Uncategorized

করোনা ভাইরাস মহামারী – ইসলামী দিক নির্দেশনা – কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে

করোনা ভাইরাস মহামারী – ইসলামী দিক নির্দেশনা –  কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে 

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

[উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস সমূহের অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]

 

করোনা ভাইরাস corona virusআজ ২০২০ ইং সালের মার্চ মাসে বসে যখন এই লেখাটি লিখছি, তখন গোটা বিশ্ব “COVID-19 (কোভিড-১৯)” বা করোনা ভাইরাস মহামারী’তে চরম ভাবে আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে আছে। কারণ, ১৮৫ টি দেশে তা দ্রুতই ছড়িয়ে গেছে এবং মৃত্যুর হারও আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে দিনকে দিন। ফলে সকলের চোখের সামনে মৃত্যুর ভয়, ‘কখন না জানি আমার পালা আসে’। মহামারী বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞ চিকিৎসক থেকে অবশ্যই পরামর্শ নিয়ে এসকল মহামারীতে আক্রান্ত হওয়া থেকে যতদূর সম্ভব বাঁচার চেষ্টা করুন, অন্যকে সচেতন করুন। তবে মুসলীম হিসেবে সর্বাগ্রে জেনে নিন ইসলামী দিকনির্দেশনা। নিম্নে সংক্ষেপে এ বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করা হল। 

সর্ব প্রথমে মহান আল্লাহ তাআলা’র কাছে পূর্বেকার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং বড় বড় পাপ ও অপরাধ থেকে জাতীয় ভাবে তওবা করুন 

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

 “মানুষ (যেসকল পাপ ও অপরাধ উপর্যপুরি) উপার্যন করেছে, তার কারণেই স্থলভাগে ও সমূদ্রভাগে ফ্যাসাদ (বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়) আত্বপ্রকাশ করেছে। (মানুষের কর্মের সাথে প্রকৃতির এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থাপনা এজন্য রাখা হয়েছে) যাতে তারা যা করছে তিঁনি তাদেরকে (তাদের সেই কৃতকর্মের পার্থিব পরিণতির) কিছুটা আস্বাদন করাতে পারেন। (এতে) হয়তো তারা (তাঁর পথে) ফিরে আসবে”। [সূরা আর-রূম ৪১]

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:–  إِذَا ظَهَرَ الزِّنَا وَالرِّبَا فِي قَرْيَةٍ، فَقَدْ أَحَلُّوا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللَّهِ . أخرجه الطبراني في المعجم الكبير : ١/١٧٨ رقم ٤٦٠ ، و الحاكم فى المستدرك : ٢/٣٧ ، و صححه الألباني في صحيح الجامع : رقم ٦٧٩ – “যখন কোনো নগরে জেনা-ব্যাভিচার ও সূদ আত্বপ্রকাশ করে, তখন মূলত: তারা নিজেদের উপরে আল্লাহ’র আযাবকে হালাল করে নেয়”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী– ১/১৭৮ হাদিস ৪৬০; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ২২৬১]

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا ‏.‏ وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ ‏.‏ وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ ‏.‏ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ . رواه ابن ماجه في سننه, كتاب الفتن , بَاب الْعُقُوبَاتِ : ٢/١٣٣٢ رقم ٤٠١٩ قال البوصيري في إتحاف الخيرة المهرة : ٧/٤٤٥ : سنده رواته ثقات ; و رواه ايضا الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٤٠ و صححه ، و الطبراني في المعجم الأوسط : ٤٦٧١، و الداني في السنن الواردة في الفتن : رقم ٣٢٧ ; و ابن أبي الدنيا في العقوبات : رقم ١١، و حسنه الألباني في السلسلة الصحيحة : ١/١٦٧ و صححه في صحيح الجامع : ٧٩٧٨ – “হে মুহাজিরগণ! পাঁচটি (বিষয় আছে), যখন তোমরা (মুসলমানরা) সেসবে লিপ্ত হয়ে যাবে -আর (বস্তুত:) তোমরা সেগুলোর সাক্ষাত পাও তা থেকে আমি আল্লাহ’র পানাহ চাই। (১) এমন কখনোই হয় না যে, কোনো গোষ্ঠির মধ্যে ফাহেশাহ (অশ্লীলতা/মন্দত্ব) এতটা প্রকাশ পায় যে, শেষমেস তারা তা খোলাখুলিভাবে করতে থাকে, আর তাদের মধ্যে প্লেগ (মহামারী)কঠিন ব্যাধি সমূহ ছড়িয়ে না পড়ে, যার ভোগান্তিতে তাদের পূর্বসূরীরা যারা গত হয়েছে তারা কখনো ভোগেনি। (২) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করতে থাকে, আর তাদের উপরে দুর্ভিক্ষ, চরম মাত্রার দুর্দশা ও জালেম সরকার চেপে না বসে। (৩) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা তাদের ধ্বনসম্পদের যাকাত দেয়া বন্ধ করে দেয়, আর আসমানের (রহমতের) বৃষ্টি বন্ধ না হয়ে যায়। (ভূ-পৃষ্ঠে) যদি বাহায়েম (চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী) না থাকতো, তাহলে (যাকাত দেয়া বন্ধ অবস্থায়) বৃষ্টি হত না। (৪) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা আল্লাহ’র সাথে কৃত ওয়াদা এবং তাঁর রাসুলের সাথে কৃত ওয়াদা নষ্ট করে থাকে, আর আল্লাহ তাদের উপরে তাদের বিজাতীয় দুশমনকে চাপিয়ে না দেন। ফলে তাদের (মতো ওয়াদা ভঙ্গকারী গোষ্ঠির) হাতে যা আছে তারা (তাদের থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে) তার কিছু (কেড়ে) নিয়ে নেয়। (৫) এমন (কখনো) হয় না যে, তাদের শাসকরা আল্লাহ’র কিতাব দিয়ে শাসন/বিচার-ফয়সালা করে না এবং আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা তারা অবলম্বন করে নেয় না, আর আল্লাহ তাদের মাঝে বা’সা (আন্ত-দ্বন্দ্ব/কলহ/লড়াই) সৃষ্টি করে না দেন”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ২/১৩৩২ হাদিস ৪০১৯; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৪০; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৬১৭৫; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৪৬৭১; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৩২৭; আল-উকুবাত, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ১১]

বস্তুত: যে কোনো বিপদ ও বালা মুসিবত আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসে -হয় পরীক্ষা হিসেবে, না হয় আজাব ও সতর্ক সংকেত হিসেবে, না হয় রহমত হিসেবে। তাই, যে কোনো বান্দার কর্তব্য সর্ব প্রথমে আল্লাহ তাআলার সামনে ঝুঁকা, পাপ ও অপরাধের জন্য কেঁদে কেঁদে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া এবং পূর্বের অপরাধ পূণরায় না করার পাক্কা তওবা করা।

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

وَ مَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا

 “আর আমরা কেবল ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই নিদর্শনাদি পাঠিয়ে থাকি”। [সূরা বনী-ইসরাঈল ৫৯]

وَ مَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

 “আর (হে নবী মুহাম্মাদ!) তারা (তাদের পাপ ও অপরাধকে উপলব্ধি করে আল্লাহ’র কাছে) ক্ষমা চাইতে থাকবে -এমতাবস্থায় আল্লাহ তাদের প্রতি আযাব দানকারী(র পরিচয় দিবেন, এমনটা কখনো) হবে না”। [সূরা আনফাল ৩২]

وَ يَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَ يَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَ لَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ

 “আর (নবী হূদ তার জাতি আদ’কে উদ্দেশ্য করে বললো:) হে (আমার) জাতি! তোমরা (সকলে) তোমাদের রব (আল্লাহ তাআলা)’র কাছে (তোমাদের কৃত পাপ ও অপরাধের জন্য) ক্ষমা চাও, তারপর তাঁর কাছে তওবা করো (যে, পূণরায় জেনে বুঝে ওসব পাপ ও অপরাধ আর করবে না। তাহলে) তিঁনি তোমাদের উপরে আসমান (থেকে) মুষলধারে (রহমতের) বৃষ্টি বর্ষন করবেন, আর তিঁনি তোমাদের (বিদ্যমান) শক্তি-সামর্থের উপরে (আরো অতিরিক্ত) শক্তি-সামর্থ বৃদ্ধি করে দিবেন। আর তোমরা (গোয়ার ও দাম্ভীক) অপরাধীদের মতো মুখ ফিরিয়ে নিও না”। [সূরা হূদ ৫২]

যে সকল বড় বড় পাপ ও অপরাধ থেকে মানুষকে জাতীয় ভাবে তওবা করতে হবে

পাপ/অপরাধ থেকে তওবা করার অর্থ হল ওই পাপ/অপরাধকে আল্লাহ’র নাফরমানী মনে করে তা বাদ দিয়ে পবিত্র জীবনের দিকে ফিরে আসা। নিম্নোক্ত বড় বড় পাপ/অপরাধগুলো থেকে দেশের প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী খাঁটি তওবা করুন:-

(১) কুফরী বিশ্বাস ও চেতনাগত তওবা: শিরক এবং সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), সোসালিজম (সমাজতন্ত্র), কমিউনিজম ইত্যাকার বিভিন্ন কুফরী আক্বীদা বিশ্বাস ও চেতনাগুলোর মুখে লাথি মেড়ে তা থেকে খাঁটি তওবা করে ইসলামী বিশ্বাস ও চেতনার দিকে ইমানের দিকে ফিরে আসুন।

(২) ফরয ইবাদতের জন্য তওবা: সালাত (নামায), যাকাত, সিয়াম (রোযা), হজ্জ ইত্যাদি সর্বসম্মত ফরয ইবাদতগুলোর মধ্যে যার যতটুকু ভ্রুক্ষেপহীনতা বা অবহেলা রয়েছে তা পরিহার করে আল্লাহ’র অনুগত্যের উপরে স্থির থাকার খাঁটি তওবা করুন।

(৩) কুফরী সংবিধান থেকে তওবা: দেশের কর্ণধারদের দ্বারা প্রণিত কুফরী ও পথভ্রষ্ঠ সংবিধান পরিপূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শরয়ী সংবিধানের দিকে ফিরে আসার খাঁটি তওবা করুন।

(৪) কুফরী রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে তওবা: গোটা অনৈসলামীক কুফরী রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে পরিপূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবস্থা’র দিকে ফিরে আসার খাঁটি তওবা করুন।

(৫) কুফরী বিচারব্যবস্থা থেকে তওবা: দেশের গোটা কুফরী ও পথভ্রষ্ঠ বিচারব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শরয়ী বিচারব্যবস্থা’র দিকে ফিরে আসার খাঁটি তওবা করুন।

(৬) হক্কুল ইবাদ নষ্ট থেকে তওবা: নষ্টকৃত এমন হক্কুল ইবাদ (তথা বান্দার হক্ব) যার কারণে কবীরাহ গোনাহ হয়, তা থেকে খাঁটি তওবা করুন। (এক্ষেত্রে মাতা-পিতার হক্ব, স্ত্রী-সন্তানের হক্ব, আত্বীয় স্বজনের হক্ব, পাড়া প্রতিবেশির হক্ব, মুসলমানের হক্ব, অমুসলীমের হক্ব ইত্যাদি বিভিন্ন হক্ব অন্তর্ভূক্ত রয়েছে)।

(৭) হারাম অর্থব্যবস্থা থেকে তওবা: সূদ, জুয়া ও প্রতারনা নির্ভর যাবতীয় হারাম ও নাজায়েয অর্থ ব্যাবস্থাকে পরিপূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শরয়ী অর্থব্যবস্থা’র দিকে ফিরে আসার খাঁটি তওবা করুন। (ব্যাক্তিগত সূদ, ব্যাংক সূদ, ব্যাক্তিগত জুয়া, বীমা নির্ভর জুয়া, ব্যাক্তিগ ও প্রতিষ্ঠানীক ধোকা প্রতারণা নির্ভর সকল প্রকার লেনদেন ও তাতে চাকুরী থেকে তওবা এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে)।

(৮) বেপর্দা বেহায়াপনা থেকে তওবা: বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও বেপর্দা জীবনকে পরিপূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শরয়ী পর্দাব্যবস্থা’র দিকে ফিরে আসার খাঁটি তওবা করুন।

এসকল বড় বড় পাপ/অপরাধকে সামষ্টিগত ভাবে পরিত্যাগ করার অন্তত: প্রাথমিক খাঁটি তওবা করে আল্লাহ তাআলা’র সামনে নিজ নিজ অন্তরটাকে খুলে পেশ করতে পারলে হয়তো তিঁনি আমাদের অন্তরগুলোকে স্ক্যান করে ‘কুফরী ভাইরাস মুক্ত’ অবস্থায় দেখতে পেলে একটা নতুন পবিত্র জীবনের সুযোগ দিতেও পারেন। তখন আযাব উঠিয়ে নেয়ার কান্নাকাটিতে কাজ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যথায়, বড় বড় পাপ/অপরাধগুলোকে বাদ দেয়ার কোনো লক্ষন না থাকা, আর এদিকে ক্ষমা ও আযাব মুক্তির জন্য চোখ ভাসিয়ে বুক ফাটিয়ে মায়া-কান্না’র নাটক দেখানোতে কী ফায়দা?!  

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا – وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

 “আল্লাহ’র উপরে কেবলমাত্র তাদের তওবা(কেই গ্রহন করার বিষয়টি বর্তায়) যারা গোনাহ করে ফেলে অজ্ঞতাভুল বসত:, তারপর যত তাড়াতাড়ি হয় তারা (ওই গোনাহ থেকে) তওবা করে নেয়। বস্তুত: ওরাই তারা যাদের উপরে আল্লাহ ফিরে তাকান (তাদের তওবা কবুল করা জন্য)। আর আল্লাহ মহা জ্ঞানী এবং মহাবিজ্ঞ, (তিঁনি ভাল করেই জানেন, কার পাপ/অপরাধ ও তওবার কী হাক্বিকত)। আর তাদের জন্য কোনো তওবা নেই, যারা পাপ/অপরাধ সমূহ করে যেতে থাকে, এমনকি (অবশেষে) যখন তাদের কারোর কাছে মৃত্যু এসে পৌছে, তখন বলে: নিশ্চই আমি এখন তওবা করছি। আর না তাদের (তওবা গ্রহন করা হবে হবে), যারা কাফের হয়ে মড়ে। ওরাই তারা যাদের জন্য আমরা সুকঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছি”। [সূরা নিসা ১৭, ১৮]

إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ

 “নিশ্চই আল্লাহ কোনো গোষ্ঠি’র অবস্থা (তত দিন পর্যন্ত) পরিবর্তন করে দেন না, যাবৎ না তারা (পাপ ও অপরাধ থেকে তওবা করে) নিজেরাই নিজেদের (বদ অবস্থাকে নেক আমলের দ্বারা) পরিবর্তন করে নেয়। আর আল্লাহ যখন কোনো গোষ্ঠিকে মন্দ (অবস্থা) তে (ফেলতে) ইচ্ছে করেন, তখন তা বাঁধাদানকারী (দ্বিতীয় আর) কেউ থাকে না, আর না তাদের জন্য (সেই মন্দ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি দানকারী হিসেবে) তিঁনি ছাড়া (অন্য কোনো) অভিভাবক থাকে”। [সূরা রা’দ ১১]

 

এসকল মহামারী ও বালা মুসিবত উঠয়ে নেয়ার জন্য সকলে হাত তুলে দোয়া করতে থাকুন 

যে কোনো বিপদ ও বালা মুসিবত আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসে -হয় পরীক্ষা হিসেবে, না হয় আজাব ও সতর্ক সংকেত হিসেবে, না হয় রহমত হিসেবে। তাই, যে কোনো বান্দার কর্তব্য সর্ব প্রথমে আল্লাহ তাআলার সামনে ঝুঁকা, তাঁরই কাছে দোয়া করা।

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

 وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ 

“আর তোমাদের রব/প্রভু (আল্লাহ তাআলা) বলেন: ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো’। নিশ্চই যারা আমার ইবাদত (দোয়া ও আহবান) করা থেকে দাম্ভীকতা প্রদর্শন করে (মুখ ফিরিয়ে রাখে), তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। [সূরা আল-মু’মিন ৬০]

নু’মান বিন বাশির রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন-  أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : إن الدعاء هو العبادة، ثم قرأ: ﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ . رواه أحمد في المسند : ٤/٢٦٧ و ٢٧١، و أبو داود : ٢/٧٦ رقم ١٤٧٩ و و صححه الألباني في صحيح سنن أبي داود : ١٣٢٩ ، و الترمذي : ٥/٢١١ رقم ٢٩٦٩ و قال : حديث حسن صحيح ، و النسائي في الكبرى : ٦/٤٥٠ رقم ١١٤٦٤ ، و ابن ماجه : ٢/١٢٥٨ رقم ٣٨٢٨ ، و البخاري في الأدب المفرد : رقم ٧١٤ ، – “রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেননিশ্চই (আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাকা ও তাঁর কাছে) দুয়া (করাই) ইবাদত (-এর মুখ্য বিষয়)’। এরপর তিনি তেলাওয়াত করেন- وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ – “আর তোমাদের রব/প্রভু (আল্লাহ তাআলা) বলেন: ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো’। নিশ্চই যারা আমার ইবাদত (দোয়া ও আহবান) করা থেকে দাম্ভীকতা প্রদর্শন করে (মুখ ফিরিয়ে রাখে), তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। [মুসনাদে আহমদ- ৪/২৬৭, ২৭১; সুনানে আবু দাউদ- ২/৭৬ হাদিস ১৪৭৯; সুনানে তিরমিযী- ৫/২১১ হাদিস ২৯৬৯; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী- ৬/৪৫ হাদিস ১১৪৬৪; সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১২৫৮ হাদিস ৩৮২৮; আদাবুল মুফরাদ, বুখারী- ৭১৪]

আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:-إِنَّهُ مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ . أخرجه البخاري في الأدب المفرد :   ٢/١١٤ و حسنه الألباني كما في صحيح سنن الترمذي برقم ٢٦٨٤ و في صحيح الأدب المفرد : ٥١٢ و في السلسلة الصحيحة : رقم ٢٦٥٤ ، واخرجه ايضا الترمذي في سننه , كتاب الدعوات عن رسول الله صلى الله عليه وسلم : ٣٣٧٣، ، و ابن ماجه في سننه : ٣٨٢٧ ، و الحاكم فى المستدرك : ١/٤٩١ و صححه و وافقه الذهبي ، و أحمد في مسنده : ٢/٤٤٢  – “নিশ্চই যে ব্যাক্তি আল্লাহ’র কাছে চায় না, তিঁনি তার উপরে রাগাহ্নিত হন”। [আদাবুল মুফরাদ, বুখারী- ২/১৪৪; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৩৭৩; মুসনাদে আহমদ- ২/৪৪২; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৪৯১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৮২৭]

আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেন-

وَ إِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَ لْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

 “আর (হে নবী মুহাম্মাদ!) আমার (কোনো) বান্দা যখন তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জানতে চায়, তখন (তাকে জানিয়ে দিও ,) নিশ্চই আমি (তার) নিকটেই (আছি)। (তাকে জানিয়ে দিও) আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখনই সে (আমাকে কায়মনোবাক্যে) ডাক দেয়। তাই তাদেরও উচিৎ আমার ডাকে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপরে ইমান আনা (যখনই আমি তাদেরকে তোমার মাধ্যমে আমার মনোনীত দ্বীন ইসলামের দিকে যাক দেই)। (এতে করে) হয়তো তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে”। [সূরা বাকারাহ ১৮৬]

আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:ليسَ شيءٌ أكرمَ علَى اللهِ من الدُّعاءِ . رواه الترمذي في ‏سننه : رقم ٣٣٧٠ ، و ابن ماجة في ‏سننه : رقم ٣٨٢٩، و أحمد في مسنده : ٨٧٤٨، و الحاكم فى المستدرك , كتاب الدعاء والتكبير والتهليل والتسبيح والذكر : و صححه و وافقه الذهبي ، حسنه الألباني في صحيح سنن الترمذي : ٣/١٣٩ و في صحيح الترغيب : ١٦٢٩ – “আল্লাহ’র কাছে দুয়া’র চাইতে অধিক সম্মানীত আর কিছু নেই”। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৩৭০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৮২৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৭৪৮; মুসতাদরাকে হাকিম– ১/৪৯০]

সব থেকে খুশির খবর হল, বান্দার দোয়া তার উপরে নির্ধারিত তাকদীর কার্যকর হওয়া থেকে রেহাই দেয়, ফলে এমনও হয় যে সে নতুন করে জীবন ও সুযোগ পেয়ে যায়। যেমন, সালমান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:–  لا يَرُدُّ الْقَدَرَ إلا الدُّعَاءُ . أخرجه الترمذي في ‏سننه, كتاب القدر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم , باب ما جاء لا يرد القدر إلا الدعاء : ٤/٤٤٨ رقم ٢١٣٩، و أحمد في مسنده : ٥/٢٧٧ ، و ابن ماجه في ‏سننه : رقم ٩٠، و الطبراني في المعجم الكبي : ٦/٢٥١ رقم ٦١٢٨، و حسنه الألباني في صحيح الجامع : رقم ٧٦٨٧  – “কেবল দুয়াই পারে তাক্বদীরকে ঠেঁকাতে”। [সুনানে তিরমিযী-৪/৪৪৮ হাদিস ২১৩৯; মুসনাদে আহমদ- ৫/২৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৯০; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৬/২৫১ হাদিস ৬১২৮]

 

রোগ ব্যাধি, মহামারী ও বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তার দোয়া  

নিম্নের যে দোয়াটি বা দোয়াগুলি আপনার সহজ মনে হয়, নিয়মিত পাঠ করুন।
 
(১) খাওলাহ বিনতে হাকিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:سمعت رَسُولِ الله -صلى الله عليه وسلم -يقَولَ: «مَنْ نَزَلَ مَنْزِلاً فقَالَ أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ لَمْ يَضُرّهُ شيءٌ حَتّى يَرْحَلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ . رواه مسلم في صحيحه ‏: ٤/٢٠٨٠ رقم ٢٧٠٨ – “আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি: যে (মুসলমান) কোনো মঞ্জিল/স্থানে গিয়ে পৌছে (এই কথাগুলো) বলে- أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ – (আঊযু বি-কালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা), কোনো কিছুই তার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না -যাবৎ না সে ওই মঞ্জিল/স্থান থেকে (অন্য কোথাও) চলে যায়”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৭০৮]
 
ফায়দা: আপনি মহামারীর ডাক্তার হিসেবে রোগীর কাছে যাওয়ার আগেই তার এলাকায় ঢোকার পর এই দোয়াটি অন্তত: ১ বার পড়বেন, তাহলে সেই এলাকাটির ভিতরে যতক্ষন থাকবেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ’র কোনো মাখলুক (চাই করোনা ভাইরাস বা অন্য কোনো মহামারীই হোক না কেনো) আপনার কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আবার যখন আপনার বাড়িতে ফিরে আসবেন, তখনও এই দোয়াটি অন্তত: ১ বার পড়ে নিবেন, তাহলে আপনার এলাকার ভিতরে যতক্ষন থাকবেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ’র কোনো মাখলুক আপনার কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। কত ছোট্ট আমল, কিন্তু কত বড় ফায়দা ! কেউ ছাড়বেন না এই আমলটিকে। আমলটি যে কেউ করতে পারেন। তবে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে পড়বেন যে, কেয়ামত হয়ে গেলেও আল্লাহ’র রাসুলের কথা মিথ্যা হবে না।
 
দোয়াটি আরবীতে: أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ
 
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): ‘আঊযু বি-কালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা’।
 
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: ‘আল্লাহ’র পরিপূর্ণ  কালেমা সমূহের অসিলায় আমি আশ্রয় চাচ্ছি ওই জিনিসের ক্ষতি/অনিষ্টতা থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন’
 
(২) উসমান বিন আফফান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-مَنْ قَالَ : بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُصْبِحَ ، وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ ، لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُمْسِيَ . رواه أبو داود في سننه : ٥٠٨٨ ; و صححه الألباني في ” صحيح أبي داود   – “যে (মুসলমান সন্ধায়) তিন বার বলে- بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ – (বিসমিল্লাহিল্লাজি লাা ইয়া যুররু মায়া’ ইসমিহি শাইযুন ফিল আরদ ওয়া লাা ফিস-সামা, ওয়া হুওয়াস সামিউল আলিম), তাকে সকাল হওয়া(র আগ) পর্যন্ত কোনো আকষ্মিক/অনাকাঙ্খিত বালা-মুসিবত স্পর্শ করতে পারবে না। আর যে (মুসলমান) তা সকালে তিনবার বলে, তাকে সন্ধা হওয়া(র আগ) পর্যন্ত কোনো বালা-মুসিবত স্পর্শ করতে পারবে না”[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫০৮৮] 
 
ফায়দা: দোয়াটি আরবীতে: بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

 
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লাা ইয়া যুররু মায়া’ ইসমিহি শাইযুন ফিল আরদ ওয়া লাা ফিস-সামা, ওয়া হুওয়াস সামিউল আলিম
 
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: “সেই আল্লাহ’র নামে, যাঁর নামের সাথে না জমিনে না আসমানে কোনো কিছু ক্ষতিসাধন করতে পারে। আর তিনি হলের সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ”।
 
(৩) আনাস বিন মালেক রা. -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এরশাদ করেন- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ ‏: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ . رواه أبو داود في سننه، أبواب الوتر، باب في الاستعاذة، برقم ١٥٥٤ ، والنسائي، كتاب الاستعاذة، باب الاستعاذة من الجنون، برقم ٥٤٩٣، والطيالسي، ص ٢٦٨، وأحمد : ٢٠/٣٠٨ رقم ١٣٠٠٤ ، وابن حبان : ٣/٢٩٥ برقم ١٠١٧ ، والحاكم : ١/٧١٢، وأبو يعلى : ٥/٢٧٧ برقم ٢٨٩٧ ، والطبراني في الصغير: ١/١٩٨ ، و صححه الألباني في صحيح أبي داود : ٥/٢٧٦ و في صحيح الجامع الصغير برقم ١٢٨١ – “নবী ﷺ বলতেন: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ – (আল্লহুম্মা ইন্নি আঊযু বিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল যুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন সাইয়্যেইল আসক্বাম)”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৫৫৪; সহিহ ইবনে হিব্বান- ৩/২৯৫ হাদিস ১০১৭; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৫৪৯৩; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৭১২; মুসনাদে তায়ালিসী– ২৬৮ পৃ:; মুসনাদে আহমদ– ২০/৩০৮ হাদিস ১৩০০৪; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ৫/২৭৭ হাদিস ২৮৯৭]

ফায়দা: দোয়াটি আরবীতে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ

 
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): আল্লহুম্মা ইন্নি আঊযু বিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল যুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন সাইয়্যেইল আসক্বাম
 
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই – শ্বেতরোগ থেকে, পাগল হওয়া ও গোদরোগ থেকে এবং বিভিন্ন অনিষ্টকর (রোগব্যাধি) থেকে”।
 
(৪) আব্দুল্লাহ বিন খুবাইব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন:خَرَجْنَا فِي لَيْلَةِ مَطَرٍ، وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ، نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلـم لِيُصَلِّيَ لَنَا، فَأَدْرَكْنَاهُ، فَقَالَ: «أَصَلَّيْتُمْ؟» فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، فَقَالَ: «قُلْ»، فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: «قُلْ»، فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: «قُلْ»، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «قُلْ: ﴿ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد ﴾، وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ، حِينَ تُمْسِي وَحِينَ تُصْبِحُ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ . رواه أبو داود في سننه , كتاب الأدب , برقم ٥٠٨٢ ، و حسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود – “আমরা (একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ না পেয়ে) বৃষ্টি-পড়া রাত ও ঘনকালো অন্ধকারের মধ্যে রাসুলুল্লাহ ﷺকে খুঁজতে বেড় হলাম, যাতে তিনি আমাদেরকে (নিয়ে) নামায পড়াতে পারেন। পরে আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমরা কি নামায পড়েছো’? আমি তখন কিছুই বললাম না। তখন তিনি বললেন ‘বলো’। তখনও আমি কিছু বললাম না। তিনি আবারও বললেন ‘বলো’। তখনও আমি কিছু বললাম না। তিনি আবারও বললেন ‘বলো’। তখন আমি বললাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কী বলবো’? তিনি বললেন: সন্ধা ও সকালে তিন বার করে ‘বলো قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد (তথা সুরা ইখলাস) এবং মুআউইযাতাইন (তথা সুরা ফালাক ও সুরা নাস)। (এই সুরা তিনটি) সকল কিছুর পক্ষ থেকে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫০৮২]
 
ফায়দা: সকল প্রকারের মাখলুকের ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকার ক্ষেত্রে এটি মুমিনদের জন্য খুবই শক্তিশালী ও দ্রুত কার্যকরী একটি আমল। ফজর ও মাগরীব নামাযের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস ৩ বার করে পড়ে নিবেন, (এই দুই সময়ে পড়ার পরে শরীরে দম করার কথা কোনো হাদিসে পাইনি)।
 
তবে রাসুলুল্লাহ ﷺ রাতে ঘুমানোর আগেও এই তিনটি সুরা ১ বার করে পাঠ করে তারপর হাতে দম করে সারা শরীরে ফিরাতেন এবং এভাবে ৩ বার করতেন মর্মে হাদিসে এসেছে। যেমন, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন:- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلـم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ، ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا، فَقَرَأَ فِيهِمَا ﴿ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد ﴾ و﴿ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَق ﴾ و﴿ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاس ﴾، ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ، يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ، وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ، يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ . رواه البخاري في الصحيح برقم ٥٠١٧  – “নবী ﷺ প্রতি রাতে যখন বিছানায় শয্যা গ্রহন করতেন, তখন তাঁর দু (হাতের) তালুকে (চেহারার সামনে একত্রে) লাগিয়ে নিতেন, তারপর قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد (তথা সুরা ইখলাস), قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَق (তথা সুরা ফালাক্ব) এবং قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاس (তথা সুরা নাস) পাঠ করে (ওই) দুই (তালু)’তে ফুঁ দিয়ে। অত:পর (হাতের ওই তালু) দুটিকে তিনি যতখানি পারেন তাঁর শরীরে মাসেহ করে নিতেন। (এক্ষেত্রে দেখেছি,) তিনি (তাঁর হাতের তালু) দু’টিকে তাঁর মাথা ও মুখ থেকে শুরু করতেন এবং তাঁর শরীরের সামনের (বাকি অংগ গুলোর) দিকে নিয়ে যেতেন। তিনি এভাবে তিনবার করতেন”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৫০৮২]
 
উকবাহ বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন:- بَيْنَا أَنَا أَسِيرُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الْجُحْفَةِ، وَالْأَبْوَاءِ، إِذْ غَشِيَتْنَا رِيحٌ ، وَظُلْمَةٌ شَدِيدَةٌ ، فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَعَوَّذُ بِأَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَأَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ، وَيَقُولُ: يَا عُقْبَةُ ، تَعَوَّذْ بِهِمَا فَمَا تَعَوَّذَ مُتَعَوِّذٌ بِمِثْلِهِمَا . رواه أبو داود في سننه , كتاب الوتر : ١٤٦٣ , و صححه الألباني في صحيح أبي داود ; رواه ايضا الطحاوي في شرح مشكل الآثار : ١٢٧ ، والطبراني : ١٧/٣٤٥ رقم ٩٥٠   – “আমি (একদিন) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে ‘জুহফাহ’ ও ‘আবওয়া’র মাঝ দিয়ে হাটছিলাম। এমন সময় (প্রবল) বাতাস ও ঘনকালো অন্ধকার আমাদেরকে ছেঁয়ে নিলো। রাসুলুল্লাহ ﷺ তখন أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (তথা সুরা ফালাক) এবং أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (তথা সুরা নাস)-এর মাধ্যমে (আল্লাহ তাআলার কাছে) আশ্রয় চাইলেন এবং (আমাকে) বললেন: ‘হে উকবাহ! তুমি এই দুই (সুরা)-এর সাহায্যে (আল্লাহ’র কাছে) আশ্রয় চাও। কারণ, কোনো আশ্রয়প্রার্থি এই দুই-এর অনরূপ (অধিক ফলপ্রশু কোনো কিছু)র দ্বারা (আল্লাহ’র কাছে) আশ্রয় চাইতে পারেনি”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৪৬৩; শারহু মাআনিল আছার, ত্বাহাবী- ১২৭; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১৭/৩৪৫ হাদিস ৯৫০; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদিস ৪০৫০]
 
(৫) আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সন্ধ্যায় উপনীত হতেন ও সকালে উপনীত হতেন, তিনি এই দোয়াগুলো পড়া বাদ দিতেন না:- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي – (অর্থ: হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি— দুনিয়া ও আখেরাতের। হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি— আমার দ্বীনদারি ও দুনিয়ার, আমার পরিবার ও সম্পদের। হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় পরিণত করে দিন। হে আল্লাহ্‌! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের উসীলায় আশ্রয় চাই আমি নীচ থেকে আকস্মিক আক্রান্ত হওয়া থেকে)”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫০৭৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৮৭১]
 
 

করোনা ভাইরাস মহামারী সংক্রামিত লোকালয় থেকে কেউ বের হবে না, তথায় বাহির থেকেও কেউ প্রবেশ করবে না – কোয়ারেন্টাইনে থাকুন

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

  وَ لَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ 

“আর তোমরা তোমাদের নিজ হাতে (নিজেদেরকে) ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না”। [সূরা বাকারাহ ১৯৫]

  وَ لَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ 

“আর তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করো না”। [সূরা নিসা ২৯]

আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন-  لا ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ . رواه ابن ماجه , كتاب: الأحكام , باب من بنى في حقه ما يضر بجاره : رقم ٢٣٤١، و الدارقطني و غيرهما مسندًا، حديث حسن و حديث مشهور عند أهل العلم ، و صححه الألباني في غاية المرام : ٦٨ – “(কারোর) ক্ষতি (করা জায়েয) নয় এবং ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াও জায়েয নয়”। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৩৪১; সুনানে দ্বারেকুতনী- ২/২২৮]

উসামা বিন যায়েদ রা. সা’দ রা.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَدْخُلُوهَا وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا . رواه البخاري في الصحيح، كتاب الطب , باب ما يذكر في الطاعون : ٥/٢١٦٣ رقم ٥٣٩٧ و غيره ايضا – “তোমরা যখন কোনো এলাকায় প্লেগ (মহামারী)র কথা শুনতে পাও, তখন সেখানে তোমরা ঢুকবে না। আর তোমরা যে এলাকায় থাকাবস্থায় তা সংঘটিত হবে, তখনও তোমরা সেখান থেকে বের হবে না”। [সহিহ বুখারী– ৫/২১৬৩ হাদিস ৫৩৯৭; সুনানল কুবরা, বাইহাকী- ৩/৫২৭ হাদিস ৬৫৫৯]

আয়েশা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الطَّاعُونِ، فَأَخْبَرَنِي : أَنَّهُ عَذَابٌ يَبْعَثُهُ اللَّهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ، وَأَنَّ اللَّهَ جَعَلَهُ رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِينَ، لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُونُ، فَيَمْكُثُ فِي بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ، إِلَّا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيدٍ . أخرجه البخاري، كتاب أحاديث الأنبياء , باب حديث الغار : ٤/١٧٥ رقم ٣٤٧٤  – “আমি রাসুলুল্লাহ -কে প্লেগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি আমাকে জানালেন যে, (ওটা মূলত: একটা) আযাব, আল্লাহ সেটাকে (যখন) যার উপরে চান পাঠিয়ে দেন। আর আল্লাহ ওটাকে মুমিনদের জন্য রহমত (স্বরূপ) বানিয়েছেন। এমন কেউ নেই যার প্লেগ হয়, তখন সে সওয়াবের আশা নিয়ে ধৈর্যের সাথে তার লোকালয়ে থাকে, সে জানে যে, আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন সেটাই শুধু তার সাথে ঘটবে, তার পুরষ্কার হবে (আল্লাহ’র রাস্তায়) শহিদের (পুরষ্কারের) অনুরূপ”।  [সহিহ বুখারী– ৪/১৭৫ হাদিস ৩৪৭৪; ৫৭৩৪]

উসামা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন- الطَّاعُونُ رِجْسٌ أُرْسِلَ عَلَى طَائِفَةٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ، أَوْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ، فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ، وَ إِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ، وَ أَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا، فِرَارًا مِنْهُ . أخرجه البخاري، كتاب أحاديث الأنبياء , باب حديث الغار : ٤/١٧٥ رقم ٣٤٧٣، و رواه غيره ايضا – “প্লেগ হল পঙ্কিলময় (একটি রোগ, যা ইতিপূর্বে) বণী-ইসরাঈলের একটি গোষ্ঠির উপরে কিংবা তাদের পূর্বে যারা ছিল (তাদের কোনো কোনো গোষ্ঠির উপরে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে আযাব বা সতর্ক সংকেত হিসেবে) পাঠানো হয়েছিল। তাই, তোমরা যখন কোনো এলাকায় সে সম্পর্কে শুনতে পাও (যে, সেখানে প্লেগ হয়েছে), তখন তোমরা তার ধারের কাছেও অগ্রসর হবে না। আর তোমরা যে এলাকায় থাকাবস্থায় তা সংঘটিত হবে, তখনও তোমরা সেখান থেকে বের হয়ে পালাবে না”।  [সহিহ বুখারী- ৪/১৭৫ হাদিস ৩৪৭৩; সহিহ মুসলীম- ৪/১৭৩৬ হাদিস ২২১৮; মুসনাদে আহমদ- ১/১৮২]

আমর থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এরশাদ করেন-  كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ . أخرجه مسلم في , كتاب السلام , باب اجتناب المجذوم ونحوه : ٤/١٧٥٢ رقم ٢٢٣١ و ايضا غيره – “সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের মধ্যে এক ব্যাক্তি ছিল কুষ্ঠরোগী (যারা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাতে বায়াত হতে এসেছিল)। রাসুলুল্লাহ ﷺ (তাকে দেখতে পেয়ে) তার কাছে লোক পাঠিয়ে (জানালেন যে), আমরা (দূর থেকেই) তোমাকে বায়াত করে নিয়েছি, তুমি ফিরে যাও”। [সহিহ মুসলীম– ৪/১৭৫২ হাদিস ২২৩১; মুসনাদে আহমদ- ৪/৩৮৯; সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১১৭২ হাদিস ৩০৪৪; সুনানে নাসায়ী- ৭/১৫০ হাদিস ৪১৮২; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ– ৫/১৪১ হাদিস ২৩৫৩২]

ফায়দা: এই জাতীয় আয়াত ও হাদিসাবলি থেকে প্রমাণিত হয়:-

(১) যে লোকালয়ে করোনা ভাইরাসের মহামারী দেখা দিয়েছে, সেই লোকালয়ের কোনো ব্যাক্তি লোকালয় ছেড়ে বের হবে না।

(২) করোনা ভাইরাসের মহামারীতে আক্রান্ত লোকালয়ের বাহিরে অবস্থিত সুস্থ কোনো ব্যাক্তি সেই আক্রান্ত লোকালয়ে প্রবেশ করবে না।

(৩) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তি নিজ গৃহের সংরক্ষিত ঘরেই ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করবে। সে মসজিদে যাবে না, জুমআ’র জামাতেও নয়, ঈদের জামাআতে কিংবা জানাযার নামাযের জামাআতেও সে শরিক হবে না। কারণ, লোকজনের জামাআতে শরিক হলে তার কারণে সুস্থ ব্যাক্তির এই মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এবং পারে তার জীবন হুমকীর মুখে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আবু মুসা আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন-  إِذَا مَرِضَ العَبْدُ أَوْ سَافَرَ ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا . رواه البخاري في صحيحه : رقم ٢٩٩٦ – “যখন কোনো বান্দা রোগাক্রান্ত হয় কিংবা সফর করে (যার কারণে সে প্রত্যাহিক নিয়মিত আমলগুলো ঠিক মতো যথাযথভাবে আদায় করতে পারে না), তার জন্য -মুক্বীম সুস্থ অবস্থায় সে যে আমল করতো তার অনুরূপ (সওয়াব) লিখে দেয়া হয়”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২৯৯৬]

(৪) করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবেব সময় দেশ, শহর, গ্রামগঞ্জ কিংবা সাধারণ লোকালয়ে ‘পাবলিক গ্যাদারিং’ হয় -এমন সকল প্রকারের উৎসব, অনুষ্ঠান, সমাগম, কর্মক্ষেত্র অনুষ্ঠিত করা জায়েয হবে না এবং পাবলিকের মাঝেও সচেতনতা বাড়াতে হবে যাতে তারা এসব সমাগমে কেউ অংশ গ্রহন না করে। যেমন:-

(ক) বিয়েশাদি, জন্মদিন, মৃত্যুদিবস, কুলখানি দিবস ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট উৎসব/অনুষ্ঠানাদি;

(খ) আঞ্চলিক বা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান;

(গ) জাতীয় উৎসব, জাতীয় শোক দিবস বা কোনো জাতীয় অনুষ্ঠান পালন -যেগুলোতে একাধিক লোক সমাগম হওয়া অবধারিত সেসব উৎসব/অনুষ্ঠানাদি;

(ঘ) সরকারী বা বেসরকারী চাকুরী ক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্র -যেগুলোতে একাধিক লোক সমাগম হওয়া অবধারিত তা বন্ধ রাখতে হবে, একাধিক লোক সমাগম হয়ে করোনা ভাইরাস ছড়াতে না পারে। যেমন: এয়ারলাইন্স, ব্যাকং, বীমা, কোম্পানী, আদালত, গার্মেন্টস ইত্যাদি সব কর্মক্ষেত্র;

(ঙ) মার্কেট, সুপার মার্কেট, হাট, বাজার, দোকানপাট ইত্যাদি; (শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় জরুরী বিষয় যেমন খাবার, ঔষধ ইত্যাদির দোকানগুলোর অনুমতি দেয়া যেতে পারে -সম্ভাব্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার সাথে)।

(চ) জাতীয় টিভি চ্যানেলে জনসচেতনতা মূলক জরুরী খবর/মেসেজ দেয়ার সুবাদে প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান করার কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে তা সম্পাদন করতে দেয়ার সুব্যবস্থা করা। বাদ বাকি দেশের সকল বেসরকারী টিভি চ্যানেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখতে হবে, যাতে ওদের অফিস ও অনুষ্ঠান ক্ষেত্রগুলোতে একাধিক লোক সমাগম হয়ে আবার করোনা ভাইরাস ছড়াতে না পারে।…. ইত্যাদি 

দেশের সরকার যদি ‘করোনা ভাইরাস সংকট’কে উপক্ষো করে উপরোক্ত অপ্রয়োজনীয় উৎসব বা অনুষ্ঠান গুলোতে শরিক হতে বলে, তবে তা মুসলমানরা মানতে বাধ্য নয়, বরং এক্ষেত্রে সরকারের কথা মানা জায়েযও নয়। যেমন, সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলীম সহ বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবে হযরত আলী রা.-এর সূত্রে উক্ত ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে, যার সারমর্ম হল, কোনো কারণে মুজাহিদ গণের উপর তাদের আমীর (হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযাফা বিন কায়েস বিন আদী রা.) খুব ক্রধাহ্নিত হয়ে যান এবং তাদেরকে বলেন: أَلَيْسَ أَمَرَكُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُطِيعُونِي – ‘নবী ﷺ কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেননি যে, তোমরা আমার অনুগত্য করবে’? এতে তারা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলে তিনি তাদেরকে জ্বালানী কাঠ জোগার করতে বললেন। তারা জোগার করে নিয়ে এলে তিনি তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে আগুনে ঝাপ দিতে বললেন। কিন্তু তারা তার আদেশ মানতে অস্বীকার করে এবং বিষয়টি পরে রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে জানায়। ঘটনা শুনে রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا أَبَدًا ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي المَعْرُوفِ – ‘যদি তোমরা তাতে প্রবেশ করতে, তাহলে আর কখনই তা থেকে বেড়ুতে পারতে না। অনুগত্য শুধুমাত্র মা’রুফ (জায়েয) বিয়য়ে (করতে হয়); (আল্লাহ’র নাফরমানীমূলক কোনো কাজে নয়)’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১৪৫, ৪৩৪০; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৮৪০; মুসনাদে আহমদ-১/৮২; মুসনাদে বাযযার- ২/২০৩, হাদিস ৫৮৫; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৭/৬৫৫; তাফসীরে ইবনে কাসির- ২/৪৯৭]

 

মহামারী থেকে মুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নিন

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

  وَ لَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ 

“আর তোমরা তোমাদের নিজ হাতে (নিজেদেরকে) ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না”। [সূরা বাকারাহ ১৯৫]

  وَ لَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ 

“আর তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করো না”। [সূরা নিসা ২৯]

উসামা বিন শারিক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-  قَالَتْ الأَعْرَابُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَلا نَتَدَاوَى ؟ قَالَ : نَعَمْ ، يَا عِبَادَ اللَّهِ تَدَاوَوْا ، فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلا وَضَعَ لَهُ شِفَاءً ، إِلا دَاءً وَاحِدًا ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا هُوَ ؟ قَالَ : الْهَرَمُ . رواه الترمذي في سننه : رقم ٢٠٣٨، و صححه الألباني في صحيح الترمذي “(একবার) বেদুইনরা (রাসুলুল্লাহ ﷺকে) জিজ্ঞেস করলো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! (রোগ হলে) আমরা কি চিকিৎসা করবো না’? তিনি বললেণ: ‘হ্যাঁ। হে আল্লাহ’র বান্দারা, তোমরা চিকিৎসা করো। কারণ, নিশ্চই আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেন নি, যার নিরাময়ক সৃষ্টি না করেছেন -শুধুমাত্র একটি রোগ ছাড়া’। তারা জিজ্ঞেস করলো: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! কী সেটা’? তিনি বললেন: ‘বার্ধক্য’। [সুনানে তিরযিমী, হাদিস ২০৩৮; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদিস ৭৫৫৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৪৩৬]

যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন- لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ ، فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ . رواه مسلم في صحيحه , كتاب السلام , باب لكل داء دواء واستحباب التداوي: رقم ٢٢٠٤، و ابن حبان في صحيحه : رقم ٦٠٦٣، والنسائي في السنن الكبرى : رقم ٧٥٥٦ ، و أحمد في مسنده : ٣/٣٣٥ – “প্রত্যেক রোগের নিরাময়ক (ঔষধ/প্রতিষেধক) রয়েছে। বস্তুত: যখন কোনো রোগের নিরাময়ক (ঔষধ/প্রতিষেধক) প্রয়োগ করা হয়, তখন সে আল্লাহ আযযা ওয়া যাল্লা’র অনুমতি ক্রমে (ওই রোগ থেকে) মুক্তি লাভ করে”। [সহিহ মুসলীম- ৪/১৭২৯ হাদিস ২২০৪; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬০৬৩; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদিস ৭৫৫৬; মুসনাদে আহমদ– ৩/৩৩৫]

# আমর বিন শুআইব রহ. তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- مَنْ تَطَبَّبَ وَلَمْ يُعْرَفْ مِنْهُ طِبٌّ فَهُوَ ضَامِنٌ . رواه أبو داود , كتاب الديات : رقم ٤٥٨٦ ; و النسائي : رقم ٤٨٣٠ ; و ابن ماجه : رقم ٣٤٦٦ ، وفي إسناده كلام ، و حسَّنه الألباني في سنن أبي داود – “যে ব্যাক্তি (কারোর) চিকিৎসা করে, অথচ সে তার (রোগের) চিকিৎসা জানে না, সেক্ষেত্রে (রোগীর কোনো ক্ষতি হলে) সেই (চিকিৎসাকারীই) দায়ী”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৫৮৬; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৪৮৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৪৬৬]

ফায়দা: এই জাতীয় আয়াত ও হাদিসাবলি থেকে প্রমাণিত হয়:-

(১) করোনা ভাইরাসের মতো এজাতীয় প্রাণঘাতী মহামারী থেকে জীবন বাঁচানোর সম্ভাব্য চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ ও সামর্থ থাকলে এর চিকিৎসা নেয়া ফরয, অপরদিকে চিকিৎসা না নিয়ে জীবনকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়া হারাম। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কেয়ামতের দিন আত্বহত্যাকারী রূপে আল্লাহ’র সামনে দাড়াতেও হতে পারে। আত্বহত্যাকারী ব্যাক্তি চির জাহান্নামী। কাজেই, অযথা বেশি ধর্মীয় আবেগ দেখাতে গিয়ে নিজের আখেরাত বরবাদ করবেন না। যথাসম্ভব চিকিৎসা নেয়াই শরীয়তের হুকুম।

(২) বিশেষ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই কেবল ওই রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করার হক্বদার।

(৩) হাতুড়ে ডাক্তার কিংবা চিকিৎসক নয় -এমন সাধারণ অজ্ঞ/ অনভিজ্ঞ ব্যাক্তির জন্য নিজে নিজে কোনো রোগীর চিকিৎসা করা জায়েয নয়, বস্তুত: এটা চিকিৎসার নামে প্রতারণার শামিল।

(৪) কোনো রোগীর জন্যও কোনো হাতুড়ে ডাক্তার কিংবা চিকিৎসক নয় -এমন সাধারণ অজ্ঞ/ অনভিজ্ঞ ব্যাক্তির কাছে চিকিৎসা করানোও জায়েয নয়, কারণ জেনেবুঝে শরীরের মতো আল্লাহ’র প্রদত্ত একটি মুল্যবান আমানতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা জায়েয নয়। 

 

যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই পড়েন কিংবা আক্রান্ত হওয়ার আশংকাজনক লক্ষন দেখা দেয় তাহলে কী দোয়া পড়বেন 

উম্মে সালমাহ রা. রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏:‏ مَا مِنْ مُسْلِمٍ تُصِيبُهُ مُصِيبَةٌ فَيَقُولُ مَا أَمَرَهُ اللَّهُ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا ‏.‏ إِلاَّ أَخْلَفَ اللَّهُ لَهُ خَيْرًا مِنْهَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ قُلْتُ أَىُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ مِنْ أَبِي سَلَمَةَ أَوَّلُ بَيْتٍ هَاجَرَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ ثُمَّ إِنِّي قُلْتُهَا فَأَخْلَفَ اللَّهُ لِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَتْ أَرْسَلَ إِلَىَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَاطِبَ بْنَ أَبِي بَلْتَعَةَ يَخْطُبُنِي لَهُ فَقُلْتُ إِنَّ لِي بِنْتًا وَأَنَا غَيُورٌ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ أَمَّا ابْنَتُهَا فَنَدْعُو اللَّهَ أَنْ يُغْنِيَهَا عَنْهَا وَأَدْعُو اللَّهَ أَنْ يَذْهَبَ بِالْغَيْرَةِ ‏. رواه مسلم في صحيحه , كتاب الجنائز , باب ما يقال عند المصيبة ‏: ٢/٦٣٢ رقم ٩١٨ ;  – ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি: যে মুসলমানই কোনো মুসিবতের সম্মুখীন হয়, তারপর আল্লাহ তাকে (এসব ক্ষেত্রে) যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন (তা পালনার্থে) বলে-: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ, (তারপর আরো বলে:) اللَّهُمَّ أْجُرْنِى فِى مُصِيبَتِى وَأَخْلِفْ لِى خَيْرًا مِنْهَا , (তখন) আল্লাহ তার জন্য ওর চাইতে উত্তম/মঙ্গলজনক (কিছু দিয়ে অবস্থা) পরিবর্তন করে দেন। উম্মে সালমাহ রা. বলেন: (আমার স্বামী) আবু সালমাহ যখন মাড়া যান, তখন আমি (মনে মনে) বললাম: আবু সালমা -যিনি (মক্কার) প্রথম ঘর (-এর সদস্য হিসেবে) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে (মদিনায়) হিজরত করেছিলেন- তার চাইতে আর কোন মুসলমান (আমার জন্য) অধিক উত্তম/মঙ্গলজনক হতে পারে! (যা হোক) অত:পর আমি ওই (দোয়া)টি পড়লাম। পরে আল্লাহ আমার জন্য (আবু সালমা’র) পরিবর্তে (তার চাইতে উত্তম স্বামী হিসেবে) দিলেন (খোদ্) রাসুলুল্লাহ ﷺকে। তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ হাত্বিব বিন আবি বালতাআহ-কে আমার কাছে পাঠালেন, যিনি (আমার কাছে এসে) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য আমার কাছে (বিয়ের) পয়গাম রাখলেন। তখন আমি বললাম: ‘(এটা তো মহা সুসংবাদ। তবে) আমার (আগের স্বামীর পক্ষ থেকে আমার গর্ভজাত একটি) মেয়ে আছে এবং (আমার একটি স্বভাবগত অপছন্দনীয় বিষয় এই যে) আমি (একটু বেশি) গায়রতমন্দ/অাত্বমর্যাদাবোধী (নারী, যার কারণে আমার ভয় হয়, আমি আবার রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে কোনো অনাকাঙ্খিত আচরণ করে বসে আমার ইমান আমল নষ্ট করে ফেলি কিনা)’। এতে রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘তোমার ওই কন্যার জন্য আমরা আল্লাহ’র কাছে দোয়া করছি, যাতে সে তার ওই অবস্থা থেকে পূর্ণ-পরিত্রান পায়। আল্লাহ’র কাছে আমি (এও) দোয়া করছি, যাতে তিনি (তোমার ওই মাত্রাতিরিক্ত) গায়রতমন্দ (স্বভাবটি) দূর করে দেন”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৮১৯; সুনানে আবু দাউদ- ৩/৪৮৮ হাদিস ৩১১৯]
 
ফায়দা: এটি আমার বহু পরীক্ষিত একটি আমল। ছোট বড় যে কোনো বিপদ আপদ ও বালা মুসিবতের সময় আমি এই দোয়াটি পড়েছি এবং অভাবনীয় ফায়দা পেয়েছি, বারবার উপকৃত হয়েছি এবং আল্লাহ আমাকে ওই মুসিবতের পরিবর্তে যা দিয়েছেন তাতে শুধু বলতে হয় -আল-হামদু-লিল্লাহ। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হল রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাণীর উপরে সন্দেহমুক্ত পর্যাপ্ত বিশ্বাস এবং সবর (ধৈর্য), এরপর ইনশাআল্লাহ আপনি নিজ চোখেই দেখতে পাবেন আল্লাহ’র রহমত।
 
দোয়াটি আরবীতে: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ , اللَّهُمَّ أْجُرْنِى فِى مُصِيبَتِى وَأَخْلِفْ لِى خَيْرًا مِنْهَا
 
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিঊন। আল্লহুম্মা, আযিরনী ফি মুসিবাতি, ওয়া আখলিফলী খাইরাম মিন হা’।
 
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: ‘নিশ্চই আমরা আল্লাহ’র (বান্দা) এবং নিশ্চই আমরা (এক দিন না একদিন) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ, আমাকে আমার (এই) মুসিবত থেকে মুক্তি দাও এবং আমার জন্য ওটির চাইতে উত্তম/মঙ্গলজনক (কিছু) দ্বারা পরিবর্তন এনে দাও’
 
সা’দ বিন আবি ওয়াককাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- دعوة ذي النون إذ هو في بطن الحوت { لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين } فإنه لم يدع بها مسلم ربه في شيء قط إلا استجاب له . رواه أحمد في مسنده : ٢/٢١٧ رقم ٤٦٢ : و قال أحمد شاكر : : إسناده صحيح ; رواه ايضا الترمذي في سننه : رقم ٣٥٠٥ ; و قال المنذري في الترغيب والترهيب : ٢/٣٩٥ و ٣/٥٩ : إسناده صحيح أو حسن أو ما قاربهما ; و حسنه ابن حجر في الفتوحات الربانية : ٤/١١ و في تخريج مشكاة المصابيح في المقدمة : ٢/٤٣١ ; و صححه الألباني في صحيح ; و أبو يعلى في مسنده: رقم ٧٧٢ ; و النسائي في اليوم والليلة : ٦٥٥ ,٦٥٦ ، و الطبراني في الدعاء : ١٢٤ ، و الحاكم : ١/٥٠٥ , ٢/٣٨٢ , ٥/٥٠١، و البيهقي في الشعب : ٦٢٠  – “(নবী) যুন্নুন (তথা হযরত ইউনূস আ.)-এর দোয়া, যা তিনি (তিমি) মাছের পেটে (থাকাবস্থায় বলেছিলেন, তথা) لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ – (লাা ইলাাহা ইল্লাা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন), এমন কোনো মুসলীম ব্যাক্তি নেই যে এর মাধ্যমে তাঁর রবের কাছে কোনো ব্যাপারে দোয়া করেছে, আর তিঁনি তার ডাকে সারা দেন নি”[মুসনাদে আহমদ– ২/২১৭ হাদিস ১৪৬২; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৫০৫; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ২/১১০ হাদিস ৭৭২; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৫০৫, ২/৩৮২, ৫/৫০১; আদ-দুআ, ইমাম তাবরাণী- ১২৪; শুয়াবুল ইমান, বাইহাকী- ১/৪৩২ হাদিস ৬২০; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ৪৫/৩৮ হাদিস ৯৮৪২] 
 
ফায়দা: যে কোনো বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত ও সমস্যায় এই দোয়াটি খুবই শক্তিশালী ও কার্যকরী পরীক্ষিত একটি আমল।  করোনা ভাইরাসের সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখে বেশি বেশি এই দোয়া কায়মনোবাক্যে পাঠ করতে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে, ইনশাআল্লাহ। দরকার সবর ও একনিষ্ঠ ভাবে আমলটি করতে থাকা।

 
দোয়াটি আরবীতে: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
 
দোয়াটি’র বাংলা উচ্চারণ (দ্রুত আরবীতে শিখে নিবেন): লাা ইলাাহা ইল্লাা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন
 
দোয়াটি’র বাংলা অর্থ: ‘(হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। তুমি (সকল দোষ-ত্রুটি থেকে) পবিত্র। নিশ্চই আমি জুলুমকারীদের মধ্যে একজন’

 

পার্থিব ছোট ছোট আযাবে আক্রান্ত কওম/জাতি/গোষ্ঠি সময় থাকতে পাপ ও অপরাধ থেকে তওবা করে নেক জীবন অবলম্বন না করলে কপালে আরো বড় আযাবের অপেক্ষায় থেকো

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াতে ফেরাউন ও তাঁর অনুসারী কওমের আলোচনা করেছেন, যারা মিশরের জমিনে বড় বড় পাপ ও অপরাধ উপর্যপুরি করে যাওয়ার কারণে সময়ে সময়ে তাদের উপরে ব্যাপক ভাবে ছোট ছোট আযাব নাজিল করে সতর্ক করা হচ্ছিল, যাতে তারা তওবা করে। কিন্তু তাদের খাসলতে যখন কোনো পরিবর্তন এলো না, বরং তারা জমিনে উদ্ধত্ব্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে দিলো, তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে চিরজীবনের জন্য দুনিয়া থেকেই বিদায় করে দিলেন। 

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ – فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوا لَنَا هَٰذِهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوا بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُ ۗ أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِندَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ – وَقَالُوا مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِ مِنْ آيَةٍ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ – فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آيَاتٍ مُّفَصَّلَاتٍ فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُّجْرِمِينَ – وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ الرِّجْزُ قَالُوا يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ ۖ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِي إِسْرَائِيلَ – فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الرِّجْزَ إِلَىٰ أَجَلٍ هُم بَالِغُوهُ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ – فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ – وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُوا ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ 
“আর আমরা ফেরাউনের (অনুগত অনুসারী গোষ্ঠির) লোকদেরকে (তাদের উপর্যপুরি জুলুম ও অবাধ্যতার কারণে) পাকড়াও করেছিলাম দুর্ভিক্ষ ও ফল-ফসলের (ব্যাপক) ক্ষতি’র দ্বারা, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে (ও সতর্ক হয়)। (কিন্তু তাতেও তাদের অবস্থা এই হত যে,) পরে যখন তাদের কাছে ভাল (সময় আসতো, তখন) তারা বলতো: ‘আমাদের জন্য এটাই (হওয়া উচিত)’। আর তারা যখন মন্দ (অবস্থা)’র সম্মুখীন হত, (তখন) তারা (নিজেদের অপরাধকে আড়াল করে সেই মন্দ অবস্থার যাবতীয়) অশুভতার দোষ দিতো মূসা ও তাঁর অনুগত্যকারীদেরকে। শুনে রাখো, তাদের (উপরে আগত এসব) অশুভতা(র প্রকৃত জ্ঞান) আল্লাহ’র কাছে রয়েছে (যে, তা কী অপরাধের কারণে আপতীত করা হয়েছিল), কিন্তু (তাদের) অধিকাংশই (তা) জানতো না। আর তারা (মুসাকে) বলতো: ‘আমাদেরকে তা দিয়ে জাদুগ্রস্থ করার জন্য নিদর্শনের যা কিছুই তুমি আমাদের কাছে নিয়ে আসো না কেনো, আমরা তোমার (আহবানের বিষয়বস্তুর) উপরে ইমান আনবো না’। ফলে (তাদের জালেমানা সিদ্ধান্ত যখন এই, তখন পার্থিব আযাব হিসেবে) আমরা তাদের উপরে পাঠালাম তুফান, যারাদ (পঙ্গপাল/টিড্ডি), কুম্মাল (ছাড়পোকা/উকুন জাতীয় পোকা), ব্যাঙ এবং রক্তকে সুস্পষ্ট নিদর্শন রূপে। তখন(ও দেখা গেল) তারা (তওবা করার পরিবর্তে উল্টো স্ব-অবস্থার থাকার উপরে) অহঙ্কার দেখালো, আর তারা ছিল (আসলে একটা) অপরাধকারী জাতি, (জুলুম ও অপরাধ পরিত্যাগ করার মনমানুসিকতা তাদের ছিল না)। আর তাদের উপরে যখন কোনো শাস্তি আপতিত হত, (তখন) তারা বলতো: ‘হে মূসা! তুমি তোমার (যে প্রভুর দিকে আমারেকে ডাকো, সেই) প্রভুর কাছে –তিনি তোমার কাছে যে ব্যাপারে অঙিঘকার করেছেন তার অসিলায়– আমাদের জন্য দোয়া করো, (যাতে এই শাস্তিটি আমাদের উপরে থেকে সরে যায়)। যদি তুমি আমাদের থেকে শাস্তিটি সরিয়ে দাও, তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার (আহবানের বিষয়বস্তুর) উপরে ইমান আনবো এবং আমরা অবশ্যই তোমার সাথে বণী-ইসরাঈলকে পাঠিয়ে দিবো। পরে আমরা যখন তাদের উপর থেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত শাস্তিটিকে হটিয়ে দিতাম -যে পর্যন্ত তাদের পৌছানো অবধারিত ছিল, তখন তারা (তাদের মূল মনমানুসিকতায় ফিরে গিয়ে) অঙ্ঘিকার ভঙ্গ করতো। ফলে আমরা তাদের থেকে বদলা নিলাম, পরে তাদেরকে আমরা  (চুড়ান্ত ভাবে পাকড়াও করে) সমূদ্রে ডুবিয়ে দিলাম -এজন্য যে তারা আমাদের নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং তারা সেই ব্যাপারে ছিল গাফেল (ভ্রুক্ষেপহীন)। আর (অপরদিকে) যাদেরকে দূর্বল করে রাখতে চাওয়া হত, আমরা (সেই) গোষ্ঠিকে (ফেরাউন ও তার অনুগত গোষ্ঠির স্থলে ওই অঞ্চলের)  ওয়ারিস (উত্তরাধিকারী) বানালাম, (যার) পূর্ব ও পশ্চিমের ভূমিতে আমরা বরকত রেখেছি। আর (এভাবে) বনী-ইসরাঈলের উপরে তোমার প্রভুর কল্যানময় বাণী (ও ওয়াদা) পূর্ণতা পেল -একারণে যে তারা সবর করেছিল। আর ফেরাউন ও তার জাতি যা বানাত ও চড়াত আমরা তা ধ্বংস করে দিলাম”। [সূরা আ’রাফ ১৩০-১৩৭]

দেখুন, নবী মুসা আ. ও নিপিড়িত নির্যাতিত দূর্বল বনী-ইসরাঈলকে চিরদিনের জন্য দনিয়া থেকে বিদায় করার উদ্দেশ্যে মড়িয়া হয়ে পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে শেষমেস সমূদ্রে ডুবেই ফেরাউনের মড়ন হয়েছিল। আর আল্লাহ তাআলা এই ওয়াদা করেছিলেন যে-  فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً – {সুতরাং, (হে ফেরাউন) আজ তোমার দেহকে রক্ষা করবো (পুরোপুরি পঁচে-গলে বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে), যাতে তোমার পরবর্তীতে যে (বা যারা আসবে, তাদের জন্য শিক্ষা গ্রহনের একটা) নিদর্শন (হয়ে থাকো)। আর নিশ্চই মানুষের মধ্যে বহুলোক আমাদের নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে অবশ্যই গাফেল(তী ও ভ্রুক্ষেপহীনতা প্রদর্শন করে থাকে; শিক্ষা গ্রহন করে না)}”। [সূরা ইউনুস ৯০-৯২] কখনো কি ভেবে দেখেছেন, দীর্ঘ প্রায় ৩২০০ বছর ফেরাউনের মমীকৃত লাশ ‘শবাধার’-এ লুকায়ীত রইলো, আর কেনই-বা আমাদের এই শেষ জামানায় এসে (১৮৭৯ ইং সালের দিকে) তার লাশটি উদ্ধার হয়ে মিশর জাতীয় মিউজিয়ামে পৃথিবীবাসীর সামনে ‘উদাহরণ/নমুনা/নিদর্শন’ হয়ে রইলো, যেমনটা আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করেছিলেন ?!!! এটা কি একথারই ইংগীত নয় যে, এই জামানায় এমন সব ফেরাউনদের দেখা মিলবে, যাদের কর্তব্য হবে জুলুম অত্যাচার ও অবিচার করার আগে বারবার ‘ফেরাউনের সংরক্ষিত লাশ’ দেখে শিক্ষা  গ্রহন করা যে, জালেমদের পরিণতি কী হয়?!!!

আজ এই আখেরী জামানায় (যা আমরা এই ওয়েবসাইটের ‘ভবিষ্যৎবাণী’ সিরিজে প্রমাণ করে এসেছি) আমরা দেখতে পাচ্ছি, গোটা পৃথিবীর দেশে দেশে একেকটা আস্ত ফেরাউন বসে দেশ শাসন করছে, যারা জমিনে নানান কিসিমের ভয়ঙ্কর সব জুলুম অত্যাচার অনাচার ও ফিতনা ফ্যাসাদের মাঠ গরম করে রেখেছে, আর গোটা পৃথিবী তাদের অনুসরণ করছে। তাদের বড় বড় পাপ ও অপরাধের সীমা যখন উপচে উঠতে শুরু করেছে, তখন আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর জলে ও স্থলে ভূমিকম্প, টর্নেডো, সাইক্লোন, রোগ-ব্যাধি মহামারী, দূর্ভিক্ষ, জলচ্ছাস, বন্যা ইত্যাদি ছোট ছোট আযাব ও গজব দিয়ে মানুষকে বারবার সতর্ক সংকেত পাঠাচ্ছেন। মানুষ তওবা করে আল্লাহ’র দিকে ফিরে না আসলে চুড়ান্ত ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য অপেক্ষায় থাকুক।

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-

فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُّبِينٍ – يَغْشَى النَّاسَ ۖ هَٰذَا عَذَابٌ أَلِيمٌ – رَّبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ 

‘অতএব তুমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকো, যে দিন স্পষ্ট ধোঁয়া দিয়ে (তোমাদের নিকটবর্তী) আকাশ ছেঁয়ে যাবে, (যা পৃথিবীর) মানুষকে ঢেকে নিবে। এটা (পৃথিবীর মানুষের উপরে আল্লাহ’র একটি) কঠিন আযাব (স্বরূপ হবে)। (তারা নিরুপায় হয়ে বলবে:) হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এই আযাবকে হটিয়ে দাও, নিশ্চই আমরা (কুফর ও মুনাফেকী ত্যাগ করে আজ) মুমিন (হয়ে গেলাম)’। [সুরা দুখান ১০-১২]

وَإِن مِّن قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًا شَدِيدًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا

‘(পৃথিবীতে) এমন কোনো জনপদ নেই যাকে আমরা কেয়ামতের দিনের পূর্বে ধ্বংস না করবো অথবা সুকঠিক আযাবে গ্রেফতার না করবো। এটা আল্লাহ’র কিতাব (লাউহে মাহফুজে) লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে’। (এটা ঘটবেই ঘটবে)’। [সুরা ইসরা/বনী ইসরাঈল ৫৮]

এই আযাব কেয়ামতের দিনের আযাব নয়, বরং قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ(কেয়ামতের দিনের পূর্বে) তথা, কেয়ামতের আগে পৃথিবীর পচনধরা মানুষগুলোকে চিরদিনের জন্য দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়ার উদ্দেশ্যে আগত এক ব্যাপক আযাব আসছে। এর ছোবল থেকে শুধু সেই বাঁচতে পারবে, যাঁর প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন। এই ধ্বংসের পর যারা বেঁচে থাকবে তারা ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর শাসনাধীনে কিছুকাল এক সুখময় জীবন যাপন করবে। [আর আমরা –এখানেএখানে দেখিয়ে এসেছি যে, ইমাম মাহদী রা ও ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর আগমনের একেবারে দ্বারপ্রাপান্তে চলে এসেছি]  

 

 

الله اعلم بالصواب و أخر دعوانا عن الحمد لله رب العالمين و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته و استغفر الله و أتوب إليه

3 thoughts on “করোনা ভাইরাস মহামারী – ইসলামী দিক নির্দেশনা – কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে

  1. ধন্যবাদ। অনেকদিন পর লেখা পেলাম। ফেতনার সময় ঘনিয়ে এসেছে তাই সতর্কতামূলক লেখাগুলো নিয়মিত বিরতিতে দেয়ার অনুরোধ।

  2. খুব তথ্যবহুল লেখা । পড়লে আরো পড়লতে মন চায়।
    লেখকের নাম দিবেন।
    জিকরুল

  3. খুব তথ্যবহুল লেখা । লেখকের নাম দিবেন। বাতিলের মোকাবেলায় এরূপ লেথার প্রয়োজন।
    জিকরুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *