কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন সমূহ – ৯ – মহানবী ﷺ -এর ভবিষ্যতবাণী
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
[উল্লেখ্য, এই গোটা আলোচনায় উল্লেখিত বিভিন্ন হাদিস ও আছার এবং আরবী ইবারত সমূহের অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]
# [ভবিষ্যতবাণী ৯-১] নওয়াস বিন সামআন রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলে- ذَكَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ ذَاتَ غَدَاةٍ، فَخَفَّضَ فيه وَرَفَّعَ، حتَّى ظَنَنَّاهُ في طَائِفَةِ النَّخْلِ، فَلَمَّا رُحْنَا إِلَيْهِ عَرَفَ ذلكَ فِينَا، فَقالَ: ما شَأْنُكُمْ؟ قُلْنَا: يا رَسُولَ اللهِ، ذَكَرْتَ الدَّجَّالَ غَدَاةً، فَخَفَّضْتَ فيه وَرَفَّعْتَ، حتَّى ظَنَنَّاهُ في طَائِفَةِ النَّخْلِ، فَقالَ: غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُنِي علَيْكُم، إنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ، فأنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ، وإنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ، فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ، وَاللَّهُ خَلِيفَتي علَى كُلِّ مُسْلِمٍ، إنَّه شَابٌّ قَطَطٌ، عَيْنُهُ طَافِئَةٌ، كَأَنِّي أُشَبِّهُهُ بعَبْدِ العُزَّى بنِ قَطَنٍ، فمَن أَدْرَكَهُ مِنكُمْ، فَلْيَقْرَأْ عليه فَوَاتِحَ سُورَةِ الكَهْفِ، إنَّه خَارِجٌ خَلَّةً بيْنَ الشَّأْمِ وَالْعِرَاقِ، فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالًا، يا عِبَادَ اللهِ فَاثْبُتُوا، قُلْنَا: يا رَسُولَ اللهِ، وَما لَبْثُهُ في الأرْضِ؟ قالَ: أَرْبَعُونَ يَوْمًا، يَوْمٌ كَسَنَةٍ، وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ، وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ، وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ قُلْنَا: يا رَسُولَ اللهِ، فَذلكَ اليَوْمُ الذي كَسَنَةٍ، أَتَكْفِينَا فيه صَلَاةُ يَومٍ؟ قالَ: لَا، اقْدُرُوا له قَدْرَهُ، قُلْنَا: يا رَسُولَ اللهِ، وَما إِسْرَاعُهُ في الأرْضِ؟ قالَ: كَالْغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ، فَيَأْتي علَى القَوْمِ فَيَدْعُوهُمْ، فيُؤْمِنُونَ به وَيَسْتَجِيبُونَ له، فَيَأْمُرُ السَّمَاءَ فَتُمْطِرُ، وَالأرْضَ فَتُنْبِتُ، فَتَرُوحُ عليهم سَارِحَتُهُمْ، أَطْوَلَ ما كَانَتْ ذُرًا، وَأَسْبَغَهُ ضُرُوعًا، وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ، ثُمَّ يَأْتي القَوْمَ، فَيَدْعُوهُمْ فَيَرُدُّونَ عليه قَوْلَهُ، فَيَنْصَرِفُ عنْهمْ، فيُصْبِحُونَ مُمْحِلِينَ ليسَ بأَيْدِيهِمْ شيءٌ مِن أَمْوَالِهِمْ، وَيَمُرُّ بالخَرِبَةِ، فيَقولُ لَهَا: أَخْرِجِي كُنُوزَكِ، فَتَتْبَعُهُ كُنُوزُهَا كَيَعَاسِيبِ النَّحْلِ، ثُمَّ يَدْعُو رَجُلًا مُمْتَلِئًا شَبَابًا، فَيَضْرِبُهُ بالسَّيْفِ فَيَقْطَعُهُ جَزْلَتَيْنِ رَمْيَةَ الغَرَضِ، ثُمَّ يَدْعُوهُ فيُقْبِلُ وَيَتَهَلَّلُ وَجْهُهُ، يَضْحَكُ، فَبيْنَما هو كَذلكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ المَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ، فَيَنْزِلُ عِنْدَ المَنَارَةِ البَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ، بيْنَ مَهْرُودَتَيْنِ، وَاضِعًا كَفَّيْهِ علَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ، إِذَا طَأْطَأَ رَأْسَهُ قَطَرَ، وإذَا رَفَعَهُ تَحَدَّرَ منه جُمَانٌ كَاللُّؤْلُؤِ، فلا يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إِلَّا مَاتَ، وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرْفُهُ، فَيَطْلُبُهُ حتَّى يُدْرِكَهُ ببَابِ لُدٍّ، فَيَقْتُلُهُ، ثُمَّ يَأْتي عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ قَوْمٌ قدْ عَصَمَهُمُ اللَّهُ منه، فَيَمْسَحُ عن وُجُوهِهِمْ وَيُحَدِّثُهُمْ بدَرَجَاتِهِمْ في الجَنَّةِ، فَبيْنَما هو كَذلكَ إِذْ أَوْحَى اللَّهُ إلى عِيسَى: إنِّي قدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي، لا يَدَانِ لأَحَدٍ بقِتَالِهِمْ، فَحَرِّزْ عِبَادِي إلى الطُّورِ وَيَبْعَثُ اللَّهُ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ، وَهُمْ مِن كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ . أخرجه مسلم في الصحيح , كتاب الفتن وأشراط الساعة : رقم ٢٩٣٧ ; و الترمذي في سننه , كتاب الفتن عن رسول الله ﷺ , باب ما جاء في فتنة الدجال : رقم ٢٢٤٠ دون السؤال ، و أحمد في مسنده : رقم ١٧٦٢٩ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ একদিন দাজ্জালের আলোচনা করলেন। তখন তিঁনি (দ্বীনের বিচারে) তার (তথা দাজ্জালের) তুচ্ছতা/হীনতার বর্ণনা দিলেন, আবার তার (ভয়ানক ফিতনার গুরুত্বও) তুলে ধরলেন। (তিনি বিষয়গুলোকে এমন জীবন্তভাবে তুলে ধরছিলেন যে,) আমাদের মনে হচ্ছিল সে খেজুর গাছের ঝোপের মধ্যে (লুকিয়ে) আছে। (এর পরে একসময় আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছ থেকে চলে যাই)। পরে যখন (সন্ধায়) তাঁর কাছে ফিরে আসি, তখন তিনি আমাদের মধ্যে সেটা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন: ‘কী হয়েছে তোমাদের’? আমরা বললাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি সকালে দাজ্জালের আলোচনা করেছিলেন। তখন তার তুচ্ছতা/হীনতার বর্ণনা দিলেন, আবার তার (ভয়ানক ফিতনার গুরুত্বও এমন জীবন্তভাবে) তুলে ধরলেন (যে,) আমাদের মনে হচ্ছিল সে খেজুর গাছের ঝোপের মধ্যে (লুকিয়ে) আছে’। তিনি বললেন: ‘দাজ্জাল নয়; তোমাদের উপরে অন্য কিছু নিয়ে আমার (বেশি) ভয় হয়। আমি তোমাদের মাঝে (জীবিত) থাকতেই যদি সে বের হয়, তাহলে তোমাদের লাগবে না, আমি (নিজেই) তাকে প্রতিহত করবো। আর সে যদি আমি তোমাদের মাঝে (জীবিত) না থাকা অবস্থায় বের হয়, তাহলে প্রতিহতের বিষয়টি (প্রত্যেক মুসলমান) নিজ দায়িত্বে থাকবে এবং (সে ক্ষেত্রে) আমার স্থলে (দয়াময় করুনাময়) আল্লাহ’ই প্রত্যেক (মুমিন) মুসলমানের উপরে তত্ত্বাবধায়ক থাকবেন। (ভাল করে দাজ্জালের বৈশিষ্ট জেনে রাখো)। নিশ্চই সে একজন অধিকমাত্রার চুল ওয়ালা যুবক, তার (এক দিকের) চোখটি (কোটরের ভিতরে) নির্জীব/অসতেজ (থাকবে)। আমি -তার সাদৃশ্যতা (কার সাথে মিলে, সেই উদাহরণ) দিলে (বলবো, সে অনেকটা) আব্দুল উযযা বিন ক্বাতানের মতো (দেখতে)। তোমাদের (মুসলমানদের) মধ্যে যে তার সাক্ষাত পাবে, সে যেন ওর সামনে সুরা কাহফের প্রথম (১০ টি আয়াত) পড়ে নেয়। সে বের হবে ইরাক এবং শামের মাঝামাঝি (একটি) সংযোগস্থল (এলাকা) থেকে। পরে সে ফ্যাসাদ/দূর্যোগ সৃষ্টি করবে ডানে ও বামে। ওহে আল্লাহ’র বান্দাগণ, তোমরা (তার ফিতনার সময়ও দ্বীনের উপরে) দৃঢ়পদে থেকো, (কোনো মতেই ইমান ছাড়বে না)’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! পৃথিবীতে তার স্থায়ীত্ব কত (দিন) হবে’ ? তিনি বললেন: ‘চল্লিশ দিন (থাকবে, যার) একটি দিন হবে এক বছরের মতো (দীর্ঘ), একটি দিন হবে এক মাসের মতো (দীর্ঘ), একটি দিন হবে এক সপ্তাহের মতো (দীর্ঘ) এবং তার বাদবাকি দিনগুলো হবে তোমাদের (স্বাভাবিক) দিনগুলোর মতো’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! তার যে দিনটি এক বছরের মতো (দীর্ঘ) হবে, তাতে কি আমাদের জন্য এক দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে’? তিনি বললেন: ‘না। (বরং) তোমরা তার (তথা নামাযের) ওয়াক্ত (হিসাব করে) নির্ণয় করে নিবে (এবং ওয়াক্ত মতো নামায আদায় করবে)’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! পৃথিবীতে তার ভ্রমন কী (রকম) হবে’? তিনি বললেন: ‘যেমনি ভাবে বায়ু মেঘকে হাকিয়ে নিয়ে যায়। সে একটি গোষ্ঠির কাছে এসে তাদেরকে (তার ফিতনাবাদী মত ও পথের দিকে) আহবান করবে, ফলে তারা (ফিতনায় প্ররোচিত হয়ে) তার উপরে ইমান আনবে ও তার ডাকে সাড়া দিবে। তখন সে আকাশকে (তাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষানোর) নির্দেশ দিবে, ফলে তা বৃষ্টি বর্ষন করবে এবং সে ভূমিকে (ফলন ফলানোর নির্দেশ দিবে), ফলে তা ফলন দিবে। পরে তাদের গবাদী পশুগুলো (সন্ধায়) তাদের কাছে বাসস্থানে ফিরে আসবে সুউচ্চ কুঁজ, (দুধে ভরা) টইটুম্বুর স্তন ও ভর্তি পেট নিয়ে। এরপর সে (আরেক) গোষ্ঠির কাছে এসে তাদেরকে (তার ফিতনাবাদী মত ও পথের দিকে) আহবান করবে। কিন্তু তারা তার কথাকে প্রত্যাক্ষান করবে। পরে সে তাদের থেকে চলে যাবে। পরে তাদের সকাল হবে দুর্ভিক্ষগ্রস্থ অবস্থায়। তাদের হাতে ধ্বনসম্পদের কিছুই থাকবে না। পরে সে এক পরিত্যাক্ত স্থান দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে (সম্মোধন করে) বলবে: ‘তুমি তোমার গুপ্তধ্বনকে বের করে দাও’। ফলে গুপ্তধ্বন তাকে (তেমনি ভাবে) অনুসরণ করবে, যেভাবে মৌমাছি মৌরাণীকে অনুসরণ করে। এরপর সে পূর্ণযৌবনভরা এক যুবককে আহবান করবে, তারপর তাকে তরবারী দিয়ে আঘাত করবে। ফলে সে একদম মাঝ বরাবর দিখন্ডিত হয়ে যাবে। তারপর তাকে ডাক দিবে। ফলে সে আনন্দময় চেহারায় তার কাছে আসবে (এবং) হেসে দিবে। এ (ঘটনা)টা (যখন) ঘটতে থাকবে তখন আল্লাহ (তাঁর প্রকৃত মাসিহ) ঈসা ইবনে মারইয়ামকে পাঠাবেন। তিনি এক জোড়া উজ্জল জাফরানী কাপড়ে (আবৃতাবস্থায়) দুজন ফেরেশতার ডানার উপরে হাত রেখে দামেশকের পূর্ব সাদা মিনারের কাছে অবতরন করবেন। তিনি যখন তাঁর মাথা ঝুঁকাবেন, তখন (তাঁর মাথার চুল থেকে পানির) ফোটা টপকে টপকে পড়বে। আর তিনি যখন মাথা উঠাবেন, তখন মুক্তার দানার মতো (পানিফোটার) বিন্দুদানা ঝড়ে পড়বে। তাঁর নিঃশ্বাসের বাতাস গিয়ে যে কাফেরকে লাগবে সে না মড়ে রক্ষা পারবে না। তাঁর দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে, তাঁর নি:শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত গিয়ে পৌছবে। তিঁনি তার (তথা দাজ্জালের) সন্ধানে রত থাকবেন যাবত না (ফিলিস্তিনের) বাবে-লূদে (গিয়ে) তার সাক্ষাৎ পান। পরে তিঁনি তাকে (সেখানে) হত্যা করবেন। এরপর ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) ওই গোষ্ঠির কাছে আসবেন, যাদেরকে (তাদের ইমানী অবিচলতার কারণে) আল্লাহ ওর (তথা দাজ্জালের ফিতনা) থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। পরে তিঁনি তাদের মুখগুলিতে (বরকতময়) হাত বুলিয়ে দিবেন এবং তাদেরকে জান্নাতে তাদের মর্তবাস্তরের কথা জানাবেন। এসব হতে থাকবে, এমন সময় ঈসা (আ.)-এর কাছে আল্লাহ (এই) ওহী পাঠাবেন (যে), আমি আমার (এমন সব) বান্দাদেরকে (আজ) বের হতে দিয়েছি, যাদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারোরই নেই। তাই আমার বান্দাদেরকে নিয়ে তূর (পাহড়)-এ আশ্রয় গ্রহন করো। আল্লাহ (এরপর তাঁর ওয়াদা অনুসারে) ইয়াজুজ মাজুজ’ (গোষ্ঠি)কে প্রেরন করবেন এবং তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে বেড়িয়ে ধেয়ে আসবে”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩৭; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২৪০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৭৬২৯; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৬৬১ হাদিস ৮৫৭৩; আল-ইমান, ইমাম ইবনু মানদাহ- ২/৯৩৩ হাদিস ১০২৭]
ফায়দা: উপরের হাদিস সহ বিভিন্ন হাদিস থেকে অনুমিত হয় যে, দাজ্জালের চল্লিশ তম দিন ফজরের নামাযের জামাআতের ইকামত দানের পর ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. আসমান থেকে নাজিল হবেন সিরিয়ার দামেশক জামে মসজিদের পূর্ব দিকস্থ সাদা মিনারা’র কাছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ যে সময় এই ভবিষ্যতবাণী ব্যাক্ত করেছিলেন, তখন তাঁর মদিনা সমজিদও ছিল খেজুর পাতার ছাউনিওয়ালা; আজকালকার মতো অত্যাধুনিক সমজিদের কথা তখন কারোর কল্পনাতেও ধরেনি। তাছাড়া তখন সিরিয়া ছিল খৃষ্টান কাফেরদের দখলে, ফলে তখন সিরিয়ায় কোনো মসজিদই ছিল না। সিরিয়া মুসলমানদের কবজায় আসে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মৃত্যুর পর -আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর খিলাফত কালে। তখনও সাদা মিনারা ওয়ালা কোনো মসজিদ ছিল না সিরিয়ার দামেশকে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর এই ভবিষ্যৎবাণীর প্রায় সাড়ে চোদ্দ’শ বছর পর এই আখেরী জামানায় এসে মানুষজন দেখতে পেয়েছে সিরিয়ার দামেশক জামে মসজিদের পূর্ব দিকস্থ সেই সাদা মিনারা’টি। এই মসজিদটি ‘উমাইয়া মসজিদ’ নামে সমধিক পরিচিত। অবশ্য, ২০১৩ ইং সালে সিরিয়ার একটি শিয়া বাহীনি এই মসজিদের উপরে বোমা মেড়ে ভেশ বড়সড় ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে। সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান বাশার আল আসাদ এর মেরামতের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরে এর মেরামতের কাজ চলছিল। এখন কী অবস্থায় তার পূর্ণ বিবরণ দিতে পারছি না। তবে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. দ্বিতীয়বার আসার আগে আগে ওই মিনারটি ঠিকই সাদা মিনার হিসেবে নিজের পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকবে। الله اعلم بالصواب
# [ভবিষ্যতবাণী ৯-২] ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- سَمِعْتُ نِدَاءَ الْمُنَادِي مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُنَادِي الصَّلاَةَ جَامِعَةً . فَخَرَجْتُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَصَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَكُنْتُ فِي صَفِّ النِّسَاءِ الَّتِي تَلِي ظُهُورَ الْقَوْمِ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَتَهُ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ ” لِيَلْزَمْ كُلُّ إِنْسَانٍ مُصَلاَّهُ ” . ثُمَّ قَالَ ” أَتَدْرُونَ لِمَ جَمَعْتُكُمْ ” . قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ ” إِنِّي وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُكُمْ لِرَغْبَةٍ وَلاَ لِرَهْبَةٍ وَلَكِنْ جَمَعْتُكُمْ لأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلاً نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ وَحَدَّثَنِي حَدِيثًا وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْ مَسِيحِ الدَّجَّالِ حَدَّثَنِي أَنَّهُ رَكِبَ فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ مَعَ ثَلاَثِينَ رَجُلاً مِنْ لَخْمٍ وَجُذَامَ فَلَعِبَ بِهِمُ الْمَوْجُ شَهْرًا فِي الْبَحْرِ ثُمَّ أَرْفَئُوا إِلَى جَزِيرَةٍ فِي الْبَحْرِ حَتَّى مَغْرِبِ الشَّمْسِ فَجَلَسُوا فِي أَقْرُبِ السَّفِينَةِ فَدَخَلُوا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْهُمْ دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يَدْرُونَ مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقَالُوا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ . قَالُوا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتْ أَيُّهَا الْقَوْمُ انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ . قَالَ لَمَّا سَمَّتْ لَنَا رَجُلاً فَرِقْنَا مِنْهَا أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً – قَالَ – فَانْطَلَقْنَا سِرَاعًا حَتَّى دَخَلْنَا الدَّيْرَ فَإِذَا فِيهِ أَعْظَمُ إِنْسَانٍ رَأَيْنَاهُ قَطُّ خَلْقًا وَأَشَدُّهُ وِثَاقًا مَجْمُوعَةٌ يَدَاهُ إِلَى عُنُقِهِ مَا بَيْنَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى كَعْبَيْهِ بِالْحَدِيدِ قُلْنَا وَيْلَكَ مَا أَنْتَ قَالَ قَدْ قَدَرْتُمْ عَلَى خَبَرِي فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ قَالُوا نَحْنُ أُنَاسٌ مِنَ الْعَرَبِ رَكِبْنَا فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ فَصَادَفْنَا الْبَحْرَ حِينَ اغْتَلَمَ فَلَعِبَ بِنَا الْمَوْجُ شَهْرًا ثُمَّ أَرْفَأْنَا إِلَى جَزِيرَتِكَ هَذِهِ فَجَلَسْنَا فِي أَقْرُبِهَا فَدَخَلْنَا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْنَا دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يُدْرَى مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقُلْنَا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ . قُلْنَا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتِ اعْمِدُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ فَأَقْبَلْنَا إِلَيْكَ سِرَاعًا وَفَزِعْنَا مِنْهَا وَلَمْ نَأْمَنْ أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً فَقَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ أَسْأَلُكُمْ عَنْ نَخْلِهَا هَلْ يُثْمِرُ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنَّهُ يُوشِكُ أَنْ لاَ تُثْمِرَ قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ بُحَيْرَةِ الطَّبَرِيَّةِ . قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِيهَا مَاءٌ قَالُوا هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ . قَالَ أَمَا إِنَّ مَاءَهَا يُوشِكُ أَنْ يَذْهَبَ . قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ عَيْنِ زُغَرَ . قَالُوا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِي الْعَيْنِ مَاءٌ وَهَلْ يَزْرَعُ أَهْلُهَا بِمَاءِ الْعَيْنِ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ وَأَهْلُهَا يَزْرَعُونَ مِنْ مَائِهَا . قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَبِيِّ الأُمِّيِّينَ مَا فَعَلَ قَالُوا قَدْ خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَنَزَلَ يَثْرِبَ . قَالَ أَقَاتَلَهُ الْعَرَبُ قُلْنَا نَعَمْ . قَالَ كَيْفَ صَنَعَ بِهِمْ فَأَخْبَرْنَاهُ أَنَّهُ قَدْ ظَهَرَ عَلَى مَنْ يَلِيهِ مِنَ الْعَرَبِ وَأَطَاعُوهُ قَالَ لَهُمْ قَدْ كَانَ ذَلِكَ قُلْنَا نَعَمْ . قَالَ أَمَا إِنَّ ذَاكَ خَيْرٌ لَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ وَإِنِّي مُخْبِرُكُمْ عَنِّي إِنِّي أَنَا الْمَسِيحُ وَإِنِّي أُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِي فِي الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِي الأَرْضِ فَلاَ أَدَعَ قَرْيَةً إِلاَّ هَبَطْتُهَا فِي أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ فَهُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَىَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا اسْتَقْبَلَنِي مَلَكٌ بِيَدِهِ السَّيْفُ صَلْتًا يَصُدُّنِي عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلاَئِكَةً يَحْرُسُونَهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَطَعَنَ بِمِخْصَرَتِهِ فِي الْمِنْبَرِ ” هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ ” . يَعْنِي الْمَدِينَةَ ” أَلاَ هَلْ كُنْتُ حَدَّثْتُكُمْ ذَلِكَ ” . فَقَالَ النَّاسُ نَعَمْ ” فَإِنَّهُ أَعْجَبَنِي حَدِيثُ تَمِيمٍ أَنَّهُ وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْهُ وَعَنِ الْمَدِينَةِ وَمَكَّةَ أَلاَ إِنَّهُ فِي بَحْرِ الشَّامِ أَوْ بَحْرِ الْيَمَنِ لاَ بَلْ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ ما هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ ” . وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمَشْرِقِ . قَالَتْ فَحَفِظْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . رواه مسلم في صحيحه, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب قصة الجساسة: رقم ٢٩٤٢ – ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আহবানকারীকে আহবান করতে শুনলাম। আহবানকারী আহবান করলেন: ‘নামাযের জন্য একত্রিত হও’। তখন আমি মসজিদের উদ্দেশ্যে বেড় হলাম এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে নামায আদায় করলাম। লোকজনের পিছনে নারীদের যে কাতার ছিল আমি ছিলাম সেখানে। রাসুলুল্লাহ ﷺ নামায শেষ করে হাস্যজ্বল অবস্থায় মিম্বরের উপরে বসলেন। তারপর বললেন: সকলে (তার নিজ নিজ) মুসল্লায় বসে থাকো। অতঃপর বললেন: তোমরা কি জানো, আমি তোমাদেরকে কি জন্য একত্রিত করেছি? তারা বললেন: আল্লাহ জানেন ও তাঁর রাসুল জানেন। তিনি বললেন: ‘আল্লাহ’র কসম, আমি তোমাদেরকে কোনো আশা-কামনার জন্যও একত্রিত করিনি, ভয়-ভীতির জন্য (একত্রিত) করিনি। আমি একত্রিত করেছি এজন্য যে, তামীম দ্বারী ছিল একজন খৃষ্টান ব্যাক্তি। সে (আমার কাছে) এসে (আমার হাতে) বায়াত হয়েছে ও ইসলাম কবুল করেছে। সে আমাকে এমন ঘটনা শুনিয়েছে, যা -আমি তোমাদেরকে মাসিহ দাজ্জাল সম্পর্কে যা বলেছিলাম -তার সত্তায়ন করে। সে আমার কাছে বর্ণনা করেছে যে, সে লাখ্ম ও জুযান (গোত্রের) ত্রিশ’জন লোকের সাথে সামুদ্রিক জাহাজে আরোহন করে(যাত্রা করে)ছিল। পরে (উথাল পাতাল) ঢেউ তাদেরকে নিয়ে সমুদ্রের মধ্যে মাস খানেক খেলা করতে থাকে। এরপর তারা সমূদ্রের একটি দ্বীপ/উপত্যকার দিকে ভিড়তে ভিরতে সূর্যাস্ত হয়ে যায়। তখন তারা জাহাজের (সাথে বাঁধা) পার্শ্বনৌকায় করে উপত্যকাটিতে প্রবেশ করে। এরপর একটি জন্তু তাদের সাথে সাক্ষাত করে; সে ছিল লোমে একদম ভরপুর। প্রচুর লোমের কারণে তারা বুঝতেই পারছিল না -কোনটি তার সামন, কোনটি পিছন। তারা তখন জিজ্ঞেস করলো: ‘হতভাগা, তুই কে’? সে বললো: আমি ‘জাস্সাসাহ’। তারা জিজ্ঞেস করলো: ‘জাস্সাসাহ কি’? সে (উত্তর না দিয়ে) বললো: ‘হে লোকসকল! তোমরা (সবাই) আশ্রমে অবস্থিত এই ব্যাক্তির দিকে অগ্রসর হও। সে তোমাদের তথ্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে’। সে (তামীম) বলেছে: আমাদেরকে যখনই বলা হল ‘ব্যাক্তি’, তখনই আমরা -সে শয়তান হতে পারে- মনে করে ভয় পেয়ে গেলাম। সে বলেছে: আমরা (তখন) তড়িঘড়ি করে অগ্রসর হয়ে একেবারে তার আশ্রমে প্রবেশ করতেই তাতে দেখতে পেলাম -একজন বিরাটাকারের মানুষকে; এরকম মাখলূক আগে কখনো দেখিনি। সে ছিল লোহার শিকলে (এমন ভাবে) শক্ত করে বাঁধা (যে,) তার হাত দুটি ছিল তার গর্দানের দিকে, যেটা (আবার) ছিল তার দুই হাটুর মাঝখানে -পায়ের পাতা মুখী হওয়া অবস্থায়। আমরা বললাম: হতভাগা ! তুই কে? সে বললো: তোমরা আমার তথ্য পাবে। (আগে) বলো, কে তোমরা? তারা বললো: আমরা আরবের লোক; (মাস খানেক আগে) সমূদ্র জাহাজে আরোহন করি, (পরে এক সময় এমন এক) সমূদ্রের মুখামুখী হই, যা আমাদেরকে ধাক্কা (-র পর ধাক্কা) দিতে থাকে, এভাবে ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে মাস খানেক খেলতে থাকে, অতঃপর (আজ সন্ধায়) আমাদেরকে তোমার এই উপত্যাকায় এনে ফেলে দিয়েছে। পরে আমরা (জাহাজের সাথে বাঁধা) পার্শ্বনৌকায় করে (তোমার এই) উপত্যকায় প্রবেশ করেছি। তার পর (এমন এক) জন্তু আমাদের সাথে সাক্ষাত করে, যে ছিল লোমে ভরপুর, বোঝাই যাচ্ছিল না -কোনটা তার সামন কোনটা পিছন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: হতভাগা, কে তুই? সে বললো: আমি ‘জাস্সাসাহ’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘জাস্সাসাহ কি’? সে (উত্তর না দিয়ে) বললো: ‘হে লোকসকল! তোমরা (সবাই) আশ্রমে অবস্থিত এই ব্যাক্তির দিকে অগ্রসর হও। সে তোমাদের তথ্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে’। তখন আমরা তার কথায় ভয় পেয়ে এবং তুই শয়তান হতে পারিস আশংকা করে তোর কাছে তড়িঘড়ি করে এলাম। তখন সে বললো: আমাকে বাইসান/বিসান (এলাকার) খেজুর গাছের ব্যাপারে অবগত করো (তা এখন কি অবস্থায় রয়েছে)’। আমরা বললাম: ‘তুই ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাস’? সে বললো: ‘আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি ওর খেজুর গাছ সম্পর্কে যে তা ফল দেয় কিনা’? আমরা বললাম: হ্যাঁ (ফল দেয়)। সে বললো: ‘নিশ্চই অচিরেই তা আর ফল দিবে না’। সে বললো: ‘আমাকে ত্বাবারী হ্রদের ব্যাপারে খবর দাও’। আমরা বললাম: ‘ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে তুই জানতে চাস’? সে বললো: তার মধ্যে কি (এখনও) পানি আছে? তারা বললো: সেখানে প্রচুর পানি আছে’। সে বললো: ‘নিশ্চই অচিরেই তার পানি চলে যাবে’। সে বললো: ‘আমাকে জুগারের ঝরনা’র ব্যাপারে খবর দাও’। আমরা বললাম: ‘ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে তুই জানতে চাস’? সে বললো: ‘ঝরনাটিতে কি পানি আছে এবং এর (আশেপাশের) বাসিন্দারা কি ঝরনাটির পানি দিয়ে চাষবাস করে?’ আমরা তাকে বললাম: হ্যাঁ, তাতে অনেক পানি আছে এবং তার (আশেপাশের) বাসিন্দারা তার পানি দিয়ে চাষবাস করে’। সে বললো: ‘আমাকে উম্মী নবীর ব্যাপারে তথ্য দাও, তিনি কী করেছেন’। তারা বললো: ‘তিনি মক্কা থেকে বেড়িয়ে ইয়াছরিবে (মদিনায়) ঠাঁই নিয়েছে’। সে বললো: ‘আরবরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছে’? আমরা বললাম: ‘হ্যাঁ’। সে বললো: ‘তিনি তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন’? তখন আমরা তাকে জানালাম যে, আরবের যারা তার প্রতিবেশি ছিল তিনি তাদের উপর বিজয় লাভ করেছেন এবং তারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছে। সে বললো: ‘তাদের সে অবস্থা হয়েছে’! আমরা বললাম: ‘হ্যাঁ’। সে বললো: ‘যদি তেমনটাই হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর অনুগত্য করাই তাদের জন্য কল্যানকর হবে। আর আমি তোমাদেরকে আমার তথ্য দিচ্ছি। আমিই হলাম মাসিহ (দাজ্জাল)। আর অচিরেই আমাকে বেড় হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি তখন বেড় হয়ে পৃথিবী ভ্রমন করবো। তখন চল্লিশ রাতের মধ্যে (পৃথিবীর) এমন কোনো পল্লী-এলাকাও (বাদ) থাকবে না, যেখানে আমাকে অবতরন করতে দেয়া না হবে -শুধু মক্কা ও ত্বইয়্যেবাহ ছাড়া; এই দুটোর দুটোই (আমার জন্য প্রবেশাধিকার) নিষিদ্ধ (থাকবে)। যখনই আমি ওই দু’স্থানের কোনো একটিতে একবার প্রবেশ করতে চাবো, তখনই একজন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারী হাতে আমার মোকাবেলায় চলে আসবে ও আমাকে তাতে বাঁধা দিবে। বস্তুতঃ (এ দু’ স্থানের) প্রতিটি অলি-গলির সামনে ফেরেশতারা পাহারা দিতে থাকবে। ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর (হাতের) লাঠি/ছড়ি দিয়ে মিম্বরে মেড়ে বললেন: এটাই ত্বইয়্যেবাহ! এটাই ত্বইয়্যেবাহ! এটাই ত্বইয়্যেবাহ! অর্থাৎ মদিনা। ওহে! আমি কি তোমাদেরকে এসব আগে বলিনি? তখন লোকজন বললো: জি (বলেছেন)। (রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন): ‘তামীমের কথা আমাকে অবাক করে দিয়েছে। আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মক্কা ও মদিনা সম্পর্কে ইতিপূর্বে যা বলেছি, (তামীম) তা সত্ত্বায়ন করে দিয়েছে। শুনে রাখো, সে (দাজ্জাল) শামের সমূদ্রে বা ইয়ামেনের সমূদ্রে রয়েছে। না, বরং পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)। সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে), সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)’। আর (একথা বলার সময়) তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করছিলেন’। ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. বলেন: ‘এসব কথা আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছ থেকে মুখস্ত করে রেখেছি’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪২; আস-সুন্নাহ, ইমাম দানী-১/১১৪৮ হাদিস ৬২৬; সুনানে তিনমিযী, হাদিস ২২৫৩; আল-মু’জামুল কাবীর, তাবরাণী- ২৪/৩৮৬-৪০৫ হাদিস ৯৫৭-৯৮৩]
ফায়দা: এই হাদিসটি আমি দাজ্জালের আলোচনায় উল্লেখ করেছি। এখানে এটা উল্লেখ করলাম এজন্য যে, দেখুন আজ بُحَيْرَة الطَّبَرِيَّة (ত্বাবারী ভূমধ্যসাগর) কতটা শুকিয়ে গেছে যে তাতে চড় পড়েছে এবং মানুষ তাতে হাটু জলে হেটে বেড়াচ্ছে। [এখানে ক্লিক করে দেখুন]। আরো দেখুন বাইসান (বা বিসান)-এলাকার আগের সবুজ-তাজা অবস্থা আর এখনকার পরিত্যাক্ত অবস্থা [এখানে ক্লিক করে দেখুন] এবং শায়েখ মুহাম্মাদ আরেফী নিজে সে স্থানের কাছে গিয়ে বলছেন যে, ওই এলাকাতে এখন খেজুর গাছ ফল দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। [এখানে ক্লিক করে দেখুন] আপনারা কি বুঝতে পাচ্ছেন আমি কী বলতে চাচ্ছি? আরে ভাই দাজ্জাল আসার বহু আলামত শুরু হয়ে গেছে।
সহিহ ইবনে হিব্বানে’র একটি রেওয়ায়েতে এসেছে যে, দাজ্জাল এও জিজ্ঞেস করেছিল: ثم قال ما بيوتكم قالوا من شعر وصوف تغزله نساؤنا قال فضرب بيده على فخذه ثم قال هيهات . رواه ابن حبان في صحيحه: ١٥/١٩٥ رقم ٦٧٨٨ , و قال شعيب الأرنؤوط : حديث صحيح – `তোমাদের ঘরবাড়ি (এখন) কি (দিয়ে তৈরী)? তারা বললো: ‘পশম ও উলের (তৈরী কাপড় দিয়ে ঘেরাও করা, যা) আমাদের নারীরা সেলাই করে থাকে’। [সহিহ ইবনে হিব্বান- ১৫/১৯৫ হাদিস ৬৭৮৮] আজ আরবদের বাড়িঘর কী দিয়ে তৈরী?
আমরা আগেও উল্লেখ করেছি যে, ওমর ফারূক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন- قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ ، قَالَ : مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا ، قَالَ : أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا ، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ . رواه مسلم في صحيحه , كِتَابُ الْإِيمَانَ بَابُ معرفة الْإِيمَانِ ، وَالْإِسْلَامِ ، والقَدَرِ وَعَلَامَةِ السَّاعَةِ : ٣٤ ، و غيره ايضا – “(একবার রাসুলুল্লাহ ﷺকে) এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলো: ‘কেয়ামত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারীর চাইতে বেশি জানে না’। লোকটি বললো: ‘তাহলে আমাকে তার লক্ষনসমূহ সম্পর্কে অবহিত করুন’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: (কেয়ামত ঘনিয়ে এসেছে বোঝার বিশেষ লক্ষন হল:) মা তার মনিবাকে প্রসব করবে। আর এও যে, তুমি দেখবে- (সমাজের একসময়কার) পাদুকাহীন, কাপড়হীন, নিঃস্ব-হতদরিদ্র, মেষপালের রাখাল (শ্রেণির গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে’। [সহিহ মুসলীম, -১/৩১ হাদিস ৮; সহিহ বুখারী, হাদিস ৪৭৭৭; মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৬৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৬৯৫; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ -১৪/১৫৫ হাদিস ৩৮৫৫৪; হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নুআইম- ৮/৪২৯; সুনানু সুগরা, বাইহাকী- ১/১৪] আর মুসনাদে আহমদ’ -এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রেও একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার অংশ বিশেষ এই- إذا رأيتَ الأَمَةُ ولدتْ رَبَّتَها أو رَبَّها ورأيتَ أصحابَ الشاءِ تَطاولوا بالبنيانِ ورأيتَ الحُفاةَ الجِياعَ العالةَ كانوا رؤوسَ الناسِ فذلك من مَعَالمِ الساعةِ وأَشْراطِها قال : يا رسولَ اللهِ ومن أصحابُ الشاءِ والحُفاةُ الجِياعُ العالةُ قال : العَرَبُ . رواه الإمام أحمد:١/٣١٩ رقم ٢٩٢٦, قال شعيب الأرنؤوط : حديث حسن – ‘তুমি যখন দেখবে যে, মা তার মনিবা বা মনিবকে প্রসব করেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, (একসময়) মেষপালের রাখাল (ছিল -এমন গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি (অপরাপর) লোকজনের সর্দার/মনিব/নেতা/মাতব্বর হয়ে গেছে, তখন (বুঝবে যে) ওটা কেয়ামতের একটি সংকেত এবং ওর লক্ষনসমূহের একটি। লোকটি বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এই) মেষপালের রাখাল ও পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি কারা? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: আরব (লোকরা)’। [মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ, ক্বারী ১/১২৮] হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تقوم الساعة حتى يتطاول الناس في البنيان . رواه البخاري في “الأدب المفرد” , باب التطاول في البنيان, قال الالبانى فى الإرواء: ٣/٣٢/١ – صحيح – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মানুষজন উঁচু উঁচু করে অট্টালিকা তৈরীতে লেগে যায়’। [আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী, ১০৯ পৃ:, হাদিস ৪৪৯; মুসনাদে আহমদ- ২/৫৩০] এক রেওয়ায়েতে এসেছে, হযরত সালমান ফারেসী রা. বলেছেন – إن من اقتراب الساعة أن يظهر البناء على وجه الأرض – ‘নিশ্চই কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে জমিনের বুকে (ব্যাপক আকারে) ইমারত প্রকাশ পাবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১৪/১৫৩, হাদিস ৩৮৫৪৩; আদ-দুররুল মানসুর, সুয়ূতী- ১৩/৩৮০]
এই ভবিষ্যৎ বাণী আমাদের এ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। আরব জাহানের মধ্যে ইমারত বিল্ডিং-এর প্রসঙ্গ এলেই প্রথমেই মানুষের মাথায় ভাসে দুবাই-এর চিত্র, যেখানে তৈরী হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ‘বুরুজ খলিফা’ সহ চোখ ধাঁধানো সব ইমারত। এছাড়াও কাতার,সৌদি আরব, কুয়েত প্রভৃতি রয়েছে আরব দেশগুলোর কাতারে।
তদুপরি, ডান পাশে একটি সাদা লোমে ভরা একটি বিরাট প্রাণীর মৃত দেহের ছবি দিয়েছি, যার আগা-গোড়া পশম/লোমে ভরা এবং কোথায় মাথা কোথায় কী -তা বোঝা মুশকিল। এটি গত ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী তারিখে বুধবার দিন ফিলিপিনের ডিনাগ্যাট দ্বীপের কাছে এক জেলের চোখে ধরা পরে। [এখানে ক্লিক করে দেখুন] অনেকেই মনে করেন যে, এটি উপরের হাদিসের সেই জাসসাসাহ। হতেও পারে, অন্তত: আমার মন সায় দেয়। হতে পারে, দাজ্জালের জন্য তার কাজ শেষ, সে হয়তো সেই অজানা দ্বীপ থেকে কোথাও মড়ে ভাসতে ভাসতে ফিলিপিনের ওই দ্বীপে গিয়ে ঠেঁকেছে। কিছু বুঝতে পাচ্ছেন, আমরা দাজ্জালের কত কাছে চলে এসেছি! الله اعلم بالصواب
# [ভবিষ্যতবাণী ৯-৩] মিহযান বিন আদরা’ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- ان رسول الله صلى الله عليه وسلم خطب الناس فقال : يَوْمُ الْخَلاصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاصِ ، يَوْمُ الْخَلاَصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ، يَوْمُ الْخَلاَصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ، ثَلاثًا ، فَقِيلَ لَهُ : وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ؟ قَالَ : يَجِيءُ الدَّجَّالُ فَيَصْعَدُ أُحُدًا فَيَنْظُرُ الْمَدِينَةَ فَيَقُولُ لأَصْحَابِهِ : أَتَرَوْنَ هَذَا الْقَصْرَ الأَبْيَضَ ؟ هَذَا مَسْجِدُ أَحْمَدَ ، ثُمَّ يَأْتِي الْمَدِينَةَ فَيَجِدُ بِكُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلَكًا مُصْلِتًا ، فَيَأْتِي سَبْخَةَ الْحَرْفِ فَيَضْرِبُ رُوَاقَهُ ، ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ ثَلاثَ رَجَفَاتٍ ، فَلا يَبْقَى مُنَافِقٌ وَلا مُنَافِقَةٌ ، وَلا فَاسِقٌ وَلا فَاسِقَةٌ إِلا خَرَجَ إِلَيْهِ ، فَذَلِكَ يَوْمُ الْخَلاصِ . رواه أحمد في مسنده : ٤/٣٣٨ ، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٣/٣١١ : و رجاله رجال الصحيح ، و قال شعيب الأرنؤوط في تحقيقه : ٤/٣٣٨ رقم ١٨٩٩٦ : إسناده ضعيف لانقطاعه عبد الله بن شقيق لم يسمع محجن بن الأدرع ، رواه الحاكم ايضا في المستدرك : ٤/٥٤٣ و قال : هذا حديث صحيح على شرط مسلم و لم يخرجاه , و وافقه الذهبي، و قال الألباني في رسالته : قصة المسيح الدجال: ص ٨٩ : وهو كما قالا إن سلم من الانقطاع بين عبد الله بن شقيق ومحجن فقد أدخل بينهما رجاء بن أبي رجاء الباهلي في رواية لأحمد ابن حنبل : ١/٤٦ : وإسنادها أصح من إسناده الرواية الأولى لكنها على كل حال لا بأس بها في الشواهد ، و رواه ايضا الطبرانى في الأوسط : ٣٥١٥، و حنبل بن إسحاق في الفتن : رقم ٣٦ – “(একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ লোকজনের সামনে কথা রাখছিলেন। তখন (এক পর্যায়ে) বললেন: ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী? ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী? ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী’? (এভাবে কথাটি তিনি) তিনবার বললেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল: ‘(ইয়া রাসুলাল্লাহ!) ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন) কী’? তিনি বললেন: ‘দাজ্জাল (মদিনার কাছে) আসবে। পরে সে উহূদ (পাহাড়)-এ আরোহন করবে। তারপরে সে (ওখান থেকে) মদিনার (মসজিদের) দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গিসাথীদেরকে বলবে: ‘তোমরা কি এই সাদা বিল্ডিংটিকে দেখতে পাচ্ছো? এটা হল আহমাদ -এর মসজিদ’। এরপর সে (ওখান থেকে নেমে) মদিনায় (ঢোকার উদ্দেশ্যে) আসবে। (এসে) দেখতে পাবে যে, সেখানকার প্রতিটি গলিতে ফিরেশতা অস্ত্রহাতে রয়েছে। তখন সে (মদিনা’র অনতিদূরে) সাবখাতুল-যুরফ (এলাকা)-এ এসে সেটার কিনারায় আঘাত/প্রহার করবে। এরপর মদিনা তিন বার কম্পনে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তখন এমন কোনো মুনাফেক পুরুষ, মুনাফেক নারী, ফাসেক পুরুষ ও ফাসেক নারী বাকি থাকবে না, যে (মদিনা থেকে) বের হয়ে তার কাছে না যাবে। এটাই হল ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)’। [মুসনাদে আহমদ– ৪/৩৩৮, ৫/৩১ ; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৪৩; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৩৫১৫; মু’জামুস সাহাবাহ, ইবনু কানে- ১৮১৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৩১১]
ফায়দা: বিভিন্ন হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইমাম মাহদী’র আবির্ভাবের প্রায় ৬/৭ বছর পর দাজ্জাল বের হবে। তারপর সে মদিনায় প্রবেশ করতে চাইবে, কিন্তু ফেরেশতাদের কারণে সে মদিনায় ঢুকতে পাবে না। এরপর মদিনার অনতিদূরে অবস্থান করে মদিনার মসজিদে নববীর দিকে তাকিয়ে বলবে- أَتَرَوْنَ هَذَا الْقَصْرَ الأَبْيَضَ ؟ هَذَا مَسْجِدُ أَحْمَدَ – “তোমরা কি এই সাদা বিল্ডিংটিকে দেখতে পাচ্ছো? এটা হল আহমাদ -এর মসজিদ”। আমরা উপরেও যেমন বলেছি যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ যে সময় এই ভবিষ্যতবাণীটি ব্যাক্ত করেছিলেন, তখন তাঁর মদিনা সমজিদটি ছিল খেজুর গাছের স্তম্ভ, ডালপালা, পাতার ছাউনিওয়ালা একটি মসজিদ। আজ আমরা ২০১৯ ইং সালে এসে ‘মসজিদে নববী’কে কি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জামানার খেজুর গাছের তৈরী সেই মসজিদটিকে দেখি, নাকি সর্বাত্যাধুনিক মানের একটি চমকপ্রম পাকা সাদা বিল্ডিং দেখি!!! আল্লাহু আকবার!!! নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরাট মু’জেজাহ !!! এখানে সাদা বলতে একেবারে ধবধবে সাদা উদ্দেশ্য নয়। কোনো কিছুকে মোটের উপরে বোঝানোর জন্যও এধরনের কথা বলা হয়ে থাকে। আরবে সেকালে ‘সাদা চামড়ার খৃষ্টানদেরকে’ বলা হত ‘বনু আসফার’। অথচ ‘আসফার’ হল হলদে রং। এজন্য মসজীদে নববীকে ‘সাদা বিল্ডিং’ বলাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ এটিকে মোটের উপরে ‘সাদা বিল্ডিং’ বলা হয়েছে।
আনাস বিন মালেক রা. -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- يَجِيءُ الدَّجَّالُ فَيَطَأُ الْأَرْضَ إِلَّا مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ فَيَأْتِي الْمَدِينَةَ فَيَجِدُ بِكُلِّ نَقْبٍ مِنْ نِقَابِهَا صُفُوفًا مِنْ الْمَلَائِكَةِ فَيَأْتِي سَبْخَةَ الْجَرْفِ فَيَضْرِبُ رِوَاقَهُ فَتَرْجُفُ الْمَدِينَةُ ثَلَاثَ رَجَفَاتٍ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ كُلُّ مُنَافِقٍ وَمُنَافِقَةٍ . رواه أحمد في مسنده : ٣/١٩١ ، وهو حديث صحيح على شرط مسلم : – “দাজ্জালে এসে পৃথিবীতে (দাপটের সাথে) পা মাড়িয়ে চলবে -কেবল মক্কা ও মদিনা ছাড়া। পরে সে মদিনায় (ঢোকার উদ্দেশ্যে) আসবে। তখন সে সেখানকার অলিগলির প্রতিটিতে ফিরেশতাদেরকে সারিবদ্ধভাবে (অস্ত্র হাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে) পাবে। ফলে সে (মদিনা’র অনতিদূরে) সাবখাতুল-যুরফ (এলাকা)-এ এসে ওটার কিনারায় আঘাত/প্রহার করবে। এতে মদিনা তিন বার কম্পনে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তখন সকল মুনাফেক-পুরুষ ও মুনাফেক-নারী (মদিনা থেকে বের হয়ে) তার কাছে যাবে”। [মুসনাদে আহমদ– ৩/১৯১] الله اعلم بالصواب
# [ভবিষ্যতবাণী ৯-৪] আলী রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- سَيَخْرُجُ قَوْمٌ فِي آخِرِ الزَّمَانِ، أَحْدَاثُ الأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الأَحْلاَمِ، يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ البَرِيَّةِ، لاَ يُجَاوِزُ إِيمَانُهُمْ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ، كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، فَأَيْنَمَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ، فَإِنَّ فِي قَتْلِهِمْ أَجْرًا لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ . رواه بخاري , كتاب استتابة المرتدين والمعاندين وقتالهم, باب قتل الخوارج والملحدين بعد إقامة الحجة عليهم: رقم ٦٩٣٠ ; و مسلم: رقم ١٠٦٦; احمد: ١/٤٣١ رقم ٦١٦ بإسناد صحيح, تحقيق: حمزة أحمد الزين; – ‘শিঘ্রই শেষ জামানায় (এমন একটি) গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে, (যারা হবে) কাঁচা- বয়সের (সব ছেলে/যুবক এবং) জ্ঞান-বুদ্ধিতে অপরিপক্ক/নির্বোধসূলভ। তারা কথা বলবে উৎকৃষ্ট কথা (কিন্তু কথাগুলোর সহিহ ব্যাখ্যা না বোঝার কারণে তারা তা গলত স্থানে প্রয়োগ করবে)। তারা কুরআন পাঠ করবে, (কিন্তু আয়াতগুলো) তাদের (গলার) কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না, (ক্বলবে ঢোকা তো পরের কথা)। তারা দ্বীন (ইসলাম) থেকে (এমনভাবে) ছিটকে বেড় হয়ে যাবে, যেভাবে তীর শিকার ভেদ করে বেড় হয়ে যায়। তোমরা তাদেরকে যেখানেই সাক্ষাত পাবে, কতল করে ফেলবে। কারণ, যে তাদের কতল করবে, নিশ্চই তার জন্য কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র কাছে তাদেরকে কতলের মধ্যে পুরষ্কার রয়েছে ’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৬৯৩০; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১০৬৬; মুসনাদে আহমদ– ১/৪৩১ হাদিস ৬১৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৭৬৭; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৪১১৩]
ফায়দা: হাদিসের শব্দগুচ্ছ أَحْدَاثُ الْأَسْنَانِ -এর মধ্যে আরবী শব্দ حدث অর্থ: নভিস, নতুন, প্রারম্ভ, আরম্ভ ইত্যাদি যার বহুবচন হল أحداث । আর سن অর্থ (বয়স/বৎসর) এবং এর বহুবচন হল اﻷسنان । আমি এর বঙ্গানুবাদ করেছি: ‘কাঁচা- বয়সের (সব ছেলে/যুবক)’ । আর শব্দগুচ্ছ سُفَهَاءُ الأَحْلاَمِ -এর মধ্যে আরবী শব্দ حلم অর্থ: আকল, আক্কেল-জ্ঞান, বিবেক-বোধ, বুদ্ধি ইত্যাদি যার বহুবচন হল الأحلام। আর سَفِيه অর্থ নির্বোধ, বেউকুফ (stupid), আহাম্মক, বুদ্ধিভ্রষ্ট, স্থুলবুদ্ধিসম্পন্ন ইত্যাদি এবং এর বহুবচন হল سُفَهاءُ । আমি এর বঙ্গানুবাদ করেছি: ‘জ্ঞান-বুদ্ধিতে অপরিপক্ক/নির্বোধসূলভ’।
এরা হল শেষ জামানার খারেজী গোষ্ঠি। এদের প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী রা.-এর খিলাফতের জামানায় প্রায় চোদ্দশ বছর আগে। আলী রা. তাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে গণহারে কতল করেন। তবে বিভিন্ন হাদিস থেকে বোঝা যায়, তাদের দৌরাত্ব বিভিন্ন জামানায় প্রকাশ পাবে, এমনকি এই খারেজীদেরই শেষাংশের মধ্যে মাসিহ দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।
আমার ব্যাক্তিগত (এবং বিশ্বে বহু ওলামায়ে কেরামের) তাহ্বকীক মতে, আমরা নিঃসন্দেহে শেষ জামানার ভিতরে রয়েছি, শুধু তাই নয়, আমরা ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর একেবারে নিকটে এসে পৌছে গেছি। বিশ্বের অনেক আলেমের মতে, এই শেষ জামানার খারেজী গোষ্ঠি হল ইরাক ও সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামী খিলাফতের দাবীদার আই.এস (দায়েশ)’রা। এদের নেটওয়ার্ক খুবই দ্রুত পৃথিবী ব্যাপি ছড়িয়ে গেছে। এদের প্রায় সবাই কঁচি বয়সের সব যুবক শ্রেণির ছেলে পুলে, যাদের বলতে গেলে কেউই কুরআন-সুন্নাহ’কে কোনো মুহাক্কেক আলেমের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করেনি। বিভিন্ন গবেষনা বলছে, এদের শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যম হল কুরআনের নিছক অনুবাদ, ইন্টারনেটের ওয়েবপেজ বা ভিডিও-অডিও ইত্যাদি। এদের না আছে কোনো মুহাক্কেক শিক্ষক, না আছে কোনো মুহাক্কেক আমীর। এরা যে আবু বকর আল-বাগদাদী’কে খলিফা/আমীর বলে বিশ্বাস করে, অনেক গবেষনা মতে, সেই আবু বকর আল-বাগদাদী হল ইহূদী-খৃষ্টান জায়োনিষ্টদের একজন ছদ্দবেশী এজেন্ট। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে >>>এখানে ক্লিক করুন >>> । الله اعلم بالصواب
ফায়দা: এই ফেরকাগুলো হল ওই ৭২ ফেরকা, যার কথা হাদিস সহ আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করে এসেছি। আমরা সেখানে দেখিয়ে এসেছি যে, আমরা শেষ জামানায় ঢুকে পড়েছি বহু আগে, আর এখন এসব ফেরকা’র ঘনকালো ফিতনার ঘন কালো অন্ধকারে মানুষ হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই হাদিসে বলা হয়েছে যে, এসব ফেরকার পরে আসবে ‘দাজ্জাল’। অর্থাৎ, ফেরকায় ভরা পৃথিবীর লোকজন দাজ্জাল আসার প্লাটফর্ম তৈরী করছে। দাজ্জাল আসার প্রায় ৬/৭ বছর আগে ইমাম মাহদী রা. আসবেন। আমার কথা বিশ্বাস করেন, আমরা ইমাম মাহদী, মালহামাতুল কুবরা (তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ) ও তারপর দাজ্জালের ঘটনা ঘটার সময় খুবই নিকটে। الله اعلم بالصواب
মহানবী ﷺ-এর আরো ভবিষ্যতবাণী জানতে নিম্নের পেজগুলোতে ক্লিক করুন
কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন সমূহ (১ম সিরিজ)- [পৃষ্ঠা ১] , [পৃষ্ঠা ২] , [পৃষ্ঠা ৩] , [পৃষ্ঠা ৪] , [পৃষ্ঠা ৫] , [পৃষ্ঠা ৬] , [পৃষ্ঠা ৭] , [পৃষ্ঠা ৮] , [পৃষ্ঠা ৯] , [পৃষ্ঠা ১০]
কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন সমূহ (২য় সিরিজ)- [পৃষ্ঠা ১] , [পৃষ্ঠা ২] , [পৃষ্ঠা ৩] , [পৃষ্ঠা ৪] , [পৃষ্ঠা ৫] , [পৃষ্ঠা ৬] , [পৃষ্ঠা ৭] , [পৃষ্ঠা ৮] , [পৃষ্ঠা ৯] , [পৃষ্ঠা ১০] , [পৃষ্ঠা ১১] , [পৃষ্ঠা ১২] , [পৃষ্ঠা ১৩] , [পৃষ্ঠা ১৪] , [পৃষ্ঠা ১৫]