আখেরী জামানা’র ফিতনা ফ্যাসাদ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী ১
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و كفى و سلام على عباده الذين اصطفى
আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে (এখানে ক্লিক করুন) কিছু হাদিস ও আছার পেশ করেছি। এখানে আখেরী জামানার ফিতনা ফাসাদ সম্পর্কে কিছু হাদিস ও আছার উল্লেখ করছি। [উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ ও তার অনুবাদকে কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।]
# আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- : إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ ، وَإِنَّ أُمَّتَكُمْ هَذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا فِي أَوَّلِهَا ، وَسَيُصِيبُ آخِرَهَا بَلَاءٌ ، وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا ، وَتَجِيءُ فِتْنَةٌ فَيُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا ، وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ : هَذِهِ مُهْلِكَتِي ، ثُمَّ تَنْكَشِفُ وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ ، فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ : هَذِهِ هَذِهِ ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ ، وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ ، فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ، وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ ، وَمَنْ بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ ، فَلْيُطِعْهُ إِنِ اسْتَطَاعَ ، فَإِنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنُقَ الْآخَرِ . رواه مسلم في الصحيح , كتاب الإمارة , بَابُ بَابُ الْأَمْرِ بالْوَفَاءِ بِبَيْعَةِ الْخُلَفَاءِ ، الْأَوَّلِ فَالْأَوَّلِ : ٣/١٤٧٢ رقم ١٨٤٤، و النسائى في سننه : ٧/١٥٣ رقم ٤١٩١ ، و ابن ماجه في سننه : ٢/١٣٠٦ رقم ٣٩٥٦ ، و أحمد في مسنده : ٢/١٩١ رقم ٦٧٩٣ – “আমার পূর্বে এমন কোনো নবী ছিলেন না, যাঁর উপরে এই হক্ব (দায়দায়িত্ব) না ছিল যে, তিনি (ওহী সূত্রে) যা কিছু তাঁর উম্মতের জন্য কল্যানকর বলে জানতে পারবেন, তা তাদের কাছে উপস্থাপন করবেন এবং যা কিছু তাদের জন্য অকল্যানকর বলে জানতে পারবেন, তিনি (সে ব্যাপারে) তাদেরকে সতর্ক করবেন। আর তোমাদের এই উম্মত(-ই মুহাম্মাদী)কে আফিয়াতের (দ্বীনী নিরাপত্তার) সাথে রাখা রয়েছে এর শুরুর অংশে। আর অচিরেই এর শেষের অংশটি (বিভিন্ন প্রকারের ফিতনা ও) বালা-মুসিবত এবং এমনসব বিষয়াদির সম্মুখীন হবে, যা তোমরা অপছন্দ করবে। (পথভ্রষ্ঠকারী বিভিন্ন) ফিতনা আসবে, যার একটার কাছে অপরটিকে লঘুতর (মনে) হবে। (একটা) ফিতনা আসবে, তখন মুমিন বলবে: ‘এ(ফিতনা)টি আমাকে বরবাদ করে ফেলছে’। পরে সেটা দূর হয়ে যাবে। (তারপর আবার নতুন আরো ভয়াবহ একটা) ফিতনা আসবে, তখন মুমিন বলবে: ‘এটাই! এটাই! (আমাকে বরবাদ করে ফেলছে)’। সুতরাং, যে ব্যাক্তি দোযখ থেকে দূরে থাকতে এবং বেহেশতে প্রবেশ করাকে মহব্বত করে, সে যেন অবশ্যই আল্লাহ’তে ও আখেরাতে ইমান নিয়ে মৃত্যু বরন করে, সে যেন অবশ্যই মানুষের কাছে এমন ভাবে পেশ হয়, যেভাবে তার নিজের কাছে কারোর পেশ হওয়াকে সে ভালবাসে”। [সহিহ মুসলীম- ৩/১৪৭২ হাদিস ১৮৪৪; সুনানে নাসায়ী- ৭/১৫৩ হাদিস ৪১৯১; সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩০৬ হাদিস ৩৯৫৬; মুসনাদে আহমদ- ২/১৯১ হাদিস ৬৭৯৩]
# হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- وَاللَّهِ إِنِّي لَأَعْلَمُ النَّاسِ بِكُلِّ فِتْنَةٍ هِيَ كَائِنَةٌ فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ السَّاعَةِ وَمَا بِي إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسَرَّ إِلَيَّ فِي ذَلِكَ شَيْئًا لَمْ يُحَدِّثْهُ غَيْرِي وَلَكِنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَهُوَ يُحَدِّثُ مَجْلِسًا أَنَا فِيهِ عَنْ الْفِتَنِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَعُدُّ الْفِتَنَ مِنْهُنَّ ثَلَاثٌ لَا يَكَدْنَ يَذَرْنَ شَيْئًا وَمِنْهُنَّ فِتَنٌ كَرِيَاحِ الصَّيْفِ مِنْهَا صِغَارٌ وَمِنْهَا كِبَارٌ قَالَ حُذَيْفَةُ فَذَهَبَ أُولَئِكَ الرَّهْطُ كُلُّهُمْ غَيْرِي . رواه مسلم , كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب إخبار النبي صلى الله عليه وسلم فيما يكون إلى قيام الساعة: رقم ٢٨٩١ ; و ابن حبان في صحيحه: ١٥/٦ رقم ٦٦٣٧ و اسناده جيد; و احمد: ١٦/٦٣٣ رقم ٢٣٣٥٢ و اسناده صحيح; الداني في السنن الواردة: ٣١; ابن منده في الإيمان: ٢/٩١٢ رقم ٩٩٧ – ‘আল্লাহ’র কসম, আমার এবং কেয়ামতের মাঝে ঘটবে -এমন প্রতিটি ফিতনা সম্পর্কে লোকজনের মধ্যে আমারই অধিক জানাশোনা আছে। তা এজন্য নয় যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে গোপনে এব্যাপারে এমন কিছু বলে গেছেন যা আর কারো কাছে বলেননি। বরং (তা এই জন্য যে), রাসুলুল্লাহ ﷺ মজলিসে বসে ফিতনা সমূহের কথা বলেছেন আর (তখন সৌভাগ্যক্রমে) আমি সেখানে (উপস্থিত) ছিলাম। রাসুলুল্লাহ ﷺ অনেক ফিতনা’র কথা বলেছেন। ওগুলোর মধ্যে তিনটি ফিতনা (এখনো) প্রকাশ হয়নি বললেই চলে, (বরং পরে ভাল মতো প্রকাশ পাবে)। (আলোচিত) ফিতনাগুলোর মধ্যে শুষ্ক বাতাস, ছোট ফিতনা ও বড় ফিতনা’র মতো কথাও ছিল। হুযাইফা রা. বলেন: (আমার) সেই সাথিদের মধ্যে আমি ছাড়া সকলে (দুনিয়া ছেড়ে) বিদায় নিয়ে গেছেন’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৮৯১; সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/৬ হাদিস ৬৬৩৭; মুসনাদে আহমদ- ১৬/৬৩৩ হাদিস ২৩৩৫২; আল-ইমান, ইবনে মানদাহ-২/৯১২ হাদিস ৯৯৭; আস-সুন্নাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৩১]
# উম্মে সালমাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَزِعًا ، يَقُولُ : سُبْحَانَ اللَّهِ ، مَاذَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الخَزَائِنِ ، وَمَاذَا أُنْزِلَ مِنَ الفِتَنِ ، مَنْ يُوقِظُ صَوَاحِبَ الحُجُرَاتِ ، يُرِيدُ أَزْوَاجَهُ لِكَيْ يُصَلِّينَ ، رُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الآخِرَةِ . رواه البخاري في صحيحه , كتاب الفتن, باب لا يأتي زمان إلا الذي بعده شر منه : رقم ٧٠٦٩ و ١١٥، و والبغوي في شرح السنة : ٩٢١ – “(একবার এক) রাতে রাসুলুল্লাহ ﷺ ভীতসন্ত্রস্ত হেয় (ঘুম থেকে জেগে) উঠলেন। তিনি বললেন: ‘সুবহানাল্লহ! (আমি আজ স্বপ্নে আমার উম্মতের উপরে ভবিষ্যতে আগত কত ভয়ঙ্কর সব বিষয় দেখলাম)! আল্লাহ (এই পৃথিবীতে) কত খাজানাই না নাজিল করলেন এবং কত ফিতনাই না নাজিল হল। কে (আছে, যে আমার) হুজরাবাসীদেরকে জাগাবে, যাতে তারা (উঠে তাহাজ্জদের) নামায আদায় করে (এবং আল্লাহ’র কাছে ফিতনা ও দোযখ থেকে মুক্তি কামনা করতে পারে)’? (একথার দ্বারা) তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাঁর স্ত্রীগণ। (তিঁনি আরো বললেন:) ‘দুনিয়ায় (বহু) পোশাক পরিহিত (নারী পুরুষ) আখেরাতে উলঙ্গ থাকবে”। [সহিহ বুখারী– ৪/৩১৫ হাদিস ৭০৬৯; সুনানে তিরমিযী- ৪/৪২২ হাদিস ২১৯৬; মুআত্তা ইমাম মালেক- ২/৯১৩ হাদিস ৮; শারহুস সুন্নাহ, ইমাম বগভী, হাদিস ৯২১]
# হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন- إِذَا أَحَبَّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَعْلَمَ أَصَابَتْهُ الْفِتْنَةُ أَمْ لَا، فَلْيَنْظُرْ فَإِنْ كَانَ رَأَى حَلَالًا كَانَ يَرَاهُ حَرَامًا فَقَدْ أَصَابَتْهُ الْفِتْنَةُ، وَإِنْ كَانَ يَرَى حَرَامًا كَانَ يَرَاهُ حَلَالًا فَقَدْ أَصَابَتْهُ . رواه الحاكم في المستدرك : ٤/٥١٤ رقم ٨٤٤٣ و قال: هذا حديث صحيح الإسناد على شرط الشيخين، ولم يخرجاه ، و وافقه الذهبي في تلخيصه , كذا في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة : ١/٢٤ – “যখন তোমাদের কেউ (এই) কামনা করে যে, সে ফিতনায় লিপ্ত আছে কী নেই -তা জানবে, তখন তার অবশ্যই (একটি বিষয় খেয়াল করে) দেখতে হবে। যদি (ইসলামী শরীয়তে সুস্পষ্ট ভাবে) কোনো কিছু হালাল হয়ে থাকে, অথচ সে সেটাকে হারাম বলে মনে করে, তাহলে (বুঝে নিতে হবে) সে ফিতনায় লিপ্ত হয়ে গেছে। আর যদি (শরীয়তে সুস্পষ্ট ভাবে) কোনো কিছু হারাম হয়ে থাকে, অথচ সে সেটাকে হালাল বলে মনে করে, তাহলে(ও বুঝে নিতে হবে) সে (ফিতনায়) লিপ্ত হয়ে গেছে”। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫১৪ হাদিস ৮৪৪৩; জামেউল জাওয়ামি, ইমাম সুয়ূতী- ১৪/৩০৩ হাদিস ১০৭১৫]
# হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَنَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ ، يُكَفِّرُهَا الصِّيَامُ وَالصَّلَاةُ وَالصَّدَقَةُ ، وَالْأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيُ عَنِ الْمُنْكَرِ . رواه مسلم, كِتَاب الْفِتَنِ وَأَشْرَاطِ السَّاعَةِ , بَاب فِي الْفِتْنَةِ الَّتِي تَمُوجُ كَمَوْجِ الْبَحْرِ: ٨/١٧٣ – ‘মানুষ ফিতনাগ্রস্ত হবে তার পরিবারের ব্যাপারে, তার ধ্বসম্পদের ব্যাপারে, তার নিজের ব্যাপারে, তার সন্তানের ব্যাপারে এবং তার প্রতিবেশির ব্যাপারে। তার রোযা, নামায, যাকাত/সাদাকাহ এবং আমর বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুনকার এসবের কাফফারা হয়ে যাবে’। [সহিহ মুসলীম– ৮/১৭৩]
ফায়দা: এখানে ইমানদার মুসলমানদের কথা বলা হয়েছে, যারা ফিতনার মধ্যেও ইমান হারা হবে না, তবে বিভিন্ন সময়ে ফিতনার ভিতরে থাকার কারণে যে সকল সগীরাহ গোনাহ হয়ে যাবে, তা উপরের আমলগুলির দ্বারা কাফফারা হয়ে যাবে। তবে কবীরাহ গোনাহ, দেনা-ঋণ, হক্কুল ইবাদ (বান্দার হক্ব) ইত্যাদির বোঝা থেকে মুক্তি পেতে শরয়ী নিয়ম মতো তওবা শর্ত। الله اعلم بالصواب
# উবাদাহ বিন সামেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إنها ستكون فتن لا يستطيع المؤمن أن يغير فيها بيد و لا بلسان . فقال علي بن أبي طالب : يا رسول الله ، هل ينقص ذلك من إيمانهم ؟ قال : لا ، إلا كما ينقص القطر من السقاء . قال : و لم ذلك ؟ قال : يكرهونه بقلوبهم . رواه الطبراني في المعجم الأوسط : ٦/١٨٩ رقم ٦١٥٣ ، و قال الهيثمي : ٧/٢٧٥ : رواه الطبراني في الكبير والأوسط ، وفيه طلحة بن زيد القرشي وهو ضعيف جدا ; اخرجه الداني في السنن الواردة في الفتن من طريق اخر عن الأوزاعي عن عمير بن هانىء مرفوعا مرسلا – “অচিরেই (আমার উম্মতের উপরে বিভিন্ন) ফিতনা সমূহ হবে। সে সময় (কোনো) মুমিন (সমাজে শরীয়ত বিরোধী কোনো কিছুকে দেখেও) তা না তার হাত দ্বারা পরিবর্তন করার সামর্থ রাখবে, আর না জবান দ্বারা’। আলী বিন আবি ত্বালেব রা. জিজ্ঞেস করলেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! ও(ই ফিতনা)টা কি তাদের ইমানের কিছু ঘাটতি আনবে’? তিনি বললেন: ‘না। (তেমনটা ঘাটতি নয়। জামানার তোড়ের মুখে) শুধু (এতটুকু ঘাটতি হবে) যেমনটা পানপাত্রে পানির একটা ফোটা কমে যায়। আলী রা. বললেন: ‘(ইয়া রাসুলাল্লাহ!) তা কেনো হবে?’। তিনি বললেন: ‘তারা (তাদের হাত ও জবান দ্বারা সেসব ফিতনা পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখবে না বটে, তবে) তাদের অন্তর দিয়ে (হলেও ওসব শরীয়ত বিরোধী বিষয় গুলিকে) ঘৃনা করবে”। [আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৬/১৮৯ হাদিস ৬১৫৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৭৫; কানজুল উম্মাল– ৬/১২৫]
ফায়দা: বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, শরীয়ত যে যে ক্ষেত্রে মুসলমানদের কাছ থেকে তাদের হাত, জবান এবং অন্তর -এই তিনটির সব কটিকেই ব্যবহার করে কোনো মুনকার (তথা শরীয়ত বিরোধী কোনো কিছু)কে পরিবর্তন করার দাবী জানায়, সেই সেই ক্ষেত্রে যে ক্ষমতাবান সামর্থবান মুসলমান তার হাত/ক্ষমতা দ্বারা তা পরিবর্তনের যথাসম্ভব চেষ্টা করে, সে ১ম শ্রেনির মুমিন। আর যে মুসলমান তার হাত/ক্ষমতা দ্বারা তা পরিবর্তন করার শরয়ী সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সেই হক্ব আদায় না করে শুধু তার জবান দ্বারা তা পরিবর্তনের যথাসম্ভব চেষ্টা করে সে ২য় শ্রেণির মুমিন। আর যে মুসলমান তার হাত/ক্ষমতা এবং জবান দ্বারা তা পরিবর্তন করার শরয়ী সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সেই হক্ব আদায় না করে শুধু তার অন্তর দ্বারা তা ঘৃনা করে, সে ৩য় শ্রেণির মুমিন। উপরের এই রেওয়ায়েত থেকে অনুমিত হয়, এখানে উল্লেখিত ফিতনার জামানায় বিদ্যমান ১ম শ্রেণির মুমিনের কথাই বলা হচ্ছে, যে মুমিনরা সেই জামানায় বাস্তবে তাদের হাত, জবান এবং অন্তর -এই তিনটির সব কটিকেই ব্যবহার করার শরয়ী সামর্থ থাকলে তারা তার হক্ব আদায়ের যথাসম্ভব চেষ্টা করতো। কিন্তু বাস্তবে তখন তাদের হাত/ক্ষমতা ও জবান চালানোর শরয়ী সামর্থই থাকবে না, শুধু থাকবে অন্তর দিয়ে ঘৃনা করার ক্ষমতা এবং তারা সমাজের মুনকার’গুলোকে অন্তত: অন্তর দ্বারা ঘৃনা করতে থাকবে। এজন্য তারা ১ম শ্রেণির মুমিন হিসেবেই গণ্য হবে -ইনশাআল্লাহ, কারণ তাদের যতটুকু শরয়ী সামর্থ ছিল তারা ততটুকু আদায় করছে। যদি সেই জামানায় তাদের হাত ও জবান দ্বারা উক্ত মুনকার’গুলিকে পরিবর্তন করার শরয়ী সামর্থ থাকতো, এবং তা সত্ত্বেও তারা সেই হক্ব আদায় না করে শুধু অন্তর দ্বারা ঘৃনা করার হক্ব আদায় করতো, তাহলে তারা ৩য় শ্রেণির মুমিন হিসেবে গণ্য হত। সম্ভবত: এজন্যই এই হাদিসে ইংগীত রয়েছে যে, তাদের ইমানের ঘাটতি হবে না, তবে এতটুকু ঘাটতি হবে যেমনটা পানপাত্রের পানির এক ফোটা কমলে সামান্য কিছুটা ঘাটতি হয়ে থাকে। আমার ধারনা, এমন জামানা হল সেই জামানা, যে জামানায় মানুষজনের কাছে মূল ইসলামটা গরীব (দুষ্প্রাপ্য) হয়ে যাবে এবং কাফের ও মুনাফেকে ভরা পৃথিবীতে মুমিনরা তাদের ইমানী-পরিচয় যথাসাধ্য গোপন করে চলাটাকে নিরাপদ মনে করবে। কারণ, সেই জামানায় যে মুমিনই সমাজের কোনো মুনকারকে পরিবর্তন করতে এগিয়ে যাবে, সে-ই তখনকার শাসক ও মুনাফেক জনগণের দ্বারা হুমকীর সম্মুখীন হবে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تقوم الساعة حتى تظهر الفتن، ويكثر الكذب، وتتقارب الأسواق، ويتقارب الزمان، ويكثر الهرج قيل: وما الهرج؟ قال: القتل – رواه الإمام أحمد في المسند ١٠٣٤٦ ، وصححه الألباني في السلسلة الصحيحة ٢٧٧٢ – ‘কেয়ামতের সংঘটিত হবে না, যাবৎ না ফিতনাহসমূহ প্রকাশ পায়, মিথ্যা ব্যাপক হয়ে যায়, বাজার/মার্কেটসমূহ পরষ্পরে কাছাকাছি এসে যায় এবং ‘হারাজ’ ব্যাপকভাবে ঘটে। জিজ্ঞেস করা হল: ‘হারাজ’ কি? তিনি বললেন: কতল (খুন-খারাবি)’। [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১০৩৪২]
# হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْخَيْرِ ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ ، فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ ، فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، فَقُلْتُ : هَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، وَفِيهِ دَخَنٌ ، قُلْتُ : وَمَا دَخَنُهُ ؟ قَالَ : قَوْمٌ يَسْتَنُّونَ بِغَيْرِ سُنَّتِي ، وَيَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي ، تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ ، فَقُلْتُ : هَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، صِفْهُمْ لَنَا ، قَالَ : نَعَمْ ، قَوْمٌ مِنْ جِلْدَتِنَا ، وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا ، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، فَمَا تَرَى إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ ؟ قَالَ : تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَ إِمَامَهُمْ ، فَقُلْتُ : فَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ ؟ قَالَ : فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا ، وَ لَوْ أَنْ تَعَضَّ عَلَى أَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَ أَنْتَ عَلَى ذَلِكَ . رواه مسلم في الصحيح , كتاب الإمارة , بَابُ الْأَمْرِ بِلُزُومِ الْجَمَاعَةِ عِنْدَ ظُهُورِ الْفِتَنِ وتحذير الدعاة إلى الكفر : ٣/١٤٧٤ رقم ١٨٤٧، و البخاري في الصحيح , كتاب الفتن , باب كيف الأمر إذا لم تكن جماعة : رقم ٣٦٠٦ ، وأبو عوانة في مسنده : ٤/٤١ رقم ٥٧٥٧ و ٥٦٥٨، و غيرهم – ‘লোকেরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে কল্যান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো, আর আমি জিজ্ঞেস করতাম মন্দ সম্পর্কে -এই ভয়ে ভীত হয়ে যে পাছে তা আমাকে পেয়ে বসে কিনা। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমরা জাহেলিয়াত ও মন্দের ভিতরে ছিলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে (আপনার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের মতো) এই কল্যান এনে দিলেন। এই কল্যানের পর কি কোনো মন্দ কিছু আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। আমি বললাম: সেই মন্দের পর কি কোনো কল্যানের কিছু আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, আর তাতে থাকবে দাখান (ধোঁয়া)। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ওই দাখান কি? তিনি বললেন: (সে জামানায়) এমন গোষ্ঠি (-র আবির্ভাব হবে) যারা (মানব সমাজে আমার আনীত) আদর্শ বহির্ভূত আদর্শ জারি করবে এবং (আমার দেখানো) পথনির্দেশিকা বহির্ভূত (পথের দিকে মানুষজনকে) পথ দেখাবে (তাদেরকে পরিচালিত করবে)। তাদের মধ্যে মা’রুফ বিষয়ও (দেখতে) পাবে এবং মুনকার বিষয়ও পাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: এই কল্যানের পর কি কোনো মন্দ রয়েছে? তিনি বললেন: (এদের পর এমন গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে যারা মানব জাতিকে এমন মত ও পথের দিকে ডাক দিবে, যা হবে মূলতঃ) জাহান্নামের বিভিন্ন দরজা থেকে (দেয়া) ডাক। যে ব্যাক্তি তাদের ডাকে সেদিকে সারা দিবে, তারা তাকে ওর মধ্যে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদেরকে তাদের বৈশিষ্ট (কী হবে -তা) বলে দিন। তিনি বললেন: (এই জাহান্নামী পথভ্রষ্ঠ) গোষ্ঠিটির চামড়া আমাদের মতোই হবে, তারা কথাও বলবে আমাদের (মুসলমানদের) ভাষা (ভঙ্গি)তে। আমি বললাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমি যদি তাদেরকে পাই, তাহলে আপনি আমাকে কি করতে বলেন? তিনি বললেন: মুসলমানদের জামাআত’ ও তাদের ইমামকে (আমীর/খলিফাকে) আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: যদি (তখন) কোনো জামাআতও না থাকে, কোনো ইমামও না থাকে? তিনি বললেন: তাহলে ওই প্রতিটি ফেরকা থেকে নিজকে বিছিন্ন করে রাখবে- যদিও-বা তোমাকে গাছের শিকড় খেয়ে থাকতে হয় এমনকি এ অবস্থার উপরই তোমার মৃত্য চলে আসে। [সহিহ মুসলীম – ৩/১৪৭৪ হাদিস ১৮৪৭; সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৬০৬; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ– ৪/৪১ হাদিস ৫৭৫৭, ৫৭৫৮]
ফায়দা: এই হাদিসে যে বলা হয়েছে যে, কোনো কোনো গোষ্ঠি জাহান্নামের বিভিন্ন দরজা থেকে ডাকা ডাকি করবে, সেটা হবে মূলত: ‘ফিতনায়ে দুহাইমা’র সময়। এর প্রমাণ হল নসর বিন আসেম আল-লাইস রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি, যার মধ্যে আছে যে, হুযাইফা রা. বলেন- قلت يا رسول الله أبعد هذا الخير شر قال فتنة عمياء صماء عليها دعاة على أبواب النار وأنت أن تموت يا حذيفة وأنت عاض على جذل خير لك من أن تتبع أحدا منهم. مسند الإمام أحمد: ٥/٣٨٦ رقم ٢٣٣٣٠ , تعليق شعيب الأرنؤوط : حديث حسن – “আমি জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই কল্যানের পর কি কোনো মন্দ আছে? তিনি বললেন: (হ্যাঁ, আছে। আর সেটা হল এমন এক) ফিতনা যা (আকিদা ও বিশ্বাসগত) অন্ধত্ব ও বধিরতা (-র অন্ধকার নিয়ে আবির্ভূত হবে), যার উপর ভিত্তি করে দোযখের বিভিন্ন দরজায় দাঁড়িয়ে (পথভ্রষ্ঠতার ধারক-বাহক নেতা ও লিডার’দের পক্ষ থেকে তোমাদের মুসলমানদেরকে তাদের আদর্শ গ্রহনের দিকে) ডাক দেয়া হবে। হে হুযাইফা, তুমি যদি (তখন আল্লাহ’র রাস্তায় মড়ে যেতে পরো, তো) মড়ে যেও (তবুও কোনো অবস্থাতেই ওদের অনুসরণ করতে যেও না)। ওদের (মতো পথভ্রষ্ঠ লিডারদের) কোনো একজনের অনুগত্য-অনুসরণ করার থেকে তুমি আনন্দ-উল্লাসে (তোমার ধ্বনসম্পদ) উড়িয়ে দিবে সেটাও তোমার জন্য অধিক কল্যানকর হবে”। [মুসনাদে আহমদ- ৫/৩৮৬, হাদিস ২৩৩৩০; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী- ৫/১৮ হাদিস ৮০৩২, ৮০৩৩; আত-তবাকাত, ইবনে সা’দ- ৪/২৫২] আর এই অন্ধত্ব ও বধিরতাপূর্ণ ঘন অন্ধকারময় ফিতনাটি হল ‘ফিতনায়ে দুহাইমা’, যে ফিতনার ব্যাপারে আমরা এখানে (ক্লিক করুন: আখেরী জামানা’র ফিতনা ফ্যাসাদ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী ২) বহু রেওয়ায়েত পেশ করেছি।
আমার মতে, আমরা ‘ফিতনায়ে দুহাইমা’র ভিতরে ঢুকে গেছি। তবে জানি না যে, আমরা ‘ফিতনায়ে দুহাইমা’র প্রথম অংশে আছি, নাকি মাঝামাঝি অংশে, নাকি শেষ অংশে। ‘ফিতনায়ে দুহাইমা’র পরের ঠিক সংলঘ্ন ফিতনাটি হল ‘দাজ্জালের ফিতনা’। যেমন, সাবি’ বিন খালিদ রহ. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হযরত হুযাইফা রা. বলেন- إن الناس كانوا يسألون رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الخير وكنت أسأله عن الشر قال قلت يا رسول الله أرأيت هذا الخير الذي أعطانا الله يكون بعده شر كما كان قبله قال نعم قلت يا رسول الله فما العصمة من ذلك قال السيف قلت وهل للسيف من بقية قال نعم قال قلت ثم ماذا قال ثم هدنة على دخن قال جماعة على فرقة فإن كان لله عز وجل يومئذ خليفة ضرب ظهرك وأخذ مالك فاسمع واطع وإلا فمت عاضا بجذل شجرة. قال قلت ثم ماذا قال يخرج الدجال …. رواه الحاكم فى المستدرك: ٤/٤٧٩ رقم ٨٣٣٢ و قال هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه, و وافقه الذهبي في التلخيص; أبو داود الطيالسي فى المسنده: ١/٥٩ رقم ٤٤٢ و ٤٤٣ هذا حديث صحيح، رواته كلهم ثقات كما قال حمود بن عبد الله التويجري فى إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ١/٧٤; أبو داود فى سننه: ٤/٩٥ رقم ٤٢٤٤ و حسنه الالبانى; ابن أبي شيبة فى المصنف: ٧/٤٤٧ رقم ٣٧١١٣ ; عبد الرزاق فى المصنف: ١١/٣٤١ رقم ٢٠٧١١ ; أحمد فى ال مسند: رقم ٢٢٣٣٣ و ٢٣٤٧٦; معمر بن راشد فى الجامع: ١١/٣٤١; أبو عوانة فى المسند: ٤/٤٢٠ رقم ٧١٦٨; البزار فى المسند: ٧/٣٦١ رقم ٢٩٦٠–‘লোকজন রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে কল্যান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো, আর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম মন্দ সম্পর্কে। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আল্লাহ (আপনার বরকতে) আমাদেরকে এই-যে কল্যান দিয়েছেন, এরপর কি কোনো মন্দ রয়েছে -যেমনটা এর আগে (জাহেলী জামানায়) ছিল? তিনি বললেন: হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ! তা থেকে মুক্তির উপায় কি? তিনি বললেন: তরবারী। আমি জিজ্ঞেস করলাম: তরবারীর কারণে কি কিছু অবশিষ্ট থাকবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, (থাকবে)। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম: তারপর কি হবে? তিনি বললেন: এরপর (মুসলমানরা এমন হবে, যেন পাপ মিশ্রিত) ধোয়ার উপর (ইমান ও আমলের অপূর্ণ) স্থিরতা, তিনি বললেন: (তখন থাকবে বিভিন্ন) ফেরকার (নিজ নিজ বিশ্বোস ও চেতনার) উপর (গঠিত সব) জামাআত। সেদিন যদি আল্লাহ আযযা ওয়া যাল্লা (জমিনের বুকে কোনো) খলিফা (সুলতান/ইমাম-কে জীবিত) রাখেন, (যে) তোমার পিঠে (অন্যায় ভাবে) আঘাত করে, তোমার ধ্বনসম্পদ (অন্যায় ভাবে) ছিনিয়ে নেয়, তবুও (সেই খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না, বরং তার আদেশ-নির্দেশ) শুনবে এবং (ওর মধ্যে জায়েয বিষয়গুলোর) অনুগত্য করবে -(এর জন্য) যদিও তোমাকে গাছ’কে কামড় দিয়ে মৃত্যুকে বরন করতে হয়। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম: তারপর কি হবে? তিনি বললেন: এরপর দাজ্জাল বেড় হবে।… [মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৭৯, হাদিস ৮৩৩; আল-মুসনাদ, আবু দাউদ তায়ালিসী- ১/৫৯ হাদিস ৪৪২, ৪৪৩; সুনানে আবু দাউদ- ৪/৯৫ হাদিস ৪২৪৪; মুসান্নাফে ইবনু আবি শায়বাহ- ৭/৪৪৭ হাদিস ৩৭১১৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৪১ হাদিস ২০৭১১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২৩৩৩, ২৩৪৭৬; আল-জামে’, ইমাম মুআম্মার বিন রাশেদ- ১১/৩৪১; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ- ৪/৪২ হাদিস ৭১৬৮; মুসনাদে বাযযার- ৭/৩৬১ হাদিস ২৯৬০] الله اعلم بالصواب
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن في أمتي لنيفا وسبعين داعيا ، كلهم داع إلى النار ، لو أشاء لأنبأتكم بأسمائهم وقبائلهم . رواه أبو يعلى الموصلي فى مسنده: ١٠/٦٥ رقم ٥٧٠١ . قال ابن كثير فى البداية والنهاية , كتاب الفتن والملاحم وأشراط الساعة والأمور العظام يوم القيامة: ١٩/١١٨ وهذا إسناد لا بأس به; قال الهيثمى : رواه أبو يعلى وفيه ليث بن أبي سليم وهو مدلس،وبقية رجاله ثقات:٧/٣٣٢ –‘আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর জনের বেশি আহবানকারী (লিডার/গুরু) হবে। তাদের প্রত্যেকেই (একেকজন পথভ্রষ্ঠ এবং তাদের জীবনকালে তারা নিজ নিজ প্রথভ্রষ্ঠ মত ও পথকে মুক্তির সঠিক পথ বলে প্রচার করবে, ফলে আদপে তারা মানুষকে) দোযখের দিকে আহবান করবে। (তাদের থেকে সাবধান থেকো)। আমি চাইলে তোমাদেরকে তাদের নাম ও তাদের এলাকার খবর বলে দিতে পারি’। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১০/৬৫ হাদিস ৫৭০১; আল-বিদায়াহ ওয়ান্নিহায়াহ, ইবনে কাছির- ১৯/১৮৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৩২]
# হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَيَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي يُحَدِّثُونَكُمْ مَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ . رواه ابن حبان في صحيحه: ١٥/١٦٩ رقم ٦٧٦٦, قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح ; و أحمد في مسنده: ١٤/٢٥٢ رقم ٨٥٩٦ و حسنه شعيب; و إسحاق بن راهويه في مسنده : ١/٣٤٠ رقم ٣٣٢; و ابو يعلى الموصلي في في مسنده: ١١/٢٧٠ رقم ٦٣٨٤ قال حسين سليم أسد: إسناده صحيح ; و الحاكم في المستدرك: ١/١٧٣ – ‘অচিরেই শেষ জামানায় আমার উম্মতের মেধ্য (এমন সব) লোকজন (আবির্ভূত) হবে, যারা তোমাদের কাছে এমনসব কথা বলবে, যা না তোমরা (মুসলমানরা ইতিপূর্বে কখনো) শুনে থাকবে, আর না তোমাদের পূর্বপুরুষরা (কখনো শুনে থাকবে)। তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। (তারা যেন তোমাদেরকে তাদের ফিতনায় ফেলে পথভ্রষ্ঠ করে দিয়ে না বসে)’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১০/১৬৮, হাদিস ৬৭৬৬; সহিহ মুসলীম- ১/১২; মুসনাদে আহমদ- ১৪/২৫২ হাদিস ৮৫৯৬; মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুওয়াই- ১/৩৪০ হাদিস ৩৩২; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১১/২৭০ হাদিস ৬৩৮৪; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/১৭৩; শারহুস সুন্নাহ, বাগাভী- ১/২২৩]
# হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ، وَلَا آبَاؤُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ، لَا يُضِلُّونَكُمْ، وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ . صحيح مسلم: ١/١٢ رقم ٧; صحيح ابن حبان:١٥/١٦٨ رقم ٦٧٦٦ ,قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح ; مسند أحمد: ١٤/٢٥٢ رقم ٨٥٩٦ حسنه شعيب; مسند إسحاق بن راهويه: ١/٣٤٠ رقم ٣٣٢; مسند أبي يعلى الموصلي: ١١/٢٧٠ رقم ٦٣٨٤ قال حسين سليم أسد: إسناده صحيح – ‘শেষ জামানায় (আমার উম্মতের মাঝে এমন সব) দাজ্জালদের ও কাজ্জাবদের (আবির্ভাব) হবে, যারা তোমাদের কাছে এমনসব (নতুন নতুন) কথা নিয়ে আসবে, যা না তোমরা (মুসলমানরা ইতিপূর্বে কখনো) শুনে থাকবে, আর না তোমাদের বাপ-দাদা পূর্বপুরুষরা (কখনো শুনে থাকবে। তোমরা তাদের ওসব ব্যাপারে সতর্ক হয়ে থেকো) তারা (যেন) তোমাদেরকে পথভ্রষ্ঠ করতে না পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলতে না পারে’। [সহিহ মুসলীম- ১/১২ হাদিস ৭; সহিহ ইবনে হিব্বান, ১০/১৬৮, হাদিস ৬৭৬৬; মুসনাদে আহমদ- ১৪/২৫২ হাদিস ৮৫৯৬; মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুওয়াই- ১/৩৪০ হাদিস ৩৩২; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১১/২৭০ হাদিস ৬৩৮৪]
ফায়দা: ‘দাজ্জাল’ বলা হয় মূলতঃ এমন চরম ধোকাবাজ বা প্রকারক’কে, যে তার কথা বা কাজের ভেলকিতে একজন মানুষের সামনে সত্য ও মিথ্যাকে এতটা ঘোলাটে করে দেয় যে, তার জন্য মিথ্যা থেকে সত্যকে আলাদা করাই দায় হয়ে দাঁড়ায়। আর কাজ্জাব বলা হয় মূলতঃ অতি মাত্রার মিথ্যাককে। এরা আসবে এই উম্মতের শেষ জামানায়। আর আমরা ইতিপূর্বে দেখিয়ে এসেছি যে, আমরা শেষ জামানা অতিক্রম করছি।
হাদিসটিতে বলা হয়েছে- يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ– ‘তারা তোমাদের কাছে এমনসব (নতুন নতুন) কথা নিয়ে আসবে, যা না তোমরা (মুসলমানরা ইতিপূর্বে কখনো) শুনে থাকবে, আর না তোমাদের বাপ-দাদা পূর্বপুরুষরা (কখনো শুনে থাকবে’। এখানে মূল শব্দটি হল حديث (হাদিস), যার অর্থ কথা, বাণী, নতুন বিষয় ইত্যাদি। আমি এর অর্থ করেছি ‘(নতুন নতুন) কথা’। এখানে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর পুরো বাক্যটির অনেক অর্থ ও উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমন:-
(ক) এখানে حديث (হাদিস) বলতে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মুখ নিঃসৃত হাদিস (বাণী/কথা)ও উদ্দেশ্য হতে পারে। তখন এর অর্থ হবে, শেষ জামানার ওই দাজ্জাল ও কাজ্জাব লোকগুলি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নামে এমনসব জাল/বানোয়াট হাদিস বর্ণনা/পেশ করবে, যা আমাদের সম্মানীত মুহাদ্দেসগণ থেকে নির্ভরযোগ্য/মকবুল সূত্রে বর্ণিত হয়নি বা তাঁরা কিতাবে লিখে যাননি।
(খ) এখানে حديث (হাদিস) বলতে এমন পথভ্রষ্ঠ ও বাতিল আক্বীদা বিশিষ্ট বাণী/কথাও উদ্দেশ্য হতে পারে, যা শেষ জামানার উম্মাহকে পথভ্রষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে ওই দাজ্জাল ও কাজ্জাব লোকগুলি বিভিন্ন কায়দায় পেশ করবে। যেমন: বাংলাদেশের দেওয়ানবাগী নামক শয়তানটি যেসকল মিথ্যা ও বাতিল আক্বীদাগুলো পেশ করে থাকে। কিংবা যেমন ভারতের গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজকে কখনো ‘নবী’, কখনো ‘মাহদী’, আবার কখনো ‘ঈসা মাসিহ’ ইত্যাদি দাবী করার জন্য তার কিতাবাদিতে বিভিন্ন ধোকা, প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয়ে কুরআন-সুন্নাহ’র অপব্যাখ্যা করেছে। সে কুরআন-সুন্নাহ’র এমন সব অপ-তথ্য ও অপ-ব্যাখ্যা দিয়েছে, যার নজির গোটা ১৪৫০ বছরের ইসলামী ইতিহাসে নেই। এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- لا تقوم الساعة حتى يبعث دجالون كذابون قريبا من ثلاثين كلهم يزعم أنه رسول الله – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না যাবৎ না প্রায় ত্রিশ জনের মতো দাজ্জাল কাজ্জাব আবির্ভূত হয়। তাদের প্রত্যেকেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহ’র রাসুল’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৬০৯]
(গ) এখানে حديث (হাদিস) বলতে এমন পথভ্রষ্ঠ কথা/মতবাদও উদ্দেশ্য হতে পারে, যা শেষ জামানার কিছু পথভ্রষ্ঠ লোক/লিডার উম্মাহ’র সামনে পেশ করবে, যেসব কথা/মতবাদ শেষ জামানার মুসলমানদের কাছেই প্রথম পেশ করা হয়েছে। যেমন: সেকুলারিজস (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র), সোসালিজম (সমাজতন্ত্র), কমিউনিজম, ফেমিনিজম (নারীত্ববাদ), ফ্রিডম অব স্পিস (বাক স্বাধিনতা) ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর যুগ থেকে নিয়ে গত ১৯২০ সালে ‘উসমানী খিলাফত’ ধ্বংসের আগ পর্যন্ত বিগত ১৪৫০ বেছরের ইসলামী ইতিহাসে মুসলমানগণ কখনো এসব পথভ্রষ্ঠ মতবাদ-মতাদর্শ গুলোকে গ্রহন করার কথা শোনেনি। ১৯২০ সালে ‘উসমানী খিলাফত’ ধ্বংসের পর মুসলীম নামধারী কিছু পথভ্রষ্ঠ লিডার শ্রেণির লোক ইহূদী-খৃষ্টানদের থেকে আমদানীকৃত এসব মতবাদকে উম্মাহ’র মাঝে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়। এসব পথভ্রষ্ঠ লিডার শ্রেণির লোকদের মধ্যে যাদের নাম না নিলেই না, তারা হল: তরষ্কের মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক, মিশরের আনোয়ার সাদাত, জামাল আব্দেল নাসের, হোসনি মুবারক, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ার মুআম্মার গাদ্দাফী, পাক-ভারত উপ-মহাদেরশের এ.কে ফজলুল হক্ব, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি, জুলফিকার আলী ভুট্টো, শেখ মুজিবুর রহমান, ইরানের শাহ মুহাম্মাদ রেজা পাহলভি প্রমুখ। হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن في أمتي لنيفا وسبعين داعيا ، كلهم داع إلى النار ، لو أشاء لأنبأتكم بأسمائهم وقبائلهم . رواه أبو يعلى الموصلي فى مسنده: ١٠/٦٥ رقم ٥٧٠١ . قال ابن كثير فى البداية والنهاية , كتاب الفتن والملاحم وأشراط الساعة والأمور العظام يوم القيامة: ١٩/١١٨ وهذا إسناد لا بأس به; قال الهيثمى : رواه أبو يعلى وفيه ليث بن أبي سليم وهو مدلس،وبقية رجاله ثقات:٧/٣٣٢ -‘আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে একথা বলতে শুনেছি যে: আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর জনের বেশি আহবানকারী (লিডার/কর্ণধার) হবে। তাদের প্রত্যেকেই (একেকজন পথভ্রষ্ঠ এবং তাদের জীবনকালে তারা নিজ নিজ প্রথভ্রষ্ঠ মত ও পথকে মুক্তির সঠিক পথ বলে প্রচার করবে, ফলে আদপে তারা মানুষকে) দোযখের দিকে আহবান করবে। (তাদের থেকে সাবধান থেকো)। আমি চাইলে তোমাদেরকে তাদের নাম ও তাদের এলাকার খবর বলে দিতে পারি’। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১০/৬৫ হাদিস ৫৭০১; আল-বিদায়াহ ওয়ান্নিহায়াহ, ইবনে কাছির- ১৯/১৮৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৩২]
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ، لَا يُضِلُّونَكُمْ، وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ – ‘(তোমরা তাদের ওসব ব্যাপারে সতর্ক হয়ে থেকো) তারা (যেন) তোমাদেরকে পথভ্রষ্ঠ করতে না পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলতে না পারে’। এ থেকে বোঝা যায়, শেষ জামানার ওই লোকগুলির পথভ্রষ্ঠতার ফিতনা গুলো হবে মারাত্মক, যা থেকে সতর্ক না থাকলে উম্মাহ’র পথভ্রষ্ঠ হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর ‘ফিতনা’ মূলতঃ এমন আক্বীদাহ-বিশ্বাস বা চিন্তা-চেতনার নাম, যা মানুষকে বিবেক- বুদ্ধি জনিত ধোকার এমন ধুম্রজালে ফেলে দেয় যে, সে হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়ে হিমশিম খেয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় এবং একসময় তার দ্বীন ও ইমানই ছিন্তাই হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এরকম ফিতনা ছড়ানোর বিভিন্ন যোগ্যতাগুণধারী ব্যাক্তিকেও দাজ্জাল (চরম প্রতারক)ও বলা হয়ে থাকে। আর এই দাজ্জালরা যেহেতু প্ররচনা ও প্রতারনার মাধ্যমে দ্বীনে-হক্ব (সত্য দ্বীন) থেকে মিথ্যার দিকে আহবান করে, তাই তাদেরকে কাজ্জাব (চরম মিথ্যুক)ও বলা হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফিতনাবাজ হবে ‘কানা-দাজ্জাল’ যে শেষ জামানায় বেড় হবে, এরপর নিজকে নবী ও রব (প্রতিপালক) দাবী করে বহু মানুষের ইমান নষ্ট করে দিবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-بين يدي الساعة الدجال، وبين يدي الدجال كذابون ثلاثون أو أكثر . قلنا: ما آيتهم؟ قال: أن يأتوكم بسنة لم تكونوا عليها يغيرون بها سنتكم ودينكم، فإذا رأيتموهم؛ فاجتنبوهم وعادوهم . رواه الطبراني كما في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة : ٣/٣٢ ; و اخرجه احمد ايضا في المسند مختصرا باسند حسن : ٥/١٨٧ رقم ٥٦٩٤ ; و اورده ابن كثير في البداية والنهاية : ١٩/١١٧ تحقيق: دكتور عبد الله التركي , و السيوطي في جامع الأحاديث : ٣/٨٨ رقم ٧٤٥٨ – ‘কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল (আবির্ভূত) হবে, আর দাজ্জালের পূর্বে ত্রিশজন বা তারও বেশি মিথ্যুক হবে’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘তাদের চিহ্ন কি হবে’? তিনি বললেন: ‘তারা এমন সুন্নাহ (আদর্শ ও নীতি) নিয়ে তোমাদের কাছে আসবে, যার উপরে তোমরা (মুসলমানরা তার আগে খায়রুল কুরুনের কোনো জামানাতেও তা দ্বীন-ইসলামের অংশ ছিল মর্মে পরিচিত) থাকবে না এবং তারা (তাদের) ওসব সুন্নাহ (আদর্শ ও নীতি) দিয়ে তোমাদের (মুসলমানদের) সুন্নাহ (ও আদর্শ)কে এবং তোমাদের দ্বীন (ইসলামকে) পরিবর্তন করে ফেলবে। সুতরাং, তোমরা যদি তাদেরকে দেখতে পাও, তাহলে তাদের থেকে তোমরা বেঁচে থাকবে এবং (যথাসাধ্য শরীয়তের সীমা রক্ষা করে) তাদের বিরোধীতা করবে’। [ত্বাবরাণী: ইতহাফুল জামাআহ – ৩/৩২; মুসনাদে আহমদ- ৫/১৮৭ হাদিস ৫৬৯৪; আল-বিদায়াহ, ইবনে কাসির- ১৯/১১৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ- ৭/৩৩৩; জামেউল আহাদিস, ইমাম সুয়ূতী- ৩/৮৮ হাদিস ৭৪৫৮] الله اعلم بالصواب
# হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর থেকে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- إن أهل الكتابين افترقوا في دينهم على ثنتين وسبعين ملة وإن هذه الأمة ستفترق على ثلاث وسبعين ملة يعني الأهواء كلها في النار إلا واحدة وهي الجماعة وأنه سيخرج من أمتي أقوام تجاري بهم تلك الأهواء كما يتجارى الكلب بصاحبه لا يبقى منه عرق ولا مفصل إلا دخله والله يا معشر العرب لئن لم تقوموا بما جاء به نبيكم صلى الله عليه وسلم لغيركم من الناس أحرى أن لا يقوم به – أخرجه أحمد في المسند: ١٣/٢٠٥ قم ١٦٨٧٦, اسناده حسن ، و رواه أبو داود: ٤٥٩٧ والدارمي ٢٥٦٠, والحاكم في “مستدركه ١/١٢٨, ابن أبي عاصم في “السنة: رقم ١٥; المعجم الكبير للطبراني:١٩/٣٧٧ رقم ٨٨٥ – ‘নিশ্চই আহলে কিতাবদ্বয় (ইহূদী ও খৃষ্টানরা) তাদের দ্বীনের মধ্যে (মনচাহি মতাদর্শ ও মতবাদ যুক্ত করে) বাহাত্তরটি পৃথক পৃথক মিল্লাত (sects) বানিয়ে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আর অবশ্যই (আমার) এই উম্মত শিঘ্রই তিহাত্তর মিল্লাতে বিভক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ (তারা সবাই হবে) প্রবৃত্তির দাস (এবং) তাদের সবাই দোযখে যাবে শুধুমাত্র একটি (মিল্লাত) ছাড়া, আর সেটা হল আল-জামাআত (তারা হবে জান্নাতী)। আর নিশ্চই আমার উম্মাতের মধ্য থেকে এমন এমন জাতি/গোষ্ঠিসমূহের আবির্ভাব হবে, যারাদেরকে কুপ্রবৃত্তি এমনভাবে প্রভাবিত/আচ্ছন্ন করে ফেলবে যেভাবে কুকুর (তার কামড়ের দ্বারা) কাউকে (জলাতঙ্ক রোগে) আক্রান্ত করে ফেলে, (যে রোগ ওই আক্রান্ত ব্যাক্তির) রগ-রেশা ও (হাড়ের) জোরা -কোনো কিছুকেই আক্রান্ত না করে ছাড়ে না। [মুসনাদে আহমাদ– ১৩/২০৫, হাদিস ১৬৮৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৫৯৭; সুনানে দারেমী, হাদিস ২৫৬০; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/১২৮, হাদিস ৪০৬; আস-সুন্নাহ, ইবনু আবি আসেম, হাদিস ১৫; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরানী- ১৯/৩৭৭, হাদিস ৮৮৪]
ফায়দা: এই জাহান্নামী ৭২ ফিরকাহ মূলত: জামানার বিভিন্ন পথভ্রষ্ট আক্বীদা-বিশ্বাস ও মত-পথের উপরে স্থাপিত ফিতনা’র ফসল, যে ফিরকাহ গুলোর রং পাকবে শেষ জামানায় ইমাম মাহদী রা. আগমনের আগে আগে পচন ধরা যুগে, যে যুগের কথা নিচের হাদিসে রয়েছে। আমরা ইতিপূর্বে বহু স্থানে দেখিয়ে এসেছি যে, আমরা বহু আগেই শেষ জামানার ভিতরে প্রবেশ করেছি। الله اعلم بالصواب
# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- كَيْفَ بِكُمْ وَبِزَمَانٍ أَوْ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ زَمَانٌ يُغَرْبَلُ النَّاسُ فِيهِ غَرْبَلَةً ، تَبْقَى حُثَالَةٌ مِنَ النَّاسِ ، قَدْ مَرِجَتْ عُهُودُهُمْ ، وَأَمَانَاتُهُمْ ، وَاخْتَلَفُوا ، فَكَانُوا هَكَذَا وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ ، فَقَالُوا : وَكَيْفَ بِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ : تَأْخُذُونَ مَا تَعْرِفُونَ ، وَتَذَرُونَ مَا تُنْكِرُونَ ، وَتُقْبِلُونَ عَلَى أَمْرِ خَاصَّتِكُمْ ، وَتَذَرُونَ أَمْرَ عَامَّتِكُمْ . رواه أبو داود في سننه , كتاب الملاحم : ٢/٤٣٧ رقم ٤٣٤٢ ، و ابن ماجه في سننه : ٣٩٥٧ ، و أحمد في المسند : ٢/٢٢١ ، و الحاكم في المستدرك على الصحيحين : ٤/٤٣٥، صححه الألباني في صحيح سنن أبي داود – ‘ তখন তোমাদের বা (বলেছেন তোমাদের) জামানার কি অবস্থা হবে অথবা (বলেছেন) অতি শিঘ্রই এমন জামানা আসছে, যখন মানুষজনকে (আটার ময়লা পরিষ্কারের) চালুনির চালানি দেয়া হবে। (ভাল মানুষগুলো একে একে দুনিয়া থেকে ঝরে যাবে। আর) অবশিষ্ট থেকে যাবে (আবর্জনায়) পরিত্যাক্ত (এমন সব পঁচন ধরা বিকৃত ও নিকৃষ্ট বদ স্বভাবের) মানুষজন, যাদের প্রতিশ্রুতি ও আমানতগুলো খলৎমলৎ হয়ে যাবে এবং তারা দ্বন্দ্ব ও বিরোধ বাঁধাবে। তখন তারা এরকম হয়ে যাবে–(একথা বলে তিঁনি) তাঁর আঙ্গুলগুলোকে একটার মাঝে অরেকটা ঢুকিয়ে দিলেন। তখন লোকেজন জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ, তখন আমরা (মুসলমানরা) কি করবো? তিনি বললেন: (সে সময় -আমার আনীত দ্বীনের) যা কিছু তোমরা (নির্ভরযোগ্য ভাবে) চিনে নিতে পারো তা গ্রহন করবে এবং (শরীয়ত ও বিবেকগত ভাবে) যা কিছু নিন্দনীয় দেখো তা পরিত্যাগ করবে, আর (সংশোধনের আশা আছে- এরকম) তোমাদের বিশেষ লোকজনের ব্যাপারগুলো গ্রহন করবে (ও সে ব্যাপারে শরীয়তের হক্ব আদায় করবে) এবং তোমাদের আম-জনতার বিষয়গুলোকে ছেড়ে দিবে, (কারণ তাদের ফিতনার সাগরে গেলে তোমাদের ইমান-আমলও তাদের ঢেউ-এর তোড় তোমাদেরকে তাদের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে)। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৩৪২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ- ২/২২১; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৩৫]
# আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَا أَبَا ذَرٍّ ، كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كُنْتَ فِي حُثَالَةٍ ؟ ، وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، فَمَا تَأْمُرُنِي ؟ قَالَ : اصْبِرْ ، اصْبِرْ ، اصْبِرْ ، خَالِقُوا النَّاسَ بِأَخْلَاقِهِمْ ، وَخَالِفُوهُمْ فِي أَعْمَالِهِمْ . اخرجه حاكم في المستدرك على الصحيحين : ٣/٣٨٦ و قال هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ . و البيهقي في الزهد الكبير: رقم ٢٠٣ ; و الطبراني في المعجم الأوسط , بَابُ الْأَلِفِ , مَنِ اسْمُهُ أَحْمَدُ : ٤٧٠ – ‘হে আবু যার! তখন তোমার কেমন অবস্থা হবে যখন তুমি (আবর্জনায় ফেলে রাখা) পরিত্যাক্ত (জিনিসের মতো নিকৃষ্ট স্বভাবের মানুষজন)-এর মধ্যে থাকবে ! আমি জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে ক্ষেত্রে আপনি আমাকে কি (করার) নির্দেশ দেন’? তিনি বললেন: (তুমি তখন তোমার সাধ্য মতো আল্লাহ দ্বীনের উপরে কায়েম থাকার চেষ্টা করে যাবে এবং তা করতে গিয়ে তোমার উপরে যে মুসিবত আসবে তার উপরে তুমি আল্লাহ’র ওয়াস্তে) ‘সবর করবে! সবর করবে! সবর করবে’! তুমি (তখনকার) মানুষজনের (মন্দ) স্বভাবগুলির (বিপরীতে তাদের) সাথে (আমার প্রদর্শিত ভাল আখলাক ও) স্বভাব প্রদর্শন করে যাবে, (কোনো অবস্থায়ই সীমা লঙ্ঘন করবে না)। তবে তুমি (তোমার অন্তর, মুখ ও শক্তি দিয়ে শরয়ী তরিকায় সাধ্য মতো) তাদের (মন্দ) কাজ-কারবারের বিরুদ্ধে থাকবে, (অন্যথায় তুমিও তাদের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে গণ্য হবে)’। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/৩৮৬; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৪৭০; আয-যুহদ আল-কাবীর, বাইহাকী-২০৩]
# সাহল বিন সা’দ -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- اللَّهُمَّ لَا يُدْرِكْنِي زَمَانٌ ، أَوْ لَا تُدْرِكُوا زَمَانًا لَا يُتْبَعُ فِيهِ الْعَلِيمُ ، وَلَا يُسْتَحَى فِيهِ مِنَ الْحَلِيمِ ، قُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الْأَعَاجِمِ ، وَأَلْسِنَتُهُمْ أَلْسِنَةُ الْعَرَبِ . رواه أحمد في مسنده : ٥/٣٤١ اسناده منقطع ، قال المنذري في الترغيب والترهيب: ١/٦٥ رقم ١٧٣ رواه أحمد و في إسناده ابن لهيعة وهو ضعيف – “হে আল্লাহ! ওই জামানার সাক্ষাত যেন আমি না পাই, অথবা (বলেছেন) তোমরা যেন ওই জামানার সাক্ষাত না পাও, যে জামানায় (কোনো কোনো গোষ্ঠি এত স্বেচ্ছাচারী হয়ে যাবে যে,) আলেম-এর অনুসরন করা হবে না, যে সময়ে হালিম (ধৈর্যশীল ব্যাক্তি) থেকে লজ্জা করা হবে না। তাদের অন্তরগুলো হবে আ’জামদের (অনারবদের) অন্তর (যেমন হয়), আর তাদের ভাষাগুলো হবে আরবের ভাষা (যেমন হয়)”। [মুসনাদে আহমদ- ৫/৩৪১; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমা দানী- ১/৫২৭ হাদিস ২২১; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫১০ আবু হুরায়রাহ’র সূত্রে; তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৬৫; ফাইজুল কাদির, মুনাভী- ২/১৮৫ হাদিস ১৫৪৩]
# হযরত অাবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا طَغَى نِسَاؤُكُمْ ، وَفَسَقَ شَبَابُكُمْ ، وَتَرَكْتُمْ جِهَادَكُمْ ؟ قَالُوا : وَإِنَّ ذَلِكَ لَكَائِنٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ ، قَالَ : نَعَمْ ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، وَأَشَدُّ مِنْهُ سَيَكُونُ ، قَالُوا : وَمَا أَشَدُّ مِنْهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ ، قَالَ : ” كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا لَمْ تَأْمُرُوا بِالْمَعْرُوفِ ، وَلَمْ تَنْهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ ؟ ” ، قَالُوا : وَكَائِنٌ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ ، قَالَ : ” نَعَمْ ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ وَأَشَدُّ مِنْهُ سَيَكُونُ ” ، قَالُوا : وَمَا أَشَدُّ مِنْهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ ، قَالَ : ” كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا رَأَيْتُمُ الْمَعْرُوفَ مُنْكَرًا ، وَرَأَيْتُمُ الْمُنْكَرَ مَعْرُوفًا ؟ ” ، قَالُوا : وَكَائِنٌ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ : ” نَعَمْ ، وَأَشَدُّ مِنْهُ سَيَكُونُ ، يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى : بِي حَلَفْت ، لأُتِيحَنَّ لَهُمْ فِتْنَةً , يَصِيرُ الْحَلِيمُ فِيهِمْ حَيْرَانًا . أخرجه ابن أبي الدنيا في موسوعة رسائل: ٥/٥٨٨ رقم ٨٥ و في الأمر بالمعروف و النهي عن المنكر , رقم الحديث : ٣٢ . الحافظ العراقي قال عنه إنه ضعيف الإسناد كما جاء في تخريجه لأحاديث الإحياء برقم ٢/٣٨٠ ; و اخرجه ايضا أبو يعلى مختصرا في مسنده: ١١/٣٠٤ رقم ٦٤٢٠ ; و الطبراني في المعجم الأوسط : ٩/١٢٩ رقم ٩٣٢٥ ; و ابن أبي حاتم في العلل : ٢/٤١٧ ; و أورده الهيثمي في مجمع الزوائد : ٧/٢٨٠ ; و الالباني في سلسلة الأحاديث الضعيفة والموضوعة وأثرها السيئ في الأمة : ١١/٣٤٣ – ‘তখন তোমাদের কেমন অবস্থা হবে, যখন নারীরা ত্বাগুতীপনা (আল্লাদ্রোহিতা) করবে এবং কিশর’রা ফাসেকী (পাপ ও অপরাধমূলক) কাজ করবে, আর তোমরা তোমাদের জিহাদকে পরিত্যাগ করে বসবে! (উপস্থিত) সাহাবাগণ বললেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ, এমন ঘটনাও ঘটবে?! রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যা, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, বরং অতিশিঘ্রই এর থেকেও কঠিক অবস্থা হবে। তারা জিজ্ঞেস করলেন: এর থেকেও কঠিন কি হবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ ? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: তখন তোমাদের কেমন অবস্থা হবে, যখন তোমরা আমর বিল মা’রুফ (নেকির কাজের নির্দেশ) এবং নাহি আনিল মুনকার (বদ কাজের নিষেধ করার দায়িত্ব) পালন করবে না ! তারা বললেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ, এমন ঘটনাও ঘটবে?! রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যা, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, বরং অতিশিঘ্রই এর থেকেও কঠিন অবস্থা হবে। তারা জিজ্ঞেস করলেন: এর থেকেও কঠিন কি হবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ ? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে, যখন তোমরা সৎকাজকেই অসৎকাজর দৃষ্টিতে দেখবে এবং অসৎকাজকে সৎকাজের দৃষ্টিতে দেখবে! তারা বললেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ, এমন ঘটনাও ঘটবে?! রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যা, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, বরং অতি শিঘ্রই এর থেকেও কঠিন অবস্থা হবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন- আমি শপথ করে বলছি, তাদেরকে এমন পরীক্ষায় ফেলে দিবো যে, সেসময়কার ধৈর্যশীল মানুষও দিশেহারা হয়ে যাবে। [মাউসুআত, ইবনে আবিদ্দুনিয়া- ৫/৫৮৮ হাদিস ৮৫; আমর বিল মা’রুফ ওয়ান নাহি আনিল মুনকার, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ৩৩; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১১/৩০৪ হাদিস ৬৪২০; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৯/১২৯ হাদিস ৯৩২৫; আল-ইলাল, ইবনু আবি হাতিম- ২/৩১৭; মুসনাদে ফিরদাউস, দাইলামী- ৩/২৯৫ হাদিস ৪৮৮৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৮০]
# হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- وَاللَّهِ مَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَصْحَابِي أَمْ تَنَاسَوْا وَاللَّهِ مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قَائِدِ فِتْنَةٍ إِلَى أَنْ تَنْقَضِيَ الدُّنْيَا يَبْلُغُ مَنْ مَعَهُ ثَلَاثَ مِائَةٍ فَصَاعِدًا إِلَّا قَدْ سَمَّاهُ لَنَا بِاسْمِهِ وَاسْمِ أَبِيهِ وَاسْمِ قَبِيلَتِهِ . رواه أبو داود في سننه, كتاب الفتن والملاحم: رقم ٤٢٤٣, اسناده ضعيف كما في المشكاة لالالبانى: رقم ٥٣٩٣ – ‘আল্লাহ’র কসম, আমি জানি না আমার সাথিগণ ভুলে গেছেন নাকি (জামানার নাজুকতার কারণে) ভুলে যাওয়ার ভান করে আছেন। আল্লাহ’র কসম, রাসুলুল্লাহ ﷺ (আমাদেরকে) একজন ফিতনা-প্রতিষ্ঠাতা -যার সাথে থাকবে তিন’শ জনের কিছু বেশি লোক – (তার কথা থেকে নিয়ে) কেয়ামত ধ্বংস হয়ে যাওয়া পর্যন্ত (উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু বলা) বাদ রাখেন নি। শুধু তাই নয়, তিনি আমাদের কাছে তার নাম, তার পিতার নাম এবং তার এলাকার নামও বলে গেছেন’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৪৩]
# ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে হুযাইফা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: حدثنا عبد الخالق بن يزيد الدمشقي عن أبيه عن مكحول عن حذيفة بن اليمان رضى الله عنه قال: ما من صاحب فتنة يبلغون ثلثمائة إنسان إلا ولو شئت أن أسميه باسمه واسم أبيه ومسكنه إلى يوم القيامة كل ذلك مما علمنيه رسول الله صلى الله عليه و سلم .قالوا بأعيانها قال أو أشباهها يعرفها الفقهاء أو قال العلماء إنكم كنتم تسألون رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الخير وأسأله عن الشر وتسألونه عما كان وأسأله عما يكون . اخرجه نعيم بن حماد المروزي فى الفتن: رقم ١٨, قال مجدى بن منصور بن سيد الشوري: ص١٥ رقم ١٦: و عبد الخالق بن زيد الدمشقى: لين الحديث. قال البخارى: منكر الحديث. و قال النسائى: ليس بثقة – ‘সাহেবুল-ফিতান (ফিতনার ধারক-বাহক) -কেয়ামত পর্যন্ত যাদের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে তিন’শ জনে -তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, আমি চাইলে যাদের প্রত্যেকের নাম, তার পিতার নাম এবং তার এলাকার নাম বলে দিতে না পারি’। এর সবই রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে জানিয়েছেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: (তাদের পরিচয়গুলি কি) একদম স্পষ্ট (যে, যে কেউ তাদেরকে চিনে নিতে পারবে)? তিনি বললেন: (না,) বরং (তাদের পরিচয়গুলো এমন ভাবে জানানো হয়েছে, যা) সাদৃশ্যপূর্ণ; ফকিহগণ (তথা দ্বীনের গভীর জ্ঞানীগণ) অথবা বলেছেন, আলেমগণ তাদেরকে চিনে নিতে পারবেন। তোমরা এমন ছিলে যে, তোমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করেতে কল্যান সম্পর্কে, আর অামি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম মন্দ সম্পর্কে। তোমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেতে বর্তমান সম্পর্কে, আর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম -সামনে কি হবে -সে সম্পর্কে। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১৮; কানজুল উম্মাল, মুত্তাকী- ১১/২১৮ হাদিস ৩১২৯৩]
# ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে হুযাইফা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করতে শুনেছি- حدثنا عبد القدوس عن عفير بن معدان قال : حدثنا قتادة قال: قال حذيفة: سمعت رسول اللّه صلّى اللّه عليه و سلّم يقول: ليخرجن من أمتى ثلاث مائة رجل معهم ثلاث مائة راية يعرفون و تعرف قبائلهم يبتغون وجه اللّه يقتلون على الضلالة . رواه نعيم بن حماد في الفتن: رقم ٢٠ , قال مجدى بن منصور بن سيد الشوري: ص١٥ رقم ١٧: إسناده منقطع أورده الهندى فى الكنز٣١١٥٤ و نسبه لنعيم فى الفتن. فيه: قتادة لم يسمع من حذيفة رضى اللّه عنه ; و اورده المتقي في كنز العمال”:١١/٢٧٥ رقم ٣١١٥٤ و قال وفيه عبد القدوس متروك – ‘ অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন তিন’শ জন ব্যাক্তির আবির্ভাব হবে, যাদের (সবার) সাথে (একটি করে মোট) তিন’শটি পতাকা থাকবে। তারা হবে (সমাজে) পরিচিতমুখ। তাদের এলাকাগুলো চেনাজানা হবে। তারা (তাদের কাজ দিয়ে) আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অন্বেসন করবে, (কিন্তু বাস্তবে) তারা পথভ্রষ্ঠতার উপর নিহত হবে।’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ– ২০; কানজুল উম্মাল- ১১/২৭৫ হাদিস ৩১১৫৪]
ফায়দা: এই রেওয়ায়েত থেকে অনুমিত হয়, এরা মুসলীম উম্মাহ’র মধ্যে তিন’শ জন ব্যাক্তি, যারা তাদের নিজ নিজ জামানায় গোটা উম্মাহকে নিয়ে এক পতাকার নিচে না থেকে উম্মাহকে ভিন্ন ভিন্ন পতাকা তলে বিভক্ত করে নিবে। এদের এসব কাজের পিছনে নিয়ত থাকবে আবার আল্লাহকে খুশি করা! কিন্তু তারা সবাই কারো না কারো হাতে নিহত হবে এবং তাদের মৃত্যু হবে পথভ্রষ্ঠতার উপর। الله اعلم بالصواب
# হারেছ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- مَرَرْتُ فِي الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ يَخُوضُونَ فِي الأَحَادِيثِ فَدَخَلْتُ عَلَى عَلِيٍّ فَقُلْتُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَلاَ تَرَى أَنَّ النَّاسَ قَدْ خَاضُوا فِي الأَحَادِيثِ . قَالَ وَقَدْ فَعَلُوهَا قُلْتُ نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنِّي قَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ أَلاَ إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتْنَةٌ . فَقُلْتُ مَا الْمَخْرَجُ مِنْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ نَبَأُ مَا كَانَ قَبْلَكُمْ وَخَبَرُ مَا بَعْدَكُمْ وَحُكْمُ مَا بَيْنَكُمْ هُوَ الْفَصْلُ لَيْسَ بِالْهَزْلِ مَنْ تَرَكَهُ مِنْ جَبَّارٍ قَصَمَهُ اللَّهُ وَمَنِ ابْتَغَى الْهُدَى فِي غَيْرِهِ أَضَلَّهُ اللَّهُ وَهُوَ حَبْلُ اللَّهِ الْمَتِينُ وَهُوَ الذِّكْرُ الْحَكِيمُ وَهُوَ الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ هُوَ الَّذِي لاَ تَزِيغُ بِهِ الأَهْوَاءُ وَلاَ تَلْتَبِسُ بِهِ الأَلْسِنَةُ وَلاَ يَشْبَعُ مِنْهُ الْعُلَمَاءُ وَلاَ يَخْلَقُ عَلَى كَثْرَةِ الرَّدِّ وَلاَ تَنْقَضِي عَجَائِبُهُ هُوَ الَّذِي لَمْ تَنْتَهِ الْجِنُّ إِذْ سَمِعَتْهُ حَتَّى قَالُوا (إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا * يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ ) مَنْ قَالَ بِهِ صَدَقَ وَمَنْ عَمِلَ بِهِ أُجِرَ وَمَنْ حَكَمَ بِهِ عَدَلَ وَمَنْ دَعَا إِلَيْهِ هُدِيَ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ” . خُذْهَا إِلَيْكَ يَا أَعْوَرُ . رواه الترمذي في سننه , كتاب فضائل القرآن عن رسول الله صلى الله عليه وسلم , بَابُ مَا جَاءَ فِي فَضْلِ القُرْآنِ : رقم ٢٩٠٦، والدارمي في سننه : ٢/٤٣٥، و البغوي في شرح السنة : ٣/٤٣٧ رقم ١١٨١; ضعفه الألباني في سلسلة الأحاديث الضعيفة والموضوعة : ١٣/٨٨٣ رقم ٦٣٩٣ ، و أخرجه من طريق أخرى الطبراني في الكبير و في مسند الشاميين برقم ٢٢٠٦ و أبو نعيم في الحلية : ٥/٢٥٣ من طريق أبي إدريس الخولاني عن معاذ بن جبل، وفيه عمرو بن واقد وهو متروك – “আমি (একবার) মসজিদে (এমন সময়) গেলাম, যখন (দেখি) লোকজন কথাবার্তায় লিপ্ত আছে। ফলে আমি (খলিফা) আলী’র কাছে গেলাম। তারপর বললাম: ‘হে আমিরুল মু’মিনীন! আমি কি দেখছেন না যে, লোকজন (মসজিদে বসে) কথাবার্তায় লিপ্ত’! তিনি বললেন: ‘তারা (মসজিদে বসে) অমন কাজ করছে’! আমি বললাম: ‘জি’। তিনি বললেন: ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে একথা বলতে শুনেছি: ‘শুনে রাখো। নিশ্চই অচিরেই ফিতনাহ হবে’। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, তা থেকে বেরোনোর পথ কী’? তিনি বললেন: ‘আল্লাহ’র কিতাব। তাতে আছে তোমাদের পূর্বে যা ঘটেছিল তার (বহু) ঘটনা, তোমাদের পরে যা ঘটবে তার (বহু) সংবাদ এবং তোমাদের মাঝে (সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যাবলির) বিধান। এটি (হক্ব ও বাতীলের মাঝে) পার্থক্য (সৃষ্টিকারী একটি কিতাব) -(এটি কোনো) খেলা-খেলা’র (বিষয় নয় মোটেও)। যে ব্যাক্তি অহংকার/উদ্ধত্য বশে একে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাকে ভেঙ্গে ফেলবেন। যে ব্যাক্তি একে বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে হেদায়েত (সঠিক পথ) খুঁজবে, আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ঠ করে দিবেন। এটি হল আল্লাহ’র সুদৃঢ় রজ্জু। এটি হল মহা-প্রাজ্ঞচিত উপদেশবাণী/স্বারকবাণী। এটি হল সিরাতে মুসতাকীম (সরল সঠিক পথ)। এটি (হল এমন কিতাব) যার (অনুসরণ) দ্বারা প্রবৃত্তি বাঁকা/বিপথগামী হয় না। এর দ্বারা জবান সমূহ আড়ষ্ট হয় না। আলেমগণ এর থেকে (কখনই) পরিতৃপ্ত হয় না, (কারণ তাঁরা একে নিয়ে যতই গবেষনা করতে থাকে, ততই ইলমের মহা রত্নের অতল গভীরে প্রবেশ করতে থাকে)। বারংবার অত্যধিক পঠনে এটি পুরানো হয় না। এর বিষ্ময়কারিত্ব ক্ষয় হয় না। এটা (এমন এক বিষ্ময়কর গ্রন্থ) যা -যখন জ্বীনরা তা শুনেছিল, তখন অবলিলায় তারা বলে ফেলেছিল إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا * يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ – ‘নিশ্চই আমরা এক বিষ্ময়কর কুরআন শুনলাম, (যা) সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেয়’। যে ব্যাক্তি এ(ই কিতাব) অনুযায়ী কথা বলে, সে সত্য বলে। যে এর উপরে আমল করে, সে পুরষ্কার পায়। যে এর দ্বারা বিচার-ফয়সালা করে, সে ইনসাফ করে। আর যে ব্যাক্তি এর দিকে ডাকে, সে সিরাতে মুসতাক্বিমের দিকে পথনির্দেশ করে। হে আওয়ার, তুমি একে নিজের দিকে আঁকড়ে ধরো”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৯০৬; সুনানে দারেমী- ২/৪৩৫; শারহুস সুন্নাহ, বাগাভী- ৩/৪৩৭ হাদিস ১১৮১; মুসনাদে শামেয়ীন, তাবরাণী, হাদিস ২২০৬; হিলইয়া, আবু নুআইম- ৫/২৫৩]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- تَكُونُ فِتْنَةٌ يَقْتَتِلُونَ عَلَيْهَا عَلَى دَعْوَى جَاهِلِيَّةٍ ، قَتْلَاهَا فِي النَّارِ . رواه الحاكم في المستدرك على الصحيحين , كِتَابُ الْفِتَنِ وَالْمَلَاحِمِ : ٤/٤٦٥ و قال: هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه و وافقه الذهبي في تلخيصه، اورده المتقي في كنز العمال : ١١/١٧٩ رقم ٣١١٢٤ – “(ওই দিন বেশি দূরে নয়, যখন মানুষের উপরে এমন অন্ধকারময় এক) ফিতনা (আবির্ভূত) হবে যে, উক্ত ফিতনায় জাহেলিয়্যাতের (মুর্খতার) আহবানের উপরে (ভিত্তি করে আমার উম্মাতের এক গোষ্ঠি আরেক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে) যুদ্ধ করবে। ওই (যুদ্ধের) উভয় (পার্শ্বের) খুনীই দোযখে যাবে”। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৬৫; কানজুল উম্মাল- ১১/১৭৯ হাদিস ৩১১২৪]
# আম্মার বিন ইয়াছির রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَيَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ يَقْتَتِلُونَ عَلَى الْمُلْكِ يَقْتُلُ بَعْضُهُمْ عَلَيْهِ بَعْضًا . رواه ابن أبي شيبة في مسنده : ١/٢٩١ رقم ٤٣٨ اسناده حسن و في المسنف : ١٥/٤٥ ، و أبو يعلى في مسنده : ٣/٢١٢ رقم ١٦٥٠، و أحمد في مسنده : ٤/٢٦٣ ، قال الهيثمي : ٧/٣٩٢ : رواه أحمد والطبراني وأبو يعلى ، ورجاله رجال الصحيح غير ثروان و هو ثقة – “আমার পর অতি শিঘ্রই এমনসব শাসকদের (আভির্ভাব) হবে, যারা (দ্বীন ইসলামের মাথা উঁচু করার জন্য নয়, বরং নিছক) দেশের জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহ বাঁধাবে; এর জন্যই তারা একে অপরকে হত্যা করবে”। [আল-মুসনাদ, ইবনু আবি শাইবা- ১/২৯১ হাদিস ৪৩৮; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শাইবা- ১৫/৪৫; মুসনাদে আহমাদ- ৪/২৬৩; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ৩/২১২ হাদিস ১৬৫০; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৯৩]
# আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ستكون فتن يصبح الرجل فيها مؤمنًا ويمسي كافرًا إلا من أحياه الله بالعلم . رواه: ابن ماجه : ٢/١٣٠٥ رقم ٣٩٥٤ ، و الطبراني : ٨/٢٧٨، و الآجري في كتاب الشريعة : ١/١٦٨ رقم ٨٥ بسند ضعيف – “অচিরেই (ঘন অন্ধকারময়) ফিতনা সমূহ হবে, (যার একেকটা যেন রাতের অন্ধকারের ফালি/খন্ড)। সে সময় লোকের সকাল হবে মুমিন অবস্থায় এবং সন্ধা হবে কাফের অবস্থায়। শুধু (সেই বাঁচতে পারবে) যাকে আল্লাহ ইলমের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখবেন”। [সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩০৫ হাদিস ৩৯৫৪; ত্বাবরাণী- ৮/২৭৮; সুনানে দারেমী, হাদিস ৩৪৪; আশ-শারইয়াহ, আল-আযরী- ১/১৬৮ হাদিস ৮৫; আল-ইবানাহ, ইবনুল বাত্তাহ- ১/৩৬৬ হাদিস ২৬২, ৭৪৮; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৮/২৭৮; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ৬/৩৮৫; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ৬৩/১৩৬; ফাইজুল কাদির, মুনাভী- ৪/১০১ হাদিস ৪৬৭৭]
# মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إذا رأَيْتَ الناسَ يَقْتَتِلُونَ عَلَى الدُّنْيَا فَاعمَدْ بسيفِكَ علَى أعظمِ صخرةٍ في الحرَّةِ فاضرِبْهُ بها حتى ينكَسِرَ ثم اجْلِسْ في بيتِكَ حتى تَأْتِيَكَ يَدٌ خاطِئَة ٌأو مَنِيَّةٌ قاضيَةٌ . أخرجه الطبرانى في المعجم الأوسط : ١/٣٥٤ رقم ١٢٨٩ اسناده صحيح ، قال الهيثمى فى مجمع الزوائد : ٧/٣٠٣ : رواه الطبراني في الأوسط و رجاله ثقات– “যখন তুমি মানুষজনকে দেখবে তারা (ইসলামী শরীয়তের দাবীর প্রেক্ষিতে নয়, বরং নিছক) পার্থিব কারণে লড়াই করছে, তখন তুমি তোমার তরবারী (যুদ্ধাস্ত্র)টিকে কোনো পাথুরে এলাকায় নিয়ে গিয়ে (কোনো) প্রকান্ড পাথরের উপরে রাখো, তারপর তা দিয়ে সেটাকে পিটাতে থাকো যাবত না (সেটা) ভেঙ্গে (অকেজো হয়ে) যায়। তারপর তোমার ঘরের ভিতরে বসে যাও -যাবৎ না (তোমাকে হত্যা উদ্দেশ্যে) কোনো পাপী হাত কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যু তোমার কাছে এসে যায়”। [আল-মু’জামুল আ্উসাত, ত্বাবরাণী- ১/৩৫৪ হাদিস ১২৮৯; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১৯/২৩০, ২৩৩; আল-মু’জামুস সাগীর, ত্বাবরাণী- ১/১৪৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩০৩]
# আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَعْطَى مُحَمَّدَ بْنَ مَسْلَمَةَ سَيْفًا فَقَالَ: قَاتَلِ الْمُشْرِكِينَ مَا قُوتِلُوا، فَإِذَا رَأَيْتَ سَيْفَيْنِ اخْتَلَفَا بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ فَاضْرِبْ حَتَّى يَنْثَلِمَ وَاقْعُدْ فِي بَيْتِكِ حَتَّى تَأْتِيَكَ مَنِيَّةٌ قَاضِيَةٌ أَوْ يَدٌ خَاطِئَةٌ . أخرجه الطبرانى في المعجم الكبير : ١٢/٢٣٠ رقم ١٢٩٦٨ اسناده صحيح ، قال الهيثمى فى مجمع الزوائد : ٧/٣٠١ : رواه الطبراني ، و رجاله ثقات – “নবী ﷺ (একবার) মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহকে একটি তরবারী দিয়ে বললেন: ‘মুশরেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো, যাবৎ তারা (তোমাদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ করে। যখন তুমি মুসলমানদের দু’ পক্ষের মাঝে মতবিরোধ দেখবে, তখন (এই তরবারীটিকে) পিটাতে থাকো যাবৎ না তা অকেজো হয়ে যায় এবং তোমার ঘরের ভিতরে বসে পরো -যাবৎ না (তোমার) স্বাভাবিক মৃত্যু কিংবা (তোমাকে হত্যা উদ্দেশ্যে) কোনো পাপী হাত তোমার কাছে এসে যায়”। [আল-মু’জামুল কাবীর -১২/২৩০ ত্বাবরাণী, হাদিস ১২৯৬৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩০১]
# আবু সালামাহ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত, আবু হুরায়রাহ রা. এরশাদ করেন- إِنِّي لَأَعْلَمُ فِتْنَةً يُوشِكُ أَنْ يَكُونَ الَّتي مَعَهَا قَبْلَهَا كَنَفْجةِ أَرْنَبٍ، وَإِنِّي لَأَعْلَمُ الْمَخْرَجَ مِنْهَا، قُلْنَا: وَمَا الْمَخْرَاجُ مِنْهَا؟ قَالَ: أُمْسِكُ يَدِي حَتَّى يَجِيءَ مَنْ يَقْتُلُنِي . رواه عبد الرزاق في مصنفه , كتاب الجامع , باب سنن من كان قبلكم : ١١/٣٧٠ رقم ٢٠٧٦٧، و نعيم بن حماد في الفتن : ١/١٤٠ رقم ٣٤٥، و الحاكم في المستدرك : ٤/٤٧٢ و قال: صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه، و وافقه الذهبي في تلخيصه – “নিশ্চই আমি ওই ফিতনার কথা ভাল করেই জানি, যা অচিরেই (তোমাদের মুসলমানদের উপরে আবির্ভূত) হবে, যার সাথে ওর প্রথম দিকে থাকবে খরগোশের লম্ফঝম্পের মতো (অবস্থা)। আর নিশ্চই আমি সে(ই ফিতনা)টি থেকে বেরোনোর পথও ভালো করে জানি’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘সেটা থেকে বেরোনোর পথটি কী’? তিনি বললেন: ‘আমি আমার হাতকে (ফিতনার দিকে প্রসারিত হওয়া থেকে) ধরে রাখবো, যাবৎ না -যে আমাকে হত্যা করবে সে আমার কাছে এসে যায় (এবং আমাকে হত্যা করে ফেলে)”। [আল-মুসান্নাফ, আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৭০ হাদিস ২০৭৬৭; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৪৭৬; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/১৪০ হাদিস ৩৪৫]
ক্লিক করুন: আখেরী জামানা’র ফিতনা ফ্যাসাদ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী ২
মহানবী ﷺ-এর আরো ভবিষ্যতবাণী জানতে নিম্নের পেজগুলোতে ক্লিক করুন
কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন সমূহ (১ম সিরিজ)- [পৃষ্ঠা ১] , [পৃষ্ঠা ২] , [পৃষ্ঠা ৩] , [পৃষ্ঠা ৪] , [পৃষ্ঠা ৫] , [পৃষ্ঠা ৬] , [পৃষ্ঠা ৭] , [পৃষ্ঠা ৮] , [পৃষ্ঠা ৯] , [পৃষ্ঠা ১০]
কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন সমূহ (২য় সিরিজ)- [পৃষ্ঠা ১] , [পৃষ্ঠা ২] , [পৃষ্ঠা ৩] , [পৃষ্ঠা ৪] , [পৃষ্ঠা ৫] , [পৃষ্ঠা ৬] , [পৃষ্ঠা ৭] , [পৃষ্ঠা ৮] , [পৃষ্ঠা ৯] , [পৃষ্ঠা ১০] , [পৃষ্ঠা ১১] , [পৃষ্ঠা ১২] , [পৃষ্ঠা ১৩] , [পৃষ্ঠা ১৪] , [পৃষ্ঠা ১৫]