গরিব ও অভাবীর পেটে খাবার দাও ও দান-সদকাহ করো – সহজে বেহেশত নাও
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
[উল্লেখ্য, এই গোটা আলোচনায় উল্লেখিত বিভিন্ন আয়াতে কারিমা, হাদিস ও আছার এবং আরবী ইবারত সমূহের অনুবাদ’কে কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আমার অযোগ্যতার কারণে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়ার আগেই মানব সমাজে ছড়িয়ে না যায়। এগুলো পড়ুন ইলম অর্জনের জন্য এবং যোগ্য আলেম থেকে তা বুঝিয়ে নিন। আর কোনো যোগ্য চোখে উল্লেখযোগ্য ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]
এতীম, অসহায়, গরিব ও অভাবীকে খাবার খাওয়ানো এবং দান-সদকাহ করার সওয়াব ও ফজিলত: কুরআন কারিম থেকে
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন-
وَ يُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا – إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا – إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا
“আর (বেহেশতীদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট এই যে), তারা তাঁর (তথা আল্লাহ তাআলার) ভালবাসার টানে (খুশিমনে) খানা খাওয়ায় মিসকিনকে, এতিমকে এবং কয়েদীকে। (তারা বলে:) আমরা তোমাদেরকে খাওয়াই শুধুমাত্র আল্লাহ’র রাজিখুশির জন্য, আমরা (এর বিনিময়ে) তোমাদের থেকে না কোনো প্রতিদান চাই, আর না কোনো শুকরিয়া। নিশ্চই আমরা আমাদের রবের (পক্ষ) থেকে (কেয়ামতের) দিবসে (তাঁর রাগ ও গোসসা ভরা) কঠোর চাহনিকে ভয় করে থাকি”। [সূরা আদ-দাহর ৮-১০]
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি উল্লেখ করার পিছনেইংগীত রয়েছে যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র গোসসা ও রাগ ভরা কঠোর চাহনি থেকে বাঁচার একটি অন্যতম উপায় হল ‘ক্ষুধার্থকে খানা খাওয়ানো’।
وَ مَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَ مَا تُنفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ ۚ وَ مَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَ أَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
“আর তোমরা (তোমাদের রিজিক থেকে নির্দেশিত) কোনো কল্যানকর (কাজে) যা কিছু (শরয়ী নিয়ম মতো) দান করো, তা মূলত: তোমাদের নিজেদের জন্যই (কল্যানকর হবে)। আর তোমরা কেবলমাত্র আল্লাহ’র সন্তষ্টি (পাওয়া)র অন্বেষণেই (তাঁর পথে) দান করবে। আর (আজ) তোমরা (দুনিয়াতে) যা কিছু কল্যানকর (কাজে) দান করবে, তা(র পুরষ্কার) তোমাদের পুরোপুরি দিয়ে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি (কোনো রকম) অবিচার করা হবে না”। [সূরা বাকারাহ ২৭২]
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُم بِاللَّيْلِ وَ النَّهَارِ سِرًّا وَ عَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَ لَا هُمْ يَحْزَنُونَ
“যারা তাদের সম্পদকে (আল্লাহ’র পথে) দান করে রাতে ও দিন -প্রকাশ্যে এবং গোপনে, তাদের পুরষ্কার রয়েছে তাদের রবের কাছে। (আখেরাতের জীবনে) তাদের উপরে না থাকবে কোনো ভয়ভীতি, আর না তারা চিন্তিত হবে”। [সূরা বাকারাহ ২৭৪]
এতীম, অসহায়, গরিব ও অভাবীকে খাবার খাওয়ানো এবং দান-সদকাহ করার সওয়াব ও ফজিলত: হাদিস ও আছার থেকে
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– قَالَ اللَّهُ أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ . رواه البخاري فيي صحيحه ، كتاب النفقات، باب فضل النفقة على الأهل : ٩/٤٩٧ رقم ٥٣٥٢، و مسلم في صحيحه : رقم ٩٩٣ –“আল্লাহ বলেন: ‘হে আদম সন্তান! (আমার পথে) খরচ করো, তোমার উপরেও খরচ করা হবে”। [সহিহ বুখারী– ৯/৪৯৭ হাদিস ৫৩৫২; সহিহ মুসলীম, হাদিস ৯৯৩]
# উকবাহ বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– كُلُّ امْرِئٍ فِي ظِلِّ صَدَقَتِهِ . رواه الإمام أحمد في المسند : ٢٨/٥٦٨ و غيره، و صححه محققو المسند، و الشيخ الألباني في تخريج أحاديث مشكلة الفقر : ص ٧٥ –“(কেয়ামতের দিন) প্রত্যেক (মুসলীম) ব্যাক্তি তার সদকাহ’র ছায়ায় থাকবে”। [মুসনাদে আহমদ- ২৮/৫৬৮ হাদিস ১৭৩৩২; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/৫৭৬; সহিহ ইবনে হিব্বান– ৮/১০৪ হাদিস ৩৩১০; মুসনাদে আবু ইয়া’লা, হাদিস ১৭৬৬; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস ২৪৩১]
# যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– يا كعبُ بنَ عُجرةَ ! الصلاةُ قُربانٌ ، و الصيامُ جُنَّةٌ ، و الصدقةُ تُطفِئُ الخطيئةَ كما يُطفئُ الماءُ النارَ . أخرجه أحمد في المسند : رقم ١٥٢٨٤ ، و عبد بن حميد في المسند : رقم ١١٣٦ مطولاً، و أبو يعلى في المسند : رقم ١٩٩٩ و اللفظ له ، و صححه الألباني في صحيح الترغيب : رقم ٨٦٦ – “হে কা’ব বিন উযরাহ! নামায হল (আল্লাহ) নৈকট্য (লাভের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম), আর সিয়াম (রোযা) হল (নাজায়েয বিষয়াবলি থেকে বাঁচার এক মজবুৎ) ঢাল (স্বরূপ), আর সদকাহ -গোনাহকে এমন ভাবে মিটিয়ে দেয় যেমনি ভাবে আগুকে মিটিয়ে দেয় পানি”। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫২৮৪; মুসনাদে আব্দ বিন হুমায়েদ, হাদিস ১১৩৬; মুসনাদে আবু ইয়া’লা, হাদিস ১৯৯৯]
ফায়দা: আরেক হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-تصدقوا ولو بتمرة، فإنها تسد من الجائع، وتطفئ الخطيئة كما يطفئ الماء النار . رواه ابن المبارك في الزهد ، وصححه الألباني في صحيح الجامع رقم ٢٩٥١ – “তোমরা দান-সদকাহ করো -যদিও বা (একটি) খেজুর (দানা) দিয়েই হোক না কেনো। কারণ, তা ক্ষুধাকে ঠেকায় এবং গোনাহকে (তা) এমন ভাবে মিটিয়ে দেয় যেমনি ভাবে আগুকে মিটিয়ে দেয় পানি”। [আল-জুহদ, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক: জামেউস সহিহ, হাদিস ২৯৫১]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ . رواه مسلم في صحيحه، كتاب البر والصلة والآداب، باب استحباب العفو والتواضع، برقم ٢٥٨٨ –“সদকাহ (দান) -ধ্বনমালে ঘাটতি আনে না, (বরং পরিণামে বরকত হয়)”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৫৮৮]
# আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:- أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ . أخرجه البخاري في صحيحه : ١/٧١ رقم ١٢ ، و مسلم في صحيحه : ١/٦٥ رقم ٣٩، و ابو داود في السنن : ٥/٣٧٩ رقم ٥١٩٣ ، و ابن ماجه في سننه : ٢/١٠٨٣ رقم ٣٢٥٣ ، و ابن حبان في صحيحه , تاب الأطعمة , “باب إطعام الطعام : ٣٢٥٢ ، و غيرهم – “(একবার) এক ব্যাক্তি নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলো: ‘(ইয়া রাসুলাল্লাহ!) কোন ইসলাম উত্তম’? তিনি বললেন: ‘তুমি (ক্ষুধার্থকে) খানা খাওয়াবে এবং (মুসলমানদের মধ্যে) যাকে তুমি চেনো কিংবা চেনো না -(উভয়কেই) সালাম দিবে”। [সহিহ বুখারী– ১/৭১ হাদিস ১২; সহিহ মুসলীম- ১/৬৫ হাদিস ৩৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩২৫২; সুনানে আবু দাউদ – ৫/৩৭৯ হাদিস ৫১৯৩; সুনানে নাসায়ী- ৮/১০৭ হাদিস ৫০০০; সুনানে ইবনে মাজা- ২/১০৮৩ হাদিস ৩২৫৩; মুসনাদে আহমদ- ২/১৬৯; আল-ইমান, ইবনে মানদাহ- ১/৪৫৩ হাদিস ৩১৭]
# আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ . أخرجه الترمذي في سننه، کتاب صفة القيامة والرقائق والورع : ٤/٦٥٢ رقم٢٤٨٥، و ابن ماجه فى السنن ، کتاب إقامة الصلاة والسنة فيها، باب في قيام الليل : ١/٤٢٣ رقم ١٣٣٤، و ابن ماجه في السنن، کتاب الأطعمة، باب إطعام الطعام : ٢/١٠٨٣ رقم ٣٢٥١، و أحمد فى المسند : ٥/٤٥١ رقم ٢٣٨٣٥، و الدارمي في السنن : ١/٤٠٥ رقم ١٤٦٠، و صححه الألباني في صحيح ابن ماجه – “হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপক ভাবে সালাম দাও, (ক্ষুধার্থকে) খানা খাওয়াও, আত্বীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো, লোকজন ঘুমিয়ে গেলে তোমরা রাতে (উঠে তাহাজ্জাদের) নামায পড়ো, (আর) শান্তির সাথে বেহেশতে প্রবেশ করো”। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ১/৪২৩ হাদিস ১৩৩৪, ২/১০৮৩ হাদিস ৩২৫১; সুনানে তিরমিযী- ৪/৬৫২ হাদিস ২৪৮৫; মুসনাদে আহমদ- ৫/৪৫১ হাদিস ২৩৮৩৫; সুনানে দারেমী- ১/৪০৫ হাদিস ১৪৬০; সহিহ ইবনে হিব্বান- ২/২৬১ হাদিস ৫০৮]
# ছুহায়েব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন– فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: خِيَارُكُمْ مَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ وَرَدَّ السَّلَامَ . أخرجه أحمد في مسنده : ٦/١٦ ، و الطحاوي في شرح معاني الآثار : رقم ٧١٠٥ ، و ابن سعد في في الطبقات الكبرى : ٣/٢٢٧، و غيرهم ، و صححه الألبانى فى السلسلة الصحيحة : رقم ٤٤ – “রাসুলুল্লাহ ﷺ বলতেন: তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম হল (সেই মুসলমান) যে (ক্ষুধার্থকে) খানা খাওয়ায় এবং (অহঙ্কার মুক্ত খুশি মন নিয়ে তার মুসলমান ভাইয়ের) সালামের জবাব দেয়”। [মুসনাদে আহমদ– ৬/১৬; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৮/৩৮ হাদিস ৭৩১০; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম ত্বাহাবী- ৪/১৬৬ হাদিস ৭১০৫; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১/৩২৬ হাদিস ৪৮৩; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৩১০ হাদিস ৭৭৩৯; শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ৬/৪৭৮ হাদিস ৮৯৭৩; আত-ত্ববাকাতুল কুবরা, ইবনে সা’দ- ৩/২২৭; আল-ইসতিয়াব, ইবনু আব্দিল বার- ১/২২০; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/১৯]