মহানবী ﷺ-থেকে বর্ণিত জীবন পরিবর্নকারী কিছু মূল্যবান ও শিক্ষনীয় হাদিস
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
[হাদিসের কিতাবসমূহে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে এমন বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ যা আমলকারীর জীবনকে হেদায়েতের দিকে দারুনভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে। বলা বাহুল্য, এখানে তার সবকটি উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আমি আল্লাহ’র উপর ভরসা করে কিছু কিছু হাদিসের বঙ্গানুবাদ পেশ করা শুরু করলাম। উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত তাম্বিহ অনুযায়ী জীবনকে গড়ে নিতে পারেন।]
মহানবী ﷺ -এর কিছু মূল্যবান ও শিক্ষনীয় হাদিস
# হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ ، وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَيُعْطِي اللَّهُ وَلَنْ يَزَالَ أَمْرُ هَذِهِ الْأُمَّةِ مُسْتَقِيمًا حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ ، أَوْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ – “আল্লাহ যার কল্যান করতে চান, তাকে দ্বীনের (ফকিহ বানান) গভীর জ্ঞান দান করেন। আর আমি (দ্বীনী ইলমের) নিছক একজন বন্টনকারী মাত্র, (বাস্তবে ইলম) আল্লাহ’ই দান করেন। আর এই উম্মতের (দ্বীনী) বিষয়াদি সব সময় (সিরাতে) মুস্তাকিম (সোজা পথের উপর স্থাপিত) থাকবে যাবৎ না কিয়ামত এসে যায় অথবা যাবৎ না আল্লাহ’র নির্দেশ আসে”। [সহীহ বুখারী-১/১৬, হাদিস ৬৭৯৫]
# হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- اتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ ، فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ . اخرجه البخاري في الصحيح , كتاب المظالم والغصب باب الاتقاء والحذر من دعوة المظلوم : رقم ٢٣١٦ ; و مسلم في الصحيح : رقم ١٩ – “তোমরা মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করো। কারণ, (তার মজলুমী ফরিয়াদ আল্লাহ’র কাছে পৌছাতে) তার ও আল্লাহ’র মাঝে কোনো পর্দা থাকে না’। [সহীহ বুখারী, হাদিস ২৩১৬, সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৯]
ফায়দা: আনাস বিন মালেক রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- اتَّقُوا دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ وَ إِنْ كَانَ كَافِرًا فَإِنَّهُ لَيْسَ دُونَهَا حِجَابٌ . اخرجه أحمد في مسنده : رقم ١٢١٤٠; حسنه الألباني في الصحيحة : رقم ٧٦٧ – “তোমরা মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করো -যদিও সে কাফের হয় না কেনো। কারণ, তার (মজলুমী ফরিয়াদ আল্লাহ’র কাছে পৌছাতে তার) সামনে কোনো পর্দা থাকে না’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১২১৪০]
# হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وإياكم والغلو في الدين فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو في الدين . رواه النسائي : رقم ٣٠٠٧ إسناده صحيح، و أحمد في المسند : رقم ١٧٥٤، وابن ماجه : ٣٠٢٠ ، كلاهما في المناسك، عن ابن عباس – ‘আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে বারাবারি করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা ধ্বংস হয়েছে কেবল দ্বীনের মধ্যে বারাবারি করার কারণে’। [সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩০০৭; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৭৫৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩০২০]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَنَاجَشُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا . الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ . التَّقْوَى هَا هُنَا ” . وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ” بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ . رواه مسلم في صحيحه , كتاب البر والصلة والآداب : رقم ٢٥٦٤ – ‘তোমরা (মুমিন মুসলমানরা) পরষ্পরে হিংসা করো না, পরষ্পরকে ধোকা দিওনা, পরষ্পরে বিদ্বেষ রেখো না, পরষ্পরের দোষের পিছনে লেগে থেকো না, তোমাদের কেউ অন্যের ক্রয়বিক্রয়ের উপরে ক্রয়বিক্রয় করতে যেও না, বরং তোমরা (সকল মুসলমান জামাআতবদ্ধ) ভ্রাত্রিত্ববন্ধনে আল্লাহ’র বান্দা হয়ে থাকো। (একজন) মুসলীম অপর মুসলীমের (দ্বীনী) ভাই। সে তার সাথে জুলুম (অন্যায় অবিচার) করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না, তাকে হেয়/তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। পরহেজগারী এখানে -একথা বলে তিনি তিনবার তাঁর বক্ষের দিকে ইশারা করলেন। (আরো বললেন:) কারো মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলীম ভাইকে হেয়/তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। প্রত্যেক মুসলীমের জন্য অপর মুসলীমের রক্ত (ঝড়ানো), মাল-সম্পদ (অন্যায়/না-হক্ব ভাবে হাতিয়ে নেয়া), মানসম্ভ্রম (নষ্ট করা) হারাম’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৫৬৪]
# আবু হুরায়রাহ -এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন-يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ تُبْصِرَانِ وَأُذُنَانِ تَسْمَعَانِ وَلِسَانٌ يَنْطِقُ يَقُولُ إِنِّي وُكِّلْتُ بِثَلاَثَةٍ بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ وَبِكُلِّ مَنْ دَعَا مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَبِالْمُصَوِّرِينَ . أخرجه الترمذي : رقم ٢٥٧٤ و قال: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ ,واللفظ له ; و أحمد في مسنده : ٢/٣٣٦ ; و البيهقي في الشعب : رقم ٦٣١٧ ; و صححه الألباني في صحيح سنن الترمذي و في الصحيحة : رقم ٥٢١ – “কিয়ামতের দিন একটি আগুনের ঘাড় বেড় হয়ে আসবে, যার থাকবে দুটি চোখ (যা দিয়ে সে) দেখতে পাবে, দুটি কান (যা দিয়ে সে) শুনতে পাবে এবং একটি জিহবা (যা দিয়ে সে) কথা বলবে। সে বলবে: আমি তিন (প্রকারের ব্যাক্তি)-এর দায়িত্বে আছি। (১) প্রত্যেক উদ্ধত্ববাদী ক্ষমতাবান ব্যাক্তি (যে দুনিয়ার জীবনে আল্লহ’র অবাধ্য ও উদ্ধত্ববাদী জালেম ছিল), (২) প্রত্যেক (এমন ব্যাক্তি) যে আল্লাহ’র সাথে অন্যকে ইলাহ হিসেবে ডাকে, (৩) মুসাউইরুন (জীবের চিত্রকর, মূর্তী নির্মাতারা)”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৫৭৪; মুসনাদে আহমদ- ২/৩৩৬; শুয়াবুল ইমান, ইমাম বাইহাকী, হাদিস ৬৩১৭]
# হযরত ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, তিনি বলেন – قال رجل : يا رسول الله ما لي لا أحب الموت ؟ قال : لك مال ؟ قال : نعم ، قال : فقدمه ، قال : لا أستطيع ، قال : فإن قلب الرجل مع ماله إذا قدمه أحب أن يلحق به ، فإذا أخره أحب أن يتأخر معه . اخرجه ابو نعيم في حلية الأولياء: ٣/٣٥٩ – “এক ব্যাক্তি বললো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমার কি হয়েছে? আমি মৃত্যুকে ভালবাসি না’। তিনি বললেন: ‘তোমার ধ্বনসম্পদ রয়েছে, (এটাই তোমার মৃত্যুকে ভাল না বাসার কারণ)’। সে বললো: ‘জি’। তিনি বললেন: ‘তাহলে (আল্লাহ’র পথে তা ব্যায় করে) সামনে(র জীবনের জন্য) আগাম পাঠিয়ে দাও’। সে বললো: ‘আমি (সেটা করতে মানুসিক ভাবে) সমর্থ নই’। তিনি বললেন: ‘যদি কোনো ব্যাক্তির অন্তর তার ধ্বনসম্পদের সাথে থাকে, সে যখন তা (আল্লাহ’র পথে ব্যায় করে) সামনে(র জীবনের জন্য) আগাম পাঠিয়ে দেয়, তখন সে সেটির সাথে মিলিত হওয়াকে ভালবাসে। আর যখন সে তা (পাঠাতে) বিলম্ব করে, তখন সে সেটার সাথে (পিছনে) বিলম্ব করে (থেকে) যেতেও ভালবাসে”। [হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, ইমাম আবু নুআইম- ৩/৩৫৯]
# হযরত ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ . رواه ابن ماجه في سننه, كتاب الفتن , بَاب الْعُقُوبَاتِ : ٢/١٣٣٢ رقم ٤٠١٩ قال البوصيري في إتحاف الخيرة المهرة : ٧/٤٤٥ : سنده رواته ثقات ; و رواه ايضا الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٤٠ و صححه ، و الطبراني في المعجم الأوسط : ٤٦٧١، و الداني في السنن الواردة في الفتن : رقم ٣٢٧ ; و ابن أبي الدنيا في العقوبات : رقم ١١، و حسنه الألباني في السلسلة الصحيحة : ١/١٦٧ و صححه في صحيح الجامع : ٧٩٧٨ – “হে মুহাজিরগণ! পাঁচটি (বিষয় আছে), যখন তোমরা (মুসলমানরা) সেসবে লিপ্ত হয়ে যাবে -আর (বস্তুত:) তোমরা সেগুলোর সাক্ষাত পাও তা থেকে আমি আল্লাহ’র পানাহ চাই। (১) এমন কখনোই হয় না যে, কোনো জাতি/গোষ্ঠির মধ্যে ফাহেশাহ (অশ্লীলতা/মন্দত্ব) এতটা প্রকাশ পায় যে, শেষমেস তারা তা খোলাখুলিভাবে করতে থাকে, আর তাদের মধ্যে প্লেগ (মহামারী) ও কঠিন ব্যাধি সমূহ ছড়িয়ে না পড়ে, যার ভোগান্তিতে তাদের পূর্বসূরীরা যারা গত হয়েছে তারা কখনো ভোগেনি। (২) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করতে থাকে, আর তাদের উপরে দুর্ভিক্ষ, চরম মাত্রার দুর্দশা ও জালেম সরকার চেপে না বসে। (৩) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা তাদের ধ্বনসম্পদের যাকাত দেয়া বন্ধ করে দেয়, আর আসমানের (রহমতের) বৃষ্টি বন্ধ না হয়ে যায়। (ভূ-পৃষ্ঠে) যদি বাহায়েম (চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী) না থাকতো, তাহলে (যাকাত দেয়া বন্ধ অবস্থায়) বৃষ্টি হত না। (৪) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা আল্লাহ’র সাথে কৃত ওয়াদা এবং তাঁর রাসুলের সাথে কৃত ওয়াদা নষ্ট করে থাকে, আর আল্লাহ তাদের উপরে তাদের বিজাতীয় দুশমনকে চাপিয়ে না দেন। ফলে তাদের (মতো ওয়াদা ভঙ্গকারী গোষ্ঠির) হাতে যা আছে তারা (তাদের থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে) তার কিছু (কেড়ে) নিয়ে নেয়। (৫) এমন (কখনো) হয় না যে, তাদের শাসকরা আল্লাহ’র কিতাব দিয়ে শাসন/বিচার-ফয়সালা করে না এবং আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা তারা অবলম্বন করে নেয় না, আর আল্লাহ তাদের মাঝে বা’সা (আন্ত-দ্বন্দ্ব/কলহ/লড়াই) সৃষ্টি করে না দেন”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ২/১৩৩২ হাদিস ৪০১৯; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৪০; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৬১৭৫; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৪৬৭১; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৩২৭; আল-উকুবাত, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ১১]
# হিশাম বিন হাকিম বিন হিযাম রা. রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন- مَرَّ بِالشَّامِ عَلَى أُنَاسٍ ، وَقَدْ أُقِيمُوا فِي الشَّمْسِ ، وَصُبَّ عَلَى رُءُوسِهِمِ الزَّيْتُ ، فَقَالَ : مَا هَذَا ؟ قِيلَ : يُعَذَّبُونَ فِي الْخَرَاجِ ، فَقَالَ : أَمَا إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : إِنَّ اللَّهَ يُعَذِّبُ الَّذِينَ يُعَذِّبُونَ فِي الدُّنْيَا . رواه مسلم في صحيحه , كتاب الْبِرِّ وَالصِّلَةِ وَالْآدَابِ بَابُ الْوَعِيدُ الشَّدِيدُ لِمَنْ عَذَّبَ النَّاسَ بِغَيْرِ حَقٍّ : رقم ٢٦١٣ ; و ابن حبان في صحيحه : رقم ٥٦١٣ ; و احمد في مسنده: ٢٤/٤٧ رقم ١٥٣٣١, ١٥٣٣٤, ١٥٣٣٦; الطبراني في المعجم الكبير : ٢٢/٤٣٨, ٢٢/٤٤١; و النَّسائي في الكبرى: رقم ٨٧٧١; وأبو داود: رقم ٣٠٤٥ – “(একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জামানায় মদিনায় (এমন এক ব্যাক্তি) নিহত হল, যার নিহত হওয়ার কথা (কারোর) জানা ছিল না (যে, কে বা কারা কি কারণে তাকে হত্যা করেছে)। তখন নবী ﷺ মিম্বরে দাড়িয়ে বললেন: ‘হে লোক সকল! তোমাদের মাঝে (এক ব্যাক্তি) নিহত হল, আর কে তাকে হত্যা করেছে, তা জানা যায়নি। (শুনে রাখো) যদি কোনো ব্যাক্তির হত্যায় আসমান ও জমিনবাসী (সকলে) একজোট হয়, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই আযাব দিবেন। অবশ্য তিঁনি যা চান তাই করেন”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৫৬৪; মুসনাদে আহমদ- ২/৩৩৬; ৫৩৫১; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১২/১৩৩ হাদিস ১২৬৮১; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩০০৭; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৭৫৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩০২০]
# আমর বিন শুআইব রহ. তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ تَطَبَّبَ وَلَمْ يُعْرَفْ مِنْهُ طِبٌّ فَهُوَ ضَامِنٌ . رواه أبو داود , كتاب الديات : رقم ٤٥٨٦ ; و النسائي : رقم ٤٨٣٠ ; و ابن ماجه : رقم ٣٤٦٦ ، وفي إسناده كلام ، و حسَّنه الألباني في سنن أبي داود – “যে ব্যাক্তি (কারোর) চিকিৎসা করে, অথচ সে তার (রোগের) চিকিৎসা জানে না, সেক্ষেত্রে সেই দায়ী”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৫৮৬; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৪৮৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৪৬৬]
# হারেছ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- مَرَرْتُ فِي الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ يَخُوضُونَ فِي الأَحَادِيثِ فَدَخَلْتُ عَلَى عَلِيٍّ فَقُلْتُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَلاَ تَرَى أَنَّ النَّاسَ قَدْ خَاضُوا فِي الأَحَادِيثِ . قَالَ وَقَدْ فَعَلُوهَا قُلْتُ نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنِّي قَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ أَلاَ إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتْنَةٌ . فَقُلْتُ مَا الْمَخْرَجُ مِنْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ نَبَأُ مَا كَانَ قَبْلَكُمْ وَخَبَرُ مَا بَعْدَكُمْ وَحُكْمُ مَا بَيْنَكُمْ هُوَ الْفَصْلُ لَيْسَ بِالْهَزْلِ مَنْ تَرَكَهُ مِنْ جَبَّارٍ قَصَمَهُ اللَّهُ وَمَنِ ابْتَغَى الْهُدَى فِي غَيْرِهِ أَضَلَّهُ اللَّهُ وَهُوَ حَبْلُ اللَّهِ الْمَتِينُ وَهُوَ الذِّكْرُ الْحَكِيمُ وَهُوَ الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ هُوَ الَّذِي لاَ تَزِيغُ بِهِ الأَهْوَاءُ وَلاَ تَلْتَبِسُ بِهِ الأَلْسِنَةُ وَلاَ يَشْبَعُ مِنْهُ الْعُلَمَاءُ وَلاَ يَخْلَقُ عَلَى كَثْرَةِ الرَّدِّ وَلاَ تَنْقَضِي عَجَائِبُهُ هُوَ الَّذِي لَمْ تَنْتَهِ الْجِنُّ إِذْ سَمِعَتْهُ حَتَّى قَالُوا (إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا * يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ ) مَنْ قَالَ بِهِ صَدَقَ وَمَنْ عَمِلَ بِهِ أُجِرَ وَمَنْ حَكَمَ بِهِ عَدَلَ وَمَنْ دَعَا إِلَيْهِ هُدِيَ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ” . خُذْهَا إِلَيْكَ يَا أَعْوَرُ . رواه الترمذي في سننه , كتاب فضائل القرآن عن رسول الله صلى الله عليه وسلم , بَابُ مَا جَاءَ فِي فَضْلِ القُرْآنِ : رقم ٢٩٠٦، والدارمي في سننه : ٢/٤٣٥، و البغوي في شرح السنة : ٣/٤٣٧ رقم ١١٨١; ضعفه الألباني في سلسلة الأحاديث الضعيفة والموضوعة : ١٣/٨٨٣ رقم ٦٣٩٣ ، و أخرجه من طريق أخرى الطبراني في الكبير و في مسند الشاميين برقم ٢٢٠٦ و أبو نعيم في الحلية : ٥/٢٥٣ من طريق أبي إدريس الخولاني عن معاذ بن جبل، وفيه عمرو بن واقد وهو متروك – “আমি (একবার) মসজিদে (এমন সময়) গেলাম, যখন (দেখি) লোকজন কথাবার্তায় লিপ্ত আছে। ফলে আমি (খলিফা) আলী’র কাছে গেলাম। তারপর বললাম: ‘হে আমিরুল মু’মিনীন! আমি কি দেখছেন না যে, লোকজন (মসজিদে বসে) কথাবার্তায় লিপ্ত’! তিনি বললেন: ‘তারা (মসজিদে বসে) অমন কাজ করছে’! আমি বললাম: ‘জি’। তিনি বললেন: ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে একথা বলতে শুনেছি: ‘শুনে রাখো। নিশ্চই অচিরেই ফিতনাহ হবে’। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, তা থেকে বেরোনোর পথ কী’? তিনি বললেন: ‘আল্লাহ’র কিতাব। তাতে আছে তোমাদের পূর্বে যা ঘটেছিল তার (বহু) ঘটনা, তোমাদের পরে যা ঘটবে তার (বহু) সংবাদ এবং তোমাদের মাঝে (সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যাবলির) বিধান। এটি (হক্ব ও বাতীলের মাঝে) পার্থক্য (সৃষ্টিকারী একটি কিতাব) -(এটি কোনো) খেলা-খেলা’র (বিষয় নয় মোটেও)। যে ব্যাক্তি অহংকার/উদ্ধত্য বশে একে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাকে ভেঙ্গে ফেলবেন। যে ব্যাক্তি একে বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে হেদায়েত (সঠিক পথ) খুঁজবে, আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ঠ করে দিবেন। এটি হল আল্লাহ’র সুদৃঢ় রজ্জু। এটি হল মহা-প্রাজ্ঞচিত উপদেশবাণী/স্বারকবাণী। এটি হল সিরাতে মুসতাকীম (সরল সঠিক পথ)। এটি (হল এমন কিতাব) যার (অনুসরণ) দ্বারা প্রবৃত্তি বাঁকা/বিপথগামী হয় না। এর দ্বারা জবান সমূহ আড়ষ্ট হয় না। আলেমগণ এর থেকে (কখনই) পরিতৃপ্ত হয় না, (কারণ তাঁরা একে নিয়ে যতই গবেষনা করতে থাকে, ততই ইলমের মহা রত্নের অতল গভীরে প্রবেশ করতে থাকে)। বারংবার অত্যধিক পঠনে এটি পুরানো হয় না। এর বিষ্ময়কারিত্ব ক্ষয় হয় না। এটা (এমন এক বিষ্ময়কর গ্রন্থ) যা -যখন জ্বীনরা তা শুনেছিল, তখন অবলিলায় তারা বলে ফেলেছিল إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا * يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ – ‘নিশ্চই আমরা এক বিষ্ময়কর কুরআন শুনলাম, (যা) সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেয়’। যে ব্যাক্তি এ(ই কিতাব) অনুযায়ী কথা বলে, সে সত্য বলে। যে এর উপরে আমল করে, সে পুরষ্কার পায়। যে এর দ্বারা বিচার-ফয়সালা করে, সে ইনসাফ করে। আর যে ব্যাক্তি এর দিকে ডাকে, সে সিরাতে মুসতাক্বিমের দিকে পথনির্দেশ করে। হে আওয়ার, তুমি একে নিজের দিকে আঁকড়ে ধরো”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৯০৬; সুনানে দারেমী- ২/৪৩৫; শারহুস সুন্নাহ, বাগাভী- ৩/৪৩৭ হাদিস ১১৮১; মুসনাদে শামেয়ীন, তাবরাণী, হাদিস ২২০৬; হিলইয়া, আবু নুআইম- ৫/২৫৩]
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ثَلاثَةٌ لا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، وَثَلاثَةٌ لا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَأَمَّا الَّذِينَ لا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ: فَالْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ تَشَبَّهُ بِالرِّجَالِ، وَالدَّيُّوثُ، وَأَمَّا الثَّلاثَةُ الَّذِينَ لا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: فَالْعَاقُّ بِوَالِدَيْهِ، وَمُدْمِنُ الْخَمْرِ، وَالْمَنَّانُ بِمَا أَعْطَى . رواه في المعجم الكبير: رقم ١٣١٨٠، واسناد الطبراني هذا صحيح متصل قوي جداً – “তিন (ধরনের) ব্যাক্তি জান্নাতে যাবে না এবং তিন (ধরনের) ব্যাক্তির দিকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তারা হল- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, (২) পুরুষের সাথে সাদৃশ্যধারী নীচ নারী, এবং (৩) দাইয়্যুস। আর যে তিন ব্যাক্তির দিকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকাবেন না, তারা হল- (১) মদ পানে অভ্যস্ত ব্যাক্তি, (২) পিতা মাতার অবাধ্য সন্তান, এবং (৩) দান করে খোটাদানকারী”। [আল-মু’জামুল কাবীর, তাবরাণী, হাদিস ১৩১৮০]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى, كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ, لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا, وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ, كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ, لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أوزارهم شَيْئًا . أخرجه مسلم في الصحيح : رقم ٢٦٧٤ – “যে ব্যাক্তি (মানুষকে) হেদায়েতের দিকে আহবান করে, তার জন্য তেমনই পুরষ্কার রয়েছে যেমন পুরষ্কার রয়েছে (ওই ব্যাক্তির জন্য) যে তার (আহবানে সাড়া দিয়ে) অনুগত্য করে। (এক্ষেত্রে) তাদের পুরষ্কার (পূর্ণ রূপে পাওয়া) থেকে তা একটুও ঘাটতি সৃষ্টি করবে না। আর যে ব্যাক্তি (মানুষকে) পথভ্রষ্ঠতার দিকে আহবান করে, তার জন্য তেমনই পাপ রয়েছে যেমন পাপ রয়েছে (ওই ব্যাক্তির জন্য) যে তার (আহবানে সাড়া দিয়ে) অনুগত্য করে। (এক্ষেত্রে) তাদের পাপ (পূর্ণ রূপে পাওয়া) থেকে তা একটুও ঘাটতি সৃষ্টি করবে না”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৬৭৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৬০৯; সুনানে তিরমিযী- ৫/৪৩, হাদিস সুনানে ইবনে মাজাহ- ১/৭৫; মুসনাদে আহমদ– ২/৩৯৭; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩১৮]
# আবু হুরায়লাহ রা. রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন- كَانَ مِنْ دُعَاءِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَارِ السُّوءِ، وَ مِنْ زَوْجٍ تُشَيِّبُنِي قَبْلَ الْمَشِيبِ، وَ مِنْ وَلَدٍ يَكُونُ عَلَيَّ رَبًّا، وَ مِنْ مَالٍ يَكُونُ عَلَيَّ عَذَابًا، وَ مِنْ خَلِيلٍ مَاكِرٍ عَيْنَهُ تَرَانِي وَقَلْبُهُ يرْعَانِي إِنْ رَأَى حَسَنَةً دَفَنَهَا، وَ إِذَا رَأَى سَيِّئَةً أَذَاعَهَا . رواه الطبراني في مصنفه “الدعاء: ٣/١٤٢٥ رقم ١٣٣٩ ، قال الألباني في السلسة الصحيحة : ٧/٣٧٧ برقم ٣١٣٧ : و هذا إسناد جيد – “রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর দোয়া এরকমও ছিল: “اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَارِ السُّوءِ، وَ مِنْ زَوْجٍ تُشَيِّبُنِي قَبْلَ الْمَشِيبِ، وَ مِنْ وَلَدٍ يَكُونُ عَلَيَّ رَبًّا، وَ مِنْ مَالٍ يَكُونُ عَلَيَّ عَذَابًا، وَ مِنْ خَلِيلٍ مَاكِرٍ عَيْنَهُ تَرَانِي وَقَلْبُهُ يرْعَانِي إِنْ رَأَى حَسَنَةً دَفَنَهَا، وَ إِذَا رَأَى سَيِّئَةً أَذَاعَهَا – ‘ হে আল্লাহ! নিশ্চই আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই মন্দ প্রতিবেশি থেকে, এবং এমন স্ত্রী থেকে যে আমাকে বার্ধক্যের আগেই বৃদ্ধ বানিয়ে দিবে, এবং এমন ধ্বনসম্পদ থেকে যা আমার উপরে আযাব হিসেবে আপতিত হবে, এবং এমন ষঢ়যন্ত্রকারী খলিল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) থেকে যার চোখ আমার দিকে (ষঢ়যন্ত্রকারী কু-) দৃষ্টিতে তাকায় ও তার অন্তর আমার প্রতি (মন্দ/হিংসা সহকারে) অবলোকন করে, সে যদি (আমার মধ্যে) কল্যানকর (কিছু) দেখে তাহলে (তা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে) সে তা দাফন করে দেয়, আর যখন (আমার মধ্যে) মন্দ (কিছু) দেখে তখন সেটা সে প্রচার করে বেড়ায়”। [আদ-দুয়া, ইমাম ত্বাবরাণী- ৩/১৪২৫ হাদিস ১৩৩৯]
# আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, (রাসুলুল্লাহ ﷺ) এরশাদ করেন- إِنَّ اللَّهَ قَسَمَ بَيْنَكُمْ أَخْلَاقَكُمْ ، كَمَا قَسَمَ بَيْنَكُمْ أَرْزَاقَكُمْ ، وَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُعْطِي الدُّنْيَا مَنْ يُحِبُّ وَمَنْ لَا يُحِبُّ ، وَلَا يُعْطِي الدِّينَ إِلَّا لِمَنْ أَحَبَّ ، فَمَنْ أَعْطَاهُ اللَّهُ الدِّينَ ، فَقَدْ أَحَبَّهُ ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لَا يُسْلِمُ عَبْدٌ حَتَّى يَسْلَمَ قَلْبُهُ وَلِسَانُهُ ، وَلَا يُؤْمِنُ حَتَّى يَأْمَنَ جَارُهُ بَوَائِقَهُ ، قَالُوا : وَمَا بَوَائِقُهُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ ؟ قَالَ : غَشْمُهُ وَظُلْمُهُ ، وَلَا يَكْسِبُ عَبْدٌ مَالًا مِنْ حَرَامٍ ، فَيُنْفِقَ مِنْهُ فَيُبَارَكَ لَهُ فِيهِ ، وَلَا يَتَصَدَّقُ بِهِ فَيُقْبَلَ مِنْهُ ، وَلَا يَتْرُكُ خَلْفَ ظَهْرِهِ إِلَّا كَانَ زَادَهُ إِلَى النَّارِ ، إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَمْحُو السَّيِّئَ بِالسَّيِّئِ ، وَلَكِنْ يَمْحُو السَّيِّئَ بِالْحَسَنِ ، إِنَّ الْخَبِيثَ لَا يَمْحُو الْخَبِيثَ . رواه أحمد في مسنده: ١/٣٨٧ رقم ٣٦٧٢ عن عبد الله بن مسعود مرفوعا، قال شعيب الأرنؤوط : إسناده ضعيف لضعف الصباح بن محمد وقال الذهبي رفع حديثين هما من قول عبد الله، وقال الدارقطني في العلل : والصحيح موقوف – “নিশ্চই আল্লাহ (তাআলা) তোমাদের মাঝে যেমনি ভাবে রিজিককে বন্টন করে দিয়েছেন, তিনি সেভাবে তোমাদের মাঝে আখলাক (স্বভাব-চরিত্র)কেও বন্টন করে দিয়েছেন। আর নিশ্চই আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা -যাকে মহব্বত করেন এবং যাকে মহব্বত করেন না (তাদের উভয়ের যাকে যতটুকু ইচ্ছা) দুনিয়া(র ভোগ সামগ্রী থেকে) দান করে থাকেন। কিন্তু তিঁনি যাকে মহব্বত করেন তাকে ছাড়া আর কাউকে দ্বীন দান করেন না। কাজেই আল্লাহ যাকে দ্বীন দিয়েছেন, (ধরে নিও) তাকে তিঁনি মহব্বত করে ফেলেছেন। ওঁই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, কোনো বান্দা ইসলাম গ্রহন করে না -যাবৎ না তার ক্বলব (অন্তর) ও তার জবান (প্রথমে) ইসলাম গ্রহন করে। আর (কোনো বান্দা ততক্ষন পর্যন্ত পূর্ণ) ইমান আনায়ন করেনা -যাবৎ না তার প্রতিবেশি তার ‘বাওয়ায়েক্ব’ থেকে নিরাপদ থাকে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: ‘হে আল্লাহ’র নবী! বাওয়ায়েক্ব কী’? তিনি বললেন: ‘(প্রতিবেশির সাথে কৃত) তার অবিচার ও জুলুম’। আর বান্দা যে ধ্বনমাল হারাম থেকে উপার্জন করে পরে তা থেকে (আল্লাহ’র পথে) ব্যয় করে, তার জন্য তাতে বরকত দেয়া হবে -এমনটা (কখনো) হবে না, আর সে তা দিয়ে দান-সদকাহ করবে, পরে তা কুবল করা হবে -এমনটা (কখোনো) হবে না। আর সে (মরনের পরে) তার পশ্চাতে (এসব হারামের) যা-ই ছেড়ে রেখে যাবে, সেটা তাকে আরো বেশি করে দোযখের দিকে নিয়ে যাবে। নিশ্চই আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা মন্দকে (অপর কোনো) মন্দ দিয়ে দূরীভূত করেন না, বরং মন্দকে হাসান (উত্তম কিছু) দিয়ে দূরীভূত করে দেন। নিশ্চই খবীস (কখনো) খবীসকে দূরীভূত করে না”। [মুসনাদে আহমদ,- ১/৩৮৭ হাদিস ৩৬৭২; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২০২৬; মুসতাদরাকে হাকিম- ২/৪৪৭, ৪/১৬৫; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, ইমাম আবু নুআইম- ৫/৩৫; আল-আমালী, ইবনু বিশরান- ১/১৫৫ হাদিস ৩৫৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১/৫৩, ১/২৮৮] ইমাম দারাকুতনী’র মতে, এটি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর বানী।
# আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَوْصِنِي ، قَالَ : عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللَّهِ فَإِنَّهَا جِمَاعُ كُلِّ خَيْرٍ ، وَعَلَيْكَ بِالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، فَإِنَّهَا رَهْبَانِيَّةُ الْمُسْلِمِينَ ، وَعَلَيْكَ بِذِكْرِ اللَّهِ وَتِلاوَةِ كِتَابِهِ ، فَإِنَّهُ نُورٌ لَكَ فِي الأَرْضِ وَذِكْرٌ لَكَ فِي السَّمَاءِ ، وَاخْزُنْ لِسَانَكَ إِلا مِنْ خَيْرٍ ، فَإِنَّكَ بِذَلِكَ تَغْلِبُ الشَّيْطَانَ . رواه الطبراني في الصغير, باب الميم , من اسمه محمد: رقم ، قال الألباني في صحيح الترغيب: ٣/٩٦ رقم ٢٨٦٩ : صحيح لغيره – “(একদিন) এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে উপদেশ দিন’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘আল্লাহ-ভীতিকে তোমার উপরে অত্যাবশ্যক করে নাও। কারণ, এটা সকল কল্যানের সমষ্টি। আর আল্লাহ’র পথে জিহাদকে তোমার উপরে অপরিহার্য করে নাও। কারণ, এটা মুসলমানদের রাহাবানিয়্যাত (দরবেশী/দুনিয়াবিমুখতা)। আর আল্লাহ’র জিকির (স্মরণ) এবং তাঁর কিতাব তিলাওয়াত করাকে তোমার উপরে চাপিয়ে নাও। কারণ, এটা (হবে) পৃথিবীতে তোমার জন্য নূর (জ্যোতি স্বরূপ) এবং আসমানে (ফেরেশতাগণের মাঝে) তোমাকে (নিয়ে) আলোচনা (করার কারণ)। আর তোমার জিহবাকে কল্যান ব্যাতীত (অন্যকিছুতে) লিপ্ত করা থেকে বিরত থাকো। তাহলে তুমি এতে করে শয়তানের উপরে (সর্বদা) জয়ী থাকতে পারবে”। [আল-মু’জামুস সাগীর, ইমাম তাবরানী- ২/৬৬; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১/৪৪২; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ২/৬০]
# হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أَرْبَعٌ مِنَ السَّعَادَةِ : الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ ، وَالْمَسْكَنُ الْوَاسِعُ ، وَالْجَارُ الصَّالِحُ ، وَالْمَرْكَبُ الْهَنِيءُ ، وَأَرْبَعٌ مِنَ الشَّقَاوَةِ : الْجَارُ السُّوءُ ، وَالْمَرْأَةُ السُّوءُ ، وَالْمَسْكَنُ الضِّيقُ ، وَالْمَرْكَبُ السُّوءُ . رواه ابن حبان في صحيحه , كتاب النكاح , ذكر الإخبار عن الأشياء التي هي من سعادة المرء في الدنيا : رقم ٤٠٣٢ ، و أحمد في مسنده : رقم ١٤٤٨ ، و صححه الألباني في “الصحيحة: رقم ٢٨٢ – “চারটি জিনিস সৌভাগ্যের অন্তর্ভূক্ত: (১) নেক স্ত্রী, (২) প্রশস্ত গৃহ, (৩) নেক প্রতিবেশী, এবং (৪) আরামদায়ক বাহন। আর চারটি জিনিস দূর্ভাগ্যের অন্তর্ভূক্ত: (১) মন্দ প্রতিবেশী, (২) মন্দ স্ত্রী, (৩) সংকীর্ণ গৃহ, এবং (৪) মন্দ বাহন”। [সহীহ ইবনে হিব্বান– ৯/৩৪১ হাদিস ৪০৩২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৪৪৮; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ১২/৯৯; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৮/৩৮৮]