আধুনিক মাসআলা মাসায়েল, ফিকহী ফাতাওয়া, বিধিবিধান ও সমাধান – বিবিধ
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیۡمِ
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسوله محمد و على أله و أمّته
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ النبي الأمي عَدَدَ خَلْقِك وَ رِضَا نَفْسِك وَزِنَةَ عَرْشِك وَ مِدَادَ كَلِمَاتِك، صَلِّ عَليه صَلاَةً كَامِلَةً دَائِمَةً كَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلَّى عَلَيهِ وَ سَلِّمْ تَسلِيمَاً بِقَدرِ عَظَمَةِ ذَاتِكَ فِى كُلِّ وَقتٍ وَ حِين، صلاة تكون لك رضاء و له جزاء، صلاة لا غاية لها ولا منتهى ولا انقضاء باقية ببقائك الى يوم الدين ، و اعطه الوسيلة و الفضيلة و المقام المحمود الذي وعدته، و اجزه عنا ما هو اهله، و على اله وأصحابه و أزواجه و ذريته و أهل بيته و سلم تسليما مثل ذلك، اَللّٰهُمَّ اجمعني معه في الفردوس و جنة المأوى، اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
[এখানে “মাসআলা মাসায়েল – বিবিধ” -এর অধীনে উল্লেখিত মাসআলা মাসায়েল গুলো কোনো বিজ্ঞ মুহাক্কেক আলেমের পরামর্শ সাপেক্ষে আমল করুন। কোনো বিজ্ঞ চোখে যথাযথ কোনো ভুল ধরা পড়লে তা আমাকে অবগত করুন।]
আধুনিক মাসআলা মাসায়েল – বিবিধ
(১) মাসআলা (ক্রয়কৃত টিকিট অন্যের কাছে বিক্রি করা) : কেউ যদি কোনো যানবাহনের (যেমন: প্লেন, ট্রেন, বাস ইত্যাদির) টিকেট কিনে এবং পরে তা অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে টিকিটের গায়ে-লিখিত মূল্যেই তা বিক্রি করতে হবে, তার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা যাবে না। যদি অতিরিক্ত দামে বিক্রি করেই ফেলে, তাহলে সেই অতিরিক্ত অর্থটুকু টিকিটটির ক্রেতাকে ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে যদি ক্রেতার খোঁজ পাওয়া না যায়, তাহলে অতিরিক্ত অর্থটুকু ওই ক্রেতার পক্ষ থেকে গরিব-অভাবীদের মাঝে দান করে দেয়ার নিয়তে দান করে দিতে হবে। [আল-মাবসুত, সারাখসী- ১৫/১৩০; আল-বাদায়েউস সানায়ে, কাসানী- ৪/৬৭; আল-বাহরুর রায়েক- ৭/৩০৪; রাদ্দুল মুহতার, শামী- ৬/২৮]
(২) মাসআলা (আমানত ধ্বংস/নষ্ট/হারিয়ে ফেললে ক্ষতিপূরণ) : আমানত বিষয়ক একটি মাসলা হল, ব্যাক্তি “ক” যদি ব্যাক্তি “খ”-এর কাছে কিছু আমানত রাখে এবং ব্যাক্তি “খ” সেটাকে যথাযথ নিয়মে হিফাজত করে রাখার যথাসম্ভব চেষ্টায় থাকা সত্ত্বেও তার শক্তি বহিঃর্ভূত কোনো কারণে (যেমন: ডাকাতী, চুরি, ছিন্তাই, ভূমিকম্প, জলচ্ছাস, অগ্নীকান্ড ইত্যাদি কারণে) যদি সেটা নষ্ট/ধ্বংস হয়ে যায় কিংবা হারিয়ে যায়, তাহলে ব্যাক্তি “খ”-এর জন্য সেই জিনিসটির হবহু জিনিস বা ওর সমমূল্য -ব্যাক্তি “ক”কে ফেরত দেয়া ওয়াজিব নয় -এমনকি যদি ব্যাক্তি “ক” সেটার ক্ষতিপূরণ দাবী করুক না কেনো। তবে ব্যাক্তি “খ” যদি আমানতটিকে হিফাজত করার মধ্যে ত্রুটি বা অবহেলা করার কারণে তা নষ্ট/ধ্বংস হয়ে যায় কিংবা হারিয়ে যায়, তাহলে ব্যাক্তি “খ”-এর জন্য সেই জিনিসটির হবহু জিনিস বা ওর সমমূল্য -ব্যাক্তি “ক”কে ফেরত দেয়া ওয়াজিব -যদি ব্যাক্তি “ক” সেটার ক্ষতিপূরণ দাবী করে। [আল-মাবসুত, সারাখসী- ১১/১৪৮; রাদ্দুল মুহতার, শামী- ৫/৬৭৮]
নমুনা উদাহরণ: মনে করুন, ব্যাক্তি “ক” ব্যাক্তি “খ”-এর কাছে একটি মোবাইল আমানত রাখলো -এই বলে যে, অমুক দিন সে তা ফেরত নিবে। ব্যাক্তি “খ” মোবাইলটিকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আলমারিতে তালা-চাবি মেড়ে হিফাজতে রেখে দিলো। পরের দিন উঠে দেখলো কোনো চোর আলমারিটি খুলে অন্যান্য জিনিসের সাথে সাথে মোবাইলটিও নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে মোবাইলটি যথাযথ নিয়মে হিফাজত করে রাখার যথাোধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যাক্তি “খ” তার একটি ক্ষমতা/শক্তি বহিঃর্ভূত কারণে সেটাকে হিফাজত করতে অসমর্থ হওয়ায় এমতাবস্থায় তার জন্য ব্যাক্তি “ক”কে হুবহু আরেকটি মোবাইল বা তার সমমূল ক্ষতিপূরণ দেয়া ওয়াজিব না -এমনকি যদি ব্যাক্তি “ক” সেটার ক্ষতিপূরণ দাবী করুক না কেনো। কিন্তু যদি এমন হয় যে, ব্যাক্তি “খ” মোবাইল’টিকে শার্ট বা পাঞ্জাবীর ভিতরের নিরাপদ পকেটে না রেখে বাহিরের পকেটে রেখে দিলো (যেখানে রাখা মোটেও নিরাপদ নয়) এবং ভিরের মাঝে চলার সময় মোবাইলটি চুরি হয়ে গেল। আমানত হিফাজত করার প্রশ্নে এটা ব্যাক্তি “খ” কর্তৃক সুস্পষ্ট ত্রুটি বা অবহেলা হওয়ার কারণে তার জন্য হুবহু একই রকম মোবাইল বা ওর সমমূল্য ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ব্যাক্তি “ক”কে ফেরত দেয়া ওয়াজিব -যদি ব্যাক্তি “ক” সেটার ক্ষতিপূরণ দাবী করে।
(৩) মাসআলা (বিয়ের সহিহ আক্বদ ভিন্ন শুধু রেজিষ্ট্রেশন করানো) : এযুগের মুসলীম পরিবারের প্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে-মেয়ে ও তাদের অভিভাবকদেরকে প্রায়ই একাজটি করতে দেখা যায় যে, তারা উভয় পক্ষ মিলে ছেলে ও মেয়ে’র মাঝে শরীয়তসম্মত ভাবে বিয়ে না পড়িয়ে শুধুমাত্র ‘বিয়ের সরকারী রেজিষ্ট্রি খাতা’য় বর-কনের স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দেয় এবং পরে কোনো একদিন মূল বিয়েটি অনুষ্ঠানের সাথে পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে, মূল বিয়েটি শরীয়ত সম্মত ভাবে সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ছেলে মেয়ে উভয়েই একে অপরের ‘গায়রে-মাহরাম’ (পর-পুরুষ/পর-নারী) হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। কারণ, পর্যাপ্ত পরিমান সাক্ষির (তথা কমপক্ষে মোট ২ জন মুসলীম পুরুষ অথবা কমপক্ষে মোট ১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী’র) উপস্থিতিতে বর-কনে কিংবা তাদের অনুমদিত প্রতিনিধির দ্বারা সুস্পষ্ট ইজাব-কবুল সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে বিয়ের আক্বদ না পড়ানো পর্যন্ত দুজনের বিয়ে সহিহ হয় না। আর যাবৎ শরীয়তের দৃষ্টিতে বিয়েই সহিহ না হবে, সে পর্যন্ত শুধুমাত্র ‘বিয়ের সরকারী রেজিষ্ট্রি খাতা’য় বর-কনের স্বাক্ষর বিয়ে সহিহ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আর বিয়ে সহিহ না হওয়া পর্যন্ত ওই ছেলে মেয়ের জন্য একে অন্যের সাথে নাজায়েয আগ্রহ নিয়ে দেখা-সাক্ষাত করা, কথাবার্তা বলা ইত্যাদি জায়েয হবে না -(সেক্ষেত্রে দুজনে একসাথে ঘুরে রেড়ানো বা একসাথে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকা/বসবাস করা তো আরো দূরের কথা)। [আদ-দুররুল মুখতার, হাসকাফী- ৩/৯; ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়্যাহ- ৪/৩; কেফায়াতুল মুফতী- ৬/৪৮৩]