ইসলামে যাকাতের বিধান – কুরআনের আয়াত, হাদিস ও ফিকহী মাসায়েল
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
[উল্লেখ্য, এখানে ইসলামে যাকাতের বিধান -এ উল্লেখিত আয়াত, হাদিস ও ইবারত সমূহ এবং এসবের অনুবাদ ও মাসআলা মাসায়েলকে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]
যাকাত ফরয হওয়ার দলিল – কুরআন হাদিস থেকে
যাকাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ’য় বহু দলিল রয়েছে, যা থেকে এখানে নমুনা স্বরূপ সামান্য কিছু উল্লেখ করছি। যেমন: আল্লাহ তাআলা এরশাদ করছেন-
وَ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَ آتُوا الزَّكَاةَ وَ ارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
“আর তোমরা নামায কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো”। [সূরা বাকারাহ ৪৩]
وَ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَ أَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“আর তোমরা নামায কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো এবং (আমার প্রেরিত) রাসুল (মুহাম্মাদ)-এর অনুগত্য অনুসরণ করো, যাতে তোমাদের প্রতি রহম করা যায়”। [সূরা নূর ৫৬]
وَ مَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَ يُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَ ذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
“তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে , তারা কেবলমাত্র আল্লাহ’রই ইবাদত (ও গোলামী) করবে -তাঁর দ্বীনের প্রতি মুখলেছ (খাঁটি বান্দা) হিসেবে (সম্পূর্ণ রূপে) একনিষ্ট/একমুখী হয়ে, এবং তারা সালাত (নামায) কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। আর এটাই হল (আল্লাহকৃত স্থাপিত) দ্বীনুল-কাইয়্যেমাহ (প্রতিষ্ঠিত সত্য-সঠিক দ্বীন)”। [সূরা বাইয়্যেনাহ ৫]
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
‘যাকাত (ব্যয়যোগ্য) শুধুমাত্র ফকির ও মিসকীনদের জন্য এবং একাজে নিয়োজিত আমেলদের জন্য ও মুয়াল্লাফাতুল ক্বুলুব-এর জন্য, এবং দাস-মুক্তিতে ও ঋণগ্রস্থদের (ঋণমুক্তির) কাজে, এবং আল্লাহ’র পথে ও ইবনুস-সাবিল (-এর অভাব মোচনের) কাজে। (এই খাতগুলো) আল্লাহ’ কর্তৃক ফরযকৃত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী মহাপ্রজ্ঞাময়’। [সূরা তাওবা ৬০]
এই আয়াতে যাকাত ব্যয়ের মোট ৮টি খাতের কথা উল্লেখ করার পর বলা হয়েছে- فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ – {(এই খাতগুলো) আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত}। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা ধ্বনী মুসলমানদের উপরে তাদের ধ্বনমালের যাকাত আদায়কে ফরয করে দিয়েছেন এবং উসূলকৃত যাকাত’কে উপরোক্ত ৮টি খাতে ব্যয় করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখাকেও ফযর (অপরিহার্য) করে দিয়েছেন; এর বাইরে নয়।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
(হে নবী! তুমি) তাদের ধ্বনসম্পদ থেকে যাকাত গ্রহন করো, এর দ্বারা (আমা কর্তৃক তাদের কাছে রক্ষিত অভাবীদের হক্বটুকু নিয়ে) তাদেরকে পবিত্র করো এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করো…’। [সূরা তাওবা ১০৩]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন-أَنَّ أَعْرَابِيًّا جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : يَا رَسُولِ اللَّهِ، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ ، قَالَ : تَعْبُدُ اللَّهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا ، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ ، وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ ، وَ تَصُومُ رَمَضَانَ، قَالَ : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا أَبَدًا ، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ ، فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ سَرَّهُ أَنَّ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا . رواه مسلم في صحيحه , كتاب الإيمان , باب بيان الإيمان الذي يدخل به الجنة وأن من تمسك بما أمر به دخل الجنة : ١/٤٤ رقم ١٤ ، و البخاري في صحيحه : ٣/٢٦١ رقم ١٣٩٧، و غيرهما – “(একবার) এক গ্রাম্য লোক রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এসে বললো: ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন, যা আমি আমল করলে জান্নাতে যেতে পারবো’। তিঁনি বললেন: ‘তুমি আল্লাহ’র ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না, তুমি (যথাযথ ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত) বিধিবদ্ধ সালাত (নামায) কায়েম করো, (নেসাবের মালিক হলে তোমার ধ্বনমালের উপরে আল্লাহ’র) ফরযকৃত যাকাত আদায় করো এবং রমযানের সিয়াম (রোযা) পালন করো’। সে বললো: ‘ওই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, আমি (জীবনে) কোনো দিন এর চাইতে বেশি (কোনো আমল) করবো না, আর না তার থেকে (কোনো আমল) হ্রাস ঘটাবো’। সে যখন ফিরে চলে গেলো, তখন নবী ﷺ বললেন: ‘যে ব্যাক্তি (দুনিয়াতে থাকতেই) জান্নাতের অধিবাসীদের মধ্য থেকে কাউকে দেখে অনন্দিত হতে চায়, সে এই ব্যাক্তিকে দেখে নিক”। [সহিহ মুসলীম– ১/৪৪ হাদিস ১৪; সহিহ বুখারী- ৩/২৬১ হাদিস ১৩৯৭]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ : شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ . رواه البخاري في صحيحه : رقم ٨، و ومسلم في صحيحه: رقم ١٦، و غيرهما – “ইসলাম ভিত্তিস্তম্ভ পাঁচটি বিষয়ের উপরে স্থাপিত। (১) একথা সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং (সাথে এই সাক্ষ্য দেয়া) যে, মুহাম্মাদ হলেন আল্লাহ’র রাসুল, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ (পালন করা) এবং (৫) রমযানের সিয়াম (পালন করা)”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৮; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৬; সুনানে নাসায়ী- ৮/১০৭ হাদিস ৫০০১; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস ৩০৮; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ১/৩৫৮]
এখানে নমুনা স্বরূপ কিছু স্পষ্ট দলিল উল্লেখ করা হল মাত্র। অন্যথায়, এই অধ্যায়ে প্রতিটি পেজে “যাকাত” বিষয়ক আলোচনায় উল্লেখীত কুরআন সুন্নাহ’র যাবতীয় নস্ ও উম্মতের ইজমা (ঐকমত) একথারই দলিল যে, ‘যাকাত একটি ফরয হুকুম’।
ধ্বনমালের যাকাত আদায় করার সুভ ফল ও পরিণতি
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করছেন-
وَ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“আর তোমরা নামায কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো। আর তোমরা (সৎকাজ ও নেকীমূলক) কল্যানের যাকিছু নিজেদের জন্য (পরকালের উদ্দেশ্যে) অগ্রীম প্রেরন করবে, তা আল্লাহ’র কাছে (যথাযথ ভাবে) পাবে। আর নিশ্চই তোমরা যা কিছু করো তা আল্লাহ ভাল করেই দেখেন”। [সূরা বাকারাহ ১১০]
وَالْمُقِيمِينَ الصَّلَاةَ ۚ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أُولَٰئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا
“সালাত কায়েমকারীগণ ও যাকাত আদায়কারীগণ এবং আল্লাহ ও আখেরাতের ব্যাপারে ইমানওয়ালাগণ -এদেরকে আমরা অচিরেই দান করবো মহা পুরষ্কার”। [সূরা নিসা ১৬২]
قَالَ عَذَابِي أُصِيبُ بِهِ مَنْ أَشَاءُ ۖ وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ ۚ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ
“(আল্লাহ) বললেন: ‘আমি যার জন্যে চাই আমার আযাব তাকেই পেয়ে বসে। আর আমার রহমত সব কিছুকে পরিব্যাপ্ত করে আছে। সুতরাং, আমি সে(ই রহমত)টিকে তাদের জন্য লিখে দিবো, যারা (আমাকে) ভয় করে চলে এবং (বিশেষ করে তাদের ধ্বনমালের) যাকাত আদায় করে এবং (সর্বপরি) যারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ইমান আনে”। [সূরা আ’রাফ ১৫৬]
আবু মালেক আশয়ারী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ . رواه مسلم في صحيحه , كِتَابِ الطَّهَارَةِ بَابُ فَضْلِ الْوُضُوءِ : رقم ٢٢٣ ، و غيره – “যাকাত হল বুরহান (ইমানের স্বপক্ষে মজবুত দলীল)”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২২৩]
মুয়ায বিন জাবাল রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كما يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ . رواه الترمذي في سننه : رقم ٢٦١٦، و صححه الألبانى فى مشكلة الفقر: ١١٧ ، و ابن ماجة في سننه : رقم ٣٩٧٣، و النسائي في السنن الكبرى : رقم ١١٣٣٠، و أحمد فى مسنده : ٢٢٠٦٩، و حسنه ابن حجر العسقلاني في تخريج مشكاة المصابيح : ٢/٢٩٣ – “যাকাত গোনাহকে এমনভাবে দূরীভূত করে দেয়, যেমনি ভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬১৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৯৭৩; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদিস ১১৩৩০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২০৬৯]
আমর বিন মুররাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- جاء رجل من قضاعة إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال إني شهدت أن لا إله إلا الله وأنك رسول الله وصليت الصلوات الخمس و صمت رمضان وقمته وآتيت الزكاة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من مات على هذا كان من الصديقين والشهداء . أخرجه أحمد كما في مجمع الزوائد للهيثمي : ٨/١٥٠ ، و ابن خزيمة : ٢٢١٢ ، وابن حبان ٣٤٣٨ ، قال المنذري في الترغيب والترهيب : ٢/٧ : رواه البزار بإسناد حسن وابن خزيمة في صحيحه وابن حبان وتقدم لفظه في الصلاة، صححه الألباني في صحيح الترغيب والترهيب : رقم ٧٤٩ – “কুজায়াহ (গোত্রে)র এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এসে বললো: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, (আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি) যে, আপনি আল্লাহ’র রাসুল। এছাড়াও আমি (দৈনিক) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায) আদায় করি, রমযানের সিয়াম (রোযা) পালন করি ও তা (পূর্ণভাবে) রেখে যাই, আর আমি যাকাত আদায় করি’। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘যে ব্যাক্তি এর উপরে মৃত্যুবরণ করবে, সে সিদ্দীক ও শহিদগণের সাথে থাকবে”। [মুসনাদে বাযযার: আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ২/৭; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস ২২১২; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩৪৩৮; মুসনাদে আহমদ: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/১৫০]
ধ্বনমালের যাকাত আদায় না করার পরকালীন ভয়াবহ পরিণতি ও আযাব
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করছেন-
وَ الَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ * يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ
“আর যারা সোনা ও রূপাকে পুঞ্জিভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহ’র পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। (সেই) দিন (বেশি দূরে নয়, যখন) জাহান্নামের আগুনে ওগুলোকে উত্তপ্ত করানো হবে, তারপর তা দিয়ে ছেঁকা দেয়া হবে তাদের কপালগুলোতে, তাদের পার্শ্বদেশগুলোতে এবং তাদের পৃষ্ঠদেশ গুলোতে। এই(গুলিই হচ্ছে তোমাদের সেই ধ্বনমাল) যা তোমরা (হক্ব আদায় না করে উল্টো) নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করে রাখতে। সুতরাং, তোমরা যা পুঞ্জিভুত করে রাখতে, (আজ) তোমরা (সেটার) মজা চাখো”। [সূরা তাওবা ৩৪, ৩৫]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ، لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِينُهُ وَظَهْرُهُ، كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيدَتْ لَهُ، فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيلَهُ، إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ . واه مسلم في صحيحه , كتاب الزكاة : رقم ٩٨٧ – “যে কোনো স্বর্ণের মালিক ও রৌপ্যের মালিক হোক না কেনো, যে ওর মধ্য থেকে তার (ফরয) হক্ব (যাকাত) আদায় না করবে, যখন কেয়ামতের দিন আসবে, তখন (ওসব স্বর্ণ বা রৌপ্য দিয়ে) তার জন্য আগুনের বিভিন্ন পাত তৈরী করা হবে, তারপর জাহান্নামের আগুনে সেটাকে উত্তপ্ত করানো হবে, তারপর তা দিয়ে তার কপালে, তার পাশ্বদেশে এবং তার পৃষ্ঠদেশে ছেঁকা দেয়া হবে। যতবারই সেটা শীতল হয়ে আসবে, ততবারই (একই কায়দায়) তার জন্য পুণরাবৃত্তি ঘটানো হতে থাকবে -(এমন এক ভয়ঙ্কর) দিনে যার পরিমানটা হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান -যাবৎ না বান্দাদের মাঝে বিচার করে দেয়া হয়। তারপর সে তার গন্তব্য দেখতে পাবে -হয় জান্নাতের দিকে, না হয় দোযখের দিকে”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৯৮৭]
আনাস বিন মালেক রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَانِعُ الزَّكَاةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي النَّارِ . رواه الطبراني في الصغير: رقم ٩٣٥، و حسنه الألباني في صحيح الجامع : ٥٨٠٧، و قال في صحيح الترغيب والترهيب : رقم ٧٦٢ : حسن صحيح – “যে ব্যাক্তি (তার ধ্বনমালের) যাকাত দিবে না, সে কেয়ামতের দিন দোযখে থাকবে”। [আল-মু’জামুস সাগির, ইমাম ত্বাবরাণী, হাদিস ৯৩৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৬৪]
আসমা বিনতে ইয়াজিদ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- دخَلتُ أنا وخالتي على النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ وعلينا أَسْوِرةٌ مِن ذهَبٍ، فقال لنا: أَتُعْطيانِ زَكاتَه؟ قالتْ: فقُلْنا: لا. قال: أمَا تخافانِ أنْ يُسوِّرَكما اللهُ أَسْوِرةً مِن نارٍ، أَدِّيا زَكاتَه . رواه أحمد في مسنده : ٦/٤٥٥ و ٦/٤٦٠ و٦/٤٦١، و الطبراني : ٢٤/١٧٠ رقم ٤٣١، قال الهيثمي في مجمع الزوائد :٣/٦٧ : رواه أحمد و إسناده حسن، و قال الألباني في صحيح الترغيب والترهيب : رقم ٧٧٠ : صحيح لغيره ، قال الرباعي في فتح الغفار : ٢/٨٠٦ : إسناده حسن – “(একবার) আমি ও আমার খালা গেলাম নবী ﷺ -এর কাছে। তখন আমাদের গলায় ছিল স্বর্ণের গহনা। তখন তিঁনি আমাদেরকে বললেন: ‘তোমরা দুজন কি এর যাকাত আদায় করো’? আমরা বললাম: ‘না’। তিঁনি বললেন: ‘তোমাদের দুজনের কি ভয় হয় না যে, আল্লাহ তোমাদের দুজনের গহনাকে (কেয়ামতের দিন) আগুনের গহনা বানিয়ে দিবেন?! তোমরা দুজন এর যাকাত আদায় করো”। [মুসনাদে আহমদ– ৬/৪৫৫, ৪৬০, ৪৬১; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ২৪/১৭০ হাদিস ৪৩১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৬৭]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করছেন-
وَ لَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُم ۖ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“আর আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে তাদেরকে (রিজিকে স্বচ্ছলতা বাবদ) যা দান করেছেন তাতে যারা বখিলী/কৃপনতা করে, (ধ্বনের যাকাত আদায় করে না), তারা যেন এই ধারনা না করে যে, সেটা তাদের জন্য ভাল (হচ্ছে)। বরং সেটা তাদের জন্য (অচিরেই) মন্দ (পরিণতি নিয়ে আসবে)। যে (ধ্বনসম্পদের) ব্যাপারে তারা বখিলী/কৃপনতা করছে, (সেটা) অচিরেই কেয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে”। [সূরা আল-ইমরান ১৮০]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا ، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ – يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ – ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ، ثُمَّ تَلاَ : ( لَا يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ ) الآيَةَ . رواه البخاري في صحيحه, كتاب الزكاة , باب إثم مانع الزكاة : رقم ١٤٠٣، و غيره – “আল্লাহ (তাআলা) যে ব্যাক্তিকে ধ্বনমাল দান করেছেন, পরে (নেসাবে মালিক হওয়া সত্ত্বেও) সে তার যাকাত আদায় করেনি, কেযামতের দিন তার ধ্বনমালকে তার জন্য (একটি) সাহসী (ফুসলে ওঠা, রাগাহ্নিত) টেকো মাথাওয়ালা সাপের স্বরূপে বানিয়ে দেয়া হবে, যার (দুই চোখের উপরে) থাকবে দুটি কালো দাগ। কেয়ামতের দিন ওই (বিষধর সাপ)টি তার পলায় পেচিয়ে থাকবে। এরপর ওটি তার মুখের দু’পার্শ্বে -তথা তার মুখের দু’কিনারায় (গন্ডদেশের দিকে) -দংশন করতে থাকবে, তারপর বলবে: ‘আমি তোর সম্পদ, আমি তোর সঞ্চিত ধ্বন’। এরপর তিঁনি এই আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন- لَا يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ – ‘যারা বখিলী/কৃপনতা করে, (ধ্বনের যাকাত আদায় করে না), তারা যেন এই ধারনা না করে যে……(শেষ পর্যন্ত)”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ১৪০৩; সুনানে নাসায়ী- ৫/৩৮ হাদিস ২৪৮১; মুআত্তা ইমাম মালেক- ১/২৫৬ হাদিস ২২; মুসনাদে আহমদ– ২/৩৫৫; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৪/১৩৬ হাদিস ৭২২৩]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-يَكُونُ كَنْزُ أَحَدِكُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ ، يَفِرُّ مِنْهُ صَاحِبُهُ ، فَيَطْلُبُهُ وَيَقُولُ : أَنَا كَنْزُكَ ، قَالَ : وَاللَّهِ لَنْ يَزَالَ يَطْلُبُهُ ، حَتَّى يَبْسُطَ يَدَهُ فَيُلْقِمَهَا فَاهُ . رواه البخاري في صحيحه, كتاب الحيل , باب في الزكاة وأن لا يفرق بين مجتمع ولا يجمع بين متفرق خشية الصدقة : رقم ٦٥٥٧، و غيره – “কেযামতের দিন তোমাদের যে কারোর (ধ্বনমাল যার যাকাত আদায় করা হয়নি, সেই) ধ্বনপুঞ্জ (তার জন্য একটি) সাহসী (ফুসলে ওঠা, রাগাহ্নিত) টেকো মাথাওয়ালা সাপ হয়ে যাবে। ওই ব্যাক্তি (সেটাকে দেখে ভয়ে) তার থেকে (এখানে ওখানে) পালাতে থাকবে। ফলে সেটিও (তাকে ধরার জন্য) তার পিছু লেগে থাকবে, আর বলতে থাকবে: ‘(আয়, আমার কাছে আয়), আমি তোমার ধ্বনপুঞ্জ’। তিঁনি (এও) বলেছেন: ‘আল্লাহ’র কসম! ও(ই সাপ)টি তার পিছু নেয়া ছাড়বে না, যাবৎ না সেটি তার হাতকে (মুখ দিয়ে) টেনে ধরে তাকে পুরো গিলে খায়”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৬৫৫৭; সহিফায়ে হাম্মাম– ১/৪৭ হাদিস ৭২; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী- ১০/১১৩ হাদিস ১১১৫২, ১১১৫৩; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ৪/২৮ হাদিস ৬৮৬৩; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৩৮৯; মুসনাদে আহমদ- ২/৫৩০; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ- ৪/১১ হাদিস ২২৫৪]
ছওবান রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- من ترك بعده كنزا مثل له شجاعا أقرع يوم القيامة له زبيبتان ، يتبعه ويقول : من أنت ؟ ويلك . فيقول : أنا كنزك الذي خلفت بعدك فلا يزال يتبعه حتى يلقمه يده فيقضمها ، ثم يتبعه سائر جسده . اخرجه أبو يعلى ، و قال ابن كثير في تفسيره : ١/٤٣٣ : إسناده جيد قوي، و ابن حبان في صحيحه , كتاب الزكاة , باب الوعيد لمانع الزكاة , ذكر وصف عقوبة من خلف كنزا في القيامة : ٨/٣٩، و صححه الألباني في التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان – “যে ব্যাক্তি (যাকাত আদায় না করে) তার পিছনে ধ্বনপুঞ্জ রেখে (মড়ে যাবে), কেযামতের দিন (সেই ধ্বনমালকে) তার জন্য (একটি) ফুসলে ওঠা (রাগাহ্নিত) টেকো মাথাওয়ালা সাপের স্বরূপে বানিয়ে দেয়া হবে, যার (মাথায়) থাকবে দুটি কালো দাগ, যা (তাকে দংশনের উদ্দেশ্যে) তার দিকে ধাবিত হবে। (ভয়ঙ্কর সাপটিকে দেখে) সে বলবে: ‘তোর ধ্বংস হোক, কে তুই’? তখন সাপটি বলবে: ‘আমি তোমার সেই ধ্বনপুঞ্জ, যা তুমি তোমার (দুনিয়ার জীবনে) পিছনে রেখে এসেছিলে’। এরপর (সে সাপটি থেকে ভাগতে আরম্ভ করবে, আর) সেটিও তার পিছু ছাড়বে না, এমনকি শেষ পর্যন্ত ওটি (তাকে ধরে ফেলবে এবং) তার হাতকে কামড়ে ধরবে, তারপর সেটাকে চাবাতে থাকবে। এরপর ওটি (এভাবে) তার গোটা শরীরের (একই) অবস্থা করবে”। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা: তাফসীরে ইবনে কাসীর– ১/৪৩৩; সহিহ ইবনে হিব্বান– ৮/৩৯; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ– ৪/১১ হাদিস ২২৫৫]
আলী বিন আবি ত্বালেব রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-إن الله فرض على أغنياء المسلمين في أموالهم بقدر الذي يسع فقراءهم ، ولن يجهد الفقراء إذا جاعوا وعروا إلا بما يضيع أغنياؤهم ، ألا وإن الله يحاسبهم حسابا شديدا ، ويعذبهم عذابا أليما . رواه الطبراني في الصغير: ١/١٦٢، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٣/٦٢ : رواه الطبراني في الصغير والأوسط و قال : تفرد به ثابت بن محمد الزاهد، قلت : ثابت من رجال الصحيح ، وبقية رجاله وثقوا وفيهم كلام، قال سيد سابق في كتاب فقه السنة : ١/٣٢٨ : قال الحافظ: و ثابت ثقة صدوق، روى عنه البخاري وغيره، وبقية رواته لا بأس بهم – “নিশ্চই আল্লাহ (তাআলা) মুসলমান ধ্বনীদের উপরে তাদের ধ্বনমালের মধ্যে ততটুকু (পরিমাণ সম্পদ যাকাত বাবদ) ফরয করছেন, যতটুকু তাদের ফকির (গরিব-অভাবী)দের জন্য সংকুলান হয়। আর ফকির (গরিব-অভাবী)রা যখন অভুক্ত-ক্ষুধার্থ ও বস্ত্রহীন (অবস্থায়) থেকে কষ্ট পায়, সেটা (পায় মুলত:) তাদের ধ্বনীদের কর্তৃক (যাকাত দানের দায়ীত্ব) নষ্ট করার কারণে। সাবধান! নিশ্চই আল্লাহ (তাআলা কেয়ামতের দিন) তাদের থেকে সুকঠিন হিসাব নিবেন এবং তাদেরকে আযাব দিবেন এক মর্মন্তুদ আযাব”। [আল-মু’জামুস সাগির, ইমাম ত্বাবরাণী- ১/১৬২; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৫৩৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৬২ হাদিস ৪৩২৪]
আনাস বিন মালেক রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَيْلٌ لِلْأَغْنِيَاءِ مِنَ الْفُقَرَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، يَقُولُونَ : رَبَّنَا ، ظَلَمُونَا حُقُوقَنَا الَّتِي فُرِضَتْ لَنَا عَلَيْهِمْ ، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : وَعِزَّتِي وَجَلَالِي ، لَأُدْنِيَنَّكُمْ وَ لَأُبَاعِدَنَّهُمْ ، ثُمَّ تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : { الَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ } . رواه الطبراني في الأوسط , بَابُ الْعَيْنِ مَنِ اسْمُهُ : عُبَيْدٌ : ٥/١٠٨ و في الصغير: رقم ٢٩٣ ، قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٣/٦٢ رقم ٤٣٢٥ : رواه الطبراني في الصغير والأوسط وفيه الحارث بن النعمان وهو ضعيف، و ضعفه الألباني في ضعيف الترغيب والترهيب : رقم ٤٦٣ – “ধনাঢ্যদের জন্য দূর্ভোগ। কেয়ামতের দিন গরিবদের মধ্যে থেকে (কেউ কেউ আল্লাহ’র কাছে অভিযোগ করে) বলবে: ‘হে আমাদের রব! (পৃথিবীর জীবনে) যাদের উপরে আমাদের হক্ব সমূহ আদায় করাকে ফরয (অত্যাবশ্যক) করে দিয়েছিলেন, তারা আমাদের সাথে (সে হক্ব আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন ভাবে) জুলুম (অন্যায়-অবিচার) করেছে’। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন: ‘আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! (আজ) আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আমার নৈকট্য দিবো এবং তাদেরকে অবশ্যই (আমার থেকে) দূরে সরিয়ে দিবো’। এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ তেলাওয়াত করেন- الَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ –“আর যাদের ধ্বনসম্পদের মধ্যে ‘পরিজ্ঞাত হক্ব’ রয়েছে -সায়েল (যাঞ্চাকারী) এবং মাহরুম (বঞ্চিত)-এর জন্য” ”। [আল-মু’জামুল আউসাত, ইমাম ত্বাবরাণী- ৫/১০৮; আল-মু’জামুস সাগির, ইমাম ত্বাবরাণী, হাদিস ২৯৩; মুসনাদে ফিরদাউস, দাইলামী- ৭১৩৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৬২ হাদিস ৪৩২৫; আদ্দুররুল মানসুর, ইমাম সুয়ূতী- ৬/১১৪]
ইমাম আবু উবাইদ রহ. নিজ সনদে আবু দারদা রা.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন- يا أم الدرداء، إن لله سلسلة لم تزل تغلي بها مراجل النار منذ خلق الله جهنم إلى يوم تُلقى في أعناق الناس، وقد نجانا الله من نصفها بإيماننا بالله العظيم، فحُضِّي على طعام المسكين . اخرجه ابو عبيد في الأموال : ١/٣٦٠ رقم ٩٠٢، و اورده جلال الدين السيوطي في الدر المنثور: ٦/٢٦٣، و – “হে উম্মে দারদা! নিশ্চই আল্লাহ’র শিকল রয়েছে। আল্লাহ যখন জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে নিয়ে ওই দিন পর্যন্ত ক্ষনিকের জন্যও সেটাকে (দোযখের) আগুনে উত্তপ্ত করা কখনো বন্ধ হবে না, যে দিন (সেটা) মানুষের গলায় নিক্ষেপীত হবে। আর মহান আল্লাহ’র প্রতি ইমান আনার কারণে আমরা তার অর্ধেক থেকে বেঁচে গেছি, সুতরাং (বাকি অর্ধেক থেকে বাঁচার জন্য) মিসকিনদেরকে খাবার দানের ব্যাপারে (লোকদেরকে) উৎসাহ যোগাতে থাকো”। [আল-আমওয়াল, আবু উবাইদ- ১/৩৬০ হাদিস ৯০২; আদ্দুররুল মানসুর, সুয়ূতী- ৬/২৬৩; ফাতহুল কাদির, শাওকানী- ৫/৩৫৫]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- وَ الَّذِي لَا إِلَهَ غَيْرُهُ لَا يُعَذِّبُ اللَّهُ رَجُلًا يَكْنِزُ فَيَمَسُّ دِرْهَمٌ دِرْهَمًا ، وَ لَا دِينَارٌ دِينَارًا ، وَ لَكِنْ يُوَسِّعُ جِلْدَهُ حَتَّى يُوضَعَ كُلُّ دِرْهَمٍ وَدِينَارٍ عَلَى حِدَتِهِ . ابن أبي شيبة في المصنف : ٧/٤٣ رقم ١٠٨٠٠، لا يكوى رجل بكنز فيمس درهم درهما ولا دينارا يوسع جلده حتى يوضع كل دينار ودرهم على حدته . رواه الطبراني في الكبير ايضا موقوفا بإسناد صحيح، صححه الألباني في صحيح الترغيب والترهيب : رقم ٧٦٦، و الطبري في تفسيره : ٤/٢٣٣ رقم ١٦٦٨٢ و ١٦٦٨٣ – “ওই সত্ত্বার কসম, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহ (তাআলা) এমন ব্যাক্তিকে আযাব দিবেন না, যে (ধ্বনমাল) জমা করে তারপর দেরহামে দেরহামে এবং দীনারে দীনারে নেড়েচেড়ে (ওলটপালট করে) দেখে। তবে (আযাব দিবেন তাকে, যে ধ্বনমালের হক্ব আদায় না করে কেবল) তার চামড়াকে মোটা করতে থাকে, এমনকি (শেষ পর্যন্ত) সকল দেরহাম দীনার (সে) একাই শেষ করে ফেলে, (হক্বদারদেরকে দেয়না)”। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৭/৪৩ হাদিস ১০৮০০; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ৯/১৫০; জামেউল বায়ান, ইমাম তাবারী- ১৪/২৩৩ হাদিস ১৬৬৮২, ১৬৬৮৩; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৩১০ হাদিস ১১৪৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৭২]
ধ্বনমালের যাকাত আদায় না করার পার্থিব পরিণতি
বুরাইদাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ما منع قوم الزكاة إلا ابتلاهم الله بالسنين . رواه الطبراني في المعجم الأوسط : ٥/٢٦، والحاكم والبيهقي ايضا، قال الهيثمى في مجمع الزوائد : ٣/١٥٣ : رواه الطبراني في الأوسط ورجاله ثقات، و قال المنذري في الترغيب والترهيب : ١/٣٠٩ رقم ١١٤٥ : و رواته ثقات، و قال الألباني في صحيح الترغيب والترهيب : رقم ٧٦٣ : صحيح لغيره، و حسنه في السلسلة الصحيحة : ١/١٦٩ – “যে কওমই (জাতি/গোষ্ঠিই) যাকাত (দেয়া) বন্ধ করে দেয়, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই (ফল-ফসলাদির বিনষ্টতা ও খাদ্যসংকটের) দূভিক্ষে জড়িত করে দেন”। [আল-মু’জামুল আউসাত, ইমাম ত্বাবরাণী- ৫/২৬; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৩০৯ হাদিস ১১৪৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/১৫৩]
যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِذَا أَدَّيْتَ زَكَاةَ مَالِكَ فَقَدْ أَذْهَبْتَ عَنْكَ شَرَّهُ . الحاكم في المستدرك : ١/٣٩٠ ، و قال: هذا حديث صحيح على شرط مسلم، ولم يخرجاه , و وافقه الذهبي، و ابن خزيمة في صحيحه :٤/١٣، و الطبراني في الأوسط : ٢/٣٤٧ رقم ١٦٠٢ – “তুমি যখন তোমার ধ্বনমালের যাকাত আদায় করে দিলে, তখন তুমি (মূলত: যাকাত অনাদায়ী থাকলে তোমার উপরে) ওর (যে) অনিষ্টতা (আসার ছিল, তা তুমি) তোমার থেকে দূর করে দিলে”। [মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৩৯০; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ- ৪/১৩ হাদিস ২২৫৮; আল-মু’জামুল আউসাত, ইমাম ত্বাবরাণী- ২/৩৪৭ হাদিস ১৬০২; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ৪/১০৭ হাদিস ৭১৪৫; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৪/৮৪; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৩০১ হাদিস ১১১১]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ . رواه ابن ماجه في سننه, كتاب الفتن , بَاب الْعُقُوبَاتِ : ٢/١٣٣٢ رقم ٤٠١٩ قال البوصيري في إتحاف الخيرة المهرة : ٧/٤٤٥ : سنده رواته ثقات ; و رواه ايضا الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٤٠ و صححه ، و الطبراني في المعجم الأوسط : ٤٦٧١، و الداني في السنن الواردة في الفتن : رقم ٣٢٧ ; و ابن أبي الدنيا في العقوبات : رقم ١١، و حسنه الألباني في السلسلة الصحيحة : ١/١٦٧ و صححه في صحيح الجامع : ٧٩٧٨ – “হে মুহাজিরগণ! পাঁচটি (বিষয় আছে), যখন তোমরা (মুসলমানরা) সেসবে লিপ্ত হয়ে যাবে -আর (বস্তুত:) তোমরা সেগুলোর সাক্ষাত পাও তা থেকে আমি আল্লাহ’র পানাহ চাই। (১) এমন কখনোই হয় না যে, কোনো গোষ্ঠির মধ্যে ফাহেশাহ (অশ্লীলতা/মন্দত্ব) এতটা প্রকাশ পায় যে, শেষমেস তারা তা খোলাখুলিভাবে করতে থাকে, আর তাদের মধ্যে প্লেগ (মহামারী) ও কঠিন ব্যাধি সমূহ ছড়িয়ে না পড়ে, যার ভোগান্তিতে তাদের পূর্বসূরীরা যারা গত হয়েছে তারা কখনো ভোগেনি। (২) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করতে থাকে, আর তাদের উপরে দুর্ভিক্ষ, চরম মাত্রার দুর্দশা ও জালেম সরকার চেপে না বসে। (৩) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা তাদের ধ্বনসম্পদের যাকাত দেয়া বন্ধ করে দেয়, আর আসমানের (রহমতের) বৃষ্টি বন্ধ না হয়ে যায়। (ভূ-পৃষ্ঠে) যদি বাহায়েম (চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী) না থাকতো, তাহলে (যাকাত দেয়া বন্ধ অবস্থায়) বৃষ্টি হত না। (৪) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা আল্লাহ’র সাথে কৃত ওয়াদা এবং তাঁর রাসুলের সাথে কৃত ওয়াদা নষ্ট করে থাকে, আর আল্লাহ তাদের উপরে তাদের বিজাতীয় দুশমনকে চাপিয়ে না দেন। ফলে তাদের (মতো ওয়াদা ভঙ্গকারী গোষ্ঠির) হাতে যা আছে তারা (তাদের থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে) তার কিছু (কেড়ে) নিয়ে নেয়। (৫) এমন (কখনো) হয় না যে, তাদের শাসকরা আল্লাহ’র কিতাব দিয়ে শাসন/বিচার-ফয়সালা করে না এবং আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা তারা অবলম্বন করে নেয় না, আর আল্লাহ তাদের মাঝে বা’সা (আন্ত-দ্বন্দ্ব/কলহ/লড়াই) সৃষ্টি করে না দেন”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ২/১৩৩২ হাদিস ৪০১৯; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৪০; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৬১৭৫; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৪৬৭১; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৩২৭; আল-উকুবাত, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ১১; হিলইয়াহ, আবু নুআইম- ৮/৩৩৩; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ৩/২৯]
ওমর বিন খাত্তাব রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ما تلف مال في بر ولا في بحر إلا بحبس الزكاة . أورده الهيثمي في مجمع الزوائد : ٣/٦٣ : رواه الطبراني في الأوسط وفيه عمر بن هارون وهو ضعيف، و ضعفه الألباني في ضعيف الترغيب والترهيب : رقم ٤٦٨، الحديث له طريق أخرى ، ذكره ابن أبي حاتم في العلل : ١/٢٢٠ : من طريق عراك بن خالد، و بهذا الإسناد أيضا رواه لطبراني في مسند الشاميين : ١/٣٤ رقم ١٨ و ابن عساكر: ٤٠/١٦٤ – “জলে-স্থলে যে ধ্বনমাল নষ্ট-বরবাদ হয়, তা হয় মূলত: যাকাত না আদায় করার কারণে”। [আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৫৪২ হাদিস ৪৬৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৬৩; জামেউল আহাদিস, ইমাম সুয়ূতী- ১৮/৪৯৮ হাদিস ১৯৯৯৪; ফাইজুল কাদীর, মুনাভী- ৫/৫৫৮]
আয়েশা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا خَالَطَتِ الصَّدَقَةُ مَالًا قَطُّ إِلَّا أَهْلَكَتْهُ . رواه البخاري في تاريخه : ١/١٦٠ رقم و قال د. محمد بن عبد الكريم : ص ٤٨٤ رقم ٢١٤: اسناده ضعيف، و الحميدي في مسنده : ١/١١٥ رقم ٢٣٩، و الخطابي في غريب الحديث : ١/٥١٦، أورده الهيثمي في مَجمع الزوائد : ٣/٦٤ ، وأورده المنذري في الترغيب : ١/٥٤٣ و قال : رواه البزَّار والبيهقي ، والتبريزي في المشكاة : ١٧٩٣، و ضعفه الألباني في تمام المنة : ص ٣٥٩ – “যে ধ্বনমালের সাথেই যাকাত (-এর অংশ মিশে) একাকার হয়ে যায়, তা সে(ই ধ্বনমাল)টাকে হালাক্ব-বরবাদ না করে ছাড়ে না”। [তারিখুল কাবীর, ইমাম বুখারী- ১/১৬০; মুসনাদে হুমাইদী- ১/১১৫ হাদিস ২৩৯; গারীবুল হাদীস, ইমাম খাত্তাবী- ১/৫১৬; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৫৪৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৬৪]
যাকাত ধার্য হয় শুধুমাত্র হালাল সম্পদের উপরে; হারামের উপরে নয়
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ
“হে মুমিনগণ! তোমরা তৈয়্যেবাত (হালাল/উৎকৃষ্ট/পবিত্র জিনিস সমূহ) থেকে যা উপার্জন করেছো তা থেকে (আমার নির্দেশ মতো) ব্যয় করো”। [সুরা বাকারাহ ২৬৭]
এই আয়াতে – أَنفِقُوا – (তোমরা ব্যয় করো) বলতে ‘ফরয যাকাত’ ও ‘নাওয়াফির (তথা ফরয যাকাতের বাহিরে অতিরিক্ত ওয়াজিব ও নফল) দান-সদকাহ’ উভয়টিই অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। যেমন ইমাম ইবনে জারির তাবারী রহ. (মৃ: ৩১০ হি:) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন- زكُّوا وتصدقوا – ‘তোমরা যাকাত দাও এবং সদকাহ করো’। [জামেউল বায়ান, ইমাম তাবারী- ৫/৫৫৬] ইমাম আবুল লাইছ সমরকন্দী রহ. (মৃ: ৩৭৩ হি:) বলেছেন- في الآية أمر بالصدقة من الحلال، وفيها دليل: أن من تصدق من الحرام لا يقبل – ‘এই আয়াতে হালাল (মাল ও আয়-উপার্জন) থেকে সদকাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে একথারই দলিল রয়েছে যে, হারাম (মাল ও আয়-উপার্জন) থেকে সদকাহ করলে তা কবুল করা হয় না’। [বাহরুল উলূম, ইমাম সমরকন্দী- ১/২৩১]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أَيُّهَا النَّاسُ ، إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا ، وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ ، فَقَالَ : { يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ } وَقَالَ : { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ } ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ ، يَا رَبِّ ، يَا رَبِّ ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ ؟ رواه مسلم في صحيحه, كتاب الزكاة : رقم ١٠١٥، و غيره – “হে লোকসকল! নিশ্চই আল্লাহ হচ্ছেন পবিত্র (সত্ত্বা); তিঁনি (বান্দার থেকেও) পবিত্র (ও হালাল জিনিস) ছাড়া কবুল করেন না। নিশ্চই আল্লাহ (তাআলা) রাসুলগণকে যে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরকেও (ওই একই বিষয়ের) নির্দেশ দিয়েছেন। তিঁনি বলেছেন- يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ – “হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র (ও হালাল জিনিস) ভক্ষন করো এবং (আমার নির্দেশ মোতাবেক) নেক কাজ করো। নিশ্চই আমি পূর্ণ খবর রাখি (ওই ব্যাপারে যা) তোমরা করে থাকো”। (এই ভাবে) তিঁনি (মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য করে) বলেছেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ – “ওহে যারা ইমান এনেছো! আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র (ও হালাল জিনিস) ভক্ষন করো”। অতঃপর তিনি (ﷺ) এমন এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফর করেছে, (যার কারণে) তার চুলগুলো এলোমেলো ধুলোধুসরীত হয়ে আছে। (এমন বিধ্বস্ত মুহূর্তে) সে তার হাতকে আসমানের দিকে তুলে (কায়মনোবাক্যে আল্লাহকে ডাক দিয়ে বলে): হে (আমার) রব! হে (আমার) রব! (আমার ডাকে সারা দাও)! অথচ তার ভক্ষনকৃত খাবার হারামের, তার পান করা পানীয় হারামের, তার পরিধেয় কাপড় হারামের, হারাম দিয়েই (তার রক্ত-মাংস) লালিতপালিত। এমতাবস্থায় ওই (দোয়া) কি করে কবুল করার আশা করা যেতে পারে!?”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১০১৫; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৯৮৯; সুনানে দারেমী- ২/৩০০; মুসনাদে আহমদ- ২/৩২৮]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَن تَصَدَّقَ بعَدْلِ تَمْرَةٍ مِن كَسْبٍ طَيِّبٍ، ولَا يَقْبَلُ اللَّهُ إلَّا الطَّيِّبَ، وإنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كما يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ . رواه البخاري، في صحيحه , كتاب الزكاة : رقم ١٤١٠، و مسلم في صحيحه : رقم : ١٠١٤ – “যে (মুসলীম) তার পবিত্র (হালাল) উপার্জন থেকে একটা খেজুরের পরিমাণও সদকাহ (দান) করে —আর (একথা জেনে রাখো যে), আল্লাহ পবিত্র (ধ্বনমাল) ছাড়া কবুল করেন না— (তখন) নিশ্চই আল্লাহ সে(ই দান)টাকে তাঁর (কুদরতী) ডান (হাত)-এ নিয়ে নেন, তারপর তিনি সেটাকে তার মালিকের জন্য বড়সড় করে তুলতে থাকেন, যেমনি ভাবে তোমাদের কেউ ঘোড়া-শাবক(কে লালনপালন করে) বড়সড় করে তোলে। এমনকি (একসময়) সে(ই দান)টা (বাড়তে বাড়তে একটা) পাহাড়ের সমান হয়ে যায়”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ১৪১০; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১০১৪ ]
আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إذا أديت الزكاة مالك فقد قضيت ما عليك فيه ومن جمع مالا حراما ثم تصدق به لم يكن له فيه أجر وكان إصره عليه . اخرجه ابن حبان في صحيحه : ٨/١١ رقم ٣٢١٦ و قال شعيب الأرنؤوط: اسناده حسن، و ابن خزيمة في صحيحه : ٤/١١٠ رقم ٢٤٧١ ، و الحاكم في المستدرك , كتاب الزكاة : ١/٣٩٠ ، و البيهقى : ٤/٨٤ رقم ٧٠٣٢، و قال الألباني في صحيح الترغيب والترهيب : رقم ٧٥٢ : حسن لغيره – “যখন তুমি তোমার ধ্বনমালের যাকাত আদায় করে দিলে, তখন তুমি তাতে তোমার উপরে যা (ফরয বাবদ আদায় করার) ছিল, তা আদায় করে দিলে। আর যে ব্যাক্তি হারাম ধ্বনমাল জমা করে, তারপর তা দিয়ে দান-সদকাহ করে, তাতে (আখেরাতে) তার কোনো পুরষ্কার নেই, বরং ও(ই জিনিসে)র (পাপের) বোঝা তারই উপরে (বর্তাবে)”। [সহিহ ইবনে হিব্বান- ৮/১১ হাদিস ৩২১৬; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ- ৪/১১০ হাদিস ২৪৭১; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৩৯০; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৪/৮৪ হাদিস ৭০৩২; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ২/৩৪৬; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৩/৩২০]
মাসআলাহ: হারাম ও নাজায়েয ধ্বনমালের শরয়ী বিধান হল, এর উপার্জনকারী ব্যাক্তি তা সওয়াবের নিয়ত ব্যতীতই গরিব, অভাবী ফকির-মিসকীনদের মাঝে দান করে দিবে। [আল-বাহরুর রায়েক- ৮/২০১; আল-মুহিতুল বুরহানী- ৮/৬৩; আল-ইখতিয়ার- ২/৫৬৮; ফিকহুন নাওয়াযীল- ৩/২৭৫; রাদ্দুল মুহতার- ৬/৩৮৬]
যাকাত ওয়াজিব হয় কেবলমাত্র ধ্বনবান মুসলীম নারী পুরুষের উপরে; অমুসলমের উপরে নয়
মহানবী ﷺ মদিনায় হিজরতের পর যখন ‘খিলাফতী নিজাম’ (ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা) কায়েম করেন, তারপর মক্কার মুশরেকরা বিভিন্ন সময়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু মুশরেকরা যখন ওসব চুক্তি ভঙ্গ করলো, তখন আল্লাহ তাআলা এসকল চুক্তি ভঙ্গকারী বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য নবী ﷺ ও মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়ে বহু আয়াত নাজিল করেছেন, তবে এর সাথে সাথে এও এরশাদ করেন-
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তবে তারা যদি (শিরক থেকে) তওবা করে (আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপরে ইমান আনে) এবং নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তাহলে তারা (হয়ে যাবে) তোমাদের দ্বীনের মধ্যকার (মুসলমান) ভাই। আর আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহকে খুলে খুলে বর্ণনা করি’। [সূরা তাওবাহ ১১]
فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
তবে তারা যদি (শিরক থেকে) তওবা করে (আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপরে ইমান আনে) এবং নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তাহলে (তাদের সাথে যুদ্ধ করো না, বরং বায়তুল হারামে প্রবেশের জন্য) তাদের পথ ছেড়ে দাও, (কারণ, এমতাবস্থায় এখন তারা তোমাদের দ্বীনের মধ্যকার মুসলমান ভাই)। নিশ্চই আল্লাহ (বান্দার প্রতি) ক্ষমাশীল ও দয়ালু’। [সূরা তাওবাহ ৫]
এদিকে ইংগিত করেই এক হাদিসে এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ ، إِلا بِحَقِّ الإِسْلامِ وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ . أخرجه البخاري , كتاب الإيمان, باب فإن تابوا وأقاموا الصلاة : رقم ٢٥ ; و مسلم , كتاب الإيمان : رقم ٣٥ – ‘আমাকে (আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে) হুকুম করা হয়েছে, আমি যেন (মক্কার আল্লাহ বিরোধী ও চুক্তিভঙ্গকারী মুশরেক) লোকদের সাথে কিতাল (স্বসস্ত্র জিহাদ) চালিয়ে যাই, যাবৎ না তারা এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই ও (আমি) মুহাম্মাদ হলাম আল্লাহ’র (সর্বশেষ নবী ও) রাসুল, (এবং যাবৎ না) তারা নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে। যখন তারা তা করবে, তখন তারা আমার থেকে তাদের রক্ত (জীবন) ও ধ্বনসম্পদকে বাঁচিয়ে নিলো -অবশ্য ইসলামের (অন্য কোনো) হক্ব থাকলে ভিন্ন কথা। আর তাদের হিসাব আল্লাহ’র (মর্জির) উপর’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২৫; সহিহ মুসলীম, হাদিস ৩৫; মুসনাদে আহমদ- ২/৩৪৫; সহিহ ইবনে খুযাইমা- ৪/৮ হাদিস ২২৪৮; মুসতাদরাকে হাকিম– ১/৩৮৭]
উপরোক্ত আয়াতে কারিমা দু’টি ও সহিহ হাদিসটি একথার শক্তিশালী দলিল যে, ‘যাকাত’ ফরয হয় মুসলমানের ধ্বনমালের উপরে; কোনো অমুসলীম-কাফেরের ধ্বনমালের উপরে নয়। কারণ, এসকল আয়াত ও হাদিসে কোনো অমুসলীম-কাফের ব্যাক্তি’র ইসলাম গ্রহনকে তখনই গ্রহনযোগ্য ধরা হয়েছে, যখন সে তার কুফরী থেকে তওবা করে ইমান আনবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে, আর এরপরই তারা মুসলমানদের ভাই মুসলীম হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং মুসলমানদের মতোই মুসলীম হিসেবে হেরেমে মক্কায় ঢোকার অনুমতি পাবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ ادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ . رواه البخاري، كتاب الزكاة , باب وجوب الزكاة برقم ١٣٩٥، و مسلم، كتاب الإيمان , باب الدعاء إلى الشهادتين وشرائع الإسلام برقم ١٩; و ابو داود: ١٥٧٤ – ‘নবী ﷺ (যখন) মুয়ায বিন যাবাল রা.-কে ইয়ামেনে (তাঁর অধিনস্ত প্রশাসক বানিয়ে) পাঠালেন, তখন (যাবার আগে তাকে) বললেন: ‘(সেখানে গিয়ে) তাদেরকে এই সাক্ষ্য দানের আহবান জানাবে যে- ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ’র রাসুল’। এব্যাপারে যদি তাদের সারা পাও, তাহলে তাদেরকে জানাবে যে, আল্লাহ তাদের উপরে প্রতি দিন ও রাতে (মিলে মোট) পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। এব্যাপারেও যদি তাদের সারা পাও, তাহলে তাদেরকে জানাবে যে, আল্লাহ তাদের উপরে তাদের ধ্বনসম্পদের মধ্যে (নেসাবের মালিক হওয়া অবস্থায় বছরান্তে) যাকাত ফরয করেছেন। (হে মুয়ায, এমতাবস্থায়) তুমি তাদের ধ্বনী (মুসলমান)দের কাছ থেকে (যাকাত) উসূল করে নিবে এবং তা তাদের অভাবী (মুসলমানদের)দের উপরে (বিধি মোতাবেক) ব্যয় করবে’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ১৩৯৫; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৫৭৪; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৪/১০১; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ১/১২২; মুসনাদে আহমদ- ১/২৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৭৮৩; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ১/৩৩০]
এই হাদিসটিও প্রমাণ করে যে, ইসলাম কবুল করলেই কেবল তার উপরে যাকাত ফরয হওয়ার বিষয়টি আসে। কারণ, যাকাত হল দ্বীন ইসলামের তৃতীয় ভিত্তিস্তম্ভ (যেমনটা উপরের আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে) এবং একটি অপরিহার্য আর্থিক ফরয ইবাদত। আর যে ব্যাক্তি দ্বীন-ইসলামকে তার দ্বীন হিসেবে স্বীকারই করে নেই নি, সেই অমুসলীম-কাফেরের উপরে ইসলামের কোনো ফরয ইবাদত আরোপিত হতে পারে না। এজন্য, মুসলীম উম্মাহ’র পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ওলামায়ে কেরামের এব্যাপারে ইজমা (ঐকমত্যতা) রয়েছে যে, যাকাত শুধুমাত্র একজন মুসলীমের উপরে ফরয হয়; কোনো অমুসলীম-কাফেরের উপরে নয়। [আল-মাজমু, ইমাম নববী- ৫/২২৬; আল-মুগনী মাআ শারহিল কাবীর- ২/৪৯৪; বাদায়েউস সানায়ে, ইমাম কাসানী- ২/৭৯; আদ্দুররুল মুখতার, হাসকাফী- ২/২৫৯; রাদ্দুল মুহতার, শামী- ২/৫]
আলোচনার বাকি অংশ দেখার জন্য এখানে >>>ক্লিক করুন>>>
অথবা
ফরয যাকাত : [পৃষ্ঠা ১] , [পৃষ্ঠা ২] , [পৃষ্ঠা ৩] , [পৃষ্ঠা ৪ (অসম্পূর্ণ)] , [পৃষ্ঠা ৫] , [পৃষ্ঠা ৬ (অসম্পূর্ণ)] , [পৃষ্ঠা ৭ (অসম্পূর্ণ)]