কেয়ামতের আলামত ও ফেতনা ফাসাদ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী ৩

কেয়ামতের আলামত ও ফেতনা ফাসাদ সম্পর্কে মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী ৩

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

[আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে (এখানে ক্লিক করুন) কিছু হাদিস ও আছার পেশ করেছি। এখানে কেয়ামতের আলামত ও ফিতনা ফাসাদ সম্পর্কে কিছু হাদিস ও আছার উল্লেখ করছি। [উল্লেখ্য, এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ  ও তার অনুবাদকে কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।

 

# সামুরাহ বিন যুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يُوشِكُ أَنْ يَمْلَأَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَيْدِيَكُمْ مِنْ الْأَعَاجِمِ ثُمَّ يَجْعَلُهُمْ اللَّهُ أُسْدًا لَا يَفِرُّونَ فَيَقْتُلُونَ مُقَاتِلَتَكُمْ وَيَأْكُلُونَ فَيْئَكُمْ . رواه أحمد في مسنده , أول مسند البصريين , ومن حديث سمرة بن جندب عن النبي صلى الله عليه وسلم : ٥/٦١، قال احمد شاكر في تحقيقه : ١٥/١٦٠ رقم ٢٠١٢٣ : اسناده صحيح، قال شعيب الأرنؤوط في تحقيقه :رقم ٢٠٢٥٩ : إسناده ضعيف من أجل عنعنة الحسن البصري ; و رواه ايضا الحاكم في المستدرك : ٤/٥٦٤، له شاهد في المعجم الأوسط للطبراني , بَابُ الْمِيمِ مَنِ اسْمُهُ: مُحَمَّدٌ : ٥/٢٤٦ رقم ٥٢١٥ : من طريق عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو مرفوعا  – “অচিরেই আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা তোমাদের (মুসলমানদের) হাতকে আ’জামদের/অনারবদের থেকে (প্রাপ্ত ধ্বনসম্পদ দ্বারা) ভরিয়ে দিবেন। অত:পর আল্লাহ ও(ই অনারব)দেরকে পৃথিবীর উপরে কর্তৃত্ব করার জন্য এমন) সিংহ (স্বরূপ) বানিয়ে দিবেন (যে) তারা (যদ্ধের ময়দান থেকে তোমাদের ভয়ে) পালায়ন করবে না। (কারণ, সে জামানায় তোমরা মুসলমানরা সমূদ্রের ঢেউয়ে ভাসমান নেকড়ার মতো হালকা হয়ে যাবে, তোমাদের না থাকবে ইমানী ত্বাকাত, না থাকবে হায়বাত)। ফলে তারা তোমাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করবে, আর তোমাদের ‘ফাই’ খাবে”। [মুসনাদে আহমদ– ৫/৬১; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৬৪; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৫/২৪৬ হাদিস ৫২১৫]

ফায়দা: আমার মতে, এই হাদিসে- يُوشِكُ أَنْ يَمْلَأَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَيْدِيَكُمْ مِنْ الْأَعَاجِمِ – “অচিরেই আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা তোমাদের (মুসলমানদের) হাতকে আ’জামদের/অনারবদের থেকে (প্রাপ্ত ধ্বনসম্পদ দ্বারা) ভরিয়ে দিবেন”-এর মধ্যে  الْأَعَاجِمُ – (অনারব’রা) বলতে মূলত: সাহাবায়ে কেরাম রা. কর্তৃক রোম ও পারস্য বিজয় এবং তাদের থেকে প্রাপ্ত ধ্বনসম্পদ মুসলমানদের করতলগত হওয়ার দিকে বিশেষ ভাবে ইংগীত করে। অবশ্য রোম ও পারস্য ছাড়াও গোটা পৃথিবীর যতদূর পর্যন্ত মুসলমানদের শাসনব্যবস্থার প্রসার ঘটেছিল তার অধিনস্ত সকল অনারব দেশও এই হাদিসের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।  

আমার মতে, এই হাদিসে- ثُمَّ يَجْعَلُهُمْ اللَّهُ أُسْدًا لَا يَفِرُّونَ فَيَقْتُلُونَ مُقَاتِلَتَكُمْ وَيَأْكُلُونَ فَيْئَكُمْ – “অত:পর আল্লাহ ও(ই অনারব)দেরকে পৃথিবীর উপরে কর্তৃত্ব করার জন্য এমন) সিংহ (স্বরূপ) বানিয়ে দিবেন (যে) তারা (যদ্ধের ময়দান থেকে তোমাদের ভয়ে) পালায়ন করবে না। (কারণ, সে জামানায় তোমরা মুসলমানরা সমূদ্রের ঢেউয়ে ভাসমান নেকড়ার মতো হালকা হয়ে যাবে, তোমাদের না থাকবে ইমানী ত্বাকাত, না থাকবে হায়বাত)। ফলে তারা তোমাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করবে, আর তোমাদের ‘ফাই’ খাবে”-এর যেসকল الْأَعَاجِمُ – (অনারব’দের)কে ‘সিংহ’ বানিয়ে দিবেন বলা হয়েছে, তার দ্বারা উদ্দেশ্য সম্ভবত: এযুগের পশ্চিমা দেশগুলো, যেমন: আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স সহ বিভিন্ন অনারব দেশগুলো, যারা আজ আরব দেশগুলোর নাকে দড়ি দিয়ে ইচ্ছে মতো চড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, ইরাক সিরিয়া লেবানন ইয়েমেন ফিলিস্তিনের মতো আরব দেশগুলোর মুসলমান যোদ্ধাদেরকে হত্যা করছে এবং আরব দেশগুলোতে বসে তাদেরই ধ্বনসম্পদ খেয়ে চলেছে। হাদিসটিতে বলা হয়েছে- يَأْكُلُونَ فَيْئَكُمْ “তারা তোমাদের ফাই খাবে”।  দুই ধরনের জিনিসকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘ফাই’ (الفَيْءُ) বলে অবিহিত করা হয়ে থাকে: (১) স্বশস্ত্র জিহাদের সময় কাফেররা বিনা যুদ্ধে তাদের ধ্বনসম্পদ ফেলে পালিয়ে গলে উক্ত গণীমতকে ‘ফাই’ বলা হয়, (২) ইসলামী রাষ্ট্রের কোথাও এমন ভূ-গর্ভস্ত খনিজ সম্পদকেও ‘ফাই’ বলা হয়, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আমানত স্বরূপ থাকে, যা জনগণের উপরার্থে ব্যবহারযোগ্য। আমার মতে, ‘ফাই’ বলতে এখানে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মুসলমানদের রেখে যাওয়া বিভিন্ন সম্পদও উদ্দেশ্য হতে পারে, আবার তাদের দেশগুলোতে বিদ্যমান ভূ-গর্ভস্ত খনিজ সম্পদক গুলোও উদ্দেশ্য হতে পারে, যেমন: খনিজ তেল, গ্যাস সোনা, ধাতব পদার্থ ইত্যাদি। আজ পর্যন্ত আমেরিকা তো টিকেই আছে সৌদির তেলের সাথে ডলারের চক্কর চালিয়ে। ওসমানী সালতানাত হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই মুসলমানদের উপরে পশ্চিমারা সিংহ হয়ে উঠেছে।

এখানে এই সিংহ’দের সম্পর্কে যে বলা হয়েছে- لَا يَفِرُّونَ – “তারা (যদ্ধের ময়দান থেকে তোমাদের ভয়ে) পালায়ন করবে না” -তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই হাদিসে। হযরত সওবান রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- يُوشِكُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ الْأُمَمُ مِنْ كُلِّ أُفُقٍ كَمَا تَدَاعَى الْأَكَلَةُ عَلَى قَصْعَتِهَا ” , قَالَ : قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَمِنْ قِلَّةٍ بِنَا يَوْمَئِذٍ ؟ قَالَ : ” أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ ، وَلَكِنْ تَكُونُونَ غُثَاءً كَغُثَاءِ السَّيْلِ يَنْتَزِعُ الْمَهَابَةَ مِنْ قُلُوبِ عَدُوِّكُمْ ، وَيَجْعَلُ فِي قُلُوبِكُمْ الْوَهْنَ ” , قَالَ : قُلْنَا : وَمَا الْوَهْنُ ؟ قَالَ : ” حُبُّ الْحَيَاةِ ، وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ . أخرجه أحمد في مسنده بإسناد جيّد: ٥/٢٧٨, رقم , و أبو داود في سننه رقم ٤٢٩٧ , أبو نعيم في حلية الأولياء ١/١٨٢, البيهقي في دلائل النبوة ٦/٥٣٤, الهيثمي في مجمع الزوائد ٧/٢٨٧ – ‘অচিরেই প্রত্যেক প্রান্তের জাতিসমূহ তোমাদের (মুসলমানদের) বিরুদ্ধে (অবস্থান নেয়ার জন্য) একে অপরকে ডাক দিবে, যেভাবে তোমরা খাওয়ার মাদুরের উপর বিদ্যমান খাবারের দিকে একে অপরকে ডেকে থাকো। হযরত সওবান বলেন: আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! সেদিন আমরা (মুসলমানরা) কি সংখ্যায় কম হবো? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: সেদিন তোমরা সংখ্যায় অনেক হবে, তবে তোমরা হবে ভাসমান খড়কুটোর মতো। তোমাদের দুশমনের অন্তর থেকে (তোমাদের প্রতি) গুরুত্ব উঠে যাবে। আর তোমাদের অন্তরগুলোর ভিতরে ওয়াহন জন্মে যাবে। হযরত সওবান বলেন: আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘ওয়াহন কি জিনিস’? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘(আখেরাতের বিপরীতে পার্থীব) জীবনকে ভালবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা’। [মুসনাদে আহমাদ- ৫/২৭৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৭; হিলইয়া, আবু নুআইম-১/১৮২; দালায়েলুন নাবুয়াত, বাইহাকী- ৬/৫৩৪; মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাইছামী- ৭/২৮৭] الله اعلم بالصواب

# ইসমাঈল বিন উবাইদুল্লাহ’র সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুর রহমান বিন গনম আল-আশআরী রহ. বলেন- قَالَ لِي أَبُو الدَّرْدَاءِ: كَيْفَ تَرَى النَّاسَ؟ قُلْتُ: بِخَيْرٍ إِنَّ دَعْوَتَهُمْ وَاحِدَةٌ وَإِمَامَهُمْ وَاحِدٌ، وَعَدُوَّهُمْ مَنْفِيٌّ، وَأُعْطِيَاتِهُمْ وَأَرْزَاقَهُمْ دَارَّةٌ، قَالَ: فَكَيْفَ إِذَا تَبَاغَضَتْ قُلُوبُهُمْ، وَتَلَاعَنَتْ أَلْسِنَتُهُمْ، وَظَهَرَتْ عَدَاوَتُهُمْ، وَفَسَدَتْ ذَاتُ بَيْنِهِمْ، وَضَرَبَ بَعْضُهُمْ رِقَابَ بَعْضٍ . رواه الحاكم في المستدرك على الصحيحين , كتاب الفتن والملاحم : ٤/٥٢٤ ، وقال هذا حديث صحيح الاسناد ولم يخرجاه، ووافقه الذهبي في “تلخيصه كما في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ١/٨٨٧ ، و ايضا الإمام الحافظ أبو الحسن أحمد بن سليمان بن أيوب بن عبد الله بن حذلم في جزء من حديث الأوزاعي: ص ٥ رقم ٨ و صححه المحقق مسعد السعدني أبو عبد الرحمن و شريف بن أبي العلا العدوي  – “(একবার সাহাবী) আবু দারদা রা. আমাকে বললেন: ‘আপনি (আমাদের এ জামানায়) মানুষজন’কে (ইমান আমলে) কেমন (অবস্থায়) দেখতে পাচ্ছেন’? আমি বললাম, ‘ভালো অবস্থায়(ই-তো দেখতে পাচ্ছি। কারণ বর্তমানে) তাদের আহবান(-এর মূল ক্ষেত্র) একটাই (আর সেটা হল এক আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের দিকে আহবান, তদুপরি গোটা মুসলীম জাহানে) তাদের ইমাম (খলিফা)ও একজনই (রয়েছেন), তাদের দুশনরাও (এখন) প্ররাস্ত/প্রতিহত, রাষ্ট্র তাদেরকে (প্রয়োজনীয়) অনুদান ও জীবিকা-সামগ্রী প্রদান করছে’। (একথা শুনে) আবু দারদা রা. বললেন: ‘তখন (মুসলমানদের) কেমন অবস্থা হবে, যখন তাদের অন্তরগুলো খলতমলত হয়ে যাবে, তাদের জবানগুলো পরষ্পরকে লা’নত দিবে, তাদের পরষ্পরের মাঝে দুশমনী সৃষ্টি হয়ে যাবে, তাদের পরষ্পরের মাঝে ফ্যাসাদ দেখা দিবে এবং তাদের একগোষ্ঠি আরেক গোষ্ঠির গর্দান উড়াবে’।? [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫৬৯ হাদিস ৮৫৯৬; জুয মিন হাদিসি আওয়ায়ী, ইমাম ইবনু হাযলাম- ১/৯ হাদিস ৮]

# আবু তুফায়েলের সূত্রে.বর্ণিত হয়েছে, হুযাইফা রা. বলেছেন- أَنَا لِغَيْرِ الدَّجَّالِ أَخْوَفُ عَلَيَّ وَعَلَيْكُمْ ‏‏، قَالَ‏:‏ فَقُلْنَا‏:‏ مَا هُوَ يَا أَبَا سَرِيحَةَ‏؟‏ قَالَ‏:‏ فِتَنٌ كَأَنَّهَا قِطَعُ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، قَالَ‏:‏ فَقُلْنَا‏:‏ أَيُّ النَّاسِ فِيهَا شَرٌّ‏؟‏ قَالَ‏:‏ كُلُّ خَطِيبٍ مِصْقَعٍ، وَكُلُّ رَاكِبٍ مُوضِعٍ، قَالَ‏:‏ فَقُلْنَا‏:‏ أَيُّ النَّاسِ فِيهَا خَيْرٌ‏؟‏ قَالَ‏:‏ كُلُّ غَنِيٍّ خَفِيٍّ، قَالَ‏:‏ فَقُلْتُ‏:‏ مَا أَنَا بِالْغَنِيِّ وَلَا بِالْخَفِيِّ، قَالَ‏:‏ فَكُنْ كَابْنِ اللَّبُونِ لَا ظَهْرَ فَيُرْكَبَ، وَلَا ضَرْعَ فَيُحْلَبَ . رواه الحاكم في المستدرك , , ذكر العلامات الخاصة للدجال : ٤/٥٢٩ رقم ٨٦١٢ و قال: هذا حديث صحيح الإسناد و لم يخرجاه و قال الذهبي في التلخيصه : علي شرط البخاري و المسلم ، و عبد الرزاق في مصنفه : ١١/٣٩٤ رقم ٢٠٨٢٧، وصححه الألباني في كتاب قصة المسيح الدجال ص ١٠٦ – “দাজ্জাল বাদে অন্য কিছুকে আমি আমার ও তোমাদের উপরে (মন্দ ফিতনা আকারে আপতিত হওয়ার) বেশি ভয় করি’। আবু তুফায়েল বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘হে আবু সারিহাহ (হুযাইফা), কী সেটা’? তিনি বললেন: ‘(মুসলীম উম্মাহ’র উপরে ঘন কালো অন্ধকারময় এমন) ফিতনা সমূহ (আপতিত হবে, যার একেকটা) যেন অন্ধকারময় রাতের (একেকটা) ফালি (খন্ড/অংশ)’। আবু তুফায়েল বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘সে সময়ে কোন (ধরনের) লোকজন মন্দ হবে’? তিনি বললেন: كُلُّ خَطِيبٍ مِصْقَعٍ – ‘প্রত্যেক চৌকুশ বক্তা’ এবং كُلُّ رَاكِبٍ مُوضِعٍ – ‘প্রত্যেক মাঠমাড়ানো আরোহী ব্যাক্তি’। আবু তুফায়েল বলেন, তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘সে সময়ে কোনো (ধরনের) লোকজন উত্তম হবে’? তিনি বললেন: ‘كُلُّ غَنِيٍّ خَفِيٍّ – ‘প্রত্যেক গণী (অমুকাপেক্ষি) খফী (গুপ্ত/লুকায়ীত) ব্যাক্তি, (যারা ফিতনা থেকে নিরাপদ দূরুত্বে থাকার কষ্ট সহ্য করে হলেও স্বল্প হালালেই তুষ্ট থাকবে, এবং ফিতনাবাজ কাফের-মুনাফেক দিয়ে ভরা সমাজের সামনে আসা থেকে নিজেদেরকে যথাসম্ভব আড়াল করে রাখতে পারবে)। আবু তুফায়েল বলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম: ‘আমি তো অমুকাপেক্ষিও নই, গুপ্তও নই’। তিনি বললেন: ‘তাহলে তুমি এমন উটনী-সাবকের মতো হয়ে যাও, যার না আছে (উপযুক্ত শক্ত) পিঠ (যার উপরে কেউ) আরোহন কর(তে যা)বে, আর না আছে (দুধের) ওলান (বা বোটা, যা দ্বারা কেউ) দুধ ছেঁক(তে যা)বে”। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৩০; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৯৪ হাদিস ২০৮৬৭]

ফায়দা: আরবী শব্দ خطيب (খতীব) অর্থ হল ‘বক্তা’ বা ‘বক্তব্য উপস্থাপনকারী’ এবং مِصْقَع (মিসক্বা’) অর্থ হল ‘চৌকুশ/পটু/মাহের/দক্ষ’। আমি خَطِيب مِصْقَع -এর অর্থ করেছি ‘চৌকুশ বক্তা’। ইমাম আবু সুলাইমান আল-খাত্তাবী (মৃ: ৩৮৮ হি:) রহ. বলেন- الخطيب المصقع هو الَّذِي لا يرتج عليه ولا يتتعتع في كلامه يريد بالخطيب الداعي إلى الفتنة وأصله من الصقع وهو رفع الصوت ومتابعته – “(মূলত:) الخطيب المصقع – (খতীবে মিসক্বা’ বা চৌকুশ বক্তা) হল এমন (সুভাষি, সাবলীল ও বাকপটু) ব্যাক্তি যার কথা আটকায় না এবং যার কথায় জড়তা/আড়ষ্টতা বিরাজ করে না। (এই হাদিসের মধ্যে) ‘খতীব’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ফিতনার দিকে আহবানকারী (চৌকুশ বক্তা)। (আরবী) الْمِصْقَعُ (মিসক্বা’) শব্দটি মূলত: الصقع থেকে নির্গত; সে এমন ব্যাক্তি যার কন্ঠস্বর উচ্চ/ভরাটে এবং তার কথায় আকর্ষনী-ক্ষমতা রয়েছে, (যা শ্রতার মনমস্তিষ্ককে তার তার কথার দিকে একাগ্র করে নেয়)”। [গারিবুল হাদিস, ইমাম খাত্তাবী- ২/৪৯৯] এই হাদিসে خَطِيب مِصْقَع (চৌকুশ বক্তা) বলতে সম্ভবত: এমন বক্তার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যে তার আকর্ষনীয় কন্ঠ, বাচনভঙ্গি, উপস্থাপনা ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তি দ্বারা মানুষকে বিভিন্ন ফিতনা’র দিকে আহবান করবে। এরকম একজন চৌকুশ বক্তার যুৎসই নমুনা হল ‘শেখ মুজিবুর রহমান’; সে বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের মাঝে আবাসিয়্যাত (জাতপাত), সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ) ও সোসালিজম (সমাজতন্ত্র)-এর যে দুর্গন্ধময় ফিতনার আবর্জনা এনে খাইয়ে দিয়েছে, তার মারাত্মক বিশ-ক্রিয়া গোটা দেশের মানুষের মনমগজকে অন্ধ করে দিয়েছে। 

আর, আরবী শব্দ راكب (রাকিব) অর্থ ‘আরোহী ব্যাক্তি’ (- চাই উট বা ঘোড়া বা গাধার মতো কোনো প্রাণীর উপরে আরোহীত হোক কিংবা অন্য কোনো বাহনের উপরে)। আর موضع (মুওয়াযে’)-এর অর্থ সম্পর্কে ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেছেন- الموضع: المسرع في الفتنة الساعي فيها يُقَالُ: أوضع الراكب إيضاعا – “(এই হাদিসে বর্ণিত) موضع (মুযে’) হল (এমন তৎপর ব্যাক্তি) যে ফিতনার মধ্যে দ্রুত/তড়িত পা মাড়িয়ে চলে। বলা হয়: أوضع الراكب إيضاعا – ‘আরোহী দ্রুত দৌড়ে গেল’। [গারিবুল হাদিস, ইমাম খাত্তাবী- ২/৪৯৯] এই হাদিসে সম্ভবত: যারা ফিতনা’কে প্রচার ও প্রসার করার জন্য বিভিন্ন ভাবে তৎপর থাকে, ময়দান গরম করে, প্রত্যক্ষ সাপোরর্টে নামে, ফিতনাটিকে যে কোনো রকমের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া থেকে হেফাজত করার দায়িত্ব পালন করে, একাজের এজেন্টগীরী/দালালীতে লাগে ইত্যাদি,  তাদের দিকেই ইশারা করা হয়েছে। আমাদের দেশীয় আঞ্চলীক পরিভাষায় এধরনের তৎপর ব্যাক্তিকে বলা হয় ‘মাঠমাড়ানো ব্যাক্তি’। এজন্য আমি এখানে رَاكِبُ الْمُوَضِع (রাকিবে মুওয়াযে’) -এর অর্থ করেছি ‘মাঠমাড়ানো আরোহী। এখানেও আবাসিয়্যাত (জাতপাত), সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র), কমিউনিজম (সাম্যবাদ), সোসালিজম (সমাজতন্ত্র), ফেমিনিজম (নারীবাদ), ওয়ান ওয়ার্ল্ড রিলিজন (একক বিশ্ব ধর্ম) ইত্যাদি জঘন্য ফিতনাগুলোর কথাই চিন্তা করুন, এবং চোখ-কান খুলে ভেবে দেখুন গোটা বিশ্বে এসকল ফিতনার প্রচার ও প্রসার করার কাজে তৎপর বিভিন্ন মিডিয়া, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের কর্মিবাহিনী, ময়দান গরমকারী বাহিনী, এদের এজেন্ট/দালাল বাহিনী, প্রত্যক্ষ সাপোরর্টে নামা আম পাবলিক, ফিতনাকে যে কোনো রকমের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া থেকে হেফাজত করা বা চিকিৎসা/মেরামত করায় তৎপর বাহিনী -এরাও رَاكِبُ الْمُوَضِع (রাকিবে মুওয়াযে’ বা ‘মাঠমাড়ানো আরোহী-এর মধ্যে গণ্য। الله أعلم بالصواب

# ইয়াযিদ বিন আসাম সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হুযাইফা রা. বলেছেন- أَتَتْكُمَ الْفِتَنُ مِثْلَ قِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ ، يَهْلِكُ فِيهَا كُلُّ شُجَاعٍ بَطَلٍ , وَكُلُّ رَاكِبٍ موْضِعٍ , وَكُلُّ خَطِيبٍ مِصْقَعٍ . رواه ابن أبي شيبة في مصنفه , كتاب الفتن : ٢٢/٣٥ رقم ٣٨٢٨٠ ، فيه يزيد بن أبي زباد , و هو الكوفي ضعيف   – “(অচিরেই) তোমাদের (মুসলমানদের) কাছে (এমন এমন) ফিতনা সমূহ আসবে, (যার একেকটা হবে) অন্ধকার রাতের ফালি (অংশ/খন্ড)’র মতো (কালো)। তার মধ্যে বরবাদ হয়ে যাবে كُلُّ شُجَاعٍ بَطَلٍ – ‘প্রত্যেক সাহসী/নির্ভিক মুখ্য-ব্যাক্তি’, كُلُّ رَاكِبٍ موْضِعٍ – ‘প্রত্যেক মাঠমাড়ানো আরোহী ব্যাক্তি’, এবং كُلُّ خَطِيبٍ مِصْقَعٍ – ‘প্রত্যেক চৌকুশ বক্তা”। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ২২/৩৫ হাদিস ৩৮২৮০; কানজুল উম্মাল, মুত্তাকী- ১১/২২৫ হাদিস ৩১৩১৪]

ফায়দা: আরবী শব্দ شُجَاع – (শুযা’)-এর বিভিন্ন অর্থ হয়, যেমন: দু:সাহসী, নির্ভিক বা যে ব্যাক্তি ধৈর্যহারা হওয়ার সতো বিপদের মুখোমুখি হতেও প্রস্তুত ও অবিচল থাকে ইত্যাদি। আরবীতে بَطَل (বাত্বাল) শব্দ’টিও বিভিন্ন অর্থে ব্যাক্ত ব্যবহৃত হয়, যেমন: সাহসী, নির্ভিক, বিপদের সামনা করতে প্রথমে অগ্রসর হয় -এমন সাহসী, তারকা (hero), কোনো বক্তব্য বা কাজের মুখ্য কর্মী/খেলারী (the chief performer or player) ইত্যাদি। এই হাদিসের অর্থ বোঝার জন্য আপনি -সমাজের চোখে পরার মতো ওই সকল নেতা/ উপনেতা/পাতিনেতা/তারকা/মুখ্য ব্যাক্তি’দের কথা চিন্তা করে দেখুন, যারা সমাজে বিভিন্ন ফিতনার ধারকবাহক হয়ে তা প্রচার ও প্রসার করার কাজে মুখ্য ভূমিকা রাখে বা প্রধান কাতারে থেকে সাহসীকতার সাথে অবদান রাখে।   الله اعلم بالصواب

# যায়েদ বিন ওয়াহহাব রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হুযাইফা রা. এরশাদ করেন- وُكِّلَتِ الْفِتْنَةُ بِثَلَاثٍ: بِالْجَادِّ النِّحْرِيرِ الَّذِي لَا يُرِيدُ أَنْ يَرْتَفِعَ لَهُ مِنْهَا شَيْءٌ إِلَّا قَمَعَهُ بِالسَّيْفِ، وَبِالْخَطِيبِ الَّذِي يَدْعُو إِلَيْهِ الْأُمُورَ، وَبِالشَّرِيفِ الْمَذْكُورِ، فَأَمَّا الْجَادُّ النِّحْرِيرُ فَتَصْرَعُهُ، وَأَمَّا هَذَانِ الْخَطِيبُ وَالشَّرِيفُ فَتَحُثُّهُمَا حَتَّى تَبْلُوَ مَا عِنْدَهُمَا . رواه نعيم بن حماد في الفتن : ١/١٤٢ رقم ٣٥٢ بإسناد صحيح، أخرجه ابن أبي شيبة في مُصنفه , كِتَابُ الْفِتَنِ : ٢٢/٤٢ رقم ٣٨٢٩٠، و أحمد في الزهد : ٢/١٣٦، و الداني في السنن الواردة: ١/٢٢٩ رقم ٢٨، و أبو نعيم في الحلية : ٢/٢٧٤ بإسناد صحيح كما في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة : ١/٢٥  – “নিশ্চই ফিতনার ওকালতী (প্রতিনিধিত্ব) হয় (বিশেষ ভাবে) তিন (ধরনের ব্যাক্তির) দ্বারা। (১) بِالْجَادِّ النِّحْرِيرِ الَّذِي لَا يُرِيدُ أَنْ يَرْتَفِعَ لَهُ مِنْهَا شَيْءٌ إِلَّا قَمَعَهُ بِالسَّيْفِ – “(এমন) পরিশ্রমী প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ (ব্যাক্তি)’র দ্বারা, যার সামনে কোনো কিছু উত্থিত হলে সে সেটাকে (নমনীয় রাস্তা পরিহার করে বরং) তরবারী দিয়ে দমন করা ছাড়া অন্য কোনো (ভাবে সমাধানের) ইচ্ছা পোষন করে না’, (২) بِالْخَطِيبِ الَّذِي يَدْعُو إِلَيْهِ الْأُمُورَ – “(এমন) বক্তার দ্বারা, যার দিকে (আঙ্গুল উঠিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক) বিভিন্ন বিষয়াদির আহবান রাখা হয়’, এবং (৩) بِالشَّرِيفِ الْمَذْكُورِ – “উল্লেখযোগ্য শরীফ (সুশীল/সমাজ-চোখের-ভদ্রলোক) ব্যাক্তির দ্বারা’। (এদের তিন জনের মধ্যে) ‘বিশেষ ধীমান-পন্ডিত-কর্মঠ (ব্যাক্তি)’র ব্যাপারে কথা হল, সে-তো  ও(ই ফিতনা)টিকে (তার উগ্র/কঠোর মেজাজের কারণে কমপক্ষে) আছাড় মাড়ে/ধরাসায়ী করে। আর (বাকি) এই দুই (ধরনের) ব্যাক্তি (তথা) বক্তা ও শরীফ (ব্যাক্তি)’র ব্যাপারে কথা হল, তারা উভয়ে (ফিতনার সামনে) নতজানু হয়ে গেছে, ফলে তাদের দুজনের কাছে যা আছে তা তারা (দ্বারা) বালা মুসিবৎ সৃষ্টি করে”। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/১৪২ হাদিস ৩৫২; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ২২/৪২ হাদিস ৩৮২৯০; আয-যহদ, ইমাম আহমদ- ২/১৩৬; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী- ১/২২৯ হাদিস ২৮; হিলইয়াতুল আউলিয়া, ইমাম আবু নুআইম– ১/২৭৪]

ফায়দা: এই হাদিসে বলা হয়েছে- وُكِّلَتِ الْفِتْنَةُ بِثَلَاثٍ – “নিশ্চই ফিতনার ওকালতী (প্রতিনিধিত্ব) হয় (বিশেষ ভাবে) তিন (ধরনের ব্যাক্তির) দ্বারা”। এর অর্থ হল, দেশ ও সমাজের বড় মাঝারি ছোট সকল স্তরের মানুষই ফিতনার প্রচার প্রসারে কম-বেশি ভূমিকা  রাখতে পারে, কিন্তু উল্লেখত তিন প্রকারের মানুষ ফিতনার প্রচার প্রসসারে প্রধান ভূমিকা বা সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে।

এই হাদিসে بِالْخَطِيبِ الَّذِي يَدْعُو إِلَيْهِ الْأُمُورَ – “(এমন) বক্তার দ্বারা, যার দিকে (আঙ্গুল উঠিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক) বিভিন্ন বিষয়াদির আহবান রাখা হয় বলতে যে বক্তা’র কথা বলা হয়েছে, তাকে সম্ভবত: উপরের হাদিসে- كُلُّ خَطِيبٍ مِصْقَعٍ – ‘প্রত্যেক চৌকুশ বক্তা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

আরবী النحرير (নাহির) শব্দটির অর্থ এভাবে করা হয়েছে- العالم الحاذقُ في علمه – “যে ব্যাক্তি তার ইলম/জ্ঞানে পরিপক্ক”। [আল-মু’জামুল ওয়াসিত্ব- ১/৯০৬] এর অর্থ আরো বিস্তারত এভাবে করা হয়েছে- الحاذق الماهر العاقل المجرب، وقيل: النحرير: الرجل الطبن المتقن الفطن البصير بكل شيء – “অসাধারণ সুদক্ষ বুদ্ধিমান-জ্ঞানী অভিজ্ঞ ব্যাক্তি। আরো বলা হয়েছে: পর্যাপ্ত ধীমান-মেধাবী সুক্ষদর্শী ব্যাক্তি”। [তাজুল আরুস- ৭/৫১২] এক কথায় النحرير (নাহির) হল এমন ব্যাক্তি, যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানগরিমার অধিকারী, অভিজ্ঞ সুদক্ষ এবং সুক্ষদর্শী। এসব সুন্দর বৈশিষ্টের অধিকারী কোনো ব্যাক্তি যদি –শরীয়ত যে যে ক্ষেত্রে ‘ধৈর্য স্থিরতা ও গাম্ভির্যতা’র সাথে পদক্ষেপ গ্রহন করতে বলেছে, সে সেসব ক্ষেত্রে যদি ‘উগ্র মেজাজ/ রগচটা মেজাজ/মাইরের উপরে কোনো ঔষধ নাই -এই মনমানসিকতা’ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করে,  তার ব্যাপারেই বলা হয়েছে الَّذِي لَا يُرِيدُ أَنْ يَرْتَفِعَ لَهُ مِنْهَا شَيْءٌ إِلَّا قَمَعَهُ بِالسَّيْفِ – “যার সামনে কোনো কিছু উত্থিত হলে সে সেটাকে (নমনীয় রাস্তা পরিহার করে বরং) তরবারী দিয়ে দমন করা ছাড়া অন্য কোনো (ভাবে সমাধানের) ইচ্ছা পোষন করে না’। 

আরবী শব্দ الشَّرِيفِ– (শরীফ) অর্থ: ‘সুশীল’, ‘ভদ্রলোক’। এরা এমন ব্যাক্তি যার মানুষজনের মাঝে বিভিন্ন কারণে একটা উল্লেখযোগ্য সামাজিক মর্যাদা থাকে। ‘হিলইয়া’য় ইমাম আবু নুআইমের রওয়ায়েতে الشَّرِيفِ– (শরীফ)-এর স্থলে আছে السيد – (নেতা/সরদার/মোড়ল/সমাজপতি)। বস্তুত: শরীফ/সুশীল/ভদ্রলোক-এর নির্দিষ্ট কোনো সংগা নেই,  বরং একেক সমাজের একেক মনমেজাজ ভেদে একজন ব্যাক্তিকে সেই সমাজের চোখে শরীফ/সুশীল/ভদ্রলোক বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। তবে, সকল যুগে সকল সমাজের চোখেই ‘শরীফ/ভদ্রলোক’ চিহ্নিত হয় এমন ব্যাক্তি- (ক) যার খানদান বা পরিবারও সমাজে শরীফ/ভদ্রলোক বলে পরিচিত থাকে, (খ) যারা শিক্ষা-দিক্ষায় সমাজে গ্রহনযোগ্য স্তরের, (গ) যার সামাজের লোকজনের সাথে আচার-ব্যবহার মার্জিত ও ভদ্র মানের, (ঘ) যে ব্যাক্তি এমন কোনো পাপ/অপরাধে লিপ্ত নয়, যা প্রকাশ পেলে সমাজের চোখে সে খারাপ/বদ লোক বলে পরিগণিত হতে থাকে (যেমন: খুন, মেয়ে-সঙ্গ, জেনা-ব্যাভিচার/ধর্ষন, চুরি-ডাকাতী, আত্বসাৎ, প্রতারণা ইত্যাদি। আবার ইসলামী দ্বীনদার সমাজে (যা মূলত শরীয়তেরও চাহিদা) ‘শরীফ/ভদ্র ব্যাক্তি’ হিসেবে এমন ব্যাক্তি গণ্য হয়ে থাকে যার মধ্যে উপরের গুণ-বৈশিষ্ট গুলোও রয়েছে, তার সাথে সাথে সে ও তার পরিবার ‘শরয়ী পর্দার সীমা’ রক্ষা করে চলে (বে-পর্দা লোক ও তার বে-পর্দা পরিবার’কে এই সমাজে ‘অ-শরীফ/অ-ভদ্র লোক’ হিসেবে গণ্য করা হয়)। কিন্তু এই  শেষ জামানায় সামাজিক সর্বস্তরে পচন ধরার কারণে, ‘ভদ্রলোক’-এর ধারনা’টাই পাল্টে গেছে। এযুগে সমাজে ‘শরীফ/সুশীল/ভদ্রলোক’ মনে করা হয় এমন ব্যাক্তিক, যে শহরে গাড়ি বাড়ি/ফ্লাট নিয়ে থাকে, টাকাওয়ালা স্বচ্ছল, কলেজ/ইউনিভার্সিটি থেকে বের হওয়া উচ্চ শিক্ষিত বলে পরচিত, আস্তে আস্তে গাম্ভির্যতা বজায় রেখে কথা বলে আবার কথার ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজীর বুলি আওড়ায়  -এমন ব্যাক্তি। আবার গ্রাম-গঞ্জে চেয়ারম্যান/মাতব্বর/মোড়ল পর্যায়ের লোক, নেতা/পাতিনেতা, বিরাট জমিওয়ালা লোক, বেশ বড় ব্যবসায়ী ইত্যকার বিভিন্ন কিসিমের লোককে মনে করা হয় ‘শরীফ/ভদ্রলোক/সুশীল’ লোক; এদিকে ভ্রুক্ষেপই করা হয় না যে, এরা কখন ক’জনের কত কত জমিজমা মেড়েছে, কার কার সাথে প্রতারনা বাটপারী করে কত অর্থসম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কোন কায়দায় সরকারী অর্থকড়ি  ধানচাল গম ইত্যাদি মেড়ে দিয়েছে, কার কার খুনের পিছনে হাত ছিল, কতজন মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছে, কতজনের সংসার উজার করে দিয়েছে, অন্যায়ভাবে কতজনকে পথে বসিয়েছে, সূদ জুয়া ও প্রতারণার আবরণে কত টাকাপয়সা হারাম কামিয়েছে। সে যাই হোক, সমাজে মানুষের মনে বিভিন্ন কারণে এইসব সুশীল/ভদ্র লোকদের গ্রহনযোগ্যতা থাকায় এদের কথা/মতামত, মতাদর্শ, কাজ, আহবান সবকিছুই ভালো প্রভাব ফেলে গনমনে, বিধায় এরা কোনো ‘ফিতনা’র ধারক বাহক ও প্রচারকের ভুমিকা পালন করলে মানুষজনও তাদের কারণে সেই ফিতনা’টিকে গ্রহন করে নেয় খুবই সহজে। উপরের হাদিসে এসেছে- بِالشَّرِيفِ الْمَذْكُورِ – “উল্লেখযোগ্য শরীফ (সুশীল/সমাজ-চোখের-ভদ্রলোক) ব্যাক্তির দ্বারা’الله اعلم بالصواب

# আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَتَكُونُ فِتْنَةٌ يُفَارِقُ الرَّجُلُ فِيهَا أَخَاهُ وَأَبَاهُ، تَطِيرُ الْفِتْنَةُ فِي قُلُوبِ رِّجَالٍ مِنْهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، حَتَّى يُعَيَّرُ الرَّجُلُ بِهَا، كَمَا تُعَيَّرُ الزَّانِيَةُ بِزِنَاهَا . أخرجه الطبرانى في المعجم الكبير: ١٣/٦٩ رقم ١٧٠، قال الهيثمى فى مجمع الزوائد : ٧/٣٠٧ : فيه محمد بن سفيان الحضرمى و لم أعرفه و ابن لهيعة لين ، و أخرجه نعيم بن حماد في الفتن : ١/١٦  – “অচিরেই (এমন) ফিতনা হবে, যার মধ্যে (এমনসব) ব্যাক্তি(ও) থাকবে, যে তার ভাই ও তার পিতা থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ফিতনা’টি তাদের ব্যাক্তিবর্গের অন্তরগুলির মধ্যে পঙ্কিলতা সৃষ্টি করে দিবে -কেয়ামত পর্যন্ত। এমনকি সে(ই ফিতনা)টির কারণে (আক্রান্ত) ব্যাক্তি (সমাজের লোকজনের সামনে) এমন ভাবে লজ্জিত বোধ করবে, যেভাবে ব্যাভিচারিণী ব্যাভিচারের কাারণে (লোক সমাজে) লজ্জিত বোধ করে থাকে”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১৩/৬৯ হাদিস ১৭০; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/১৬ হাদিস ২৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩০৭; কানজুল উম্মাল- ১১/১৮০ হাদিস ৩১১৩৩]

ফায়দা: এই হাদিসে যে ফিতনা’টির কথা বলা হচ্ছে, সেটা সম্ভবত: এই শেষ জামানায় ‘আল-কায়দা অথবা আইএসএস/দায়েশ’ নামের ছত্রছাঁয়ায় বিশ্ব জুড়ে জায়োনিষ্ট ইহূদী-খৃষ্টানদের দ্বারা সৃষ্ট সেই ‘ফিতনা’, যেটাকে আজ গোটা বিশ্ব জুড়ে সকলে মিলে ‘জঙ্গিবাদ/সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে থুঁথুঁ নিক্ষেপ করছে। ‘জঙ্গি’ বা ‘সন্ত্রাসী’ -এটা এই জামানার এমন এক ‘গালি’, যা কোনো প্রকৃত সন্ত্রাসী হোক অথবা প্রকৃত মুজাহিদ হোক কিংবা সাধারণ মুমিন-মুসলমানই হোক -কেউই চায়না যে তার উপরে এই গালি’টি প্রয়োগ করা হোক। ‘জঙ্গি’ বা ‘সন্ত্রাসী’ নামক এই তকমা/লেবেল’টি যার ভাগ্যে জুটেছে, তার না নিজ পরিবারে জায়গা থাকে, না সমাজে, না মৃত্যুর পর তার জানাযায়, আর না কবরস্থানে। কেউ এই লজ্জার বোঝা কাঁধে নিতে রাজি নয় -চাই তার নিজের ছেলেই হোক না কেনো। আমার মতে, এই লজ্জাকর ফিতনা সম্পর্কেই বলা হয়েছে- يُعَيَّرُ الرَّجُلُ بِهَا، كَمَا تُعَيَّرُ الزَّانِيَةُ بِزِنَاهَا – “সে(ই ফিতনা)টির কারণে (আক্রান্ত) ব্যাক্তি (সমাজের লোকজনের সামনে) এমন ভাবে লজ্জিত বোধ করবে, যেভাবে ব্যাভিচারিণী ব্যাভিচারের কাারণে (লোক সমাজে) লজ্জিত বোধ করে থাকে। লজ্জা শরম আছে -এমন নারী কারোর সাথে লুকিয়ে জেনা-ব্যাভিচার করার সময় লোকসমাজে ধরা পরে গেলে সেই সমাজে তার বসবাস করাটা যেমন চরমমাত্রার লজ্জাকর পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায়, ঠিক তেমনি ভাবে আজকের সমাজে যদি কোনো প্রকৃত সন্ত্রাসী কিংবা প্রকৃত মুজাহিদ অথবা সাধারণ কোনো মর্দে-মুমিনের পিঠে একটি বারের জন্য হলেও ‘জঙ্গি/টেরোরিষ্ট/সন্ত্রাসী’ নামের তকমা’টি অঙ্কিত হয়ে প্রচারিত হয়ে যায়, তাহলে শুধু তার জন্য নয়, বরং তার পরিবার-পরিজন ও আত্বীয়-স্বজনের জন্যও ওই ব্যাভিচারিণী’র মতোই সমাজের সমানে অবর্ণনীয় লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আমার তো মনে হয়, কারোর ছেলে ‘জঙ্গি/টেরোরিষ্ট/সন্ত্রাসী’ নামে অবিহিত হলে তিনি সমাজে মুখ দেখানোতে যতটা লজ্জা বোধ করবেন, ততটা লজ্জাবোধ হয় তো তার সেই ছেলেটিই কারোর সাথে জেনা-ব্যাভিচার করতে গিয়ে ধরা পরলে করবেন না।

‘আল-কায়দা অথবা আইএসএস/দায়েশ’ নামের ছত্রছাঁয়ায় বিশ্ব জুড়ে পরিচালিত ‘ফিতনা’টি যে জায়োনিষ্ট ইহূদী-খৃষ্টানদের পরিকল্পনায় সৃষ্ট ও পরিচালিত -একথা সকল সচেতন গবেষক মহলেরই জানা, উদ্দেশ্য হল ‘আল-কায়দা/আইএসএস/দায়েশ’-দের দ্বারা পৃথিবীতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে পৃথিবীর মানুষকে দেখানো যে, যারাই ‘জিহাদ’-এ বিশ্বাসী ও তৎপর তারাই ‘সন্ত্রাসী’। পৃথিবী এই প্রপাগান্ডা গলদ্ধকরন করেছেও। ফলে যারা প্রকৃত ‘মর্দে-মুমিন দায়ী ও মুজাহিদ’ তারা কোথায় সহিহ ‘জিহাদ’ পালন করলেও সেটাকে অবলিলায় ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকান্ড বলে প্রচার করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এই ফিতনা ও প্রপাগান্ডার ধারা থামবে না যাবৎ না ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে এসে এর মূলৎপাটন করে ‘ইসলামী খিলাফত’কে গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই দিকে ইংগীত করেই হাদিসটিতে বলা হয়েছে- تَطِيرُ الْفِتْنَةُ فِي قُلُوبِ رِّجَالٍ مِنْهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ – “ফিতনা’টি তাদের ব্যাক্তিবর্গের অন্তরগুলির মধ্যে পঙ্কিলতা সৃষ্টি করে দিবে -কেয়ামত পর্যন্ত”

আমার মতে এখানে- إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ – (কেয়ামত পর্যন্ত)– দ্বারা উদ্দেশ্য হল কেয়ামতের আগে আগে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে আগমনের আগ পর্যন্ত পৃথিবীতে বিরাজমান ফিতনার পরিস্থিতি। যেমন, যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا ‏.‏ فَيَقُولُ لاَ ‏،‏ إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ ‏.‏ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الأُمَّةَ ‏.‏ رواه مسلم في الصحيح, كتاب الإيمان , باب نُزُولِ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ حَاكِمًا بِشَرِيعَةِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم : ١/١٣٧ رقم ١٥٦ ; و أحمد في مسنده : ٣/٣٨٤ اسناده صحيح – “আমার উম্মতের একটি গোষ্ঠি কেয়ামত পর্যন্ত সর্বদা সত্যের উপর বিরাজমান (থেকে) জিহাদ করতে থাকবে’। তিনি বলেন: ‘পরে (শেষ জামানার মুসলমানদের) মাঝে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আসমান থেকে পূণরায়) নাজিল হবেন। পরে তাদের আমীর (আল-মাহদী তাঁকে) বলবেন: ‘(হে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. !) আসুন, (ইমাম হয়ে) আমাদেরকে নামায পড়ান’। তখন তিনি বলবেন: ‘না, নিশ্চই তোমাদের (মুসলমানদেরই) কেউ তোমাদের কতকের উপর আমীর হবে। (এটা) এই উম্মাহকে আল্লাহ’র (দেয়া বিশেষ) সম্মাননা”। [সহীহ মুসলীম- ১/১৩৭, হাদিস ১৫৬; মুসনাদে আহমদ- ৩/৩৮৪] ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর দ্বিতীয়বার আগমনের ঘটনা কেয়ামতের একেবারে লাগালাগা সময়ে ঘটবে বিধায় আরবী ভাষার প্রচলন অনুসারে ঈসা আ.-এর সময়টিকে إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ – (কেয়ামত পর্যন্ত) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। الله اعلم بالصواب

ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ হাসান সনদে হযরত যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন – حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَرْوَانَ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ يَزِيدَ التَّنُوخِيِّ ، عَنِ الزُّهْرِيِّ ، قَالَ : “ تُقْبِلُ الرَّايَاتُ السُّودُ مِنَ الْمَشْرِقِ ، يَقُودُهُمْ رِجَالٌ كَالْبُخْتِ الْمَجَلَّلَةِ ، أَصْحَابُ شُعُورٍ ، أَنْسَابُهُمُ الْقُرَى ، وَأَسْمَاؤُهُمُ الْكُنَى ، يَفْتَتِحُونَ مَدِينَةَ دِمَشْقَ ، تُرْفَعُ عَنْهُمُ الرَّحْمَةُ ثَلاثَ سَاعَاتٍ . رواه نعيم بن حماد في كتاب الفتن: رقم ٥٦٤, قال مجدى بن منصور بن سيد الشوري: ص١٣٤ رقم ٥٥٠: اسناده حسن – ‘পূর্বদিক থেকে কালো পতাকা(ধারী একটি গোষ্ঠি)র আবির্ভাব হবে, (তাদের) পুরুষরা -কাপড়ে ঢাকা বুখতী উটের (কুঁজের) মতো (তাদের মাথা ও মুখকে) পেঁচিয়ে রাখবে, তারা হবে (লম্বা) চুলধারী, তাদেরকে সম্মোধন করা হবে (শহর/গ্রামের) এলাকার সাথে (সম্পর্কযুক্ত করে), তাদের নামগুলো হবে কুনিয়া-যুক্ত (উপনাম বিশিষ্ট), তারা (সিরিয়ার) দামেষ্ক দখল করবে, তাদের (অন্তর) থেকে তিনটি (বিশেষ) সময়ে দয়া-মায়া উঠে যাবে’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, আছার ৫৬৪]

ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. নিজ সনদে হযরত আলী রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حَدَّثَنَا حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ ، وَرِشْدِينُ ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ ، عَنْ أَبِي قَبِيلٍ ، عَنْ أَبِي رُومَانَ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : ” إِذَا رَأَيْتُمُ الرَّايَاتِ السُّودَ فَالْزَمُوا الأَرْضَ فَلا تُحَرِّكُوا أَيْدِيَكُمْ ، وَلا أَرْجُلَكُمْ ، ثُمَّ يَظْهَرُ قَوْمٌ ضُعَفَاءُ لا يُؤْبَهُ لَهُمْ ، قُلُوبُهُمْ كَزُبَرِ الْحَدِيدِ ، هُمْ أَصْحَابُ الدَّوْلَةِ ، لا يَفُونَ بِعَهْدٍ وَلا مِيثَاقٍ ، يَدْعُونَ إِلَى الْحَقِّ وَلَيْسُوا مِنْ أَهْلِهِ ، أَسْمَاؤُهُمُ الْكُنَى ، وَنِسْبَتُهُمُ الْقُرَى ، وَشُعُورُهُمْ مُرْخَاةٌ كَشُعُورِ النِّسَاءِ ، حَتَّى يَخْتَلِفُوا فِيمَا بَيْنَهُمْ ، ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ الْحَقَّ مَنْ يَشَاءُ . رواه نعيم بن حماد في كتاب الفتن: رقم ٥٧٣, و إسناده ضعيف جدا; و ذكرالمتقي الهندي في كنز العمال: ١١/٢٨٣ رقم ٣١٥٣٠‘যখন তোমরা (পূর্ব দিক থেকে আবির্ভূত একটি গোষ্ঠির হাতে) কালো পতাকা দেখতে পাবে, তখন জমিনকে আঁকড়ে ধরে থেকো, (কোনো অবস্থাতেই) তোমাদের হাত’কে নড়াচড়া করো না, তোমাদের পা’কেও না। (তোমরা তাদেরকে কোনো রকম সাহায্য করবে না)। এরপর একটি দূর্বল গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে, তাদের কোনো মূল্য থাকবে না, তাদের অন্তরগুলো হবে লোহার টুকড়ার মতো (শক্ত; দয়া-মায়া বলে কিছু থাকবে না)। তারা (একটি) রাষ্ট্রের হর্তাকর্তা (হয়ে বসবে)। এরা না কোনো ওয়াদা/অঙ্ঘিকার পূরণ করবে, আর না কোনো চুক্তি। তারা আল-হক্ব (আল-কুরআন/দ্বীন ইসলাম)-এর দিকে আহবান করবে, কিন্তু (বাস্তবে) তারা (নিজেরা) তার ধারকবাহক হবে না, (তারা হবে মূলতঃ গোমরাহী ও ফিতনা-ফ্যাসাদে’র ধারকবাহক)। তাদের নামগুলো হবে কুনিয়া-যুক্ত (উপনাম বিশিষ্ট), তাদেরকে সম্মোধন করা হবে (শহর/গ্রামের) এলাকার সাথে (সম্পর্কযুক্ত করে), তাদের চুলগুলো হবে নারীদের চুলের মতো লেপানো। একসময় তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ দেখা দিবে। এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আল-হক্ব (সত্য দ্বীনের বুঝ ও তাঁর কবুলিয়াত) দান করবেন’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, আছার ৫৭৩; কাঞ্জুল উম্মাল- ১১/২৮৩ ক্রমিক নং ৩১৫৩০]

# ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে আলী বিন আবি ত্বালহা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন – حدثنا ابن أبي هريرة عن أبيه عن علي بن أبي طلحة قال يدخلون دمشق برايات سود عظام فيقتتلون فيها مقتلة عظيمة شعارهم بكش بكش . رواه نعيم بن حماد في كتاب الفتن: رقم ٥٦٥; قال مجدى بن منصور بن سيد الشوري: ص١٣٤ رقم ٥٥١: فيه مجهول; و ذكرالمتقي الهندي في كنز العمال: ١١/٢٨٣ رقم ٣١٥٢٩ – ‘তারা কালো পতাকা নিয়ে (শাম/সিরিয়ার) দামেশকে ব্যাপক সংখ্যায় প্রবেশ করবে। পরে সেখানে তারা খুনাখুনি ও যুদ্ধবিগ্রহের মারাত্মক এক ময়দান/মৌসুম বানিয়ে ফেলবে। তাদের পরিচয়-চিহ্ন হবে, (তারা সামান্যতেই বলবে:) হত্যা করো, হত্যা করো’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, আছার ৫৬৫; কাঞ্জুল উম্মাল- ১১/২৮৩ ক্রমিক নং ৩১৫২৯]

# ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حدثنا يحيى بن سعيد العطار عن ضرار بن عمرو عن إسحاق بن عبد الله بن أبي فروة عمن حدثه عن أبي هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: تَأْتِيكُمْ بَعْدِي أَرْبَعُ فِتَنٍ ، الأُولَى يُسْتَحَلُّ فِيهَا الدِّمَاءُ ، وَالثَّانِيَةُ يُسْتَحَلُّ فِيهَا الدِّمَاءُ ، وَالأَمْوَالُ ، وَالثَّالِثَةُ يُسْتَحَلُّ فِيهَا الدِّمَاءُ ، وَالأَمْوَالُ ، وَالْفُرُوجُ ، وَالرَّابِعَةُ صَمَّاءُ عَمْيَاءُ مُطْبِقَةٌ ، تَمُورُ مَوْرَ الْمَوْجِ فِي الْبَحْرِ ، حَتَّى لا يَجِدَ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ مِنْهَا مَلْجَأً ، تُطِيفُ بِالشَّامِ ، وَتَغْشَى الْعِرَاقَ ، وَتَخْبِطُ الْجَزِيرَةَ بِيَدِهَا وَرِجْلِهَا ، وَتُعْرَكُ الأُمَّةُ فِيهَا بِالْبَلاءِ عَرْكَ الأَدِيمِ ، ثُمَّ لا يَسْتَطِيعُ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ يَقُولُ فِيهَا : مَهْ مَهْ ، ثُمَّ لا يَعْرِفُونَهَا مِنْ نَاحِيَةٍ إِلا انْفَتَقَتْ مِنْ نَاحِيَةٍ أُخْرَى . رواه نعيم بن حماد في كتاب الفتن: رقم ٨٩, اسناده ضعيف جداً , اورده المتقي في كنز العمال: ١١/١٦٣ رقم ٣١٠٤٧ – ‘আমার পর তোমরা (মুসলমানরা) চারটি ফিতনার সম্মুখিন হবে। প্রথমটির ক্ষেত্রে (মুসলমানদের) রক্ত’কে হালাল বানানো হবে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে (মুসলমানদের) রক্ত ও সম্পদ’কে হালাল বানানো হবে। তৃতীয়টির ক্ষেত্রে (মুসলমানদের) রক্ত, সম্পদ ও লজ্জাস্থান’কে হালাল বানানো হবে। আর চতুর্থ (ফিৎনা)টি হবে ‘(রাতের ঘন) অন্ধকারময় সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে (-র তোড়ে) রধির হয়ে দৃষ্টিশক্তিহীন অবস্থায় (কখনো) এদিক (কখনো) ওদিক ভেসে যাওয়া(র ন্যায় একটি মারাত্মক ফিতনা)। এমনকি (অবস্থা এমন হবে যে,) লোকেরা এ থেকে (নিরাপদ থাকার) কোনো আশ্রয় (খুঁজে) পাবে না। এ(ফিতনা)টি শাম-এর চার পাশ প্রদক্ষিন করবে, আর ইরাক’কে আচ্ছন্ন করে নিবে। সে তার হাত-পা দ্বারা জাজিরাতুল-আরবে যত্রতত্র বিচরন করে বেড়াবে। (মুসলীম) উম্মাহ’কে এর মধ্যে বালা-মুসিবতের দ্বারা চামড়া কষানোর মতো কষিত করা হবে। (তখন জালেমদের পক্ষ থেকে চাপানো বালা-মুসিবত এত চরমে পৌছবে যে, এসব পরিবর্তনের জন্য) কেউ সে সময় টুহ্-টাহ্ করার (মতো) সামর্থ রাখবে না। অতঃপর তারা এ(ফিতনা)টির এক দিক চিনতে পারবে না – যাবৎ না এর অপর দিকটি উন্মুক্ত করা হয়’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, হাদিস ৮৯ ; কাঞ্জুল উম্মাল- ১১/১৬৩ হাদিস ৩১০৪৭]

# ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন – قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ مُهَاجِرٍ : وَحَدَّثَنِي الْجُنَيْدُ بْنُ مَيْمُونٍ ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَمْرٍو ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : “ الْفِتْنَةُ الرَّابِعَةُ عَمْيَاءُ مُظْلِمَةٌ تَمُورُ مَوْرَ الْبَحْرِ ، لا يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ الْعَرَبِ وَالْعَجَمِ إِلا مَلأَتْهُ ذُلا وَخَوْفًا ، تُطِيفُ بِالشَّامِ ، وَتَغْشَى بِالْعِرَاقِ ، وَتَخْبِطُ بِالْجَزِيرَةِ بِيَدِهَا وَرِجْلِهَا ، تُعْرَكُ الأُمَّةُ فِيهَا عَرْكَ الأَدِيمِ ، وَيَشْتَدُّ فِيهَا الْبَلاءُ حَتَّى يُنْكَرَ فِيهَا الْمَعْرُوفُ ، وَيُعْرَفَ فِيهَا الْمُنْكَرُ ، لا يَسْتَطِيعُ أَحَدٌ ، يَقُولُ : مَهْ مَهْ ، وَلا يَرْقَعُونَهَا مِنْ نَاحِيَةٍ إِلا تَفَتَّقَتْ مِنْ نَاحِيَةٍ ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيهَا مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا ، وَلا يَنْجُو مِنْهَا إِلا مِنْ دَعَا كَدُعَاءِ الْغَرَقِ فِي الْبَحْرِ ، تَدُومُ اثْنَيْ عَشَرَ عَامًا ، تَنْجَلِي حِينَ تَنْجَلِي وَقَدِ انْحَسَرَتِ الْفُرَاتُ عَنْ جَبَلٍ مِنْ ذَهَبٍ ، فَيَقْتَتِلُونَ عَلَيْهَا حَتَّى يُقْتَلَ مِنْ كُلِّ تِسْعَةٍ سَبْعَةٌ . رواه نعيم بن حماد في كتاب الفتن: رقم ٦٧٦, رجاله ثقات غير جنيد أو حميد بن ميمون أبو عبد الحميد لم يُترجم له غير الدولابي وخرج له الضياء في المختارة محتجا به، وقد ذكر أبو حاتم أن بقية روى عن أبي عبد الحميد، فالله اعلم ، وصفوان بن عمرو الحمصي ثقة صدوق، وقد ورد هذا الحديث عن ضرار بن عمرو أيضا وضرار ضعيف – ‘চতূর্থ ফিৎনাটি হবে ‘(রাতের ঘন) অন্ধকারময় সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে (-র তোড়ে রধির হয়ে ও) দৃষ্টিশক্তিহীন অবস্থায় (কখনো) এদিক (কখনো) ওদিক ভেসে যাওয়া(র ন্যায় একটি মারাত্মক ফিতনা, যা) আরব-আজম (অনারব) কারো ঘরকে এর জিল্লতী (অপদস্থতা) ও ভয়-ভীতিতে আচ্ছন্ন না করে ছাড়বে না, তা শাম-এর চারপাশে প্রদক্ষিন করে বেড়াবে, আর ইরাক’কে আচ্ছন্ন করে নিবে, সে তার হাত-পা দ্বারা জাজিরাতুল-আরবে যত্রতত্র বিচরন করে বেড়াবে। (মুসলীম) উম্মাহ’কে এর মধ্যে চামড়া কষানোর মতো কষিত করা হবে, তখন (জালেমদের পক্ষ থেকে চাপানো) বালা-মুসিবত চরমে পৌছবে। এমনকি সেই ফিতনায় (এমন অবস্থা হবে যে, কুরআন-সুন্নাহ’র নির্দেশিত বহু) মা’রুফ (ভাল বিষয়)কে মুনকার (অপছন্দনীয়/ঘৃনার্হ) মনে করা হবে এবং (কুরআন-সুন্নাহ’র দৃষ্টিতে বহু) মুনকার (বাতিল/অপছন্দনীয়/ঘৃনার্হ বিষয়)কে ভাল মনে করা হবে। (এসব পরিবর্তনের জন্য) কেউ টুহ-টাহ করার (মতো) সামর্থ রাখবে না। এ(ফিতনা)র এক দিক ঢাকতে গেলে অপর দিক উন্মুক্ত করা ছাড়া তা (পুরোপুরি আচ্ছাদিত) করা যাবে না। তখন মানুষ সকাল কাটাবে মুমিন অবস্থায়, আর সন্ধা কাটাবে কাফের অবস্থায়। সেই ফেতনা থেকে শুধু ওই ব্যাক্তি বাঁচতে পারবে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত অবস্থায় করা দোয়ার ন্যায় (আল্লাহ’কে) ডাক দিবে। এ অবস্থা বার বছর বহাল থাকবে। এটা গড়াতে গড়াতে (একসময়) ফুরাত নদী (তার বুক চিড়ে) স্বর্ণের পাহাড় উন্মুক্ত করে দিবে। তখন লোকজন তা নিয়ে লড়াই করবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, আছার ৬৭৬]

এই রেওয়ায়েত গুলোকে এবারে ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্রের দাবীদার আইএস/দায়েশ’দের সাথে মিলিয়ে দেখিা যাক। 

(১) বলা হয়েছে- إِذَا رَأَيْتُمُ الرَّايَاتِ السُّودَ  ‘যখন তোমরা (পূর্ব দিক থেকে আবির্ভূত একটি গোষ্ঠির হাতে) কালো পতাকা দেখতে পাবে….’। আইএস/দায়েশ’দের ঝান্ডা/পতাকার রং কালো -একথা সচেতন কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।

(২) বলা হয়েছে- يَقُودُهُمْ رِجَالٌ كَالْبُخْتِ الْمَجَلَّلَةِ – ‘(তাদের) পুরুষরা -কাপড়ে ঢাকা বুখতী উটের (কুঁজের) মতো (তাদের মাথা ও মুখকে) পেঁচিয়ে রাখবে’। আইএস/দায়েশ’দের মধ্যে -পুরো মুখকে কাপড় দিয়ে ঢেকে শুধু চোখদুটোকে বেড় করে রাখার অভ্যাস উল্লেখযোগ্য মাত্রায় লক্ষনীয়।

(৩) বলা হয়েছে- شُعُورُهُمْ مُرْخَاةٌ كَشُعُورِ النِّسَاءِ তাদের চুলগুলো হবে নারীদের চুলের মতো লেপানো’। আইএস/দায়েশ’দের মধ্যে মেয়েদের মতো লেপানো লম্বা লম্বা চুল রাখার প্রবণতাও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় লক্ষনীয়।

(৪) বলা হয়েছে- أَسْمَاؤُهُمُ الْكُنَى – ‘তাদের নামগুলো হবে কুনিয়া-যুক্ত (উপনাম বিশিষ্ট)’। আইএস/দায়েশ’দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিদের নামগুলো আজ কুনিয়া/উপনাম (আবু অমুক, আবু অমুক) দিয়েই সমধিক পরিচিত। যেমন: আবু বকর আল-বাগদাদী (মূল নাম: ইব্রাহীম  আওআদ ইব্রাহীম আলী), আবু আব্দুর রহমান আল-বাইলাবী (মূল নাম: আদনান ইসমাঈল), আবু বিলাল আল-মাসহাদানী (মূল নাম: সামির), আবু আইমান আল-ইরাকী, আবু আলী আল-আম্বারী, আবু মুসআব আল-আলুস, আবু উমার আশ-শিসানী, আবু নাসের আল-আমনী  ইত্যাদি।

(৫) বলা হয়েছে- نِسْبَتُهُمُ الْقُرَى – ‘তাদেরকে সম্মোধন করা হবে (শহর/গ্রামের) এলাকার সাথে (সম্পর্কযুক্ত করে)’। আইএস/দায়েশ’দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিদের পরিচয় বিভিন্ন শহর বা গ্রাম বা এলাকার সাথে যুক্ত করে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। যেমন: ইরাকের বাগদাদ শহরের সাথে সম্মন্ধযুক্ত করে বলা হয় আবু বকর আল-বাগদাদী।

(৬) বলা হয়েছে- قُلُوبُهُمْ كَزُبَرِ الْحَدِيدِ তাদের অন্তরগুলো হবে লোহার টুকড়ার মতো (শক্ত; দয়া-মায়া বলে কিছু থাকবে না)’। এখানে পাথরের সাথে তুলনা না করে তার থেকেও শক্ত পদার্থ লোহার টুকড়োর সাথে তুলনা করা হয়েছে। তার মানে লোহার মতো শক্ত নির্দয় অন্তরের প্রমাণ দিতে হলে নারী পুরুষ ও শিশুদের সাথে কী পরিমাণ ভয়ঙ্কর দয়ামায়াহীন আচোরণ করতে হবে -একবার ভেবে দেখেছেন? আইএস/দায়েশ’রা কি জঘন্য ভাবে নারী পুরুষ ও শিশুদেরকে হত্যা করেছে তার কিছু জ্বলজ্যান্ত ভিডিও দেখলে গা শিউরে ওঠে। 

(৬) বলা হয়েছে- هُمْ أَصْحَابُ الدَّوْلَةِ – ‘তারা (একটি) রাষ্ট্রের হর্তাকর্তা (হয়ে বসবে)’। ২০০৬ ইং সালে আইএস/দায়েশ’রা তাদের প্রধান নেতা আবুবকর আল-বাগদাদী’র আবির্ভাবের পর তার নেতৃত্বে ৮ এপ্রিল ২০১৩ ইং তারিখে প্রথম ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত (আই এসআইএল) গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়, পরে তারা সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিরাট এলাকায় দখলদারী স্থাপন করে। ২৯ জুন ২০১৪ ইং সালে তাদের দখলকৃত এলাকাকে তথাকথিত ‘ইসলামী খিলাফত’ (ইসলামীক স্টেট/ইসলামী রাষ্ট্র) এবং আবুবকর আল-বাগদাদী’কে ‘খলিফা’ ঘোষণা করা হয়।

(৮) বলা হয়েছে চতুর্থ ফিতনাটি- تَغْشَى الْعِرَاقَ ইরাক’কে আচ্ছন্ন করে নিবে। আইএস/দায়েশ’দের ফিতনা’র মূল ঘাটিই হল ইরাক। ইরাক দখল করার পরই তারা সেটাকে ‘ইসলামী খিলাফত’ (ইসলামীক স্টেট/ইসলামী রাষ্ট্র) নাম দিয়ে তার হর্তাকর্তা হয়ে বসেছে। 

(৯) বলা হয়েছে চতুর্থ ফিতনাটি- تُطِيفُ بِالشَّامِ তা শাম-এর চারপাশে প্রদক্ষিন করে বেড়াবেশাম বলতে এখানে ‘বালাদে শাম’ (সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, জর্ডান -এর বিভিন্ন এলাকার সামগ্রীক রূপ)ও উদ্দেশ্য হতে পারে, আবার শুধু সিরিয়ার দামেষ্কও উদ্দেশ্য হতে পারে। (১) যদি শুধু সিরিয়ার দামেষ্ক উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ফিতনাটি তার চারপাশে ঘোরা/ প্রদক্ষিন করার অর্থ হয়তো দামেশকে ঢুকতে না পেরে তার চারপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৎপড় থাকা, যেমনটা দেখা যাচ্ছে যে, আইএস/দায়েশ’রা বাশার আল-আসাদের কর্তৃত্বাধীন দামেশক ও তার আশে পাশে অঞ্চলগুলোকে দখলে নিতে পারে নি, বাদ বাকি সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিরাট এলাকায় তারা দখলদারী স্থাপন করে নিয়েছে ও তৎপড়তা চালাচ্ছে। (২) আর যদি ‘বালাদে শাম’ (সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, জর্ডান -এর বিভিন্ন এলাকার সামগ্রীক রূপ) উদ্দেশ্য হয়, তাহলে হাদিসটির উদ্দেশ্য হয়তো এসব এলাকা জুড়ে শিয়া-সুন্নি কেন্দ্রিক সৃষ্ট হারাজ ও ফিতনা’র দিকে ইংগীত করা। এ দু’য়ের যে অর্থই নিন না কেনো তা ওখানকার বাস্তব অবস্থার সাথে দারুন ভাবে মিলে যায়। আল্লাহ’ই ভাল জানেন।

(১০) বলা হয়েছে চতুর্থ ফিতনাটি- تَخْبِطُ بِالْجَزِيرَةِ بِيَدِهَا وَرِجْلِهَا – ‘সে তার হাত-পা দ্বারা জাজিরাতুল-আরবে যত্রতত্র বিচরন করে বেড়াবে। রাসুলুল্লাহ সা.- এর সময়ে যেসব আরবী অঞ্চলগুলোকে নিয়ে ‘জারিরাতুল আরব’ বোঝানো হতো, তা বর্তমান জামানায় এই দেশগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়ে বিভক্ত: সৌদি আরব, ইয়ামেন, বাহরাঈন, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, কাতার, ওমান এবং কুয়েত, যা আজ Arabian Peninsula হিসেবে পরিচিত। আজ আমেরিকা, ইসরাঈল ও ইউরোপিয়ান দেশগুলো শিয়া-সুন্নির রক্তের উপর অস্ত্র-বিজনেস করার জন্য সুন্নি আইডিওলজীর সৌদি আরব, কাতার ও ইউনাইটেড আরব আমিরাতকে এতে মোটা অংকের বিনিয়োগ করিয়েছে এবং তারা সন্ত্রসী আইএস/দায়েশকে অস্ত্র, অর্থ, গাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। এদিকে শিয়া আইডিওলজীর সন্ত্রসীদেরকে ইরান, সিরিয়া, ইরাক, ইয়ামেন ও লেবানন অর্থ, সৈন্য, অস্ত্র ইত্যাদি দিচ্ছে শিয়া আইডিওলজীর সন্ত্রসীদেরকে; আর এর সাথ দিচ্ছে রাশিয়া ও চিন। আর জর্ডানের কিং আব্দুল্লাহ এই যুদ্ধ মৌসুমে তার দেশে খুলে বসেছে অস্ত্র-মেলা; ধুমিয়ে ব্যবসা করে নিচ্ছে। আমেরিকা ও সৌদি আরবের মধ্যে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি হয়েছে। 

(১১) বলা হয়েছে চতুর্থ ফিতনাটি- لا يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ الْعَرَبِ وَالْعَجَمِ إِلا مَلأَتْهُ ذُلا وَخَوْفًا – ‘আরব-আজম (অনারব) কারো ঘরকে এর জিল্লতী (অপদস্থতা) ও ভয়-ভীতিতে আচ্ছন্ন না করে ছাড়বে না। আইএস/দায়েশ’দের যাবতীয় অকাম-কুকামের কারণে পৃথিবীর কোনো আরব ও অনারব ঘর নেই, যারা তাদেরকে ভয় করে না। তারা গোটা মুসলীম উম্মাহর মুখকে বিশ্বের সামনে লজ্জিত করে দিয়েছে, তাদেরই কারণে সাধারণ মুসলমানদেরকে পৃথিবীর কোণে কোণে বিভিন্ন ভাবে অপদস্থ ও হেনস্ত হতে হচ্ছে। الله اعلم بالصواب

# আস-সাফর বিন নুসায়ের আল-আযদী রহ. (সাহাবী) হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণনা করেন যে- أَنَّهُ قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّا كُنَّا فِي شَرٍّ فَذَهَبَ اللَّهُ بِذَلِكَ الشَّرِّ ، وَجَاءَ بِالْخَيْرِ عَلَى يَدَيْكَ ، فَهَلْ بَعْدَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ ؟ قَالَ : ” نَعَمْ ” ، قَالَ : مَا هُوَ ؟ قَالَ : ” فِتَنٌ كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يَتْبَعُ بَعْضُهَا بَعْضًا ، تَأْتِيكُمْ مُشْتَبِهَةً كَوُجُوهِ الْبَقَرِ لَا تَدْرُونَ أَيًّا مِنْ أَيٍّ . رواه أحمد في مسنده, باقي مسند الأنصار , حديث حذيفة بن اليمان عن النبي صلى الله عليه وسلم : ٥/٣٩١، و نعيم بن حماد في كتاب الفتن : ١/٢٨ رقم ٤ – “তিনি (একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে) জিজ্ঞেস করলেন (যে): ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! (ইসলামের সুচনাকালে) আমরা মন্দ অবস্থায় ছিলাম। পরে আল্লাহ (তাআলা আমাদের মুসলমানদের উপর থেকে) সেই মন্দ (অবস্থা)কে দূর করে দেন, এবং আপনার হাত দ্বারা কল্যান আগমন করে। এই কল্যানের পরে কি (কোনো) মন্দ (অবস্থা) আসবে’? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘হ্যাঁ’ (আবারো মন্দ অবস্থা আসবে)’। হুযাইফা বললেন: ‘কী সেটা’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘(বিভিন্ন) ফিতনা সমূহ (আসবে, যার একেকটা এমন হবে) যেন ঘন কালো অন্ধাকারময় রাতের টুকরা/ফাঁলি, যার একটার পিছে আরেকটি আসতে থাকবে। তোমাদের উপরে (কাফের মুনাফেকদের পক্ষ থেকে একের পর এক অন্ধকারময় বিষাক্ত সব) সন্দেহ-সংশয় (খটকা/দ্বিধা) আসতে থাকবে, যেন গরুর মুখ (যার সবগুলোকেই একই রকম মনে হয় এবং একটি মুখ থেকে অন্যটিকে আলাদা করে চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে পড়ে)। তোমরা জানতে পারবে না (যে), কোন (ফিতনা)টি কোনটি থেকে (উৎপন্ন বা আগত হচ্ছে)”। [মুসনাদে আহমাদ– ৫/৩৯১ হাদিস ২৩৩৭৬; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/২৮ হাদিস ৪]

ফায়দা: আবু মুওয়াইহাবাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- أتت الفتن كقطع الليل؛ يركب بعضها بعضًا، الآخرة أشد من الأولى . رواه الإمام أحمد: ١٢/٤٠٨ رقم ١٥٩٣٨, و قال حمزة احمد الزين: اسناده حسن; و ابن الأعرابي في معجم شيوخ: ١/١٠٨ رقم ٩٣; الطبراني: ٢٢/٣٤٧; الخطيب: ٨/٢٢٢; و الحاكم: ٣/٥٥; البيهقي في دلائل: ٧/١٦٢ – রাতের (ঘন কালো অন্ধকারময়) টুকরা মতো একের উপর আরেকটা ফিতনা আবির্ভূত হতে থাকবে, (যার) প্রথমটির চাইতে শেষটি কঠিনতর হবে’। [মুসনাদে আহমদ- ১২/৪০৮ হাদিস ১৫৯৩৮; মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/৫৫; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২২/৩৪৭; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ৮/২২২; দালায়েলুন নাবুয়ত, বাইহাকী- ৭/১৬২]

# হযরত আলী রা. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরা উভয়েই বলেছেন- إِِنَّ الْفِتْنَةَ إِِذَا أَقْبَلَتْ شَبَّهَتْ , وَإِذَا أَدْبَرَتْ أَسْفَرَتْ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف : ٢٢/٣٤١ رقم ٣٨٨٨٩، قال : رجاله ثقات حتي المنهال بن عمرو، و رواه نعيم بن حماد في كتاب الفتن : ١/١٤١ رقم ٣٤٨ : عن عبد الله موقوفا بسند حسن– “নিশ্চই যখনই কোনো ফিতনা’র আগমন ঘটে, (তখন) তা (জনমানুষের চোখের সামনে এমন) দ্বিধা/খটকা/সন্দেহ/সংশয়’জনক (অবস্থায়) থাকে (যার উপকারীতা বা ক্ষতির দিকেটি প্রাথমিক অবস্থায় মানুষের উপলব্ধিতে আসে না। এজন্য মানুষেরা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সেটাকে উপকারী ভেবে ফিতনায় নিপতিত হয়ে যায়)। আর যখন সে(ই ফিতনা)টি (তার ক্ষতি ও বরবাদি শেষ করে) পিছু ফিরে চলে যায়, তখন তা(র পরিনতি ও ফলাফল মানুষের সামনে) ‍উন্মোচিত/উন্মুক্ত হয়ে পড়ে (যে, বিষয়টি আসলে ক্ষতিকরই ছিলো)”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২২/৩৪১ হাদিস ৩৮৮৮৯; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/১৪১ হাদিস ৩৪৮]

# আওফ বিন মালেক আল-আশযায়ী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, মুয়ায বিন জাবাল রা. বলেন-  خَمْسٌ أَظْلَلْنَكُمْ مَنْ أَدْرَكَ مِنْهُنَّ شَيْئًا ، ثُمَّ اسْتَطَاعَ أَنْ يَمُوتَ ، فَلْيَمُتْ : أَنْ يَظْهَرَ التَّلاعُنُ عَلَى الْمَنَابِرِ ، وَيُعْطَى مَالُ اللَّهِ عَلَى الْكَذِبِ ، وِالْبُهْتَانِ ، وَسَفْكِ الدِّمَاءِ بِغَيْرِ حَقٍّ ، وَتُقْطَعُ الأَرْحَامُ ، وَيُصْبِحُ الْعَبْدُ لا يَدْرِي أَضَالٌّ هُوَ أَمْ مُهْتِدٍ . رواه الحاكم في المستدرك على الصحيحين , كتاب الفتن والملاحم , الترهيب من إمارة السفهاء: ٤/٤٢٣ ، وقال هذا حديث صحيح على شرط الشيخين و لم يخرجاه بهذه السياقة، ووافقه الذهبي في “تلخيصه كما في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ١/٨٨٧ – “(অচিরেই) পাঁচটি (এমন বিষয় ব্যপাক ভাবে প্রকাশ পাবে, যা) তোমাদের (তখনকার মুসলীম সমাজ গুলোকে)কে (ভিষন ভাবে) অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিবে। যে ব্যাক্তি ওগুলোর মধ্যে থেকে কোনো কিছুর দেখা পাবে, তার পক্ষে মড়ে যাওয়া সম্ভব হলে সে যেন মড়ে যায়। (সে জামানায় এসব বিষয়) প্রকাশ পাবে: (১) মিম্বর/মঞ্চের উপরে (দাঁড়িয়ে একে অন্যের উপরে, এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপরে) অভিশাপ প্রদান করবে, (২) আল্লাহ’র ধ্বনমাল মিথ্যা’র ভিত্তিতে প্রদান করা হবে, (৩) (একে অন্যের উপরে, এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপরে) অপবাদ আরোপ করবে, (৪) না-হক্ব ভাবে রক্ত বহাবে, (৫) রেহেম/আত্বীয়তা’র সম্পর্ক সমূহ কর্তন করবে, এবং (৬) বান্দার সকালে উঠে জানবে না যে, সে (ফিথনার দ্বারা) পথভ্রষ্ঠ হয়েছে, নাকি হেদায়েতপ্রাপ্ত অবস্থায় রয়ে ছে”। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৪২৩]

# যায়েদ বিন ওয়াহবের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হুযাইফা রা. বলেছেন- إِنَّ لِلْفِتْنَةِ وَقَفَاتٍ وَبَعَثَاتٍ ، فَإِنَ اسْتَطَعْت أَنْ تَمُوتَ فِي وَقَفَاتِهَا فَافْعَلْ . رواه ابن أبي شيبة في مصنفه , كتاب الفتن : ٢٢/٣٠ رقم ٣٨٢٧٣ ، إسناده صحيح – “নিশ্চই ফিতনা’র ওয়াকাফাত (বিরতি কাল সমূহ) এবং বায়াছাত (ধেয়ে আসার মুহূর্ত সমূহ) থাকে। তোমার পক্ষে যদি তার ওয়াকাফাত-এ(র সময়ে) মড়ে যাওয়া সম্ভব হয়, তাহলে তুমি তাই করো”। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ২২/৩০ হাদিস ৩৮২৭৩]

ফায়দা: অন্য রেওয়ায়েতে যায়েদ বিন ওয়াহবের সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে যে- قِيلَ لِحُذَيْفَةَ : مَا وَقَفَاتُ الْفِتْنَةِ ، وَمَا بَعَثَاتُهَا ، قَالَ : بَعَثَاتُهَا سَلُّ السَّيْفِ ، وَوَقَفَاتُهَا إغْمَادُهُ . رواه ابن أبي شيبة في مصنفه , كتاب الفتن : ٢٢/٤٣ رقم ٣٨٢٩٤ ، إسناده حسن – “হুযাইফ (রা.)কে জিজ্ঞেস করা হল: ফিতনার ‘ওয়াকাফাত’ কী? আর তার ‘বায়াছাত(ই-বা) কী’? তিনি বললেন: ‘বায়াছাত হল (গন্ডগোলের জন্য) তরবারী খাপমুক্ত করা, আর তার ওয়াফাকাত হল সেটাকে খাপের ভিতরে ঢুকানো”। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ২২/৪৩ হাদিস ৩৮২৯৪]

# আবু ইদ্রিস রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে , হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. এরশাদ করেন- إِنَّهَا فِتَنٌ قَدْ أَظَلَّتْ كَجِبَاهِ الْبَقَرِ يَهْلِكُ فِيهَا أَكْثَرُ النَّاسِ إِلاَّ مَنْ كَانَ يَعْرِفُهَا قَبْلَ ذَلِكَ . رواه ابن أبي شيبة في المصنف : ٢٢/٦٥ رقم ٣٨٣٥٠ إسناده صحيح، – “নিশ্চই (আখেরী জামানায় ঘন কালো অন্ধকারময়) ফিতনা সমূহ হবে, যা (মুসলমানদের ভালো মন্দ চেনার দৃষ্টিশক্তিকে) অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেলবে -(যেমনটা ঘটে থাকে কোনো ঘন অন্ধকারময় রাতে গরুর পালের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কোনো) গরুর মুখ (খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে) -সেরকম (সুকঠিন)। ও(ফিতনা)র মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই (ইমান ও আমলের প্রশ্নে) ধ্বংস-বরবাদ হয়ে যাবে; কেবল সেই ব্যাক্তি ছাড়া যে -ও(ই ফিতনা)টি ঘটার আগেই- সেটাকে চিনে নিয়েছে” [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২২/৬৫ হাদিস ৩৮৩৫0; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মা- ১/১৯ হাদিস ৫; কানজুল উম্মাল, মুত্তাকী- ১১/২১৫ হাদিস ৩১২৭৯]

# মাশরুক রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এরশাদ করেন- لَيْسَ عَامٌ إِلَّا وَالَّذِي بَعْدَهُ شَرٌ مِنْهُ , لَا أَقُولُ : عَامٌ أَمْطَرُ مِنْ عَامٍ , وَلَا عَامٌ أَخْصَبُ مِنْ عَامٍ , وَلَا أَمِيرٌ خَيْرٌ مِنْ أَمِيرٍ , لَكِنْ ذَهَابُ عُلَمَائِكُمْ وَخِيَارِكُمْ , ثُمَّ يَحْدُثُ أَقْوَامٌ يَقِيسُونَ الْأُمُورَ بآرَائِهِمْ ؛ فَيُهْدَمُ الْإِسْلَامُ وَيُثْلَمُ . رواه أبو عبد الله محمد بن وضاح بن بزيع القرطبي في البدع والنهي عنها, باب كل محدثة بدعة : ١/٧١ رقم ٨١ اسناده ضعيف، والدارمي في مقدمة سننه برقم ١٩٤ من طريق مجالد بن سعيد به، ومجالد ضعيف، و قد أعلَّه الهيثمي في “مجمع الزوائد” : ١/١٨٠ بسب مجالد بن سعيد، وجاء أيضًا عن ابن مسعود رضي الله عنه عند البيهقي في “الكبرى” : ٣/٣٦٣ ، و له شواهد ذكر بعضها الحافظ ابن حجر في “الفتح” : ١٣/٢٧ و صحَّحه بها، فيكون صحيحًا بشواهده ، والله أعلم   – “(আগত জামানা গুলোতে) এমন কোনো বছর (অতিক্রান্ত) হবে না, যার পরের (বছর)টি তার (পূর্বের বছরটি) থেকে আরো বেশি মন্দ না হবে। আমি বলছি না – ‘(পূর্বের) বছর(টি তার পরের) বছর থেকে বেশি বৃষ্টিপাত দিবে, (পূর্বের) বছর(টি তার পরের) বছর থেকে বেশি ফলন দিবে, (পূর্বের) বছর(টিতে বিদ্যমান) শাসক (তার পরেরর বছরে বিদ্যমান) শাসক থেকে বেশি উত্তম হবে। বরং (আমি বলতে চাচ্ছি, সেই জামানা গুলোতে) তোমাদের ওলামা(-ই-কেরাম) এবং তোমাদের ভালো লোকগুলি (একে একে দুনিয়া থেকে) বিদায় নিবেন। এরপর এমন সব গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে, যারা (কুরআন ও সুন্নাহ’র শরয়ী বিধিবিধান গুলোকে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে) তাদের (ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রিয়) বিষয়গুলোকে নিজেদের (নিছক বিবেকপ্রসূত যুক্তি-নির্ভর) মতামত সমূহের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দিবে। ফলে ইসলাম (দুনিয়া থেকে) বিলুপ্ত(প্রায়) ও অথর্ব(প্রায়) হয়ে যাবে”। [আল-বাদউ, ইমাম ইবনে ওযায়হ- ১/৭০ হাদিস ৭৮; সুনানে দারেমী- ১/৭৬ হাদিস ১৯৪; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী- ১/৫১৭ হাদিস ২১০ ও ২১১; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ৯/১০৯ হাদিস ৮৫৫১; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী- ৩/৩৬৩]; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইমাম ইবনু আব্দিল বার- ২/১০৪৩ হাদিস ২০০৯]