السجدتين : ٢/١٢٦ رقم ٢٨٠٨ – “আমাদের কাছে ওকী বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ বিন সালামাহ থেকে, তিনি ইয়াহইয়া বিন আবি ইসহাক থেকে, তিনি (সাহাবী) আনাস রা. সম্পর্কে বলেছেন: তিঁনি (নামাযের মধ্যে প্রত্যেক রাকাআতে) দুই সিজদা’র মাঝে তাঁর দুই হাত উত্তলন (রফে ইয়াদাইন) করতেন। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২/১২৬ হাদিস ২৮০৮]
 
#১.৩.৪ ইমাম ত্বাবরানী (জ: ২৬০ হি: – মৃ: ৩৬০ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মু’জামুল আউসাত’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حدثنا احمد بن عبد الوهاب قال:حدثنا ابي قال :حدثنا الجراح بن مليح عن ارطاة بن المندر عن نافع عن ابن عمر:أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ التَّكْبِيرِ لِلرُّكُوعِ، وَعِنْدَ التَّكْبِيرِ حِينَ يَهْوِي سَاجِدًا ، روَاه الطبَرانِي في الْأوْسطِ : ٢/١٠٢ و في الكبير : ٦/٢٩٤ رقم ١٥٥، قال الهيثمي في مجمع الزوائد ومنبع الفوائد : ٢/١٠٢ رقم ٢٥٩٠ : و إِسناده صَحِيح، و روَاه ابن حزم في المحلي : ٤/٩٣ ، صححه الشيخ الألباني في أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم : ١/ ٧٠٩ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন আব্দিল ওয়াহহাব, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আমার পিতা (আব্দুল ওয়াহহাব), তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে সিরাজ বিন মুলায়হ বর্ণনা করেছেন ইরত্বাহ ইবনুল মানদার থেকে, তিনি নাফে থেকে, তিনি (আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. থেকে (এই যে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন): নবী ﷺ (নামাযের মধ্যে) তাঁর দু হাত উঠাতেন -রুকুর জন্য তাকবীর বলার সময় এবং সিজদার যাবার ক্ষেত্রে যখন তাকবীর বলতেন তখন [আল-মু’জামুল আউসাত, ইমাম ত্বাবরাণী- ২/১০২; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ৬/২৯৪; আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৪/৯৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ২/১০২ হাদিস ২৫৯০]
 
ফায়দা: ইমাম হাইছামী রহ. বলেছেন- اسناده صحيح ‘এর সনদ সহিহ’। [মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ২/১০২] শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেছেন- وهذا سند صحيح – ‘এর সনদ সহিহ’। [আসলু সিফাতিস সালাত, আলবানী- ১/৭০৭] এই হাদিসে- عِنْدَ التَّكْبِيرِ حِينَ يَهْوِي سَاجِدًا – (সিজদার যাবার ক্ষেত্রে যখন তাকবীর বলতেন তখন) -বলতে মূলত: রুকু থেকে উঠে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার পর যখন সিজদা’য় যাওয়ার জন্য তাকবীর দিতেন তখন রফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) করার দিকে ইংগীত করে। [ই’লাউস সুনান, উসমানী- ৩/৮] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (জ: ১৫৯ হি: – মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: نا ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: رَأَيْتُهُ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، فَقُلْتُ لَهُ: مَا هَذَا؟ فَقَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ بِيَدَيْهِ . رواه ابن أبي شيبة في المصنف : ٢/٦٤ رقم ٢٤٥١ – “আমাদের কাছে ইবনু ফুজায়েল বর্ণনা করেছেন আসেম বিন কুলায়েব থেকে, তিনি মুহারেব বিন দিছার থেকে, তিনি (আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. সম্পর্কে (বলেন): ‘আমি তাঁকে দেখেছি, তিঁনিরুকু এবং সিজদার ক্ষেত্রে তাঁর দু হাত উত্তলন (রাফে ইয়াদাইন) করতেন’। এতে আমি তাঁকে বললাম: ‘এটা কী (করলেন)’? তখন তিঁনি বললেন: ‘নবী ﷺ (নামাযের মধ্যে) যখন দু রাকায়াত থেকে উঠে দাঁড়াতেন তখন তিঁনি তাকবীর দিতেন এবং তাঁর দু হাত উত্তলন (রাফে ইয়াদাইন) করতেন”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২/৬৪ হাদিস ২৪৫১]
 
#১.৩.৫ ইমাম হুমাইদী (মৃ: ২১৯ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসনাদ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- حدثنا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ ، قَالَ : سَمِعْتُ زَيْدَ بْنَ وَاقِدٍ ، يُحَدِّثُ ، عَنْ نَافِعٍ ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ : كَانَ إِذَا أَبْصَرَ رَجُلًا يُصَلِّي لَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ كُلَّمَا خَفَضَ وَرَفَعَ حَصَبَهُ حَتَّى يَرْفَعَ يَدَيْهِ . رواه الحميدي في مسنده ، أَحَادِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : ٢/٥١٥ رقم ٦٢٧، و اسناده صحيح، و اخرجه الدارقطني في سننه , كتاب الصلاة , باب ذكر التكبير ورفع اليدين عند الافتتاح والركوع والرفع منه وقدر ذلك واختلاف الروايات : ٢/٤١ رقم ١١١٨ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আল-ওয়ালীদ বিন মুসলীম, তিনি বলেছেন: আমি যায়েধ বিন ওয়াকীদকে বলতে শুনেছি, তিনি নাফে থেকে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. যখন কোনো ব্যাক্তিকে দেখতেন যে, সে (নামাযের মধ্যে) প্রত্যেক ঝোঁকা ও ওঠার সময় তার দুই হাত না উত্তলন (রফে-ইয়াদাইন) না করছে, তিনি তাকে কংকর (মাটি বা পাথড়ের টুকড়া) নিক্ষেপ করতেন -যাবৎ না সে (নামাযের ওই সকল স্থানে) তার দুই হাত উত্তলন (রফে-ইয়াদাইন) করে [মুসনাদে হুমাইদী- ২/৫১৫ হাদিস ৬২৭; সুনানে দারাকুতনী- ২/৪১ হাদিস ১১১৮; আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার- ১৯/১৩৪]
 
ফায়দা: এই হাদিসের সনদ সহিহ। এখানে- كُلَّمَا خَفَضَ وَرَفَعَ – (প্রত্যেক ঝোঁকা ও ওঠার সময়)– কথাটির মধ্যে ‘রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময়, সিজদা করতে যাওয়ার সময়, প্রথম সিজদাহ থেকে মাথা ওঠানোর সময়, আবার দ্বিতীয় সিজদাহ করতে যাওয়ার সময়, আবার সিজদাহ থেকে উঠে পরের রাকাআতের জন্য দাঁড়ানোর সময় -এসব কর্মকেই শামিল করে নেয়। و الله اعلم بالصواب    
 
#১.৩.৬ ইমাম আবু জা’ফর তাহাবী (জ: ২২৯ হি:-মৃ:৩২১ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘শারহু মুশকিলীল আছার’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْأَعْلَى بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي كُلِّ خَفْضٍ، وَرَفْعٍ، وَرُكُوعٍ، وَسُجُودٍ وَقِيَامٍ، وَقُعُودٍ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ، وَيَزْعُمُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ . اخرجه الإمام الطحاوي في شرح مشكل الآثار , باب بيان مشكل ما روي عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما في هذا المعنى: ١٥/٤٦ رقم ٥٨٣١ و قال : وَكَانَ هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ رِوَايَةِ نَافِعٍ شَاذًّا لِمَا رَوَاهُ عُبَيْدُ اللهِ، وَ قَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ نَافِعٍ بِخِلَافِ مَا رَوَاهُ عَنْهُ عُبَيْدُ اللهِ، قال شعيب ارناوؤط: رجاله ثقات رجال الشيخين – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইসহাক বিন ইব্রাহীম, (তিনি বলেছেন): আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন নাসর বিন আলী আল-যাহদামী, (তিঁনি বলেছেন): আমাদের কাছে আব্দুল আ’লা বিন আব্দিল আ’লা বর্ণনা করেছেন নাফে থেকে, তিনি (তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. সম্পর্কে (এই যে): ‘তিঁনি (নামাযের মধ্যে) প্রত্যেক ঝোঁকা ও ওঠার ক্ষেত্রে তাঁর দু হাত উঠাতেন; (প্রত্যেক) রুকু, সিজদাহ, কিয়াম (দাঁড়ানো) এবং দু সিজদা’র মাঝে কুঊদ (বসা)-এর সময় (তাঁর দু হাত উঠাতেন)। আর তিঁনি বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এমনটা করতেন [শারহু মুশকিলীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১৫/৪৬ হাদিস ৫৮৩১]
 
ফায়দা: শায়েখ শুয়াইব আরনাউত রহ. এই রেওয়ায়েথটি সম্পর্কে টিকায় লিখেছেন- رجاله ثقات رجال الشيخين – ‘এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ (নির্ভরযোগ্য); সকলেই বুখারী মুসলীমের বর্ণনাকারী’। [তাহকীম শারহু মুশকিলীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১৫/৪৬] তাছাড়া বর্ণনাটি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর নামায সম্পর্কে তাঁর গোলাম বিশিষ্ট তাবেয়ী নাফে রহ. বর্ণনা করেছেন। আর খোদ নাফে রহ.-এর নামায সম্পর্কে ইমাম তাহাবী রহ. তাঁর ‘শারহু মুশকিলীল আছার’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ دَاوُدَ بْنِ مُوسَى، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ قَالَ: رَأَيْتُ طَاوُسًا وَنَافِعًا يَرْفَعَانِ أَيْدِيَهُمَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ. قَالَ حَمَّادٌ: وَرَأَيْتُ طَاوُسًا وَأَيُّوبَ يَفْعَلَانِهِ . اخرجه الإمام الطحاوي في شرح مشكل الآثار , باب بيان مشكل ما روي عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما في هذا المعنى: ١٥/٤٩ و قال : ” فَكَانَ فِعْلُ نَافِعٍ هَذَا مِمَّا قَدْ دَلَّ عَلَى مَا رَوَاهُ عَنْهُ مَنْ سِوَاهُ، وَكَانَ بِمَا فِي هَذَا الْحَدِيثِ أَيْضًا مِنْ تَمَسُّكِ أَيُّوبَ بِذَلِكَ مَا قَدْ دَلَّ عَلَى أَنَّ الْأَمْرَ كَانَ عِنْدَهُ فِيهِ كَذَلِكَ، إِمَّا بِأَنْ يَكُونَ فِي حَدِيثِ نَافِعٍ تَقْصِيرٌ عَنْ ذِكْرِهِ، أَوْ يَكُونَ أَخَذَهُ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ، عَنْ نَافِعٍ فَعَمِلَ بِهِ. وَقَدْ كَانَ حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ يَذْهَبُ فِي ذَلِكَ هَذَا الْمَذْهَبَ أَيْضًا . قال شعيب ارناوؤط: رجاله ثقات رجال الشيخين، و ايضا اخرجه ابن ابي شيبة : ١/٢٧١ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন দাউদ বিন মুসা, (তিনি বলেছেন): আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন সুলায়মান বিন হারব, (তিঁনি বলেছেন): আমাদের কাছে হাম্মাদ বিন যায়েদ বর্ণনা করেছেন আইয়্যুব থেকে (এই যে), তিনি বলেছেন: ‘আমি (বিশিষ্ট দুজন তাবেয়ী) ত্বাউস এবং নাফেকে (নামায পড়তে) দেখেছি। তাঁরা দুজনে দু সিজদা’র মাঝে রফে-ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) করতেন। [শারহু মুশকিলীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১৫/৪৬; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ১/২৭১; আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৪/৯৩] এই রেওয়ায়েতটি সম্পর্কেও শায়েখ শুয়াইব আরনাউত রহ. লিখেছেন- رجاله ثقات رجال الشيخين – ‘এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ (নির্ভরযোগ্য); সকলেই বুখারী মুসলীমের বর্ণনাকারী’। [তাহকীম শারহু মুশকিলীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১৫/৪৬] বলা বাহুল্য, নাফে রহ. তাঁর মালিক আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর নামায দেখে ও তাঁর থেকে হাদিস শুনেই এধরনের আমল করেছিলেন। و الله اعلم بالصواب
 
#১.৩.৭ ইমাম ইবনে হাযাম (জ: ৩৮৪ হি: – মৃ: ৪৫৬ হি:) রহ. তাঁর কিতার ‘আল-মুহাল্লা’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ثِنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحِيمِ ثِنَا أَحْمَدُ بْنُ خَالِدٍ ثِنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ السَّلَامِ الْخُشَنِيُّ ثِنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ثِنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَبْدِ الْمَجِيدِ الثَّقَفِيُّ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ، وَإِذَا رَكَعَ، وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، وَإِذَا سَجَدَ، وَبَيْنَ الرَّكْعَتَيْنِ، يَرْفَعُهُمَا إلَى ثَدْيَيْهِ . رواه ابن حزم في المحلي , الأعمال المستحبة في الصلاة وليست فرضا , مسألة رفع اليدين عند كل ركوع وسجود وقيام وجلوس سوى تكبيرة الإحرام : ٤/٩٣، و قال الألباني في تمام المنة : ١٧٢: إسناده قوي ….. و سنده صحيح على شرط البخاري في الصحيح ، و في أصل صفة صلاة النبي : ١/٧٠٩ : و هذا سند صحيح …. وهو موقوف و لكنه في حكم المرفوع – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইউনুস বিন আব্দিলাহ, (তিনি বলেছেন) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আব্দির রহমান, (তিনি বলেছেন) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন খালেদ, (তিনি বলেছেন) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন আব্দিস সালাম আল-খুশানী, (তিনি বলেছেন) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন বাশশার, (তিনি বলেছেন) আমাদের কাছে আব্দুল ওয়াহহাব বিন আব্দিল মাজিদ আছ-ছাকাফী বর্ণনা করেছেন উবাইদুল্লাহ বিন ওমর থেকে, তিনি নাফে থেকে, তিনি (আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. সম্পর্কে (বলেছেন যে): তিঁনি (নামাযের মধ্যে) তাঁর দু হাত উত্তলন (রফে ইয়াদাইন) করতেন -যখন নামায শুরু করতেন, যখন রুকু করতেন, যখন (রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে) বলতেন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’, যখন সিজদাহ করতেন এবং (আরো রফে ইয়াদাইন করতেন) দুই রাকাআতের মাঝখানে। আর (এসব ক্ষেত্রে) তিঁনি তাঁর দু হাতকে তাঁর দুই স্তন পর্যন্ত তুলতেন [আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৪/৯৩; রাফউল ইয়াদাইন, ইমাম বুখারী- ২০ পৃষ্ঠা]
 
ফায়দা: শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেছেন- إسناده قوي ….. و سنده صحيح على شرط البخاري في الصحيح – ‘এর সনদ শক্তিশালী …. এর সনদ আস-সহিহ’তে (নির্ধারনকৃত) ইমাম বুখারীর শর্ত অনুযায়ী সহিহ’ । [তামামুল মিন্নাহ, আলবানী- ১৭২ পৃষ্ঠা] আলবানী রহ.আরো বলেছেন- هذا سند صحيح …. وهو موقوف و لكنه في حكم المرفوع – ‘এর সনদ সহিহ….. বর্ণনাটি মাওকুফ (সাহাবীর আমলের বর্ণনা), কিন্তু এটি মারফু’র (রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী বা আমলের) হুকুমে পড়ে। [আসলু সিফাতিস সালাত, আলবানী- ১/৭০৯] এর কারণ হল, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. নামাযের মত একটি নিরেট ইবাদতের মধ্যে নিজ থেকে কোনো কাজ করতে পারেন না। বরং, তিনি নামাযের মধ্যে সেই আমলই করেছেন, যা তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺকে কখনো করতে দেখেছেন। এজন্য, এই বর্ণনাটিতে যদিও আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা.-এর আমলের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তা মূলত: রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কৃত আমলের হুকুমে পড়ে। ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (জ: ১৫৯ হি: – মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: نا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السَّجْدَةِ الْأُولَى . رواه ابن أبي شيبة في المصنف , في رفع اليدين بين السجدتين : رقم – “আমাদের কাছে আবু উসামা বর্ণনা করেছেন উবায়দুল্লাহ থেকে, তিনি নাফে থেকে, তিনি (আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর সম্পর্কে (বলেন): তিঁনি (নামাযের মধ্যে) তাঁর দু হাত উঠাতেন -যখন প্রথম সিজদাহ থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২/৬৪ হাদিস ২৪৫১] 
 
#১.৩.৮ ইমাম দারাকুতনী (জ: ৩০৬ হি: – মৃ: ৩৮৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সুনান’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْوَكِيلُ , ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ , ثنا هُشَيْمٌ , عَنْ حُصَيْنٍ , وَحَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , وَعُثْمَانُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ , قَالَا: نا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى , نا جَرِيرٌ , عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى إِبْرَاهِيمَ فَحَدَّثَهُ عَمْرُو بْنُ مُرَّةَ , قَالَ: صَلَّيْنَا فِي مَسْجِدِ الْحَضْرَمِيِّينَ , فَحَدَّثَنِي عَلْقَمَةُ بْنُ وَائِلٍ , عَنْ أَبِيهِ , أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حِينَ يَفْتَتِحُ الصَّلَاةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا سَجَدَ . اخرجه الدارقطني في سننه ,كتاب الصلاة , باب ذكر التكبير ورفع اليدين عند الافتتاح والركوع والرفع منه وقدر ذلك واختلاف الروايات : ١/٢١٢ رقم ١١٠٤، قال النيموي في آثار السنن : ١/٢٦١ رقم ٤٠٠: اسناده صحيح، و قال الألباني في كتاب أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم: ٢/٧٠٧ : وهذا سند صحيح على شرط مسلم، و رواه ايضا غيره  – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন আব্দিলাহ আলওয়াকিল, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হাসান বিন আরাফাহ, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে হুশায়ম বর্ণনা করেছেন হুসাইন থেকে, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হুসাইন বিন ইসমাঈল ও উসমান বিন মুহাম্মাদ বিন জা’ফর, তারা দুজনে বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইউনুস বিন মুসা, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে জারীর বর্ণনা করেছেন হুসাইন বিন আব্দির রহমান থেকে, তিনি বলেন: ‘আমরা (একবার) ইব্রাহীম (নখয়ী) -এর কাছে গিয়ে আমর বিন মুররাহ’র হাদিস শুনালাম। তিনি বলেছেন: আমরা ‘মসজিদে-হাজরামিয়্যীন’-এ নামায পড়লাম। তখন আলকামাহ বিন ওয়ায়েল তার পিতা (ওয়ায়েল বিন হুজর রা.) থেকে হাদিস শুনালেন যে, তিনি রাসলুল্লাহ ﷺকে দেখেছেন যে, তিঁনি তাঁর দু হাত উঠাতেন নামায শুরু করার সময়, আর যখন রুকু করতেন এবং যখন সিজদাহ করতেন”। [সুনানে দারাকুতনী– ২/৪৪ হাদিস ১১২১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৮৮৪৪; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৮২৬; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১/২২৪; আল-মুআত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ- ১০৭; শারহু মুশকিলিল আছার, ইমাম তাহাবী- ১৫/৩৫ হাদিস ৫৮২৬]
 
ফায়দা: নিমুভী রহ. বলেছেন- اسناده صحيح ‘এর সনদ সহিহ’। [আছারুস সুনান, নিমুভী- ১/২৬১] শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ.  বলেছেন- وهذا سند صحيح على شرط مسلم – ‘এর সনদ ইমাম মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ’। [আসলু সিফাতিস সালাত, আলবানী- ১/৭০৭] 
 
#১.৩.৯ ইমাম দারেমী (জ: ১৮১ হি: – মৃ: ২৫৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সুনান’-এ হাসান সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- أَخْبَرَنَا سَهْلُ بْنُ حَمَّادٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، حَدَّثَنِي أَبُو الْبَخْتَرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْيَحْصُبِيِّ، عَنْ وَائِلٍ الْحَضْرَمِيِّ، أَنَّهُ صَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ يُكَبِّرُ إِذَا خَفَضَ، وَ إِذَا رَفَعَ، وَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ التَّكْبِيرِ . أخرجه الدارمي في سننه ، باب في رفع اليدين في الركوع والسجود : ٢/٧٩٦ رقم ١٢٨٧، و الطيالسي في مسنده : ١٣٧، و أحمد في مسنده : ٤/٣١٦، قال الألباني في كتاب أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم: ٢/٧٠٧ : وهذا سند حسن  – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন সাহল বিন হাম্মাদ, (তিনি বলেছেন): আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন শু’বা বিন আমর বিন মুররা, (তিনি বলেছেন): আমার কাছে আবুল বাখতারী বর্ণনা করেছেন আব্দুর রহমান আল-ইয়াহসুবী থেকে, তিনি ওয়ায়েল (বিন হুজর) আল-হাজরামী রা. থেকে (এই যে, ওয়ায়েল (বিন হুজর বলেছেন): “তিনি রাসলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে নামায আদায় করেছেন। (তিনি দেখেছেন যে,) তিঁনি (ﷺ নামাযের মধ্যে) তাকবীর বলতেন -যখন তিঁনি ঝুঁকতেন এবং যখন উঠতেন, আর তাকবীরের সময় তিনি তাঁর হাত উত্তলন (রাফে ইয়াদাইন) করতেন”। [সুনানে দারেমী– ২/৭৯৬ হাদিস ১২৮৭; মুসনাদে আহমদ– ৪/৩১৬; মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসী, হাদিস ১৩৭]
 
ফায়দা: শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. বলেছেন- وهذا سند حسن – ‘এর সনদ হাসান (উত্তম)’। তিনি আরো বলেছেন যে, এই রেওয়ায়েত থেকে অনুমিত হয় যে, রাসলুল্লাহ ﷺ নামাযের মধ্যে প্রত্যেক তাকবীরের সময় রাফে ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) করতেন। [আসলু সিফাতিস সালাত, আলবানী- ১/৭০৭] প্রত্যেক তাকবীরের সময় রফে ইয়াদাইন করার আরো কিছু শাহেদ (সমর্থনযোগ্য) রেওয়ায়েত আছে। যেমন: ইমাম ইবনে মাজাহ রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সুনান’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا رِفْدَةُ بْنُ قُضَاعَةَ الْغَسَّانِيُّ، حَدَّثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عُمَيْرِ بْنِ حَبِيبٍ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَرْفَعُ يَدَيْهِ مَعَ كُلِّ تَكْبِيرَةٍ فِي الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ . رواه ابن ماجة في سننه , كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها , باب رفع اليدين إذا ركع وإذا رفع رأسه من الركوع : رقم ٨٦١، صححه الشيخ الألباني في صحيح ابن ماجة، و حسنه ظفر احمد في إعلاء السنن, باب ترك رفع اليدين في غير الإفتتاح: ٣/٨٤ – “উমায়ের বিন হাবিব রা. বলেছেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ ফরয নামাযের মধ্যে প্রত্যেক তাকবীরের স্থানে তাঁর দু হাত উঠাতেন”। [সুনানে ইবনে মাজাহ- ১/২৮০ হাদিস ৮৬১] আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ كُلِّ تَكْبِيرَةٍ . رواه ابن ماجة : رقم ٨٦٥، صححه الشيخ الألباني في صحيح ابن ماجة – “রাসুলুল্লাহ ﷺ (নামাযের মধ্যে) প্রত্যেক তাকবীরের স্থানে তাঁর দু হাত উঠাতেন”। [সুনানে ইবনে মাজাহ-  হাদিস ৪৬৫] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (জ: ১৫৯ হি: – মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ كُلَّمَا رَكَعَ وَرَفَعَ . رواه ابن أبي شيبة في المصنف : ٢/٦٢ رقم ٢٤٣٨ – “আমাদের কাছে ইবনু ইদ্রিস বর্ণনা করেছেন আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা (কুলাইব) থেকে, তিনি ওয়ায়েল বিন হুজর রা. থেকে (এই যে): ‘আমি নবী ﷺকে দেখেছি, তিঁনি (নামাযের মধ্যে) প্রত্যেক ঝোঁকা ও ওঠার (স্থানে) তাঁর দু হাত উত্তলন (রফে ইয়াদাইন) করতেন”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২/৬২ হাদিস ২৪৩৮]
 
#১.৩.১০ ইমাম নাসায়ী (জ: ২১৫হি: – মৃ: ৩০৩ হি:) রহ.তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুযতাবা (সুনানুস সুগরা)’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَاللَّفْظُ لَهُ، قَالَا: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ: سَمِعْتُهُ يُحَدِّثُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا صَنَعَ حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ . رواه النسائي في سننه , كتاب السهو, اب رفع اليدين في القيام إلى الركعتين الأخريين : رقم ١١٨١، و ايضا رواه غيره ، و صححه البيهقي في السنن الصغرى: ١/١٦٠ ، و ابن العربي في عارضة الأحوذي: ١/٣٣٩، و ابن تيمية في مجموع الفتاوى: ٢٢/٤٥٣، و ابن القيم في تهذيب السنن: ٢/٤١٦ ، و صححه الألباني في صحيح سنن النسائي و في صحيح الترمذي – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইয়া’কুব বিন ইব্রাহীম আদ-দাওরাকী এবং মুহাম্মাদ বিন বাশশার -আর বর্ণনাটা তার, তারা দুজনই বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইয়াহইয়া বিন সাঈদ, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আব্দুল হামীদ বিন জা’ফর, তিনি বলেছেন: আমার কাছে মুহাম্মাদ বিন আমর আত্বা বর্ণনা করেছেন আবু হুমায়েদ আস-সায়েদী রা. থেকে, (এই যে), তিনি বলেন: আমি তাঁকে এই হাদিস বলতে শুনেছি যে: রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন দুই সিজদাহ থেকে উঠে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর কাঁধ বরাবর পর্যন্ত দু হাত উঠাতেন, যেমনটা করতেন নামায শুরু করার সময় [সুনানে নাসায়ী-  হাদিস ১১৮১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৭৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৮৬২; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩০৪; সুনানুস সুগরা, ইমাম বাইহাকী- ১/১৬০]
 
ফায়দা: আমরা এই হাদিসটি উপরের #১.২.২ নং বর্ণনায় উল্লেখ করে এসেছিেএবং সেখানে তার প্রচলিত ব্যাখ্যাও উল্লেখ করেছি। এখানে #১.৩ উপশিরনামের অধীনে আবারো উল্লেখ করলাম, কারণ এ জাতীয় হাদিসগুলো একত্রিত করলে অনুমিত হয় যে, এই হাদিসে إِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ (যখন দুই সিজদাহ থেকে উঠে দাঁড়াতেন) -বলতে একই রাকাতের দুটি সিজদাহ শেষ করার পর পরের রাকাতের জন্য উঠে তাকবীর বলে দাঁড়ানোর সময় রফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) করাও এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে।
 
#১.৩.১০ ইমাম আবু দাউদ (জ: ২০২ হি: – মৃ: ২৭৫ হি:) রহ.তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-সুনান’-একটি সহিহ হাদিস এনেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ ، عَنْ أَبِي هُبَيْرَةَ ، عَنْ مَيْمُونٍ الْمَكِّيِّ ، أَنَّهُ رَأَى عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ ، وَصَلَّى بِهِمْ يُشِيرُ بِكَفَّيْهِ حِينَ يَقُومُ وَحِينَ يَرْكَعُ وَحِينَ يَسْجُدُ وَحِينَ يَنْهَضُ لِلْقِيَامِ ، فَيَقُومُ فَيُشِيرُ بِيَدَيْهِ فَانْطَلَقْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ ، فَقُلْتُ إِنِّي رَأَيْتُ ابْنَ الزُّبَيْرِ صَلَّى صَلَاةً لَمْ أَرَ أَحَدًا يُصَلِّيهَا فَوَصَفْتُ لَهُ هَذِهِ الْإِشَارَةَ ، فَقَالَ : إِنْ أَحْبَبْتَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَى صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاقْتَدِ بِصَلَاةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ . رواه ابو داود السجستاني في سننه , كتاب الصلاة , أبواب تفريع استفتاح الصلاة : ١/١٧٢ رقم ٧٣٩، صححه الألباني في صحيح سنن أبي داود، رواه الإمام أحمد في مسنده , ومن مسند بني هاشم » مسند عبد الله بن العباس بن عبد المطلب عن النبي صلى الله عليه وسلم » بداية مسند عبد الله بن العباس : ١/٢٥٥ رقم ٢٣٠٨ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন কুতায়বাহ বিন সাঈদ, (তিনি বলেছেন) আমাদের কাছে ইবনু লাহিয়াহ বর্ণনা করেছেন আবু হুবাইরাহ থেকে, তিনি মাইমুন আল-মাক্কী থেকে (বর্ণনা করেছেন) যে, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) তাদেরকে নিয়ে নামায পড়ছিলেন এমতাবস্থায় তিনি (তথা মাইমুন আল-মাক্কী) তাঁকে দেখেছেন যে, তিঁনি তাঁর (কান পর্যন্ত দু হাত উঠিয়ে হাতের) কবজি দিয়ে ইশারা করলেন -যখন তিঁনি (নামাযের) কিয়াম করলেন, যখন রুকুতে গেলেন, যখন সিজদাহ করলেন এবং যখন (সিজদাহ শেষে পূণরায় দ্বিতীয় রাকাতের) কিয়ামরে জন্য উঠে দাঁড়াতে উদ্দত হলেন। এরপর দাঁড়িয়ে (রফে ইয়াদাইন করনার্থে) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করলেন। ফলে তিনি (আব্দুল্লাহ) ইবনে আব্বাসের কাছে দ্রুত ছুটে গেলেন (যাতে এই নিয়মে নামায আদায়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করতে পারেন)। (মাইমুন আল-মাক্কী বলেন:) পরে (ইবনে আব্বাসের সাক্ষাত হলে) আমি তাঁকে বললাম: ‘আমি (আব্দুল্লাহ) ইবনে যুবায়ের’কে এমন (ভাবে) নামায পড়তে দেখেছি, যেভাবে আর কাউকে নামায পড়তে দেখিনি’। তারপর আমি তাঁর কাছে তাঁর (নামাযের মধ্যে) এই (রকম ভাবে) ইশারা করার বৈশিষ্টের বিবরন দিলাম’। তখন তিঁনি বললেন: ‘তুমি যদি এ বিষয়টিকে ভালবেসে থাকো যে, তুমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নামাযের দিকে তাকাবে, তাহলে তুমি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের নামাযের অনুসরণ করো [সুনানে আবু দাউদ- ১/১৭২ হাদিস ৭৩৯; মুসনাদে আহমদ– ১/২৫৫ হাদিস ২৩০৮]
 
উপরের এই জাতীয় সহিহ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত গুলো একত্র করলে পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কেঁউ কেঁউ নামাযের মধ্যে প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় এবং ঝোঁকা ও ওঠার ক্ষেত্রগুলোতে রফে-ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) করেছেন; তথা-
 
(১) তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন;
(২) রুকুতে যাওয়ার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ করতেন;
(৩) রুকু থেকে উঠে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ করতেন;
(৪) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদায় যাওয়ার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ করতেন;
(৫) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে প্রথম সিজদাহ থেকে মাথা উঠিয়ে বসার সময় (তথা দুই সিজদা’র মাঝখানে) ‘রাফে ইয়াদাইন’ করতেন;
(৬) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ করতেন;
(৭) রাকাত শেষ করে বৈঠক থেকে উঠে দাঁড়োতে উদ্দত হওয়ার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন। 
(৮) রাকাত শেষ করে বৈঠক থেকে উঠে দাঁড়োনো কালে তাকবীর বলার পর ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন। و الله اعلم بالصواب
 
রাফউল ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) করার বিষয়ে কিছু কথা
 
উপরের সহিহ ও নির্ভরযোগ্য  দলিল সমূহ থেকে প্রমাণিত হল যে, নামাযের মধ্যে শুধুমাত্র ‘তাকবীরে তাহরীমা’, রুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে ওঠার সময় ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করে যারা মনে করেন যে, তারাই শুধু সুন্নাহ মানছেন, তাদের ধারনা বিশুদ্ধ নয়, পূর্ণাঙ্গ নয়। বরং, নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসুলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণের আমল রীতি -যা তাঁরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর থেকে শিখে আমল করেছেন, সেগুলোও সুন্নাহ। যেমন, এই উম্মতের মধ্যে যারা নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসুলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণের আমল রীতি থেকে নামাযের মধ্যে তাকবীরে-তাহরীমা ব্যাতীত অপরাপর স্থানে ‘রাফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) না করার আমলটিকে গ্রহন করেছেন, তারাও সুন্নাহ অনুযায়ীই আমল করছেন। (এসম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে নিম্নে ক্লিক করুন)