মহামারী, ভুমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, সাইক্লোন, টর্নেডো, ভূমিধ্বস, উৎপাত : আল্লাহ’র গজব, আযাব ও সতর্ক সংকেত – আমাদের এই আখেরী জামানায় কী করনীয় – ১ম পর্ব
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ২০২০ ইং সালের মার্চ মাসেরে শেষের দিকে এসে আমরা দেখছি, গোটা পৃথিবী জুড়ে সবচাইতে বড় আতঙ্কের নাম হল “COVID-19 (কোভিড-১৯)” বা করোনা ভাইরাস , যা খুব দ্রুতই যেমন মহামারী আকারে পুরো পৃথিবীকেই আক্রান্ত করে ফেলছে, তেমনি হাজার হাজার মানুষকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু, সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হল, সকলেই কেবল পড়ে আছে ‘হাত-মুখ জীবানুমুক্ত করণ এবং এই ভাইরাস-এর স্পর্শ থেকে বাঁচার নিয়মাবলীর পিছনে’, কিন্তু এর চাইতেও হাজার গুণ বেশি দরকার ছিল একথা উপলব্ধি করা যে, এটা আল্লাহ তাআলা’র অন্যতম ছোট আযাব ও সতর্ক সংকেত মাত্র, সামনে আরো আসছে, মানুষ তাদের পাপ ও আল্লাদ্রোহিতামূলক গোটা সিস্টেম থেকে তওবা না করলে সামনে আসছে আরো ব্যাপক ও পাইকারী ধ্বংস বরবাদী। কাকে বুঝাই একথা ?!!!
পৃথিবীতে বালা-মুসিবত আসে আল্লাহ’র বিরোধীতা, নাফরমানী ও পাপের কারণে : পার্থিব আযাব ও সতর্ক সংকেত হিসেবে
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنبِهِ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَ مِنْهُم مَّنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَ مِنْهُم مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَ مِنْهُم مَّنْ أَغْرَقْنَا ۚ وَ مَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَ لَٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
“ফলে (তাদের) প্রত্যেক (অপরাধী জাতি-গোষ্ঠি)কে আমরা তাদের (গুরুতর) অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছিলাম। বস্তুত: তাদের মধ্যে কারোর উপরে আমরা প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর-ঝটিকা, আবার তাদের কাউকে পাকড়াও করেছিল বিকট-শব্দ, আবার আমরা তাদের মধ্যে কাউকে জমিনেও ধ্বসিয়ে দিয়েছিলাম, আবার তাদের কাউকে আমরা (পানিতে) দিয়েছিলাম ডুবিয়ে। আর (এসব করতে গিয়ে) আল্লাহ তাদের সাথে (মোটেও) জুলুম (অন্যায়/অবিচার) করেন নি, (কারণ তিঁনি কারোর প্রতিই জুলুম করেন না)। বরং (আল্লাহ’র নাফরমানী ও অপরাধ করার মাধ্যমে) তারাই নিজেদের উপরে জুলুম (অন্যায়/অবিচার) করেছিল”। [সূরা আনকাবুত ৪০]
وَ مَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَ يَعْفُو عَن كَثِيرٍ
“আর তোমরা বালা-মুসিবতের মধ্য থেকে যা কিছুর সম্মুখীন হও, বস্তুত: সেটা তোমাদেরই কর্মফল। আর (তোমাদের প্রতি আল্লাহ’র এহসান এই যে,) তিঁনি (তোমাদের) বহু (পাপ ও অপরাধই দয়া করে) মাফ করে দেন”। [সূরা আশ-শুরা ৩০]
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
“মানুষ (যেসকল পাপ ও অপরাধ উপর্যপুরি) উপার্যন করেছে, তার কারণেই স্থলভাগে ও সমূদ্রভাগে ফ্যাসাদ (বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়) আত্বপ্রকাশ করেছে। (মানুষের কর্মের সাথে প্রকৃতির এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থাপনা এজন্য রাখা হয়েছে) যাতে তারা যা করছে তিঁনি তাদেরকে (তাদের সেই কৃতকর্মের পার্থিব পরিণতির) কিছুটা আস্বাদন করাতে পারেন। (এতে) হয়তো তারা (তাঁর পথে) ফিরে আসবে”। [সূরা আর-রূম ৪১]
বিভিন্ন হাদিসে এসেছে যে, মানুষের বিভিন্ন গুরুতর পাপ ও অপরাধের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন গোষ্ঠির উপরে আল্লাহ তাআলার পার্থিব আযাব ও গজব নাজিল হয়ে থাকে। মুসলীম উম্মাহ’র বিভিন্ন গোষ্ঠির উপরেও এসব নাজিল হবে -যখন তাদের ওই সকল পাপ ও অপরাধ সীমাতিরিক্ত হয়ে যাবে, যার কারণে আযাবগুলি এসে থাকে। নিম্নে নমুনা স্বরূপ কয়েকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হল।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:– إِذَا ظَهَرَ الزِّنَا وَالرِّبَا فِي قَرْيَةٍ، فَقَدْ أَحَلُّوا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللَّهِ . أخرجه الطبراني في المعجم الكبير : ١/١٧٨ رقم ٤٦٠ ، و الحاكم فى المستدرك : ٢/٣٧ ، و صححه الألباني في صحيح الجامع : رقم ٦٧٩ – “যখন কোনো নগরে জেনা-ব্যাভিচার ও সূদ আত্বপ্রকাশ করে, তখন মূলত: তারা নিজেদের উপরে আল্লাহ’র আযাবকে হালাল করে নেয়”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী– ১/১৭৮ হাদিস ৪৬০; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ২২৬১]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ . رواه ابن ماجه في سننه, كتاب الفتن , بَاب الْعُقُوبَاتِ : ٢/١٣٣٢ رقم ٤٠١٩ قال البوصيري في إتحاف الخيرة المهرة : ٧/٤٤٥ : سنده رواته ثقات ; و رواه ايضا الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٤٠ و صححه ، و الطبراني في المعجم الأوسط : ٤٦٧١، و الداني في السنن الواردة في الفتن : رقم ٣٢٧ ; و ابن أبي الدنيا في العقوبات : رقم ١١، و حسنه الألباني في السلسلة الصحيحة : ١/١٦٧ و صححه في صحيح الجامع : ٧٩٧٨ – “হে মুহাজিরগণ! পাঁচটি (বিষয় আছে), যখন তোমরা (মুসলমানরা) সেসবে লিপ্ত হয়ে যাবে -আর (বস্তুত:) তোমরা সেগুলোর সাক্ষাত পাও তা থেকে আমি আল্লাহ’র পানাহ চাই। (১) এমন কখনোই হয় না যে, কোনো গোষ্ঠির মধ্যে ফাহেশাহ (অশ্লীলতা/মন্দত্ব) এতটা প্রকাশ পায় যে, শেষমেস তারা তা খোলাখুলিভাবে করতে থাকে, আর তাদের মধ্যে প্লেগ (মহামারী) ও কঠিন ব্যাধি সমূহ ছড়িয়ে না পড়ে, যার ভোগান্তিতে তাদের পূর্বসূরীরা যারা গত হয়েছে তারা কখনো ভোগেনি। (২) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করতে থাকে, আর তাদের উপরে দুর্ভিক্ষ, চরম মাত্রার দুর্দশা ও জালেম সরকার চেপে না বসে। (৩) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা তাদের ধ্বনসম্পদের যাকাত দেয়া বন্ধ করে দেয়, আর আসমানের (রহমতের) বৃষ্টি বন্ধ না হয়ে যায়। (ভূ-পৃষ্ঠে) যদি বাহায়েম (চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী) না থাকতো, তাহলে (যাকাত দেয়া বন্ধ অবস্থায়) বৃষ্টি হত না। (৪) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা আল্লাহ’র সাথে কৃত ওয়াদা এবং তাঁর রাসুলের সাথে কৃত ওয়াদা নষ্ট করে থাকে, আর আল্লাহ তাদের উপরে তাদের বিজাতীয় দুশমনকে চাপিয়ে না দেন। ফলে তাদের (মতো ওয়াদা ভঙ্গকারী গোষ্ঠির) হাতে যা আছে তারা (তাদের থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে) তার কিছু (কেড়ে) নিয়ে নেয়। (৫) এমন (কখনো) হয় না যে, তাদের শাসকরা আল্লাহ’র কিতাব দিয়ে শাসন/বিচার-ফয়সালা করে না এবং আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা তারা অবলম্বন করে নেয় না, আর আল্লাহ তাদের মাঝে বা’সা (আন্ত-দ্বন্দ্ব/কলহ/লড়াই) সৃষ্টি করে না দেন”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ২/১৩৩২ হাদিস ৪০১৯; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৪০; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৬১৭৫; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৪৬৭১; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৩২৭; আল-উকুবাত, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ১১]
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يكون في آخر هذه الأمة خسف ومسخ وقذف . قالت: قلت: يا رسول الله، أنهلك وفينا الصالحون؟ قال: ” نعم، إذا ظهر الخبث. أخرجه الترمذي: كتاب الفتن – باب ما جاء في الخسف: ٤/٤٧٩ وقال: هذا حديث غريب، والحديث صححه الألباني. صحيح الجامع: ٢/١٣٥٥ – ‘এই উম্মতের শেষভাগে (আখেরী জামানায়) খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতি-বিকৃতি) এবং ক্বাযফ (প্রস্তর বর্ষন) হবে’। তিনি বলেন: আমি বললাম – ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমাদের মধ্যে নেককার লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমারা (মুসলমানরা) ধ্বংস হয়ে যাবো? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যাঁ, (এমন ঘটনা ঘটবে তখন) যখন (সমাজে) খাবাসাত (অশ্লীলতা, নোংরামী, বদচরিত্র এবং এসবের উপকরণ) ব্যাপক আকার ধারন করবে।’ [সুনানে তিরমিযী- ৪/৪৭৯]
ফায়দা: এখানে إذا ظهر الخبث – “যখন (সমাজে) খাবাসাত ব্যাপক আকার ধারন করবে” -এ বর্ণিত ‘খাবাসাত’ -এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে অন্য হাদিসে। যেমন: মদ পান, জেনা ব্যাভিচার, সমকামীতা, গাইকা নারীদের গান বাজনা, রেশমী কাপড় ইত্যাদি অশ্লীলতা, নোংরামী, বদ স্বভাব গুলো, যা মুসলমানদের সমাজে ব্যাপক আকারে মাঝে প্রকাশ পাবে। যেমন: ইমরান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ . فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَتَى ذَاكَ ؟ قَالَ : إِذَا ظَهَرَتْ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتْ الْخُمُورُ . رواه الترمذي: ٢١٣٨ , وصححه الألباني في صحيح الترمذي – ‘এই উম্মতের মধ্যে খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (চেহারা-বিকৃতি) এবং ক্বাযফ (বর্ষন) হবে’। তখন মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলো: ইয়া রাসুলুল্লাহ ! সেটা কখন হবে? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: যখন (আমার উম্মতের মধ্যে অপ-সংস্কৃতির অংগ হিসেবে বেপর্দা ও বেহায়াপনামূলক আসোরে) গাইকা-রমণীগণ ও বাদ্যযন্ত্রাদি (-র পরিবেশ) ব্যাপক আকার ধারন করবে এবং মদ সমূহ পান করা হবে’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২১২]
ইবনে ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- إِنَّ فِي أُمَّتِي خَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، وَهُمْ يَشْهَدُونَ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ؟ فَقَالَ : نَعَمْ ، إِذَا ظَهَرَتِ الْمَعَازِفُ وَالْخُمُورُ وَلُبِسَ الْحَرِيرُ . اخرجه ابن أبي شيبة في “المصنف, كتاب الفتن, ما ذكر في فتنة الدجال: , قال محمد عوامة في مصنف ابن أبي شيبة: مرسل بإسناد حسن – ‘নিশ্চই আমার উম্মাতের মধ্যে খাসফ, মাসখ এবং ক্বাযফ হবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! তারা কি لا إله إلا الله (লাা ইলাাহা ইল্লাল্লহু) সাক্ষ্য দিবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, যখন বাদ্যযন্ত্র ও মদ সমূহ (আমার উম্মতের মধ্যে ব্যাপক আকারে) প্রকাশ পাবে, এবং রেশমী কাপড় পরিধান করা হবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৮/৬৬৩]
আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ ، يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا ، يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ ، يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمْ الْأَرْضَ ، وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ . ورواه ابن ماجه : رقم ٤٠٢٠ , وصححه الألباني في صحيح ابن ماجه ; وأخرجه ايضا أحمد : ٥/٣١٨ ; وابن أبي الدنيا في ذم المسكر: ٤/٢; و ابن عساكر في تاريخ مدينة دمشق : ٥٦/٤٩٦ رقم ١١٨٨٦ ; و صححه الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة : رقم ٩٠ – ‘অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে (এমনসব) লোক (হবে, যারা) খামরুন (মদ ও মাদক) সেবন করবে এবং তারা তার নাম ভিন্ন অন্য নামে ডাকবে। তাদের মাথার কাছে বাদ্যযন্ত্র বাজবে এবং গাইকা (নারী)রা (গান গাবে)। আল্লাহ তাদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের মধ্য থেকে (কাউকে কাউকে) বাঁদর ও শুয়োর (আকৃতির) বানিয়ে দিবেন’। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০২০; মুসনাদে আহমদ- ৫/৩১৮; তারিখে দামেশক, ইবনু আসাকীর- ৫৬/৪৯৬ হাদিস ১১৮৮৬; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৮/২৯৫, ১০/২২১; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৫/৬৮; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৩৪১৯; মু’জামে ইবনুল আরাবী, হাদিস ১৬৪৬]
আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِذَا اتُّخِذَ الفَيْءُ دُوَلًا، وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا، وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا، وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ، وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ، وَعَقَّ أُمَّهُ، وَأَدْنَى صَدِيقَهُ، وَأَقْصَى أَبَاهُ، وَظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي المَسَاجِدِ، وَسَادَ القَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكَانَ زَعِيمُ القَوْمِ أَرْذَلَهُمْ، وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ، وَظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ، وَشُرِبَتِ الخُمُورُ، وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا، فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ، وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ . أخرجه الترمذي: كتاب الفتن: ٤/٤٩٥ رقم ٢٢١١ وقال: هذا حديث غريب; و الخطيب في تاريخه: ٣/١٥٧ ; ابن أبي الدنيا: ٦/٤١ – ‘যখন ফাই’কে (দেশের সরকারী ধ্বনসম্পদকে) ব্যাক্তিগত সম্পদ হিসেবে গ্রহন করা হবে, আমানতকে গণীমত হিসেবে (গ্রহন করে তার খেয়ানত করা হবে) , যাকাতকে জরিমানা (মনে করা হবে), (আল্লাহ’র) দ্বীন ভিন্ন অন্য কিছুর জন্য (যেমন নিছক পার্থিব উন্নতি ও সুখ-শান্তির জন্য) শিক্ষা গ্রহন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর অনুগত্য করবে আর মা’র (অকৃতজ্ঞ ও) অবাধ্য হবে, বন্ধুকে (তুলনামূলক) কাছে টানবে আর পিতা’কে দূরে ঠেলে দিবে, মসজিদগুলোতে (মুমিন-মুসলমানদের উপর মুনাফেক ও ফাসেক-ফাজের লোকগুলির দৌরাত্ব ও) গলার আওয়াজ প্রকাশ পাবে, কবীলাহ (জেলা/উপজেলা/গ্রাম/অঞ্চল)গুলোর মাথা/(মাতব্বর গোছের) মুরুব্বি’ হবে তাদের ফাসেক (পাপিষ্ট, স্বভাব-চরিত্রে পঁচন ধরা বদ) লোকগুলি, জাতি/গোত্রে’র নেতা হবে তাদের ছোটলোকগুলি, কোনো মানুষকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্টতার ভয়ে, (কন্ঠ ও শরীরের দিকে আকৃষ্ট কারীনী) গায়ীকা ও বাদ্যযন্ত্র (সমেত গান-বাজনার মহল উল্লেখযোগ্য মাত্রায়) প্রকাশ পাবে, (প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে) মদ পান করা হবে, এই উম্মাতের শেষ দিককার (এক শ্রেণির) লোকজন তার প্রথম দিককার লোকদেরকে লা’নত দিবে। (যখন এসব ঘটতে দেখবে), তখন তোমরা লু’হাওয়া, ভূমিকম্পন, খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতির বিকৃতি) ও ক্বায্ফ (প্রস্তর বর্ষন) -এর প্রতীক্ষায় থেকো। আলামতগুলি একটি আরেকটিকে অনুসরণ করবে যেমনি ভাবে মালার সুতা কেটে গেলে (তার পুঁথিদানাগুলো) একটি আরেকটিকে অনুসরণ করে (ঝড়ে পড়ে)’। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৪৯৫ হাদিস ২২১১; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ৩/১৫৭; ইবনে আবিদ্দুনিয়া- ৬/৪১]
ফায়দা: হাদিসটিতে বলা হয়েছে- إِذَا اتُّخِذَ الفَيْءُ دُوَلًا– ‘যখন ফাই’কে (নিজের ব্যাক্তিগত) সম্পদ হিসেবে গ্রহন করা হবে’। দুই ধরনের জিনিসকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘ফাই’ বলে অবিহিত করা হয়ে থাকে: (১) স্বশস্ত্র জিহাদের সময় কাফেররা বিনা যুদ্ধে তাদের ধ্বনসম্পদ ফেলে পালিয়ে গলে উক্ত গণীমতকে ‘ফাই’ বলা হয়, (২) ইসলামী রাষ্ট্রের কোথাও এমন ভূ-গর্ভস্ত খনিজ সম্পদকেও ‘ফাই’ বলা হয় (যেমন: খনিজ তেল, গ্যাস সোনা ইত্যাদি), যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আমানত স্বরূপ থাকে, যা জনগণের উপরার্থে ব্যবহারযোগ্য। আজ বিভিন্ন দেশের অসৎ শাসক গোষ্ঠি ও এলিট শ্রেণিরা দেশের সরকারী খনিজ সম্পদ ও অর্থসম্পদকে কতো অন্যায্য ও অবিচারমূলক কায়দায় নিজেদের পকেটে ঢুকাচ্ছে এবং স্বার্থ ও বিলাসীতায় অপব্যাবহার করছে -তা কে না জানে!
ছওবান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:– إنَّ الرجل ليُحرم الرِّزقَ بالذنب يُصيبه . رواه ابن ماجه في سننه : ٢/١٣٣٤ رقم ٤٠٢٢ ، و أحمد في مسنده : ٥/٢٧٧ ، ضعفه الألباني في ضعيف الجامع : رقم ٣٠٠٦ – “নিশ্চই মানুষ যে পাপ কামাই করে তার কারণে অবশ্যই (বিভিন্ন) রিজক (পাওয়া) থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে”। [সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩৩৪ হাদিস ৪০২২; মুসনাদে আহমদ- ৫/২৭৭]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا طَفَّفَ قَوْمٌ كَيْلًا، وَلَا بَخَسُوا مِيزَانَاً، إِلَّا مَنَعَهُمُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- الْقَطْرَ، وَمَا ظَهَرَ فِي قَوْمٍ الزِّنَا إِلَّا ظَهَرَ فِيهِمُ الْمَوْتُ، وَمَا ظَهَرَ فِي قَوْمٍ الرِّبَا إِلَّا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمُ الْجُنُونَ، وَلَا ظَهَرَ فِي قَوْمٍ الْقَتْلُ -يَقْتُلُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا- إِلَّا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوَّهُمْ، وَلَا ظَهَرَ فِي قَوْمٍ عَمَلُ قَوْمِ لُوطٍ إِلَّا ظَهَرَ فِيهِمُ الْخَسْفَ، وَمَا تَرَكَ قَوْمٌ الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ إِلَّا لَمْ تُرْفَعْ أَعْمَالُهُمْ وَلَمْ يُسْمَعْ دُعَاؤُهُمْ . رواه الطبراني في المعجم الكبير : ١١/٤٥ و اسناده ضعيف على ما قرره الهيثمي في مجمع الزوائد: ٣/٦٥، و اخرجه ايضا ابن أبي الدنيا في العقوبات – “যে জাতি/গোষ্ঠি (মানুষের সাথে যে কোনো প্রকারের লেনদেনের সময়) পরিমাপে কারচুপি করে এবং তারা পাল্লায় ঘাটিতি করে (মানুষকে প্রতারিত করে), আল্লাহ অবশ্যই তাদের উপরে (রহমতের) বৃষ্টি (বর্ষন) বন্ধ করে দেন। আর যে জাতি/গোষ্ঠির মধ্যে জেনা-ব্যাভিচার (ব্যাপক মাত্রায়) আত্বপ্রকাশ করে, তাদের মধ্যে অবশ্যই ব্যাপক হারে মৃত্য(র ঘটনা) ঘটে। আর যে জাতি/গোষ্ঠির মধ্যে (ব্যাপক ভাবে) সূদ প্রকাশ পায়, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের উপরে উন্মাদনা চাপিয়ে দেন। আর যে জাতি/গোষ্ঠির মধ্যে (ব্যাপক আকারে) হত্যা প্রকাশ পায়, ফলে তাদের একে অপরকে হত্যা করে, তখন আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের উপরে তাদের দুশমনকে চাপিয়ে দেন। যে জাতি/গোষ্ঠির মধ্যে কওমে লূতের (সমকামীতার অপ)কর্ম (ব্যাপক আকারে) প্রকাশ পায়, তাদের মধ্যে অবশ্যই খাসাফ (ভূমিধ্বস) প্রকাশ পায়। আর যে জাতি/গোষ্ঠি (কুরআন সুন্নাহ’ ভিত্তিক) মা’রুফ (সৎকাজ)-এর নির্দেশ দান এবং (কুরআন সুন্নাহ’র নিষেধকৃত) মুনকার (নাজায়েয ও হারাম বিষয়)কে নিষেধ করন পরিত্যাগ করে, অবশ্যই তাদের আমলগুলোকে (কবুলের জন্য আসমানে) উঠিয়ে নেয়া হয় না, আর না তাদের ফরিয়াদ শোনা হয়”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১১/৪৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৬৫]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, তিনি এরশাদ করেন- ما ظهر الغلول في قوم قط إلا ألقي في قلوبهم الرعب ولا فشا الزنا في قوم قط إلا كثر فيهم الموت ولا نقص قوم المكيال والميزان إلا قطع عنهم الرزق ولا حكم قوم بغير الحق إلا فشا فيهم الدم ولا ختر قوم بالعهد إلا سلط الله عليهم العدو . رواه مالك في موطأ , كتاب الجهاد , باب ما جاء في الغلول : ٢/٤٦٠ رقم ٢٦، و هذا الحديث ضعيف موقوف، ضعفه الألباني في ضعيف الترغيب والترهيب : ١/٢٧٣ – “এমন কোনো জাতি/গোষ্ঠি নেই, যাদের মধ্যে গুলুল (খেয়ানত/আত্বসাৎ) আত্বপ্রকাশ করে, অথচ তাদের অন্তরগুলোর মধ্যে রু’ব (দুশমনের ভয়) নিক্ষেপিত না হয়। আর এমন কোনো জাতি/গোষ্ঠি নেই, যাদের মধ্যে জেনা-ব্যাভিচার প্রসার লাভ করে, অথচ তাদের মধ্যে অধিক সংখ্যায় মৃত্য(র ঘটনা) না ঘটে। আর এমন কোনো জাতি/গোষ্ঠি নেই, যারা (মানুষের সাথে যে কোনো প্রকারের লেনদেনের সময়) পরিমাপ ও পাল্লায় (কারচুপিমূলক) ঘাটিতি করে (মানুষকে প্রতারিত করে), অথচ তাদের থেকে (বরকাতের) রিজিককে রদ করে দেয়া না হয়। আর আর এমন কোনো জাতি/গোষ্ঠি নেই, যারা (জনগণের উপরে) অন্যায্য-অন্যায় ভাবে বিচার করে, অথচ তাদের মাঝে খুন প্রসার লাভ না করে। আর এমন কোনো জাতি/গোষ্ঠি নেই, যারা (আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে কৃত ওয়াদা ও) চুক্তি ভঙ্গ করে, অথচ আল্লাহ তাদের উপরে তাদের দুশমনকে চাপিয়ে না দেন”। [আল-মুআত্তা, ইমাম মালেক- ২/৪৬০ হাদিস ২৬; মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস ৫৩৭০]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
وَ مَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا
“আর আমরা কেবল ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই নিদর্শনাদি পাঠিয়ে থাকি”। [সূরা বনী-ইসরাঈল ৫৯]
এখানে وَ مَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا – (আর আমরা কেবল ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই নিদর্শনাদি পাঠিয়ে থাকি) -এই আয়াতাংশের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশিষ্ট মুফাসসের ইমাম কাতাদাহ রহ. বলেন:- وإن الله يخوّف الناس بما شاء من آية لعلهم يعتبرون، أو يذكَّرون، أو يرجعون، ذُكر لنا أن الكوفة رجفت على عهد ابن مسعود، فقال: يأيها الناس إن ربكم يستعتبكم فأعتبوه . اخرجه الطبرى في تفسيره : ٨/٩٩ رقم ٢٢٤٠٦ ، هذا الأثر كما هو بين موقوف منقطع لأن قتادة لم يدرك ابن مسعود، وقد روي نحو ذلك مرفوعاً من طريق شهر بن حوشب، وهو مرسل ضعيف، والله تعالى أعلم . و اورده البغوى في معالم التنزيل : ٥/١٠٢، و ابن كثير في تفسيره : ٥/٩٩ – “আল্লাহ তাআলা তাঁর নিদর্শনাদি থেকে কোনো কিছুর দ্বারা (বিভিন্ন জামানার) মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন, যাতে তারা (সেই নিদর্শন থেকে) ইবরত (শিক্ষা) হাসিল করে কিংবা উপদেশ গ্রহন করে অথবা (আল্লাহ’র পথে) ফিরে আসে। আমাদের কাছে উল্লেখ করা হয়েছে যে, (সাহাবী আব্দুল্লাহ) ইবনে মাসউদের আমলে কুফায় একবার ভূমিকম্প হলে তিনি বললেন: ‘হে লোকসকল! নিশ্চই তোমাদের রব (আল্লাহ তাআলা এই ভূমিকম্পের মাধ্যমে) তোমাদেরকে (তোমাদের পাপ ও অপরাধের কথা স্মরন করিয়ে দিয়ে তাঁর হুকুমের দিকে) নিবিষ্ট করাতে চাচ্ছেন, কাজেই তোমরা তাঁর প্রতি পুরোপুরি নিবিষ্ট হয়ে যাও”। [জামেউল বায়ান, ইমাম তাবারী– ৮/৯৯ আছার ২২৪০৬; মাআলিমুত তানজিল, ইমাম বাগাভী- ৫/১০২; তাফসিরে ইবনে কাসির– ৫/৯৯]
উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল, আমাদের উপর্যপুরি পাপ ও অপরাধের কারণে আযাব ও সতর্ক সংকেত হিসেবে বিভিন্ন রকমের রোগ ব্যাধী ও মহামারী (যেমন: প্লেগ, করোনা ভাইরাস, এইডস, মেলেরিয়া ইত্যাদি), ভুমিকম্প, ভূমিধ্বস, সাইক্লোন, টর্নেডো, বৃষ্টিহীনতা খরা দুর্ভিক্ষ, বন্যা, পোকা-মাকড়ের (যেমন: পঙ্গপাল, ডেঙ্গু মশা ইত্যাদির) ব্যাপক উৎপাত প্রভৃতি নাজিল হয়ে থাকে।
আল্লাহ’র পাকড়াও থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় : পাপ ও অপরাধের উপরে বাস্তবেই ক্ষমা চাওয়া, খাঁটি ভাবে তওবা করা এবং নেক জীবন অবলম্বন করা
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ
“তারা কি জানে না যে, আল্লাহ (হলেন মহা দয়াময় সত্ত্বা), তিনি তাঁর বান্দাদের থেকে (খাঁটি) তওবা কবুল করে থাকেন?”। [সূরা তাওবা ১০৪]
وَ مَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
“আর (হে নবী মুহাম্মাদ!) তারা (তাদের পাপ ও অপরাধকে উপলব্ধি করে আল্লাহ’র কাছে) ক্ষমা চাইতে থাকবে -এমতাবস্থায় আল্লাহ তাদের প্রতি আযাব দানকারী(র পরিচয় দিবেন, এমনটা কখনো) হবে না”। [সূরা আনফাল ৩৩]
وَ لَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
“আর যদি জনপদ বাসীরা (পূর্বের অপরাধ থেকে তওবা করে খাঁটি) ইমান আনতো এবং (তাদের জীবন যাত্রায়) তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের উপরে আসমান ও জামিনের বরকতসমূহ খুলে দিতাম”। [সূরা আ’রাফ ৯৬]
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا – يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا – وَ يُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا – مَّا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّهِ وَقَارًا
“(নবী নূহ তার কওমের প্রতি নিরাশ হয়ে বললো: হে আল্লাহ!) তখন আমি (আমার এই অপরাধী কওমকে) বলেছি: তোমরা (সকলে তোমাদের পাপ ও অপরাধের কারণে) তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, (তওবা করে তার পথে ফিরে আসো)। নিশ্চই তিঁনি (এমন দয়াময় সত্ত্বা, যিনি বান্দার পাপ) ক্ষমা করে দিতে থাকেন। (দেখো, তোমরা তওবা করলে) তিঁনি তোমাদের উপরে আসমান (থেকে) মুষলধারে (রহমতের) বৃষ্টি বর্ষন করবেন, আর তোমাদের ধ্বনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য এনে দিবেন। এবং তোমাদের জন্য তিনি (বিরান ভূমিতে) বানিয়ে দিবেন বাগবাগিচা-উদ্যানাদি, আর সৃষ্টি করে দিবেন (প্রয়োজনীয়) নদী-নালা। তোমাদের কি হল (যে), তোমরা আল্লাহ’র কাছে (এমন) মানমর্যাদার আকাঙ্খি হচ্ছ না”। [সূরা নূহ ১০-১৩]
وَ يَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَ يَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَ لَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ
“আর (নবী হূদ তার জাতি আদ’কে উদ্দেশ্য করে বললো:) হে (আমার) জাতি! তোমরা (সকলে) তোমাদের রব (আল্লাহ তাআলা)’র কাছে (তোমাদের কৃত পাপ ও অপরাধের জন্য) ক্ষমা চাও, তারপর তাঁর কাছে তওবা করো (যে, পূণরায় জেনে বুঝে ওসব পাপ ও অপরাধ আর করবে না। তাহলে) তিঁনি তোমাদের উপরে আসমান (থেকে) মুষলধারে (রহমতের) বৃষ্টি বর্ষন করবেন, আর তিঁনি তোমাদের (বিদ্যমান) শক্তি-সামর্থের উপরে (আরো অতিরিক্ত) শক্তি-সামর্থ বৃদ্ধি করে দিবেন। আর তোমরা (গোয়ার ও দাম্ভীক) অপরাধীদের মতো মুখ ফিরিয়ে নিও না”। [সূরা হূদ ৫২]
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا – وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
“আল্লাহ’র উপরে কেবলমাত্র তাদের তওবা(কেই গ্রহন করার বিষয়টি বর্তায়) যারা গোনাহ করে ফেলে অজ্ঞতাভুল বসত:, তারপর যত তাড়াতাড়ি হয় তারা (ওই গোনাহ থেকে) তওবা করে নেয়। বস্তুত: ওরাই তারা যাদের উপরে আল্লাহ ফিরে তাকান (তাদের তওবা কবুল করা জন্য)। আর আল্লাহ মহা জ্ঞানী এবং মহাবিজ্ঞ, (তিঁনি ভাল করেই জানেন, কার পাপ/অপরাধ ও তওবার কী হাক্বিকত)। আর তাদের জন্য কোনো তওবা নেই, যারা পাপ/অপরাধ সমূহ করে যেতে থাকে, এমনকি (অবশেষে) যখন তাদের কারোর কাছে মৃত্যু এসে পৌছে, তখন বলে: নিশ্চই আমি এখন তওবা করছি। আর না তাদের (তওবা গ্রহন করা হবে হবে), যারা কাফের হয়ে মড়ে। ওরাই তারা যাদের জন্য আমরা সুকঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছি”। [সূরা নিসা ১৭, ১৮]
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ
“নিশ্চই আল্লাহ কোনো গোষ্ঠি’র অবস্থা (তত দিন পর্যন্ত) পরিবর্তন করে দেন না, যাবৎ না তারা (পাপ ও অপরাধ থেকে তওবা করে) নিজেরাই নিজেদের (বদ অবস্থাকে নেক আমলের দ্বারা) পরিবর্তন করে নেয়। আর আল্লাহ যখন কোনো গোষ্ঠিকে মন্দ (অবস্থা) তে (ফেলতে) ইচ্ছে করেন, তখন তা বাঁধাদানকারী (দ্বিতীয় আর) কেউ থাকে না, আর না তাদের জন্য (সেই মন্দ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি দানকারী হিসেবে) তিঁনি ছাড়া (অন্য কোনো) অভিভাবক থাকে”। [সূরা রা’দ ১১]
পার্থিব ছোট ছোট আযাবে আক্রান্ত কওম/জাতি/গোষ্ঠি সময় থাকতে পাপ ও অপরাধ থেকে তওবা করে নেক জীবন অবলম্বন না করলে কপালে আরো বড় আযাবের অপেক্ষায় থেকো
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াতে ফেরাউন ও তাঁর অনুসারী কওমের আলোচনা করেছেন, যারা মিশরের জমিনে বড় বড় পাপ ও অপরাধ উপর্যপুরি করে যাওয়ার কারণে সময়ে সময়ে তাদের উপরে ব্যাপক ভাবে ছোট ছোট আযাব নাজিল করে সতর্ক করা হচ্ছিল, যাতে তারা তওবা করে। কিন্তু তাদের খাসলতে যখন কোনো পরিবর্তন এলো না, বরং তারা জমিনে উদ্ধত্ব্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে দিলো, তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে চিরজীবনের জন্য দুনিয়া থেকেই বিদায় করে দিলেন।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
দেখুন, নবী মুসা আ. ও নিপিড়িত নির্যাতিত দূর্বল বনী-ইসরাঈলকে চিরদিনের জন্য দনিয়া থেকে বিদায় করার উদ্দেশ্যে মড়িয়া হয়ে পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে শেষমেস সমূদ্রে ডুবেই ফেরাউনের মড়ন হয়েছিল। আর আল্লাহ তাআলা এই ওয়াদা করেছিলেন যে- فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً – {সুতরাং, (হে ফেরাউন) আজ তোমার দেহকে রক্ষা করবো (পুরোপুরি পঁচে-গলে বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে), যাতে তোমার পরবর্তীতে যে (বা যারা আসবে, তাদের জন্য শিক্ষা গ্রহনের একটা) নিদর্শন (হয়ে থাকো)। আর নিশ্চই মানুষের মধ্যে বহুলোক আমাদের নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে অবশ্যই গাফেল(তী ও ভ্রুক্ষেপহীনতা প্রদর্শন করে থাকে; শিক্ষা গ্রহন করে না)}”। [সূরা ইউনুস ৯০-৯২] কখনো কি ভেবে দেখেছেন, দীর্ঘ প্রায় ৩২০০ বছর ফেরাউনের মমীকৃত লাশ ‘শবাধার’-এ লুকায়ীত রইলো, আর কেনই-বা আমাদের এই শেষ জামানায় এসে (১৮৭৯ ইং সালের দিকে) তার লাশটি উদ্ধার হয়ে মিশর জাতীয় মিউজিয়ামে পৃথিবীবাসীর সামনে ‘উদাহরণ/নমুনা/নিদর্শন’ হয়ে রইলো, যেমনটা আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করেছিলেন ?!!! এটা কি একথারই ইংগীত নয় যে, এই জামানায় এমন সব ফেরাউনদের দেখা মিলবে, যাদের কর্তব্য হবে জুলুম অত্যাচার ও অবিচার করার আগে বারবার ‘ফেরাউনের সংরক্ষিত লাশ’ দেখে শিক্ষা গ্রহন করা যে, জালেমদের পরিণতি কী হয়?!!!
আজ এই আখেরী জামানায় (যা আমরা এই ওয়েবসাইটের ‘‘ভবিষ্যৎবাণী’ সিরিজে প্রমাণ করে এসেছি) আমরা দেখতে পাচ্ছি, গোটা পৃথিবীর দেশে দেশে একেকটা আস্ত ফেরাউন বসে দেশ শাসন করছে, যারা জমিনে নানান কিসিমের ভয়ঙ্কর সব জুলুম অত্যাচার অনাচার ও ফিতনা ফ্যাসাদের মাঠ গরম করে রেখেছে, আর গোটা পৃথিবী তাদের অনুসরণ করছে। তাদের বড় বড় পাপ ও অপরাধের সীমা যখন উপচে উঠতে শুরু করেছে, তখন আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর জলে ও স্থলে ভূমিকম্প, টর্নেডো, সাইক্লোন, রোগ-ব্যাধি মহামারী, দূর্ভিক্ষ, জলচ্ছাস, বন্যা ইত্যাদি ছোট ছোট আযাব ও গজব দিয়ে মানুষকে বারবার সতর্ক সংকেত পাঠাচ্ছেন। মানুষ তওবা করে আল্লাহ’র দিকে ফিরে না আসলে চুড়ান্ত ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য অপেক্ষায় থাকুক।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُّبِينٍ – يَغْشَى النَّاسَ ۖ هَٰذَا عَذَابٌ أَلِيمٌ – رَّبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ
‘অতএব তুমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকো, যে দিন স্পষ্ট ধোঁয়া দিয়ে (তোমাদের নিকটবর্তী) আকাশ ছেঁয়ে যাবে, (যা পৃথিবীর) মানুষকে ঢেকে নিবে। এটা (পৃথিবীর মানুষের উপরে আল্লাহ’র একটি) কঠিন আযাব (স্বরূপ হবে)। (তারা নিরুপায় হয়ে বলবে:) হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এই আযাবকে হটিয়ে দাও, নিশ্চই আমরা (কুফর ও মুনাফেকী ত্যাগ করে আজ) মুমিন (হয়ে গেলাম)’। [সুরা দুখান ১০-১২]
وَإِن مِّن قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًا شَدِيدًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا
‘(পৃথিবীতে) এমন কোনো জনপদ নেই যাকে আমরা কেয়ামতের দিনের পূর্বে ধ্বংস না করবো অথবা সুকঠিক আযাবে গ্রেফতার না করবো। এটা আল্লাহ’র কিতাব (লাউহে মাহফুজে) লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে’। (এটা ঘটবেই ঘটবে)’। [সুরা ইসরা/বনী ইসরাঈল ৫৮]
এই আযাব কেয়ামতের দিনের আযাব নয়, বরং قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ – (কেয়ামতের দিনের পূর্বে) তথা, কেয়ামতের আগে পৃথিবীর পচনধরা মানুষগুলোকে চিরদিনের জন্য দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়ার উদ্দেশ্যে আগত এক ব্যাপক আযাব আসছে। এর ছোবল থেকে শুধু সেই বাঁচতে পারবে, যাঁর প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন। এই ধ্বংসের পর যারা বেঁচে থাকবে তারা ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর শাসনাধীনে কিছুকাল এক সুখময় জীবন যাপন করবে। [আর আমরা –এখানে ও ‘এখানে’ দেখিয়ে এসেছি যে, ইমাম মাহদী রা ও ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর আগমনের একেবারে দ্বারপ্রাপান্তে চলে এসেছি]
الله اعلم بالصواب و أخر دعوانا عن الحمد لله رب العالمين و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته و استغفر الله و أتوب إليه
আসসালামু আলাইকুম,
সন্মানিত শায়েখ,
আপনার প্রতিটা লেখা পড়তেছি,আলহামদুলিল্লাহ শেষ জামানা অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।আল্লাহ আপনাক উত্তম কিছু দান করুক।আমিন
ইয়া রাব্বাল আলামিন।
আমার একটা বিষয় জানার ছিল,
তারিখের বাগদাদের ১২২৯ নং হাদিসে কি বলা হয়েছে। তারিখে দিমাশাক ২৩৩ ও ২৩২ পৃষ্ঠা।
এগুলোতে কি এমন নেতার বর্ণনা আছে যিনি পূর্ব অঞ্চল থেকে আসবেন এবং ইমাম মাহদির আগে।
দয়া করে জানাবেন প্লিজ।
ভাই আমার, আপনি যে আমার ওয়েবসাইটে এসে আগ্রহ নিয়ে পড়াশুনা করছেন, এতে আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে -তা আমি বোঝাতে পারবো না। আমার মন চায়, আমার প্রতিটি ইলম পিপাসু মুসলমান ভাই বোন আমার লিখা গুলো একবার হলেও পড়ে দেখুক। আপনার কমেন্ট থেকেই অনুমিত হচ্ছে যে, আপনার মনের ভিতরে ইলমের তলব রয়েছে এবং আপনি বর্তমান জামানার বহু প্রশ্নের যুৎসই জবাব জানতে উৎগ্রীব। আর আমি মনে ভিষন তৃপ্তি পেতাম যদি আপনার প্রশ্নে জবাবগুলো আলাদা ভাবে দিতে পারতাম। কিন্তু নিতান্ত দু:খের বিষয় হল, আমি বর্তমানে ‘জিহাদ ও কিতাল’ বিষয়ে একটি বিরাট দায়িত্বপূর্ণ লিখায় হাত দিয়েছি এবং আপনি হয়তো বঝেন যে, এতে কি পরিমাণ গবেষনায় নামতে হয় এবং কত মাপযোগ করে কথা লিখতে হয় যাতে আমার ভুলের কারণে কেউ পথভ্রষ্ট হয়ে আবার না যায়। আর জটিল ব্যস্তময় সাংসারিক জীবনের পাশাপাশি সময় বের করে নিয়ে এসব গবেষনায় ডুব দেয়া আবার নিজেই টাইপ করে তা এই ওয়েবসাইটে লিপিবদ্ধ করা -কত কঠিন তা হয়তো আপনি বুঝবেন আমার ভাই। এজন্য অন্য কিছুতে মনোযোগ দেয়াও কঠিন, তাতে মূল বিষয়ের গবেষনা এলামেলো হয়ে যায় কিংবা খুব একটা মাথা খাটানো যায় না সহজে। এজন্য ক্ষমা করবেন, আমি আপাতত ‘তারিখের বাগদাদ’ এবং ‘তারিখে দিমাশাক’-এর বম বিশাল বিশাল কিতাব খুঁজে আপনার জানার বিষয়গুলির উপরে কিছু লিখার ফুসরত পাচ্ছি না। যেমন: “তারিখে দিমাশাক ২৩৩ ও ২৩২ পৃষ্ঠা” বলেছেন কিন্তু খন্ড নম্বর দেননি (এর পঞ্চাশের উপরে খন্ড রয়েছে, কোন খন্ডে খুঁজবো?)। তারিখে বাগদাদের যে কপি আমি পড়েছি তাতে শুধু পৃষ্ঠা নম্বর আছে তাতে হাদিস নম্বর নেই। এসব জটিলতার সুরাহা যদি করে দিতেন, মানে কষ্ট করে মূল হাদিগুলিই যদি উদ্ধৃত করে দিতেন, তাহলে হয় তো উত্তর দেয়ার চিন্তা করা যেতো।
আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় শায়েখ, এতো ব্যস্ততার মধ্যেও আমার কমেন্টের উত্তর করেছেন অনেক শুকরিয়া। দুআ করি আল্লাহ আপনার কাজকে সহজ করে দিক এবং আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক, আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
প্রিয় শায়েখ,
আমার কাছে হাদিস গুলোর আরবি নেই,বাংলা অনুবাদ রয়েছে,,,আমি দিচ্ছি যদি কিছু বুঝতে পারেন….
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, অচিরেই পূর্ব দিকে এক ফিৎনার সৃষ্টি হবে।(দ্বিতীয় কারবালা) আর তা হবে মুশরিকদের দ্বারা। (মালাউন বাহিনি+মুনাফিক বাহিনি) তখন মুমিনদের একটি দল তাদের বিরুদ্বে যুদ্ধ করে বিজয় আনবে। আর তাদের সেনাপতি হবে ঐ সময়ের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি “সাহেবে কিরান”! আর তাদের পরিচালনা করবে একজন ইমাম। যার নাম হবে “মাহমুদ”। অবশ্যেই তারা মাহদীর আগমন বার্তা নিয়ে আসবে।
— (তারিখুল বাগদাদ, ১২২৯)
হযরত ফিরোজ দায়লামি (রাঃ)- থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ-এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তার যামানায় মহাযুদ্ধের বজ্রাঘাতে বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে। সে তার সহচর বন্ধু “সাহেবে কিরান বারাহ” কে সাথে নিয়ে যুদ্ধ পরিচালোনা করবে-যে বেলাল ইবনে বারাহ-এর বংশোদ্ভুত হবে। তোমরা তাদের পেলে জানবে ইমাম মাহদীর প্রকাশের সময় হয়েছে।
— (আসরে যুহরি, ১৮৭ পৃঃ
তারিখে দিমাশাক, ২৩৩ পৃঃ
ইলমে তাছাউফ, ১৩০ পৃঃ
ইলমে রাজেন, ৩১৩ পৃঃ
বিহারুল আনোয়ার, ১১৭ পৃঃ)
আপনার সুস্থতা কামনা করছি।আর আপনার জন্য ই আমরা অনেক গোপন হাদিস গুলো জানতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ আপনাক কবুল করুক,আমিন।
প্রিয় শায়েখ,
আপনার আপনার রিসার্স এবং লেখা শেষ হলে দয়া করে এই বিষয়ে জানাবেন।
পরিশেষ,
আপনার জন্য দুয়া রইল।
আসসালামু আলাইকুম।
আসসালামু আলাইকুম
আপনার নতুন কোনো লেখা মনে হয় অনেক দিন ধরে আসেনি জনাব