পৃথিবীর সকল ধ্বনসম্পদ আল্লাহর; মানুষ তা যথাযথ ব্যয়ের প্রতিনিধি মাত্র

পৃথিবীর সকল ধ্বনসম্পদ আল্লাহর: মানুষ তা যথাযথ ব্যয়ের প্রতিনিধি মাত্র  

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

[উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত আয়াত, হাদিস ও ইবারত সমূহ এবং এসবের অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন]

 

আমরা উপরে শিরোনাম দিয়েছি “পৃথিবীর সকল ধ্বনসম্পদ আল্লাহর: মানুষ ওসবের যথাযথ ব্যয়ের প্রতিনিধি মাত্র”। এর বিষয়বস্তু পুরোপুরি বুঝতে হলে আমাদের লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়ুন। আধা-আধা বা এখান ওখান থেকে কিছু কিছু পড়লে মনে হয় ওই বিষয়গুলো বুঝে আসবে না, যা আমি বুঝাতে চাচ্ছি।

দুনিয়ার সকল ধ্বনসম্পদ আল্লাহ’র; আর মানুষ সেগুলোকে আল্লাহ’র পথে আমানতের সাথে ব্যয় ও ব্যবহার করতে আদিষ্ট এক খলিফা (প্রতিনিধি)

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

….إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ 

 “নিশ্চই আমি ‘আল-আমানত’কে আসমানসমূহ, জমিন ও পর্বতমালার সামনে  পেশ করেছিলাম। তখন তারা তা বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করলো এবং সকলে এতে ভীত হয়ে গেল। আর একে গ্রহন করে নিলো মানুষ…..”[সুরা আহযাব ৭২]

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা, হযরত মুজাহিদ, হাসান বসরী, সাঈদ বিন যুবায়ের, যিহহাক, কাতাদাহ রহ. প্রমূখ থেকে ‘আমানত’- কথাটির যে সকল ব্যাখ্যা এসেছে তার সারমর্ম একই, অর্থাৎ আল্লাহ’র দ্বীন ও শরীয়ত পালনের দায়দায়িত্ব, যা দুনিয়ার যে কোনো বিষয়ে তাঁর নাজিলকৃত সকল আদেশ নিষেধ ও উপদেশকে অন্তর্ভূক্ত করে। [বিস্তারিত: তাফসীরে তাবারী- ২০/৩৩৬; তাফসীরে ইবসে কাসির-৬/৪৮৮;  তাফসীরে কুরতুবী-১৪/২৫২; ফাতহুল কাদীর, ইবনুল হুমাম-৪/৪৩৭

আল্লাহ তাআলা যে পবিত্র ও সুমাহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই বিশ্বকারখানা ও কারখানার শ্রমিক মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তা হল,  জমিনের বুকে মানুষ তাঁর সুযোগ্যপ্রতিনিধি (খলীফাহ) হিসেবে নিরঙ্কুশভাবে শুধু তাঁর ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকেই কায়েম করবে; ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জী্বন, সামাজীক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শুধুমাত্র তাঁরই বিধিনিষেধ ও নীতিমালা মান্য করে চলবে। আর এটাই হবে তাঁর সমিপে খাঁটি আবদিয়াত (আনুগত্ব্যতা) ও খিলাফাত (প্রতিনিধিত্বতা)-এর বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তাআলা এদিকে ইংগিত করে বলেছেন-

إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
  ‘নিশ্চই আমি পৃথিবীতে (আমার) খলিফাহ্ (স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি) সৃষ্টি করবো’ [সূরা বাকারাহ ৩০]

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, আল্লাহ’র খলিফা (প্রতিনিধি) হয়ে পৃথিবীতে মানুষের আগমন এবং আল্লাহ’র দেয়া দ্বীন ও শরিয়তের মতো বিরাট ‘আমানত’ পালনের গুরু দায় -দুটোর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাই, ‘রিজক ব্যবস্থাপনা’র মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় -যা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে প্রতিনিয়ত জড়িত করে রাখে, তা কোনো মতেই দ্বীন ও শরিয়তের গন্ডী বহির্ভূত কোনো বিষয় হতে পারে না। বরং ‘রিজিক’ও আল্লাহ’র দেয়া ‘আমানত’ এবং দ্বীন ও শরিয়ত মেনে ‘রিজিক ব্যবস্থাপনা’র সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও মানুষ আল্লাহ তাআলা’র আমানতদার খলিফা (প্রতিনিধি) প্রমাণ দেয়ার জন্য আদিষ্ট। এরশাদ হচ্ছে-

آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَنفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُم مُّسْتَخْلَفِينَ فِيهِ  ۖ  فَالَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَ أَنفَقُوا لَهُمْ أَجْرٌ كَبِيرٌ  

 “তোমরা ইমান আনো আল্লাহ’র প্রতি ও তাঁর রাসুলের প্রতি এবং (আল্লাহ’র পথে শরয়ী চাহিদা মতো) তোমরা খরচ করো সে(ই রিজিক) থেকে -তিনি তোমাদেরকে যার মধ্যে খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন। সুতরাং, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ইমান আনবে এবং (আল্লাহ’র পথে) খরচ করবে, তাদের জন্য রয়েছে বিরাট পুরষ্কার”। [সূরা আল-হাদিদ ৭]

এখানে وَأَنفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُم مُّسْتَخْلَفِينَ فِيهِ– {তোমরা খরচ করো সে(ই রিজিক) থেকে -তিনি তোমাদেরকে যার মধ্যে খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন}-এর ব্যাখ্যায় ইমাম আবুল লাইছ সমরকন্দী রহ. (মৃ: ৩৭৩ হি:) লিখেছেন- يعني: مما جعلكم مالكين من المال. ويقال: معناه إن الأموال والدنيا كلها لله تعالى، فيجعل العباد مستخلفين على أمواله، وأمرهم بالنفقة، مما جعلهم خليفة فيها – “অর্থাৎ, তোমাদেরকে যে ধ্বনমালের মালিক বানানো হয়েছে, তা থেকে (আল্লাহ’র নির্দেশনা মতো ব্যয় করো)। (এর ব্যাখ্যায়) আরো বলা হয়েছে যে, এ কথার অর্থ হল: ‘ধ্বনমাল সহ দুনিয়ার সবকিছুই মূলত: আল্লাহ তাআলা’র। বস্তুত: তাঁর ধ্বনমালের উপরে তিঁনিই (তাঁর) বান্দাদেরকে খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়ে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে, (পৃথিবীতে যে) যে ধ্বনমালের ব্যাপারে তাদেরকে খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন, তারা যেন তা থেকে (তাঁরই নির্দেশনা অনুসারে) ব্যয় করে”[বাহরুল উলুম, ইমাম সমরকন্দী- ৩/৪০২] 

ইমাম ফখুরুদ্দীন রাযী রহ. (মৃ: ৬০৬ হি:) লিখেছেন- في الآية وجهان الأول: أن الأموال التي في أيديكم إنما هي أموال الله بخلقه وإنشائه لها، ثم إنه تعالى جعلها تحت يد المكلف، وتحت تصرفه لينتفع بها على وفق إذن الشرع، فالمكلف في تصرفه في هذه الأموال بمنزلة الوكيل والنائب والخليفة، فوجب أن يسهل عليكم الإنفاق من تلك الأموال، كما يسهل على الرجل النفقة من مال غيره إذا أذن له فيه الثاني: أنه جعلكم مستخلفين ممن كان قبلكم، لأجل أنه نقل أموالهم إليكم على سبيل الإرث، فاعتبروا بحالهم، فإنها كما انتقلت منهم إليكم فستنقل منكم إلى غيركم فلا تبخلوا بها – “এই আয়াতটিতে (ব্যাখ্যার) দুটি দিক রয়েছে। (১) যেসকল ধ্বনমাল তোমাদের হাতে রয়েছে, সেগুলো মূলত: আল্লাহ’রই ধ্বনমাল, এজন্য যে (ওগুলোকে) তিঁনিই সৃষ্টি করেছেন এবং ওসবের অস্তিত্বদাতাও তিঁনি। এরপর আল্লাহ তাআলা সেগুলোকে (পৃথিবীতে) দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষের করায়ত্বে দিয়েছেন, দিয়েছেন তা ব্যয় ও ব্যবহার করার জন্য, যাতে মানুষ শরয়ী অনুমতি’র কল্যানে সেসব জিনিস দিয়ে উপকার লাভ করতে পারে। তাই, যে ব্যাক্তি (আল্লাহ’র) এসব ধ্বনমাল গুলিকে ব্যয় ও ব্যবহারের ব্যাপারে (জীবন ধারার যে কোনো পর্যায়ে) দায়িত্বপ্রাপ্ত, সে মূলত: (সেই দায়িত্বটি পালনের প্রশ্নে আল্লাহ’র) উকীল (নিযুক্ত প্রতিনিধি), নায়েব (অনুকল্প প্রতিনিধি) ও খলিফা (স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি) স্বরূপ। তাই, তার কর্তব্য হল, সে ওসব ধ্বনমালের মধ্য থেকে (কোনো ব্যাপারে খেয়ানত ও কৃপনতা না করে বরং তা) তোমাদের উপরে ওরকম সহজ-সরল ও উন্মুক্ত ভাবে ব্যয় করবে, ঠিক যেমনটা তাকে অন্য কারোর ধ্বনমাল থেকে কোনো ব্যাক্তির উপরে ব্যয় করার অনুমতি দেয়া হলে সে সহজ-সরল ও উন্মুক্ত ভাবে ব্যয় করবে। (২) আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাদের ধ্বনমালের পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত করেছেন যারা তোমাদের পূর্বে ছিল। তিঁনিই তাদের ধ্বনমাল গুলোকে ওয়ারেছী (উত্তরাধিকারী) সূত্রে তোমাদের কাছে স্থানান্তরিত করে দিয়েছেন। তাই, তোমরা তাদের হাল-অবস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহন করো। বস্তুত: (আজ) যেমন ওসব ধ্বনমাল তাদের থেকে তোমাদের কাছে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছে, অচিরেই তা তোমাদের থেকে অন্য কারোর কাছে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। বিধায়, তোমরা ওসবের ব্যাপারে বখিলী/কৃপনতা করো না, (বরং আল্লাহ যেভাবে যা কিছু ব্যয় করতে বলেছেন সেভাবেই ব্যয় করো)”[মাফাতিহুল গাইব, ইমাম রাযী- ২৯/২১৬] 

ইমাম কুরতুবী রহ. (মৃ: ৬৭১ হি:) লিখেছেন- دليل على أن أصل الملك لله سبحانه، وأن العبد ليس له فيه إلا التصرف الذي يرضي الله فيثيبه على ذلك بالجنة. فمن أنفق منها في حقوق الله وهان عليه الانفاق منها، كما يهون عل الرجل، النفقة من مال غيره إذا أذن له فيه، كان له الثواب الجزيل والاجر العظيم. وقال الحسن: (مستخلفين فيه) بوراثتكم إياه عمن كان قبلكم. وهذا يدل على أنها ليست بأموالكم في الحقيقة، وما أنتم فيها إلا بمنزلة النواب والوكلاء، فاغتنموا الفرصة فيها بإقامة الحق قبل أن تزال عنكم إلى من بعدكم “এই আয়াতটি একথারই দলিল যে, (ধ্বনসম্পদের উপরে) আসল মালিকানাটা মূলত: আল্লাহ তাআলা’রই; তাতে বান্দার (প্রকৃত) কোনো (মালিকানা) নেই, আছে কেবল (তাঁর খলিফা/প্রতিনিধি হিসেবে তাতে এমন ভাবে) ব্যয় ও ব্যবহারের দায়িত্বটুকু, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে দেয়। পরে এরই বিনিময়ে তার জন্য থাকবে জান্নাত। সুতরাং, যে ব্যাক্তি ওসব ধ্বনমাল থেকে আল্লাহ’র (নির্দেশিত বিভিন্ন) হক্ব ও অধিকার মূলক খাতগুলোতে ব্যয় করবে, (তার কর্তব্য হল), সে ওসব ধ্বনমালের মধ্য থেকে (কোনো ব্যাপারে খেয়ানত ও কৃপনতা না করে বরং তা) তোমাদের উপরে ওরকম সহজ-সরল ও উন্মুক্ত ভাবে ব্যয় করবে, ঠিক যেমনটা তাকে অন্য কারোর ধ্বনমাল থেকে কোনো ব্যাক্তির উপরে ব্যয় করার অনুমতি দেয়া হলে সে সহজ-সরল ও উন্মুক্ত ভাবে ব্যয় করবে। (একাজের বিনিময়ে) তার জন্য থাকবে অকল্পনীয় সওয়াব এবং বিরাট পুরষ্কার। হাসান রহ, বলেছেন:  مُّسْتَخْلَفِينَ فِيهِ– {তোমাদেরকে যার মধ্যে খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন} অর্থ ‘তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদের যেসব ধ্বনমালের ওয়ারীছ (উত্তরাধিকার) তোমাদেরকে বানিয়েছেন শুধু তিঁনিই, (সেসকল ধ্বনমালের মধ্যে তোমাদেরকে খলিফা/প্রতিনিধি বানানো হয়েছে)’। এ ব্যাখ্যাটিও একথার দলিল যে, ধ্বনমালের মধ্যে বাস্তবে তোমাদের কোনোই মালিকানা নেই। বস্তুত: তোমরা ধ্বনমালের ব্যাপারে নায়েব (অনুকল্প প্রতিনিধি) ও উকীল (নিযুক্ত প্রতিনিধি) ছাড়া কিছু নও। কাজেই ওসব ধ্বনমাল তোমাদের পরবর্তীদের কাছে চলে যাওয়ার আগে অগেই তাতে হক্ব কায়েমের মাধ্যমে সুযোগটিকে কাজে লাগাও”[আল-জামে’ লি-আহকামিল কুরআন, ইমাম কুরতুবী- ৯/১৫৫] 

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

وَ مَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ

 “আর তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহ’র পথে ব্যয় করছো না। অথচ আসমান সমূহ ও জমিন (সবকিছুর) মালিকানা তো  আল্লাহ’রই”। [সুরা হাদিদ ১০]

وَ الَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ – لِّلسَّائِلِ وَ الْمَحْرُومِ 

 “আর যাদের ধ্বনসম্পদের মধ্যে ‘পরিজ্ঞাত হক্ব’ রয়েছে -যাঞ্চাকারী এবং মাহরুম (বঞ্চিত)-এর জন্য”। [সূরা আল-মাআরিজ ২৪, ২৫]

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ – آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَٰلِكَ مُحْسِنِينَ – كَانُوا قَلِيلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ – وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ – وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ 

 “নিশ্চই মুত্তাকীরা (আল্লাহকে ভয়কারীরা/পরহেজগাররা) থাকবে (বেহেশতের) উদ্যানরাজি এবং প্রস্রবন সমূহে (সমাহারী এক শান্তিময় জগতে)র মধ্যে। তাদের রব (আল্লাহ তাআলা) তাদেরকে যাকিছু দিবেন তা তারা উপভোগ করতে থাকবে। নিশ্চই তারা এ(ই বেহেশতী জগতে উপনীত হওয়া)র আগে (দুনিয়াতে) ছিল মুহসীন (নেককার); তারা রাতে খুব কমই ঘুমাতো এবং তাদের সেহরীর সময় তারা (তাদের গোনাহ খাতার জন্য আল্লাহ’র দরবারে) ক্ষমাভিক্ষা চাইতো। আর তাদের ধ্বনসম্পদের মধ্যে সায়েল (সওয়ালকারী/ যাঞ্চাকারী) এবং মাহরুম (বঞ্চিত)-এর জন্য (আল্লাহ’র বরাদ্দকৃত যে শরয়ী) হক্ব ছিল (সে হক্বটুকু তারা আদায় করে দিতো)”[সূরা আয-যারিয়াত ১৫-১৯]

এসব আয়াতে কারিমা দ্বারা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, দান-সদকাহ দেয়াটা গরিবের প্রতি ধ্বনীদের অনুকম্পা মনে করাটা একদম মুর্খজনিত চিন্তা; বরং এটা মূলত: আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত গরিব ও অভাবীদের হক্ব (শরয়ী অধিকার), যা ধ্বনী ও স্বচ্ছল ব্যাক্তিদের ধ্বনমালের সাথে যুক্ত থাকে এবং তা সময় মতো গরিব ও অভাবীদেরকে দিয়ে দেয়ার দ্বারাই কেবল ওইসকল ধ্বনী ও স্বচ্ছল ব্যাক্তিরা ওই দায় থেকে মুক্তি পেতে পারে। 

 

কিন্তু ধ্বনমালের উপরে আল্লাহ’র এই প্রকৃত একচ্ছত্র মালিকানা’র বিষয়টি যুগে যুগে আগত ক্বারুন’রা স্বীকার করতে চায় না

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নবী মুসা আ.-এর জামানার ‘ক্বারুন’ নামের এক অকৃতজ্ঞ ধ্বন-কুবেড় ব্যাক্তির আলোচনা এনেছেন, যে মনে করতো যে, সে যে এত বিশাল পরমিাণ ধ্বনমাল উপার্জন করেছে, সেগুলো কেবই তার তার নিজের (চৌকুশ) জ্ঞান-গরিমা ও পরিশ্রমের ফসল; ওগুলো উপার্জর করার প্রশ্নে তার উপরে আল্লাহ’র অনুগ্রহ অনুপস্থিত ছিল, বিধায় আল্লাহ’র কাছে এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে -এমনটা ভাবা অমূলক। এজন্য সে ভাবতো, তার নিজের মেধা ও পরিশ্রম দ্বারা উপার্জিত ধ্বনসম্পদ সে কাউকে দান করবে কি করবে না কিংবা করলেও তা কাকে কাকে দান করবে -সেটা তার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। 

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

إِنَّ قَارُونَ كَانَ مِن قَوْمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيْهِمْ  ۖ  وَ آتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوزِ مَا إِنَّ مَفَاتِحَهُ لَتَنُوءُ بِالْعُصْبَةِ أُولِي الْقُوَّةِ إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ – وَ ابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَ لَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا ۖ وَ أَحْسِن كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ وَ لَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ – قَالَ إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَىٰ عِلْمٍ عِندِي ۚ أَوَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَهْلَكَ مِن قَبْلِهِ مِنَ الْقُرُونِ مَنْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَأَكْثَرُ جَمْعًا ۚ وَ لَا يُسْأَلُ عَن ذُنُوبِهِمُ الْمُجْرِمُونَ – فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوْمِهِ فِي زِينَتِهِ ۖ قَالَ الَّذِينَ يُرِيدُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَا أُوتِيَ قَارُونُ إِنَّهُ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٍ – وَ قَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللَّهِ خَيْرٌ لِّمَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا وَ لَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الصَّابِرُونَ – فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِن فِئَةٍ يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنتَصِرِينَ – وَ أَصْبَحَ الَّذِينَ تَمَنَّوْا مَكَانَهُ بِالْأَمْسِ يَقُولُونَ وَيْكَأَنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ ۖ لَوْلَا أَن مَّنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَا ۖ وَيْكَأَنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ 
 “নিশ্চই ক্বারুন ছিল মুসা’র জাতির একজন (ধ্বন-কুবেড় লোক)। বস্তুত: সে (তার অঢেল সম্পদের কারণে অহংকারী ও দাম্ভিক হয়ে উঠেছিল এবং তার প্রভাব খাটিয়ে) তাদের উপরে উদ্ধত্ব্য প্রকাশ করতো। আর তাকে আমরা দিয়েছিলাম (বিশাল) ধ্বনভান্ডার, যা (এমন ছিল যে) নিশ্চই তার (কোষাগারের) চাবিগুলো শক্তিশালী লোকদের একটি দলকে অবশ্যই নুইয়ে দিতো। তাকে যখন তার কওম বললো: ‘(এসব পার্থিব ধ্বনসম্পদ নিয়ে) আনন্দে আটখানা হয়ো না। নিশ্চই আল্লাহ -(দুনিয়ার জীবনকে নিয়ে) আনন্দে আটখানা হওয়া লোকদেরকে ভালবাসেন না। বরং, আল্লাহ তোমাকে (রিজিক হিসেবে) যা দিয়েছেন তার মধ্যে আখেরাতের জীবনকে অন্বেষন করো এবং দুনিয়া থেকে তোমার অংশকে ভুলে যেও না। আল্লাহ তোমার প্রতি যেমনি ভাবে অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও (তেমনি ভাবে অন্যের প্রতি) অনুগ্রহ করো। আর জমিনে ফ্যাসাদ-বিশৃঙ্খলা বাঁধানোর তালে থেকো না। নিশ্চই আল্লাহ (জমিনে) ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে ভালবাসেন না। সে বললো: ‘(আমার উপরে আল্লাহ’র অনুগ্রহ আবার কী !?) এই (সব ধ্বনসম্পদ) শুধুই আমার (মেধাবী চৌকশতা, পরিশ্রম ও) জ্ঞানের কারণে আমার কাছে এসেছে , (এই যে- আমার এই মাথাকে কাজে লাগানোর কারণে; বুঝলে !!!)’। (বস্তুত: কত অকৃতজ্ঞ ও মুর্খ ছিল সে)। সে কি জানতো না যে, (এই দুনিয়ায়) ওর আগেও অনেক মানব-গোষ্ঠিকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা ওর থেকেও অধিক শক্তিশালি-ক্ষমতাবান এবং জনবলে/ধ্বনমালে অধিক ছিল! বস্তুত: (তাদের মতো অকৃতজ্ঞ) অপরাধীদের থেকে তাদের পাপাচার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না, (বরং তাদের চেহারা গুলোতেই অকৃতজ্ঞতা ও অপরাধের ছাপ স্পষ্ট প্রকাশ পাবে, যা দেখে তাদেরকে চেনা যাবে এবং হিসাব-নিকাশ ও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তাদেরকে দোযখে ঢোকানো হবে)। পরে (এক দিন) সে তার জাতির (লোকদের) সামনে তার (ধ্বনমাল ও স্বচ্ছলতার দৃষ্টিনন্দন) জাকজমকের মধ্যে বের হল (লোকজনের দৃষ্টি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে)। (এটা দেখে) -যারা দুনিয়ার জীবনকে চাইতো, তারা বললো: ‘আহা রে! ক্বারুনকে যা দেয়া হয়েছে তেমন (ধ্বনমাল) যদি আমাদের হত! নিশ্চই সে বিরাট এক ভাগ্যবান লোক (বলতে হয়)’! আর (অন্যদিকে) যাদেরকে ইলম (ও ইমানী নূর) দেয়া হয়েছিল, তারা (ওদেরকে) বললো: ‘তোমাদের জন্য আক্ষেপ! যে ব্যাক্তি (আল্লাহ’র প্রতি) ইমান আনে এবং (আখেরাতের জন্য) নেক আমল করে, তার জন্য আল্লাহ’র পুরষ্কারই উৎকৃষ্ট, আর (দ্বীন বা পৃার্থিব কারণে আগত কষ্ট পরিশ্রমের উপরে) সবরকারীরা (ধৈর্যধারনকারীরা) ছাড়া অন্য কেউ তা লাভ করে না’। পরে আমরা তাকে এবং তার ঘরকে (তার ধ্বনসম্পদ সহ) জমিনে ধ্বসিয়ে দিয়েছিলাম। তখন (ওর) দলবলের মধ্যে কেউ ছিল না, যারা ওকে আল্লাহ’র মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারতো, আর না সে (নিজে) ছিল আত্বরক্ষায় সমর্থদের কেউ। গতকাল যারা ওর (মতো পার্থিব) মর্যাদা (লাভের) মনবাসনা পোষন করতো, তারা (ঘটনার পরের) সকালে (অবস্থা দেখে) বলতে লাগলো: ‘(ক্বারুনের পরিণতি ও আমাদের অথর্ব বিবেকবোধের জন্য) বড়ই আফসোস! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার জন্য ইচ্ছা রিজিককে সম্প্রসারিত করে দেন এবং (যার জন্য ইচ্ছে তা) পরিমিত মাত্রায় দেন। আল্লাহ যদি আমাদেরকে নিরাপত্তা না দিতেন, তাহলে আমরাও নির্ঘাত (ক্বারুনের মতো জমিনে) ধ্বসে যেতাম। ধিক (আমাদের বিবেকবোধের উপরে। বস্তুত:) কাফেররা সফলকাম হয় না”। [সূরা কাসাস ৭৬-৮২]

 এই আয়াতের মধ্যে فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ – {পরে আমরা তাকে এবং তার ঘরকে (তার ধ্বনসম্পদ সহ) জমিনে ধ্বসিয়ে দিয়েছিলাম} -এর ব্যাখ্যায় কাতাদাহ রহ. হযরত মাইমুনাহ রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, সামুরাহ বিন যুনদুব রা. বলেছেন- يُخْسَفُ بِقارُونَ وقَوْمِهِ في كُلِّ يَوْمٍ قَدْرَ قامَةٍ، فَلا يَبْلُغُ الأرْضَ السُّفْلى إلى يَوْمِ القِيامَةِ – “ক্বারুন ও তার (অনুসারী) কওম(-এর লোকেরা) প্রতিদিন জমিনে (তাদের নিজ নিজ) দেহ-পরিমাণ (স্থান জুড়ে) ধ্বসে যায়; (আর এভাবে ধ্বসতে ধ্বসতেও) পৃথিবীর তলানীতে গিয়ে পৌছতে পারবে না -কেয়ামত পর্যন্ত”। [তাফসীরুল কুরআন, ইমাম ইবনু আবি হাতেম- ১/৩০২০ রকম ১৭১৬১] সাঈদ বিন আবি উরওয়াহ’র সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, কাতাদাহ রহ. বলেছেন- ذُكُرِ لَنا أنَّهُ يُخْسَفُ بِهِ كُلَّ يَوْمٍ قامَةً، وأنَّهُ يَتَجَلْجَلُ فِيها ولا يَبْلُغُ قَعْرَها إلى يَوْمِ القِيامَةِ – “আমাদের কাছে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে প্রতিদিন জমিনে (তার নিজ) দেহ-পরিমাণ (স্থান জুড়ে) ধ্বসে যায় এবং সে এভাবে ধ্বসতেই থাকবে তাতে, কেয়ামত পর্যন্ত সে তার তলানীতে গিয়ে পৌছতে পারবে না” । [তাফসীরুল কুরআন, ইমাম ইবনু আবি হাতেম- ১/৩০২০ রকম ১৭১৬০; তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ইমাম তাবারী- ১/২৬৬; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ১০/২৭১] 

আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেনبَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي فِي حُلَّةٍ ، تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ ، مُرَجِّلٌ جُمَّتَهُ ، إِذْ خَسَفَ اللَّهُ بِهِ ، فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب اللباس , باب من جر ثوبه من الخيلاء : ٥٧٨٩ واللفظ له، ومسلم : ٢٠٨٨ باختلاف يسير – “(তোমাদের পূর্বের জামানার) এক ব্যাক্তি (দৃষ্টি নন্দন) দু’পাটি কাপড় পড়ে (অহংকার ও দম্ভ ভরে) হাটছিল, (নিজের ঠাটবাট অনুভব করে) নিজেই নিজের প্রতি অবাক হচ্ছিল, তার মাথার চুল ছিল পরিপাটি; দু কাধের দিকে ছড়ানো, এমন সময় আল্লাহ তাকে জমিনে ধ্বসিয়ে দেন। ফলে সে (তখন থেকে) কেয়ামত পর্যন্ত (জমিনে) ধ্বসতেই থাকবে”। [সহিহ বুখারী– ৪/৫৪ হাদিস ৫৭৮৯; সহিহ মুসলীম, হাদিস ২০৮৮; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ– ৫/২৪৩ হাদিস ৮৫৬২; মুসনাদে আহমদ– ২/৪৫৬ হাদিস ৯৮৮৭]

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেনبيْنَما رَجُلٌ يَجُرُّ إزارَهُ مِنَ الخُيَلاءِ، خُسِفَ به، فَهو يَتَجَلْجَلُ في الأرْضِ إلى يَومِ القِيامَةِ . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب الأحاديث الأنبياء : رقم ٣٤٨٥ و في كتاب اللباس , باب من جر ثوبه من الخيلاء : ٤/٥٤ رقم ٥٧٩٠، و غيره  – “(তোমাদের পূর্বের জামানার একবার) এক ব্যাক্তি তার (পোষাকের) ইজারকে (পায়ের) টাখনু থেকে (নিচে ছড়িয়ে অহংকার ভরে) হেঁচরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, এমন সময় সে জমিনে ধ্বসে যায়। ফলে সে (তখন থেকে) কেয়ামত পর্যন্ত জমিনে ধ্বসতেই থাকবে”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৪৮৫, ৪/৫৪ হাদিস ৫৭৯০; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ– ৫/২৪৫ হাদিস ৮৫৭১; সুনানে নাসায়ী– ৮/২০৬ হাদিস ৫৩২৬; মুসনাদে আহমদ- ২/৬৬]

পৃথিবীতে অবশ্যই বহু মালদার ধ্বনী ব্যাক্তি গত হয়েছে। তবে কুরআনে কেনো বিশেষ ভাবে ‘ধ্বনকুবেড় কারুনে’র কথা উল্লেখ করা হল? শুধুই কি তার ‘বিশাল পরিমান ধ্বনসম্পদের মালিক হওয়াটাই’ কি মূল কারণ? কুরআনে ‘ধাবনকুবেড় কারুন’-এর বিশেষ কয়েকটি খারাপ বৈশিষ্ট তুলে ধরা হয়েছে। যেমন:-

 (১) আল্লাহ তাআলা- ক্বারুনকে যে বিশাল পরিমাণ ধ্বনসম্পদ দিয়েছিলেন, সে তা থেকে মানুষের হক্ব আদায় করতো না।  

 (২) ক্বরুনের ব্যাপারে বলা হয়েছে- فَبَغَىٰ عَلَيْهِمْ – “{বস্তুত: সে (তার অঢেল সম্পদের কারণে অহংকারী ও দাম্ভিক হয়ে উঠেছিল এবং তার প্রভাব খাটিয়ে) তাদের উপরে উদ্ধত্ব্য প্রকাশ করতো}এ থেকে অনুমিত হয় যে, ক্বারুন তার কওমের গরিব ও দূর্বল লোকদের উপরে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জুলুম ও অন্যায় অবিচার করতো। [আজকালকার গ্রামগঞ্জের ধ্বনী ও ক্ষমতাবান মাতব্বর/চেয়ারম্যান/নেতা’রা সেখানকার গরিব ও দূর্বল ব্যাক্তিদের সাথে লেনদেন ও দ্বন্দ্বের সময় কী জাতীয় জুলুম ও অন্যায় অবিচারমূলক আচরণ করে -তা একটু কল্পনায় আনুন। তারপর ক্বারুনকে নিয়ে চিন্তা করুন বিষয়টি বোঝার জন্য] 

 (৩) যখন কওমের লোকেরা কারুনকে একটা ভাল উপদেশ দিয়ে বললো যে, ‘আল্লাহ’র দেয়া এই সকল ধ্বনসম্পদ দিয়ে সমাজে ফ্যাসাদ সৃষ্টি না করে বরং তা দ্বারা আল্লাহ’র সন্তুটি তালাশ করো, আখেরাতের চিন্তা করো’, তখন সে নিজের অবস্থার উপরে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করার পরিবর্তে বললো- إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَىٰ عِلْمٍ عِندِي – “{(আমার উপরে আল্লাহ’র অনুগ্রহ আবার কী !?) এই (সব ধ্বনসম্পদ) শুধুই আমার (মেধাবী চৌকশতা, পরিশ্রম ও) জ্ঞানের কারণে আমার কাছে এসেছে , (এই যে- আমার এই মাথাকে কাজে লাগানোর কারণে; বুঝলে !!!)’।}। কত বড় অকৃতজ্ঞ দাম্ভীক ও অহংকারী হলে এমন বেয়াদবী প্রদর্শন করতে পারে আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে !!! সে মূলত: এর দ্বারা তার উপরে আল্লাহ’র অনুগ্রহ ও অবদানকে চুড়ান্ত ভাবে অস্বীকার করে দিয়েছিল।   

 (৪) একে-তো সে ছিল আল্লাহ’র একজন পাক্কা অকৃতজ্ঞ বান্দা, তদুপরি সে গরিব ও দূর্বলদের উপরে তার ধ্বনমাল দিয়ে দয়া প্রদর্শন করতো না, উল্টো তাদের উপরে নানাবিধ জুলুম ও অন্যায় অবিচার করতো, এভাবে সে সমাজে একজন ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীর রূপ ধারন করে রেখেছিল, এভাবে পাপ ও অপরাধের মাত্রা যখন সীমা অতিক্রমের পর্যায়ে গিয়ে ঠেঁকেছিল, তখন একদিন সে মানুষকে তার ধ্বনমালের ফুটানী দেখানোর জন্য দারুন জাকজমক ও বিলাশী সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে করতে খুব অহংকার ও ঠাটবাটের সাথে বের হল। তার মতো বদ লোকের এমন মাত্রাতিরিক্ত দাম্ভীক অবস্থাটা আল্লাহ তাআলা কাছে খুবই ঘৃনার বিষয় ছিল। ফলে আল্লাহ তাকে জমিনে ধ্বসীয়ে দিলেন।